#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪২
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“প্রেমে বাঁধা না এলে তা প্রেম নয় বন্ধুত্ব।সেক্ষেত্রে আমি এমন বন্ধুত্বে বিশ্বাসী নই।”
“তুমি প্রেম ব্যাপারে অনেক কিছু জানো দেখছি।কাওকে ভালোবাসো তোশা?”
কল্লোলের প্রশ্নে তোশার দৃষ্টি থমকে গেলো।সে বিভ্রান্ত হয়ে বলল,
“বাসি।কেন বলো তো?”
“কথাটা অস্বীকার কেন করলে না?মানে আমার থেকে লুকানো উচিত ছিল তোমার।”
যুবতী কন্যার মন কাড়া হাসি অধরযুগলে।যেন কোনোকিছু লুকানোর নেই।
“নিজের অনুভূতি প্রকাশে লজ্জাবোধ আমার হয়না।”
“তুমি এমন ছিলেনা তোশা।ছোট্ট হৃদয়ের সকলের তোশামণি ছিলে।”
“এখনও তা আছি।শুধু তোমার দেখার দৃষ্টি ভঙ্গি বদলেছে কল্লোল ভাইয়া।”
“নাহ।আমি এক দৃষ্টিতে তোমাকে আজীবন দেখেছি।কিংবা দেখবো।”
তোশা প্রসঙ্গ বদলে ফোনটায় ব্যস্ত হয়ে উঠলো।কল্লোলের পুরোনো দৃষ্টি তার মুখবিবরে লুটোপুটি খাচ্ছে।সত্যি কী মেয়েটি পূর্বের মতোন আছে?কল্লোলের ভেতর হতে কোনো স্বত্তা তা অস্বীকৃতি জানালো। নারীরা বোধহয় তাদের প্রতি প্রেমময় দৃষ্টিকে উপলব্ধি করতে পারে।তোশার এতো কাছে থেকেও কল্লোল মন স্পর্শ করতে পারেনি?আফসোস!
আজ মায়ান তার দ্বিতীয় পরিবার নিয়ে দেশে ফিরছে।এয়ারপোর্টের বাহিরে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে তোশা।যদিও তার ইচ্ছে ছিলনা এখানে আসার।কিন্তু বাবার মন খারাপ হবে কিংবা কবীরের কথায় এসেছে।গাড়ীতে বসে ফোন টিপছে এমন সময় জানালার কাঁচে আঙুলের টোকা পড়লো।ওপর প্রান্তের মানুষটিকে দেখে তোশা তড়িঘড়ি করে নেমে এলো,
“কেমন আছেন ফুপু?”
লায়লা বিরস মুখে জবাব দিলো,
“ভালো।তোমার মা এসেছে?”
“মায়ের আসার কথা ছিলনা।”
“তা ঠিক।”
লায়লা অবশ্য তোশার কথাটি আরেকবার পরীক্ষা করার জন্য গাড়ীর ভেতর দৃষ্টি দিলো।কল্লোল সালাম দিলো তাকে।
“তোশা,আম্মু-আব্বু আছে।তাদের সাথে একবার যোগাযোগ করে আসতে পারতে।থাক সেসব কথা।তোমার মা না করে তুমি বাচ্চা মেয়ে আর কী যোগাযোগ করবে?চলো সকলের সাথে দেখা করবে।শুনলাম অভিনেত্রী হয়েছো।নাটকটা বেশ হয়েছে।ভালো লেগেছে আমার।”
“ধন্যবাদ ফুপু।আপনারা যে দেখেছেন জানতাম না।”
“না দেখে উপায় ছিল নাকী?মায়ান ভাই রোজ কল করে বলতো।কল্লোল তুমি কী গাড়ীতে থাকবে?আমাদের সাথে চলো।”
“আমি গাড়ীটা ভালো জায়গায় রেখে আসছি।”
তোশা ও লায়লা একসাথে হেঁটে যাচ্ছে।দাদীর বাড়ীর লোকের সঙ্গে আহামরি ভালো সম্পর্ক নেই মেয়েটার।ওইযে চলনসই কিছু অবশিষ্ট আছে।মায়ানের বাবা-মা নিজের নাতনিকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন।হাজার হোক তার ছেলের সন্তান তো।ফুপা আইসক্রিম কিনে দিলো তোশাকে।কিন্তু মেজো চাচা-চাচীর ব্যবহার অনেক ঠান্ডা।তোশা খেয়াল করলো তার হাতে থাকা আইসক্রিম যেমন ঠান্ডা।
“কবীর ভাই আসছে আম্মা।দেখো দুজনের বন্ধুত্ব।এতোদিনেও মিটেনি।কতো কাজ ফেলে ঠিক দৌড়ে আসছে।”
লায়লার কথায় মুচকি হাসলো তোশা।যাদের মধ্যে এতো ভালো বন্ধুত্ব তা কখনো ভাঙবে নাকী?কবীর নামের সঙ্গে তামাটে পুরুষটি এসে হাজির।কালোদের নাকী কালো পরতে নেই?কিন্তু তোশার মনে হলো কথাটি পুরোপুরি ভুল।ব্ল্যাক শার্ট ইন করে পরায় কবীরের দর্শনে তোশার মনটা কী দূর্বল হয়ে উঠলো?কী সুন্দর কায়দা করে হাঁটে লোকটা।কবীর এসে সরাসরি মায়ানের বাবা-মায়ের সঙ্গে আলাপ করে নিলো।একবার তোশার সঙ্গে অবশ্য দৃষ্টি বিনিময় হলো।
“লায়লা,ওদের এখন বের হওয়ার সময়।তোমরা এখান থেকে সরে গিয়ে বসো।আমি মায়ানদের নিয়ে আসছি।”
“জি ভাই।একা যাবেন?”
“না তোশা যাবে সাথে।বাবা এতোদিন পর মেয়েকে দেখলে একটু বেশী খুশি হবে।”
তোশা যেন এই মুহুর্তের অপেক্ষায় ছিল।মাথা নিচু করে হেসে কবীরের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটা আরম্ভ করলো।ক্ষণ দূরত্ব অতিক্রম করে তোশার আধখাওয়া আইসক্রিমটা এঁটো করে দিলো কবীর।ফিসফিস করে কন্যার উদ্দেশ্যে বলল,
“ভালোবাসা বাড়িয়ে দিলাম মাই লাভ।”
“কেউ দেখলো না তো?”
“এতো ভয়?”
“আমার নেই।যদি আপনি পান ভয়।”
“হুঁ?পাগল মেয়ে।স্মরণে আছে আমি বলেছিলাম আমি ব্যাথাময়?তো যে আ’ঘা’ত দিতে জানে সে কখনো ভীতু হয়না।”
“আজ আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে জানেন?”
“তোমার কণ্ঠে নতুন কিছু নেই বেলাডোনা?আমার প্রশংসায় সবসময় নিজেকে মাতিয়ে রাখো।চলো মায়ান বের হবে।”
কবীরের শক্ত হাতটা আকড়ে ধরলো তোশা।পৃথিবীর সকলকে জানাতে ইচ্ছা হয় মাঝেমধ্যে তার।এই মানুষটির সঙ্গে সে প্রেম করছে।এইযে সুবিশাল লম্বা দেহ ও বিশাল শরীরের মানুষটি।শুধু মাত্র তার ভালোবাসা।
মিনিট দশেক পর মায়ানের দেখা মিললো।বাবার সঙ্গে দেখা হবে এটা নিয়ে সে খুব একটা উত্তেজিত না হলেও মানুষটাকে যখন স্বচক্ষে দেখলো তখন বুকটা ভারী হয়ে গেলো তার।এইযে পাতলা গড়নের সাদামাটা লোকটা মায়ান চৌধুরী।তাইয়ুবা চৌধুরী তোশার বাবা।চোখের কার্ণিশে অশ্রু এসে গেলো মেয়েটির।অবশ্য একই অনুভূতি মায়ানেরও হলো।সকলকে ভুলে সে আগে তোশাকে দেখলো।আত্নাটা কেমন করে উঠলো তার।পাশে থাকা নিজের দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী টিনাকে বলল,
“আমার মতোন অসুন্দর একটা মানুষের ঘরে এতো সুন্দর হীরা কীভাবে এলো?”
স্ত্রীর জবাবের আগে তোশাকে চিল্লিয়ে ডেকে উঠলো মায়ান।কাছে গিয়ে জড়িয়েও ধরলো।বাবার স্পর্শে মেয়েটাও গলে গিয়ে কেঁদে উঠলো।একটা বৈবাহিক বিচ্ছেদে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়তো সন্তানের হয়।
“তোশামণি আমার মেয়ে।আমার মা।দেখি কতো বড় হয়ে গিয়েছে।এতো সুন্দর হয়েছো।জানো টিনা, তাহিয়া এমন দেখতে ছিল।ঠিক যেন তাহিয়া?”
টিনা নির্বিকার হাসলো।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নিজের ছোট্ট ছেলে মেয়ের হাতগুলো শক্ত করে ধরলো।কিছুক্ষণ বাবা-মেয়ের মিলনের পর মায়ান তাকে ছাড়লো।
“কবীর,তুই সর।তোর এতো রুপের আগুনে আমার চোখটা জ্ব’লে যাচ্ছে।”
কবীর হাসতে হাসতে জবাব দিলো,
“চোখ বুড়ো হয়ে যাচ্ছে।সেই বাহানা দে ব্যাটা।তার আগে বুকে আয়।”
কবীরের সঙ্গে আলিঙ্গনে মত্ত্ব হলো মায়ান।তোশা নিজেকে ঠিক করতে ব্যস্ত।টিনা এক দৃষ্টিতে তাকে দেখছে।নিজের উপস্থিতি মায়ানকে মনে করিয়ে দিয়ে টিনা শুধালো,
“মেয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবেনা মায়ান?”
“ও হ্যাঁ।তোশা এটা তোমার মা।”
নিজ পিতার দিকে কেমন বর্ণনাহীন দৃষ্টি দিলো তোশা।কবীর অবশ্য বুঝতে পারলো মায়ানের ভুল সম্বোধন।কিন্তু সে আগ বাড়িয়ে কিছু বলল না।বরং তোশা জবাব দিয়ে বলল,
“আমার মা তো বাসায়।হ্যালো আন্টি আমি তোশা।”
টিনা অবশ্য অপ্রীতিকর অবস্থা হাসিমুখে কাঁটিয়ে নিলো।কবীর তাড়া দিয়ে মায়ানদের এগিয়ে যেতে বলল।বাবাকে দেখে যতোটা খুশি হয়েছিল তোশা তা ঝোড়ো হাওয়ায় ভোঁ’তা হয়ে গেলো।বিরস মুখে এগিয়ে যেতে নিলে কবীর হাতখানা ধরে থামিয়ে দিলো,
“কী সমস্যা?”
“আমার মা একজন।বাবা কেন তাকে আমার মা বলল?হতে পারে তার স্ত্রী দুজন ছিল।”
“রিলাক্স মেয়ে।আহনাফ তোমাকে কখনো মা ডাকবেনা বলে মনে হয়?”
“কিন্তু..।”
“তোমার বাবা দেশে এসেছে।এখন নানান ধরণের কথা হবে।সবকিছু রেখে চলতে হবে।”
“আমি একা পারবো না।”
কবীরের ভ্রুঁ আন্দোলিত হলো।প্রেমিকার নরম হাতখানি নিজের বুকের পাশে রেখে শুধালো,
“কবীর শাহ তার ভালোবাসাকে একা রেখে কখনো সরে যাবে মনে হয়?স্বপ্ন দেখো সুন্দর একটি ভবিষ্যতের।তাছাড়া অন্য সবকিছুতে রেস্ট নাও।লিটল চেরীর এতো ভাবতে হবেনা।”
“আপনি সত্যি আমার সাথে থাকবেন?”
“এটা আমার থেকে লিটল চেরীর মনটা ভালো জানে।চলো এখন।”
“কিছুক্ষণ কথা বলেন আমার সঙ্গে।”
“এতো কী বলবে শুনি?”
মায়ান অনেকটা এগিয়ে গিয়ে কবীর-তোশার খোঁজে পিছন ফিরে এসেছিল।কিন্তু সামনে থাকা দৃশ্যটি তার মনে দাগ কেঁটে দিলো।এমন না কবীরের মুখের হাসি সে কখনো দেখেনি।কিংবা তোশার কথা বলার বাচনভঙ্গি।মায়ান পূর্ব থেকে বিচক্ষণ মানুষ।প্রথম দেখায় কারো মধ্যে কেমন অনুভূতি চলছে তা বলতে পারে।আশ্চর্যভাবে তা মিলে যায়।তোশা ও কবীরের মধ্যে এখনও আলাপ চলছে।কন্যার হাতটাও তামাটে পুরুষের বক্ষ সীমানায়।
“তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেন?মায়ান?”
“টিনা তুমি একা কেন?বাচ্চারা কোথায়?”
“লায়লা আপুর কাছে।”
“একটা জিনিস দেখো তো ওদিকে।আমার মেয়ের হাত কেন কবীর ওভাবে ধরে আছে?”
“কী বলতে চাও?দেখো ইঙ্গিতটা কিন্তু ভীষণ..।”
“আমি নিজের বন্ধুকে বিশ্বাস করি।সঙ্গে মেয়েকেও।”
“তাহলে?বাদ দাও এসব।”
“টিনা তুমি বুঝতে পারছো না।আমি কী নিজের পঁচিশ বছরের বন্ধুকে চিনবো না?তার চাহনি কিংবা হাসি?”
“রিলাক্স মায়ান।তুমি কেবল দেশে এলে।।সত্যিকার অর্থে কী বুঝতে চাচ্ছো?”
“জানিনা।কিন্তু শুধু এটা বুঝতে পারলাম।আমার বন্ধু কবীর শাহ একজন পুরুষ।এবং বিশ বছরের ছোট্ট তোশামণি একজন নারী।”
“এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে জাজ করছো?”
“অভিজ্ঞতা।”
মায়ান থামলো।পুনরায় কবীরের চোখের দৃষ্টিতে দেখলো।তোশাকে একমনে দেখে যাচ্ছে সে।কী অদ্ভূত মায়াময় দৃষ্টি কবীরের।মায়ান শুকনো ঢোক গিলে বলল,
“আমি কবীর শাহ এর চোখে এই দৃষ্টি নতুন দেখছি।তবে অনুভূতিগুলো উপলব্ধি হচ্ছে।অথচ যদি আমি ভুল প্রমাণিত হই।তাহলে কতো না ভালো হবে।”
চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।সকলে সুন্দর করে রেসপন্স করবেন।মায়ান তো শেয়াল চালাক বের হলো।কী মনে হয়?মায়ানকে সাহায্য করবে কে?
Photo copy :unknown