#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩৪
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“মেয়েদের চোখ ও সমুদ্রের মধ্যে মিল কোথায় আছে জানো?দুটোর জল কখনো শেষ হয়ে যায়না।কেঁদো না বড্ড মিষ্টি লাগছে দেখতে।”
অশ্রু ভেজা চোখ দুটি আকারে সংকুচিত হয়ে উঠলো।রক্তিম নাক দিয়ে লম্বা একটি নিশ্বাস টেনে তোশা আস্তে করে বলল,
“ঢং করেন।”
“তোমার থেকে শিখেছি মেয়ে।বিয়ের ভূত মাথা থেকে আপাতত নামাও।তোমার বাবা দেশে আসছে ছয় মাস পর।তখন সবকিছু সকলে জানবে।”
উচ্ছাসিত কণ্ঠে তোশা শুধালো,
“আব্বু দেশে আসছে?কিন্তু আম্মুকে তো এখনও বিয়ে দিতে পারলাম না।”
“তাহিয়া বিয়ে করতে চায়না।ব্যাপারটা বড় করবেনা।চলো অফিসে লেট হচ্ছে আমার।”
কবীর পকেট থেকে রুমাল বের করে তোশার গাল দুটি মুছে দিলো।মেয়েটাও সর্বোচ্চ অধিকারে নিজের সিক্ত নাকটি কবীরের টাই তে মুছে নিলো।
তোশার অফিস রোমান্সের স্বপ্নটাও পূরণ হলো না।উল্টো গম্ভীর এক রমণীর সান্নিধ্যে পাঠিয়ে দিলো কবীর।মহিলার নাম মিরা রহমান।দেখতে শুনতে বেশ ভালো।মূলত তোশার চোখে পৃথিবীর সব নারী সুন্দর।নিজ নিজ উপায়ে।
“তুমি কী রোজ অফিসে আসবে তোশা?”
মিরার প্রশ্নে সোজা হয়ে বসলো তোশা।চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে বলল,
“যেদিন ভার্সিটিতে ক্লাস কম থাকবে অথবা শ্যুটিং থাকবেনা সেদিন আসবো না।”
“তুমি অভিনেত্রী?কীসে অভিনয় করেছো?”
“এখনও শুরু হয়নি অভিনয়।কেবল একটা কন্ট্রাক সাইন করেছি।”
“ভালো লাগে অভিনয়?”
“তেমন একটা না।”
মিরা উষ্ণ এক শ্বাস ছেড়ে বলল,
“আমার মা ভালো অভিনয় জানতেন।অনেক বড় বড় হিরোইনদের সাথে সাইড রোল হিসেবে কাজ করেছেন।যদি ছবি দেখাই চিনতে পারবে।আগের মুভিগুলো দেখা হয়েছে?”
“তেমন একটা না।”
“থাক তাহলে চিনবেনা ছবি দেখেও।”
কথাটি বলে মিরা পুনরায় নিজ কাজে মনোযোগ দিলো।তোশা সৌজন্যতাবসত বলল,
“দেখাতে পারেন।আমি চিনবো হয়তো।”
সুন্দর মিষ্টি করে হাসলো মিরা।ল্যাপটপটি বন্ধ করে নিলো।
“দেখাবো।তোমাকে ভালো লেগেছে মেয়ে।এজন্য কিছু উপদেশ দেই অভিনয়ে স্বাবধানে পা বাড়াবে।পেশাটি যতো উজ্জ্বল ঠিক ততোটাই গভীর।”
“জানি আমি।তাছাড়া হয়তোবা এটাই শেষ অভিনয় হবে।আপনি অভিনয় জগত সম্পর্কে খুব জানেন তাইনা?”
“হুম।”
“কখনো অভিনয় করেছেন?যেহেতু আপনার মা এই পেশায় ছিলেন।”
“করেছি বৈকি।তবে ভালো স্মৃতি নেই।”
“কেন?”
লম্বা একটা শ্বাস নিলো মিরা।যে ঘটনাটি মাথায় চলছে সেটা সে বহুবার বহু মানুষকে বলেছে।
“কেন এর জন্য বিশেষ একটি ঘটনা আছে।আমার বয়স এখন অনুমান করতে পারবে?এইতো পঞ্চাশের কোঠায়।ধরে নাও আজ থেকে সাতাশ বছর পূর্বে বিখ্যাত একজন নায়কের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলাম আমি।সাইড নায়িকা নয় মূখ্য অভিনেত্রী হিসেবে।শুট্যিং একমাস চলল এরমধ্যে সেই অভিনেতার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলো।গোপনে বিয়েও করে ফেললাম।কিন্তু হুট করে শ্যুটিং বন্ধ হয়ে গেলো।খবর নিয়ে জানতে পারলাম যার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে সে পূর্ব থেকে অনেক বড় একজন মন্ত্রীর মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিল।আমার কথা জানার পর তার প্রথম স্ত্রী শ্যুটিং বন্ধ করে দিলো।ব্যস দুনিয়া ঘুরে গেলো আমার।এরপর সেই মানুষটাও যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো।অভিনয় তো আর হলো না।বাস্তব জীবনেও কেমন যেন পিছিয়ে গেলাম।বিয়েও হলো না আর মানুষটার সঙ্গে বিচ্ছেদও না।”
মিরা চশমার ফাঁকে আঙুল দিয়ে চোখ মুছলো।তোশা বুঝতে পারলো মহিলাটি এই ঘটনা সবাইকে বলে অভ্যস্ত আছে।ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেলো ছোট্ট যুবতীর।কতো মানুষের কতো রকম গল্প আছে।বিব্রতবোধ থেকে নিজেকে উদ্ধার করতে সে উঠে দাঁড়ালো।
“আমি একটু কবীর শাহ এর কাছে যাচ্ছি আন্টি।”
মিরা হেসে বলল,
“স্যারকে তুমি নাম ধরে ডাকো কেন?সে কিছু বলেনা?”
“উহু,বরং ডাকটা ভালোবাসে।”
“তোশা, আমার কাহিনীর আরো একটি রুপ আছে জানো?মানুষটা আমাকে ছেড়ে দেওয়ার মাস দুয়েক পর চমৎকার একজন মানুষের অস্তিত্ব আমার শরীরের ভেতর পেয়েছিলাম আমি।বাবার মতোন সে নিজেও বিখ্যাত একজন অভিনেতা।পথ চলতে তোমার দেখা হতে পারে তার সঙ্গে।নামটা বলবো না।কারণ এবার তুমি তাকে চিনবে।যাকে তার মা-বাবা কেউ পরিচয় দেয়নি নিজেদের।”
“সে কী প্রতীক স্যার?”
মিরা মুখ দিয়ে বিরক্তিকর একটি শব্দ করে বলল,
“প্রতীক হওয়ার প্রশ্ন আসেনা।সে অন্য কেউ।মন বলছে দেখা হবে তোমাদের।”
তোশার মন অবশ্য সেটি বলল না।জোরপূর্বক অধরযুগলে হাসি টেনে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।পথ চলতে গিয়ে মিরা কাহিনী আদৌ সত্য কীনা সেটা খুব করে ভাবতে লাগলো সে।
(***)
“বৃষ্টি কল্লোলকে পছন্দ করে।এজন্য চাচ্ছে তোশার সাথে তুমি সম্পর্কটা ভে ঙে দাও।চাচার প্রেমিকার মামাতো ভাইকে পছন্দের কথা বলতে ওর লজ্জা লাগছে।”
কবীরের ভ্রু দুটো কুঁচকে গেলো।গলার টাই একটু ঢিলে করে নিলো।দিশাকে দেখার পর থেকে যেন শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে তার।
“এসব কথা বলার জন্য এসেছো?আবার সেই দিনে যেদিন তোশা আমার সাথে অফিসে এসেছে?”
চোখ-মুখের পেশী শক্ত করে রেখে দিশা জবাব দিলো,
“হ্যাঁ।বরং তাহিয়াকে ফোন করে ওর থেকে শুনে এসেছি।”
“লাভটা কী এরকম করে?আমি তোমার প্রাক্তন।বিয়েটা ভাঙার সময় এসব মনে ছিলনা?”
“ছিল।কিন্তু তোশার সঙ্গে তোমার পুরোপুরি সম্পর্ক জুড়তে দিবো না আমি।অল্প বয়সী বউ পেয়ে আহনাফকে ভুলে যাবে তুমি?রঙীন রাতের আড়ালে আমার ছেলটা শুধুমাত্র একজন ফেলনা হয়ে থাকবে।”
কবীরের মন চাইলো দিশাকে ক ষি য়ে একটা চড় দিতে।মাঝেমধ্যে তার কাছে অবিশ্বাস হয় এই মানুষটা এক সময় সত্যি তার স্ত্রী ছিল তো?ছিল কিন্তু কোনগুণে কবীরের পছন্দ হয়েছিল তাকে সেটিই রহস্য।
“আহনাফের সাথে তোশার যতোটা ভালো সম্পর্ক সেটির এক আনাও তোমার সঙ্গে নেই।তাছাড়া তোশাকে মানসিক ভাবে এতোটা কষ্ট দেওয়া কতোটা সঠিক?”
দিশা জবাব দেওয়ার পূর্বে দরজা খুলে তোশা প্রবেশ করলো।যুবতীর চোখের রঙ বদলানো খেয়াল হলো কবীরের।দিশা যেন এই সুযোগটির অপেক্ষায় ছিল।আরামে চেয়ারে গা হেলিয়ে বলল,
“কবীর তোমার মনে আছে মালদ্বীপে বেড়াতে গিয়েছিলাম আমরা।সেখানে বীচের মধ্যে রাতের বেলায় কতোটা উন্মাদ হয়ে উঠেছিলে তুমি?আহা সেসব স্মৃতি মনে হলে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠি।”
কবীর তোশা দুজনে কিছুটা সময় নির্বোধের অনুরুপ দিশার পানে তাঁকিয়ে রইলো।কিন্তু অবাক হওয়াকে দ্রুত কাঁটিয়ে কবীর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তোশাকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল,
“অতীত মনে রাখা আমার স্বভাবে নেই দিশা।যদি বলো আগত কিছু স্মৃতির আশায় রোমাঞ্চিত হয়ে উঠে আমার মন।বিশেষ করে তোশা আর আমি একটু আগে প্ল্যান করছিলাম কীভাবে বিয়ের পরের দিন গুলো কাঁটাবো।আর কিছু না হোক।আমার বেলাডোনা তোমাকে কখনো সেসব উজ্জ্বল ভালোবাসার চিহ্ন দেখানোর মতোন রুচি রাখেনা।তো ভয় নেই।”
তোশার ছোট্ট মাথায় আগের কথা গুলো না ঢুকলেও প্ল্যানের বিষয়টা ভালো করে ঢুকলো।নিজ মনে মনে সে বলল,
“আমরা এসব প্ল্যান করলাম কখন?স্বপ্নে?”
চলবে।
সকল পাঠকদের ইদের শুভেচ্ছা রইলো।ইদ মোবারক।