#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১৯
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“কলিকে আগে থেকে ওর বন্ধু পছন্দ করতো।লোকটার স্ত্রী মা রা গিয়েছে গত বছর।তাই বিয়ে ঠিক হওয়ার কথা শুনে বলেছে পছন্দের বিষয়টা।এখন সেই ছেলে আর কলি মিলে মোটামুটির সংসার গড়বে।এই কারণে বিয়েটা হচ্ছে না তোমার সঙ্গে।আমি কীভাবে আন্টিকে বলবো বিষয়টি।”
“মোটামুটির সংসার?”
“ছেলেটির স্বাস্থ্য মোটা।”
কবীরের কাছে নিজ বিয়ে ভাঙার বিষয়টি হাস্যকর না লাগলেও কিশোরী তোশা উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো।তাহিয়া মেয়েকে চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বলল।
“দেখো কবীর।”
“এই বিষয়ে পরে কথা হবে তাহিয়া।এখনও আসিফ ভাইয়ারা আছেন।”
“তুমি একটু তাদের নিয়ে লাঞ্চ করো।আমি মেয়েকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যাবো।”
“ততোসময়ে ওর খুদা লেগে যাবে।লাঞ্চ করিয়ে নিয়ে যাও।”
কবীরের একটু বেশীই তোশার প্রতি চিন্তা প্রকাশ পায়।যা তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে ঠিক মিশেনা।বিষয়টি তাহিয়া অনেকবার খেয়াল করেছে।পরবর্তীতে সঠিক কিছু অনুসন্ধান করে না পাওয়ায় চিন্তাটি এগিয়ে নিয়ে যায়নি।আসিফ ও তার বাবা আবদুল এমন সময় কথা বলতে বলতে সেখানে প্রবেশ করলো।সর্বপ্রথম আসিফের টেবিলে বসে থাকা ছিমছাম গড়নের তোশার উপরে নজর পড়লো।মায়ের সঙ্গে যতো বিবাদ হোক।তোশার সাথে পরিচয় হওয়ার লোভ সে সামলাতে পারলো না।পাশে বসতে বসতে বলল,
“তাহিয়ার ছোট ভার্সন তোমার নাকী?”
“আমাকে বলছেন?”
“জি ম্যাডাম আপনাকে।”
অচেনা মানুষ বিধায় তোশা মায়ের পানে তাঁকালো।তাহিয়া আস্তে করে বলল,
“আমাদের সিনিয়র ছিলেন ইনি।নাম বলো তোমার।”
“তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।”
“সুন্দর নাম।আমি আসিফ মির্জা।”
“আমাকে আম্মুর ছোট ভার্সন বললেন কেন?”
“খানিকটা তাহিয়ার কিশোরী বয়সের মতোন তুমি।এই কারণে।আব্বু মনে আছে এই বয়সে থাকতে তুমি রোজ তাহিয়াকে পটেটো চিপস কিনে দিতে।”
আবদুল ছোট্ট করে ‘হুম’ বলল।সঙ্গত কারণে সে তাহিয়াকে এখন পছন্দ করেনা।অথচ এক সময় মেয়ের থেকেও বেশী ভালোবাসতেন।অতীতের জন্য এতো সময় অচেনার বেশ ধরে ছিল।কিন্তু ছেলের এতোটা পরিস্ফুটিত হওয়া পছন্দ হচ্ছে না তার।
“কবীর তোমাদের তিনজনের পুরো ফাংশন গেস্ট হিসেবেও এটেন্ড করতে হবে।আমি ইনভাইট করে যাচ্ছি।”
“হয়তো আমার সম্ভব হবেনা ভাইয়া।কিন্তু তাহিয়া থাকবে।”
“কোনো কথা শুনছিনা।তাইয়ুবাকে নিয়ে আসবে তোমরা।”
কবীর সৌজন্যেবোধক হাসলো।ব্যক্তিটার খাবার গ্রহণ করাও তোশার কাছে অনন্য লাগে।সে আড়চোখে তাঁকিয়ে আছে।হুট করে কবীরের সঙ্গে দৃষ্টির মিলন ঘটলো তার।ব্যক্তিটা ভ্রু উঁচু করে ইশারায় হয়তো জিজ্ঞেস করলো এভাবে দেখছে কেন?তোশা মিষ্টি হেসে মাথাটা এপাশ ওপাশ দুলালো।খাওয়া দাওয়া শেষে আসিফরা বিদায় নিলো।তোশার মাথায় সুন্দর করে হাত বুলিয়ে আসিফ বলল,
“তাইয়ুবা তুমি কিন্তু ফাংশনে আসবে।আমি অপেক্ষায় থাকবো।”
“অবশ্যই আঙকেল।”
গাড়ীতে উঠে বসলো তারা।আসিফ উষ্ণ শ্বাস ফেলে স্টার্ট করলো গাড়ীটি।আবদুল একটু অসন্তোষ প্রকাশ করে বলল,
“তাহিয়ার মেয়ের প্রতি হঠাৎ এতো মায়া দেখালে আসিফ?ভুলে গিয়েছো অতীত?”
“না আব্বু।কিন্তু দ্বিতীয়বার হয়তো একটা সুযোগ পেতে যাচ্ছি আমি।কেন কাজে লাগাবো না।”
“এতোকিছুর পরেও তাহিয়ার প্রতি অনুভূতি আছে?সতেরটি বছর অতিক্রম হয়ে গিয়েছে আসিফ।দিন দুনিয়া বদলে গিয়েছে।”
“আব্বু,ভালোবাসা তো বদলায়নি।যা যুবক বয়সে পাইনি তা আজ যৌবনের শেষে পেয়ে গেলে মন্দ হয়না।হোক না দেরী।”
“বিষয়টা আমার ভালো লাগছেনা।ডিভোর্সের কারণটাও জানিনা।অথচ তুমি পুনরায় স্বপ্ন দেখছো।স্বাবধান থেকো।”
“জি বাবা।বাই দ্যা ওয়ে বাচ্চা মেয়েটা কিন্তু সুন্দর।রেডিমেড মেয়ে পেয়ে গেলে বরং এই বয়সে ভালো হবে।”
আবদুল উষ্ণ শ্বাস ফেললো।ছেলে তাকে সবসময় বন্ধু হিসেবে দেখেছে।এই কারণে মনের কথাগুলো বিনা সংকোচে বলতে পারে।ছেলে এতো বছরেও বিয়ে না করার দুঃখ তার যদি ঘুচে যায় তাহলে সে নিশ্চিন্ত হতে পারবে।
(***)
কতোগুলো প্রাণবন্ত ইন্টারে পড়ুয়া মেয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে ও আলাপ করছে।কোনোকিছু নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একে অপরের উপর হাসতে হাসতে ঢলে পড়ছে।হুট করে তাদের কানে পুরোনো হিন্দি সিনেমার গান ভেসে এলো।তৎক্ষনাৎ তারা থেমে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধ লোকটির উদ্দেশ্যে বলল,
“হ্যালো হ্যান্ডসাম।আজকেও কিশোর কুমার চলছে?”
বৃদ্ধ লোকটি হাসলো।গালের চামড়ায় আরো কয়েকটি ভাঁজ পড়লো।
“ইয়াং লেডিস্ তোমরা জানো না কিশোর কুমার একটি ইমোশন।কী ব্যাপার পড়তে যাচ্ছো তোমরা?আমার সাথে কফি ডেউটের কী হলো?”
“ওটা পরের শুক্রবার।আমরা সকলেই যাবো।”
“মনে থাকে যেন সুন্দরীরা।”
মেয়েগুলো সম্মতিতে মাথা দুলিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো।পাশের কোচিং সেন্টারে তারা পড়াশোনা করে।বৃদ্ধ লোকটির নাম হুমায়ুন।এইতো গত মাসে বয়স বাহাত্তরের ঘর ধরলো।কিন্তু মনটা যেন এখনও সেই সুইট সিক্সটিন।নতুন করে দুনিয়া দেখার ইচ্ছা জাগে।মেয়েগুলোর সাথে এরকম উপহাস তাকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলে।ভেতরে এসে নিজ মিসেসের উদ্দেশ্যে বলল,
“মেয়েগুলো সুন্দর।তাদের সাথে কথা বলাতে তোমার হি ং সা হয়না?তোশামণি তোমার দাদীর আমার প্রতি ভালোবাসা চলে গিয়েছে।”
হুমায়ূনের আফসোস মাখা কণ্ঠে মৃদু হাসলো তোশা।দাদীর হাতে খেতে খেতে জবাব দিলো,
“দাদীকে নিয়ে কফি ডেইটে যাও।দেখবে ভালোবাসা জন্মাবে।”
“তোমার দাদীর কী সেই সময় আছে।কী মিসেস কথা বলছেন না কেন?”
শরীফা বিরক্ত হয়ে বলল,
“আপনি কী ইন্টারে পড়েন?না তো।ওই মেয়েগুলো পাগল বুড়ো দেখে মজা নেয়।”
“তোমার মনে হয় আমি এনাফ হ্যান্ডসাম না।”
“না।”
“অপমান মিসেস।”
হুমায়ূন এতোক্ষণ মজা করলেও এবার প্রসঙ্গ বদলে বলল,
“খয়ের শাহ(পান খায় যে খয়ের দিয়ে) যে বিবাহিত তুমি তা জানতেনা তোশা?এই কারণে আমি বলেছিলাম সব খোঁজ নিয়ে দেখো।এখন কী চাও?শুনলাম অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলে।”
“দাদু আমি জানতাম না।তোমরাও বলো নি।”
“বিষয়টি সাধারণ ছিল।এখনও কী ভালোবাসার ভূত আছে?”
তোশা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলল।শরীফা রাগত সুরে বলল,
“তোমার ভালোবাসা এতোদিনেও কমলো না?শুধু কান্নাকাটি করো দেখে সাহায্য করি।যদি মায়ানের বাবা এসব জানে আমাকে কী বলবে জানো?বড় ভাবী হিসেবে কিন্তু খুব সম্মান করে। খয়ের শাহ এর প্রতি বিশ্বাস আছে ও ভুল করবেনা।এজন্য যা খুশি তাই করতে পারছো।”
“কবীরকে তোমরা খয়ের শাহ বলো কেন?গায়ের রঙের জন্য?”
শরীফা মাথা দুলালো।সে ও হুমায়ূন হচ্ছে মায়ানের আপন চাচা-চাচী।সপ্তাহে একবার তাদের কাছে তোশাকে দিয়ে যায় তাহিয়া।কারণ বুড়ো মানুষ দুটো বড় একা।হুমায়ূন তাদের কথার মাঝে বলল,
“আরে শুনো তোশামণি।যখন তোমার মা-বাবার বিয়ের কথা জানলাম।তখন তো তুলকালাম লেগে গেলো।ছেলে-মেয়ে এখনও এতো ছোট্ট।তোমার দাদা নিজের ব ন্দু ক নিয়ে বের হলেন।এতো অসম্মানের থেকে মে রে ফেলবে ছেলেকে।তখন এই খয়ের মানে কবীর শাহ তোমার দাদার সামনে দাঁড়িয়ে সাহসী হয়ে বলেছিল,’বিয়ে আমি দিয়েছি কী করবেন করেন?’
আবার যখন এতে মায়ানের বাবা আরো রেগে গেলো।তখন বলেছিল’ ভালোবাসা হয়ে গিয়েছে।আমি আপনি বা যে কোনো মানুষ থামানোর কে?যে যার সাথে সুখী থাকে।’
কথাগুলো এখনও আমার কানে এসে লাগে।সেই কবীর শাহ এর প্রেমে তুমি কীভাবে মজলে সেটাই ধোঁয়াশা তোশা।যদি কেউ জানে আমরা তোমাকে সাহায্য করেছি তখন আমাদের ঘৃ ণা করবে মানুষ।”
তোশা সোফা থেকে উঠে এসে হুমায়ূনকে জড়িয়ে ধরলো।আপন দাদার থেকে হুমায়ূন বেশী প্রিয় তার।
“করুক।কিন্তু আমি তোমাদের খুব ভালোবাসি।জানো দাদা কতো চেষ্টা করেছি লোকটাকে ভুলতে।কিন্তু মন মানেনা।শরীরে যন্ত্রণা হয়।তোমরা বলো সময় দিলে সব শেষ হয়ে যাবে।”
“হয়ে যাবে।কিন্তু সীমাতে থেকে চেষ্টা করো দেখো।অন্তত আমি বা তোমার দাদী চাইনা এই বয়সে কোনো মন ভাঙা নিয়ে বড় হও।বাকী ওই বলি বিল্ডার খয়ের শাহ এর প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।ও তোমাকে মেনে নিবেনা।যদিও পুরুষ মানুষ তো বলা যায়না।”
“সে সত্যিই এতো সাহসী ছিলেন?”
“কবীরকে এখনও ঠিকঠাক চিনো না তোশা।মনে নেই কীভাবে তোমাকে পানি খাইয়ে মাতাল করেছিল।ও ঠিক এমনই।”
তোশা দাদার কথায় খিলখিল করে হেসে উঠলো।কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে খুব ভীত হয়ে আছে।অনুভূতি গুলো এতো বে ই মান কেন সেটাই কিশোরী বুঝে উঠতে পারছেনা।তাছাড়া দুনিয়াতে এতো মানুষ থাকতে কবীর শাহ নামক পা ষা ণ মানুষটার প্রতি ভালোবাসা কেন তৈরী হলো?যেখানে অসম বয়সের য ন্ত্র ণা আছে।জটিল সম্পর্কের সমীকরণের দেখা মিলে।যা ঘন্টার পর ঘন্টা চেষ্টা করলেও সিদ্ধ হয়না।
চলবে।