#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১৮
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“স্কুলে না গিয়ে এখানে কী করছো তোশা?”
দিশার প্রশ্নে বিব্রতবোধ করলো তোশা।এতোক্ষণ যে বাতাবরণ উষ্ণতায় মোড়ানো ছিল হুট করে তা নির্জীব হয়ে গেলো।শীতল অসহনীয় হয়ে উঠলো চারিধার।নির্জনতায় শুধু একটু দূরে থাকা প্লেট ও চামচের টুংটাং স ং ঘ র্ষের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
“ম্যাম,আমি অসুস্থ ছিলাম।এই কারণে যাওয়া হয়নি।”
“রেস্ট্রুরেন্ট কী সুস্থ হওয়ার জায়গা?”
তোশা আস্তে করে জবাব দিলো,
“এখানে না এলে আমি সুস্থ হতাম না।”
বাক্যটির বিপরীতে ঠিক কী বলবে দিশা সেটা খুঁজে পেলো না।অথচ যাকে ঘিরে এই দ্বিধার মেলা বসেছে।সেই কবীর শাহ নিশ্চুপ হয়ে ফোন ঘাটছে।মুখটা তুলেও দিশার দিকে দেখলো না।
“ঠিক আছে।কাল স্কুলে দেখা হবে।নিজের খেয়াল রেখো।”
“জি ম্যাম।”
দিশা চলে গেলে তোশা আস্তে করে কবীরের পাশে এসে বসলো।লোকটার মুখের উজ্জ্বলতা কয়েক ধাপ নিচে নেমে গেছে যেন।
“হঠাৎ আপনার কী হলো কবীর শাহ?”
“মিটিং আছে।তোমাকে পৌঁছে দিচ্ছি।”
“না যেতে পারবো।মনে থাকবে তো আমরা এখন থেকে বন্ধু?”
থমথমে গলায় কবীর জবাব দিলো,
“থাকবে।কিন্তু আজকের পর থেকে এভাবে দেখা করতে আসবেনা।বিষয়টা ভালো দেখা যায়না।”
“আমার সাথেই সব ভালো দেখা যায়না আপনার।অথচ আড়ালে বেলাডোনা বলে ঠিক ডাকেন।এমনকি।থাক বললাম না।কিছুটা হুঁশ ছিল আমার।”
কবীরের অক্ষিগোলক আকারে যেন কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়ে গেলো।পরক্ষণে মৃদু হেসে বলল,
“সব চুম্বন কামনার হয়না।কিছু স্পর্শ সম্মানেরও হয় বেলাডোনা।”
(***)
রাতের খাবার তিল পরিমাণও খেতে পারেনি দিশা।কী যে য ন্ত্র ণা হচ্ছে তার।একে তো কবীরের বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে মনটা খারাপ ছিল।আবার তোশার সঙ্গে আজ রেস্ট্রুরেন্টে দেখা হলো।কবীরের বাহুতে মেয়েটা যে মাথা ঠেকিয়ে ছিল।সেটা খুব ভালোমতন দেখেছে।অনেকটা সময় নিজের সঙ্গে দ্বন্ধতে লিপ্ত থেকে অবশেষে কবীরের নাম্বারে ডায়াল করলো।প্রথম কয়েকবার রিসিভ হলো না।কিন্তু একসময় অপ্রত্যাশিতভাবে কবীরের কণ্ঠটি শোনা গেলো।
“বলো।”
“কবীর তুমি কী পাগল হয়ে গিয়েছো?আমি শুধু জানতাম মেয়েটা সঙ্গে কথা হয়।কিন্তু ওরকম কোনো সম্পর্ক নেই।তবে আজ রেস্ট্রুরেন্টে যা দেখলাম?ওসব কী?”
“স্টপ দিশা।আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে জানো।”
“জানি।এই কারণে বলছি তোশাকে এতোটা আস্কারা দিওনা।ও বাচ্চা একটি মেয়ে।এবং তোমার বন্ধুর মেয়ে।মায়ান যদি কখনো জানতে পারে কেমন হবে?আমার ভয় লাগছে কবীর।তোশা অনেক ভালো একটি মেয়ে।তোমার জন্য জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে ওর।”
“এতো কথা কেন বলো দিশা?আমার জীবনে কী হচ্ছে না হচ্ছে সেটা দেখার বিষয় তোমার না।আমাকে কী চরিত্রহীন মনে হয়?”
কথাগুলো বলার সময় কবীরের কণ্ঠে ভীষণ রাগ মিশে ছিল।সে পুনরায় বলল,
“আমি জানি কীভাবে ওকে হ্যান্ডেল করতে হয়।আমার বিয়ে ও বাচ্চার কথা শুনে মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।সেখানে কঠোর আমি কীভাবে হবো?আগে যেটা হইনি।”
পূর্ব দিক থেকে উষ্ণ বায়ু এসে দিশার মুখোমন্ডলে লুটপাট করতে লাগলো।তবুও যেন অনবরত ঘামতে থাকা স্যাতস্যাতে অনুভূতি কমছেনা।কিছুটা আবেগ ও আন্দোলিত কণ্ঠে শুধালো,
“তোশাকে ভালোবাসো তুমি কবীর?”
“ভালোবাসা?”
শব্দটি কবীর শাহ নামক শক্ত পুরুষকে গম্ভীর চিন্তায় ফেলে দিলো।সে চট জলদি কোনো জবাব দিতে পারছেনা।তোশাকে সে অনুভব করে।এই কথাটি তো মিথ্যা নয়।দিশা এই নিরবতার চাদরকে সরিয়ে বলল,
“তবে ভালোবাসো মেয়েটিকে?”
“সম্ভবত অনুভূতি তৈরী হয়েছে।আমি এটা অস্বীকার করতে পারবো না।”
“লজ্জা করলো না নিজ প্রাক্তন স্ত্রীকে এসব কথা বলতে?”
“আমি নিজ থেকে বলেছি এই কথা?অদ্ভূত।”
দিশা কিছু বলার পূর্বে ফোনটি কেঁটে দিলো কবীর।যেন এরপর কোনো কথা থাকার মতো নেই।অপরদিকে দিশা নামক নারীটি অসহ্য অনলে জ্বলেপুড়ে একদম দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
(***)
“আপনি বিশ্বাস রাখতে পারেন।আমরা নিজেদের বেস্ট দিয়ে একটা ইভেন্ট সম্পূর্ণ করি।আপনার মেয়ের বিয়েতে কোনোকিছুর কম রাখবো না।”
সামনে বসে থাকা ষাট বছর বয়সী লোকটি মৃদু হেসে বলল,
“আপনাদের ভালো নাম আছে দেখে এসেছি মিস.তাহিয়া।বাই দ্য ওয়ে মিস্টার শাহ কোথায়?”
“কবীর আসছে।আপনার সঙ্গে পার্সোনালি কথা বলবে ও।”
ফোন বের করে পুনরায় কবীরকে ম্যাসেজ করলো তাহিয়া।বড্ড উসখুস লাগছে তার।কারণটি হলো সামনে বসে থাকা বৃদ্ধ লোকটিকে সে চিনে।এমনকি তার পাশে বসে থাকা আটত্রিশ বছর বয়সে বেশ খানিকটা যৌবন ধরে রাখা আসিফকেও।একসময় এই আসিফ নামের লোকটি তাহিয়ার জন্য পাগলপ্রায় ছিল।যখন মায়ানের সঙ্গে বিয়ের কথা সকলে জানলো তখন যে লোকটা আ ত্ম হ ত্যা করার মতোও পদক্ষেপ নিয়েছিল সেটাও জানা তাহিয়ার।পরবর্তীতে দেখা হয়নি কখনো।এতোদিন পর ক্লায়েন্ট হিসেবে আসিফকে পাওয়া বেশ বিব্রতকর।অথচ অপর ব্যক্তিটা কেমন নির্জীব শান্ত হয়ে ফুলের সাজসজ্জা দেখতে ব্যস্ত।যেন তাহিয়াকে কখনো সে দেখেনি। সবেমাত্রই পরিচয় হলো যেন। অফিস রুমটায় হুট করে এক তামাটে চাঁদের আর্বিভাব ঘটলো।যে নিজের সমস্ত আলোকছটা নিয়ে চেয়ারে বসার পূর্বে আসিফের সঙ্গে করমর্দন করতে ভুললো না।
“কেমন আছেন আসিফ ভাই?”
“কবীর তোমাকে দেখে তো বয়স আন্দাজ করা যায়না।কী ব্যাপার এতো সৌন্দর্যের?”
“ব্যাচেলর তো।এই কারণে এতোটা সৌন্দর্য।”
আসিফ হেসে বলল,
“আমিও তো এক জীবন ধরে ব্যাচেলর।কিন্তু চুলের রঙ পরিবর্তন হতে শুরু হয়েছে।তোমরা কেমন যেন রহস্যময় মানুষ।কারো সৌন্দর্য কমেনি।”
কথাটি তাহিয়ার দিকে তাঁকিয়ে বলল আসিফ।যাতে তার অস্বস্তি আরো বৃদ্ধি পেয়ে গেলো।এরপর পুরো মিটিং এ তিনটি পুরুষের কণ্ঠ শোনা গিয়েছে।তাহিয়া নিশ্চুপে শুধু কফির কাপে চুমুক বসিয়েছে।ঘড়িতে দুপুর দুটো বাজে।তাহিয়া উঠে দাঁড়ালো হঠাৎ।
“কবীর তুমি একটু কথা বলো।তোশামণি আসছে কীনা দেখছি আমি।”
“তোশামণি কে কবীর?”
কৌতুহলী হয়ে প্রশ্নটি শুধালো আসিফ।
“তাহিয়ার মেয়ে।”
“ওহ।মায়ান কেমন আছে?”
তাহিয়া এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি আর নিতে পারলো না।সে তৎক্ষনাৎ বের হয়ে গেলো।কবীর আস্তে করে বলল,
“আমার মতোন মায়ান-তাহিয়ারও ডিভোর্স হয়েছে।আঙকেল আসুন লাঞ্চ আমাদের সাথে করবেন।”
কিছু যেন বলতে চেয়েছিল আসিফ।কিন্তু পরিস্থিতির চাপে নিশ্চুপ থেকে গেলো।
বাহিরের এক জায়গায় ক্লান্ত পরিশ্রান্ত স্কুল ড্রেস পরা কিশোরীকে দেখে কবীরের অধরে হাসি ফুটে উঠলো।মেয়েটির ঘর্মাক্ত মুখটিও যেন মায়াতে জড়ানো।মেয়েটির প্রতি এতো ভালোলাগা কবীরকে কষ্টের সঙ্গে শান্তিটাও দিয়ে যায়।তাহিয়া যত্ন সহকারে মেয়ের মুখটা মুছে দিচ্ছে।সে ফোন হাতে চলে গেলে তৎক্ষনাৎ কবীর তার পাশে গিয়ে বসলো।তোশা না তাঁকিয়ে বলল,
“জানেন কবীর শাহ।আপনার বিয়ে ভে ঙে গিয়েছে।”
“আমি জানিনা তো।তুমি কীভাবে জানলে?”
নাকের ডগায় বিন্দুঘাম ছিল।তোশা এগিয়ে এসে সেটা কবীরের বাহুতে মুছে বলল,
“কেবল মায়ের ফোনে কল এসেছিল।কলি আন্টি না করে দিয়েছে।আমার ভা গ্য কী ভালো তাইনা?”
কিশোরীর মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি।সে আরো উচ্ছাসিত কণ্ঠে বলল,
“এখন গেইম আবার স্টার্ট হবে কবীর শাহ।রাউন্ড থ্রি।”
চলবে।