#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১৭
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“বন্ধুত্ব কী সমান সমান বয়সে হয়না?আমি তোমার অনেক বড় তোশামণি।সেটা কেন ভুলে যাও?”
“আপনার সঙ্গে প্রেম করা যাবেনা,বন্ধুত্ব করা যাবেনা।এটা যাবেনা,ওটা যাবেনা।তো করবো কী আমি বলেন?নিষ্ঠুর লোক।”
“এভাবে থাকো।কথা বলো। কয়দিন পর কলির সঙ্গে বিয়ে হলে..।”
কবীর কথাটি সম্পূর্ণ করার পূর্বে অসহায় চোখে তার পানে তাঁকালো তোশা।কয়দিন ধরে ঠিকমতো না খাওয়ার দরুণ ছোট মেয়েটি আরো শুকিয়ে গিয়েছে।কবীর উষ্ণ শ্বাস ফেললো।মেয়েটির কাছে যদি এসব আবেগ হয়েও থাকে তবে তার কাছে তো তা হবেনা।বরং অনুভূতি তীব্র দ ং শ নে সে শেষ হয়ে যাবে।তোশা খুব নিষ্প্রাণ গলায় শুধালো,
“বন্ধুত্বও করবেন না?”
“খাবার ঠান্ডা হচ্ছে খেয়ে নাও।”
“ইশ,খাওয়ার জন্য মনে হয় শেষ হয়ে যাচ্ছি।ভাতের অভাব আছে তো আমার।”
তামাটে পুরুষটি পুরোদস্তুর অবাক হয়ে গেলো।মেয়েটি যেন চোখের সামনে বড় হচ্ছে সঙ্গে কথার খই ফুটতে শুরু হয়েছে।অগত্যা কবীর তোশাকে চেয়ার টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো।একটি প্লেটে খাবার নিয়ে চামচ দিয়ে তা তোশার সামনে তুলে ধরলো,
“শুধু বড় বড় কথা মুখে।”
“বলেন না বন্ধুত্ব করবেন কীনা।”
“করবো।ধরো খেয়ে নাও।”
তোশা খুশিমনে কবীরের হাত থেকে খেয়ে নিলো।এমন সময় তার স্বপ্ন পুরুষটি প্রচন্ড রকমের আজব কাজ করে বসলো।নিজেও একই চামচ দিয়ে খাবার খেলো।এটা কী নেহাৎ অবচেতন মনের কাজ?
“তোশামণি আজ কী বলে বাড়ী থেকে বের হলে?তোমার আম্মু বের হতে দিলো?তাও এমন অসুস্থ শরীর নিয়ে?”
“আজকেও বলেছি ফ্রেন্ডরা কেএফসিতে যাবো।”
“বুঝিনা তোমরা টিনেজাররা এতো টাকা কোথায় পাও।আমাদের সময় তো মা-বাবা ঘুরতে গেলে টাকা দিতে চাইতো না।পুরো সপ্তাহ জমিয়ে এরপর চিড়িয়াখানায় যেতাম।খাওয়া বলতে ওইযে বাদাম।”
“আপনার-আমার পুরো একটা জেনারেশন গ্যাপ তাইনা?”
“যাক অবশেষে বুঝলে তো।”
“কিন্তু একটা ব্যাপারে আপনাকে একটু শুধরে দিতে চাই আমি।আমার ফ্রেন্ডরা সত্যি কেএফসি তে এখন।ওদের পুরো খরচ আমি দিয়ে দেই।”
“তুমি এতো পাও কোথায়?”
“আমিও টাকা জমাতে জানি।হুহ কী মনে করেছেন?”
কবীর সরু চোখে কিশোরীকে দেখলো।মেয়েটা উচিতের চেয়ে বেশী চঞ্চল।কিন্তু ছদ্মবেশ ধরে থাকে।তোশার এতো কাছে বসে থাকা কবীরের মনে ঝড় সৃষ্টি করেছে।সে কখনো ভাবেনি সাধারণ বাচ্চার প্রতি অনুরাগ তৈরী হবে তার।কবীর জানে এখন চিন্তাধারা অনেক দূরে চলে যাবে।মেয়েটার সান্নিধ্য আরো কামনা করবে মন।
“লিটল চেরি এখন কেমন বোধ করছো?শরীর সুস্থ তো?”
“আমি অজ্ঞান হয়েছিলাম আপনার বিয়ে ও ছেলে আছে সেই কথাটি শুনে।”
খুব সহজ সরল স্বীকারোক্তি তোশার।কণ্ঠসুরে তীব্র অভিমানের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।পাশে বসে থাকা বৃহদাকার কবীর শাহ এর দৃঢ় শক্ত হাতকে আঁকড়ে ধরে বলল,
“আপনি বিয়ে কেন করেছিলেন?আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারলেন না।”
“মানে?”
“বিয়ে কেন করলেন?আমার জন্য অপেক্ষা করতেন।আবার একটা বাবুও আছে।বয়স কতো ওর?দেখতে কেমন?আমাকে মা বলবে তো?”
” লিটল চেরি তুমি আবার ভুলভাল বকে চলেছো।কলির সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।”
“হবেনা বিয়ে।”
কবীরের কপালে কয়েকটি ভাঁজ পড়লো।সে একটু কেশে বলল,
“কিছু করেছো তুমি?”
“আরে না।মন বলছে আমার।”
‘হায়রে মন।কতো কথা বলে।এখন তাড়াতাড়ি শেষ করেন খাবার।”
“খাচ্ছি তো।জবাব দিলেন না যে বিয়ে কেন করলেন?আবার ডিভোর্স কেন হলো?”
“সেটা জানা তোমার জন্য জরুরি নয়।”
“বলতে হবে।”
“তুমি একটু বেশী বাচ্চামো করছো না?আমি বা কেন শুনে যাচ্ছি।”
“ইশ, আমার মনের মতোন আপনি অনেক কথা বলেন।বিয়ে কেন ভাঙলো?একটা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন না।”
“তোতাপাখি চুপ।এতো কথা বলো না।”
“আপনি জবাবগুলো দেন।”
কবীর দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।কিশোরী বয়সী মেয়েরা এমনিতে চঞ্চল হয়।তাছাড়া মানুষ যার প্রতি আসক্ত থাকে তার সংস্পর্শে এলে আরো বেশী প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠে।
“বিয়ের বয়স হলো তাই করেছিলাম।”
“প্রেম করেছিলেন?”
“আমি,তাহিয়া,মায়ান ও…।”
নামটা বলতে গিয়ে কবীর নিশ্চুপ হয়ে গেলো।তোশার ক্লাস টিচার দিশা।এমনিতে বাচ্চা মেয়েটি আবেগপ্রবণ।জানলে কিছু না কিছু বেফাঁস বলে বা করে ফেলবে।এই কারণে নিশ্চুপ থেকে দিশার অন্য নাম নিলো।
“টগর একই কলেজে পড়তাম।ক্লাসমেট ছিলাম এই কারণে কিছুটা প্রেমের বিয়ে।দ্বিতীয়বার লন্ডনে যাওয়ার আগে বিয়ে হয়।এরপর কয়েকদিন পর ছেলে জন্ম নেয়।সব ঠিক ছিল।কিন্তু ও বদলে যাওয়া শুরু করলো।আমিও ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।একসময় ও ছেলের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করলো।শেষে ঝগড়া গুলো বিচ্ছেদের রুপ নিলো।
” ভালো হয়েছে।তাহলে আপনার স্ত্রীকে আম্মু চিনে?”
“চিনে।এই ব্যাপারে কথা বাদ।আমার চলে যেতে হবে।মিটিং আছে তো।”
“জি।”
তোশা মাথা দুলিয়ে প্লেটের খাবারটা শেষ করলো।কবীর মেয়েটিকে একদম বাচ্চার মতোন সামলে রাখছে।মায়া,অনুভূতি তো তৈরী হয়েই গিয়েছে।
“কবীর শাহ শুনেন।”
“জি বলেন।”
তোশা একটু ইতস্তত করলো।এরপর আস্তে করে কবীরের কাঁধে মাথা রাখলো।গম্ভীর শ্বাস নিয়ে বলল,
“ভালোবাসি আপনাকে কবীর শাহ।খুব খুব।আমার বয়স, সন্তান থাকা কিংবা ডিভোর্স হওয়া নিয়ে কোনো কিছুতে অভিযোগ নেই।আবেগ বলবেন না অনুভূতিকে।”
“আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরো কোন অধিকারে?”
“তোশামণির নিজস্ব অধিকার আছে কবীর শাহ এর প্রতি।”
“আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে লিটল চেরি।”
দীর্ঘ শ্বাস ফেললো তোশা।কিছু বলতে যাবে এর পূর্বে পাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,
“তুমি এখানে কী করছো তোশা?”
চমকে পাশ ফিরে তাঁকালো তোশা।মুখে ঈষৎ হাসি ফুটিয়ে বলল,
“দিশা ম্যাম আপনি?”
চলবে।