#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১০
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“তুমি একজন কিশোরী হতে পারো লিটল চেরি।কিন্তু আমি কিশোর নই।সেই কারণে এমন ফ্যান্টাসীতে জীবনযাপন করা বন্ধ করো।”
“ভয় পাচ্ছেন?”
“লম্বা চওড়া,বলিষ্ঠ এই পুরুষকে তোমার ভীতু মনে হচ্ছে?”
কবীরের দৃষ্টিতে প্রহেলিকার দেখা মিললো।তোশার ছোটখাটো বুদ্ধিতে কবীরের অন্তত পরিবর্তন তো ধরা পড়ছে।মৃদুমন্দ বাতাস বইছে।এখন তারা পারভেজের বাড়ীতে আছে।রাত এগারটা বাজে।হয়তো আর আধা ঘন্টা কবীর নামক মানুষটার সঙ্গ মিলবে।এই কারণে তোশা কথাবার্তায় তারাহুরো করতে চাচ্ছে না।আলাপচারিতা যেন পার্ফেক্ট হয়।তবেই তো কবীর শাহ এর মনে নিজের ছাঁপ ফেলতে পারবে।
“দেখুন আমি সরাসরি কিছু বলিনি আপনাকে।তো কী মনে করে এগুলো বললেন?বলেন বলেন?”
শব্দের সঙ্গে তোশার ভ্রু উঠানামা করলো।সুন্দর গোলগাল এই মেয়েটির মধ্যে অন্য কারো আত্না এসে বসবাস শুরু করলো না তো?বাগানের এক পাশে দুটো বেতের চেয়ারে পাশাপাশি বসে আছে তারা।পারভেজের স্ত্রী জোর করলো তাই সকলের এখানে আসা।তাহিয়া আপাতত ভেতরে আছে।
“হা করলে যে হামিদপুর বলবে সেটা তো বোঝার কথা।”
“আমি তো হা করিনি।হ্যাঁ করেছি নিজের মনের সঙ্গে।”
ক্ষণমুহুর্ত থমকালো।এরপর শব্দ করে হেসে উঠলো কবীর।বলবান কণ্ঠ নির্জন ঈষদুষ্ণ পরিবেশে অনেক মোহময় লাগলো তোশার নিকট।সে খেয়াল করলো কবীর হাসলেও সেটা তার চোখ অবধি পৌছায়নি।কেমন শৈল্পিক হাসে ব্যক্তিটা।
“ডায়লগটি কোথা থেকে শুনেছো?”
“হুমম।ধরে নেন নিজে থেকে বানাচ্ছি।”
“ওয়েল লিটল চেরি।যখন আমি তোমার বয়সে ছিলাম তখন নিজেও এমন অনেক বেখেয়ালি ভাবতাম।ধীরে ধীরে বড় হলাম।দুনিয়াকে দেখলাম।এইযে অর্থ দেখছো না?এটা তো গত সাত আট বছরের সঙ্গী।কিন্তু এর আগে যথেষ্ট দুনিয়া দেখেছি।তোমার বয়সী বহু মেয়ে বিদেশে বয়ফ্রেন্ড রাখছে,ডেটে যাচ্ছে,সী-বীচ,লং ড্রাইভে এসবে মত্ত্ব।আমাদের দেশে এইতো কয়েক বছর ধরে এসব।তো যখন ওই মেয়েদের আমি দেখতাম আগে মনে হতো কী সুন্দর জীবন।পরবর্তীতে শেষবার বিদেশ ভ্রমণে ওরকম এক কিশোরীর সঙ্গে দেখা হলো আমার।বিশ্বাস করো বয়স সাতাশ হলে কী হবে?দেখলে বিয়াল্লিশ বয়সী লাগছে।জীবনের তীব্র স্রোতে গা ভাসিয়ে ঠিক টিকতে পারেনি।হ্যাঁ যদি সুগার ড্যাডি থাকে তবে কথা ভিন্ন।এসব কেন বললাম?তুমি আমাকে নিয়ে অহেতুক চিন্তায় ভুগছো সেটা কয়েকমাস আগে জেনেছি।প্রথম প্রথম বিলিভ হয়নি।”
“এদিকে আসেন।কানে কানে একটা কথা বলি।”
“আমি যা বললাম তা কী একবারও কানে যায়নি?”
“গিয়েছে তো।এদিকে আসেন গোপনে একটা কথা বলি।”
তোশার কথামতোন ঈষৎ ঝুঁকে এলো কবীর।যদিও দূরত্ব ভীষণ দুটো মানুষের মধ্যে।তোশা খুব ধীরে ধীরে বলতে লাগলো,
“বিশ্বাস করুন।আপনাকে ভীষণ ভয় লাগে আমার।এইযে কথাগুলো শুনছি, বলছি ভেতর থেকে মনটা ধীরে ধীরে কেঁপে উঠছে।কিন্তু কী বলেন তো।ভেতরে জ্বর এসেছে আমার।মুখটা তেতোমিঠা হয়ে আছে।বুঝেন তো কীসের জ্বর।”
“অবিশ্বাস্য!তুমি কী পাগল হয়ে গেলে তোশা?কথার ব্রেক হচ্ছে না একদম।”
“পাগল হইনি।”
তোশা আড়চোখে হাতে থাকা ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাঁকালো।সেখানে কেউ এখনও টাইপ করে যাচ্ছে।তোশা এতোক্ষণ ধরে যা যা বলছে সেটা তাকে কেউ শিখিয়ে দিচ্ছে।যদিও কথাগুলো তার মনের।কিন্তু সুন্দর করে গুছিয়ে দিচ্ছে মানুষটা।তোশা হালকা কেশে পুনরায় বলল,
“আমাকে কিশোরী হিসেবে নয়।একজন মেয়ে হিসেবে তো দেখতে পারেন।দেশে এমন অসংখ্য অসম মানুষের সম্পর্কের কথা শোনা যায়।”
“বিষয়টি তা নয় তোশা।তুমি আমার দুজন প্রিয় বন্ধুর মেয়ে।যখন আমি ঢাবিতে পড়াশোনায় ব্যস্ত।তখন তুমি জন্ম নাও।সমাজ,নীতি, বন্ধুত্ব সবকিছুর বিরুদ্ধে তোমার অনুভূতি।হ্যাঁ বিশ,পঁচিশ,ত্রিশের বয়সের ব্যবধানে অনেক মানুষের সম্পর্ক হয়।কিন্তু আমি,তুমি না।”
“ভুল কবীর শাহ।আপনার চেহারার সঙ্গে ব্যক্তিত্ব এখন মিলছেনা।”
“কী বলতে চাচ্ছো?”
“যা বুঝেছেন সেটাই।এতো ভয় কেন?জানেন না ভালোবাসা ও যুদ্ধে সবকিছু সঠিক।”
“তো তুমি আমাকে ভালোবাসো?শব্দটা এতো সস্তা?”
প্রশ্নবাণের ভারী আ ঘা তে তোশা হাসফাস করতে লাগলো।কী পাষাণ লোকটি।কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই পুনরায় বাঁধাপ্রাপ্ত হলো।
“শুনো।কবীর শাহ কেমন মানুষ সেটা তুমি ধারণাও করতে পারবেনা।ভালোবাসা চাও তাইনা?ঠিক আছে।চলো একমাস একটি প্রতিযোগীতা হয়ে যাক।আমি তোমাকে বাস্তবতা সমাজ ও তুমি কতোটা ভুল সেটা দেখাবো।এবং তুমি আমাকে ভালোবাসা জানাবে।অসম বয়সীর ভালোবাসা।শেষে যার স্কোর বেশী হবে সে জিতবে।”
“এটা কেমন হলো?”
“করবে কম্পিটিশন?”
তোশার ফোনে ক্রমগাত ম্যাসেজ আসছে।এতোক্ষণ তাকে যে সবকিছু শিখিয়ে দিচ্ছিলো সে না করার জন্য হয়তো এক মিনিটে পঞ্চাশটি ম্যাসেজ করে বসেছে।তোশা নিজেও দ্বিধায় শ্বাস ফেলছে।লোকটা হুট করে এ কেমন খেলার কথা জানাচ্ছে?যদি সে হেরে যায়?এজন্য তো অংশগ্রহণ করতে হবে আগে।তোশা খুব শক্ত করে নিজেকে সামলে নিলো।গায়ের আঁচল অনেকটা টেনে বলল,
“আমি রাজি।শেষে যদি জিতে যাই সমাজ,পরিবার সবকিছু মানানোর দায়িত্ব আপনার।”
“এমন কোনো সিচুয়েশন আসবেনা।”
“দেখা যাক।”
কবীর কিছু একটা ভাবলো।উঠে দাঁড়িয়ে তোশার চেয়ারের দুপাশে হাত রেখে মেয়েটির সন্নিকটে ঝুঁকে এলো।পুরুষটির সজীবতাময় পুরু ত্বকে খুব করে তোশার চিমটি কাঁটতে মনে চাচ্ছে।উষ্ণ শ্বাস এসে মুখে লাগছে।কবীর আনমনে তোশার ঘাড়ের দিকে চুলের গোছাতে শক্ত করে মুঠোয় ভরে নিলো।
“আহ লাগছে কবীর।”
“ব্যাথা লাগছে?সহ্য করে নাও নরম তোশামণি।আমি পূর্বেই অনুধাবন করেছিলাম পনের বছরের মেয়ে এতোটা বোকা হয়না।”
“আমি দুনিয়ায় সকলের কাছে ছোট।কিন্তু আপনার কাছে নয়।”
“তাই?দেখা যাক বড় মানুষ।তাছাড়া এসব ব্যাথা সহ্য করে নাও।আমি ভীষণ ব্যাথাময়।”
(***)
কবীর ভেতর গিয়েছিল।খুব শীঘ্রই ফিরে এলো হাতে দুটো গ্লাস নিয়ে।
“বড় মানুষ তোশা।ধরো এই নাও।গ্লাসে ওয়াইন আছে।চলো আলাপ করতে করতে পান করি।”
ভূত দেখার মতোন চমকে উঠলো তোশা।উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,
“আপনি আমাকে ড্রিংক করতে বলছেন?”
“জি।আর না পারলে সব বাদ।কম্পিটিশন সহ সব বাদ।বাড়ী গিয়ে সোজা ঘুমিয়ে পড়বে কেমন?”
কবীর নিজের গ্লাসে চুমুক বসালো।হুট করে তোশার কী হলো সে গ্লাসটা নিয়ে পুরো তরলটি খেয়ে ফেললো।স্বাদে যদিও পানি মেশানো স্প্রাইটের মতোন।কবীর এখনও নিজের ছন্দে আছে।পুরোটা গিলে তোশা নিজের মতোন বসে থাকলো।ধীরে ধীরে ওয়াইনের প্রভাব দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে।পাগলের মতোন হাসতে শুরু করলো।তোশার দূর্ভাগ্য ছিল কীনা।ঠিক তখুনি তাহিয়া সেখানে এসে উপস্থিত হলো।মেয়েকে পাগলের মতোন হাসতে দেখে শুধালো,
“কী হয়েছে তোশামণি?এভাবে হাসছো কেন?”
তোশা হাসতে হাসতে জবাব দিলো,
“আম্মু আমি না একটু ওয়াইন খেয়েছি।এইযে পাগল লোকটা দিয়েছে।”
তাহিয়া চোখ বড় বড় করে কবীরকে দেখলো।
“কীভাবে পারলে তুমি কবীর?যেখানে আমি ড্রিংক করিনা।সেখানে আমার বাচ্চা মেয়েকে।”
“রিলাক্স তাহিয়া।ওর খালি গ্লাসে একটু রয়ে গিয়েছে মুখে দিয়ে দেখো তো ওটা কী।”
“একদম না।ওয়াইন খাইনা আমি।”
“বিশ্বাস করো আমাকে।খেয়ে দেখো।”
তাহিয়া কবীরকে বিশ্বাস করে এক বিন্দুর মতোন মুখে নিলো।সঙ্গে সঙ্গে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তার।তরলের স্বাদ বলছে এটি কার্বোনেটেড পানি।
“তোশা,তুমি পানি খেয়ে মাতলামো করছো?”
তাহিয়ার কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসিতে ফেটে পড়লে কবীর।কী প্রাণবন্ত হাসি তার।
“তাহিয়া,তোমার মেয়েকে বলিও এই কবীর শাহ এক সময় বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খাইয়েছে।তার সঙ্গে বোঝাপড়া ভালো হবেনা।”
“এটা প্লাসিবো এফেক্ট?ও তো খেয়েছে পানি।কিন্তু ওর মস্তিস্ক ধরে নিয়ছে ওয়াইন খেয়েছে।বাচ্চার সাথে এমন মজা কবীর?”
কবীর জবাব দিলো না।একটা বাচ্চা মেয়ে তার সাথে প্রতিযোগীতায় নেমেছে।যাকে কীনা সে পানি খাইয়ে মাতাল করেছে।কবীরের চোখেমুখে লম্বা চওড়া হাসি দেখা গেলো আবারও।তোশাকে প্রথম পর্বে হারিয়ে দিয়ে জিতে যাওয়ার হাসি।
চলবে।