#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“বউয়ের রাগ ভাঙায় কীভাবে চড়ুইপাখি?জবাব দাও।”
তোশার মুখ থেকে জবাব আসেনা।বরং নিশ্চুপ হয়ে কবীরের বুকে মাথা রাখলো।আজকে রাতে তারা দুজনে একসাথে থাকবে।বাজপাখির সঙ্গে মধুরাত?ভাবতে গিয়ে তোশা শিওরে উঠে।ক্ষণে ক্ষণে বুকে শত রঙীন প্রজাপতি উড়ে যায়।
“আমি তো জানতাম না লিটল চেরীর বউ সাজার এতো শখ।অবশ্য সব কেনা ছিল।কিন্তু নিয়ে যে আসবো সেই পরিস্থিতি বা মাথায় ছিলনা।মায়ানের উপর রাগ হয়েছিল অনেক।”
তোশা অকস্মাৎ উঠে সোজা হয়ে বসলো।কবীরের মুখমণ্ডলে থাকা র’ক্তি’ম আভাতে হাত বুলিয়ে বলল,
“ব্যা’থা অনেক তাইনা?আমি একটু অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিচ্ছি।”
“ওয়েট তোশা লাগবেনা।তুমি শুধু বসো আমার কাছে।আহনাফের সাথে কথা হয়েছে?”
“হয়েছে।ও কাল দুপুরেই আসবে।আমি আর ও ঘুরতে যাবো শপিং কমপ্লেক্সে।”
“ইতিমধ্যে প্ল্যান বানানো শেষ!এইযে লিটল ডেভিল শ্বশুর বাড়ীতে যেতে হবেনা?”
“তাতে তো বিশদিন বাকী এখনও।”
কবীর তোশার হাতখানা নিজের গালে এনে ঠেকালো।উষ্ণ, নরম তালুতে পুরুষালি গালের রুক্ষতা টের পাওয়া যাচ্ছে।এইযে একত্রে থাকা কিংবা এই সময়টা।এর জন্য কতোবার কেঁদেছে তোশা?কতো শূন্যতা অনুভব করেছে।পাওয়ার আশা কতোবার নিরাশাতে রুপ নিয়েছে?এরকম হাজারও অনুভূতি অতিক্রম করে আজ নতুন অনুভূতি সে কবীর শাহ এর স্ত্রী।তার বৈধ নারী।
“তোশা,আমাকে পেয়ে তোমার মনে কোনো খারাপ লাগা নেই তো?”
“যদি হতো এতোকিছু করার সাহস থাকতো কবীর শাহ?”
“তুমি সবসময় আমার নাম পুরো বাক্যে কেন বলো?”
“ভালো লাগে।”
তোশা আবারও হাসলো।আজকে তার মুখ থেকে হাসি কেন সরে যাচ্ছে না?মুখটা উঁচু করে কবীরের গালে লাল হয়ে থাকা অংশতে অধর স্পর্শ করলো সে।যে ছোঁয়ায় মলিনতা নেই।বয়স,সময়,সম্পর্কের দূরত্ব নেই।লোকে কী বলবে ভয় নেই।ক্ষণে ক্ষণে থেকে আরো কয়েকটি ভালোবাসার স্পর্শ পেলো কবীর।এবার শব্দ করে হেসে বলল,
“এটা ভালো।বাবা কষ্ট দিবে মেয়ে মলম লাগাবে।”
তোশাকে টেনে নিজের কাছে এনে তার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বলল,
“বিয়ে হলেও সব ঝামেলা মিটে যাবেনা।এখন মানুষ নানা ধরণের কথা বলবে।সব সহ্য করে নিও।”
“আপনি নিতে পারবেন?”
“তোমার জন্য সবটা সহ্য করতে পারি তাহিয়ার কন্যা।”
ফোনের রিংটোনে তোশার পরবর্তী কথা চাপা পড়ে গেলো।উল্লাসের নামটা স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে।তোশা চট জলদি রিসিভ করে বলল,
“নায়ক আমার বিয়ে হয়ে গেছে।”
কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে উল্লাস বলল,
“কবীর শাহ এর সঙ্গে এটা কীভাবে করতে পারলি সখী?এতোদূরে এসে হাল ছেড়ে দিলি?তাহিয়া তো ওয়াদা করেছিলো তোকে।”
তোশার কপালে কিঞ্চিত ভাঁজ পড়লো।কবীর তাকে ইশারাতে লাউড দিতে বলল।
“কী বললি নায়ক বুঝিনি।”
“কবীর শাহ তোর হাজবেন্ডকে কী করবে এখন?আমি তোর ভবিষ্যত খারাপ দেখছি।”
“কিন্তু আমি তো ভালো দেখতে পাচ্ছি উল্লাস।”
“কবীর শাহ?”
“ইয়েস।”
“হঠাৎ কীভাবে হলো?”
“তাহিয়া তো আগে থেকে রাজী ছিল।এখন কীভাবে হলো তা গোপন থাকুক।যেমন তুমি গোপন করেছো তাহিয়া কীভাবে রাজী হলো।”
“আপনি সব জেনে যান কবীর শাহ।অভিনন্দন দুজনকে।সব বাঁধা অতিক্রম করে এক হয়েছেন।ধুমধাম করে কবে হচ্ছে সব?”
“খুব শীঘ্রই।তোমাকে ধন্যবাদ উল্লাস।তুমি অনেক সাহায্যে করেছো।”
“বস্তুতপক্ষে আমি কেউ নই কবীর শাহ।তবে আপনার সাথে আরেকটা কথা আছে আমার।ফোনটা লাউডে থাকলে অফ করুন তা।”
উল্লাস কিছু একটা বলছে কবীরকে।তোশা সেদিকে মন দিলো না।বরং রুমের লাইট অফ করে বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়লো।ঘুম আসছেনা তার।এই অন্ধকারে কবীরের কণ্ঠ শিহরণ জাগাচ্ছে মনে।
(***)
একদম অল্প ঘুম হলো তোশার।অবশ্য সেটা তার নিজের মনে হলো।কিন্তু সে আসলে ঘুমিয়েছে পুরো বারো ঘন্টা।ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ থম মে’রে বসে রইলো।ওয়াইফাই অন থাকার দরুণ একটু পরপর নোটিফিকেশন আসছে।কৌতুহলী হয়ে সে সোশ্যাল মিডিয়াতে ঢুকে দেখলো কবীর তাকে উল্লেখ করে বিয়ের বার্তা সকলকে জানিয়েছে।তাদের নিয়ে অনেকদিন ধরে চর্চা হওয়ায় বিষয়টি টক অফ দ্য টাউন হতে সময় লাগেনি বোধহয়।এমনকি উল্লাসও নিজস্ব ব্যক্তিগত পেইজে থেকেও অভিবাদন জানিয়েছে।তোশা মন্তব্য দেখতে গেলো না।বরং বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।কবীর চলে গিয়েছে সে বুঝতে পারলো।কীভাবে বুঝে যায় মানুষটির উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতি?রাতে তার মাথায় দেওয়া লাল ওড়নাটি বিছানার একপাশে অনাদরে পড়ে আছে।কুঁড়িয়ে নিলো তোশা।আচ্ছা তার নানু যখন প্রথমবার ওড়নাটি পরেছিলো তখন কেমন অনুভব করেছিলো?জিজ্ঞেস করবে।
“তোমাকে অনেক খুশি লাগছে তোশামণি।”
মায়ের কণ্ঠে চমকে গেলো তোশা।তাহিয়া হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।আশ্চর্যভাবে মায়ের চোখে অন্যরকম উজ্জ্বলতা দেখতে পেলো সে।যা কখনো দেখেনি।
“আম্মু তুমি আজ অফিসে যাওনি?”
“নাহ।মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। প্রথমদিনই অফিসে যাওয়া শোভা পায়না।”
তোশা এগিয়ে গিয়ে মা কে জড়িয়ে ধরলো,
“ধন্যবাদ আম্মু।আমি জানিনা কীভাবে খুশি বর্ণনা করবো।”
“তোমার সব আবদার পূরণ করেছি তোশা।কিন্তু এবার সবথেকে শুদ্ধ ও সঠিক আবদার করেছিলে।বুঝতে শুধু একটু সময় লেগেছিল।”
মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে সে পুনরায় বলে,
“এখন পাগলামি ছাড়তে হবে।বড় হতে হবে।কবীর যতো বলুক কিন্তু তার মা ও বাবাকে সম্মান করতে হবে।”
“আম্মু তুমি আমাকে সাজিয়ে দিবে?আহনাফের সাথে ঘুরতে যাবো।”
“অবশ্যই।তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো আগে।”
তোশা তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেলো।এতোক্ষণে বুকের ভেতর থাকা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো তাহিয়ার।তার মেয়ে চলে যাবে।এতো জলদি?বিষয়টি মেনে নিতে কষ্টকর।আড়ালে চোখ মুছলো।ওদিকে মায়ের সামনে থেকে চট জলদি এসে পড়েছে কারণ কান্না আঁটকিয়ে রাখা খুব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিলো।মা কে ছেড়ে চলে গিয়ে সে ভালো থাকবেনা।একটুও না।কিন্তু সেই কথা বলবে কীভাবে?দরজা আঁটকে অনেকক্ষণ তা নিয়ে কাঁদলো তোশা।দিনশেষে তাহিয়া একা এবং শূন্য।
চলবে।