মিঠা রোদ পর্ব:৬৪

0
267

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬৪
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“এই বাড়ীটা তোশা ও তোর থাকার জন্য তৈরী করা কবীর?বেশ ভালো তো।”

মায়ান কথাগুলো বলার সময় মুখের ভাব কিছুটা অন্যরকম করলো।ঠিক খুশি হলো নাকী দুঃখ পেলো বোঝা মুশকিল।কবীর সুইচ সবগুলো টিপে দিলো।বাড়ীর কাজ শেষ এখন শুধু রঙ করা বাকী।শূন্য পানসে দেয়ালের দিকে তাঁকিয়ে মায়ান শুধালো,

“আমার মেয়ের জন্য অনেক বড় অঙ্কের টাকা ব্যাংকে রেখেছিস।কেন?তখন তো তোদের সম্পর্ক ছিলনা।”

“কথাটা কে বলেছে তোকে?”

“সেই প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারবো না।বরং তুই বলবি কবীর নেপথ্যে কাহিনী কী আসলে।”

কবীর চিরায়ত গম্ভীর দৃষ্টিতে নিজ প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে দেখলো।ঠোঁটে নির্বিকার হাসি।গলার টাই আলগা করতে করতে বলল,

“বাড়িটা দেখতে চেয়েছিস এজন্য আনলাম তোকে।বাহিরে কোনো প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারবো না।”

“কেন?মনে নিশ্চয় চো”র আছে।”

“না ডা”কা”ত আছে।মায়ান তুই নিজেকে জিজ্ঞেস কর একবার।কবীর শাহ পনের বছরের বাচ্চা মেয়ের প্রেমে নিজ থেকে পড়ে যাবে?সম্ভব?পুরো ঘটনা তুই জানিস।এখানে কোনো ছলের আশ্রয় নেই।”

মাথা নাড়ালো মায়ান।পকেট থেকে হাতটা সরিয়ে বলল,

“তোর মনে আছে আগে আমরা দুজন কুস্তি লড়তাম।”

“আর তুই সবসময় হেরে যেতি।”

“হ্যাঁ।শক্তিশালী,সামর্থ্যবান ,বুদ্ধিতে ভরা কবীরের কাছে আমার হেরে যাওয়া যেন নিত্য দিনের কাজ ছিল।তবুও পরের দিন আবার তোকে রাজি করাতাম শক্তির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য।আজকে চল আবার দেখি কে জিতে যায়?”

ভ্রু কুঁচকে গেলো কবীরের।মায়ানের কথাগুলো তার নিকট রহস্য।তবে সে স্বাবধানী।এবং নিজেও চতুর।কথাতে সায় দিয়ে বলল,

“ঠিক আছে চল।এবার জিতলে তোর গ্রীসের ট্যুর ফাইনাল।”

মায়ান বিদ্রুপ হেসে শুধালো,

“আমি জিতবো তোর মনে হয়?”

“ভবিষ্যত কে জানে?”

বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা কেয়ার টেকার লোকটি কৌতুহল হয়ে শুনছিলো তাদের কথা।তার মনিবের সাথে লোকটাকে নতুন লাগছে।তুই সম্বোধনে বুঝতে সক্ষম হলো বন্ধু হবে হয়তো।কিন্তু তারা এখন কুস্তি লড়বে এখানে? সে অপরিচিত কিন্তু তবুও বুঝতে পারছে আগুন্তক লোকটির মতিগতি ভালো নয়।যেভাবে হাসছে তাতে কিছু তো লুকিয়ে আছে।শুরুর আগে মায়ান কবীরকে বলল,

“তোর লোকদের বলে দে খেলার দশ মিনিটে আমাকে কোনো বাঁধা দিতে পারবেনা।”

“দিবেনা।”

“ওয়াদা।”

মায়ানের মুখে আবারও হাসি ফুঁটে উঠলো।তারা যখন লড়াই করা শুরু করলো তখন শুরুতে কবীরের পুরুষালি শক্ত হাতের কাছে সহজেই হেরে গেলো মায়ান।কিন্তু মিনিট খানেক বাদে অদ্ভূত ভাবে শরীরকে বাঁকিয়ে কবীরকে মাটিতে ফেলে দিলো মায়ান।এবং বুকের দিকটায় হাঁটু চেপে হাত দুটো বেঁধে ফেললো।বিষয়টি খুব দ্রুত হলো।মায়ান দ্রুত গতিতে শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল,

“হতে পারি খুব দূর্বল।কিন্তু জীবনে এই একটা জিনিস শিখেছি যা খুব কাজে লাগে।কবীর আজকে তুই হেরে যাবি।নির্ধারিত আর ছয় মিনিট বাদ আছে।”

মায়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইচ্ছামতোন কবীরকে আ’ঘা’ত করলো।কবীরের সাথে থাকা লোকেরা এগিয়ে আসতে গেলে নিয়মের বেড়াজালে আটকে দিলো।পুরুষদের এই এক সমস্যা।অহেতুক নিয়ম মেনে চলে।ইতিমধ্যে তরল নোনতা স্বাদ কবীরের মুখে অনুভব হয়েছে।সর্বশক্তি দিয়ে সে মায়ানকে উপর থেকে ফেলে দিলো।ঘড়িতে তখুনি নির্ধারিত সময় শেষ।

“মায়ান তুই কী পাগল?কী ভেবেছিলি মে””রে ফেলবি আমাকে?”

গলার টাই দিয়েই কবীরের হাতখানা আঁটকে ছিলো মায়ান।সেগুলো খুলে ক্ষ’ত স্থানে হাত রাখলো কবীর।মায়ান অতীব শান্ত সুরে বলল,

“আমার মেয়েকে তুই বিয়ে করবি।আঁটকাতে পারিনি।কিন্তু মনে তো একটা কষ্ট আছে।তাই তোকে ইচ্ছামতোন মে”” রে নিলাম।এখন শান্তি লাগবে অন্তত জীবনে।”

কবীর অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে মায়ানকে দেখলো।রাগ উঠে গেলো তার।বিশাল দানব শরীর নিয়ে মুহুর্তে মায়ানের সামনে দাঁড়িয়ে তার শার্ট ধরে হালকা উঁচু করলো।

“আমি এখন তোকে কী করতে পারি সেটা জানিস মায়ান?আমি স্বভাবে কেমন বিষয়টি জানার কথা।”

“তুই কেমন?জানি যেমনটা দুনিয়াকে দেখাতে পছন্দ করিস আদৌও সেটা নয়।এই ধনবান হওয়া কিংবা অর্থ সবকিছু ভুলভাবে পেয়েছিস তুই।”

“এটা তোর ভুল ভাবনা।আমি নিজের সামর্থ্য দ্বারা পেয়েছি।পথ চলতে কিছু মানুষ এসেছিলো তাদের শুধু সরিয়ে দিয়েছি।তবে আজ বেঁচে গেলি শুধু আমাদের নতুন সম্পর্কের জন্য।তুই যে সারাজীবন বন্ধুর নামে শুধু ছলনা করে গিয়েছিস বেশ জানি মায়ান।কিন্তু দুঃখ নেই আমার।বরং করুণা হয়। একটা মানুষ কতোটা আমার মতোন জীবন চেয়েছিল কিন্তু পাইনি।”

ভীষণ অপমানজনক কথা।মায়ানের মুখটা থমথমে হয়ে গেলো।কবীরকে আজীবন নকল করে এসেছে এটা সে মন থেকে জানে।কিন্তু কখনো স্বীকার করা হয়না।শার্ট থেকে হাতটা সরিয়ে বাহিরে চলে গেলো মায়ান।কবীরের রাগে মাথায় কষ্ট হচ্ছে।কতোগুলো অধীনস্থ কর্মচারীর সামনে হে’ন’স্থা হতে হলো।

“কে আছো?আমার জন্য পানি নিয়ে এসো।”

কেয়ার টেকার লোকটি দৌড়ে পানি আনতে গেলো।দুই বন্ধুর মধ্যে কতোটা মুশকিল ঘটনা ঘটে গেলো।ভেবেছিল চোখের সামনে আজ খু””ন দেখতে হবে।পানি পেয়ে সর্বপ্রথম তা মাথায় ঢাললো কবীর।কিছু একটা মনে হচ্ছে তার।এজন্য দ্রুত গতিতে কাওকে ফোন করতে করতে বের হয়ে গেলো।

(***)

রাত দশটা বাজে।তাহিয়া সবেমাত্র অফিস থেকে ফিরেছে।ডায়নিং এ সকলে বসেছে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য।তাছাড়া তোশার বিয়ে নিয়েও কিছু আলোচনা সেড়ে নিবে।তাহিয়ার মা,বাবা ও শিউলি বিয়েতে আপত্তি না জানালেও ভাই ও ভাবী অসন্তুষ্ট।কিন্তু তাহিয়ার তাতে দুঃখ নেই।কারণ সে চোখ বন্ধ করে মেয়ের সুখ দেখবে।হুট করে কলিং বেল বেজে উঠলো।কাজের মেয়েটি গিয়ে দরজা খুলে দিলো।একরাশ উষ্ণ বায়ুর সাথে কবীর ভেতরে প্রবেশ করলো।সাথে আরও দুজন লোক আছে।কবীরের মুখে আ”ঘা”তের চিহ্ন দেখে তাহিয়া ব্যস্ত হয়ে বলল,

“কবীর এরকম অবস্থা কেন?কে করেছে?”

“মায়ান।তোমার মেয়েকে ডাকো তাহিয়া।আমি এখুনি বিয়ে করবো।”

“মায়ান?সে কী পাগল?আর এটা কেমন কথা যে এখুনি বিয়ে করবে?সবকিছুর সময় আছে।”

“নেই তাহিয়া।এতো মানসিক অশান্তি নিতে পারবো না।হ্যাঁ তো বলেছো।তাহলে কথা কেন পাল্টে ফেলবে?তোশাকে ডাকো প্লিজ।পরে ধুমধামে হবে না হয় সব।”

তাহিয়া কিছু বলতে চাইলেও তার মা হাত ধরে ফেললো।চোখের ইশারায় সম্মতি দিতে বলল।কারণ বিষয়টা একভাবে কাগজে কলমে উঠলে ভালো হবে।কিন্তু যাকে নিয়ে আয়োজন সে বেঁকে বসলো।সে বউ না সেজে বিয়ে করবেনা।কবীরকে ব”কে কান্নাকাটি করেও লাভ হলো না।তামাটে পুরুষটির ধমক শুনে চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসতে হলো।পরনে তার ছিল খরগোশের ছবি আঁকা গেঞ্জি ও প্লাজো।অদ্ভূত পোশাক।অবশ্য নতুন কনের পোশাকের ম”র্মা”ন্তি”ক দৃশ্য দেখে তোশার নানীর মায়া হলো।নিজের বিয়ের ওড়না বের করে এনে মেয়েটাকে পড়িয়ে দিলো।কবীর নিজ বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়েছে কল করে।ঠিক রাত দশটা বিশে কাঙ্ক্ষিত বিয়েটি পূর্ণ হলো।তোশা মুখটা লাল করে কবীরের উদ্দেশ্যে ফিসফিস করে বলল,

“ডা’কা’ত,স্বৈ’রা’চা’রী।এলো কথা বলল আর রাজকন্যা দখল করে নিলো।বউ সাজতেও সময় দিলো না।”

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here