মিঠা রোদ পর্ব:৬৩

0
1491

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬৩
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“অবশেষে মেয়েকে বি’ক্রি করে দিলি তুই?এটা বিশ্বাস হচ্ছেনা তাহিয়া।আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক করার তুই কে?”

“আপনার মেয়ে মায়ান?কতো বছর পর মনে হলো আমার মেয়ে?”

“সবসময় মনে ছিল।কবীরের সাথে তোশার বিয়ে হতে পারেনা কখনো না।”

তাহিয়া কথাকে একটুও পাত্তা দিলো না।বরং মাথা নিচু করে নিজ কাজ করতে লাগলো।মায়ানের ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার দরুণ তাহিয়ার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ছুঁড়ে মা’র’লো।

“তোকে কিছু বলছি আমি।”

“আমি জবাব দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছিনা মায়ান।আপনি আসতে পারেন।আর তোশা শুধু আমার মেয়ে।বছরে একবার দামী গিফট দেওয়া কোনো পিতার দায়িত্ব হতে পারেনা।একটা কথা বলেন ডিভোর্সের পর কিংবা নতুন বিয়ের পর তোশাকে দেখতে একবারও বাংলাদেশে এসেছিলেন?”

“কানাডা তোর বাবার না যে যখন তখন..।”

অদ্ভূত এক শব্দ হলো।বিষয়টি এতো দ্রুত ঘটলো যে মায়ান প্রতিক্রিয়া দেখানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।তাহিয়া নিশ্বাস ফেলছে ঘনঘন।ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“কাজটা আমার আরো আগে করা উচিত ছিল মায়ান।কিন্তু সুদীর্ঘ তেইশ বছর পর যখন আপনার সাথে দেখা হয়েছিল তখন থেকে এই চল্লিশ বছরে এসে সাহসটা পেয়েছি।তখন যদি ভালোবাসা নয় বরং নিজ মর্জি চালাচ্ছেন সেটা বিশ্বাস করতে পারতাম তাহলে আজ আমার জীবন এমন হতো না।কখনো না মায়ান।বরং এই বয়সের অন্য মানুষ যা পায় সেরকম সবকিছু আমারও হতো।জানেন আমার ও তোশার মধ্যে পার্থক্য কী?ও যাকে পছন্দ করেছে সে একটা সুপুরুষ আর আপনি স্রেফ একটা হাওয়া যে কখনো সঠিক দিকে প্রবাহিত হয়না।এবং সবসময় সঙ্গে ঝড় নিয়ে আসে।”

মায়ান গালে হাত দিয়ে খানিকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।এরপর ঠান্ডা সুরে বলল,

“তোর চ’ড় কে আমি কিছুই মনে করিনি তাহিয়া।কারণ শোকে মাথা গিয়েছে।শুধু মেয়ের বিয়েটাতে মত দিবি না।আমার মেয়ে ছোট।”

“ওহ তাই?কানাডার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনজুরুল খানের ছেলের বয়স তবে কতো?২২ নাকী ৩২?”

মায়ানের মুখটা কালো হয়ে গেলো।তোশা তার সুন্দরী মেয়ে হওয়ার দরুণ বিভিন্ন যোগ্যতাসম্পন্ন ছেলেদের সে বাছাই করে রেখেছে।এরমধ্যে তালিকার শীর্ষে হচ্ছে বত্রিশ বছর বয়সী একজন।

“৩২ ও ৪০ তে দীর্ঘ ৮ এর পার্থক্য তাহিয়া।তাছাড়া কবীর আমার বন্ধু।”

“কী বন্ধু?সত্য হলো আপনি কখনো কবীরকে বন্ধু ভাবেননি।বরং ভেবেছেন নিজের প্রতিপক্ষ।আমাদের সম্পর্ক ভাঙার কারণ কী মনে আছে?আপনার জীবন নাকী এদেশ ও স্ত্রী,সন্তানের মধ্যে থেকে ন’ষ্ট হয়ে যাচ্ছে।কবীর নিজ সামর্থ্য দ্বারা যখুনি কোনো সাফল্য অর্জন করতো তখুনি আপনি হীনমন্যতায় ভুগতেন।আমার এই হচ্ছে ওই হচ্ছে।এই বয়সে এটা করা উচিত।বাচ্চাকে দেখার না।কেন?বিয়ে কিংবা স্ত্রীর দায়িত্ব ভো’গ করার ক্ষেত্রে মনে ছিলনা এসব?আমি পাগল তাহিয়া চুপ থেকেছি।কাওকে বলিনি।এমনকি ডিভোর্স টাও মেনে নিলাম।আবার বললেন একা থাকতে পারিনি তাই বিয়ে করেছি।সত্যি ডিভোর্সের এক বছরের মাথায় বিয়ে করেছিলেন।আপনি একটা তেঁতো মানুষ।আমার মেয়ে ভালো থাকবে কবীরের সাথে।ওকে জীবনহীন জড়বস্তু কিংবা আমার মতোন ভাগ্য পেতে দিবো না।কখনো না।আরে আপনি কী বুঝবেন স্বার্থপর।”

তাহিয়া কথাগুলো বলে অনাদরে পড়ে থাকা ফোনটি কুড়িয়ে নিয়ে বলল,

“বের হোন এখুনি।আমার অফিসে আসার সাহস এরপর কখনো করবেন না।”

মায়ান এবারও নিশ্চুপ।তবে মনের ভেতর মস্ত বড় সুরে তাহিয়া নামক মানুষটিকে দেখছে।বয়সের ছাঁপ মুখে এখনও আসেনি রমণীর। টান টান আধা পো’ড়া খাওয়া শুভ্র ত্বকে দেখতে অভিজাত্যপূর্ণ।কপালের একগোছা চিরপরিচিত চুলে মিষ্টি লাগছে ।মায়ান যতোটা আ’ক্রো’শে এসেছিল ঠিক ততোটা নরম হয়ে চলে গেলো।নি:শব্দে, গোপনে।

রুমের বায়ু হালকা হওয়ায় তাহিয়া উদাস হয়ে বসে রইলো।এই কথাগুলো কতোদিন ধরে মনে জমে ছিল।আজ অবশেষে বলতে পারলো।হুট করে আরেকটি কণ্ঠে সে বিভ্রান্ত হয়ে গেলো।

“মনে হচ্ছে কেঁদে ফেলবেন আপনি।”

“কে কে?ওহ উল্লাস।এসো ভেতরে।”

“হঠাৎ এলাম দেখে কিছু মনে করবেন না।আমার প্রিয় একটা বই রেখে গিয়েছিলাম।”

“দেখো বইটা ওই সেল্ফের উপর আছে।নিয়ে নাও।”

উল্লাস বিনা বাক্য ব্যয়ে বইটি হাতে নিলো।কিছুটা দ্বিধা নিয়ে শুধালো,

“মি.মায়ান এসেছিল দেখলাম।তার মুখটা কালো ছিল।আচ্ছা আপনি কী মন বদলে ফেললেন?”

“এলেমেলো উল্লাস ভয় পাচ্ছে?শুনো তোমার কথায় বিয়েতে আমি রাজী হইনি।কিংবা কারো কথায় না।তাই মত বদলানোর প্রশ্ন আসেনা।”

“ওহো।মিস.তাহিয়া আপনি মুখের উপর অ’প’মা’ন করতে জানেন।কিন্তু মিষ্টি মানুষদের মুখে কটূ কথাও তেতো লাগেনা।”

তাহিয়া মৃদু হাসলো।এই নায়কটাকে তার ভীষণ চালাক মনে হয়।কথার জালে খুব ভালোভাবে ফাঁ’সি’য়ে দিতে জানে।

(***)

তোশাকে এখনও বুকের সাথে আগলে রেখেছে কবীর।মেয়েটির আঙুল নিয়ে খেলছে।লম্বা সরু হাতটা এখন যেন বাচ্চাভাবে মোড়ানো।কবীরের মনে প্রজাপতি উড়ে যায় তোশাকে নিয়ে।চুলে নাক ঠেকিয়ে গম্ভীর শ্বাস ফেলে বলে,

“আই লাভ ইউ তোশা।চলো এখুনি বিয়ে করে ফেলি।”

“আপনাকে মটেও আজ আসল কবীর শাহ লাগছেনা।বরং ভিন্ন কেউ মনে হচ্ছে।”

“হতে পারে আমি ভিন্ন কেউ।”

“না আপনি ভিন্ন কেউ না।আপনার মতোন ভিন্ন নামে কে ডাকতে পারবে?ও একটা কথা জানেন?সেদিন একজন আমাকে হোয়াইট বলে ডেকেছে।হসপিটালের মধ্যে।”

কবীর চমকে তোশাকে সোজা করে বসালো।গালে হাত দিয়ে বলল,

“হোয়াইট?লোকটিকে তুমি চিনো?”

“নাহ।”

“দেখতে কেমন ছিল?”

“বিদেশিরা যেমন হয়।”

কপালে ভাঁজ পড়ে গেলো কবীরের। সে শক্ত কণ্ঠে বলল,

“এরপর এমন কেউ সামনে এলে দ্রুত নিজের আত্মরক্ষা করবে।যে হোয়াইট বলেছে সে সম্ভবত সেই লোক যে আমাকে স্যু’ট করেছিল।”

“আপনি সিওর কবীর শাহ?সাথে অনেকগুলো অপরিচিত মানুষ ছিল।”

“তারা আমার লোক।আমি সিওর তোশা।ভুল নেই এখানে।ফ্রান্সিসকো আমাকে চিঠি দিয়েছে আমার সুখের সময় চুরি করে নিবে বলে।”

তোশার ছোট্ট মনটা কেঁপে উঠলো।কবীরকে দুই বাহুতে টেনে আনলো।পুরুষটির বৃহৎ শরীর আঁটেনা।তবুও বৃথা চেষ্টা।

“এতো কষ্টে আমরা এক হলাম কবীর। আবারও একটা ভয় ঢুকে গেলো মনে।”

“ভয় নেই বেলাডোনা।আমাদের জীবনে এমন অস্বাভাবিক ঘটনা আরো আসবে।তাই বলে পিছিয়ে থাকবেনা কিছু।”

তোশা তবুও কবীরকে ছাড়ে না।তামাটে পুরুষটিকে আঁকড়ে ধরে তার বুকে মাথা রাখে।এবার ভয় যে চিরতরে হারিয়ে ফেলার।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here