#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬১
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
প্রিয়জনের সঙ্গে অতিবাহিত সময় দ্রুত চলে যায়।এইতো তোশার সঙ্গে মৃদু ঝ’গ’ড়া কিংবা দুঃখের গল্প বলতে বলতে প্রায় ঘন্টা দুয়েক অতিক্রম হয়ে গিয়েছে।এখন মেয়েটা খুব আরামে কবীরের হাঁটুতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।যেন নাবিক বহুকাল ধরে সমুদ্রে হারিয়ে গিয়েছিল।দিক খুঁজে পেতে গিয়ে ক্লান্ত।তোশার নরম লাবণ্যময় গালে কবীর আঙুলের ছোঁয়া দিলো।শিহরিত হয় তার মন।এই মেয়েটা এতোটা ভালোবাসে কেন তাকে?কতোভাবে পিছন ছাড়ানোর চেষ্টা করেছে কবীর।কিন্তু ফল বৃথা।সে এটাও জানে নিজ মাকে যতো বলুক সে তার ভালোবাসা ভুলে যাবে।কিন্তু মন শান্ত হলে ঠিক আবার কবীরের আশেপাশে মৌমাছি হয়ে ঘুরবে।তবে যে সে মৌমাছি নয়।বরং সর্বপেক্ষা শক্তিশালী রাণী।কবীর আস্তে করে ডাকলো,
“বেলাডোনা।তুমি কী জেগে আছো?”
“হুঁ।”
কবীরের ধারণা ঠিক।মেয়েটাকে ঘুমে ডাকলে সাড়াশব্দ করে।কিন্তু পরে সব ভুলে যায়।আলতো করে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।এমন সময় দরজা খোলার শব্দ হলো।কবীর না দেখে অনুমান করলো তাহিয়া এসেছে।কিন্তু আজ কোনো লুকোচুরি নেই।ভয় নেই।বাঁধা নেই।হুট করে কবীর এতো চঞ্চল কীভাবে হলো?এখন তার মনটাকে ত্রিশ বছরের সেই শক্ত মন মনে হচ্ছে।যে প্রেমিকার জন্য সব করতে পারে।
তাহিয়া হাতের ব্যাগটা এক সাইডে রেখে তোশার কাছে এলো।মেয়েটা পরম শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।নিরবতায় কেঁটে গেলো আরো কয়েক মুহুর্ত।ক্লান্ত তাহিয়া আজকে শান্ত।কবীরের পাশে খালি জায়গায় বসলো।নীরবতায় আরো কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তাহিয়া বলল,
“এক সময় তুমি অনেক ভালো গান করতে কবীর।এখন তোমাকে গান গাইতে দেখা যায়না।মনে আছে কলেজের মাঠে তুমি সিনিয়রদের উদ্দেশ্যে গিটার নিয়ে গান গাইতে।সেই দিন গুলো কতো প্রাণবন্ত ছিল।”
“দিন এখনও প্রাণবন্ত তাহিয়া।কিন্তু আমাদের সকলের এক হওয়ার উপলক্ষ নেই।”
“হলেও আগের সেই সুন্দর মন কারো নেই।তবে তোমার একটা কথা আমার খুব করে মনে আছে।তুমি সালমান খানের একটা গান আছেনা যাতে কলেজে পারফর্ম করেছিলে।”
“‘স্বপ্ন ম্যে রোজ আয়ে’ এটা?”
“হ্যাঁ।তখন তুমি স্টেজে দাঁড়িয়ে বলেছিলে জীবনে তোমার একজন স্বপ্নকন্যা আছে।যার হাসি বুঝতে পারো, যার দুঃখ, কষ্ট সব বুঝতে পারো।আমরা বুঝেছিলাম সেটা দিশাকে ভেবে বলেছিলে।”
“বাস্তবের কাওকে ভেবে বলিনি।তখন ছিল না।”
“এখন আছে?আর সে আমার মেয়ে তোশা?টেল মি কবীর শাহ।আমার মেয়েকে কেন ভালোবাসো তুমি।দুনিয়াতে এতো মেয়ে থাকতে।”
কবীর মৃদু হাসলো।তাহিয়া বেশ চালাক একজন মানুষ।যদিও অতীতের সিদ্ধান্তে বোকা বলা চলে।
“দুনিয়াতে এতো মেয়ে থাকতে কেন এই দুষ্ট মেয়েটাকে পছন্দ করি সেই ব্যাখা আমার নেই তাহিয়া।তোশাকে প্রথমবার আমি দেখেছিলাম তোমার দেওয়া ছবিতে।তখন নেহাৎ ছোট বাচ্চা।সাধারণ দুটো চোখে কিছু খুঁজে পাইনি।এরপর সামনে থেকে প্রথম দেখলাম যেদিন ও হারিয়ে গিয়েছিল।এরপর ঘটনা বিচ্ছিন্ন।কখনো মনে হতো ও পা’গ’লা’মি করছে।আবার কখনো রাগ হতো।কিন্তু একদিন ওকে স্বপ্নে দেখেছিলাম আমার রাখা বিশেষ শাড়ীতে।নিজেকে ছোটও করেছি এজন্য মনে মনে।কিন্তু বুঝে গিয়েছিলাম তাকে আমি ভালোবাসি।আমি তোশাকে ছাড়া থাকতে পারবো না৷কখনো না।সে আমাকে যে যাই বলুক।”
“আমার অর্ধেক কথার জবাব দিলেনা।একটা কথা বলো তো আমার মেয়ে বারো বছরের এক সন্তান ডিজার্ভ করে এখন?”
“তাহিয়া হয়তোবা এসব কথা দুজনের মধ্যে মেটার করেনা।আমি ভালোবাসি তোশাকে।এটা কী যথেষ্ট নয়?”
“যথেষ্ট।”
তাহিয়ার ছোট এই উত্তরে চমকে গেলো কবীর।মুখে দ্বিধা ভাব তুলে বলল,
“যথেষ্ট তাহলে আমাদের ব্যাপারে মেনে নাও।আমি আমি সারাজীবন তোমার উপকার স্বীকার করবো।”
“মেয়েটা আমার কবীর।উপকারের প্রশ্ন আসেনা।কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে।”
তাহিয়া অতি শান্ত কণ্ঠে বলল।যেন পাশে ভয়া’বহ রা’ক্ষ’স আছে।সব শুনে ফেলবে।
“আমার একটা মেয়ে কবীর।যদি তোমাদের সম্পর্ক না চলে।”
“যারা এতো যুদ্ধ করতে পারে তারা কখনো আলাদা হওয়ার নয়।”
তাহিয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিশ্চুপ হয়ে রইলো।কবীর দ্বিধা নিয়ে বলল,
“তুমি কী রাজী তাহিয়া?”
“হ্যাঁ।কেন কীভাবে রাজী হলাম সেসব জিজ্ঞেস করবেনা দয়া করে।”
“মায়ানের পারমিশন?”
“তুমিই তো বলেছিলে যে লাগবেনা।”
কবীর আসলে কী রিয়াকশন দিবে বুঝতে পারছেনা।তবে বারবার ঢোক গিলছে।আশ্চর্য তাহিয়া মেনে নিলো।তাও এতো জলদি?কবীর আস্তে ধীরে পুনরায় শুধালো,
“মানুষ নাটক দেখে সব জেনে গেছে।ঠিক এই কারণে তুমি রাজী হলে?”
“নাহ।সমাজের মানুষকে ওতোটা ভাবলে চলেনা।বরং ভালো হয়েছে।কারো কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।এবং জবাবদিহিও করতে হবেনা।কিন্তু বাসার অন্য সকল মানুষের মতামত নিবো আমি।তুমি কী খুশি নও কবীর?”
কবীর হেসে বলল,
“তাহিয়া তোমাকে বোঝাতে পারবো না কিছু এখন।আমি তোশাকে ডেকে বিষয়টি বলি?”
“নাহ।আমিই বলবো।কিন্তু আমাকে ওয়াদা করতে হবে।দিনশেষে আমার মেয়ের কোনো কষ্ট হবেনা।”
“হবেনা।ওয়াদা করলাম।”
(***)
তোশা যখন ঘুম থেকে উঠলো তখন মনে হতো লাগলো খুব সুন্দর কিছু ঘটে গিয়েছে।কিন্তু কী তা সে জানেনা।পরক্ষণে ভাবলো কবীরের হসপিটালে এসে তার সঙ্গে দেখা করা হলো সুন্দর জিনিস।এরকম মুহুর্ত খুব দূর্বল।কিন্তু মানুষটি বিদায় না নিয়ে কেন চলে গেলো?অভিমান হলো তোশার।মেয়েকে বিছানাতে গোমড়া হয়ে বসে থাকতে দেখে তাহিয়া শুধালো,
“কী ব্যাপার তোশামণি।শরীর খারাপ লাগছে?”
মায়ের এমন নরম কণ্ঠ অনেক দিন শুনেনি তোশা।আস্তে করে বলল,
“কেবল ঘুম থেকে উঠলাম।”
“কবীরকে খুঁজছো?ও দশ মিনিট আগে চলে গিয়েছে।”
“আসলে আম্মু তাকে আমি ডেকেছিলাম দেখে এসেছিল।ভুল বুঝো না।”
“কথা বানাতে হবেনা তোশামণি।ফ্রেশ হয়ে এসো।”
তাহিয়া মেয়ের কান্ড দেখে অবাক হয়ে গেলো।কবীর কিছুক্ষণ আগে বলেছে সে নিজে এসেছিল।কিন্তু তোশা ভাবছে রাগারাগি করবে মা।এই কারণে কথা ঘুরাচ্ছে।তোশা ফ্রেশ হয়ে মায়ের কাছাকাছি এসে বসলো।
“তোমার মামা-মামী,নানু বা বাড়ীর কাওকে আসতে নিষেধ করেছি আমি।কারণ তারা এলে মানসিক অশান্তি পাবে।তাছাড়া নিজেকে প্রস্তুত করো।মেয়ের বিয়ে আমি অনুষ্ঠান করে দিবো।তখন নানান লোকে নানান কথা বলবে কিন্তু।”
“মেয়ের বিয়ে?কার সাথে আম্মু।”
“কবীর শাহ।”
তোশা চিল্লিয়ে উঠলো হঠাৎ। তাহিয়া চমকে বলল,
“কী হয়েছে?”
“সত্যি আম্মু?”
“হ্যাঁ।”
“আম্মু আম্মু থ্যাংক ইউ।থ্যাংক ইউ।”
বলতে বলতে মা কে জড়িয়ে ধরলো তোশা।প্রায় কেঁদে ফেলেছে সে।তাহিয়া মেয়েকে জড়িয়ে রইলো অনেকক্ষণ।সামাজিকতা ও লৌকিকতার গন্ডিতে কখনো সে বাঁধেনি তোশাকে।তো এই বেলায় কীভাবে এতো বড় কষ্ট দিবে মেয়েকে।তোশাকে সোজা করে চোখের পানিটা মুছে বলল,
“তুমি সুখে থাকবে।কখনো ভে’ঙে পড়বেনা।এই ওয়াদা দিতে রাজী তো?”
“হ্যাঁ।জানো কতো খুশি লাগছে।আমি মনে হয় স্বপ্ন দেখছি।”
“কিছু স্বপ্ন সত্যি হয় তোশা।তোমার ক্ষেত্রে হয়ে গেলো।”
চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।সকল পাঠক সুন্দর করে রেসপন্স করবেন তো।আজকে সকলের মন্তব্য চাই।
#