মিঠা রোদ পর্ব:৬০

0
1661

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬০
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমি তোমাকে বিগত কয়েকদিন এতো দেখা করতে বললাম করলে না।কিন্তু আজ হুট করে চলে এলে যে?এতো সুন্দর সারপ্রাইজ।”

দিশার মুখ বিবরের উজ্জ্বলতা পুরো রুমে ছড়িয়ে পড়লো।কবীরের দৃষ্টিতে তা লুকালো না।সে মৃদু হেসে বলল,

“কতোদিন পর তোমাদের বাড়ীতে এলাম।আঙকেল বা আন্টি কোথায়?”

“আঙকেল-আন্টি?”

“তোমার মা-বাবা।”

“কিন্তু তুমি তো তাদের মা-বাবা বলে ডাকতে।”

“যুগের সঙ্গে আপডেট হওয়া আধুনিকতার ধর্ম নাকী পিছিয়ে থাকা?যা চলে গিয়েছে সেটা নিয়ে আফসোস বা পুরোনো সম্পর্ক ধরে রাখে বোকারা।”

“কিছু সম্পর্ককে সম্মান করতে হয়।যা শেষ হওয়ার পরেও।এটাকে আধুনিকতা বলে।সম্বোধন বদলে ফেলা উচিত নয়।”

“দিশা তুমি এখনও সেই অতীতে আছো।মুভ অন করছো না কেন?”

রেগে গেলো দিশা।হালকা উষ্ণ কণ্ঠে বলল,

“আমাকে তুমি এসব বলতে এসেছো?ফিরে যেতে চাওয়া দোষের কিছু নয়।বরং এতোদিন পর এটা করতে চাচ্ছি সেটা বুদ্ধিমানের কাজ।”

“ডিরেক্টরকে স্ক্রিপ্ট কেন দিয়েছো?”

কবীরের প্রশ্নে হকচকিয়ে উঠলো দিশা।কপালে কিঞ্চিত ঘাম জমে গেলো তার।প্রাক্তন স্বামীর নিকট সে অনেক ব্যক্তিত্ববান নারী।সেখানে এমন কিছুর জবাবদিহিতা নিশ্চয় কাম্য নয়।দিশা ব্যাপারটিকে ঘুরানোর নিমিত্তে বলল,

“আমি তো ক্রিপ্ট রাইটার নই যে কাওকে স্ক্রিপ্ট দিবো।শুধু ঘটনা বলতে পারি যা ঘটে।সেটা যদি কেউ নিজ কাজে লাগায় সেক্ষেত্রে আমি নির্দোষ।”

“নির্দোষ?”

কবীরের কণ্ঠে কেমন কৌতুকের আভাস পাওয়া গেলো।

“শুনো দিশা তুমি আমার স্ত্রী ছিলে।এক সময় দুনিয়াতে সবথেকে কাছের মানুষ ছিলে।দুজনে এক সাথে খেয়েছি,ঘুমিয়েছি ইভেন এক বালিশও শেয়ার করেছি।তাকে তুমি যদি বলো আমি আপেলের মতোন মিষ্টি।বস্তুতপক্ষে তা কমলার মতোন টক।সে কী বিশ্বাস করবে?তোশা আমার বাগদত্তা পরে সে কী একজন মেয়ে নয়?আমাকে ফ্লিমটি দেখাও। নিশ্চয় কপি আছে তোমার কাছে।”

“নেই।”

“তুমি কী চাও কবীর শাহ কঠোর হোক?বিনিময়ে ভীষণ খারাপ হবে তোমার সাথে।”

প্রায় ধমকে কথাগুলো উচ্চারণ করলো কবীর।দিশা অনেকক্ষণ শক্ত হয়ে সোফায় বসে রইলো।পরবর্তীতে নাছোড়বান্দা কবীরের শা’ণি’ত দৃষ্টির সামনে হার মানতে হলো।উপরে রুমে গিয়ে একটা পেইনড্রাইভ এনে তাকে দিলো।

“এখানে আছে।আমি আবারও বলছি এমন মুভি হবে সেটা শুরুতে জানা ছিলনা।”

“তুমি প্রতীককে কীভাবে চিনো?”

“তোমার এই বিষয়ে কোনো মাথা ব্যাথা থাকার কথা নয়।”

“একচুয়েলি তুমি আমার মাথার পেইন হয়ে দাঁড়িয়েছো এখন।আশা করা যায় আজকেই শেষ হবে সবকিছুর।”

“মানে?”

দিশার কথাকে তোয়াক্কা না করে গাড়ী থেকে ল্যাপটপ নিয়ে এলো কবীর।তাতে পেইনড্রাইভ ঢুকিয়ে মুভিটা অন করলো।উল্লাস সঠিক ছিল।ভীষণ ই’রো’টি’ক করে তুলেছে দৃশ্যগুলো।সবথেকে অদ্ভূত কবীরের এটা দেখে লেগেছে তোশার ক্যারেক্টারে কয়েকটি পুরুষের প্রতি আ’স’ক্ত থাকাকে দেখিয়েছে।চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো কবীরের।মন চাচ্ছে এই কাজের সঙ্গে জড়িত সকলের উপর থেকে নিচে আ’ল’গা করে দিতে পারলে ভালো হতো।

“দিশা তুমি একটা…..।”

কবীর অতীব ভ’য়া’ব’হ ভাষা উচ্চারণ করলো দিশার উদ্দেশ্যে।কানে হাত রেখে দিশা প্রতিবাদ করে বলল,

“কবীর।তুমি এরকম কথা বলতে পারলে?”

“আমি তোমাকে শেষ বিন্দু অবধি সম্মান করেছি টগর।কিন্তু সেই সবকিছুর যোগ্য তুমি নও।এখন বলো শা’স্তি হিসেবে কী চাও?”

“আমাকে শা’স্তি দেবার তুমি কে?”

“রাইট।আমি কেউ না আসলে।”

কবীর ধীরে উঠে দাঁড়ালো।সে আজকে গ্রে রঙের স্যুট পরেছে।কেমন মনকাড়া দেখাচ্ছে।দিশার সামনে দাঁড়িয়ে একটু ঝুঁকে এলো।

“তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে দিশা।তবে তুমি বললে আমি আসলে কেউ না।কিন্তু আজ থেকে আমাকে ছাড়া তুমি কাওকে ভাবতে পারবেনা।”

ভ্রু কুঁচকে দিশা জবাব দিলো,

“মানে?”

কবীরের ঠোঁটে অদ্ভূত হাসি ফুটে উঠলো।দিশার গালে হাত বুলিয়ে বলল,

“কবীর শাহ আজকের এই জায়গায় এমনি এমনি আসেনি।শূন্য থেকে বড় হয়েছে সে।তোমাকে যদি হ্যান্ডেল না করতে পারি তাহলে সেটা আমার নিজ স্বত্তায় কষ্টের আ’ঘা’ত দিবে।”

“কবীর সরো।তোমাকে অদ্ভূত লাগছে।”

কবীর স্মিত হেসে সরে দাঁড়ালো।কোনো প্রকার উচ্চবাচ্য না করে সোজা বের হয়ে গেলো।দিশার মনটা কেমন শুষ্ক হয়ে উঠেছিল যখন মানুষটা তার সামনে ওভাবে ছিল।যেন চিরপরিচিত কবীর নয়।অন্য একটা মানুষ।সামনে টেবিলে রাখা পানির গ্লাসটিকে উঠিয়ে নিলো সে।জিহবাতে তরলের স্পর্শ পেয়ে ভ্রুঁ কুঁচকে ফেললো।তার মনে হলো স্বাদটি ভিন্ন।কিন্তু এইমাত্র তো কবীরের জন্য পানিটা এনেছিল।পুনরায় পান করে দেখলো সব স্বাভাবিক।হঠাৎ এমন মনের ভুল কেন হলো?

(***)

তোশা হসপিটালের বারান্দায় পায়চারি করছে।একে তো বিলাসবহুল প্রাইভেট হসপিটাল।দ্বিতীয়ত ভিআইপি সেবা পাচ্ছে সে। দীর্ঘ ঘুমের পর তাকে একটু হাঁটাহাঁটির পরামর্শ দিয়েছে ডাক্তার।সঙ্গে নার্স রয়েছে।করিডোরের এমাথা থেকে ওমাথা হেঁটে যাচ্ছে।যদিও বাড়ীতে যাওয়ার জন্য মনটা উদগ্রীব।তোশা আড়চোখে আশেপাশে কয়েকজনকে দেখলো।যাদের মিলিটারির মতোন লাগে।সকাল থেকে তার আশেপাশে এমন অনেকজনকে দেখেছে।বিষয়টি কেমন ভাবাচ্ছে তাকে।বেখেয়ালিভাবে একটি বৃদ্ধ লোকের সাথে ধাক্কা লেগে গেলো তোশার।

“সরি সরি।”

“ডোন্ট বি সরি ডিয়ার।আই এম ওকে।”

তোশা খেয়াল করলো লোকটা বিদেশি।চেহারাতে নেটিভ ব্রিটিশদের মতোন হাবভাব।মুখ তুলে লোকটা বিনয়ী হেসে বলল,

“দিস ইজ ফর ইউ হোয়াইট।”

“হোয়াইট?”

“এ কমপ্লিমেন্ট ফর ইউ বিউটিফুল গার্ল।”

লোকটি হাত এগিয়ে একটি সাদা গোলাপ দিলো তাকে।তোশা বিনয়ী ভাবে তা গ্রহণ করলো।লোকটি হেসে তৎক্ষনাৎ চলে গেলো সেখান থেকে।তোশা একবার ভেবেছিল ডেকে আলাপ করবে।পরক্ষণে সেই চিন্তা বাদ দিয়ে কেবিনে ঢুকলো।মিনিট পাঁচেক পর চিরচেনা পারফিউম পেলো তোশা।আশ্চর্য কাল স্বপ্নেও এমন পেয়েছিল।নিজের মানসিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে ভেবে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো।একটু পর উষ্ণতার আভাস পেলো ত্বকে।

“কী ব্যাপার লিটল চেরী?যখুনি দেখা করতে আসি তখুনি ঘুম?দ্যাটস নট ফেয়ার।”

তোশা চট করে চোখ খুলে ফেললো।না সে স্বপ্নে দেখছেনা।উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,

“আপনি?কেউ এসে পড়বে সেদিনের মতোন।”

“কেন সেই গান শুনো নি?যা পেয়্যার কিয়্যা তো ডারনা কিয়্যা।আমিও আর ভয় পাইনা বেলাডোনা।”

তোশার চোখ দুটো ছোট ছোট হয়ে গেলো।কবীর এমন নিশ্চিন্ত মুডে খুব কম থাকে।

“আপনাকে খুশি লাগছে কেন কবীর শাহ?আমার থেকে পিছু ছেড়ে গিয়েছে এজন্য?”

“তোমার থেকে?ইহজীবনে আমার পিছন ছাড়বেনা তুমি।কীযে দুষ্ট তুমি।”

“সব তো শেষ হয়ে গিয়েছে সেদিন।আর কী আছে?”

তোশার কণ্ঠে অভিমান জমা আছে।তবে এক্ষেত্রে সে কার উপর ক্ষি’প্ত নিজ ব্যতীত?কবীর তার পাশটায় গিয়ে বসলো।গায়ের ব্লেজার খুলতে খুলতে বলল,

“আমার মাথায় ব্যাথা হয়ে ছিল কিছু জিনিস।আজ সবকিছু শেষ করে এসেছি।কোথায় আমাকে ফুলের পাপড়ি দিয়ে বরণ করে নিবে তা নয়। ”

“কী এমন কাজ করলেন শুনি।”

“বলা যাবেনা।তবে…।”

“তবে?”

কবীর টেনে তোশাকে নিজের কাছটায় আনলো।হকচকিয়ে উঠলো মেয়েটি।তোশার নরম গালে শক্ত আ’ঙু’ল দিয়ে চেপে বলল,

“তবে যদি আর কোনোদিন অবাধ্য হও আমার সেক্ষেত্রে কথা আছে।এই সুন্দর ঠোঁট দিয়ে যেন আর কখনো অভিনয় করবো এটা বের না হয়।”

তোশা ছিটকে সরে গিয়ে উচ্চারণ করলো আম্মু।কবীর তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়ালো।দেখলো দরজাতে কেউ নেই।

“দরজাতে কেউ নেই কবীর শাহ।আমি আপনার অদ্ভূত কথায় ভয় পেয়ে মা কে ডেকেছি।কিন্তু আপনি আম্মুকে ভয় পান?”

কবীর বিরক্ত হয়ে বলল,

“মটেও না।বরং আবার সেই একটা কথা শুরু হতো।সেসবকে ভয় পাই।”

কবীর ক্লা’ন্তিতে পুনরায় বেডে শুয়ে পড়লো। তার পা দুটো মেঝেতে স্পর্শ করে আছে।এতো বড় শক্তিশালী একজন মানুষকে ক্লান্ত হতে খুব কম দেখা যায়।কিন্তু মনভরে তাকে দেখলো তোশা।এই মানুষটাকে সে আর কী কখনো পাবেনা?

“এদিকে এসো তোশা।”

ধ্যান ভাঙলো তোশার।তবুও নিজ জায়গা থেকে নড়লো না।

“কী বলছেন?”

“তোমার হাতে আমার দেওয়া আঙটি কোথায়?”

“মায়ের কাছে।”

চোখ খুলে ফেললো কবীর।একটু কঠিন কণ্ঠে বলল,

“এতো সহজে দিয়ে দিলে?তুমি কী সত্যি আমার উপর মায়া করো?”

“বলতে পারলেন এভাবে?”

“তো দিলে কেন?”

“মা জোর করে নিয়েছে।আমি, আমি আসলে।”

তোশা ঠোঁট কাঁ’ম’ড়ে কেঁদে ফেলার ভঙিতে বলল।

“তুমি অনেক ছিঁচকাঁদুনে হয়ে গিয়েছো বেলাডোনা।”

কবীর উঠে তোশাকে নিজের কাছে এনে বসালো।আগলে নিয়ে বলল,

“তুমি অল্প বয়সের আবেগে আমাকে পছন্দ করেছিলে।তখন কী ভেবেছিলে এসব হবে?”

“নাহ।কিন্তু আপনি জানতেন।”

“কিছুটা আন্দাজ তো করতে পেরেছিলাম।এখন এতো অসুস্থতা কেন তোশা?শক্ত হতে শিখো।তোমার জীবনে এক পুরুষ থাকবে।সেটা আমি।বাকীটা ম্যানেজ করে নিবো।”

“হ্যাঁ দেখতো পাচ্ছি।আপনার ম্যানেজ করতে গেলে আমি বুড়ি হয়ে যাবো।”

“আমি তোমার থেকে বিশ বছরের বড়।নিজে বুড়ো হওয়ার চিন্তা করিনি আর তুমি কীনা?অদ্ভূত লিটল টমেটো।”

তোশা রে’গে নিজের হাতটা উঁচু করে দিয়ে বলল,

“ধরেন নেন আমাকে লবণ, মরিচ দিয়ে খে’য়ে ফেলেন।কখনো লিটল ফ্রুট,কখনো টমেটো,কখনো চেরি।দুনিয়ায় সব খাবার আমি।যতোসব মন ভোলানো কথা।”

চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।আজ এতোটুকু পড়েন।কাল আবার দিবো ইনশাআল্লাহ। সকলে রেসপন্স করবেন।ও হ্যাঁ দিশার ব্যাপার আজ ক্লোজ হলো।আসলে ওর সাথে কবীর কী করবো সেটা আগামীকাল জানতে পারবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here