মিঠা রোদ পর্ব:৫৯

0
1459

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫৯
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“স্বপ্ন দেখা তোমার অনেক প্রিয় বেলাডোনা?”

“অনেক।স্বপ্নে কোনো বাঁধা নেই।যা মন চায় তাই পাওয়া যায়।আপনাকে কতোবার পেয়েছি।আবার হারি’য়েছিলাম একবার।তখন জানেন অনেক কান্না পেতো।”

তোশার মুখের অভিব্যক্তি করুণ হতে দেখা গেলো।যেন মনের সুখ মিটে গিয়ে একরাশ দুঃখের ফুল ঝড়ে পড়ছে।কবীর মেয়েটির মুখটাতে হাত বুলিয়ে বলল,

“তোমার স্বপ্ন সম্পর্কে আমাকে বলো।শুনতে চাই আমি।কেন দেখো এতো সুন্দর স্বপ্ন?মানুষ তো দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছু দেখতে পারেনা এখনকার যুগে।”

কবীরের উষ্ণতা তোশার মুখমণ্ডলে আদুরে স্পর্শ মেখে দিচ্ছে।কী দারুণ দেখতে তার ছোট্ট প্রেমিকা।তোশার এখনও সম্পূর্ণরুপে জ্ঞান নেই। বরং মৃদু সুরে কিছু বলছে।কবীর কান পেতে শুনলো তা।

“স্বপ্ন,সুন্দর, কবীর শাহ,আম্মু,আহনাফ।তর্নি, তর্নি।”

“তর্নি?সে কে তোশা?”

“জানিনা।কিন্তু তর্নি।”

বারংবার নামটি ডেকে ঘুমের ঘোরে তলিয়ে গেলো তোশা।কবীর তার কপালে দীর্ঘ এক উষ্ণ চুম্বন দিলো।আরো কিছু সময় ওভাবে অতিবাহিত হয়ে গেলো।সময় জ্ঞান কী তামাটে পুরুষটির আছে?ম্যাসেজের শব্দে কবীর ফোনটা বের করলো।দেখলো আসিফ তাকে বের হতে বলছে।যে সময়টুকু ধা’রে দিয়েছিল তা শেষ।তোশাকে মনভরে দেখে নিলো কবীর।শীতের রাতে আ’গুনের উষ্ণতার মতো দৃষ্টির শূন্যতা,শুষ্কতা মিটিয়ে নিয়ে বের হয়ে এলো।তাহিয়া ও আসিফ তখনও করিডোরে বসে কথা বলছে।কবীর আজ ও পথে পা বাড়ালো না।তাহিয়ার সঙ্গে কী কথা হচ্ছে সে জানে।সেই এক বোঝাপড়া কিংবা সামাজিকতা।সেসব পুরোনো কিংবা বারংবার নতুন হয়ে ধরা দিবে।শতাব্দীর সেরা কবিতার মতোন তোশা ও কবীরের প্রেম কাহিনী।অন্ধকার রাত হওয়ায় চারিধার নির্জন হয়ে আছে।কিছুদিন পূর্বে ফ্রান্সিসকো এর হা’ম’লার পর ব’ডিগা’র্ড ছাড়া যদিও কবীর বের হয়না।কিন্তু তোশার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে একা।কাওকে না জানিয়ে।এমনিতে সোশ্যাল মিডিয়াতে বিষয়টি আগুন।সেখানে মাঝরাতে হসপিটালে দেখতে আসা মানে দুটো কারণ বের করবে।
এক.এ’ বো’ র্শ’ ন
দুই.সু’ ই” সা’ ই’ ড

দুটোর একটাও যেহেতু হয়নি তো অহেতুক বিষয় রটানোর মানে হয়না।পার্কিং এড়িয়া যেন আরো নির্জন।নিজ গাড়ীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কবীর এমন সময় কোথা থেকে ছোট্ট একটা কবুতর তার গাড়ীর সামনে বসলো।চট করে তার মাথায় কেউ তরঙ্গের সৃষ্টি করলো।সময় ন’ষ্ট না করে দ্রুত গাড়ীতে বসে দরজা আঁটকে দিলো।কারণ তার স্মরণে এটা আছে ফ্রান্সিসকো কবুতর অনেক ভালোবাসতো।কাওকে ভ’য় বা চমকে দিতো হুট করে এমন কবুতর দিয়ে।এবং ঢাকা শহরে কবুতর এতোটা সহজলভ্য নয়।গাড়ী স্টার্ট করে চলে যাবে তৎক্ষনাৎ তোশা ও তাহিয়ার কথা মনে পড়ে গেলো তার।সে কা’পু,’র’ষ নয় যে নিজের কথা চিন্তা করে চলে যাবে এখন।কল করে নিজ বডিগার্ডদের চলে আসতে বললো।মিনিট বিশেক সময় লাগবে তবুও গাড়ীতে বসে থাকতে পারলো না সে।ধীর পায়ে বেড়িয়ে এলো।তখনও কবুতরটি সেখানে বসে আছে।কবীর নরম হাতে পাখিটিকে হাতে তুলে নিলো।পাখিটির পায়ে একটা কাগজ রাখা।সেটা খুলে দেখলো সেখানে ইংরেজিতে সুন্দর করে লেখা-

“তোমার হোয়াইটকে বলবে তাকে নীল রঙে অনেক সুন্দর দেখাবে।ভয় নেই কবীর তুমি যেভাবে আমার সবথেকে সুখের সময়টা চু’রি করে নিয়েছিলে।আমিও তোমার থেকে তাই নিবো।”

কবীর বুঝতে পারলো তোশাকে হোয়াইট বলে ডেকেছে ফ্রান্সিসকো।সে যতোটা লোকটাকে চিনে কবীরের ভাগের আ’ঘা’ত তাকে করবে।তোশাকে না।তবুও স্বাবধান হতে চায় সে।ফোনের রিংটোন পুনরায় বেজে উঠলো।এতো রাতে উল্লাস কেন কল করেছে?

“হ্যালো।”

“কবীর শাহ আপনি কোথায়?”

“হসপিটালে কেন?”

“তোশা কেমন আছে?আমি কাল সকালে যাবো।”

“ভালো আছে।ঘুমাচ্ছে এখন।”

উল্লাস গলা পরিষ্কার করে বলল,

“বলতে পারেন কবীর শাহ এ’ক্স,’রা এমন হয় কেন?”

“তোমার কোন এ’ক্স আবার কী করেছে?”

“আমার না আপনার।আসলে আমি নাটকের পক্ষে পঞ্চাশ শতাংশ শিওর ছিলাম।কিন্তু রিলিজ দিতে হয়েছে আপনাদের কাহিনীর উপর নির্মাণে একটা ওয়েব ফ্লিম রিলিজ হতো।যেখানে সব থাকতো অ’শ্লী’ল।ই’রো’টি’ক এবং আপনাদের বিষয়টি বা’জে’ভাবে দেখানো হতো।দুই মাস ধরে দেখবেন একটা ওয়েব ফ্লিম ‘অ’কো’ওয়ার্ড’ নামের অনেক প্রচার হতো।কিন্তু বিষয়বস্তু এক্সক্লুসিভ ছিল।সেটাই মূলত আপনাদের নিয়ে ছিল।আমরা যেদিন নাটক রিলিজ দিলাম তার চার ঘন্টা পর ওটা রিলিজ হওয়ার কথা ছিল।যদি তা হতো আপনার সম্মান ও তোশার জী’ব’ন দুটোই আজ পথের ময়লা হতো।”

কবীর খুব শান্ত মাথায় কথাগুলো শুনলো।ফ্রান্সিসকো এর ব্যাপার আবার উল্লাস এসব বলছে।অফিসে কিছু ঝা’মে’লা হচ্ছে সব মিলিয়ে কবীরের মাথায় জ্যাম ধরে যাচ্ছে।

“কে করেছে এটা?দিশা?”

“সে হালকা-পাতলা আছে।কিন্তু প্রতীক প্রায় সবটা এটার পিছনে ছিল।আমি শুনেছি আপনার কিছু শ’ত্রু এই ফ্লিমের প্রডিউসার।এবং দিশা ম্যাম স্ক্রিপ্ট দিয়েছে।সে কী চাচ্ছে আপনার কাছে?”

“ফিরে আসতে চাচ্ছে।”

“অদ্ভূত।এজন্য তোশার সম্মান নিয়ে খেলা করা উচিত হয়নি।এখন তবে আরেকটা সমস্যা আছে।তারা এই প্রজেক্টের নাম বদলে সত্য ঘটনার নাম দিয়ে রিলিজ দিবে।আমি থামাতে পারবো তাদের কিন্তু নিজের বাচ্চাদের কী সা’হ’সি’ক’তা’র গল্প শোনাবেন না?সেক্ষেত্রে কাল সকালে কিছু একটা করুন।”

কবীর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,

“আমার কী এখনও দিশাকে সম্মান করা উচিত উল্লাস?”

“উচিত নয়।কিন্তু আমি জানি আপনি করবেন।এবং নিজের স্টাইলে স’ম’স্যা’টির সমাধানও করতে পারবেন।একচুয়েলি দুনিয়া সব টাকার উপরে চলছে এখন।আপনার অর্থ কিংবা শক্তি বেশী।ততো চর্চাও বেশী আপনার।বাই দ্যা ওয়ে আজকে তোশার কাছে আপনাকে থাকতে দিলো না তাহিয়া ম্যাম?”

“নাহ।তোমার কোনো সাংবাদিক বন্ধু আছে?”

“আছে।কেন বলেন তো?”

“তাকে কল করে বলো।একটা দারুণ নিউজ আছে প্রতীকের সম্পর্কে।”

কবীর ফোনটা কেঁটে দিলো।দ্রুত তার মস্তিস্ক সঞ্চালন করে বিভিন্ন ঘটনা সাজালো একের পর এক।আশেপাশে তাঁকিয়ে কারো উপস্থিতিও আছে কীনা নিশ্চিত করে নিলো।আকাশের দিকে তাঁকালো সে।তার বৃহদকার সুগঠিত পুরুষালি দে’হ’ কে এখন লাগছে শিল্পের তৈরী সুন্দর সৃষ্টি।কবীর নিজের সঙ্গে বলে উঠলো,

“প্রেম,পায়’রা,প’য়,সা তিনটাকে সামলানোর শেষ চা’ল কবীর শাহ জানে।অদ্ভূত ফ্রান্সিসকো তুমি ভুলে গেলে আমি সেই বালক থেকে ঈগল পাখি হয়েছি।দেখা যাচ্ছে দুনিয়াতে ডি’সে’ন্ট কবীরের থেকে আড়ালে থাকা কবীরের বেশী দরকার।”

চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।সকলে আজ রেসপন্স করবেন।আজ পুরো পর্ব শুধু কবীর কবীর কবীর।কয়েক পর্ব তাই চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here