মিঃ আবির (একজন অচেনা মানুষ) শেষ পর্ব

0
1168

##মিঃ আবির–(এক অচেনা মানুষ)
পার্টঃ___03 & End.
–(রংধনুর _রং)


নিমিষেই তার হাসিখুশি চেহারার মাঝে এক অস্ফুট
মলিন আভা ফুটে ওঠলো।। যা কিছুতেই আমার কাছে
আড়াল করতে পারলো না সে ………….
তাকে একটু চিন্তিত দেখাচ্ছিল।। তাই হঠাৎ ই আমি
বলে উঠলাম —
— কিছু হয়েছে কি?? সব ঠিক আছে তো?? (আমি)
আমার কথায় এক অমায়িক হাসি দিয়ে বললো —
— আরে নাহ্ ।। কি ভাবছো তুমি?? কিছুই হয়নি।। সব ঠিক
আছে।। (আবির)
— না মানে এতরাতে ফোন ….!!তাই বলছিলাম আর
কি??? (আমি)
আমার কথা শুনে ও শব্দকরে হেসে ওঠলো আর ওর দুহাত
দিয়ে আমার দুই গালে হাত দিয়ে শান্ত লাজুক গলায়
বললো —-
— বাহ্ ১ম রাতেই বরকে সন্দেহ করছো?? তোমার বর শুধু
তোমারই।।
বলে আবারও আমার কপালে আলতো করে চুমো একে
দিলো।।
শেষরাতের স্নিগ্ধ চাদের আলো, একটু দখিনা
বাতাসের ছোয়া আর আবিরের এই ভালোবাসার স্পর্শ
আমাকে মাতাল করে তুলছিলো।। এক মুহুর্তে মনে
হচ্ছিল আবিরকে ও জড়িয়ে নিই আমার পরম
স্নায়ুস্রোতে।।
আবির এবার আমাকে বললো চলো সামনের দিকটাতে
একটু হাটা যাক।। ওর কথায় আমার ঘোর কাটলো।। মাথা
নাড়িয়ে ওর সাথে আমিও হাটতে লাগলাম।।
ছাদের ওপরে সাজানো ফুলবাগান দেখে আমার
শেষরাতের ভালোবাসা যেনো আরেকবার পূর্নতা
পেলো।। আমি বিস্ময়ে আবিরের দিকে ফিরে
তাকালাম।। চাদের স্নিগ্ধ আলোয় আমি স্পষ্ট দেখলাম
আবির চোখ নেড়ে এক অজানা অনুভুতি প্রকাশ করলো।।
যাতে স্পষ্ট আবিরের মনের কথা পড়তে পারছিলাম
আমি।। ওর চোখদুটো একটা কথায় শুধু বলছিলো —-
— হ্যা মিরা আজ থেকে এই ফুল, ফুলের সুভাস সবই
তোমার।। প্লিজ যত্ন করে আগলে রেখো এই
ভালোবাসার প্রতীকী গুলোকে।।। তবে একটা কথা শুধু
তোমারই,,,, এই প্রতীকী ভালোবাসার মাঝে সবচেয়ে
সৌন্দর্যময় প্রতীক কিন্তু আমার এই লক্ষি বউয়ের লক্ষি
চাহনিই।।!!!
নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলাম না।। নিজের
মনের সাথে কিছুতেই আপোষ করতে পারলাম না।।
পারলাম না প্রকৃতির এই বাস্তব মায়াকে কাটিয়ে
ওঠতে,,,
দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম এই হ্যাংলা, বদমাইশ,
পচা, বাদড় ছেলে মিঃ আবির কে।।।
এক মুহুর্তে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী, সবচেয়ে
বিশাল, সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা এইটায়।।যা
আস্টেপিস্টে বেধে রেখেছে আমাকে।।।

নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে কয়েকফোটা জল
গড়িয়ে পড়ছিলো।। কিন্তু অদ্ভুত ছেলে আবির এইটাও
বুঝে যাচ্ছিল।। বলে ওঠলো —
–ঝরতে দাও চোখের পানি।। তাকে আটকিও না।।
তাহলে আমাদের ভালোবাসার মাঝে ঘাটতি থেকে
যাবে।।
বলেই আরো শক্তকরে আমাকে জড়িয়ে নিলো।।
জানিনা কতক্ষণ দুজনে এভাবেই ছিলাম।। শুধু মনে
হচ্ছিল যে সময়টাই ছিলাম,, সেটা যেনো অতি
তাড়াতাড়িই শেষ হয়ে গেলো।।।

মনের অজান্তেই বাবা মার সিদ্ধান্ত কে আরেকবার
স্যালুট দিতে ইচ্ছে করছে।। হয়তো তাদের জন্যই মাত্র
কয়েক ঘন্টার পরিচয়ের অচেনা একজনের বুক কে আজ
সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গা মনে হচ্ছে, হয়তো তাদের জন্যই
আমার ভালোবাসার শূন্যের কোটা আজকে পূর্ণ মনে
হচ্ছে।।
ভাবনাগুলো ভাবতেই রাতের একমুঠো চাদকে গ্রাস
করে নিলো এক টুকরো মেঘমালা। অন্ধকার গারো হয়ে
আসছিলো।। তাই আবির আমাকে বললো
— চাদ আমাদের সাথে লুকোচুরি খেলছে,, চলো রুমে
যায়।।
বলেই আবারও কোলে নিয়ে রুমে আসলো।। তারপর
আমাকে ঘুমোতে বলে সে বেলকুনিতে গিয়ে
দাড়ালো।।
আবির,,,,,!!!!! সত্যিই আবির,,,,!!! প্রতিটা মুহুর্ত তাকে নতুন
করে চিনছি,, নতুন করে দেখছি, নতুন করে ভাবনাতে
আটকে রাখছি।। আমি জানি ও কিছু একটা নিয়ে
চিন্তায় আছে, তবুও আমাকে একফোটা বুঝতে না দিয়ে
নিজেকে সামলে আমাকেও সামলে নিলো।। এ যেনো
আমার জীবনের নতুন শিক্ষা।
কেননা আমি একটু বিষয়েই ঘাবরে যেতাম, অথচ
আবিরের বোধশক্তি আমাকে নতুন করে জাগ্রত করলো।।।
যাইহোক সারাদিনের ব্যস্ততার কারনে একটুতেই
চোখজোড়া ধরে আসলো।। আমি ঘুমিয়ে গেলাম,
আবিরকে রেখেই।। এতটুকু সময়ে ওকে যতটা জানলাম
তাতে এটা আমি ঠিকই বুজেছিলাম যে আজকের রাতে
ওর চোখের পাতা কিছুতেই এক হবে না।।।
…..
রংধনুর রং…..

রোদ্রের স্নিগ্ধ আলো চোখে এসে পড়তেই, ঘুমটা
ভেঙে যায় আমার।। চোখ খুলে একটুও অবাক হলাম না
আজকে,, আমি জানতাম আবির এখানেই থাকবে।।
হ্যা সত্যিই!!! আবির তার মায়াবি চোখদুটো দিয়ে
আমাকে দেখছিলো।। প্রতুষ বেলার চাহনিতে যতটুকু
বুঝেছি আমি
—ছিলনা সেই চোখে কোনো বিশেষ অঙ্গের প্রতি
আকর্ষন, ছিলনা সামান্যতম কোনো ললুপ দৃষ্টি।।
শুধু ছিলো পরম ভালোবাসায় জড়ানো কিছু স্নিগ্ধ
আবেশ।।।

—গুড মর্নিং বউ।( আবির)
–হুম গুড মর্নিং (আমি)
বলেই চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো আমার দিকে।। আমার
কেনো জানিনা ভীষন লজ্জা লাগছে ওর দিকে
তাকাতে।। বুঝলাম বিষয়টা লক্ষ্য করে মিঃ মুচকি
মুচকি হাসছে।।
তারপর চায়ের কাপ টা হাতে নিয়ে আবারও অবাক
হলাম আমি।। একি চা কোথায়???
— কিহ! চা নেই তো …..??থাকবে কি করে বলো আমি
তো আর চা করতে পারি না। শুধু দেখালাম যদি
পারতাম তবে এভাবেই এনে খাওয়াতাম।। (আবির)
আমার আর বুঝতে বাকি রইল না যে, সারাজীবন সালা
বদজাতটা আমার পিন্ডি চটকে দিবে।। তবুও খুব ভালো
লাগছিলো তার ভালোবাসার খুনসুটি গুলো।। জানিনা
কোনো মেয়ে কখনও বাসর রাত থেকে এত
ভালোবাসা পেয়েছে কিনা?? তবে আমি
ভালোবাসায় পূর্ণ।।
আমার ভাবনার মাঝেই আমিও একটু মুচকে হেসে
ওঠলাম।। তারপর ও বললো —
— খুব ইচ্ছে হয় প্রতিদিন সকালে বউয়ের হাতে মিষ্টি
চায়ের সাথে ঘুমটা ভাঙাতে।। (আবির)
ওর কথা শুনে মুচকি হেসে বিছানা থেকে নেমে
আসলাম।। বললাম
–রান্না ঘরটা কোথায়?? (আমি)
বলেই বাহিরে যেতে চাইছিলাম।। ভালোবাসার
মানুষের আবদার টা পূরন করতে।। আমার অজান্তেই আমার
মন বলে ওঠলো প্রত্যেকটা সকাল তোমার বউয়ের
হাতের মিষ্টি চায়েই শুরু হবে তোমার মিঃ আবির।।
কিন্তু আবির আমার হাতটা ধরে কাছে টেনে বললো-
–এখন লাগবে না পাগলী। যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।।
বাহিরে মা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।।।
কথাটি শুনেই ঘড়ির কাটার দিকে তাকালাম।।।। ইস্স
সাতটা বেজে গেছে।। বাহিরে মা অপেক্ষা করছে।।
আর কথা না বাড়িয়ে ওকেও কিছু বলার সুযোগ না
দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।।।

ফ্রেশ হয়ে বাহিরে এলাম। দেখি আমার শ্বাশরী মা
বসে অপেক্ষা করছে।। আমাকে দেখেই আমার দিকে
এগিয়ে এসে বললো —
–আয় মা, আমার কাছে বস।।
বলেই আমাকে বসিয়ে দিয়ে দু কাপ চা নিয়ে হাজির
হলো।। তারপর আমার পাশে বসে বলল
— নে মা চা টা নে,, নইলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।।
আমি চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।।
তারপর শ্বাশরী মা বললেন
–কি রে মা কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো তোর??
(মা)
–জি না মা, আমার কোনো অসুবিধে হচ্ছে না।। (আমি))
আমি মায়ের সাথে চা খাচ্ছিলাম আর এদিক সেদিক
তাকিয়ে আবির কে খুজছিলাম।। হয়ত ব্যাপারটা
শ্বাশরী লক্ষ্য করছিলো। তাই বললো
–কিরে মা কাউকে খুজছিস?? জানি তো আবির কে
খুজছিস??
আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম।। মুখ ফুটে কিছু বলতেও
পারছিলাম না।। শুধু লজ্জার মাথা খেয়ে মাথা
নাড়ালাম।। উনি বললেন —
–কেনো তুই জানিস না। ও তো একটু মিলে গেছে।। কাল
শেষরাতের দিকে আমাদের মিলে আগুন ধরে
গিয়েছিলো।। শুনলাম অনেকটাই নাকি ক্ষতি হয়ে
গেছে।।
কথাটি শুনে আমি অবাক ও নিস্তব্ধ হয়ে যায়।।
তারমানে আবির কে তখন সে জন্যই ওমন দেখাচ্ছিল।।
আমার ভেতরটা মুচরে ওঠে।। নিমিষেই মলিন হয়ে যায়
আমার মুখ।।
আমার অবস্থা টা বুঝতে পেরে শ্বাশরী মা বললেন —
–কিরে তুই জানতিস না,,, নাহ??
আমি বললাম না মা।। আপনার ছেলে তেমন কিছু
বলেনি।। তারপর উনি বললেন
–আবির এমনই।। তুই কোনো টেনশন করিস না সব ঠিক হয়ে
যাবে।।
আমি আমার শ্বাশরী কে দেখেও অবাক হচ্ছি ।। দুই মা
ছেলে সত্যিই অন্যরকম ধাতুতে গড়া।। যা আমাদের আট
দশটা পরিবারের চেয়েও অনন্য।।। তারপর আবারও
শ্বাশরী মা বলে ওঠলেন —
–শোন, তোকে কিছু কথা বলি মা।। জানিস তো
আবিরের বাবা নেই।। আবিরের ছোটবেলাতেই উনি
মারা যান।। খুব কষ্ট আর ধৈর্য নিয়ে সাধনার ফলে
আজকে আবির নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।। তার
বাবার ফেলে যাওয়া ব্যবসাকে একার হাতে দাড়
করিয়েছে।। যদিও আবির কে ছোটবেলা থেকে একটা
কথা শিখিয়েছিলাম যে, নিজে চেষ্টা করো,
নিজের পথকে নিজেই তৈরি কর, যেকাজ দশজনে
পারে না সেকাজ তুমি চেষ্টা করবে, কোনো বিষয়ে
টেনশন করবে না, যেটা হওয়ার সেটা শ্বাশত নিয়মেই
হবে। তুমি চাইলেও আটকাতে পারবে না।। তার চেয়ে
ভালো দুর্দিনে ধৈর্য ধারন করে তার মোকাবেলা
করবে।।।
হয়ত আবির ছোটবেলা থেকে আমার কথাগুলো মেনে
আসছিলো।।
মা রে আমার ছেলে বলে বলছি না, ও সত্যিই একজন
খাটি ছেলে।।।।
বলেই আমার হাতটি জড়িয়ে ধরে বললো ——
–কথা দে মা কখনও আমার ছেলেকে কষ্ট দিবি না।।
দেখলাম কথাগুলো বলতে ওনার চোখের কোনে পানি
জমলো, কিন্তু গড়িয়ে পড়লো না।। বুঝলাম –উনারা
অন্যজাতের মানুষ।।।
আমিও কেদে দিলাম। কিছু বলার ভাষা হারিয়ে
ফেলছিলাম।। আমি শ্বাশরী মাকে জড়িয়ে ধরলাম।।
মনে হলো আমার মায়ের জেরোস্ক্রপি।। কেননা তার
বুকেও একই রকম শান্তি।।।
তারপর মা আমাকে বললো, চল মা তোকে পুরো
বাড়িটা চিনিয়ে দেই।। আজ থেকে সব দায়িত্ব তোর।।
আমার রেস্ট।।
শোন মা,,,, এই শহরে আমাদের আপন বলতে তেমন কেউ
নেই, তাই তোদের বিয়েটাও ঘরোয়া পরিবেশে শেষ
করেছি।। তাই এখানে আমি ছাড়া কিছু বলার মতো
কাউকে পাবি না।। তাই কিছু লাগলে অবশ্যই আমাকে
বলিস মা।।।
আমার বিস্মিত হওয়ার মাত্রা বুঝি অতিক্রম করলো।। এত
অমায়িক পরিবার একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ভাগ্যে
রাখলেই সম্ভব।।

আমি আর আমার শ্বাশরী মা মিলে পুরো বাড়িটা
বেড়ালাম।। এরমধ্যে আরো অনেক গল্প হলো আমাদের।।
তিনি আবিরের সকল পছন্দ অপছন্দ আমাকে জানালেন।।।
এক মুহুর্তে আমি ভুলেই গেছি যে, আমি এক অচেনা
পরিবারের নতুন সদস্য।।
আমি শ্বাশরী কে আরেকবার বললাম ….
–মা, মিলের অবস্থা টা কি হলো একবার জানলে হতো
না??
–নারে মা।। তোকে বললাম না কোনো টেনশন করবি
না।। আবির সব সামলে নিবে।। চল আমরা দুপুরের
রান্নাটা শেষ করি।। তোকে সব দেখিয়ে দেই।। (মা)
আমি মাথা নেড়ে তার সাথে হাটা দিলাম রান্না
ঘরে।।।।

প্রায় দুই ঘন্টা পর রান্না শেষ করে ফ্রেশ হয়ে রুমে
আসলাম।। পুরো রান্নার সময়ে শ্বাশরী মায়ের মুখের
মজাদার সেই গল্প আমাকে ভুলিয়েই দিয়েছে যে,
আমি কখনও রান্না ঘরের ছায়াই মারাড় নি।। মনে
হচ্ছিল এই রান্নার কাজ আমার কত বছরের অভ্যাস।।
যাইহোক ঘরে বসে আবিরের কথা মনে পড়ছিলো।
সালা হ্যাংলা সেই কখন গেছে এখনও আসার নাম গন্ধ
নেই।। জীবনে এই প্রথম কোনো ছেলেকে এত মিস
করছি।।
ঘরের ভেতর একাই ঘোরাঘরি করছিলাম। ঘরটিকে
তেমন করে গুছিয়ে না রাখলে, পুরো ঘরটিতে এক
সৌন্দর্য বিদ্যমান ছিলো।। রাতের ধকলে তেমন একটা
দেখা হয়নি।।ভেতরের সবচেয়ে সুন্দর করে সাজানো
ছিলো বুকসেল্ফটা।। তাই একটু এগিয়ে সেখানে
গেলাম।। বইগুলো দেখছিলাম। বেশ কয়েকটি বই আমার
পছন্দের ছিলো।। হঠাৎ ই আমার চোখ গেলো এক নীল
রংয়ের ডায়েরীর দিকে।। ধুলো পড়া ডায়েরীর কিছু
জায়গায় হাতের ছোয়া দেখা যাচ্ছিল।। মনে হয়
অনেকদিন পর কেউ ডায়েরী টিতে হাত দিয়েছে।।
মোটামোটি আগ্রহ নিয়েই ডায়েরী টা খুললাম।।
ডায়েরীর ১ম পনের পাতায় কোনো লেখা ছিলনা।।
তারপর থেকে লেখা—-
——–
———পনের দিন মিরার ছবি দেখে আসছি।। কিভাবে
তার সৌন্দর্যের বর্ণনা দেবো ভেবে পাচ্ছিনা।। খুব
কাছ থেকে আজকে তাকে দেখলাম।। আগেই বললাম
তার সৌন্দর্য আমার কাছে বর্ণাতীত।। তাই কি
মায়াবীই যে তাকে লাগছিলো তা শুধু আমিই
জেনেছিলাম।।
প্রথম দেখাতেই মিরা একটু অবাক হয়েছিলো আমাকে
দেখে। কেননা রাতে বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে
ভিজে খুব কষ্টে তারজন্য একগুচ্ছ গোলাপ আর প্যাড
নিয়ে এসেছিলাম।। তার হাতে দেওয়ায় সে যে ভীষন
রকম অবাক হয়েছিলো তা আমি বুঝেছিলাম।।ওর চোখ
আমাকে প্রশ্ন করছিলো আমি কিভাবে জানলাম তার
পিরিয়ডের কথা।।
আসলে বিয়ের পর থেকে গাড়িতে বসে আড়চোখে
দেখছিলাম তাকে। কিন্তু সে জানালা দিয়ে
বাহিরের দিকেই চেয়ে ছিলো।। আমার দিকে এখটুও
নজর ছিলো না ওর। অবশ্য এর ফাকেই ওকে কয়েকবার
পেট চেপে ধরতে দেখেছি।। আমি বুঝছিলাম ওর খুব কষ্ট
হচ্ছিল।। কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না।।
যাইহোক বাসায় আসার পর আমার পকেটে থাকা
কাবিনের নকল কপিটা বের করতে গিয়ে হঠাৎ ই আমার
চোখ পড়ে তার জন্ম তারিখের ওপর।। আমি ভীষন খুশি
হয়েছিলাম,,, কেননা আজকের রাতে ওকে একটা হলেও
সারপ্রাইজ দিতে পারবো।। আর কিছু না ভেবেই আমার
বন্ধু …রংধনুর_রং….কে সব ম্যানেজ করতে বললাম।। আমার
সবচেয়ে কাছের আর প্রিয় বন্ধু হলো …রংধনুর_রং…।আর
সেই সব ব্যবস্থা করেছিলো।।। ধন্যবাদ বন্ধু তোকে
…রংধনুর_রং…।
বিয়ের দিনের আমার কাছের সবচেয়ে খুশির মুহুর্ত
ছিলো মিরার সারপ্রাইজ হওয়া।। যা ছিলো বিয়ের
রাতের সবচেয়ে বড় পাওয়া আমার কাছে।।

তারপর ডায়েরীর পাতাটায় আর কিছু লেখা ছিলো
না।। শুধু তার চারপৃষ্টা পর লেখা ছিলো,,,, যদি মন
খারাপ হয়, তবে বই পড়।।।।
সালা বুদ্ধ!!!লেখার কি ছিড়ি ….?? আয় না বাসায় আয়
আজকে???
ভাবতে ভাবতেই মহারাজ হ্যাংলা এসে হাজির।।
আমি তাড়াহুড়ো করে ডায়েরী টা রেখে দেই।।।
তারপর খুব সাহস নিয়ে তার কাছে গিয়ে বললাম
—– কি মিঃ আবির খুব টেনশন দিতে ভালো লাগে
নাহ তোমার??
এই কি ভাবো কি নিজেকে হ্যা?সব তুমিই বুঝবে??
তুমিই সব টেনশন নিবে?? আমি কি কেউ নই তোমার??
বলেই ওর বুকে ঝাপিয়ে পড়লাম।। হয়তো ও সব বুজতে
পারছিলো, তাই আমাকেও পরম আদরে বুকে আগলে
নিলো।।। তারপর বললো —
খুব ভালোবাসো আমায়??? এবার আমি কেদেই দিলাম।
তারপর তার বুক থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।।
দেখলাম বুদ্ধুর মুখটা মলিন হয়ে গেলো।। তাই আমি
বললাম —
——-মন খারাপ হলে, বই পড়তে হয় ………..
আর খুব খারাপ হলে, বউকে জড়িয়ে ধরতে হয়।।।
বুজছেন মিঃ হ্যাংলা?????
ও বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে
অবুঝের মতো মাথা নেড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো
তার বুকে।। বুজতে পারছিলাম ইহা পরম ভালোবাসার
পরম দেয়াল।।।।
.
(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here