মায়াবতী পর্ব ৪+৫

0
924

#মায়াবতী
#পর্ব:৪+৫
তানিশা সুলতানা

এতোদিন কলেজে না আসাতে ওরা জানতেই পারে নি কালকে বসন্ত বরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে।
অথৈ তো ভীষণ খুশি। কলেজে এই প্রথমবার অনুষ্ঠান হচ্ছে। সবাই বাসন্তি রংয়ের শাড়ি পড়ে আসবে বলে ঠিক করেছে। কলেজের কানাই কানাই আলপনা করা হচ্ছে। বেলুন, কুলো, বিভিন্ন হাতেরকাজ দিয়ে সাজানো হচ্ছে।
যারা যারা পারফরম্যান্স করবে সবাই রিয়ারসেল দিচ্ছে।
তন্নি খুব ভালো নাচ করে। অথৈয়ের জন্মদিনে নেচেছিলো। নাচতে চায় নি। খুব জোর করেই নাচিয়েছিলো অথৈ।
তন্নি আর অথৈ পারফরমেন্স দেখছে। তন্নি খুব মন দিয়ে নাচ দেখছে হাত তালি দিচ্ছি মাঝেমধ্যে গানের তালে তালে ঠোঁট মেলাচ্ছে।
যে মেয়েটা ডান্স করছে সে ঠিকঠাক ভাবে স্টেপ গুলো পারছে না। তন্নির খুব করে ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে শিখিয়ে দিতে। কিন্তু আবার লজ্জা লাগছে।

অথৈয়ের ফোন বেজে ওঠে। অর্ণব কল দিয়েছে।

“আমার ভাইকে বোধহয় হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

তন্নি ভ্রু কুচকে তাকায়। অথৈ খিলখিল করে হেসে ওঠে। তন্নিও হেসে ফেলে।

” কল করছে। চল দেখে আসি।

“তুই যা। আমি প্লিজ যাবো না।

” আমার ভাই তোকে আর কখনোই কিছু বলবে না। চল তুই।

অথৈ তন্নির হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে কল রিসিভ করে।

“ওই ছাগল কোথায় তুই?

অর্ণব বলে ওঠে।

” ঘাস খাচ্ছি। খাবি?

“বল না ইয়ার। আমি রোদে দাঁড়িয়ে আছি।

” পাঁচ মিনিট দাঁড়া আসছি আমি।

অথৈ কল কেটে দেয়। পা চালিয়ে চলে আসে কলেজের মাঠে। গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অর্ণব। চোখে সানগ্লাস। ফর্সা কপালে ঘাম গুলো মুক্তোর দানার মতো চিকচিক করছে। কপালে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেস লাগিয়েছে। সাদা শার্টের বুকের কাছে দুটো বোতাম খুলে দিয়েছে। তাতে ফর্সা বুকের কালো লোম গুলো উঁকি দিচ্ছে। হাতা ফোল্ড করে কনুই ওবদি উঠিয়েছে। হাতেও বড়বড় লোম। ফর্সা হাতের কালো লোম দেখতে মন্দ লাগছে না। তন্নি এক পলক তাকিয়ে ছিলো অর্ণবের দিকে৷ পরপরই চোখ নামিয়ে নিয়েছে।
অর্ণবের চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। হবে নাই বা কেনো? বিদেশি বাবু তো। তার কি আর রোদে মজা লাগবে?
অথৈ আর তন্নিকে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়ায় অর্ণব। হাতের উল্টো পিঠে ঘাম গুলো মুছে ফেলার চেষ্টা করে। সানগ্লাস খুলে শার্টে ঝুলিয়ে রাখে।

“এতোখন লাগে আসতে?

বেজায় বিরক্ত গলায় বলে অর্ণব।

” উড়োজাহাজ ছিলো না তো আমার কাছে। যে উড়ে উড়ে আসবো।

নিজের ওড়না দিয়ে অর্ণবের কপালের ঘাম গুলো মুছে দিতে দিতে বলে অথৈ।
অন্য সময় হলে অর্ণব ছেড়ে দিতো না কিন্তু এখন মুড ভালো। তাই তর্ক করলো না।

“গাড়িতে বস। মার্কেটে যাবো।

অর্ণব গাড়ির পেছনের দরজা খুলে দিয়ে বলে।

” কিছু কেনার নেই আমার।

“চুপচাপ বস। বড় ভাইয়ের মুখে মুখে তর্ক।

তন্নি কি করবে বুঝতে পারছে না। চলে যাবে এখান থেকে? না কি দাঁড়িয়ে থাকবে? প্রচন্ড অস্বস্তিতে পড়ে গেছে।

” এই যে অথৈয়ের তন্নি। তুমি দাঁড়িয়ে কেনো? বসো জলদি।

অর্ণব তন্নিকে বলে ওঠে। চমকে ওঠে তন্নি। আসলে এটা ও এক্সপেক্ট করে নি। অর্ণব ভ্রু কুচকে তাকায় তন্নির দিকে।

“বুঝলাম না
ধমক দিলে কেঁপে ওঠো। ডাকলে কাঁপো। মিষ্টি কথা বললেও কাঁপো।
কাঁপা-কাঁপির রোগ আছে না কি তোমার?

বুকে হাত গুঁজে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে অর্ণব। তন্নি কি বলবে বুঝতে পারছে না।
প্রচন্ড নার্ভাস সে। তার গলা শুকিয়ে কাঁঠ হয়ে গেছে।

” কিছু বলেছি আমি।

অর্ণব এবার গম্ভীর গলায় বলে।
তন্নি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।

“আমাকে বাসায় যেতে হবে।

মাথা নিচু করে রিনরিনিয়ে বলে তন্নি।

” আই নো দেট। ইভেন আমাদেরও বাসায় যেতে হবে। সো কটামি বাদ দিয়ে দ্রুত বসে পড়ো।

খালি কটামি। গুরুজন মানেই না।
বলতে বলতে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে অর্ণব। তন্নি ভেজা বেড়ালের মতে অথৈয়ের পাশে বসে পড়ে। অথৈ আপাতত সাজুগুজু করতে ব্যস্ত।
অর্ণব সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি স্ট্রাট করে।

কয়েক মিনিটের ব্যবধানে চলে আসে শপিং মলে। ইয়া বড় শপিংমল। কয় তালা হবে? তন্নি জানালার কাঁচের ফাঁকে মাথা বের করে গুনতে থাকে।
আট তালা ওবদি গোনার পরেই অর্ণবের ডাক কানে আসে।

“পবলেম কি তোমার বলবে প্লিজ? এই গাড়িতে উঠতে চাইছিলে না এখন নামতে চাইছো না।

অর্ণব পেছন ঘুরে বলে। তন্নি পাশে তাকিয়ে দেখে অথৈ নেমে গেছে। শুকনে ঢোক গিলে। মাথায় পেঁচানো ওড়নাটা ঠিক আছে কি না চেক করে নেমে পড়ে তন্নি।

” তোর তন্নির হাত ধরে রাখ। আবার হারিয়ে গেলে বলবি “ভাইয়া আই হেট ইউ। তুমি আমার তন্নিকে কিডন্যাপ করেছে”
অথৈকে নকল করে বলে অর্ণব। খিলখিল করে হেসে ওঠে অথৈ। তন্নিও ঠোঁট চেপে হাসে।

তিন তালায় বড় একটা শাড়ির দোকানে আসে ওরা।

“এখান থেকে সব থেকে বেস্ট শাড়িটা চুজ করবি।
আমি ওইদিকেই আছি।

বলেই অর্ণব চলে যায়।
অথৈ শাড়ি দেখতে থাকে। দোকানের ডান পাশে সুন্দর বাসন্তি কালার একটা শাড়ি পুতুলকে পড়ানো। যেই শাড়িটার দিকে চোখ আটকে যায় তন্নির। এতো সুন্দর শাড়ি কখনোই দেখে নি।
শাড়িটা একটু ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছে না। তাই চুপচাপ দেখে যাচ্ছে।

” জান এই শাড়িটা দেখ তো।

অথৈ একটা শাড়ি দেখিয়ে বলে।

“হুম সুন্দর নিতে পারিস।

” তাহলে এটাই ফাইনাল।

তন্নি মাথা নারায়।
তারপর অথৈ নিজের জন্য বাসন্তি রংয়ের শাড়ি দেখতে থাকে।

“শাড়িটা পছন্দ তোমার?

পেছন থেকে অর্ণব বলে ওঠে। চমকে ওঠে তন্নি। বড়বড় চোখ করে পেছনে তাকায়।

” রিলাক্স
আমি অর্ণব। খে*য়ে ফেলতে চাই নি তোমায়। জাস্ট বলেছি পছন্দ কি না।

দুই হাত উঁচু করে বলে অর্ণব।
তন্নি চোখ নামিয়ে নেয়।

“হ্যাঁ পছন্দ হয়েছে অথৈয়ের জন্য।
অথৈ এই শাড়িটা নিতে পারিস।

অর্ণব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে। অথৈ সেই শাড়িটা দেখতে থাকে। সত্যিই শাড়িটা খুব সুন্দর।
অর্ণব চোখের ইশারায় অথৈকে বলে শাড়িটা তন্নির জন্য নিতে। অথৈয়ের ভাইয়ের প্রতি এক রাশ ভালোবাসা জমা হয়। ইচ্ছে করছে জাপ্টে জড়িয়ে ধরতে।

” তন্নি এই শাড়িতে তোকে ভীষণ সুন্দর লাগবে।

তন্নির মাথায় ঘোমটা টেনে দিয়ে বলে অথৈ।
তন্নি লজ্জা পায়।

“অথৈ প্লিজ।

অথৈ বুঝে যায় তন্নির কাছে টাকা নেই তাই এমন বলছে।
অথৈ তন্নির কানের কাছে ঠোঁট নেয়।

” তুই আমাকে প্রতিদিন এক ঘন্টা করে পড়া বুঝিয়ে দিস না? দিস তো। কেনো দিস? কারণ তুই আমাকে ভালোবাসিস। আমিও তো তোকে ভালোবাসি। তোকে এই শাড়িটা গিফট দিতে পারি না? বল? তুই শাড়িটা না নিলে আমি তো তোর কাছে আর পড়বে না তন্নি।

ফিসফিস করে বলে অথৈ। তন্নি কিছু বলার মতো খুঁজে পায় না। বাধ্য হয়েই নিয়ে নেয়।
অর্ণব হাসে।

অর্ণব তার গার্লফ্রেন্ড নিধির জন্য কিনেছে শাড়িটা। অথৈ আগেই সন্দেহ করেছিলো। এখন শিওর হয়ে গেলো।
তন্নিকে রিকশায় তুলে দিয়েছে অর্ণব। মেয়েটা হেঁটেই যাবে বলছিলো। অর্ণবের ধমকে চলে গেছে। শাড়িটা রেখে দিয়েছে অথৈ। অথৈয়ের ধারণা তন্নির মা তাকে এই শাড়ি পড়তে দেবে না।
তাই কাল সকাল সকাল অথৈয়ের বাড়িতে চলে আসবে। তারপর অথৈ রেডি করিয়ে দেবে।

আপাতত অর্ণব গাড়ি থামিয়েছে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে। এই রেস্টুরেন্টেই অপেক্ষা করছে নিধি।

“অথৈ নামতে বললাম তো তোকে।

অথৈ অর্ণবের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়।

” গার্লফ্রেন্ডের সাথে মিট করতে যাবি তবুও তোর আমাকে লাগবে?

“ও তোর সাথে মিট করতে চেয়েছে। তাছাড়া তুই দেখবি না তোর ভাবিকে?

অথৈ ফোঁস করে শ্বাস টানে। কাঁধ সমান চুল গুলো ঝুঁটি করে নেয়।
তারপর নেমে পড়ে।

এই রেস্টুরেন্টের পূর্ব পাশে বসে আছে নিধি। অর্ণবের রিকোয়েস্টে শাড়ি পড়েছে কালো রংয়ের।
ফিলফিলে পাতলা কালো শাড়ি হাতা কাটা ব্লাউজ পিঠ সমান চুল তাও ব্রাউন কালার করা। চোখে কাজল দিয়েছে কিন্তু মায়াবী লাগছে না। মুখে গাড়ো মেকাব ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক।
অর্ণব কেনো জানি নিধিকে দেখে মুগ্ধ হতে পারে না। মুগ্ধতার ছিঁটে ফোঁটাও নেই এই মেয়েটার মাঝে।
তবুও ঠোঁটের কোণের হাসিটা চওড়া করে এগিয়ে যায়।

” সরি। লেট হয়ে গেলো।

অর্ণব নিধির মুখোমুখি বসতে বসতে বলে।
অথৈও অর্ণবের পাশে বসে।

“ইটস ওকে।

নিধি হেসে বলে।

” মিট মাই লিটল সিস্টার মাহিমা মাহমুদ অথৈ।

অথৈয়ের পিঠের ওপর নিজের হাত রেখে বলে অর্ণব।

“হেলো মাহিমা।

” হাই
তুমি আমায় অথৈ বলেই ডেকো। নিক নেইম অথৈ।

“ওকে অথৈ।
আমি নিধিরা নিধি। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছি।

” আমি ফাস্ট ইয়ার।

অথৈয়ের নিধি মেয়েটা বেশ ভালো লেগেছে। দেখতে মাশাআল্লাহ। কিন্তু একটু স্টাইলিশ। তবে বেপার না। ভাইও কি কম না কি?
দুজনকে বেশ মানিয়েছে।

তিনজনে আড্ডা দিয়ে প্রায় সন্ধায় বাসায় ফেরে।

___
তন্নি পড়তে বসেছে। পাশেই তামিম পড়ছে। ইতি বেগম বেরিয়েছে। তন্নির বাবা তারেক বিদেশ থাকে। গিয়েছে কিছু মাস আগে। কোনো একটা ঝামেলায় জেলে আটকা পড়েছিলো। মাসখানেক হলো ছাড়া পেয়ে কাজ করছে। আজকে মাস পূর্ণ হয়েছে। টাকা পাঠিয়েছে কিছু। সেই টাকা তুলতে গেছে ইতি বেগম।

আটটার দিকে বাসায় ফেরে ইতি বেগম। ভীষণ খুশি সে। এই কয়মাসে ভীষণ কষ্ট করেছে। বাচ্চাদের ঠিক মতো খাবারটাও দিতে পারে নি।

দুই হাতে চিপস বিস্কুট নিয়ে বাসায় ফেরেন তিনি। তামিম দৌড়ে যায় মায়ের কাছে। তন্নি যেখানে বসে ছিলো সেখানে বসেই মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।

ইতি ছেলের হাতে খাবার গুলো দেয়। তারপর তন্নির দিকে তাকায়।

“তুই হাড়ির মতো মুখ করে বসে আছিস কেনো? ভাইয়ের সাথে মিলেমিশে খেয়ে পড়ায় মনোযোগ দে। রেজাল্ট খারাপ হলে তোর বাপ তো আবার আমাকেই দোষ দিবে। আমি আর আমার ছেলে তো বানের জলে ভেসে এসেছি। সারাক্ষণ শুধু আমার কোথায় আমার মেয়ে কোথায় করে বেড়াবে।
কালকে তোর শামীম চাচার ফোন থেকে বাপের সাথে কথা বলে নিস।
পাগল হয়ে যাচ্ছে সে মেয়ের সাথে কথা বলতে না পেরে।

বকতে বকতে চলে যায় ইতি বেগম। তন্নির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।
আহহহা কতোদিন বাবার সাথে কথা বলা হয় না। মা বলে ডাকে না।
টাকা মানুষকে কতোটা অসহায় করে দেয় তাই না?
এই যে এতো আদরের মেয়ে। যাকে কখনো কোল থেকেই নামাতো না। মেয়ের কান্না দেখলে অস্থির হয়ে পড়তো।
সেই আদরের মেয়েটাকে রেখে চলে গেছে দূর প্রবাসে। দুটো টাকা কামাবে বলে। ছেলে মেয়েকে মানুষ করবে বলে। বাচ্চাদের সুন্দর একটা ভবিষ্যতে দেবে বলে।
বাবারা সত্যিই অতুলনীয়। তারা কখনোই নিজেদের কথা ভাবে না।

” আপু খাও না।

তামিম চিপস তিন্নির মুখের সামনে ধরে বলে। তন্নি ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে খেয়ে নেয়।

____
পরের দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে তন্নি। ভোর ছয়টার মধ্যেই কথা বলতে হবে তারেকের সাথে। নাহলে সে সময় পাবে না।
তন্নি মন খুলে বাবার সাথে কথা বলে। ইতি বেগমকে পইপই করে বলেছে একটা ফোন কিনতে। আর তা আজকেই।
আজকে আর কোনো কাজ করতে হয় না তন্নিকে। ইতি বেগম করে নেয়।

কলেজে দশটার মধ্যে উপস্থিত থাকতে হবে। তাই তন্নি মাকে বলে সকাল সকাল চলে যায় অথৈয়ের বাসায়।

অথৈ প্রথমে তন্নিকে সাজিয়ে দিতে থাকে।
বাসন্তী কালার শাড়ি ম্যাচিং ব্লাউজ। মুখে হালকা ফেসপাউডার চোখে গাড়ো কাজল। দুই হাত ভর্তি চুড়ি। হাঁটু সমান চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।

অথৈ তন্নিকে দেখে হা হয়ে যায়। তন্নি লজ্জায় মাথা নুয়িয়ে ফেলে।

“তন্নি জান
তুই এতো কিউট?
মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ
তিন বছর তোর সাথে আছি এখনো তোর সৌন্দর্য আমি দেখিই নি?

অথৈ অবাক হয়ে বলে।

” ধ্যাত
তুই রেডি হয়ে নে। আমি আর্থি আপুকে দেখিয়ে আসি। বারবার বলেছে শাড়ি পড়ে তার কাছে যেতে।

তন্নি মিষ্টি করে হেসে বলে।
অথৈ তন্নির কপালে চুমু খায়।

তন্নি জীবনে প্রথমবার শাড়ি পড়লো। হাঁটতেই পারছে না। আঁচল আর চুলে বড্ড জ্বালাচ্ছে।
অর্ণব জগিং করে ফিরছে। নিজের রুমে ঢুকতে যাবে তখনই চোখ পড়ে তন্নির দিকে। হা হয়ে যায় অর্ণব।

তন্নির মুখে ছোট চুল গুলো উড়ে উড়ে আসছে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে তন্নি। দুই হাত উঁচু করে চুল গুলো খোপা করতে থাকে। আঁচল সরে গিয়ে হালকা চর্বি যুক্ত পেটটা দৃশ্যমান হয়ে যায়।
অর্ণবের বুক কাঁপছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।

খোঁপা করা শেষ করে তন্নি আঁচল ভাজ করে কাঁধে রাখে। চুড়ির রিনঝিন শব্দ হচ্ছে।
এতখনে তন্নি অর্ণবকে খেয়াল করে। চোখ মুখ অস্বাভাবিক হয়ে যায়। আঁচল তুলে ঘোমটা টেনে নেয়।
অর্ণব তাকিয়ে আছে তন্নির চোখের দিকে।
কাজল কালো মায়াবী চোখ। ঠোঁট দুটো চিপে রেখেছে।

তন্নি মাথা নিচু করে অর্ণবকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয় অর্ণব তন্নির নরম হাতটা মুঠো করে ধরে। কেঁপে ওঠে তন্নি। বুকটা ধুপধাপ করতে থাকে। হাত পায়ে কাঁপন ধরে যায়। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে তন্নি।

“মায়াবতী

অর্ণব তন্নির ভয়ার্তক মুখের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে বলে ফেলে। পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় তন্নি অর্ণবের পানে। চোখে মুখে প্রশ্ন। কে মায়াবতী?

” আরে হুরপরী যে

আর্থি বলে ওঠে। ধ্যান ভাঙে অর্ণবের। ছেড়ে দেয় তন্নির হাত। তন্নি চমকে ওঠে। বুকটা এখনো টিপটিপ করছে। এই টুকুনি সময়ে ঘেমে গেছে।
অর্ণব এদিক সেদিক তাকিয়ে লম্বা শ্বাস টানে। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা মাত্র।

আর্থি দৌড়ে এসে তন্নির মাথা থেকে পা ওবদি ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে।

“সিরিয়াসলি তুই তন্নি? না কি তন্নি রূপে হুরপরি?
তুই আন্দাজ করতে পারবি না তোকে কতোটা প্রিটি লাগছে। জাস্ট অসাধারণ।

উত্তেজিত হয়ে তন্নির ঘোমটা খুলে চুল গুলো ছেড়ে দিতে দিতে বলে আর্থি।
তন্নি লজ্জা পেয়ে যায়।

” চুল আঁচল সামলাতে হিমশিম খেয়ে যাই আমি আপু।

রিনরিনিয়ে বলে তন্নি।

“একজন বডিগার্ড রাখো তাহলে। এগুলো সামলানোর জন্য।

অর্ণব গম্ভীর গলায় বলে ওঠে। তন্নি কপাল কুঁচকে ফেলে।

” তুই হয়ে যা বডিগার্ড। এমনিতেও তো আমড়া কাঠের ঢেকি তুই। তাও একটা কাজে আসবি।

আর্থি বলে ওঠে।

“আমি বডিগার্ড হলে তোদের তন্নি আমায় সামলাতে পারবে না।

বলেই অর্ণব রুমে ঢুকে যায়। তন্নির গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে।
আর্থি কথার মিনিং বুঝতে পেরে ভ্রু কুচকে ফেলে।

” ব”দ”মা”ই”শ ছেলে।

বিরবির করে বকা দেয় আর্থি।

“তন্নি চল আমি তোর পিক তুলবো। তোর ভাই আমায় ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনে দিয়েছে। ফটো সুট করার জন্য। তোকে দিয়েই শুরু করবো চল।

আর্থি তন্নির হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।

চলবে

সর্বোচ্চ রেসপন্স চাই এই পর্বে। রেসপন্স যত বেশি হবে তত দ্রুত নেক্সট পর্ব দিবো।
আর নেক্সট, নাইস এসব কি?
গঠন মূলত কমেন্ট করবা। নিজেদের মতামত জানাবা।
কি ভালো লেগেছে কি ভালো লাগে নি এটাও বলবা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here