মন শুধু মন ছুঁয়েছে, পর্ব:৯+১০

0
3598

মন শুধু মন ছুঁয়েছে
তামান্না জেনিফার
পর্ব নয় এবং দশ (শেষ পর্ব)
________________________
৯.
অহনার সামনের চেয়ারে বসে আছে অদিতি ৷ ঘরের দরজা বন্ধ ৷ অদিতি কাঁদছে , একটু আগেই সপাটে চড় খেয়েছে সে ৷ গত দুই ঘণ্টা যাবৎ তাকে ঘরে আটকে রেখেছে অহনা ৷ অদিতির শান্তশিষ্ট , বই পড়ুয়া বোনটি যে এমন ভয়ঙ্কর হতে পারে অদিতি তা স্বপ্নেও ভাবেনি ৷ সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো লাগছে অদিতির ৷ অহনা প্রথমে অনেক নরম সুরেই সব জানতে চেয়েছিল , অদিতি তখন উল্টো চোটপাট দেখিয়েছে ৷ ও ভেবেছিল বিষয়টা এখানেই শেষ হবে ৷ কিন্তু আসলে তা হয়নি ৷ বরং অহনা সহজে সত্য আদায় করতে না পেরে বলা যায় ঘরের দরজা বন্ধ করে তাকে রিমান্ডে নিয়েছে ৷

—এত কিছু জানার পরও একটা লোফার ছেলেকে তুই ভালোবাসিস ?

—তুমি যা বলছো সেটাই যে সত্যি সেটা তোমাকে কে বললো ?

—সবটা না জেনে তোকে আমি বললাম ! এতটা অবিশ্বাস তোর নিজের বোনের প্রতি , আর দুদিনের পরিচিত ছেলেটা তোর কাছে সত্যবাদী হয়ে গেলো ?

—ও আমাকে ভালোবাসে , আমিও ওকে ভালোবাসি ৷ তোমরা জেদের বসে ওকে থানায় পাঠিয়েছো ৷ নিজেদের স্বার্থ দেখেছো ! ও সবে মা কে হারিয়েছে আর তোমরা এখন ওকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিলে ! এতটা স্বার্থপর তোমরা … আমি তোমাদের নিজের পরিবার বলে মানি না ৷ সোহেল ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার আপন কেউ নাই , কেউই নাই….

অহনা আবার এক চড় দেয় অদিতির গালে ৷ তারপর ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় ৷ চিৎকার করে ওর মাকে বলে “খাবার দিবা না ওকে , লোফারের সাথে প্রেম করবে , অনাহারের কষ্ট বোঝা শিখুক…”

ঘরে বসে সবটা শোনে অদিতি ৷ ওর চোখে পানি , ও কাঁদছে …. সোহেলের জন্য কাঁদছে ! সোহেল ওর জীবন , সোহেল ছাড়া বাঁচা মরা এখন সমান ওর কাছে ৷ অদিতি ঠিক করে ও হার মানবে না ৷ সবটা যখন প্রকাশ হয়েই গেছে আর লুকোচুরির কিছু নেই ৷ এবার সে সবার সামনেই সোহেলের কাছে যাবে , ওকে থানা থেকে বের করবে যেভাবেই হোক ….

********

ইয়াসমিনের দিন কাটে না ৷ কলের উপর কল করে যায় সে সোহেলের নাম্বারে ৷ ওপার থেকে শুধু একটা রোবোটিক আওয়াজ আসে ” আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন তা এই মুহূর্তে বন্ধ আছে…”

ইয়াসমিনের ভয়ে বুক ঢিপঢিপ করে ৷ নানান অকথা কুকথা মনে আসে ৷ নামাজে বসে সে দীর্ঘ সময় নিয়ে স্বামীর জন্য প্রার্থনা করে ৷ খাওয়া দাওয়া ভালো লাগে না , কারো সাথে কথা বলতেও ইচ্ছা করে না ৷ লজ্জা ভেঙে ভাসুরের কাছে গিয়ে অবশেষে সে বলে “ভাইজান , তার মোবাইল বন্ধ আইজ তিন দিন … আমার ভালা ঠেকে না , আপনে খবর নেন …”

সোহেলের ভাই ঘাড় নাড়ে , ইয়াসমিনকে বলে শান্ত থাকতে ৷ সে খোঁজ নেবে ৷ কিন্তু নিজের ভাইকে সে চেনে , তাই আর খোঁজ নেবার প্রয়োজন মনে করে না ৷ মনে মনে ভাইকে দুই চারটা গালি দেয় , হাতের লক্ষী পায়ে ঠেলে নবাবজাদা কোন মহাকাজে গেছে সে বুঝে উঠে না ৷ বিরক্তিতে সোহেলের মা বোনকে তুলে গালি দেবার সময় তার মাথাতেও আসে না সোহেল তার আপন ভাই !

সন্ধ্যায় ইয়াসমিন আবার আসে তার কাছে ৷ এবার তিনি ইয়াসমিনের উপরেও বিরক্ত হন ৷ মুখে কিছু না বললেও মনে মনে ভাবেন “এখনকার মাইয়্যাগুলান এতই বেহায়া , শুক্কুর শুক্কুর আষ্টদিন হয় নাই বিয়ের এহনই স্বামী স্বামী কইরা পাগল হইয়া গেছে …”

মনে মনে যতই বিরক্ত হন এবার তিনি সোহেলের নাম্বারে নিজেই কল করলেন ৷ সোহেলের নাম্বার বন্ধ আসলেই ৷ এতদিন ফোন বন্ধ রাখার মানুষ তো সোহেল না … তাহলে কী সত্যিই কোন বিপদ হলো !

*********

সোহেলের তথাকথিত বড়ভাই , বিশিষ্ট নেতা সোহেলকে তার দলের লোক বলে অস্বীকার করেছেন ৷ সামনে ইলেকশন , এমন সময় এমন প্রমানসহ ধরা অপরাধীকে দলের লোক বলে দলের মান কমাতে তিনি রাজী নন ৷

খরবটা শুনে সোহেল মুষরে পড়ে ৷ সে ভেবেছিল তাকে অবশ্যই নেতা উদ্ধার করবে ৷ সে যা করেছে নেতার আদেশেই করেছে ৷ নেতার কাছে ভালো থাকার জন্যেই করেছে ৷ এত কষ্ট করেছে সে যে দলের জন্য আজ সেই দলের নেতা তাকে চিনতেও চাচ্ছে না !

অনুশোচনা হয় সোহেলের ৷ পুলিশের মার খেয়ে তার পুরো শরীরে ব্যথা ৷ অনেক রকম কষ্টই সোহেল করেছে , অনাহারের কষ্ট , ভালোবাসা না পাবার কষ্ট , লেখাপড়া ছেড়ে দেবার কষ্ট , মা বাবাকে হারাবার কষ্ট…. অথচ আজ পুলিশের লাঠির বাড়ির ব্যথাকে মনে হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ কষ্ট !

এই বিপদে তার বারবার শুধু ইয়াসমিনের কথাই মনে পড়ছে ৷ মেয়েটা নিশ্চয় তাকে পাগলের মতো খুঁজছে , খুঁজে না পেয়ে হয়তো কান্নাকাটি করছে … এই মেয়েটা তাকে খুব ভালোবাসে ৷ তার মতো পাপী একজন মানুষকে ভালোবাসে ৷ সোহেলের ভীষণ কান্না পায় ৷ মায়ের মৃত্যুতেও যে ছেলেটা কাঁদেনি আজ সে ডুকরে কেঁদে ওঠে মাকে ডেকেই … মা থাকতে মায়ের মর্যাদা সে বোঝেনি , আজ মায়ের অবর্তমানে তাকেই সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে তার ৷

এই যে সে সুস্মিতা নামের একজন শিক্ষকের সাথে এতটা ঝামেলায় জড়ালো , কেন জড়ালো ! সে কী তাকে চিনতো ! এই সব নেতার প্লান ৷ বলেছেন টাকা আদায় করতে সে তাই করেছে ৷ যখন যা বলেছেন সেটাই শুনেছে ৷ বিনিময়ে টাকা পেয়েছে , ক্ষমতা পেয়েছে … পাড়ার সবাই যখন ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়েছে , তার মনে হয়েছে জীবনে সে এটাই চায় ৷ সোহেল মানুষগুলোর চোখের ভয়টাই শুধু দেখেছে , তাদের চোখের ঘৃনা দেখতে পায়নি কখনও … এত এত ঘৃনা সে যার জন্য কুড়ালো সেই লোকটা অস্বীকার করছে সোহেলকে… সেই লোকটাও না কী বলেছে অপরাধীর চরম শাস্তি হোক !

হ্যাঁ সে অপরাধী , কিন্তু তাকে অপরাধী বানালো কে ? এই সমাজের কি কোনই দায় নেই ?

আলিম এসেছে তার সাথে দেখা করতে ৷ নিজের ওস্তাদকে চিনতে পারছে না সে ৷ ঠোঁট ফুলে গেছে , বামগালে রক্ত জমে আছে , সারা শরীরে মারের দাগ স্পষ্ট ! সোহেলকে দেখে কেঁদে ফেলে আলিম … আর আলিমকে দেখে সাহস পায় সোহেল ৷

—ওস্তাদ মাস্টারনীর বেটি আপনের জন্যে পাগল হইয়া গেছে ৷ হ্যায় আমারে আপনার কাছে পাঠাইছে ৷ কইছে আপনে লিশ্চিন্ত থাকেন , হ্যায় যেমনেই হোক আপনেরে বাইর করবো ৷ হ্যার বলে কোন বন্ধুর বড় ভাই উকিল , হ্যায় তার কাছে যাইবো ৷ হ্যায় যে আপনেরে ভালোবাসে এইডা হ্যার বাড়িত জানাজানি হয়া গেছে ৷ হ্যারে ভাত দিতেছে না , আমি একখান পাউরুটি কিনা দিছি ….

—আলিমরে , এইবার গ্রামে গিয়া আমি বিয়া করছি , তোরে কওয়া হয়নি ৷ আমার বউ ইয়াসমিন খুবই ভালো মেয়ে ৷ আমার মতো খারাপ মানুষের ভাগ্যে আল্লাহ এত ভালো বউ রাখবে এইডা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি ৷ মাইয়্যাডা মনে হয় আমার খবর না পাইয়া নাওয়া খাওয়া ছাইড়া দিছে ৷

—কন কী ওস্তাদ !

—সত্যি কথা কই ভাই ৷ জীবনে সত্যি কথা কমই বলছি ….ভাই আমার একটা কাম কইরা দিবি ?

—আপনের লেইগা জান হাজির ..

—জান লাগবো না ৷ খালি আমার ভাইরে কল দিয়া আমার অবস্থা জানা ৷ আর ঐ মাস্টারনীর বেটির লগে কোন কথা কইস না ৷ ওর বয়স খারাপ , ওর চোখে রঙিন চশমা ৷ অনেক অন্যায় করছি , ওরে ঠকায়া আর পাপ করমু না ৷

—আইচ্ছা ওস্তাদ …

দেখা করার সময় শেষ হয়ে যায় , আলিম চলে যায় সোহেলকে আবার একা করে…

১০.

আলিমের মাথাটা বনবন করে ঘুরছে ৷ যে মানুষটাকে সে থানায় দেখে এলো এই মানুষকে সে চেনে না ৷ সে ভেবেছিল তার ওস্তাদ এখন আরো ক্ষেপে যাবে ৷ বের হতে পারলে সে মাস্টারনীর বেটিটারে তুলে আনবে , শায়েস্তা করবে ঐ মাস্টারনীকে …. কিন্তু মানুষটা উল্টো বলতেছে অদিতির সাথে কোন আলাপে না যেতে !

সোহেলের দেওয়া নাম্বারে সে কল করে ৷

—আসসালামু আলাইকুম , আপনে কী আমার ওস্তাদের বড় ভাই ?

—ওয়ালাইকুম আসসালাম ! ওস্তাদ কেডা ?

—সোহেল , আমার ওস্তাদের নাম সোহেল

—হ আমি সোহেলের বড় ভাই ৷ কী হইছে ?

—আপনে ঢাকায় আসেন জলদি ৷ ওস্তাদের বড় বিপদ ….আসেন তারপর বিস্তারে বলবো ৷

—কী হইছে আমার ভাইয়ের !! হ্যালো হ্যালো !! আমার ভাইয়ের কী হইছে ? কথা কন না ক্যান !

আলিমের নষ্ট মোবাইলটা কথা শেষ হবার বন্ধ হয়ে গেছে ৷ আলিম মোবাইল নিয়ে চার্জে দিয়ে অন করার চেষ্টা করে কিন্তু অন হয় না ৷

ভাসুরের চিৎকার শুনতে পেয়েছে ইয়াসমিন ৷ সে কাঁদতে শুরু করে ৷ তার ভাসুর যখন ঢাকার দিকে রওনা হবে এমন সময় সে সামনে এসে বলে “আমারেও লগে নিয়া যান ভাইজান ….”

এই একটা বাক্যে এতটাই আকুতি ছিল যে সে মানা করতে পারে না ৷ দুজনে রওনা হয় ঢাকার উদ্দেশ্যে , বাড়ির বাকী মানুষগুলো দুশ্চিন্তায় দোয়া দরুদ পড়তে থাকে ৷

গাড়িতে বসেই আলিমের কল আবার পান তিনি ৷ এবার পুরো ঘটনা শুনলেন আর দ্বিধায় পড়ে গেলেন কী করবেন ! তার সাথে ইয়াসমিন , এখন ইয়াসমিনকে তিনি কিভাবে বলবেন যে তার স্বামী থানায় বন্দী ….

ইয়াসমিন বারবার জিজ্ঞেস করছে “ভাইজান কি কইলো লোকটা ? সে ভালো আছে তো ! ”

মাঝরাস্তায় এসে একটা মেয়েকে ফেরত পাঠাবারও বুদ্ধি নাই ৷ তিনি সাহস করে তাই ইয়াসমিনকে বললেন ” সোহেল থানায় আটক ৷ ছিনতাই কেসে ধরা খাইছে ৷ প্রমান সহ ৷ এহন ওর জামিনের ব্যবস্থা করা লাগবো …”

ভাসুরের কথা শুনে ইয়াসমিন স্তব্ধ হয়ে গেল ! তার স্বামী , তার ভালোবাসার মানুষটা ছিনতাইকারী ! পুরো পথ সে আর একটা কথাও বললো না ….

অবশেষে ঢাকায় প্রথমবার এসেই সে চলে গেলো থানায় ! সোহেলের সামনে গিয়ে যখন দাঁড়ালো খুব স্থিরভাবে বললো ” যে অভিযোগে আপনেরে ধরছে তা কী সত্য ?” সোহেল জবাব দিলো না … সে আবার বললো “চুপ মাইরা থাকলে তো হইবো না , বলেন , কথাডা কী সত্য ? ”

এবার সোহেল উত্তর দেয় ৷ বলে ” সত্য ! কিন্তু মিনমিন বিশ্বাস করো জীবনে প্রথমবার আমি আমার নিজের ভুল বুঝতে পারছি ৷ আমি অনেক খারাপ মানুষ , তবে আমি আর একটাবার সুযোগ পেলে আমি ভালো মানুষ হইতে চাই…মিনমিন আমি তোমার সাথে সুখের একটা সংসার চাই … সারাটা জীবন আমার অপ্রাপ্তিতেই কেটে গেছে , এবার আমি একটু শান্তি চাই ! মিনমিন আমারে তুমি বাঁচাও , এইখানে থাকলে আমি মরেই যাবো…”

ইয়াসমিন ডুকরে কেঁদে উঠে স্বামীর হাত ধরে ৷ তারপর বলে “আপনে সত্য কইতাছেন না মিথ্যা তা আমি জানি না ৷ আমি খালি জানি আমার জীবন বানছি আমি আপনের লগে ৷ এখন আপনের জীবনের সব জ্বালা আমার ৷ আপনের ভুল ঠিক করারও দায়িত্ব আমার ৷ আমার কপালে ছিল এমন জামাই , আমি পাইছি ৷ কিন্তু আপনেরে আমি আমার স্বপ্নের মানুষ বানামুই বানামু … আপনে খালি আমার হাতটা ছাইরেন না , আপনের মিনমিন আপনেরে বিপদে ফালায়া কোথাও যাইবো না ! যা আছে কপালে , আপনে ডড়াইয়েন না …”

সোহেলের জামিনের জন্য দৌড়াদৌড়ি শুরু হলো ৷ কোনদিন ঢাকা শহরে না আসা ইয়াসমিন রোজ হোটেল থেকে থানা , থানা থেকে উকিলের কাছে দৌড়াতে লাগলো ৷ একবার তার ভাসুর যায় , একবার সে নিজে !

এমনি একদিন তার দেখা হয়ে গেলো অদিতির সাথে ৷ অদিতি থানায় দেখতে এসেছিল সোহেলকে ৷ এরমধ্যে অদিতির বিষয়ে সব কথা সোহেল ইয়াসমিনকে বলেছে ৷ মেয়েটাকে দেখার সাথেই চিনতে পারলো সে ৷ নিজেই সাথে করে নিয়ে গেলো তাকে সোহেলের সাথে দেখা করাতে ৷

অদিতিকে দেখে লজ্জায় চোখ নিচু করে ফেললো সোহেল ৷ তিনজনই চুপ ! নীরবতা ভেঙে ইয়াসমিন বললো “আমি চাইলে অদিতির লগে সব কইতে পারি , তয় আমি চাই আপনেই কন …মাইয়্যাডা একবুক আশা লইয়া আছে , সইত্য জানার হক হ্যারও আছে ৷ ”

সোহেল খানিকক্ষন চুপ করে থেকে বলে “অদিতি , আমাকে মাফ করে দিও ৷ তোমার প্রতি আমাহ মোহ ছিল ঠিকই , কিন্তু ভালোবাসা কোনদিনও ছিল না ৷ তোমার মা কে শায়েস্তা করতেই তোমার সাথে সম্পর্ক গড়তে চেয়েছিলাম … যে চিঠিটা পড়ে তুমি আমার জন্য পাগল হয়েছো , সেই চিঠিটাও আমার লেখা না …আমার বন্ধুর লেখা ৷ আর অদিতি , সবচেয়ে বড় সত্য হলো আমি বিবাহীত ৷ এই যে ইয়াসমিন , সে আমার বিবাহীত স্ত্রী …”

সব কথা শুনে অদিতি এক মুহুর্তও সেখানে দাঁড়ায় না , দৌড়ে চলে যায় রাস্তায় ৷ আজ তার পুরো পৃথিবী মিথ্যে হয়ে গেছে !

বাড়িতে ফিরে মায়ের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কাঁদতে থাকে সে ! বারবার তার মা তাকে জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে কিন্তু জবাবে কোন কথা না শুধু চোখের পানিই আসে তার ৷

নিজেকে খানিকটা ধাতস্ত করে মা বোনের কাছে ক্ষমা চায় অদিতি ৷ সেই ক্ষমা চাইতে গিয়ে সে যেন আরো ভেঙেচুরে যায় ….

গভীর মমতা আর ভালোবাসায় সুস্মিতা আর অহনা আগলে রাখে অদিতিকে ৷ ভুল বোঝার পর যে অনুশোচনাটা হয় এই অনুশোচনা মানুষকে খাঁটি মানুষ করে ৷ এই সময় মমতার বাঁধন দরকার হয় , নয়তো অনুশোচনার পরিনাম হতে পারে আরো ভয়ানক কিছু !

অদিতি ভাগ্যবান তাই সে তার এই নাজুক সময়ে মা আর বোনের ছায়া পেয়েছে ৷ সব অদিতিরা এত ভাগ্যবান হয় না …..

***********

সোহেলের জামিন মুঞ্জুর হয়নি ৷ দুই বছরের জেল হয়েছে তার ৷ তাকে যখন জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো , তখন সে খুব কাঁদছিলো …

ইয়াসমিন কাঁদছিলো না ৷ সোহেলের কাছে গিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ইয়াসমিন বলে “পাপ করলে শাস্তি পাওনডাই ভালা ৷ আগুনে পুইড়া আপনি খাঁটি হইয়া আসেন ৷ আপনের মিনমিন আপনের লাইগা অপেক্ষায় থাকবো… বিশ্বাস করেন , আপনের লাইগা আপনের মিনমিনের ভালোবাসা একটুও কমবো না ৷ চোক্ষের পানিতে আপনার পুরান পাপ ধুইয়া যাক ৷ নয়া জীবনডা খাঁটি মানুষের লগেই কাটামু…”

পুলিশ ভ্যানে সোহেল চলে যায় ৷

ইয়াসমিন সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে ৷

একজন ইয়াসমিন তার স্বামীর খাঁটি মানুষ হয়ে ফেরার অপেক্ষা করবে ৷ একদিন নিশ্চয় তাদেরও সোনার সংসার হবে ৷ ইয়াসমিনের কোলে তাদের ভালোবাসার ফসল আসবে ….ইয়াসমিন সেই দিন ভেবে মৃদু হেসে সামনের দিকে পা বাড়ায় …

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here