মন শুধু মন ছুঁয়েছে, পর্ব:৬+৭

0
2557

মন শুধু মন ছুঁয়েছে
তামান্না জেনিফার
পর্ব ৬
__________________

সোহেলের মন মেজাজ খুব খারাপ ৷ সে খানিকটা বিরক্তও ৷ তার বড়ভাই হঠাৎ করেই খবর পাঠিয়েছে গ্রামে যেতে হবে , খুবই নাকি জরুরি দরকার … আজ শুক্রবার , আজ অদিতির সাথে দেখা করবার কথা ! কত কিছু কল্পনা করে রেখেছে সে … কিন্তু এখন তাকে যেতে হবে !

সোহেল একরাশ বিরক্তি নিয়ে বাসে উঠে বসে ৷ সে তার ভাইয়ের উপরও চরম বিরক্ত ৷ এই মানুষটা এখনও গ্রামে পড়ে আছে , কি মতলব আঁটতেছে কে জানে …

বাস চলছে , সোহেলের ওর ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে … গ্রামের ছেলে সে , শৈশবটা কেটেছে ধুলো কাদা মেখেই ৷ সেই নিষ্পাপ সোহেলের সাথে এনকার সোহেলের কত বেশি অমিল ! সোহেল আবার বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকায় ৷ ছোটবেলার কথা মনে পড়ে মনটা তার আরো বিষন্ন হয়ে গেছে ৷ আবার অদিতির কথাও মনে পড়ছে , মাথার ভিতর অদিতির বিবস্ত্র শরীর ….

কনট্রাক্টর এসে টিকেট চাইতেই ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসে সোহেল ৷ টিকেট দেখিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে …

***********
অদিতির আজ কোন কাজেই মন বসছে না ৷ আজ সকালে হঠাৎ করেই বড়বোন অহনা চলে এসেছে ৷ অদিতির মা অহনাকে জড়িয়ে ধরে কতক্ষন কাঁদলো , কান্নার কারন ওর জানা ৷ ওর মায়ের চাকরিটা চলে গেছে , এতে এত কান্নাকাটির কি আছে সে বোঝে না ! তার বাবা ভালো চাকরি করে , বেশ ভালো টাকা মাসে মাইনে পায় ৷ আর মায়ের বয়সও হয়েছে , এখন একটা বেসরকারী চাকরি চলে গেলেই বা কি ! কিছুই না … অযথা কান্নাকাটি করে বড় মেয়েকে ডেকে এনেছে …

বড়বোনের হঠাৎ আসায় অদিতির এমনিতে কোন সমস্যা নাই , কিন্তু আজকের ব্যাপার ভিন্ন ৷ অহনার রাতজাগা স্বভাব আছে , সারা রাত জেগে কফি খাবে আর সারা বাড়ি হেঁটে বেড়াবে … হেঁটে হেঁটেই পড়বে ৷ সারা বাড়ির লাইট জ্বালায়ে রাখবে ! মোটা মোটা গল্পের বইগুলো সে সারা রাত জেগে পড়বে ! আসলে হোস্টেলে পড়ার চাপে গল্পের বই পড়ার সুযোগ পায় না , তাই ছুটিতে এলে ঘুমের সময় ছাড়া বাকি সময় তার হাতে বই থাকে …. এমনকি বাথরুমেও সে বই নিয়ে যায় , যেন এক মুহূর্তও নষ্ট করা যাবে না ..

অন্যসময় এটা নিয়ে অদিতির কোন মাথাব্যথা থাকে না , বরং ঘুম না আসলে সে মাঝে মাঝেই বোনের সাথে গল্প করে … অহনা দারুণ গল্প করতে পারে , এত সুন্দর করে কথা বলে তার ভীষণ ভালো লাগে ৷ কিন্তু আজ আর ভালো লাগছে না ৷

রাতে যদি অহনা না ঘুমায় অদিতি কিভাবে দেখা করবে সোহেলের সাথে… অদিতির গোমড়া মুখ দেখে অহনা বোনের কাছে চলে আসে …

—কিরে বুড়ি , কেমন আছিস ? তোর শরীর এখন কেমন ?

—এইতো ! ভালো আপুনি , তোমার পরীক্ষা শেষ ?

—শেষ , হুমম বলা যায় , আবার শেষও না ৷ তারপর বুড়ি , তোর কি মন খারাপ ?

—না তো আপুনি ! মন খারাপ না তো … কি যে বলো ! —আচ্ছা বুড়ি যা তো , দৌড় দে তো ! এক কাপ চা নিয়ে আয় , মাথা ব্যথায় ফেঁটে যাচ্ছেরে !

অদিতি চা বানাতে যায় ৷ তার হাতের চা সবাই খুব পছন্দ করে , খুব ভালো চা বানায় অদিতি … চুলোয় পাতিল বসিয়ে দেড় কাপ দুধ দিয়ে দেয় সে , চায়ের দুধে কখনোই পানি মেশায় না সে , এটাই বোধহয় তার চা মজার হবার কারন ৷ তারপর দুধে বলগ আসলে চা পাতা আর চিনি দিয়ে আরো কিছুক্ষন জ্বাল কমিয়ে চুলোয় রাখে ৷ তারপর চা কাপে ঢেলে বোনের জন্য নিয়ে যায় ৷ অহনা চায়ে একটা চুমুক দিয়ে কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকে , তারপর বলে

—বুড়ি আমার টাকা হলে তোরে আমি একটা এওয়ার্ড দেবো , দৌপদী এওয়ার্ড … দৌপদীর মত ভালো রাধুনী নাকি আর কেউ ছিল না !

—চা বানানো ছাড়া আমি আর কিছুই পারি না , আমি রাধুনী হলাম কিভাবে !

—শোন , চা বানানো হলো পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল রান্না ৷ যে এটা ভালো পারে , সে সবই ভালো পারবে …

অদিতি হাসে , কোন কথা বলে না ৷ অন্যসময় হলে এই কথাতেই অনেকক্ষন হাসাহাসি করত দুই বোন ৷ অথচ এখন তার ভালো লাগছে না ৷ ভালো লাগে না রোগের অষুধ বোধহয় ত্রিভুবনে নাই…

********

চাচার বাড়িতে ঢুকেই একটা উৎসবের আয়োজন টের পায় সে ৷ এ বাড়িতে হয়তো কারো বিয়ে , বাড়ির সামনে সামিয়ানা টাঙানো ৷ হয়তো তার চাচাতো বোনদের কারোই বিয়ে হবে ৷ তাহলে কি এই বিয়ে উপলক্ষে এভাবে তাকে ধরে নিয়ে আসলো তার ভাই ! অদ্ভুত ! এই বিয়েতে তার কি কাজ !

সোহেল আসতেই তার বড় ভাই তাকে নিয়ে হাত ধরে ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় ..

—কি সমস্যা ভাইজান ? অামি কিছুই বুঝতাছি না

—বুঝবি , শবুর কর ৷ আরাম কইরা বস ৷

—আরামেই আছি , কি কইবা কও

—তোর বিয়া ঠিক কইরা ফালাইছি

—মাথামুথা ঠিক আছে তোমার ! আমার বিয়া মানে ! আমার বিয়া তুমি ঠিক করবা ক্যান ?

—আমি ঠিক করমু না তো কেডায় করবো ? আব্বা আম্মা মরনের পর আমিই তোর গার্জিয়ান

—গার্জিয়ান ! এহহ গার্জিয়ান আইছে আমার ৷ আমি কোন বিয়াই করমু না ৷ আমি অখনিাফেরত যাইতেছি , তোমার নাটক দেখার জন্য এমনে ডাকছো জানলে জীবনেও আসতাম না ..

—আচ্ছা , চেতিস না … এই বিয়াতে আমরার দুইজনেরই লাভ ৷ বস তো , কইতে দে ..

—কও

—আমাগো জমি জমা ধন সম্পদ কিছুই নাই ৷ সব বেঁইচা শেষ ৷ আমার বাপে জমি বেঁচছে আর চাচায় খালি জমি কিনছে … নব্বই বিঘা জমি চাচার ৷ ভাবছিলাম হ্যার পোলা নাই আমরা এমনেই ভাগ পামু ….. কিন্তু শালার জমির খোঁজ খবর লইতে যায়া দেখি চাচা বদমাইশটা সব জমির দেখশোনের দায়িত্ব কাগজে কলমে বড় মাইয়্যার জামাইরে দিয়া গেছে ৷ এহন এই মাইয়্যার যদি অন্য লোকের সাথে বিয়া হয় হাতে আম ছালা কিছুই আইবো না … ভাইবা দেখ , জীবনে টেকার গুরুত্ব সবার আগে ৷ টেকা থাকলে তোরও আর খায়া না খায়া চান্দাবাজি করে জীবন চালান লাগবো না … যা ভাবছি দুই ভাইয়ের ভালোর জন্যই ভাবছি …

শোন ভাই , নানান ধান্দা করে জীবন পার করতাছি আমি ৷ অনেক ভাইবাই এই সিদ্ধান্ত নিছি ৷ তুই বিয়া না করলে আমি নিজেই বিয়া করমু তাও এই মাইয়্যা আমি হাতছাড়া করমু না ….

সোহেল খানিকক্ষন চুপ করে থাকে ৷ কোন কথা বলে না ৷ এই ডিলটা তার খারাপ মনে হচ্ছে না ৷ আর গ্রামের মেয়ে , তারউপর বাবা নাই , বিয়ে করে ফেলে রাখলেও কিছু করতে পারবে না ৷ মাঝখান থেকে বিয়ে না করলে এতগুলো সম্পত্তি হাত ছাড়া হবে ৷ সে বিয়ে না করলে তার ভাই বিয়ে করবে , কপাল পুড়বে ভাবীর আর বাচ্চাদের … যদিও তাদের জন্য তেমন মায়া নাই সোহেলের , কিন্তু হাজার হলেও নিজের মানুষ তো ! সম্পর্কের বাঁধন তো অস্বীকারও করা যায় না ….

সোহেল বলে

—বিয়ে কবে ?

—আইজ সন্ধ্যায়

সোহেল আর কোন কথা বলে না ৷ চুপ করে বসে থাকে …. সামনে তার জীবনে কি হতে চলেছে সে জানে না ! কেউই জানে না …

চলবে

মন শুধু মন ছুঁয়েছে
তামান্না জেনিফার
পর্ব ৭
__________________

গ্রামের বাজার থেকে সোহেলের জন্য বিয়ের পাঞ্জাবি নিয়ে আসা হলো ৷ বাড়িতে গ্রামের মহিলারা বিয়ের গীত গাইছে , সোহেল সে গীতের আগামাথা কিছু বুঝছে না ৷ বারবার একটা লাইন রিপিট হচ্ছে “সখী হায় , হায় , নাইওর যাইতাম…” সোহেল আনমনে হাসে ৷ ব্যাপারটা কোথা থেকে কোন দিকে যাচ্ছে সোহেল আর সেসব ভাবছে না ৷ বরং স্রোতে গা ভাসানোর চেষ্টা করছে ৷

কনের গোসল করানো হয়ে গেছে বোধহয় ৷ ভাবী শ্রেনীর কয়েকজন এসেছেন সোহেলকে নিয়ে যেতে.. উঠানে কাঠের পাটাতন বিছানো হয়েছে ৷ সেখানে বসিয়ে সোহেলকে হলুদ ডলে গোসল করানো হবে ৷ সোহেল সুবোধ বালকের মত তাদের সাথে গিয়ে কাঠের পাটাতনে বসে পরে ৷ অচেনা ভাবীর দল সোহেলের গায়ে হলুদ ডলে ডলে তাকে একদম হলুদ বানিয়ে দিয়ে তারপর মাথায় কলস দিয়ে পানি ঢেলে গোসল করায় ৷

কনের বাড়ি আর বরের বাড়ি একটাই , তাই বর আসার কোন ব্যাপার নাই ৷ কলাগাছ আর রঙিণ কাগজ দিয়ে গেট সাজানো হলেও এ বিয়েতে গেট ধরার কিছু নেই ৷

মাগরিবের নামাজের পর কাজী সাহেব আসলেন ৷ মোহরানা নিয়ে কনের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কিছু বললো না , কিন্তু মনে মনে অসুন্তষ্ট হয়ে গেলেন ৷ মাত্র দশ হাজার টাকা এখনকার দিনে কে মোহরানা বাঁধে ! একটা ভ্যানওয়ালার মেয়ের বিয়েতেও লাখ টাকা মোহরানা ধরে ৷ সোহেলের ভাই চাচীর অসন্তোষ টের পেয়ে বললেন “চাচী , মা ফাতিমার বিয়ের মোহর কি ছিল জানেন ? একখানা ঢাল … এইসব নিয়া মনে কিছু রাইখেন না ৷ আমারই ভাই , আমারই বোন … এরার যা ভালো হইবো তাই করতাছি , আমার উপর বিশ্বাস রাইখেন চাচী …”

সোহেলের ভাই সোহানের উপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না তার চাচী মোমেনা বেগম ৷ সোহেলকে তার ভালো পাত্র বলে মনে হচ্ছে না আর ৷ একে একে তিন জন এসে বলে গেছে “পোলায় তো গাঞ্জুট্টি , বাঁশঝাড়ে খাড়ায়া খাইছে , আমি দেখছি …” মোমেনা বেগমের মাথায় কিছুই ঢুকছে না ৷ আর এখন এসব ভেবেও বা লাভ কী ! যারা বলেছে কথাগুলো বলেছে বিয়ে হয়ে যাবার পর … তার এত আদরের বড় কন্যার সামনের দিনগুলো কেমন যাবে ভেবেই ভেতর থেকে কেঁপে উঠলেন মোমেনা বেগম ৷

অতিথিদের খাবার খেতে দেওয়া হয়েছে , মাংস দিয়ে আলুর ডাল যাতে আলুর পরিমান বেশি আর মাংসের পরিমান একেবারেই কম .. সেই সাথে মোটা চালেহ সাদা ভাত ৷ বেশি আয়োজন করতে দেয়নি সোহান ৷ তার কথা অযথা লোক খাওয়ায়ে পয়সা নষ্ট করার কিছু নাই , যদিও পুরো টাকাটাই দিয়েছেন সোহেলের শ্বাশুড়ি মোমেনা বেগম ৷ এখনও নিজের টাকা পয়সা নিজের হাতেই রেখেছেন মোমেনা বেগম , তবে আজকে তার মনে হয়েছে বেশিদিন আর পারবেন না … বড় মেয়ের বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তার স্বামীর ৷ সুযোগ পেলেই বলতেন “পুরা গেরামে তিনদিনের ভোজ দিমু বউ… আমার মাইয়্যার বিয়া লোকে সারাজীবন ইয়াদ রাখবো ! ” অথচ প্রতিবাড়ি থেকে একজন মানুষকেও খাওয়ানো হলো না , যদিও তার সামর্থ্য আছে !

মোমেনা বেগমের আপন বলতে তিন মেয়ে ছাড়া আর কেউ নাই ৷ বাবা , মা , আত্মীয় স্বজন কেউ নাই ৷ তিনি ভেবেছিলেন নিজেদের মানুষ যদি পরিবারে ছেলে হয়ে আসে তাহলে খুব ভালো হবে বিষয়টা ৷ বিশ্বাস করে ছেলের সম্পর্কে কোন খোঁজও নেননি ৷ যদি কথাটা সত্যি হয় যে সোহেলের গাঁজা খাবার নেশা আছে তাহলে তিনি নিজেকে কোনদিনও ক্ষমা করতে পারবেন না ৷ তার মেয়েটা এত লক্ষী , মায়ের কথার অবাধ্য হয়ে একটা কাজও কখনও করেনি ৷ সেই মেয়েটাকে তিনি একেবারেই না দেখেশুনে , না খোঁজ নিয়ে বিয়ে দিয়ে দিলেন , কাজটা বড় ভুল হলো ! এখন মা হিসেবে দোয়া করা ছাড়া তার আর কিছু করার নেই … বিয়ে হয়ে গেলে আর কী বা করার থাকে !

একটা বিছানায় রঙিণ কাগজ দিয়ে সাজিয়ে বাসরঘর প্রস্তুত করা হয়েছে ৷ বিছানার উপর একটা ধোঁয়া চাদর পাতা ৷ বিছানার উপর জবুথবু হয়ে বসে আছে ইয়াসমিন ৷ তার স্বামী এখনও ঘরে আসেনি ৷ ইয়াসমিনের মাথায় এখন অবশ্য অন্য চিন্তা ঘুরছে … এখন পর্যন্ত একবারও সে তার স্বামীকে দেখেনি ৷ এখন ঘরে আসার পর সে আসলেও বুঝতে পারবে কী না কে জানে ! মানুষটা তাকে কী বলবে … ইয়াসমিনের খুব ভয় হচ্ছে ৷ ঘরটা গুমোট , ভ্যাপসা গরমে ইয়াসমিনের কাজল গলে যাচ্ছে , ওর ধারনা ওকে দেখতে এখন পেত্নীর মত লাগছে ! মানুষটা প্রথমবার তাকে পেত্নীর মত রূপে দেখবে ভেবেই কান্না পায় তার ৷ এই মানুষটাকে সে এখনও দেখেনি অথচ তার পছন্দ হবে ভেবে কান্না পাচ্ছে ইয়াসমিনের ! কলতলায় গিয়ে হাতমুখটা ধুঁয়ে আসলে ভালো হতো … এটাতো আর অন্য কারো বাড়ি না , তার আশৈশব বেড়ে ওঠা নিজের বাড়ি … তবুও ইয়াসমিনের কেমন যেন অস্বস্তি হতেই থাকলো ৷ একবার আলহামদুলিল্লাহ কবুল বলার পরপরই কেমন যেন সবকিছু অন্যরকম লাগছে ৷

সোহেল আসলো ৷ ইয়াসমিন তাকে দেখে আরো সংকুচিত হয়ে গেলো…মনে মনে করুণাময়কে অসংখ্য ধন্যবাদ দিয়ে ফেললো ইয়াসমিন মুহূর্তের মধ্যেই , বর তার পছন্দ হয়েছে …

—এই তুমি এমন কালি মাখছো কেন গালে ?

—কালি না কাজল ৷ ঘামে মুখে ছড়ায়া গেছে

—তোমাকে একদম ভূতের মত লাগতেছে

হা হা করে হাসছে সোহেল ৷ ইয়াসমিনও হাসছে ৷ ওর এখন খুব ভালো লাগছে ৷ মন থেকে সব দ্বিধা চলে গেছে ৷ নিঃসন্দেহে একটা ভালো মানুষকে স্বামী হিসেবে পেয়েছে সে , এমন শিশুর মত হাসতে পারে যে মানুষ সে মানুষটা খারাপ হতে পারে না …

হাসাহাসির শব্দ মোমেনা বেগমের ঘর পর্যন্ত পৌছেছে ৷ এখন তিনি বেশ নির্ভার বোধ করছেন ৷ তাকে যারা সোহেল সম্পর্কে মন্দ কথা বলেছে তারা হিংসাতেও বলতে পারে ৷ মানুষের আজকাল আর কিছু থাক না থাক পেট ভর্তি হিংসা আছে ষোলআনা ৷ কলতলা থেকে আওয়াজ আসছে … এতরাতে কলতলায় কে এত আওয়াজ করছে ভেবে দরজাটা খুলে বাইরে এসে তিনি অবাক বিষ্ময়ে দেখলেন , সোহেল কল চাপছে আর ইয়াসমিন মুখ ধুচ্ছে ৷ সোহেল ইচ্ছে করেই জোরে শব্দ করছে আর ইয়াসমিন তাকে মানা করছে…আবার কিছু একটা কথায় দুজনে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে …

আকাশে চাঁদ তার পুরো রূপ ছড়িয়ে বসেছে ৷ চাঁদের আলোয় নব বিবাহীত জোড়াটিকে দেখতে ভীষণ ভালো লাগছে তার ৷ যদিও মা হয়ে সন্তানের প্রেম প্রেম সময় দেখা তার ঠিক হচ্ছে না , কিন্তু তিনি নিজেকে সামলাতেও পারছেন না …

অবশ্য তিনি ঠিক দেখছেন বললেও ভুল হবে ৷ তার পুরো চোখ অশ্রুজলে টলমল করছে … চোখভর্তি নোনাজল নিয়ে ঝাপসা চোখে কী আর সব পরিষ্কার দেখা যায় !

*****************

রাত দুটো বাজে ৷ অহনা মাত্র ঘুমিয়েছে ৷ এত তাড়াতাড়ি অহনা ঘুমাবে চিন্তাও করেনি অদিতি ৷ ভীষণ খুশি হয়ে অদিতি ছাদে চলে যায় ৷

সেখানে এক আকাশ চাঁদ ছাড়া আর কেউ নেই !

অদিতির মনে হয় , নিশ্চয় সোহেল এসেছিল , অপেক্ষা করতে করতে চলে গিয়েছে… নিজের উপর হওয়া প্রচণ্ড ক্ষোভে , প্রচণ্ড জেদে অদিতি চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে….

অদিতির কান্নার শব্দ বাতাসে মিশে যায় ৷ সে বাতাস হয়তো উড়ে উড়ে সোহেলের কাছেও আসে , কিন্তু সেই কান্নার বার্তা পৌছে না সোহেলের কাছে ! কিংবা সোহেল সে বার্তা শুনতেই চায় না !

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here