#মন_শহরে_তোর_আগমন
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ০২
পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন জাফরান, আমি ভ্রুকুটি কুচকে বোঝার চেষ্টা করছি উনি কি করতে চাইছেন
“আপনি সোজা ওপরে চলে যান, আপনার মা বাবার সাথে কথা বলে নিন! রেস্ট করুন..আমি একটু আসছি”
“এতো সহজেই ফোন দিয়ে দিলেন আমার হাতে? যদি এখন পুলিশকে ফোন করে দেই ভেবেছেন কি হতে পারে?”
স্মিত হাসলেন উনি
“জানি আপনি এমন কিছুই করবেন না, নাহলে আপনার হাতে ফোন দিতাম না.. যাই হোক আপনি যান!”
“কিন্তু এখনি কেনো রুমে যাবো? আসল কাজটাই তো এখনও বাকি আছে, সেটা শেষ করবেন না?”
“মানে?”
“বা রে, যার ইচ্ছের জন্যে আপনি এতকিছু করলেন..যার দোহাই দিয়ে আমায় বিয়ে করে আনলেন.. তার সাথে দেখা করাবেন না আমায়?”
“ভদ্রভাবে কথা বলুন সুরভী! আপনি আমার বাবার সমন্ধে কথা বলছেন, সে কিন্তু আপনারও বাবার বয়সী সম্মানীয় একজন”
“বেশ! আমি কিছু বলবো না..আপনার বাবা এই বাড়িতেই তো থাকে তাইনা? বলুন উনি কোথায় আছেন? আমি একাই দেখা করে আসছি”
“আপনি ঠিক কি করতে চাইছেন বলুনতো?”
“বিশেষ কিছুই না, আপনিই তো বললেন আমি এই বাড়ির বৌমা, আপনার বাবার ছেলের বউ..তাই আমি আমার শ্বশুর আব্বার সাথে দেখা করতে চাইছি”
উনি কয়েক সেকেণ্ড নিরব রইলেন, আমি ওনাকে দেখেই রাগে ফুসছি..লোকটার প্রতি এত্তো রাগ হচ্ছে কি বলবো! মনে হচ্ছে যেনো উনি আমার শত্রুর থেকেও খারাপ!
“এখনও কিন্তু রাত ফুরিয়ে যায়নি.. বাবা এখন ঘুমাচ্ছে, আমি চাইনা তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটুক..কাল সকালে বাবার সাথে দেখা করতে পারবেন আপনি, তার আগে অব্দি আমি আশা করবো আপনি কোনরকম সিনক্রিয়েট করবেন না”
“সিন ক্রিয়েট তো আপনি করেছেন, আমি নই তাই এসব কথা আমাকে না শুনিয়ে নিজেকে বোঝান”
“সুরভী, আস্তে কথা বলুন! বাড়ির সবাই ঘুমাচ্ছে..যা বলার যতো রাগ দেখানোর আপনি রুমে গিয়ে আমার ওপর দেখাবেন..কিন্তু এখানে একটা কথাও না”
“বাহ! আপনি তো অদ্ভুত লোক, কিডন্যাপ করেছিলেন আমায়, বিয়ে করে আনলেন তাতে ভয় পেলেন না আর এখন বাড়ির সবাই জেনে যাবে ভেবে ভয় পাচ্ছেন? আপনার কুকীর্তির কথা কি চাপা থাকবে ভেবেছেন? সব বলে দেবো ওনাদের”
“আপনাকে সে কষ্ট করতে হবে না, আমিই যা এক্সপ্লেইন করার করে দেবো”
“ওহ! সেখানেও নিশ্চয়ই একগাদা মিথ্যে বলবেন..যেভাবে বিয়ে করলেন আমায় এটা তো বলতে পারবেন না, সাহস দরকার! আপনার সেটা নেই.. অ্যাম আই রাইট?”
চোখ গরম করে তাকিয়ে রইলেন উনি, আমি চোখ সরিয়ে ফেললাম..সত্যি বলতে আমারও এভাবে কথা বলার ইচ্ছে নেই, কিন্তু এই মুহূর্তে ওনার আচরণ আর কর্মকাণ্ডে যেনো আমার হিতাহিত বোধ লোপ পেয়েছে
___________________________
ওড়না টা চাদরের মতো করে গায়ে জড়িয়ে এই মুহূর্তে জাফরানের রুমের বারান্দার দোলনায় বসে আছি আমি, একটু আগেই বাড়িতে ফোন করেছিলাম..মাকে সবটা বলেছি, কিন্তু মা কিছু বুঝে উঠতে পারেনি, অবশ্য মা কি বুঝবে আমি নিজেই তো বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে এসব আমার সাথে.. পরে জাফরান কথা বলেছে আমার মায়ের সাথে, কাল সবাইকে এই বাড়িতে আসতে বললো..তারপর থেকেই আমরা দুজনেই চুপচাপ আছি, আমি বারান্দায় আর উনি রুমের মধ্যে পায়চারি করছেন!
“আপনি আমার মা বাবাকে এখানে আসতে বললেন কেনো? আবার কি করতে চাইছেন?”
“মেয়ের বিয়ে কোথায় হলো, কার সাথে হলো সেগুলো জানার অধিকার আছে ওনাদের তাই ডেকেছি..আপনাকে ওইসব ভাবতে হবে না”
“কিন্তু আমার মা বাবা..”
“আপনি ওইসব বাদ দিন, বাইরে অনেক ঠান্ডা..ওখানে বসে না থেকে রুমে চলে আসুন নইলে ঠান্ডা লেগে যাবে”
“আপনাকে আমার কথা ভাবতে হবে না, এসব সিম্প্যাথি অন্তত এখন দেখাবেন না প্লিজ!”
“সিম্প্যাথি দেখাচ্ছি না, দায়িত্ব পালন করছি..আপনি রেগে আছেন..নিজের ভালোমন্দের খেয়াল হয়তো আপনার নেই কিন্তু আপনি অসুস্থ হয়ে পড়লে বাবাকে আমার জবাবদিহি করতে হবে”
“সব ছেলেরা তো মামা’স বয় হয় কিন্তু আপনি দেখছি পাপা’স বয়..সবকিছুতেই বাবাকে টানার বদভ্যাস আছে নাকি?”
উনি উত্তর দিলেন না, তারপর মিনিট পাঁচেক পিনপতন নিরবতা ছিলো, তারপর নিরবতা ভেঙে আমি বললাম
“আমি আপনার রুমে থাকতে পারবো না”
কথাটা এবার একটু জোরেই বললাম, উনি সঙ্গে সঙ্গে বারান্দার দরজার সামনে এসে দাড়ালেন..
“তাহলে কোথায় থাকবেন?”
ওনার দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিলাম
“এতো অবাক হচ্ছেন কেনো? আপনি কি ভেবেছেন বিয়ে করেছি বলেই স্ত্রীর মতো আপনার সাথে থাকবো? বাড়ির বৌমা হিসেবে বাড়িতে থাকাটা আমার জরুরি, এক রুমে থাকা নয়”
“কোথায় থাকতে চাইছেন আপনি?”
“আপনার বাড়ির কোনো একটা এক্সট্রা রুমে! আপনার সাথে একঘরে থাকতে ভালো লাগছে না আমার, আপনার উপস্থিতিতে বিরক্তবোধ করছি..পারলে এখনি অন্য কোনো রুমের একটা ব্যবস্থা করে দিন”
“আপাতত সেটা সম্ভব নয়, বিরক্ত লাগলেও আপনাকে এই ঘরেই থাকতে হবে”
ঘাড় ঘোরালাম ওনার দিকে.. কি যেনো নেই নেই লাগছিলো, পরে উপলব্ধি করলাম চশমা নেই ওনার চোখে..গত কয়েক ঘন্টায় প্রথম চশমা ছাড়া দেখছি তাই হয়তো অদ্ভুত লাগছে..আপাতত এইসব বিষয় উপেক্ষা করে বাজখাই গলায় বলে উঠলাম
“আপনার ডিমান্ড দেখছি একটু একটু বেড়েই যাচ্ছে, প্রথমে বিয়ে, এখন আবার বলছেন এই রুমে থাকতে হবে? তারপর তো বলবেন আপনার সাথে..”
“ব্যাস, আর একটা শব্দ উচ্চারণ করবেন না..এতোটা নিচু মন মানসিকতা আমার নেই সুরভী, হ্যা আপনার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে করতে বাধ্য করেছি আপনাকে, তার মানে এই না তার সুযোগ নেবো”
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম, আজকালকের যুগে ছেলেদের এইসব কথায় বিশ্বাস করাটা বোকামি! তার ওপর যদি বিবাহিতা স্ত্রী হয় তার সুযোগ নেবে না, এটা তো মানা অসম্ভব!
“বড় বড় কথা মুখে বলাটা অনেক সহজ কিন্তু করাটা কঠিন মিস্টার জাফরান! অনেক ছেলেরাই তো বলে এমন কথা কিন্তু কিছু সময় বাদে নিজেরাই নিজেদের বলা কথা ভুলে যায়..আপনিও তাই করবেন! জানা আছে”
“আপনি তখন বলেছিলেন আপনাকে যেনো বাকি লোভী মেয়েদের মতো এক পাল্লায় না মাপি, তাহলে আপনি কিভাবে আমার সম্পর্কে না জেনেই আমাকে অন্যান্য ছেলেদের সাথে এক পাল্লায় মাপছেন? এটা তো আনফেয়ার করা হলো আমার সাথে”
“আপনি ফেয়ার আনফেয়ারের কথা না বললেই খুশি হবো, এই দুটো শব্দ অন্তত আপনার মুখে মানায়না”
“আপনার যতো রাগ যতো অভিযোগ সব যেনো শুধু আমার ওপরই সীমাবদ্ধ থাকে! বাবার সামনে কোনরকম উল্টোপাল্টা কথা বলবেন না সুরভী”
“যা সত্যি তাই বলবো..আপনি আজ যে মহান কাজ করেছেন সেটার কথা অবশ্যই জানা উচিত আপনার বাবার”
জাফরান আর একটা কথা বললেন না, আমি তো অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলাম.. পরে ওনার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে চেয়ে দেখলাম রুমে চলে গেছেন উনি! আমিও চুপ করে বসে রইলাম.. ভোর হয়ে এসেছে, আর কিছু সময়ের অপেক্ষা..তারপর সকালে ওনার বাবাকে অনেককিছু বলার আছে আমার!
_________________________
গতরাতে ভেবেছিলাম বাড়িতে বোধহয় জাফরান আর ওনার বাবা ছাড়া কেউ নেই কিন্তু সকালবেলা জাফরানের বড় বোন, বোনের হাসবেন্ড আর দুই ফুপুকে দেখে আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়ে গেলো! সবাই আমাকে এমনভাবে ট্রিট করছে যেনো আগে থেকেই তারা জানতেন আমি আসবো এই বাড়িতে! সবাই আমার সাথে পরিচিত হলো, আমি চুপ ছিলাম..কিছু সময় বাদে দেখলাম তিনটা শাড়ি, হাল্কা কিছু গয়না হাতে ওনার বোন জিনিয়া ঘরে এসে হাজির হলো..ওনার আর জাফরানের চেহারায় কি অদ্ভুত মিল..পরে বুঝলাম ওনারা দুজন টুইনস!
“সুরভী! এর মধ্যে থেকে পছন্দ করে একটা শাড়ি পড়ে নাও, জাফরান বললো তোমার মা বাবাও আসছে একটু বাদেই”
আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি সবার আচরণ দেখে, এতো স্বাভাবিক আছে কিভাবে সবাই? বিছানার দিকে তাকিয়ে শাড়িগুলো দেখে নির্দ্বিধায় বললাম
“আমি শাড়ি পড়তে পারিনা”
“ওহ, সমস্যা নেই! এসো আমি পড়িয়ে দিচ্ছি!”
“আপনি কি জানেন আপনার ভাই কিভাবে আমাকে এই বাড়িতে এনেছে? কিভাবে আমায় বাধ্য করেছে?”
জিনিয়া আমার দিকে তাকিয়ে হ্যা সূচক মাথা নাড়লো, যা আমায় আরো বেশি অবাক করেছে!
“গত রাতেই বাড়ি ফেরার পর জাফরান আমাকে সব বলেছে, আমি তখনি ভেবেছিলাম তোমার সাথে কথা বলবো কিন্তু..”
“কি কথা বলবেন? কথা বলার মতো কিছু কি বাকি আছে আর? আপনার ভাই এত্তো বড় অন্যায় করে এসেছে তারপরও আপনারা কেউ তাকে কিছু বলছেন না? উল্টে আমাকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন কেনো? অন্যায় করেছে আপনার ভাই, সেটা বোঝান ওনাকে!”
ফুপিয়ে উঠলাম আমি, জিনিয়া চোখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে
“আপনার বাবা আমাকে নাকি পুত্রবধূ হিসেবে পছন্দ করেছিলেন, কিন্তু আমার এখন বিয়ের ইচ্ছে ছিলো না বলে না করে দিয়েছিলাম..এরকম তো আরো অনেককেই করেছি, কই তারা তো আমার সাথে এমনকিছু করেনি যেমন আপনার ভাই করলো..আর আপনারা সবাই তাতে সায় দিচ্ছেন?”
অভিযোগ মিশ্রিত স্বরে কথাগুলো বলে দিলাম, চোখে পানি টলটল করছিলো আমার..জিনিয়া আমার দিকে তাকিয়ে মলিন এক হাসি দিলেন
“অভিযোগ করার অধিকার আছে তোমার! তবে একবার বাবার সাথে দেখা করো, তাহলেই বুঝবে জাফরান কেনো তোমার সাথে এমন করেছে”
জিনিয়া ও একটা কথা বলেই আমাকে নিরব করিয়ে দিলেন, যেমনটা গতকাল জাফরান করেছিলেন..এবার তো ওনার বাবার সাথে দেখা করার জন্য আরো ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠছি..আমিও জানতে চাই কেনো সবাই ওনার বাবার কথাই বলছেন? মেরুন রঙের শাড়ি পড়িয়ে তৈরি করিয়ে দিলো জাফরানের বোন আমাকে..অন্য সময় হলে তৈরি হয়ে নিজেকে পাঁচ ছয় বার তো আয়নার সামনে দেখতাম কিন্তু আজ ইচ্ছে করছে না!
“বাহ! খুব সুন্দর লাগছে তোমায়..শাড়িটা সুন্দর মানিয়েছে তোমার গায়ে”
উত্তর দিলাম না আমি, তখনই রুমে আগমন ঘটলো জাফরানের..আয়নার সামনে দাড়িয়ে ছিলাম আমি, তো ওখানেই দেখলাম উনি তাকিয়ে আছেন আমার দিকে, সঙ্গে সঙ্গে চোখ গরম করে তাকালাম ওনার দিকে..উনি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন কিছুটা
“জেনি, ছোটো ফুপি ডাকছে তোকে”
“যাচ্ছি, তুই বরং ওকে বাবার কাছে নিয়ে যা”
জিনিয়া বেরিয়ে গেলেন, বুঝলাম সবার আজ খুব তাড়া..যেনো বাড়িতে কোনো বিশেষ আয়োজন চলছে!
“আপনার বাড়ির সবাই কি আপনার মতোই? সবাই এমন করছে যেনো জানতেন আমি এখানে আসবো? এসব প্রি – প্ল্যান্ড ছিলো?”
“নাহ! আজ সকালে জেনেছে সবাই! আপনি বলেছিলেন সবাইকে বলে দেবেন, আপনার কষ্ট কমিয়ে দিয়েছি! আমিই বলেছি সব..সবাই আমাকে অনেক বকাবকি করেছে”
“মানে? এসব কখন হলো?”
“আপনি তখন ঘুমাচ্ছিলেন”
রাগ হচ্ছে ওনার কথা শুনে, চোখের সামনে দেখতে চাইছিলাম সবটা..জাফরানকে মাথা নিচু করে সবার কথা শোনার দৃশ্যটা মিস করে গেলাম আমি! আফসোস হচ্ছে.. হঠাৎ লক্ষ্য করলাম জাফরান আমার দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে আছেন, যেনো কিছু বলতে চেয়েও বলছেন না
“এভাবে তাকাবেন না আমার দিকে, অসস্তি হয়!”
আমার ছোট্ট একটা কথাতেই ওনার তাকানোর ভঙ্গি বদলে গেলো
“আপনার মা বাবা কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবেন এখানে, আপনি তার আগে বাবার সাথে দেখা করে নিন..চলুন”
উনি আমাকে সাথে যাওয়ার ইশারা করে দরজার দিকে হাটা দিলেন, আমিও ওনার সঙ্গে সঙ্গে চললাম..হাতে ক্যানেলা লাগানো অবস্থায় বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছেন জাফরানের বাবা, জাফরানের ফুপু তাকে ওষুধ দিচ্ছিলেন! রুমের মধ্যে অক্সিজেন ও টুকটাক মেডিক্যাল সরঞ্জাম ও মজুদ আছে..আমি চমকে উঠলাম এসব দেখে, ভেবেছিলাম ওনার বাবার সামনে যখন আসবো তখন ওনার নামে অভিযোগ করবো কিন্তু এখন তো আমার মুখ থেকে একটাও কথা বের হচ্ছে না..জাফরানের বাবা দরজার দিকে তাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়েই হাল্কা হাসলেন, ইশারায় ভেতরে আসতে বললেন কিন্তু আমি ভেতরে ঢোকার সাহস পাচ্ছি না, কেমন ভয় লাগছে..হাত পা কেমন কাপছে আমার! জাফরান ভেতরে ঢুকে গেছেন ইতিমধ্যে কিন্তু আমি নিজের জায়গায় স্থির দাড়িয়ে আছি!
“গুড মর্নিং বাবা”
ওনার বাবা আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার ওনার দিকে তাকালেন, ধমকের সুরে বললেন
” জাফরান, তুই একা একা ভেতরে চলে এলি কেনো? ও তো ওখানেই দাড়িয়ে আছে..ওকে নিয়ে আয়..এখন এই একা আগে চলে যাওয়ার অভ্যাসটা বদল কর”
বাবার কথা শুনে পেছনে ফিরে জাফরান আমার দিকে দেখলেন, আমি এখনও চুপ করে ওনার বাবার রুমের দিকেই দেখছি..ছোটো থেকে অসুস্থ মানুষ দেখলেই কেমন যেনো ভয় লাগে, তার ওপর ওনার বাবাকে দেখে মনে হচ্ছে গুরুতর অসুস্থ..জাফরান আমার কাছে এসে হাত ধরে এনে বসালেন ওনার বাবার সামনে..
“ওর মা বাবা এলে আমার রুমে একটু পাঠাস”
“ঠিক আছে ভাইজান”
ওনার ফুপু বেরিয়ে এলেন রুম থেকে, জাফরান স্যালাইন চেক করে নিলো যে ঠিকমতো পাস হচ্ছে কিনা, আর আমি বাচ্চাদের মতো এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছিলাম, হুট করে ওনার বাবা বলে উঠলেন
“ভয় পাচ্ছো নাকি এসব দেখে?”
আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম, ভয় পাচ্ছি দেখেও না সূচক মাথা নাড়লাম..জাফরানের বাবা হাসলেন, ওনার চোখমুখ আর এইসব জিনিসপত্র জানান দিচ্ছে কোনো এক কঠিন রোগে আক্রান্ত উনি!
“জাফরান, তুই এখানে দাড়িয়ে আছিস কেনো?”
“কোথায় যাবো তাহলে?”
“আমি ওর সাথে একা কথা বলতে চাই..তুই বাইরে যা, আর রুমের দরজা একটু ভেজিয়ে দিয়ে যাস”
“তোমরা যা কথা বলার বলো না, আমাকে যেতে বলছো কেনো?”
“যা বললাম সেটা কর..তোর ফুপিদের কোনো দরকার পড়তে পারে, ওগুলো দেখ..যা!”
ওনার বাবার কথা শুনে আমরা দুজনেই একে অপরের দিকে তাকালাম, জাফরানের চোখের ভাষা বুঝতে তেমন সমস্যা হয়নি আমার..ওনার ভয় আমি যেনো ওনার বাবার সাথে কোনো দুর্ব্যবহার না করে বসি! অনিচ্ছা সত্ত্বেও রুম থেকে বেরিয়ে এলো জাফরান, আমি তখনও চুপ! কি কথা বলা উচিত ওনার বাবার সাথে সেটা বুঝে উঠতে পারছিলামনা এর মাঝেই ওনার বাবা প্রশ্ন করে বসলেন
“কেমন আছো সুরভী?”
“জ.. জ্বি ভালো”
“হুমম! আমি সব শুনেছি জাফরান কি করেছে..আসলে তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে শুরু থেকেই কিন্তু তুমি না করে দিয়েছিলে..তাই আমি আমার ছেলেকে বলেছিলাম তোমার সাথে কথা বলতে.. তোমায় রাজি করাতে বিয়ের জন্যে, কিন্তু ও যে এমনকিছু করবে ভাবিনি..ওর হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে”
জাফরানের বাবার কথা শুনে বুঝলাম উনি ছেলেকে যা বলেছিলেন ওনার ছেলে তার উল্টো কাজ করে এসেছেন, ওনার বাবার কথায বুঝলাম ছেলের কাজের জন্যে তিনিও লজ্জিত!
“নাহ আঙ্কেল, আপনি ক্ষমা চাইবেন না প্লিজ! দোষ আপনার ছেলে করেছে.. আপনি তো আমায় সোজা বিয়ে করে আনতে বলেননি কিন্তু উনি..”
“কিন্তু তোমাকে ওর স্ত্রী হিসেবে আমি দেখতে চেয়েছিলাম, আমি শুধু এইটুকু কনফার্ম হতে চেয়েছিলাম যে ভবিষ্যতে তোমাদের বিয়েটা হবে কিন্তু আমার ছেলে যে পার্মানেন্ট কনফার্মেশন নিয়ে আসবে ভাবিনি”
আমি চুপচাপ ওনার বাবার দিকে চেয়ে আছি, ওনাকে দেখে আমার কেনো যেনো নিজের বাবার কথা মনে পড়ছিলো, ওনার বাবা ক্যানেলা লাগানো হাত তুলে আমার মাথায় আস্তে আস্তে বুলিয়ে বললেন
“আমার ছেলে অপরাধ করেছে, তার জন্যে তোমার মনে ক্ষোভ তো আছেই.. তুমি যা বলবে তাই শাস্তি দেবো আমি জাফরানকে..তবে তোমাকে এখানে দেখে আজ আমি নিশ্চিন্ত.. আমার পরেও জাফরানের জন্যে চিন্তা করার, ওর খেয়াল রাখার একটা মানুষ আছে দেখে আজ অনেকটা নিশ্চিন্ত লাগছে”
চলবে….
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন..!!]