#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখনীতেঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#শেষ_পর্ব
অন্ধকার একটা রুমের মধ্যে জমিনে পরে কাতরাচ্ছে একটা মেয়ে। মাথার উপর একটা ভিম লাইট জ্বলছে আবার বন্ধ হচ্ছে। এটা প্রায় পর্যায়ক্রমে হচ্ছে তার উপর আশেপাশের সবকিছু কেমন ঘোলাটে লাগছে। তাই সে বারবার চোখ খুলছে ও বন্ধ করছে যাতে করে সে বুঝতে পারে এখানে হচ্ছে টা কী? হঠাৎ করে তার স্মৃতিপটে ভেসে উঠলো। সে আর জয়া তখন দাঁড়িয়ে ছিলো কিছু লোক আসলো যারা তাদের তুলে নিয়ে গেলো। তারপর যখন মাইক্রোতে উঠালো তখন সে মুখোশধারীদের সাথে তার বেশ হাতাহাতি হয়। অতঃপর লোকদের মধ্যে একজন তার মুখে একটা সাদা রুমাল চেপে ধরে তারপর.. তারপর আর মনে আসছে না। সেই সাথে প্রচুর মাথা ব্যাথা করছে। হঠাৎ তার জয়ার কথা স্মরণ হলো। সে আশেপাশে জয়াকে খুঁজার চেষ্টা করলো কিন্তু তাকে পেলো না। মনের মধ্যে ভয় জেঁকে বসলো। না তাকে জয়াকে খুঁজতে হবে। সে উঠতে যেয়েও পারলো না। তার হাত-পা শক্ত ও মোটা কিছু দিয়ে বাঁধা। সে কিছুক্ষণ বাঁধন খোলার চেষ্টা করলেও পারলো না, তার শরীর যে বেশ ক্লান্ত। তাই সে হার মেনে নিলো। আর চেষ্টা করলো না।
পুলিশ স্টেশনে বসে আছে রুদ্ধ। তার সামনেই দাড়িয়ে আছে সেই থানার ইনচার্জ। রুদ্ধ রক্তিম দৃষ্টি তাতেই নিবদ্ধ। এমন রক্তলাল ক্রুদ্ধ দৃষ্টি দেখে অফিসারটি ভয়ে কাঁপছে। আর মনে মনে একশ একটা গা’লি দিচ্ছে নিজের সহকারীকে। এত সময় লাগে একটা সিসিটিভি ফুটেজ আনতে?
–এতসময় লাগে একটা ফুটেজ আনতে?
–স্যা..স্যার এইতো এসে পড়বে?
–যদি আর ৫ মিনিটের মধ্যে ঐ এলাকার ফুটেজ আমার হাতে না আসে আপনাকে চাকরিচ্যুত হওয়ার থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
–স্যার প্লিজ এমন করবেন না। বাসায় আমার ছোট ছোট দুটো ছেলে আছে তাদের কী হবে?
–সেটা কাজে গাফলতি করার সময় মনে ছিলো না। আপনার এলাকা থেকে একটা জ্যান্ত মেয়ে গায়েব হয়ে গেল তখন কোথায় ছিলেন আপনারা। আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই একজন দরজায় টোকা দিলো। অনুমতি পেয়ে অপর পাশের ব্যক্তিটি দৌড়ে ভিতরে ঢুকলো।
লোকটির দিকে ইশারা করতেই লোকটি জলদি কম্পিউটারের কাছে গিয়ে ফুটেজটা চালালো। ফুটেজটা দেখে সে অবাক কেননা স্নিগ্ধার সাথে জয়াও ছিলো আর দুজনকে কালো মুখোশধারী কিছু লোক এসে তুলে নিয়ে গেল। এইসব দেখেই ভয়ে তার অর্ধেক গলা শুখিয়ে গেছে। হাত-পা অসার হয়ে গেছে। দু দুটো মেয়েকে এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া মোটেও ভালো সংকেত না। মনের মধ্যে বারবার খারাপ চিন্তারা উঁকি মারছে।
–স্যার দেখেন মাইক্রোর নাম্বারটা দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ পুলিশ অফিসারে এমন কথায় চিন্তার জগৎ থেকে বেড়িয়ে আসলো। তাড়াতাড়ি তাকলো কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে। হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে একটু খানি আশার কিরণ দেখতে পেয়েছে এই ভেবে একটু ভালো হয়ে গেল। পুলিশ অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললো-
–তাড়াতাড়ি এই মাইক্রোর ডিটেইলস বের কর? জলদি!
মাইক্রোটাকে খুঁজতে খুঁজতে তার একটা বন্ধ মিল এরিয়ার সামনে এসে পড়লো। কিন্তু সেখানে সেই গাড়ির কোনো অস্তিত্ব নেই তাহলে লোকেশন এটা কেনো দেখাচ্ছে। তখনি তার নজর পড়লো কয়েকটি গাছা একজায়গায় স্তুপ আকারে রাখা। কিন্তু আজকে তো কোনো ঝড়-বৃষ্টি হয়নি যে গাছগুলো ভেঙে পড়বে আবার গাছগুলো দেখে মনে হচ্ছে কেউ ধারালো কিছু দিয়ে গাছগুলো কে’টে’ছি। তার মনে খটকা আগলো আর এগিয়ে গেলো সেদিকে। পুলিশ অফিসারদের বললো জলদি গাছগুলো সরানোর ব্যবস্থা করতে। গাছগুলো সরানোর পর তারা মাইক্রোটি পেয়ে গেল এতে সকলে আশ্চর্য হলেও রুদ্ধ হলো না। ততক্ষণে জয়ও সেখানে এসে পড়লো। কিন্তু এখন প্রশ্ন এত বড় জায়গায় ওদের খুঁজবে কীভাবে? তখনি রুদ্ধের কী জানি মনে আসলো সেটা ভেবে সে খুশি হলো। এবার হয়ত ওদের পেয়ে যাবে।
–পা…পা..পানি। সামন্য পানির জন্য কাতরাচ্ছে স্নিগ্ধা। এইসব দেখে কুটিল হাসছে এক ব্যক্তি। তার হাসির ঝংকার এতই ছিলো যে স্নিগ্ধা তা শুনতে পেয়েছে কিন্তু আমলে নিতে পারছে না। শব্দটা কিসের সেটা বুঝতেও অক্ষম তার মস্তিষ্ক। তখনি আবার কারো পদধ্বনি শুনতে পেলো সে লোকটি তার দিকে এগিয়ে আসছে। লোকটির অবয়ব তার চোখে ঝাপসা ঝাপসা লাগছে। লোকটিকে হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে। না পারছে না। তার হাতে এত শক্তি নেই যে সে লোকটিকে ধরতে পারবে। শুধু বিরবির করে এইটুকু বললো-
–বাঁচাও! আমাকে বাঁচাও!
লোকটি স্নিগ্ধার কথা শুনে ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো। জীবনে মনে হয় সে প্রথম শিকার যে শিকারির কাছে এসে বলে আমাকে ছেড়ে দিতে।
–কেউ বাঁচাতে আসবে না তোকে। তিলে তিলে ম’র’বি এখানে। তোর মৃত্যুই হবে আমার প্রাণ প্রিয় শত্রু রুদ্ধের জন্য এক উপহার। আমার সব কাজে বাঁধা দেওয়া ওর প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওর জন্য দিনের পর দিন আমার কত টাকার লোকসান হয়েছে তা ভাবতেই ওর উপর আমার রাগ বেড়ে যায়। পরশু ও কতগুলো মেয়েকে বর্ডার পার করার কথা ছিলো যদি কাজটা হয়ে যেত আমি এখন বেসামাল সম্পত্তির মালিক হতাম কিন্তু ওর জন্য এটা হলো না। এর শাস্তি তো ওকে পেতেই হবে। আর নিজের চোখের সামনে নিজের প্রিয়তমার লা’শ দেখার চেয়ে কঠিন শাস্তি পৃথিবীতে কী আছে? এই বলে হাসতে লাগলো ব্যক্তিটি। পুনরায় বললো-
–কিন্তু তোকে এভাবে মারবো না। তিলে তিলে মারবো। যা তোর শরীরের প্রত্যেকটি চিত্রে ফুটে উঠবে। যা তোর উপর হওয়া বর্বরতার সাক্ষী দিবে। তোর শরীরের প্রত্যেকটা আঘাত রুদ্ধের অনুতপ্ততার কারণ হবে। সে তখন এটাই ভাববে কেনো আমার সাথে শত্রুতা করতে গেলো। এসব কথাগুলো বলে আবার উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো।
তখনি দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো কিছু লোক। তাদের মধ্যে থেকে একটি লোক এগিয়ে এসে তাদের হাতে বোতলের মত কি জানি দিলো। বোতলটি হাতে নেওয়ার আগে লোকটা দু’হাতে গ্লাভস পড়ে নিলো। অতঃপর স্নিগ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বললো-
–দেখছিস! এই বোতল? জানিস এটার মধ্যে কী আছে? এ’সি’ড। এই এ’সি’ড যখন তোর শরীরে উপর ঢালবো তখন কেমন লাগবেরে? এই সালমান! এদিকে আয়? যখন আমি এই মেয়েটির শরীরে এটি ঢালবো সুন্দর ভাবে একটা ভিডিও করবি। এর আশিক যেনো জানতে পারে কতটা নি’র্ম’ম’ভাবে ওর আশিকাকে মা”রা হয়েছে।
এসব কথাবার্তা স্নিগ্ধার কর্ণগোচর হতেই সে ভয়ে কাঁপতে লাগলো। তার গলা, জিহবা সব শুকিয়ে গেছে। মনে ভয়েরা বাসা বেধেছে। মাথার মধ্যে শুধু একটা জিনিস ঘুরপাক খাচ্ছে সে কী আর রুদ্ধকে দেখতে পারবে না। আজ যদি তার জীবনের শেষ মুহূর্ত ও হয় তাও তার ইচ্ছা একবারের জন্য হলেও রুদ্ধের দেখা পায়। এসব ভাবতেই সে খেয়াল করেনি লোকটি তার পাশে এসে দাড়িয়েছে। যেই না লোকটি তার উপর এসিড ঢালতে যাবে তখনি গু’লির আওয়াজ শুনো গেল। স্নিগ্ধা ঝাপসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে লোকটির হাত থেকে গলগল করে র’ক্ত পরছে আর এ’সি’ডে’র বোতলটি কাচের হওয়ায় তা ভেঙে চুরমার হয়ে লোকটির পাওয়া পড়েছে। লোকটিও এখন ব্যাথা আর জ্বলনে কাতরাচ্ছে।
স্নিগ্ধা এসব ভাবছে তখনি কেউ এসে ওর হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিলো আর গালে থাপ্পড় দিচ্ছে আর তাকে ডাকছে।
–এই স্নিগ্ধা! স্নিগ্ধা! উঠো বলছি?
এই কণ্ঠের মালিককে তার খুব ভালো করে চিনা। সে জানে এই পুরুষ অবয়বটা রুদ্ধের। সে রুদ্ধের গালে হাত দিয়ে তাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করলো। হ্যাঁ! সে রুদ্ধকে ছুঁতে পেরেছে। আল্লাহ তার শেষ ইচ্ছে পূরণ করেছে। এইসবই ভাবছিলো তখন তার চোখ-মুখে পানির ফোঁটা এসে পড়লো। সে এখন স্পষ্ট রুদ্ধকে দেখতে পারছে।
–রুদ্ধ!
–হ্যাঁ! আমি! তুমি ঠিক আছো তোহ? আকুলতা ভরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো রুদ্ধ।
–হমম। স্নিগ্ধার এইটুকু উত্তর রুদ্ধকে প্রশান্তি দিলো। সে ফট করে স্নিগ্ধার কপালে একটা চু’ম্ব’ন করলো। আকস্মিক রুদ্ধের এমন কাজে স্নিগ্ধার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো। দাঁড়িয়ে পড়লো শরীরে লোম কূপ।শরীরটা যেন তার অসার হয়ে গেল। রুদ্ধ ও হতভম্ব সে কী করে ফেললো। স্নিগ্ধার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে এত শ’ক একদিনে নিতে পারছে না।
হঠাৎ রুদ্ধের সেই লোকটার কথা মনে আসলো। স্নিগ্ধাকে একটু পানি পান করিয়ে তাকে একটা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসালো। অতঃপর তেড়ে গেলো লোকটার দিকে এবং মারতে লাগলো। লোকটাকে মারতে মারতে একদম আধমরা করে ফেললো। পুলিশ এতক্ষণে এই লোকটার সাথে জড়িত সকল লোককে গ্রেফাতার করে ফেলে। ততক্ষণে সেদিকে জয়ও জয়াকে নিয়ে পৌছায়। আসলে জয়াও অজ্ঞান ছিলো। জয়াকে তুলে আনার লোকটির কোনো প্ল্যান ছিলো না। কিন্তু পরে ভাবলো তুলে যখন এনেছে একে পা’চা’র করে ভালো টাকা কামাবে। স্নিগ্ধার পর ওর কাছেই যেতো লোকটি। জয় এখানে আসার সময় পাশ থেকে গোঙানির শব্দ শুনতে পায় আর সেখানে যেয়ে দেখে জয়াকে হাত-পা বাঁধা অবস্থা পড়ে আছে আর তার পাচে কিছু ছেলে বিসরি ভাবে হাসছে। যা তার রাগকে বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিলো। সে অনেক কষ্টে জয়াকে হুশে আনলো। জয় এসে অনেক কষ্টে রুদ্ধকে থামালো।
–এই রুদ্ধ! তুই কী পা’গ’ল হয়ে গেছিস? এভাবে মা’র’ছি’স কেনো?
–ওর সাহস কী করে হয় আমার স্নিগ্ধার সাথে এমন করার? তুই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখ হাতে-পা জায়গায় জায়গায় রশ্মির কালসিটে দাগ দেখা যাচ্ছে। মুখটা কেমন নিস্তেজ হয়ে গেছে। আমি যদি ঠিক সময়ে না আসতাম এই জা’নো”য়া”রে’র বা”চ্চা আমার স্নিগ্ধার গায়ে এ’সি’ড ঢেলে দিত। এই বলে আবার তেড়ে গেল লোকটার দিকে। জয় খুব কষ্টে তাকে ছাড়িয়ে আনলো আর পুলিকে ইশারা করলো লোকটিকে নিয়ে যেতে। লোকটিকে খুব নির্মমভাবে মে’রে’ছে রুদ্ধ যা তার হাত দেখলে যে কেউ বলে দিবে। হাতের নাকল ছিলে রক্ত প’ড়’ছে।
–দোস্ত এই সব রা’স’কে’ল’কে শাস্তি পরেও দিতে পারবি আপাতত স্নিগ্ধাকে দেখ। ওর অবস্থা খারাপ। জয়ের এরূপ কথায় রুদ্ধের স্নিগ্ধা কথা স্মরণ হয়। সে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটি কী রকম নেতিয়ে পড়েছে হয়ত অজ্ঞান হয়ে গেছে। এসব ভেবেই সে স্নিগ্ধার কাছে গেল এবং তাকে কোলে তুলে নিলো। স্নিগ্ধার দেহ অসার তাই তো সে নিস্তেজ ভঙ্গিতে রুদ্ধের কোলে।
______________
রুদ্ধ বিছানার এক সাইডে স্নিগ্ধার হাত বুকে জরিয়ে বসে আছে। একটু আগে ডাক্তার এসে স্নিগ্ধাকে দেখে গেছে। ভয়ে বারবার অজ্ঞান হচ্ছে। সকাল পর্যন্ত ওর হুশ এসে যাবে এটা বলে গেছে।
স্নিগ্ধার হাত ছেড়ে দিলেই মনে হয় সে আবার হারিয়ে যাবে তাই ওর হাত ছাড়ছে না। তখন থেকেই ওর হাত ধরে বসে আছে আর হাতে কিছু সময় পরপর চু’মো খাচ্ছে। দরজার আড়াল থেকে এসব দেখছে পরশি। তার খুবই ভালো লাগছে, সে চলে গেলেও এখন তার ভাইকে একা থাকতে হবে না। এইভেবে খানিকটা হাসলো আর সেখান থেকে চলে গেল।
~সকালবেলা~
জানালা ভেদ করে সূর্যের হলুদ রশ্মিগুলো রুমের ভিতরে প্রবেশ করছে। যা প্রায় সম্পূর্ণ রুমে ছড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে যেয়ে৷ কিছু স্নিগ্ধার চোখে-মুখে পড়ে। ফলে সে ঘুমের মধ্যে নড়েচড়ে উঠে। রৌদ্রের উত্তাপ প্রখর থেকে প্রখর হয়ে গেল ফলে সে আর সইতে না পেরে চোখ দুটি ধীরে ধীরে খুললো তাও পুরো পুরি খুলতে পারছে না। চোখ খুলেই সে রুদ্ধের চেহারা দেখতে পারলো। কী নিষ্পাপ সে মুখশ্রী। আলোক রশ্মি রুদ্ধের চেহারায় পড়ায় তাকে খুব স্নিগ্ধ লাগছে, সে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে চোখ বুঁজে আছে। পরক্ষণে তার কালকের ঘটনা স্মরণ হলো সাথে সাথে তার শরীর ভয়াবহ রকম ঘামতে লাগলো। সে আর এই ব্যাপারে আর ভাবতে চাইছে না। এভাবে শুয়ে শুয়ে তার ভালো লাগছে না তন্মধ্যে সে উঠার চেষ্টা করলো। উঠতে গিয়েই সে নিজের হাতে টান অনুভব করলো। দেখলো তার হাত রুদ্ধের হাতের মধ্যে বন্দী। পরক্ষণেই রুদ্ধের হাতের দিকে তাকাতেই সে আঁতকে উঠলো। হাত থেকে র’ক্ত পড়ছে যা তার হাতকে ভিজিয়ে দিয়েছে। সে তাড়াতাড়ি করে নিজের হাতকে ছাড়িয়ে উঠে বসলো আর সাইড টেবিলের উপরে থাকা ফার্স্ট এড বক্স নিয়ে এর ভিতরে থাকা স্যাভলন আর তুলা দিয়ে রুদ্ধের হাত পরিষ্কার করতে লাগলো।
হাতে জ্বালাপোড়া অনুভব করতেই রুদ্ধের চোখ বিরক্তিতে কুঁচকে উঠলো। সে চোখ খুলে দেখলো স্নিগ্ধা তার হাতে মলম পট্টি করছে। ব্যাপারটা তার কাছে বেশ লাগলো। সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো কিছুক্ষণ।
— একটু আস্তে করো! হাতটা জ্বলছে তো? আকস্মিক রুদ্ধের আওয়াজে স্নিগ্ধা হকচকিয়ে গেলো। চোখ দুটো কোটর থেকে বের হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা, হাতে থাকা তুলো টাও পড়ে গেল। সে রুদ্ধের দিকে তাকাতেই দেখে রুদ্ধ দাঁত বের করে হাসছে।
রুদ্ধ স্নিগ্ধার হাতের উপর নিজের হাত রেখে বসে আছে। দৃষ্টি তার স্নিগ্ধাতে নিবদ্ধ। স্নিগ্ধা রুদ্ধের নজর থেকে নিজের নজর আলাদা করার জন্য আশে পাশে তাকাচ্ছে। এবার মৌনতা ভেঙে রুদ্ধ বললো-
–জানো স্নিগ্ধা জীবনে কখনো ভাবিনি কখনো কাউকে মনের প্রাঙ্গনে জায়গা দিবো বা কেউ কখনো জায়গা করে নিতে পারবে। সারাজীবন আমি আমার দ্বায়িত্ব গুলোকেই ভালোবেসে এসেছি তাই দায়িত্বের উর্ধ্বে কাউকে কখনো ভালোবাসবো তা ভাবিনি। রাজনীতি আর বোনকে দেখাশোনা করেই আমার দিন পার হত, বাবা-মায়ের ছায়া সে কবেই চলে গেছে। আলাদা করে নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় পাইনি। জানো আমার ব্যাপারটা হাস্যকর লাগতো যখন পরশি বলতো আমার জীবনে এমন একজন আসবে যে আমার সব কষ্ট ভাগ করে নিবে। তখন আমিও ওকে বলতাম এই স্বার্থপরের দুনিয়ায় কেউ কারো জন্য নয়, আর কারো কাছে এত সুখ নেই যে নিজের জীবন ছেড়ে অন্য কষ্টের ভাগিদার হবে।
জানি আমার কথাগুলো অগোছালো তাও একটু বুঝে নাও। ভালোবাসি আমি তোমায়। এই জীবনে শুধু তোমাকেই চাই। সে টিভি সিরিয়ালের নায়কদের মত ফুল দিয়ে ভালোবাসার প্রকাশ করতে আমি পারবো না কিন্তু তোমার জীবন থেকে সকল দুঃখ মোচন করার শক্তি আমার আছে। এটা ভেবো না আমি তোমাকে ভালোবাসার জন্য ফোর্স করছি কিন্তু এই বলে ছেড়ে দিচ্ছি তাও না। তোমার যত সময় লাগে নাও কিন্তু দিনশেষে আমারই হয়েও প্রিয়।
রুদ্ধের কথাগুলো শুনে পরশির চোখ ছলছল করে উঠলো। এত সুন্দর করে ভালোবাসার প্রকাশ করে বলছে আমি পারি না। যারা মন পড়তে জানে তাদের এত শব্দ দিয়ে বোঝানো লাগে না, তারা নিজেরাই বুঝে যায়। সে আর কিছু না ভেবে রুদ্ধকে জড়িয়ে ধরলো। রুদ্ধ নিজের জবাব পেয়ে গেলো।সে এখন খুশি।
পরশি ড্রয়িং রুমে এসে দেখলো জয় বসে আছে, গাতে তার গোলাপ ফুলের বড় একটি তোড়া। যেহেতু আগের মত কোনো দ্বন্দ্ব নেই তাই সে ভদ্রতার খাতিরে তার সাথে কথা বলতে গেল।
পরশিকে দেখে জয় একটু নড়েচড়ে উঠলো।
–জী কেমন আছেন?
পরশির তাকে “আপনি” করে ডাকায় তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। তাও নিজেকে কোনো রকম সামলে বললো-
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি! কিন্তু তুমি আমাকে আপনি করে বলছো কেন?
–আজব! আপনি আমার ভাইয়ের বন্ধু আর বয়সেও আমার থেকে অনেক বড় আপনাকে আপনি করে ডাকবো না তো কী বলে ডাকবো?
–আমি তো ভেবেছিলাম আমাকে মাফ করে দিয়েছো কিন্তু এখন দেখছি অভিমান আরও বাকি আছে?
–উহমম! কোনো অভিমান নেই কেননা সেটা আপনজনদের সাথে করা যায় কিন্তু আপনার আর আমার মধ্যে বিশাল দূরত্ব। তাই আমার মনে হয় আমরা এই জীবনে একে অপরের এত কাছে আসতে পারবো না।
–এমন কেনো করছো পরশি? এখন তো সব ঠিক হয়ে গেছে। তাহলে কেনো আবার সব কিছু কম্পলিকেট করতো চাইছো এসব বলে? চলো না দু’জনে একসাথে আবার নতুন করে জীবন শুরু করি।
–আমি কোনো কিছু কম্পলিকেট করছি না বরং আপনি এসব কথা বলে আমাকে অস্বস্তিতে ফেলছেন। হ্যাঁ নতুন করে জীবন শুরু করবো তবে একসাথে না আলাদা আলাদা। তাছাড়া আমার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে কয়দিন পর বিয়ে তাই আপনার এই অশোভন কথা বন্ধ করুন।
পরশির কথা শুনে জয়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। কী বলছে এসব?
–দেখ পরশি আমি মজার করার মুডে নেই।
–আমিও মজা করার মুডে নেই। হ্যাঁ তোমার প্রতি আমার দূর্বলতা ছিলো তার মানে এই নয় যে সারাজীবন তোমার অপেক্ষায় কা’টি’য়ে দিতাম।যদি তুমি আমাকে সত্যি ভালোবাসতে তাহলে যুগ যুগ অপেক্ষা করতেও আমার সমস্যা হতো না। কিন্তু তুমি কখনো আমাকে ভালোবাসোনি, সব ছিলো তোমার প্রতিশোধের খেলা। আর তখন তুমি যা ফিল করছো তা অনুতাপ ছাড়া কিছুই না। যদি তুমি আমাকে সত্যি ভালোবাসতে আমাকে খুঁজতে, নিজের করা কাজের জন্য ক্ষমা চাইতে নয়ত অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করতে। এইভাবে বছরের পর বছর আমার আসার অপেক্ষা করতে না। ক্রুদ্ধ কণ্ঠে কথা গুলো বলে পরশি চলে গেল। জয় তার যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। হাতে থাকা ফুলের তোড়াটা অবহেলায় নিচে পড়ে আছে।
এভাবে কে/টে গেছে একটি বছর। সবাই সবার জীবনে এগিয়ে গেছে। জয় সেদিন পরশির কথাগুলো না বুঝতে পারলেও এখন ঠিকই বুঝতে পেরেছে, পরশি যা বলেছে ঠিক। সে অনুতাপের আগুনে দগ্ধ থেকে ওর মনে পরশির জন্য অনুভূতি আসে। পরশিরও বিয়ে হয়ে গেছে সে এখন স্বামী-সন্তান নিয়ে সুইজারল্যান্ড থাকে। তার একটি ছেলে হয়েছে। কিছু মাস আগে জয়ার জন্য আহনাফের সমন্ধ আসে। জয়া প্রথমে মানা করলেও পরে সকলের জোড়াজুড়িতে রাজি হয়ে যায়। ওর এইচএসসি
পরীক্ষার পর ওদের বিয়ে। বর্তমানে এরা দু’জন চু’টি’য়ে প্রেম করছে। আর রইলো রুদ্ধ ও স্নিগ্ধার কথা তারাও খুশি আছে। পরশির বিয়ের কিছু সময় পর তাদেরও বাধ্য হয়ে বিয়ে করতো হলো। পরশির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর লোকে স্নিগ্ধাকে নানা ধরনের কথা শুনাতো। বিয়ে ছাড়া একটা ছেলের সাথে কীভাবে থাকছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই তখন রুদ্ধও স্নিগ্ধাকে ধর্মীয় রীতিতে বিয়ে করে ফেললো। স্নিগ্ধার এইচএসসির আবার ধুমধাম করে ওদের বিয়ের আয়োজন করা হবে।
~(সমাপ্ত)~
বিঃদ্রঃ গল্পটি নিয়ে আমার অনেক আশা ছিলো যেহেতু গল্পটা আপনাদের পছন্দ হচ্ছিল, আমিও ভেবে রেখেছিলাম সুন্দরভাবে৷ গল্পটি উপস্থাপন করবো কিন্তু আমার পরীক্ষা সব এলোমেলো করে দিলো। অনেকেই বলছে গল্পটি আরেকটু বড় করতে কিন্তু তা আমি করতে পারলাম না এর জন্য আমি দুঃখিত। আমি আপনাদের গল্প পড়ার আনন্দটা মাটি করে দিয়েছি। কখনো যদি সুযোগ পাই আপনাদের কথা ভেবে এর সিজন-২ আনবো, যা আপনাদের মনের মত করে হবে। ছোট বোন মনে করে মাফ করে দিন। আর কোনো নেগেটিভ মন্তব্য করিয়েন না আমি জানি আমি গল্পকে গোঁজামিল করে ফেলসি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন।