মন পিঞ্জর পর্ব ২৭+২৮

0
900

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_২৭

আদৃত নিজের আবেগ আর ধমিয়ে সক্ষম হতে না পারায় অতি আবেগের বশে আঁখিকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েছে, কান্নার সাথে বেড়িয়ে আসছে ওর মন পিঞ্জরের ভিতর লুকিয়ে থাকা সকল বেদনাদায়ক অনুভুতিও।

কেনো আঁখি কেনো ও এমন করলো,কি দোষ ছিলো আমার?কি দোষ ছিলো আমার সন্তানের?আমি তো ওকে বিয়ের আগেই বলেছিলাম আমি সব ঠিক করে দিবো আমাকে সবকিছু বলে দিতে তবে কেনো ও এমনটা করলো?কেনো আমাকে ব্যবহার করলো?কেনো করলো আমার মন নিয়ে খেলা?কেনো শিখালো আমায় ভালোবাসতে?এমনকি আমায় মিথ্যে বলতেও শিখিয়ে দিলো, ভাবিনি এতো মিথ্যেও আমায় বলতে হবে কখনো,ওর জন্য তো সব করলাম তবে ও কেনো আমাকে ঠকালো?কেনো?আমি যে আর পারছি না এসব মানিয়ে নিতে।

আদৃতের হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরায় একপ্রকার হতবম্ভ হয় আঁখি,মনের ভিতর আচমকা এক অনুভুতি খেলা করে উঠে খনিকে,কিন্তু পরক্ষণেই আঁখি নিজেকে স্বাভাবিক করে আদৃতকে সহানুভূতিময় হাতে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়,অনুভব করতে পারে আদৃতের ব্যাথা,এগুলো যে ওর ভিতর চলা ব্যাথারই সমতুল্য তাই ওর থেকে বেশি আদৃতের এই ব্যাথা আর দ্বিতীয় কেউ অনুভব করতে পারবে বলে আঁখির মনে হয় না,আঁখি এবার আদৃতকে সহানুভূতিময় স্পর্শে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো।

সত্য ভালোবাসার অনুভুতিগুলো যে এমনই হয় ড.আদৃত মানুষকে অসাধ্যও সাধন করার ক্ষমতা দিয়ে দেয়,হয়তো আমরা যারা সত্য ভালোবাসতে জানি তাদেরই প্রতিদানে ঠকতে হয়,আঘাতের সম্মুখীন হতে হয়। স্বার্থপরদের জন্য জীবনে শুণ্যতা অনুভব করে বেঁছে থাকা শুধুই অনর্থক এর থেকে বেশি কিছু না,প্লিজ আপনি এভাবে ভেঙে পড়বেন না নিজেকে সামলান,আপনার সামনে যে সুন্দর ভবিষ্যত হাতছানি দিয়ে ডাকছে পিছুটানে পড়ে থাকা আপনাকে মানায় না ড.আদৃত।আপনিই তো আমাকে সাহস জোটালেন সংগ্রাম করে বেঁছে থাকার সত্যের সম্মুখীন হওয়ার আর নিজের বেলায় আপনি পিছু হাটছেন।

আদৃত এবার কিছুটা স্বাভাবিক হলে আঁখিকে ছেড়ে দিলো,তারপর চোখের জল মুছে মৃদ্যু স্বরে একটা কথাই বললো।
আমি দুঃখীত আসলে অতি আবেগে নিজের গতি হারিয়ে ফেলেছিলাম।কিছু মনে করবেন না

আদৃত আর বসলো না সেখানে,উঠে চলে গেলো রুমে।

আদৃত ঘুমিয়ে পড়েছে অনেক আগেই আঁখির চোখে নিদ্রার ছোঁয়া এখনও নেই,সোফাতে বসারত অবস্থায় তাকিয়ে আছে একধ্যানে আদৃতের পানে, আজ আঁখির আঁখিযোগল যেনো বড়ই বাধনছাঁড়া হয়ে পড়েছে- আদৃতের উপর থেকে সরতেই চাইছে না,মন পিঞ্জর জুড়ে চলছে কিছু অনুভবের খেলা যা শুধু আদৃতকে নিয়েই, সেই অনুভুতির মধ্যে কিছু আছে আদৃতের জন্য খারাপ লাগা আর কিছু অনুভুতি এমনও আছে যার মানে আঁখির মন পিঞ্জরখানি উপস্থিত মুহুর্তে বুঝতে ব্যার্থ,ঘুমন্ত অবস্থায় আদৃতকে বড্ড মায়াবী আর নিষ্পাপ লাগছে আঁখির যতোটা হয়তো কখনো আয়ানকেও লাগে নি,আসলে ভালো মানুষদের মুখের মায়া হয়তো আলাদাই থাকে,আঁখির বড্ড লোভ হলো আজ,মন টা যেনো আজ ডেকে ডেকে বলছে ওকে, সেই আট বছর আগে যদি আঁখির সাক্ষাৎ আয়ানের বদলে আদৃতের সাথে হতো তবে হয়তো আজ আদৃত আর আঁখি দুজনেরই জীবন ঘুছানো থাকতো,এসব ভাবনার মধ্যেই কখন আঁখি ঘুমিয়ে গেছে ওর নিজেরও তা জানা নেই।
__________________

আয়ান ভেবে নিয়েছে আঁখি সত্যিই আদৃতের স্ত্রী কি না সেটার খোঁজ ও লাগাবেই, তাই সে উদ্দেশ্য সকাল থেকেই লেগে পড়েছে।নিজের কিছু লোক আঁখি আদৃতের পিছু লাগিয়ে দিয়েছে, এদিকে নিজেও লাগবে সেটাও ভেবে নিয়েছে।

সকাল সকাল উঠে আদৃত হতভম্ব, যেখানে যেখানে আরোহীর ছবি ছিলো কোথাও আর সেগুলো নেই,এমনকি আরোহীর যে জিনিসগুলো আদৃত নিজের কাছে রেখেছিলো কোনো কিছুই নেই,এদিকে আমাদের আঁখি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে আপন মনে আর গুনগুন করে গান করছে,আদৃত এবার ভ্রুযোগল কুঁচকালো ওর পানে আর বললো।

আরোহীর ছবি আর জিনিসগুলো কোথায়?হঠাৎ করে সবগুলো উদাও কি করে হলো?আমার যতটুকু মনে হয় আপনি জানেন, বলেন আমায় ওগুলো কোথায়?

আঁখি এবার হাসতে হাসতে বললো।

আমি জানি মানে আলবাদ জানি, বেলকোনি দিয়ে নিচে উকি দেন,বাগানের এক কোন থেকে ওগুলার ধোঁয়া উঠা ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাবেন।

আদৃত সত্যি সত্যি এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেলো বাগানের এক কোনে কিছু জ্বলার পর ধোয়া উঠা ধ্বংসাবশেষ দেখা যাচ্ছে।

এসব কি মিস আঁখি?

আর কি যেগুলো আপনি খুঁজছেন।

হোয়াট?আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে না বলে ওগুলো জ্বালিয়ে দেবার।

আঁখি টেডি স্মাইল করে বললো।
আঁখির সাহস সম্পর্কে এখনও কোনো উপযুক্ত ধারনা আপনার নেই ড.আদৃত।তবে আরোহীর সাহস কি করে হয় আপনাকে না বলে আপনার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার?ওকে তো কিছু বলেন নি,বরং ওকে বুকের সাথে টাঙিয়ে নিয়ে এখনও ঘুরছেন,শুনের ড.আদৃত কারো চলে যাওয়াতে জীবন থেমে যায় না সেটা আমি আপনাকে আগেই বলেছিলাম,আর আরোহীতো আপনাকে নিজের স্বার্থের জন্য ছুঁড়ে ফেলে গেছে তাই ওর স্মৃতি নিয়ে বেঁছে থাকা বোকামি ছাড়া অন্য কিছুই হতে পারে না,আর আপনাকে বোকামি শোভা দেয় না ড.আদৃত,আপনি জ্ঞানী একজন মানুষ,আমাকে শক্ত হবার সাহসটা জুটিয়ে আপনি নিজে দুর্বলতা আকঁড়ে ধরে বাঁচতে চান জিনিসটা আমি মেটেও মেনে নিতে পারলাম না,তাই যেটা আপনি করতে পারেন নি আমি করে দিলাম,আঁখি কখনো কারো ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাতে যায় না তবে যেখানে নাক না গলালে হয় না সেখানে আঁখি পিছুও হাটে না।

খুব সুন্দর বলে দিলেন না আরোহীকে ভুলে যেতে,সামনে এগিয়ে যেতে,আপনি পেরেছেন আয়ানকে ভুলে যেতে?পারবেন কখনো?

হয়তো ওকে কখনো আমি ভুলতে পারবো না কিন্তু তাই বলে এই নয় ওর পথ চেয়ে বসে থাকবো,এটা হতে পারে আমি এখনও ওকে ভুলে যেতে পারি নি,মনের কোনো কোনে এখনও ওর জন্য ভালোবাসাটা লুকিয়ে আছে তাই বলে এই নয় আমি ওর ছবি বুকের সাথে লাগিয়ে বসে রয়েছি,ওর কোনো স্মৃতি আমি নিজের কাছে রাখি নি আর যে স্মৃতিগুলো মনে আছে সেগুলোও মুছার জন্য দিন রাত নিজের সাথে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি আর সেটাতে জয় আমি একদিন করবোই।ভালোবাসি বলে আমরা সেই বিশ্বাসঘাতকদের পথ চেয়ে বসে থাকলে তো আর হবে না,ওরা যখন নিজেদের সুখটা বেঁছে নিয়েছে আমাদেরও যথেষ্ট অধিকার আছে ভালো থাকার,নিজেদের সুখ বেঁচে নেওয়ার,আমি চেষ্টায় আছি আশা করি আপনিও চেষ্টাটা করবেন।
______________________

আয়ান হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রেডি হয়ে বের হবে তখনি একটা লোক আসে একটা পার্সেল হাতে,ওটার উপরে মাহির নাম লিখা,আয়ান ওটা নিয়ে নেয়,কৌতুহলবশত পার্সেলটা খুলে নেয় যার ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসে একটা রিপোর্ট, যেখানে ক্লিয়ারলি লিখা মাহির প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ ,এক মুহুর্তের জন্য আয়ান মনের সমস্ত অশান্ত ভাব,ব্যাথার্থ অনুভুতি সব ভুলে যায়,বাবা হবার খুশিটা আঁকড়ে ধরে ওকে,খুশিরত ভঙ্গিতে মাহিকে চিৎকার করে ডাকতে শুরু করে পরক্ষণেই,মাহি অল্প বিরক্তি নিয়ে নেমে আসে নিচে।

কি হয়েছে? এতো চেঁচাচ্ছো কেনো?

মাহি,তুমি জানো কতো বড় গুড নিউজ এসেছে?এই দেখো রিপোর্টস,পজিটিভ এসেছে,আমরা বাবা-মা হতে চলেছি।

আয়ান অতিরিক্ত খুশিতে মাহিকে কোলে নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে কথাগুলো বললে এবার মাহির প্রতিক্রিয়া ঠিক আয়ানের প্রতিক্রিয়ার উল্টোটা হলো।

কি বাচ্চামো শুরু করেছো আয়ান?প্রথমত নামাও আমায়,আর দ্বিতীয় আমি বর্তমানে এই বেবিকে নেওয়ার কথা ভাবছি না,এতো অল্প বয়সে মা হবার কথা ভাবতেও পারি না আমি,তাছাড়া আমার ফিগারের কি হবে?নো ওয়ে,আর এসব বাচ্চা টাচ্চা আমার পছন্দ না,তাই আমি এবোর্ট করবো।তাছাড়া এটা শুধু ভুলবশত এসেছে আর একটা ভুলের জন্য আমি নিজের লাইফ নষ্ট করতে পারি না।

কথাটা শুনে আয়ান আশ্চর্যের শেষ সীমায় চলে গেলো,ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো এবার।

আর ইউ সিরিয়াস,এবোর্ট করবে তুমি?আমাদের বাচ্চাকে তুমি মেরে ফেলবে,ঠোঁট কাঁপলো না তোমার কথাটা বলতে? নিজের ভিতর একটা সুন্দর প্রাণ বেড়ে উঠছে ওকে অনুভব করার বদলে ওকে মেরে দিতে চাইছো তোমার ওই লোক দেখানো আধুনিকতার ছোঁয়ায়।

হাউ ডেয়ার ইউ টু টক টু মি লাইক দিস?বেবি রাখা না রাখা সেটা শুধুই আমার ডিসিশন হবে, আমি কখনো নিজের লাইফে কারো ডিসিশন এলাও করি নি আর এখনও করবো না,তাই তুমি আমায় ওই সব বেচারি সংসারী মেয়েদের মতো ট্রিট করতে এসো না,মাহি রিপোর্টটা নিয়ে হন হনিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো কথাগুলো বলে।আয়ান অসহায়ের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলো।

তাজবীর আজও এসেছে আঁখিকে দেখতে, আজও কলিংবেল বাজতেই সায়েদার দূর্ভাগ্যবশত দরজাটা ওই খুললো আর সেদিনকার মতো আজকেও তাজবীর সায়েদাকে বাচ্চা বলে ব্যাঙ্গ করলো,যাতে সায়েদা আজ একটু বেশিই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো,তাজবীর কি ওকেই পায় শুধু ব্যাঙ্গ করার জন্য?তাই আজ সায়েদা অতিরিক্ত রাগে মনে মনে একটা প্রতিশোধ স্পৃহা তৈরী করে নেয়।

তাজবীরের একটা ফোন আসলে ও বাগানের দিকে যায় একাকিত্বে কিছু কথা বলার সুযোগের খোঁজে, ওখানে বেশ কিছু অংশ মাটি খুড়া হয়েছিলো চারাগাছ লাগানোর সুবিধার্থে যা বৃষ্টির ফলস্বরূপ কাঁদায় পরিনত হয়েছে,সেই কাদার থেকে অল্প দূরত্বে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো তাজবীর তখনি সুযোগ বুঝে সায়েদা ওকে ধাক্কা মেরে কাঁদায় ফেলে ব্যাঙ্গ করতে চায় কিন্তু সেটাও করতে ব্যার্থ হয় সায়েদা, তাজবীর মুহুর্তটা আন্দাজ করতে পেরে সরে যার সাথে সাথেই, যার ফলস্বরূপ সায়েদা মুখ থুবড়ে পড়ে কাঁদায়, এদিকে সায়েদার হাল দেখে তাজবীর হাসতে হাসতে নেই।

হা হা হা হা,ও মাগো এ দেখি কাঁদা পরি,হা হা হা,আরে বাচ্চা তোমাকে তো কাঁদায় ভালোই মানাচ্ছে,আর মানাবেই না কেনো বাচ্চারা তো কাঁদায় খেলবেই,কিন্তু কখনো এতো বড় ধাঙড় বাচ্চা দেখবো তাও কাঁদা নিয়ে খেলতে কখনো ভাবি নি।হা হা হা

ইউ।

সায়েদা এদিকে অতিরিক্ত রাগে কোনোদিন না ভেবেই উঠে এসে তাজবীরকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে দেয় যাতে তাজবীর ব্যালেন্স সামলাতে না পেরে পিছনে ঠাস করে পরে যায়,এবার সায়েদা হাসতে শুরু করে তাজবীর পরে গেছে দেখে ওকে ব্যাঙ্গ করে,কিন্তু খনিকে ওর হাসি মলিনতা পূর্ন হয় কারন পড়ে যাওয়ার পর তাজবীরের আর কোনো হেলদোল পাওয়া যাচ্ছে না,যেভাবে পড়ে ছিলো সেভাবেই পড়ে আছে,সায়েদার মনে অল্পতে হালকা ভয় কাজ করতে শুরু করলো এবার।

চলবে…………..

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_২৮

আয়ান মাহিকে বার বার ফোন করছে কিন্তু মাহি ফোন উঠাচ্ছে না,আয়ানের ভিতরে ভয় কাজ করতে শুরু হয়েছে এবার,মাহি অনেক আগে বেড়িয়ে গেছে এখনও খোঁজ নেই,মনের ভিতর একটাই দুঃশ্চিন্তা শুরু হয়েছে ওর মাহি যদি ওর বাচ্চাটা নষ্ট করে দেয়,বাবা হবার একটা সুন্দর অনুভুতিময় আশা মনের কোনে উঁকি দিয়েছিলো আয়ানের,কিন্তু মাহি বাচ্চা নিতে নারাজ হবে তা কখনো কল্পনায়ও ভাবে নি আয়ান।মাহি কোথায় গেছে তাও জানে না তাই ঘরে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না,বার বার দরজার পানে তাকাচ্ছে, এদিকে এই টেনশনে হাসপাতালে যাবার কথা মাথায়ই নেই,মাহিকে কলের উপর কল করছে কিন্তু ও কল ধরছে না, মেসেজ করলেও রিপ্লাই করছে না।

তাজবীর নড়ছে না,এতে ভয় পেয়ে সায়েদা ওর পানে এগিয়ে গেলো,অতপর ওর নিশ্বাস চেক করে দেখলো নিশ্বাসও চলছে না ,সায়েদা এবার অতিরিক্ত ভয় পেয়ে গেলো জোরে জোরে ডাকতে শুরু করলো তাজবীরকে কিন্তু তাজবীরের কোনো সাড়াশব্দ নেই, সায়েদার ভয়ের পরিমাণটা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলে সজোরে কান্না করতে শুরু করলো।কান্না করছে আর তাজবীরকে ডাকছে।

এই যে তাজবীর সাহেব প্লিজ উঠেন, আমি আপনাকে মারতে চাই নি প্লিজ আপনি উঠেন,আপনি না উঠলে আমার জেল ফাঁসি হয়ে যাবে উঠেন না,তাজবীর সাহেব।

সায়েদা কাঁদতে কাঁদতে বেহাল দশা করে নিয়েছে নিজের,এদিকে তাজবীর নিজের হাসি আর দমিয়ে রাখতে না পেরে উঠে বসে অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়লো।তাজবীরকে হঠাৎ এভাবে উঠে হাসতে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেলো সায়েদা,অল্প ক্ষনে বুঝতে পারলো তাজবীর এসবও মজা করছিলো ওর সাথে,এদিকে তাজবীর হাসতে হাসতে বলছে।

এমনি কি আর টিউবলাইট বলি, হা হা হা হা,বোকা গাঁদা মেয়ে কোথাকার,মানুষ বেঁচে আছে কি না তা জানতে পালস চেক করে আর তুমি আমার নিশ্বাস চলছে না দেখে ভাবলে আমি মরে গেছি হা হা হা,আবার কি না হবে ডাক্তার,হা হা হা।

সায়েদার এবার প্রচুর রাগ হলো সাথে কান্নাও এলো অনেক,রাগে গজ গজ করতে করতে বললো।

দেখে নিবো তাজবীর খান আপনাকে,আমিও আফরিনা চৌধুরী সায়েদা, শোধ তো আমি তুলবোই।

সায়েদা চলে গেলো কান্না করতে করতে,এবার তাজবীর নিজের হাসি খনিক থামালো তারপর বিড়বিড় করে বলতে লাগলো।

আমি একটু বেশি করে ফেললাম না তো,মনে হয় কষ্ট পেয়েছে অনেক,না আর লাগবো না ওর সাথে।
____________________

মাহি আসছে না, হঠাৎ আয়ানকে কেউ একজন ফোন করে কিছু কথা জানায় যা শোনার পর মনের কোনে আবারও ব্যাথা মোচড় দিয়ে যায় ওর,লোকটা নিশ্চিত করে আঁখি আদৃত স্বামী স্ত্রী,যেহেতু দিদু জেনে যাবার ভয়ে প্রায় অনেক ক্ষেত্রেই স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে আছে ওরা কিন্তু আসল সত্য লোকটা জানতে ব্যার্থ হলো,কথাটা শুনে আর মাথা ঠিক থাকলো না আয়ানের উঠে চলে গেলো কোথাও।

ভার্সিটি টাইম শেষ, আজকে সায়েদা কলেজ যায় নি,আদৃত আর আঁখি বাড়ি আসবে তখনি আদৃত দেখে ওর গাড়ির একটা টায়ারের হাওয়া বেড়িয়ে গেছে,এদিকে গাড়িতে অন্য টায়ার নেই এখন বাড়ি থেকে গাড়ি আনিয়ে যেতে হবে বলে বাড়িতে ফোন করলো ড্রাইবার গাড়ি নিয়ে আসছে নিশ্চিত করলো, আঁখি এমনটা করেছে ইচ্ছে করে কারন ও মনে ফন্দি করেছে রেখেছে অন্য কিছু,আদৃতকে বললো ওর ইমিডিয়েটলি বাড়ি যেতে হবে,বলে তাড়াহুড়ো শুরু করলো আদৃত গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে বললে বললো ও পারবে না ওর খুব দরকার ওকে এখনই যেতে হবে তাই ও লোকাল গাড়িতেই যেতে চায়।আর আদৃতকেও ওর সাথে যাওয়ার জেদ ধরলো।

দেখেন মিস আঁখি আমি কখনো লোকাল গাড়িতে যাই নি,তাই হঠাৎ যেতে কেমনটা লাগবে।

অনেক ভালো লাগবে চলেন।
কথাটা বলে আদৃতের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।ওটোর বদলে বাসে উঠলো তাও খালি বাস দেখে উঠলো না ভরা বাসে উঠলো আদৃত কোনোমতেই বুঝে উঠতে পারছে না আঁখির মতলব,এদিকে আঁখি মুচকি মুচকি হাসছে, আদৃতের সন্দেহ হচ্ছে আঁখির উপর অনেক,কিন্তু ওর সাথে তো আর পেরে উঠে না বেচারা আদৃত যে পরিমাণে জেদি আঁখি,বাসের মধ্যে দাঁড় করিয়ে ধাক্কা মুক্কি খাইয়ে কোথাও নিয়ে এলো আদৃতকে,আদৃত কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না,এবার খিদে লেগেছে বলে নরমাল একটা হোটেলে নিয়ে এলো ওকে, আদৃত কোনো রেস্টুরেন্টে যেতে চাইলে যেতে দেয় নি তারপর আচ্ছা মতো নিজে খেয়ে আদৃতকেও খাওয়ালো সেখানের নরমাল খাবার অতপর আবারও কোথাও ছুটলো,একটা ছোট্ট মাঠে কিছু বাচ্চারা ফুটবল খেলছিলো তাদের সাথে গিয়ে যোগ দিলো আদৃত যেতে না চাইলেও ওকে টেনে টুনে নিয়ে গিয়ে যোগ দেওয়ালো,সারাদিন এখানে ওখানে ঘুড়ালো আদৃতকে নিয়ে, প্রথমে আদৃতের বিরক্তি লাগলেও আস্তে আস্তে সবকিছু আদৃতের ভালো লাগতে শুরু হলো,খনিকের জন্য ভুলে গেলো জীবনের সব তীক্ত স্মৃতি, আঁখির সাথে আজ আদৃতেও মন পিঞ্জরখানা উড়াল দিতে বড্ড ইচ্ছুক হলো,আঁখি আদৃতের হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে আবার কোনো ভালোলাগার সন্ধানে আদৃত ঠোঁটের কোনে আলতো হাসি টাঙিয়ে কোনো দিক বিবেচনা না করেই চলছে আঁখির সাথে,চোখ দুটি ওর আঁখিতেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে,মনে চলছে আচমকা এক অনুভুতি যার মানে আদৃতের না জানা থাকলেও বড্ড ভালো লাগছে ওর এই অনুভুতিটা,আঁখি আদৃতের হাত ধরে নিয়ে এলো নদীতীরবর্তী বিশাল একটা শিমুল গাছের নিচে, শান্ত শীতল সেখানকার পরিবেশ, বয়ে আসা বাতাস দুল খাইয়ে যাচ্ছে মনে, নিজের সাথে নিয়ে আসা ভালোলাগা সেই যুবক আর রমনীকে উপহারে দিয়ে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছে যেনো ওদের বিষাক্ত অতীতের তিক্ত স্মৃতি ।আঁখি মুখে বিশ্ব জয় করা হাসি টাঙিয়ে নদীর পাড়ের মনমাতানো বাতাস উপভোগ করছে আর আদৃত অপলকে তাকিয়ে আছে আঁখির পানে আর আনমনে ভাবছে কিছু কথা।সত্যিই যে আঁখি ওর কল্পনার বাইরে,কি করে পারে এতো ভালো থাকতে আর অন্যকেও ভালো রাখতে,তবে কি আঁখির কথা অনুযায়ী আদৃতেরও জীবনে এগিয়ে যাওয়া দরকার?ভালো থাকাটা শিখে নেওয়া দরকার?তবে দোষ কি হবে তাতে?আরোহী যখন নিজের স্বার্থ বেঁছে নিয়ে ভালো আছে তবে আদৃত কেনো পিছুটানে পড়ে থাকবে,সত্যিই যে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর, সারাদিন নিজের কাজ নিয়ে পড়ে থাকে আদৃত নিজেকে নিয়ে আলাদা করে ভাবার সমটুকুও নেই তবে আজকে আঁখির সাথে একটু বেড়িয়ে অনেক ভালো লাগলো ওর,আদৃত বুঝতে সক্ষম হলো যে জীবনে পিছুটান সবকিছু হয় না,পৃথিবীটা যে অনেক সুন্দর, জীবনের সব কষ্টের রেশ ভুলে গিয়ে প্রকৃতিতে মন ভুলালে তা জীবনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দেয়,ভাবনার ক্ষন কাটিয়ে এবার আদৃত আঁখিকে খনিক কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো।

আপনি ইচ্ছে করেই এসব করেছেন না যাতে আমি কিছু সময়ের জন্য হলেও ভালো থাকি?

দেখেন ড.আদৃত, ভালো থাকা আর না থাকা সব কিছু নিজের হাতে থাকে,নিজে ভালো থাকতে চাইলে কেউ সে ভালোলাগা কেড়ে নিতে পারে না।আপনি এতোদিন এজন্য ভালো ছিলেন না কারন আপনি ভালো থাকতে চান নি, অতীত নিয়ে পড়ে ছিলেন আমিতো শুধুই নিজের হাতটা বাড়িয়ে আপনাকে সেই তিক্ত অতীত থেকে বাইরে আনার চেষ্টা করেছি মাত্র,জানিনা কতোটুকু পেরেছি আর কতটুকু পারবো কিন্তু হাল আমি ছাড়বো না।

আপনি নিজেকে ছাড়া সবাইকে নিয়ে ভাবেন তাইনা?

আঁখি এবার মৃদ্যু হেসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললো।

ওই যে উপরে যিনি বসে আছেন উনি আমাকে নিয়ে ভাবেন আর উনি থাকতে আমাকে নিয়ে আর অন্য কেউ ভাবতে হবে না,আমার জন্য উনিই যথেষ্ট।

অতপর দুজন মৃদ্যু হেসে একে অপরের সাথে কথা বলতে মগ্ন হয়ে পড়লো,দুইজনের মনে যেনো নদীতীরের সেই শীতল পরিবেশ অজানা এক অনুভুতির জাগরণ ঘটাচ্ছে যার মানে দুজনেরই অজানা এদিকে একজোড়া চোখ আড়াল থেকে দেখে যাচ্ছে দুজনকে,পারছে না সে চোখজোড়ার মালিক দৃশ্যটা মেনে নিতে,চোখ উপচে পড়ছে জল যা নিজের শারীর আঁচল দিয়ে বার বার মুছতে ব্যাস্ত রমনী,অল্প ক্ষনে মনে বাঁধিয়ে নিয়েছে অনেক ক্ষোভ।

না এ হতে পারে না,ও শুধুই আমার,আমি ছাড়া অন্য কেউ ওর জীবনে না ছিলো আর না আসবে,আমি তা হতে দিবো না।
মনে মনে কঠিন কোনে প্রতিঙ্গায় আবদ্ধ হয়ে চলে গেলো সে রমনী সেখান থেকে।

আয়ান তখন হাসপাতালে চলে এসেছিলো লোকটার কথা শুনে,মাথায় খনিকে যে রাগ চেপেছিলো হয়তো তা নামাতে,তখনি দেখলো আদৃত আঁখি বাসে চড়ছে আর তারপর ওদের পিছু নিতে লাগলো,ওরা যেখানে যেখানে ঘুরলো আয়ানও ওদের ফলো করলো সে জায়গাগুলোতে,তখন আদৃত আর আঁখির ওভাবে ঘুরে বেড়ানো বার বার আঘাত করেছে আয়ানের মনে,কখনো যে আদৃতের জায়গায় আয়ান থাকতো,যখনি আয়ানের মন খারাপ হতো আঁখি ওকে নিয়ে বেড়িয়ে পরতো তারপর এভাবেই গন্তব্যহীন হয়ে ঘুরে বেড়াতো ওকে নিয়ে যা নিমিষেই মন ভালো করে দিতো আয়ানের,তবে আজ নিজের জায়গায় আদৃতকে দেখে মোটেও মেনে নিতে সক্ষম হতে পারছে না আয়ানের হৃদয়, তবে কি আদৃত ওর জায়গা নিয়ে নিলো আঁখির জীবনে,আঁখিকে কি তবে হারিয়ে ফেললো আয়ান ভাবনাটা হৃদয় কাঁপালো ওর সেই ভাবনার পরিনামে আর দুদিক না ভেবেই আয়ান তেড়ে গিয়ে আদৃতের নাক বরাবর একটা ঘুষি মেরে বসলো,আদৃত আর আঁখি দুজনেই হতবাক হলো আয়ানের এমন কান্ডে, আয়ান আবারও আদৃতকে মারতে গেলে এবার আদৃত ওর হাত ধরে নিয়ে নিজে একটা বসিয়ে দিলো আয়ানের নাক বরাবর,তারপর দুজনের মধ্যেই লড়াই শুরু হলো, কেউ কারো থেকে কম যাচ্ছে না আঁখি অনেক করেও দুজনকে থামাতে পারছে না অবশেষে আঁখি আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ওর গাল বরাবর বসিয়ে দিলো কড়া একটা থাপ্পড়।নিবোর্ধের মতো প্রতিক্রিয়ায় এবার বললো আয়ান।

ওর জন্য তুমি আমার গায়ে হাত উঠালে আঁখি?

বেশ করেছি,জিনিসটা অনেক আগে করার দরকার ছিলো আমার।হাউ ডেয়ার ইউ?সাহস হয় কি করে আপনার উনার গায়ে হাত তোলার।

সেই থাপ্পড়ের থেকেও এই কথাটা আয়ানের মনে জোড়ালো প্রহার করলো,আঁখির পানে ছলছল চোখ স্থির রেখে মৃদু কন্ঠে বললো আয়ান।

আমি ওর গায়ে হাত তুলেছি দেখে এতো খারাপ লাগছে তোমার?এতো ভালোবেসে ফেলেছো ওকে?

হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ ভালোবেসে ফেলেছি, এতে আপনার কি? আপনি যাকে ইচ্ছে ভালোবাসবেন,বিয়ে করবেন আর আমি তা করলে দোষ।আমি যাকে ইচ্ছে বিয়ে করি ভালোবাসি এতে আপনার কি?কে হন আপনি আমার কে হন?আমি ভালোবাসি ড.আদৃতকে আপনার কি তাতে বলেন?বলেন না দাঁড়িয়ে কেনো আছেন বলেন?শান্তি হয় নি বিয়ে করে সংসার পেতে? কেনো পিছন পড়ে আছেন আমার?কেনো? কি চাই আমার কাছ থেকে আপনার বলেন?আনসার মি।

চিৎকার করে কথাগুলো বলে আঁখি আবারও এগিয়ে যাচ্ছে আয়ানের দিকে আদৃত আঁখির অবস্থা আন্দাজ করতে পেরে ওকে আটকে নেয় আঁখি যে নিজের আয়ত্ত্বে নেই সেটা বুঝতে সক্ষম হলো আদৃত।

মিস আঁখি কি করছেন আপনি এসব?শান্ত হন প্লিজ।

ছেঁড়ে দিন আমাকে ড.আদৃত,আজ আমি ওর কাছ থেকে জেনেই ছাড়বো কেনো আমার আগ পিছন ঘুরে ও, কি চাই ওর আমার কাছ থেকে আর?ছাড়েন আমায়। আমাকে ছাড়েন নইলে ওকে বলেন চলে যেতে, নয়তো আমি কি করবো তা আমি নিজেও জানি না।

আয়ান আর সেখানে দাঁড়াতে পারলো না,এখনও যে আঁখি আদৃতের বাহুডোরে আবদ্ধ পারলো না আর এসব মেনে নিতে উল্টো পায়ে স্থান ত্যাগ করলো তবে চোখের জল গড়িয়ে পড়া আটকাতে ব্যার্থ হলো।
_________________

আয়ান নিরাশ হয়ে চলে আসছে বাড়িতে, মাহি এখনও ফিরে নি,হঠাৎ ওর ফোনে মেসেজ আসলো মাহির,মেসেস টা অপেন করলো আয়ান।

আয়ান আমি বাচ্চা এবোর্ট করেছি,শরীর খারাপ আমার তাই মম ডেডের কাছে চলে এসেছি শরীর ভালো হলে বাড়ি চলে আসবো।

মেসেটা পড়ে মাথায় রক্ত চড়লো আয়ানের,আঁছড়ে মারলো ফোনটা দেয়ালে,যার ফলস্বরূপ খান খান হয়ে ফোনটা ভেঙে পড়লো ফ্লোরে।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here