মন পিঞ্জর পর্ব ২৩ +২৪

0
933

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_২৩

আয়ান রেডি হচ্ছিলো হাসপাতালে যাবার জন্য তখনি ওর সুন্দরী রমনির মধ্যে অল্প প্রেমানুভুতি জেগে উঠলো যার ফলস্বরূপ ও আয়ানকে পরম আবেশে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো,তারপর নেশালো কন্ঠে বললো।

আজ অফিস না গেলে হয় না বেবি?চলো না আমি তুমি মম ডেড আর রনি মিলে বাইরে কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসি।

আয়ান স্বাভাবিক ভাবে মাহিকে নিজের থেকে ছাড়ালো তারপর বললো।

দেখো মাহি তোমার যেখানে ইচ্ছে যাও,যা ইচ্ছে তাই করো আমাকে এসবে টেনো না,আমার কাজ আছে।

শুধু কাজ নিয়ে পড়ে থাকলে হয় না কি বেবি?

তুমিই তো পরশুদিন বললো সারাদিন বাড়িতে পড়ে থেকে কি লাভ কাজে যাওয়াই ভালো,তবে তাই করছি।

আয়ান কথাগুলো বলে চলে গেলো।

আয়ান এমন বিহেইব করছে কেনো আমার সাথে?এই আয়ানকে নিয়ে কোনো বিশ্বাস নেই,আট বছর আঁখির সাথে থেকে ওকে ছাড়তে সময় নেয় নি তবে আমাকে ছাড়বে না তার কি গ্যারান্টি,নাহ এভাবে হবে না আমাকে যা করার খুব জলদি করতে হবে।

বড় করে দেয়ালে টাঙানো আদৃতের একখানা ছবি আর তার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে শাড়ি পরিহিতা এক রমনি,চোখ দিয়ে শ্রাবনের ধারা বয়েই চলেছে ওই রমনির,আলতো হাতে উপচে পড়া জল মুছে নিলো অতপর ব্যাথার্থ কন্ঠে বলতে লাগলো।

আর পারছি না আদৃত,আর না,জানি না তুমি ক্ষমা করবে কি না, তবে আমিও তার প্রাশ্চিত্যে কোনো কমতি রাখবো না,তুমি আমার ছিলে আর শুধু আমারই থাকবে আদৃত।

_____________

সকাল থেকে একটা কথা বলে নি আদৃত আঁখির সাথে,এমনকি ওর দিকে তাকায়ও নি,এদিকে আঁখি মেনে নিতে পারছে না আদৃতের এমন অভিমান,মনটা বড্ড খচখচ করছে ওর,অনেকবার আদৃতের সাথে কথা বলতে চাইলেও আদৃত তেমন একটা আগ্রহ দেখায় নি,এদিকে আঁখি মনে শান্তির দেখা পাচ্ছে না,কি করবে কিছু ভেবেও পাচ্ছে না।

ক্লাস শেষে আদৃত নিজের কেবিনে বসে ছিলো তখনি আঁখি ওর কেবিনে প্রবেশ করলো মুখে খনিক বিরক্তির ছাঁপ নিয়ে,এমনকি ঢোকার আগে আঁখি দরজা নকও করে নি,আঁখির এহেন কান্ডে আদৃতও চেহারায় বেশ বিরক্তি নিয়ে বললো।

এই যে মিস আঁখি আপনি নক না করে ঢুকলেন যে?

বেশ করেছি, আপনি সারাদিন ধরে এভাবে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলে আমি কি করবো বলেন?

আমি মুখ কোথায় ফুলালাম,আমি স্বাভাবিক আছি আপনি চলে যান।

যাবো আমি তবে এর আগে আপনাকে আমার সাথে ভালো করে কথা বলতে হবে।
দেখেন ড.আদৃত আমি জানি আমার তখন এমনটা বলা একদম ঠিক হয় নি,আসলে কালকে আয়ান হঠাৎ এমনভাবে আমার পাশে এলো যে মুহুর্তটা আমিও কেমন মেনে নিতে পারি নি,তখন কোনো অঘটন না ঘটলেও ওই ক্ষনের তিক্ত অনুভূতি আমার মেজাজটাও খারাপ করে রেখেছিলো তাই তখন আপনাকে এমনটা বলে দিলাম,আপনার যথেষ্ট অধিকার আছে আমাকে ভালো আর খারাপরার মধ্যে পার্থক্য বুঝিয়ে দেওয়ার,বন্ধুত্বে এতোটুকু অধিকার তো থাকেই, তা তো আর আলাদা করে দিতে হয় না,নিয়ে নিতে হয়,আর খুব ভালো না হলেও বন্ধুত্ব নামক একটা সুন্দর সম্পর্ক তো আমাদের মধ্যে সৃষ্ট হয়েই গেছে,তাই প্লিজ আপনি আর ওটা নিয়ে মন খারাপ করে থাকবেন না,ক্ষমা করে দিন আমায়, সরি।

আদৃত এবার উঠে আসতে আসতে বললো।

দেখেন মিস আঁখি আপনার ওখানে কোনো দোষ নেই আমারই এতোটা অধিকারত্ব দেখানো ঠিক হয় নি।

আলবাদ আপনার অধিকার আছে, কেনো থাকবে না?যে ভালো চায় তার ভালো রাস্তাটাও দেখানোর যথেষ্ট অধিকার থাকে বুঝেছেন।প্লিজ আর রাগ করে থাকবেন না।

ইট’স ওকে বার বার সরি,প্লিজ এগুলো বলবেন না আপনার মতো মেয়েকে কারো কাছে এভাবে অনুতপ্ত হওয়া কেমনটা দেখায়।
আলতো হেসে বললো আদৃত।

দোষ করলে তা মেনে নেওয়ার আর তা শুধরানোরও ক্ষমতা আঁখি রাখে।

সে বিষয়ে আমারও কোনো সন্দেহ নেই,ওকে চলি।

কথাটা বলে আদৃত চলে যেতে নিলে আঁখি খপ করে আদৃতের হাত ধরে নিলো।

আয়ান কেবিনে বসে একধ্যানে ভাবছে আঁখির কথা,ওর বড্ড লোভ হচ্ছে আঁখিকে আবার নিজের কাছে পাওয়ার,ওর সাথে জীবনে আরও কিছু সুন্দর মুহুর্ত কাটাতে বড়ই মরিয়া হয়ে উঠছে আয়ানের মন,আঁখির সাথে থাকাকালীন কখনোই যে আয়ানের মন খারাপ থাকতো না,ওর জীবনের সব মুহুর্ত আঁখি নিজের রঙে রঙিন করে দিতে,সেই রঙিন জীবন ফিরে পাবার একটা তেজি লোভ আঁকড়ে ধরলো এবার আয়ানকে।

এদিকে আঁখি আদৃত……

আপনি কোথাও যাবেন না,আপনাকে আমাকে ক্ষমা করতেই হবে,এতো ঘাড়ত্যারা কেনো আপনি?কেউ সরি বলছে কিন্তু তাকে সরি না বলতেও বলছেন আর তাকে মাফও করতে চাইছেন না।

আরে মিস আঁখি আমি আপনার সাথে আর রেগে নয় ছাড়েন আমায়।

ছাড়বোনা আমি,আপনি রেগে নয়তো চলে যাচ্ছেন কেনো?

মিস আঁখি আমার একটা সার্জারী আছে তাই যাচ্ছি।

এবার আঁখি নিজের জিহ্বায় একটা আলতো কামড় দিয়ে আদৃতের হাত ছেড়ে দিলো।আদৃত অধরের কোনে মৃদ্যু হাসি ফুঁটিয়ে বললো।

আপনিও না।কখনো কখনো একদম বাচ্চামো অবস্থা করেন।

আর আপনি তো কোনো অবস্থা করতে জানেনই না,পৃথিবীতে এসেছেন শুধু কাটাকাটি করতে।

এবার ভ্রুযোগল কুঁচকে বললো আদৃত।

মানে?

মানে আর কি হাসতে টাকা লাগে না,তাই কৃপণতা ছেড়ে

ঠোঁট বাকিয়ে হেসে নিবো তাই তো।

আঁখির বাকি কথা আদৃত পুরো করে ফেলে যার ফলাফলে দুজন অল্প থেমে খিক করে হেসে দেয়।

এই হাসিটাই তো চাইছিলাম আমি।

আপনি পারেনও বটে……..তবে আসি।

কথাগুলো হাসিমুখে বলে চলে গেলো আদৃত,আঁখিও হাসতে হাসতে স্থান ত্যাগ করলো।
_________________

আদৃত হাসপাতালে আছে আঁখি রুমে বসে পড়াশুনা করছিলো তখনি হঠাৎ ওর মনে পড়লো ও ওষুধ খায় নি উঠে গিয়ে ওষুধ খেতে খেতে গতকালকের সেই রিপোর্টগুলোর কথাও ওর মনে ধরা দিলো,যেগুলো ছবি তুলে আনলেও দেখার কথা ভুলেই গেছিলো আঁখি,তাই আর দুদিক ভাবলো না চট করে ফোনের গ্যালারিতে ঢুকে পরলো,অতপর ছবিগুলোতে যা দেখলো তা দেখার পর আঁখি নিজের চোখে বিশ্বাস করার মতো অবস্থায় আর থাকলো না।
রিপোর্টগুলো যে আরোহীর লাশ শনাক্তকরণ রিপোর্ট,যাতে স্পষ্ট লিখা ডিএনএ মেচ, এই যে সেই একই রিপোর্ট যার জলন্ত এক টুকরোর অবশিষ্ট অংশ আঁখির কাছে আছে তবে রিপোর্ট দুটির মধ্যে একটাই পার্থক্য, ওই রিপোর্টে ডিএনএ মেচ হয়নি আর এটাতে স্পষ্ট মেচ হয়েছে তাই দমশ্যমান।তবে কোনটা আসল।যদি এটা আসল হয়ে থাকে তবে আদৃত সেদিন কিসের রিপোর্টগুলো জ্বালিয়ে দিলো,ওই টুকরাটাতে ডিএনএ মেচ না হওয়ার কথা কেনো লিখা থাকবে।

এটা কি দেখছি আমি,তবে কি আরোহী মারা যায় নি?কিন্তু বেঁচে আছে তারও তো কোনো প্রমাণ নেই,আর আদৃত স্যার এসব কি করছেন? কি লুকাতে চাইছেন?উফ কিছুই মাথায় ঢুকছে না,না আর ভাবতে পারছি না,হোক না হোক সেদিন যে ডায়রি,এলবাম আর রিপোর্টগুলো ড.আদৃত আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নিয়েছিলেন সেগুলাতেই হয়তো কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে, আমার সেগুলো খোঁজা উচিৎ।

তারপর আঁখি ওগুলার খোঁজে আদৃতের কাবার্ডের কাপড়ে হাত দিতে গেলেই আদৃত রুমে প্রবেশ করে।
আঁখিকে ওর কাপড়ে হাত দিতে দেখে ললাটে সন্দেহের ভাজ পড়ে আদৃতের, ওকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে এবার।

আপনি ওখানে কি করছেন মিস আঁখি?

হঠাৎ আদৃতের কন্ঠ শুনে হকচকিয়ে উঠে আঁখি, পরিস্থিতির বেগ সামলাতে আমতা কন্ঠে বলে উঠে।

ওই আপনার কাপড় ভাজ করছিলাম আরকি।

আমি বলেছিলাম না এসব কাজ আপনাকে করতে হবে না।

আদৃত এসে কাভার্ড টা লাগাতে লাগাতে গম্ভীর কন্ঠে বললো কথাটা।

আঁখি আর কিছু বললো না ওকে,চুপচাপ গিয়ে পড়তে বসলো।আদৃতও অল্প ক্ষনের জন্য সন্দেহের দৃষ্টি ওটল রাখলো আঁখির উপর।

আয়ান বিছানায় হেলান দিয়ে ল্যাপটপ টিপছিলো তখনি মাহি একটা বেশ উন্মুক্ত নাইটি পড়ে এসে ওর কোলে বসে গেলো।এতে বিরক্তি ভাব ফুঁটে উঠলো আয়ানের চেহারায়।

কি হয়েছে এমন করছো কেনো?দেখছো না কাজ করছি?

হুম আমিতো তাই দেখছি তবে তুমি কি দেখছো না রাত কটা বাজে,এখন তো এসব কাজের টাইম না বেবি এখন তো রোমান্সের টাইম।

নেশাক্ত কথাগুলো বলে মাহি আয়ানের অধরের পানে এগিয়ে যেতে নিলে আয়ান নিজের মুখখানা সরিয়ে নেয় তারপর ওকে স্বাভাবিকভাবে নিজে থেকে সরায়।

আমার আজকে মুড নেই।

মুড নেই বললে হয় না কি,আসো না বেবি।

বলি নি মাহি মুড নেই,জোর করো না তো প্লিজ।

হুম আমিও পুরাতন হয়ে গেছি না?আমাকে আর তোমার ভালো লাগছে না বুঝতে পারছি,এ্যা হে হে।

জানো তোমার এসব ন্যাকামি আমার একদম ভালো লাগে না আর,তাই ওগুলা একটু কম করো প্লিজ।

মাহির ন্যাকা কান্নায় আয়ান বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
মাহি এবার কান্না মুছে রহস্যময়ী ভাব নিয়ে বলে উঠে।

নাহ, পানি দেখছি মাথার উপর দিয়ে গড়াতে নিয়েছে,তা তো হতে দেওয়া যাবে না আর।
_____________________

অনেকটা অন্ধকারে চুপি চুপি ঘরে ঢুকছে কেউ যা স্পষ্ট গেলো সায়েদার নজরে,সায়েদা দেখতে পেলো সে লোকটা তাজবীর।

আরে এই পাজিটা এখানে আবার কি করছে?তাও এতো রাতে লুকিয়ে।

জবাবটা জানতে সায়েদা এগিয়ে যায় ওর দিকে, এদিকে তাজবীরের অসাবধানতাবশত দুজনের মধ্যে ধাক্কা লাগে,যাতে সায়েদা ফ্লোরে পড়ে যায়।

আরে মিস বাচ্চা তুমি?

এই যে পাজি লোক আপনি আমাকে প্রথমত বাচ্চা বলবেন না,আমি মোটেও বাচ্চা নই,আর দ্বিতীয়ত আপনি এতো রাতে আমাদের ঘরে কি করছেন তাও চুরের মতো লুকিয়ে।

এবার খনিক স্টাইল নিয়ে তাজবীর বললো।

ও হ্যালো মিস, তাজবীর তাওয়াফ খান পলক কখনো চোর হতে পারে না,সো তোমার তা বুঝে নেওয়া উচিত ছিলো আমার নিশ্চয়ই কোনো কারন থাকতে পারে লুকিয়ে আসার।তবে তোমার মতো টিউবলাইট,গাঁধা মেয়ে এসব কি করে বুঝতে সক্ষম হবে।

এই যে আপনি কিন্তু এখন অতিরিক্ত করছেন,প্রথমত আপনি আমাকে বাচ্চা বললেন আমি তেমন কিছু বলি নি এতে,এখন আপনি আমাকে টিউবলাইট, গাঁধা বলছেন আমি তা মোটেও মেনে নিবো না,আমি না আপনাকে।

আর কিছু বলার আগেই তাজবীর ওর মুখ চেঁপে ধরে।
আরে আরে করে কি টিউবলাইটটা,ধরা খাইয়ে ছাড়বে দেখছি,এই যে তুমি আস্তে কথা বলতে পারো না।

সায়েদা এবার তাজবীরের কাছ থেকে নিজেকে ছাঁড়িয়ে ওর হাতে দেয় একটা জোরালো কামড় বসিয়ে।

আহহহহহ।

আরে সায়েদা কি করছো তুমি? ওকে কাঁমড়াচ্ছো কেনো?

দেখ না আয়েশা পাগল মেয়েটা আমায় কামড়ে দিলো,আহ।

ইশ,তাজবীর ভাইয়া তুমি ঠিক আছো তো?আসলে ও বুঝে নি তো তাই এমনটা করেছে হয়তো।

বুঝবে কি করে গাঁধা একটা।

আপনার সাহস কি করে হয় আমায় গাঁধা বলার?

আরে আরে সায়েদা ঝগড়া ছাড়ো আর আমার কথা শুনো,উনি এখানে একটা কারনে এসেছেন উনাকে দরজা আমি খুলে দিয়েছিলাম।

………………

আঁখি রুমে বসে চিন্তা করছে কি করে আদৃতের সেই এলবাম, ডায়েরি আর রিপোর্টগুলোর সন্ধান পাওয়া যাবে তখনি আদৃতের নাম্বার থেকে ওর ফোনে একটা কল আসে,আঁখি ফোনটা রিসিভ করে।

মিস আঁখি একটু ছাঁদে আসেন আপনার সাথে দরকার আছে।

কথাটা বলে ফোনটা কেটে দিলো আদৃত।

আঁখি কিছুই বুঝে উঠতে সক্ষম হলো না আদৃতের ভাবসাব,আর কিছুই চিন্তায় না এনে ছাঁদের দিকে রওয়ানা হলো সে।

চলবে…………..

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_২৪

আজ আকাশে পরিপূর্ণ চাঁদ,বিস্তার এক মাঠে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে আয়ান হাত পা ছড়িয়ে,এক হাতে আঁখির ছবি,একধ্যানে তাকিয়ে আছে আঁখির ছবির পানে,চোখের পলকই ফেলছে না,আঁখিকে দেখতে ওর বড্ড ভালোই লাগছে আজ,ঠোঁটের কোনে একটা ভালোলাগার হাসিও ঝুলিয়ে রেখেছে,খানিকক্ষণ নিরবতা পালনের পর এবার মুখে বুলি ফুটিয়ে আয়ান বলে উঠলো।

শুভ জন্মদিন আঁখি,গত বছর এমন ক্ষনে সাথে ছিলো কিন্তু তখন আমার মনে ছিলো না তোমার জন্মদিনের কথা আর যখন আজ অনেক দূরে আছো তখন এই কথাটা মন থেকেই যাচ্ছে না, জানিনা কেনো।

দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করলো আয়ান কথাটা বলে,ওর কথায় ওর মন পিঞ্জরের ব্যাথার্থ অজানা একটা অনুভূতি স্পষ্ট প্রকাশ পেলো।

খুঁটখুঁটে অন্ধকার ছাঁদে প্রবেশ করে আঁখি বড়ই হতভম্ব হলো,আদৃত ওকে ডেকেছে ঠিকই কিন্তু কোথাও ওর ধিদ্বার করতে পারছে না আঁখি,আঁখি কিছু বুঝতে সক্ষম না হয়ে আদৃতকে ডাকতে শুরু করলো,হঠাৎই আঁখির চারিদিকে লাইট জ্বলে উঠলো পিছন থেকে বেলুন ফাঁটার শব্দ এর সাথে কানে ভেসে এলো অনেকের একসাথে বলে উঠা শুভ জন্মদিন ধ্বনির ফুলঝুরি , আঁখি পিছন তাকিয়ে দেখে আয়েশা, সায়েদা, তাজবীর, নোমান, মিস্টার এন্ড মিসেস আমির আর ইশা চৌধুরী,আর সবার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে আদৃত।পুরো ছাঁদ বেলুন আর ফুলে খুব সুন্দর করে সজ্জিত, মাঝখানে স্টেজ বানানো আছে আর সেখানে একটা ছোট টেবিল রাখা,স্টেজটাও খুব সুন্দর করে সজ্জিত আছে আর সেই টেবিলখানাও।
টেবিলের ঠিক মধ্যেখানে আঁখির নামের কেক রাখা,সবাই এবার আঁখিকে নিয়ে হৈ-হুল্লোড় শুরু করেছে,সবাই ওর জন্য এতোকিছু করেছে দেখে খুশিতে আঁখির চোখে খনিক জল ঝলকালো যা আলতো হেসে মুছে নিলো আঁখি,সবার সাথে নিজেও খুশিতে মেতে উঠলো,অল্পের জন্য জীবনের সব শুন্যতা ভুলে গেলো,সবাইকে কেক খাওয়ানোর পর আয়েশা হঠাৎ চোখ দিয়ে ওকে আদৃতের দিকে ইশারা করলো,আঁখি দেখতে পেলো আদৃত এখনও সবার থেকে দূরে এক সাইডে দাঁড়িয়ে আছে ঠোঁটের কোনে আলতো হাসি ঝুলিয়ে। আঁখি এবার ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে ওকে হাত ধরে ওদের মাঝে টেনে আনলো,তারপর এক টুকরো কেক এগিয়ে দিলো ওর দিকে,আদৃতও তা ফিরিয়ে দিলো না,অতপর নিজেও আঁখিকে কেক খাইয়ে বললো।

শুভ জন্মদিন মিস আঁখি।

ধন্যবাদ ড.আদৃত।

আদৃত এবার জোর করে ঠোঁটের কেনো একটা হাসি ফুঁটালো তারপর উল্টো পায়ে চলে গেলো ঘরের দিকে,আঁখিও যেনো ওর অবস্থা অনেকটা আন্দাজ করে নিলো,আমির চৌধুরী আর ইশা খানও যেনো আদৃতের মনের ভাব অনেকটা আন্দাজ করতে পারলেন যে অনুভুতি উনাদের মনে ব্যাথার্থ ভাবের সৃষ্টি করলো যা উনাদের চেহারায় স্পষ্ট ধরা দিলো,আঁখি ওর পিছন যেতে নিলে সবাই ওকে নিয়ে আবার হৈ-হুল্লোড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো যার ফলস্বরূপ আর ওর আদৃতের পিছন যাওয়া হলো না।

সবাই অনেক আনন্দ উৎসব করে এবার যার যার রুমে চলে গেছে।

আঁখি এবার আদৃতকে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে,বারান্দায় উকি দিলে এক প্রান্তে আদৃতকে বশারত দেখতে পেলো আঁখি,পিলুপায়ে ওর পাশে গিয়ে বসলো,আদৃত চাঁদের পানে তাকিয়ে ছিলো আর ওর চোখ বেয়ে পড়ছিলো কিছু জল আঁখিকে পাশে অনুমান করতেই চট করে সে জল মুছে নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো।তারপর মৃদ্যু স্বরে বললো।

মিস আঁখি আপনি?

হ্যাঁ আমি ড.আদৃত,আপনি তো আমাকে রেখে চলে আসলেন তাই ভাবলাম আমি আপনার পাশে চলে আসি।তা হুট করে সেখান থেকে চলে আসলেন যে, কৃপনতা ছেঁড়ে ঠোঁট বাকিয়ে হাসতে বলবো তাই ভেবে।

আদৃত এবার মুচকি হাসি উপহার দিয়ে বললো।

আসলে তা না, এমনিতেই একটু ভালো লাগছিলো না।

আর সে ভালো না লাগার কারনটা জানতে পারি।অবশ্য যদি আপনি বলতে চান।

আদৃত এবার অল্প সময় থামলো অতপর দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলতে নিলো।

আজকে আরোহীরও জন্মদিন ছিলো,আসলে দাদু আর দিদু আজকের দিনেই ওকে পেয়েছিলেন তাই প্রতিবছর আজকের দিনে ওরও জন্মদিন পালন করা হতো,এজন্যই একটু খারাপ লাগা কাজ করছিলো।বেশি কিছু না।আচ্ছা বাদ দেন এসব চলেন অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়েন।

এবার স্থান ত্যাগ করলো আদৃত,আঁখির মনে আরও প্রশ্নের ঝড় উঠলো।

কি সব হয়ে যাচ্ছে?আরোহী দেখতে ঠিক আমার মতো, ২১ বছর আগে ওকে আজকের দিনেই পাওয়া গেছিলো কেমনটা সন্দেহজনক মনে হচ্ছে সবকিছু, তাছাড়া আরোহী বেঁচে আছে কি না,ড.আদৃত কি লুকোচ্ছেন কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।
__________________

আজ আয়ান অনেক প্রফুল্ল মনে রেডি হচ্ছে,ওর এমন ভাবসাবের কারন তেমন একটা আন্দাজ করতে না পেরে মাহি আয়ানকে প্রশ্ন ছুঁড়লো।

এতো খুশি কেনো আজ তুমি?আর এতো রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছো?

হাসপাতালে যাচ্ছি কেনো?

হুম তবে রোজ তো কতো নরমালি যাও আজকের পোশাক আশাকে মনে হচ্ছে হাসপাতালে আজকে স্পেশাল কোনো ইভেন্ট আছে।

হাসপাতালে না থাকলেও অন্যত্র আছে।বিড়বিড়িয়ে বললো আয়ান।

কি বললে?

আরে ও কিছু না, এতো সন্দেহ করো না তো।

আয়ান আলতো হেসে চলে গেলো,তখনি রুমে ওর শ্বাশুড়ি প্রবেশ করলেন।

কি রে তোর স্বামী দেখি আজ বড় প্রফুল্ল মুডে।

জানি না মা ওর এতো খুশির কারন কি।

আচ্ছা ছাড় এসব, আগে বল কাজ হয়েছে?

হুম পেপারস রেডি শুধু ওকে সাইন করাতে হবে।

গুড মাই চাইল্ড।

ভার্সিটি শেষে আঁখি বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা হলো,আদৃত গাড়ি নিয়ে খাঁড়া আছে তখনি আয়ান এসে ওর হাত ধরে ওকে কোথাও নিয়ে যেতে শুরু করে।

আরে কি করছেন কোথায় নিয়ে যেতে চাইছেন আমায়।

প্লিজ আঁখি একবার চলো তোমার সাথে কিছু জরুরি কাজ আছে,আমি সত্যিই আজকে উল্টাপাল্টা কিছু করবো না,কথা দিচ্ছি চলো না প্লিজ। প্লিজ চলো আসলে একজন অনেক কষ্টে আছেন তোমার সাহায্য দরকার।তোমাকে যেতেই হবে।

কে সে?কি হয়েছে তার?

গিয়ে জানতে পারবে চলো না প্লিজ।

আঁখি প্রথমে যেতে না চাইলেও পরে কি একটা ভেবে আয়ানের সাথে যেতে রাজি হয়ে গেলো।

আয়ান আঁখিকে একটা পার্কে নিয়ে এসেছে,যেখানে ওরা প্রায়ই আসতো দুজন,এই পার্কটাতে ওদের দুজনের অনেক স্মৃতি জুড়ে আছে।কিন্তু আজকে এই পার্কটার রুপই যেনো আলাদা হয়ে গেছে,পার্কটা যেনো আঁখির নামে সেজেছে আজ,পুরো পার্কে একটু পর পর ফুল দিয়ে শুভ জন্মদিন আঁখি লিখা,চারিদিকটাও সুন্দর করে সাজানো হয়েছে আজ।কিন্তু এসব দেখে আঁখি খুশি হওয়ার বদলে অনেকটা রেগে যায় আর বিরক্তিকর চেহারা নিয়ে আয়ানের পানে তাকায়।

এসব কি ড.আয়ান?

কেনো তোমার জন্মদিনের স্যারপ্রাইজ পছন্দ হয় নি?

আপনার মাথা ঠিক আছে তো ড.আয়ান?আপনি আমাকে মিথ্যে বলে এখানে নিয়ে এসেছেন?

সত্য বললে যে তুমি আসতে না।

আর আমাকে কেনো বাধ্যতামুলক আনতে হতো আপনার?এখন আবার এসবের কি মানে?আমার আর আপনার মাঝে কোনো সম্পর্ক রয়ে যায় নি ড.আয়ান বার বার কেনো আপনি তা ভুলে যান,আপনি এখন অন্য কারো স্বামী, আর বউ রেখে অন্য মেয়ের জন্য এমন কিছু প্লান করা একদম অবৈধ, কথাটা কি একবারও আপনার মাথায় আসে নি।

তুমি অন্য মেয়ে কোথায় আঁখি। মাহির আগে তো আমার জীবনে শুধু তোমারই অধিকার ছিলো।

হুম আর মাহি আসার পর তা চলে গেছে যা আর কখনো ফিরে আসবে না।

কথাটা বলার পর আঁখি এবার চলে যেতে নিলে আয়ান খপ করে ওর হাত ধরে নেয় আর খনিক করুনতা ভাব নিয়ে বলে।

প্লিজ যেও না,একটু সময় থাকা যায় না?

একদম না, ছাড়েন আমার হাত।

আঁখি টান দিয়ে হাত ছাঁড়িয়ে নিয়ে চলে যেতে নিলে আয়ান এবার ওকে উদ্দেশ্য করে বললো এমন একটা কথা যেটা শুনে আঁখি থমকে দাঁড়ালো।

বুঝলাম আমার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই তাই আমার পাশে থাকতে চাও না,তবে কোন সম্পর্কের টানে আদৃতের সাথে থাকো?সেটা কি অবৈধ মান্য করা হবে না?
আঁখি এবার স্বাভাবিক ভাবে ওর পানে তাকিয়ে বলে।

আমার আর উনার সম্পর্কের নাম জানতে চান তবে শুনেন উনার সাথে আমার স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক।
শুনেছেন হি ইজ মাই হাজবেন্ড।

কথাটা শুনে আয়ানের যেনো পায়ের তলা থেকে জমি সরে গেলো,পৃথিবী যেনো থমকে দাঁড়ালো ওর,নিজের কানে যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না আয়ানের,কথাটা যে বুকে গিয়ে তীরের মতো লেগেছে,এদিকে উক্ত কথায় সেখানে উপস্থিত অন্য একজনও অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে,সে যে সয়ং আদৃত,আয়ান আঁখিকে এভাবে ধরে নিয়ে আসায় পিছু এসেছিলো আদৃত।

আয়ান এবার স্থিরতা ভেঙে বর্জ্য কন্ঠে ক্ষেপে উঠে আঁখির উপর।

এসব কি বলছো তুমি?তুমি কি করে বিয়ে করতে পারো?তুমি বিয়ে করতে পারো না?আমি জানি তুমি এসব মিথ্যে বলছো।

এটাই সত্য ড.আয়ান,যতো জলদি হয় জিনিসটা মেনে নিবেন আশা করি, চলি।

আঁখি চলে আসে সেখান থেকে, আসতে নিয়ে আদৃতকে সামনে পায়,তবে আদৃতের সম্মুক্ষীন হওয়ার সাহসটা যেনো পায় না তাই পাশ কাটিয়ে চলে যায়।

আদৃত আঁখি গাড়িতে বসে আছে হঠাৎ আঁখি নিরবতা কাটায়।

দুঃখীত ড.আদৃত আমি তখন ওভাবে আপনার নাম ইউজ করেছি,তবে আয়ানকে পিছু ছাড়ানোর আর কোনো উপায় পাচ্ছিলাম না আমি,জানি না কেনো পিছন পড়ে থাকে তাই ওকে পিছন ছাড়ানোর এই উপায়টাই ভালো মনে হলো আমার,আমি আসলেই দুঃখীত।

যে যে ভাষায় বুঝে তাকে সে ভাষাতেই বুঝানো বুদ্ধিমানের কাজ মিস আঁখি, আপনি মোটেও কোনো ভুল করেন নি,আমার দিদুর জন্য আপনি এতো বড় ট্যাগ নিতে পারলেন নিজের কোনো ক্ষতির দিক বিবেচনা না করে আর নিজের জন্য কিছু করতে গেলে এতোটা ভাবতে কেনো হবে আপনাকে?কৃপনতা ছাড়েন আর ঠোঁট বাকিয়ে হেসে ফেলেন।

আদৃতের কথায় আঁখি আলতো হাসলো আর বললো

আমার ডায়লগ কিনা শেষমেষ আমার উপরই এলো।

হুম।
__________________

এই মাত্র আদৃত বেড়িয়েছে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে, এটাই সুযোগ আঁখিকে ওই ডায়েরি আর রিপোর্টগুলো খুঁজতে হবে,তাই আঁখি খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো,সারা কক্ষ খুঁজে নিয়েছে কিন্তু কোথাও ওসবের কোনো চিহ্নও পেলো না,আঁখি এবার অনেকটা ক্লান্ত হয়ে বসলো তখনি হঠাৎ মনে হলো বালিশের কাভার খুলে আর বেডশিট উঠিয়েও দেখে নেওয়া উচিত,আঁখি উঠে গিয়ে তাই করলো,কিন্তু কিছুই পেলো না,আঁখি এবার মনগড়া সন্ধানে কাবার্ডের উপরিভাগ দেখার কৌতুহল মনে পোষন করে বেশ বড়সড় একটা টুল এনে তাই করলো,যা খুঁজছিলো তার সন্ধান না পেলেও আরেকটা জিনিসের সন্ধান আঁখি পেয়ে গেলো,সেখানে একখানা কাগজ রাখে পরম যত্নে একটা ফাইলে পুরে,ফাইলটা হাতে নিয়ে কাগজটা পড়ে আঁখি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো এইবার।

এটা তো ডিভোর্স পেপার,ডেইট অনুযায়ী আরোহী মারা যাবার ঠিক ১ মাস আগের,এর মানে আরোহী মারা যাবার আগে ওদের ডিভোর্স হয়ে গেছিলো,কিন্তু ঘরে তো কারো মুখেই তার কোনো সুত্র শুনি নি,তবে কি সে ব্যাপারে কেউ জানে না,না কি ওরা জানায় নি?ইশ……আদৃত স্যার কি সব লুকিয়ে যাচ্ছেন,এই আরোহীর আসল সত্য কি আমাকে তা জানতেই হবে।

সার্জারী শেষে আদৃত বসে ছিলো নিজের কেবিনে তখনি মনে পড়লো কিছু কথা যা মনে হতেই আদৃতের মনে ধরা দিলো অল্প দুঃশ্চিতার রেশ।

এ কি করেছি আমি,সবকিছু সরিয়ে নিলেও কাবার্ডের উপর থেকে ডিভোর্স পেপার কি করে সরালাম না,যতোটুকু জানি মিস আঁখি কিছু একটা সন্দেহ তো মনে তৈরি করে নিয়েছেনই আর উনাকে যতোটুকু যানি এক জিনিসের পিছন পড়লে তার শেষ না দেখে শান্ত হবেন না।

আয়েশা নোমানের চিন্তায় বিভোর ছিলো তখনি দরজায় নক পড়লো ,উঁকি মেরে তাকিয়ে দেখলো সয়ং নোমান,হৃৎস্পন্দগুলো খনিকে ছুঁটতে শুরু করলো ওর,নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললো।

আরে নোমান সাহেব আপনি?আসেন।

এসে ডিসটার্ব করলাম না তো?

আরে একদম না,ওই আসলে সায়েদা কালকে বলছিলো আপনার নাকি বই পড়তে অনেক পছন্দ, আমারও বই পড়তে অনেক ভালো লাগে,আজকে আসার সময় একটা বইমেলায় ঢুকেছিলাম সেখান থেকে কিছু বই এনেছি ভাবলাম আপনাকেও দুটো দিয়ে যাই।আশা করি বইগুলো আপনার অনেক ভালো লাগবে।

কেনো না বই আমার অনেক পছন্দ, ধন্যবাদ আপনাকে।

হুম,ঠিক আছে চলি,বইগুলো পড়ে জানাবেন কেমন লেগেছে।

অবশ্যই।

শুভ রাত্রি।

শুভ রাত্রি।

নোমান চলে গেলো আর আয়েশা বইগুলোকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ওগুলাকে অনুভবে নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো,ওগুলাতে যেনো নোমানের ঘ্রাণ মিশে আছে,যা আয়েশার মনে প্রেমানুভুতির সৃষ্টি করছে, ঠোঁটের কোনে নরম আর লজ্জাময়ী এক ফালি হাসি ফুঁটে উঠার কারন হয়ে উঠেছে।

চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here