#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_১৯
আয়ান তৎক্ষনাৎ আয়েশার গাল বরাবর নিজের হাতে একটা তেজি প্রহার করলো যাতে আয়েশা ছিটকে গিয়ে ফ্লোরে পড়লো,মিরা রাহমান ছুটে গিয়ে ওকে ধরলেন।
তারপর আয়ান গর্জিয়ে বলতে লাগলো।
তুই এতোটা নিচে নেমে যাবি আমি কখনো ভাবি নি আয়েশা,তোকে তো আমার বোন বলতেও লজ্জা হচ্ছে আমার।
ভাইয়া বিশ্বাস করো আমি এমন কিছু করি নি,ঐ লোকটা মিথ্যে বলছে,ওসব কিছু মাহির কারসাজি।
আয়েশা উঠে এসে অসহায় ভঙ্গিতে আয়ানকে এসব কথা বললে আয়ান আবারও ওর অন্য গালে প্রহার করে ওকে ঠিক আগের ন্যায় ফ্লোরে ফেলে দেয়,তারপর এগিয়ে গিয়ে ওর চুল মুঠো করে ওকে উঠিয়ে টানতে টানতে ওকে ওর রুমের দিকে নিয়ে যায় আর আঁছড়ে ফেলে ওকে রুমের ভিতর।
আজ থেকে তুই এখানে বন্ধি থাকবি,দুই দিনের মধ্যে আমি তোর বিয়ের ব্যবস্থা করছি,কথাটা বলে আয়ান দরজা বন্ধ করে দেয়,এদিকে আয়েশা দরজা খোলার প্রাণপন চেষ্টায় নিয়োজিত অবস্থায় চিৎকার করে করে বলছে।
আমি কিছু করি নি ভাইয়া,তুমি এমন করো না,আমি পড়ালেখা করতে চাই, আমি এখন বিয়ে করতে চাই না,তুমি আমায় বিনা দোষে এতোবড় শাস্তি দিয়ো না ভাইয়া।
এদিকে কে শুনে কার কথা,মিরা খানও ছেলের কাছে আর্তনাদের উপর আর্তনাদে ফেঁটে পড়ছেন তবে সেসব কথা পুরোই অযুক্তিকর মনে হচ্ছে আয়ানের কাছে,আয়ান চিৎকার করে মিরা রাহমানকে উদ্দেশ্য করে বললো,আয়েশা এ রুম থেকে বেরুবে না,দুদিনের মধ্যে ওর বিয়ে,এই সমাজে আমার একটা সম্মান আছে আর আমি চাই না আমার সম্মান তোমাদের জন্য ধুলোয় মিশে যাক,তাই ওকে ওই রুম থেকে বের করার কথা ভেবো না মা,নইলে আমাকে অনেক বড় কোনো স্টেপ নিতে হবে যেটা হয়তো তোমাদের দুজনের জন্য ভালো হবে না।
এদিকে ওই ছেলেটাকে আর কিছু না বলেই ছেঁড়ে দিলো আয়ান এই ভাবনায় যে দোষটা তো ওর বোনের নিজের,এটা টেনে বের করতে গেলে নিজে অসম্মানিত হতে পারে তাই।এদিকে আয়ানের বুকে ল্যাপ্টে থেকে এখনও ন্যাকা কান্না করছে মাহি,আর আয়ানের অগোচরে ঠোঁট বাকিয়ে হেসেই যাচ্ছে।
মিরা রাহমান আর কোনো উপায় না পেয়ে আয়েশার দরজার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন,উনার কি আর করার আছে ছেলের বিরুদ্ধে গিয়ে দরজা খুলে দেওয়ার ক্ষমতাও যে উনার নেই,আজকাল বাচ্চারা বড় হয়ে গেলে যে মা-বাবাকেও তাদের মতে চলতে হয় উক্ত অনুভুতি অনেক পীড়া দান করছে উনাকে।
বেশ খনিক্ষন পর কলিংবেলের শব্দ কানে ভেসে এলো আয়ানের,আয়ান উঠে গেলো দরজা খুলতে, কিন্তু দরজা খোলে এমন কাউকে দেখতে পাবে তা কখনো অনুমানেই আনে নি সে, সয়ং আঁখি দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে।উক্ত দৃশ্য মেনে নেবার সুবাদে আয়ান অবাকত্ব নিয়ে এবার আঁখির পানে প্রশ্ন ছুঁড়লো।
আঁখি তুমি?
হ্যাঁ আমি,আসতে তো কখনো চাই নি তবে আসতে বাধ্য করলেন আপনি।
আঁখি কথাটা বলার পর ওর সাইড কাটিয়ে ভিতরে চলে গেলো,তারপর সোজা গিয়া মিরা রাহমানকে বসা থেকে উঠালো উনার চোখের জল মুছে দিয়ে উনাকে স্বাভাবিক করলো তারপর আয়েশাকে বের করলো,আয়েশার গালে যে আয়ানের আঙ্গুলের দাঁগগুলো স্পষ্ট ফুঁটে আছে যা এতোক্ষণে কালো বর্ণ ধারন করেছে,উক্ত হিংস্রতা আঁখির মন কিছুতেই মেনে নিতে বাধ্য হতে পারলো না,বরং নিমিষেই রাগ চড়ে বসলো ওর মাথায়,এদিকে আয়ান ওকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো।
এসব তুমি কি করছো আঁখি?তুমি জানো ও কি করেছে?
এবার আঁখি বজ্র কন্ঠে ফেঁটে পড়লো আয়ানের উপর।
আমি সব শুনেছি,ও কি করেছে আর আপনি ওর সাথে কি করেছেন।আপনি অপরিচিত একটা ছেলের কথায় এসে কোনো প্রমাণ ছাড়াই আয়েশার উপর হাত উঠালেন, কোন সাহসে?
ও আমার বোন আর ওর সাথে আমি যাই করি এতে তোমার বলা মানায় না আঁখি।
হুম রাইট মি.আয়ান রাহমান,আপনি চাইলে সবার জীবনে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন কিন্তু কেউ আপনার জীবনে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না,তাই না?শুনে রাখেন ড.আয়ান,একটা প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের উপর আপনি কোনো উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া হাত উঠাতে পারেন না ওর সাথে কোনো কিছু নিয়ে জোরজবরদস্তি করতে পারেন না,অনেক কিছু ভেবে আমি আজকে আপনার বিরুদ্ধে আইনি স্টেপ নিলাম না,তবে এটা ভাববেন না ভবিষ্যতে ছেঁড়ে দেবো।
দেখছো বেবি ওই আঁখি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে তোমাকে হুমকি দিচ্ছে, আমার তো মনে হয় ওই আঁখিই আয়েশাকে এসব কুপথে যাওয়ার শিক্ষাটা দিয়েছে।
কথাটা শুনেই আঁখি আর দুবার ভাবলো না,এগিয়ে গিয়েই ঠাস করে একটা বসিয়ে দিলো মাহির গালে,যাতে মাহি মুখ থুবড়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো এবার আঁখি ওর চুল ধরে উঠিয়ে বলতে লাগলো।
কে কাকে কি শিক্ষা দিচ্ছে,কে কি করাচ্ছে তা আমি চাইলে ক্ষনিকে প্রামাণ করে দিতে পারি,তবে তা আমি করবো না কারন আল্লাহর খেলা যে বড়ই অদ্ভুত হয়,আর তোর আর তোর ওই বেবির ভাগের সাজাটা না হয় উনিই দেবেন।
আয়ান এবার এগিয়ে গিয়ে আঁখিকে প্রায় একরকম ধাক্কা দিয়ে মাহির কাছ থেকে ছাড়ালো,এদিকে মাহি রানি আর কি, ন্যাকা কান্না করতে ব্যাস্ত।
_____________
আদৃত ঘরে ঢুকছিলো তখনি ওর ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো,ফোনটা হাতে নিয়েই স্ক্রিনে চোখ বুলালে চিরচেনা একটা নাম্বার চোখে ভেসে উঠলো আদৃতের, আদৃত অল্প সময়ের জন্য হতবম্ভ হয়ে রইলো,তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করলো,কিছু বলার যেনো কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলো না আদৃত তখন,মুখের সকল ভাষা যেনো ওর বিলুপ্তি পেয়েছিলো সে ক্ষনে,মন পিঞ্জরে একরাশ আশা নিয়ে ফোনটা কানে লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হয়তো অপর পাশ থেকে কাঙ্ক্ষিত কন্ঠটার কিছু মধুর বানী শ্রবনের আশায় ,কিন্তু সে আশাটা আর পূর্ণ হলো না আদৃতের হয়তো ওপর পাশে উপস্থিত থাকা সে জনও কোনো উপযুক্ত ভাষা পাচ্ছিলো না আদৃতকে বলার জন্য,হয়তোবা যথেষ্ট সাহসও ছিলো না বুকে,তাই ফোনটা কেটে দিলো,আদৃত যেনো উক্ত বিষয় মেনে নিতে ব্যার্থ হলো,ফোনটা কেটে গেছে বোধগম্য হওয়ার পর হ্যালো হ্যালো বলছে বার বার,হয়তো মনের সান্ত্বনায়, কোনো জবাব না পেয়ে পাগলপ্রায় হয়ে আবার ফোন করলো কিন্তু ফোনটা এখন অফ যাচ্ছে,এবার বার বার ফোন করতে লাগলো আদৃত কিন্তু সব বারই একই ফলাফল আসতে লাগলো,আদৃতের মস্তিষ্ক যেনো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো সেই ক্ষনে,বুঝে উঠতে সক্ষম হচ্ছে না যে এটা সত্য না শুধুই আদৃতের কল্পনা,তবে জেগে থাকা সত্ত্বেও কল্পনা কি করে দেখতে পারে আদৃত, কিন্তু এই সত্যটাও যে আদৃতের ব্যাকুল মন পিঞ্জর মানতে বরই নারাজ হচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগে আদৃতের নিজেকে স্বাভাবিক করতে, কোনোরকম নিজেকে স্বাভাবিক করে আদৃত ঘরের পানে অগ্রসর হয়,রুমে গিয়ে দেখতে পায় আঁখি নেই,ভাবে হয়তো দিদুর রুমে আছে কিন্তু একটা কাজবশত আদৃত নিচে নামলে কোনো দিকেই আঁখির কোনো সারা পায় না কেনো যেনো আদৃতের মনে অনেকটা খটকা লাগে কাজ করে,সায়েদা তখন আদৃতের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো তখনই ওকে দাঁড় করায় আদৃত।
সায়েদা।
জি ভাইয়া বলো?
আঁখি কোথায়?
কি জানি ভাইয়া,দুজন মিলে পড়ছিলাম তখনি কারো ফোন আসলো,সে ফোনটা রিসিভ করে কথা বলার পর আঁখি কেমন জানি ছটফট করতে লাগলো,তারপর আমাকে বললো ওকে এখনই কোথাও যেতে হবে দিদু ঘুমিয়ে আছে উনি উঠলে উনাকে সামালতে তাই বলে ছুটে কোথাও চলে গেলো।
ওকে তুমি যাও।
চলে গেলো…….কোথায় গেলো?
উক্ত চিন্তা খনিক ভাজ সৃষ্টি হলো আদৃতের ললাটের কোনে।
__________________
মাহি আয়ানের পিছন লুকিয়ে বলতে লাগলো,দেখো বেবি ওই আঁখি আমাকে কিভাবে মারলো,তুমি কোনো প্রতিবাদ করবে না বুঝি?
বেবি, আজ তোর বেবি কেনো তোর বাবাও তোকে বাঁচাতে পারবে না শাঁকচুন্নি।
আঁখি…….এনাফ এটা কোন ধরনের ব্যবহার,তোমার সাহস কি করে হয় মাহির গায়ে হাত তোলার।
আওয়াজ নিচে আয়ান,আমাকে নিজের ফর্মে আসতে বাধ্য করো না,অনেক কষ্টে নিজেকে দমন করেছি নয়তো একবার আমার মাথা ঘুড়ে গেলে আমি কি করতে পারি তা সম্পর্কে ভালো আইডিয়া তোমাদের দুজনেরই আছে,ভালোয় ভালোয় বলে দিও তোমার ওই বেবিকে শুধরে যেতে নইলে ওকে টেনে বেবি থেকে বড় বানাতে সময় লাগবে না এই আঁখির।
আয়েশা তুই ভয় পাস না যখনি এরা কেউ তোর সাথে আর মায়ের সাথে কিছু করতে আসবে তখনই আমায় ফোন করবি দেখবো কে কি করতে পারে।
তার আর দরকার পড়বে না রে আঁখি,যেখানে আমার সম্মান নেই সেখানে আমি থাকতেও বাধ্য নই,যে ভাই কখনো আমার গায়ে ফোলের টোকাও দেয় নি সে ভাই আজ অন্যের কথায় এসে আমাকে এভাবে প্রহার করলো আমার কথা দ্বিতীয় বার ভাবলো না,সে আর যাই হোক আমার ভাই রয়ে যায় নি, চল এখান থেকে।
আয়েশা নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে যাবার জন্য পুরো তৈরী হয়ে বেড়িয়ে আসতে আসতে কথাগুলো বললো।
এবার আয়েশা মিরা রাহমানের কাছে গিয়ে বললো।
চলো মা আমি তোমার কাপড়চোপড়ও প্যাক করে নিয়ে এসেছি,আমার সাথে চলো,আমরা নিজেদের একটা জগত গড়ে নিবো যেখানে আমাদের নিজস্ব স্বাধীনতা থাকবে,যেখানে না খেয়ে মরলেও সম্মানের সহিত মৃত্যুটা নসিব হবে।
মা কোথাও যাবে না,তোর যাওয়ার হলে তুই চলে যেতে পারিস,তাছাড়া আর কোথায় যাবি আঁখির মতো কাউকে খোঁজে তার গলায় ঝুলে পড়বি।
কথাটা শুনে আঁখি অতিরাগে মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়,বর্তমানে আর আয়ানের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হতে চায় না ও।
এদিকে মিরা রাহমান আঁচলের কোন দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে এবার ব্যাথা ভরা কন্ঠে বললেন।
না রে বাবা,এই বুড়ির যে তোর মতো সম্মানিত আর বিত্তবান ব্যক্তির ঘরে থাকার তৈফিক নেই,তুই সুখে থাক দূর থেকে চাইবো।
তারপর মিরা রাহমানও ওদের সাথে চলে যেতে নিলে আয়ান পিছন থেকে বলে উঠলো।
যাবার আগে একবার ভেবে নাও মা,এই অর্থ বিত্ত আভিজাত্য আর কোথাও পাবে না,মিছে অভিমানে অবুজের মতো চলে যেও না পরে না আবার পস্তাতে হয়,কারন আর যাই হোক অতি আত্মসম্মান কিন্তু পেটে খাবার জোটাবে না।
এবার এগিয়ে এসে আয়েশা বলে উঠলো।
জানিস ভাইয়া আল্লাহ ধন দিয়ে মন দেখেন,একটা কথা শুনে রাখ ভাইয়া,দিয়ে ধন দেখে মন কেড়ে নিতে কতোক্ষণ, আমরা কখনো তোকে অভিশাপ দেবো না ভাইয়া,তবে উপরওয়ালা যে সবাইকে তার প্রাপ্য সাজাটা দিয়ে থাকেন।তোর ভাগের টাও কতো করুণ হবে সেটা ভেবে এখন থেকেই আমার ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠছে,কোনো দিন প্রয়োজন মনে করলে আসিস,আমরা কখনোই তোকে ফিরিয়ে দিবো না।চলি।
কথাটা বলে চলে গেলো ওরা আঁখির সাথে।
আয়ান আর কিছু না বলে রুমের দিকে প্রস্থান করলো হনহনিয়ে,যেনো এসবে ওর কোনো আসে যায় না,এদিকে ওরা চলে যাবার পর মাহি রাজ্য জয় করা ঠোঁট বাঁকানো হাসিতে মেতে উঠলো।
চলবে…….
#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_২০
মেইন ডোর খোলা রেখে আদৃত পায়চারী করছে এদিকে ওর দৃষ্টি বাইরের দিকে অটল কাঙ্ক্ষিত রমনীর আগমনের আশায়,আদৃতের গম্ভীর মন পিঞ্জর খানা যে আজকে বড্ড চিন্তায় মশগুল আঁখি নামক রমনীকে নিয়ে,হঠাৎই আদৃতের অশান্ত মনে খনিক শান্তনার ছোঁয়া পাইয়ে ঘরে প্রবেশ করলো আঁখি,আঁখিকে দেখে অল্প উত্তেজনায় ছুটে গেলো আদৃত আঁখির পানে,ললাটে এখনও চিন্তার ছাঁপ স্পষ্ট ফুঁটে আছে যা আঁখির দৃষ্টির অগোচরে গেলো না।আদৃত এবার বেশ ধমক দিয়ে আখিঁকে বলতে নিলো।
এসব কোন ধরনের ম্যানার মিস আঁখি,এতো রাত্রে কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?কাউকে বলে যাবার প্রয়োজনও মনে করলেন না কোথায় যাচ্ছেন,ফোনটাও ধরছেন না,আপনার নিজেকে নিয়ে কোনো চিন্তা নেই ভালো কথা এর মানে তো এটা নয় অন্য কারো আপনাকে নিয়ে কোনো চিন্তা হয় না।
আঁখি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদৃতের পানে,লোকটার ধমকে যে লুকিয়ে আছে আঁখির জন্য একরাশ দুশ্চিন্তা, যে খেয়ালে নেই কোনো স্বার্থের লালসা, লোকটা যে নিঃস্বার্থ ভাবে আঁখিকে নিয়ে ভাবে,সময়ের সাথে আদৃতের জন্য আঁখির মনে থাকা সম্মানটা যে দিন দিন বাড়ছেই,আঁখি কখনো ভাবে নি কোনো পুরুষ মানুষও এতোটা পরিপূর্ণ হতে পারে,হয়তো আদৃতকে না দেখলে তা কখনো মেনে নিতেও ব্যার্থ হতো সে,এসব খেয়ালের বশে আঁখি একটা ঘোরে চলে গেছে ততোসময়ে আদৃতের পানে দৃষ্টি অটল রেখে,আঁখির হেলদোল না দেখে আদৃত একটু জোর গলায় ওকে ডাক দিলে আঁখি ঘোরের রাজ্য থেকে বেড়িয়ে এলো।
এই যে মিস আঁখি আমার কথা আপনার কানে যাচ্ছে না?কোথায় ছিলেন আপনি?
ওই,আসলে একটা কাজ পড়ে গেছিলো তাই যেতে হলো আরকি।
কথাটা বলে আঁখি ছাঁদের পানে হাঁটতে লাগলো,আদৃত কিছুসময় ঠায় দাঁড়লো নিজের জায়গায় তারপর কিছু একটা ভেবে আঁখির পিছু গেলো।
ছাঁদের প্রান্ত ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে আখি,মৃদ্যু বাতাস বয়ে যাচ্ছে ওর শরীর দোলিয়ে, আজকের বাতাস কেমন একটা শীতল শিহরণ তৈরী করছে আঁখির শরীরে,বড্ড ভালোই লাগছে ওর এই বাতাস,তবে মাথায় যে একরাশ দুশ্চিন্তাও নিজেদের অবস্থান পাকা করে বসে আছে,হঠাৎই পিনপিন নিরবতার রেশ কাটিয়ে পাশেই কারো উপস্থিতি টের পেলো,উক্ত ব্যক্তির দিকে না তাকিয়েই আঁখি তার অনুমানটা ঠিকই করতে পারলো,ও জানে লোকটা আদৃত ছাড়া আর কেউ হবেও না।
এদিকে আদৃত নীরবতা কাটালো নিজের কিছু কথা দিয়ে ।
আমি জানি মিস আঁখি হয়তো আমি আপনার ব্যক্তিগত বিষয়গুলো জানার অধিকারটুকু রাখি না,তবে কিছু কিছু কথা কারো সাথে ভাগাভাগি করলে মনের বোঝাটা অনেকাংশে কমে যায়,আমার যতোটুকু অনুমানে আসছে আজকেও আপনাকে খারাপ কিছুর সম্মুখীন হতে হয়েছে আপনি চাইলে আমার সাথে তা ভাগাভাগি করতেই পারেন।
আঁখি ঘন এক নিশ্বাস টেনে বললো,
আমিও যে নিজের মনের বোঝাগুলো দিয়ে কারো মনের শান্তি নষ্ট করতে চাই না,তবে হ্যাঁ আপনি যেহেতু জানতে ইচ্ছুক আমার বলতেও দ্বিধা নেই।
তারপর আঁখি সবটা আদৃতকে খুলে বলে……
ঘটনার পর আমি আয়েশা আর মাকে আয়েশার একটা ফ্রেন্ডের বাড়িতে রেখে এসেছি,শুধু আজ রাতের জন্য,কাল সকালে কোথাও একটা ভালো ঘর দেখে ওদের থাকার ব্যবস্থা করবো।
আদৃত এবার দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করে বললো।
ড.আয়ানকে নিয়ে এর থেকে ভালো কোনো চিন্তাধারা আমার মধ্যে ছিলো না,এসব কিছু উনার জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার, তবে এভাবে আয়েশা আর আন্টিকে অন্যত্র রাখা ভালো হবে না মিস আঁখি,এতো বড় শহরে ঘর কোথায় পাবেন এতো তাড়াতাড়ি ,তাছাড়া এডভান্স ছাড়া কোথায় ঘর পাওয়াও যাবে না,এমতাবস্থায় আপনি সবকিছু কিভাবে হ্যান্ডেল করবেন?
দেখি কি করি।
আপনি বরং উনাদের এখানে নিয়ে আসেন।
সেটা কি করে হয়?আপনি একজন ভালো মানুষ বলে সবাই আপনার উপর চড়ে বসলে তো হবে না,তাছাড়া আয়েশা আর মা এভাবে করো কাছ থেকে সাহায্য নিতে কখনো রাজি হবে না।
সাহায্যের কথা কে বলছে,যদি উনাদের এতে অসুবিধে হয়,তবে আমাদের বাড়িতে আয়েশাকে একটা জব পাইছে দেই,আমাদের ঘরের একজন কেয়ারটেকার চলে গেছেন কারনবশত,নতুন কেয়ারটেকারের জায়গায় ওকে রেখে নিবো,নিজের পারিশ্রমিকের বদলে এখানে থাকাটা তো আত্মসম্মানে আঘাত লাগার কারন হতে পারে না মিস আঁখি।তাছাড়া ওরা এখানে থাকলে মা আর দ্বিদুর দিনটাও ভালো কাটবে, আমরা ঘরে না থাকায় উনাদের দিনগুলো কেমন একঘেয়ে হয়ে উঠে,উনারা এখানে আসলে সবার জন্যই ভালো হবে।ভেবে দেখেন মিস আঁখি বাইরে এতো জলদি করে কোনো জব পাওয়াও অনেক কঠিন ব্যাপার।
আপনি কথাটা অযুক্তিক বলেন নি ড.আদৃত,আমি আয়েশার সাথে কথা বলে দেখবো।
______________________
কেটে গেছে আজ অনেকটা দিন,সবকিছু ভালোই চলছে,আঁখি আয়েশাকে বুঝিয়ে বলে চৌধুরী ম্যানশনে নিয়ে এসেছে, এখন ও এখানে কেয়ারটেকার হিসেবে আছে,কিন্তু ঘরের সবাই ওদের নিজেদের পরিবারের একটা অংশই মনে করেন,নোমানও জানতে পারে আয়েশার বিষয়ে সবকিছু, আয়েশার এমন পদক্ষেপে ও আয়েশাকে যথেষ্ট সমর্থন জানায়।এদিকে সময়ের সাথে আয়েশার মনে নোমানকে নিয়ে আলাদা এক ভালোলাগার রাজ্য গড়ে উঠছে, আয়ান বার বার আঁখির আগ পিছন ঘোরা এখন অনেকটা বন্ধ করে দিয়েছে,তবে ওকে আর আদৃতকে একসাথে দেখে ওর মনে খারাপ লাগা কাজ করা বন্ধ হয় নি এখনও বরং বাড়ছে সময়ের সাথে, কখনো কখনো আঁখিকে খুঁচিয়ে দু-চারটে কথা বলেই দেয় যা আঁখি নিজের গায়ে মাখে না, তবে মা বোনের আর কোনো খোঁজ নেয়নি ও,আয়ান কি চায় হয়তো সে নিজেও তা জানে না,আঁখি আর আদৃতের মধ্যে এ ফাঁকে অনেক ভালো বন্ধুত্ব স্থাপন হয়েছে তবে মাঝ দিয়ে ওদের খুনসুটি টা থেকেই যায়।
আজকে আয়ান একদিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আছে,শরীরটা ওর বেশ ভালো না বেশ জ্বর জ্বর ভাব মাথা ধরেছে খুব তাই শুয়ে আছে এদিকে ওর সুন্দরী রমনী আধাআধো আধুনিক কাপড়ে সেজেগুজে একদম তৈরি, উনার এমন সাজগোজের কারন জানতে এবার আয়ান নিজের মস্তক তুলে নিজের সুন্দরী রমনীর দিকে প্রশ্ন ছুঁড়লো।
মাহি কোথায় যাচ্ছো তুমি?
বন্ধুদের সাথে ঘুরতে, কেনো?
আমার শরীরটা খারাপ আজকে বাইরে না গেলে হয় না।
দেখো আয়ান ঘরে তো একটা চাকর আছে কিছু লাগলে ওকে বলো।আমি থেকে কি করবো?
তোমার কমতি কি চাকর পুরন করতে পারবে?
আমি থেকেও কি আর করতে পারবো আমি আগেই বলেছি এসব সেবা যত্ন আমার স্ট্যাটাসের সাথে যায় না।
আমি সেবাযত্নের কথা বলছি না মাহি,মনের সাপোর্ট বলেও কোনো একটা জিনিস থাকে।
হা হা হা হা,মনের সাপোর্ট, কি যে বলো তুমি বেবি,আজকাল না তুমি কেমন ফিল্মি হয়ে যাচ্ছো,তুমি বরং রেস্ট করো আমি চলি তোমার এসব ফিল্মি ডায়লগ শুনতে আমি মোটেও ইচ্ছুক না,আর হ্যাঁ কালকে আমার মা বাবা আর রনি আসছে, ওরা যথেষ্ট আরামপ্রিয়, আমি ওদের খাতিরদারিতে কোনো কমতি রাখতে চাই না,আর ওরা এখানে এসে অনেকদিন থাকবে,তাই বলছি কি তুমি আরও দু-চারটে চাকর বাড়িয়ে দিয়ো ঘরে,এক চাকরে কি হয় আজকাল।
হোয়াট!কি বলছো মাহি এসব তুমি?এমনিতেই তোমার জন্য কোনো কাজের লোক ঘরে আসে না,অনেক কষ্টে একজনকে আনতে পেরেছি,আমি এদিকে প্রফেশনে নতুন চার পাঁচটা চাকর ঘরে রাখার মতো ক্ষমতা এখনও আমার হয়নি,এছাড়াও একাউন্টের টাকা তো আর তুমি বাঁচিয়ে রাখতেও চাও না।
সিরিয়াসলি আয়ান বেবি তুমি আমাকে এটা বলতে চাইছো যে আমি তোমার সব টাকা খরচ করে ফেলি?
আমি সেটা বলতে চাই নি,তবে সেটাই তো সত্য, তুমি যখন তখন এটা ওটা শপিং করছো বন্ধুদের ট্রিটের উপর ট্রিট দিচ্ছো,পার্টি করছো, ক্লাব যাচ্ছো ফিউচার সেভিংস বলতেও কিছু থাকে মাহি।
সেভিংস করার মতো মেয়ে মাহি না,বিয়ে যখন করেছো তখন আমার সমস্ত চাহিদা তোমাকেই পুরন করতে হবে এবং সেটা কিভাবে হবে তা জানতে আমি আগ্রহী নই, চলি আমার দেড়ি হচ্ছে।
_______
আদৃত বড়ই মায়াভরা এক অপলকদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিজের ওয়ালেটে থাকা রমনীর ছবির দিকে,ওকে ভুলতে গিয়ে যে ওর সব স্মৃতি নিজ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে কিন্তু শত চেয়েও কিছু জিনিস নিজের থেকে দূর করতে পারে নি আদৃত,এই ছবিটাও যে সে সব জিনিসের একটা অংশ মাত্র,ছবি দেখারত অবস্থায় কারো কিছু কথা শ্রবন ইন্দ্রিয়তে নাড়া দিয়ে উঠলো আদৃতের।
পিছুটানে পড়ে থাকা ভালো না ডাক্তার সাহেব,এমন কিছু আপনার মতো গম্ভীর ব্যক্তিত্বকে শোভা দেয় না।
ছবিতে মগ্ন দৃষ্টি স্থাপনরত অবস্থায় আদৃত উত্তর দিলো।
হতে পারি আমি গম্ভীর ব্যক্তিত্বের অধিকারি তাই বলে আমি তো আর অনুভূতি শুন্য না।
হুম অনুভূতি…….অনুভুতি মনের অনেক সুন্দর একটা অংশ ,যা সবার মধ্যেই থাকে,হয়তো কারো ভিতর বেশি আর কারও কম,তবে অনুভুতি ছাড়া কোনো মানুষ হয় না,তাই আপনারও যথেষ্ট অনুভুতি আছে তা আমি মানতে কখনো নারায হবো না।কিন্তু একটা কথা জানেন তো ড.আদৃত তিক্ত অনুভূতির টানে কখনো পড়ে থাকতে নেই,হয়তো আমার এমন কিছু বলার অধিকার আপনাকে নেই তবুও একজন বন্ধু হিসেবে কিছু কথা বলতে চাই আপনাকে।
যেমন?
যেমন পিছুটানে না থেকে জীবনে এগিয়ে যাওয়া।দেখেন ড.আদৃত কারো জন্য তো জীবন থেমে যায় না,হয়তোবা আরোহী আপনার কাছে নেই,দূর্ভাগ্যবশত ও চলে গেছে অনেক দূর তাই বলে তো এই নয় আপনি ওর স্মৃতিতে বাকি জীবন কাটিয়ে দিবেন।জীবন কারো জন্য থমকে দাঁড়ায় না, বরং একা জীবনটা পার করা বড়ই দূরুহ।
আমাকে তো খুব ভালোভাবে বলেন দিলেন,সে জিনিসটা কি আপনি নিজে করতে পারবেন।
আঁখি এবার ঠোঁটের কোনে মৃদ্যু হাসি ফুঁটিয়ে উত্তর দিলো।
হয়তো প্রথম ভালোবাসার জায়গা কেউ নিতে পারে না, কিন্তু সে ভালোবাসা প্রাপ্তির মিষ্টি স্বাধ কোনো ভাগ্যবান ছাড়া কারো কপালেই আজকাল ঝুটে কোথায়,তাই বলে যে কেউ দ্বিতীয়বার সুযোগ পায় না তেমনও তো নয়,ভাগ্য সবাইকেই দ্বিতীয় সুযোগ দেয় না ড.আদৃত, আপনার কাছে সুযোগ আছে নিয়ে নিন,সুযোগটা যদি জীবন আমায় দিতো তবে হয়তো আমিও তা হাত বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইতাম না।
কেনো? আপনার কেনো মনে হয় আপনি সুযোগ পাবেন না?
ললাটে সন্দেহের ভাজ ফেলে প্রশ্ন করলো আদৃত,এবার আঁখি মৃদ্যু হেসে আমতা কন্ঠে বললো।
ও কিছু না এমনিতেই বললাম আরকি,ছাড়েন না এসব কথা দেখেন না আজকের দিনটা কতো সুন্দর, আর এই নিন কফি আমি কখন বানিয়ে এনেছি কিন্তু আপনাকে দিতেই ভুলে গেলাম,নিন খেয়ে নিন।
আঁখির শেষের কথাগুলো খুব একটা হজম হলো না আদৃতের,বুঝতে বাকি রইলো না আদৃতের আঁখি বড় কিছু লুকোচ্ছে তবে তা কি জানতে ইচ্ছুক হলো আদৃতের কৌতূহলী মন।
_________________
সচরাচর বাড়িতে থাকা হয় না আয়ানের তাই এতোদিনে কারো শুন্যতা মনে নাড়া দিয়ে উঠে নি ওর,রাত পোহালেই কাজে যায় আর দিনশেষে বাড়ি ফিরে এ ফাঁকে এতো কাজের চাপে কাউকে মনে করার সময় কোথায় ওর,কিন্তু আজ যে অনেক স্মৃতিই ধরা দিচ্ছে আয়ানের মন পিঞ্জরের এক কোনে,সারা বাড়িতে ভুতের মতো একা হাঁটছে, কোথাও কেউ নেই,একটা কাজের মেয়ে রান্না ঘরে টুকটাক শব্দ করে কি সব করছে,হয়তো রান্নায় ব্যস্ত সে,তবে সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই আয়ানের,জ্বরে শরীর জ্বলছে ওর,ওষুধ খাওয়ায় মাথা ব্যাথা একটু ধমলেও মনের ব্যাথা থামে নি,কেনো যেনো বুকে বড্ড চিন চিন ব্যাথা অনুভুত হচ্ছে জানে না এর মানে, মন ভালো থাকলে শরীর ভালো থাকে,রোগ সারাতে ওষুধের থেকেও তাড়াতাড়ি কাজ করে তৃপ্তির এক ঝলক হাসি,এই কথাটা আঁখি প্রায়ই বলতো,আয়ানের স্পষ্ট মনে আছে যখনি আয়ান অসুস্থ হয়ে বাড়িতে থাকতো আঁখি নিজের কাজ কর্ম সব ছেড়ে ওর পাশে থাকতো সারাদিন, শারীরিক সেবা থেকে শুরু করে মানসিক সেবা পর্যন্ত সব রকম সেবা করতো আয়ানের,ওর মন আর শরীর ভালো রাখতে আঁখি যেনো দিন রাত এক করে দিতে পারতো,আঁখি তো আঁখি সাথে যে ওর মা বোনও কম ছিলো না,আয়ানকে অল্প কাশতে দেখলেও আয়েশা গরম পানি নিয়ে খাঁড়া থাকতো ওকে খাওয়াবে বলে,এদিকে সেদিন তো আর ঘরের বাইরে যাওয়া হতো না আয়ানের শুধু মিরা রাহমানের কাকুতিতে,অল্প হাত কেটে গেলেও তিন তিন জন সেবিকা উপস্থিত থাকতো ওর পাশে,ওরা থাকতে কখনো এই ঘরকে একা মনে হতো না আয়ানের,পুরোদিন ঘরটা যেনো ঝুমঝুম নাচ করতো,হাসি খুশি আর হৈ-হুল্লোড়ে ভরে থাকতো এ ঘরখানা,কিন্তু আজ যে এ ঘরের কোনো কোনে কোনো হাসির ঝলক নেই,শুধু আছে নিস্তব্ধতা।
আয়ান যেদিকেই তাকাচ্ছে মনে হচ্ছে এখনই আয়েশা আঁখি ছুঁটবে একে অন্যের পিছন আর মা ওদের দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটি থামাতে ব্যস্ত হবেন, আজ আয়ানের সত্যিই অনেক খারাপ লাগছে, আজ আয়ান অনেক একা,যেমনটা আয়ান চাইছিলো তেমনটাই তো হলো,আয়ান তো চায় নি আঁখি এখানে থাকুক,ও তো আয়েশাকেও ঘর থেকে তাড়িয়ে দিতে চাইছিলো বিয়ে দিয়ে,আর মার জন্য তো আলাদা টান আর ছিলো না ওর তবে আজ কোনো পিছুটানে মন ছুঁটছে?
এদিকে চৌধুরী ম্যানশনে হৈ-হুল্লোড় পড়েই আছে,আয়েশার গোপন ডায়েরি নিয়ে ছুঁটছে আঁখি আর আয়েশা পিছনে,এদিকে সায়েদা ওর লিখার কলম নিয়ে ছুঁটছে,আসলে আয়েশা তখন নিজের লুকন্ত ডায়রিতে মনের কিছু অব্যক্ত বানি ফুঁটিয়ে তুলছিলো তখনি সায়েদা আঁখি দুজন দুষ্টামি করে ওর ডায়েরি আর কলম নিয়ে ছুঁটতে লাগলো,ছুঁটতে ছুঁটতে ওরা হল রুমে চলে আসলো সেখানে দিদু, ইশা মা আর আমির চৌধুরী বসে ছিলেন,ওদের দুষ্টামি দেখে উনাদের হাসি থামছে না,আদৃত আর নোমান তখন হাসপাতালে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে মাত্র এদিকে আয়েশা আঁখির হাত থেকে ডায়েরিটা ছিনিয়ে নিয়ে নিজেকে বাঁচাতে ছুঁটতে শুরু করেছিলো কিন্তু বেখালি হয়ে নোমানের সাথে ধাক্কা লাগলো ওর যাতে ডায়রিটা নিচে পড়ে গেলো,এদিকে আমাদের আঁখির ধাক্কাটা আদৃতের সাথে লাগলো,খনিকে আমাদের বাঘিনী ক্ষেপে উঠলো।
এই যে ড.আদৃত,যখন তখন কালো বিড়ালের মতো রাস্তা কাটার অভ্যাস আপনার যাবে না, না কি?আপনার জন্যই আমি আয়েশাকে ধরতে ব্যার্থ হলাম।
এতো বড় হয়া সত্ত্বেও বাচ্চাদের মতো ছুটাছুটি করছেন আপনি,দৌঁড়াতে গিয়ে এসে ধাক্কা দিচ্ছেন আমায় আর রাগটাও আমাকেই দেখাচ্ছেন।
তো দৌঁড়াবো না তো কি করবো, আপনার মতো কৃপনতা করে একটু হাসি ঠাট্টাও করবো না?
অকাজে এনার্জি লস্ট আদৃত করে না।
তবে যান মি.আদৃত হাসপাতালে গিয়ে কাটাকাটি করেন ওটাই আপনাকে স্যুাট করে।
আদৃত এবার আর কিছু বললো না আঁখিকে,বরং চোখ দুটি ছোট করে ওর দিকে তীক্ষ্ণ চাহনি দিয়ে চলে গেলো,আঁখিও সুযোগ বুঝে একটা ভেংচি কেটে দিলো ওকে।
এদিকে নোমানের পায়ের পাশে পড়লো ডায়েরিটা,নোমান তা উঠাতে গেলে এর আগেই হরবরি করে ওটা আয়েশা উঠিয়ে নেয়, আমতা আমতা করে এবার বললো।
সরি নোমান সাহেব আসলে খেয়াল করি নি,অতপর নোমানের কোনো উত্তরের অপেক্ষা না করে সেখান থেকে পালালো আয়েশা,আয়েশার এমন কান্ডে কেমন একটা সন্দেহ জাগলো আঁখির মনে আয়েশাকে নিয়ে।
একটু পর কলিংবেল বেজে উঠলো,সায়েদা এগিয়ে গেলো দরজা খোলতে,দরজা খোলতেই সামনে খাঁড়া অবস্থায় পেলো সুদর্শন এক বলিষ্ঠ যুবক,ফর্সা চেহারায় কালো সানগ্লাস মানিয়েছে ভালো,এই প্রথম কোনো ছেলের দিকে ২০ সেকেন্ডেরও বেশি সময় ধরে একধ্যানে তাকিয়ে আছে সায়েদা ,এবার ছেলেটি ওর সামনে তুড়ি বাজালে ওর ধ্যান ভাঙলো।
এই যে সরবেন আপনি ভিতরে যাবো,
সায়েদা এবার নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো।
আপনি কে?
আমি তাসবীর তাওয়াফ খান পলক,আঁখির সাথে দেখা করতে এসেছি।
ওর সাথে কি কাজ আপনার?
সেটা আমি আপনাকে কেনো বলবো?তাছাড়া আমি বাচ্চাদের সাথে কথা বলি না।
হোয়াট! আপনাকে আমার বাচ্চা মনে হচ্ছে?আমি কোন দিক থেকে বাচ্চা।
হা হা হা হা,আপনি কোন দিক থেকে বাচ্চা না সেটা বলুন।
তারপর হাসতে হাসতে তাসবীর ভিতরে ঢুকে গেলো,আঁখি নিজের ভাইকে দেখে তো মহাখুশি,ও সবার সাথে নিজের ভাইয়ের পরিচয় করিয়ে দেয়, ওকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে থাকে,এদিকে সায়েদা তো রাগে ফুলছে,এতো বড় সাহস ওই ছেলেটা ওকে বাচ্চা বললো,ওকে এভাবে অসম্মান করলো,তাছাড়া গল্পের ফাঁক দিয়ে ওকে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
চলবে………..