মনের_অন্দরমহলে পর্ব ২

0
3495

#মনের_অন্দরমহলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২

গায়ে লাল ভারি বেনারসি সঙ্গে গয়না পড়ে হাঁটতে একটু কষ্টই হচ্ছে। ক্লান্ত হয়ে পড়েছি একপ্রকার। আমার হাত ধরে হাঁটছে একটা নয়-দশ বছরের মেয়ে। তার নাম সাবু। বাড়ি থেকে বের হতেই ওদের বাড়ি পরে। আমি একটা যেতে পারব না বলে আমায় ধরে সাথে নিয়ে যাচ্ছে সাবু। আমার পায়ে নেই জুতো। হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। সন্ধ্যে নেমে রাত হয়ে এসেছে বোধহয়। হঠাৎ থেমে গেলাম আমি। পায়ের তলায় মনে হলো কিছু একটা ফুটেছে। যন্ত্রণার চোটে চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করলাম। সাবুর আওয়াজে চোখ খুললাম।

–“আপা, কি হলো দাঁড়ালে কেন? যাবে না?”

–“হ্যাঁ রে চল।”

বলেই হাঁটা দিলাম আমি। এখন থামলে চলবে না। খুব একটা বেশি দূরে যেতে পারিনি এখনো। এভাবে আমায় পালাতে হবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। তাও বিয়ের সাজে। ইচ্ছে করছে মা-বাবার কথা ভেবে ফিরে যেতে। কিন্তু আয়াশের কথা ভেবে আঁটকে যাচ্ছি আমি। বুঝতে পারছি না এটাকে ভাগ্য নাকি আয়াশের দোষ দেব? আমার জীবনে আয়াশ রায়হান নামক লোকটার উদয় না হলেই চলছিল না? ভালোই তো ছিলাম। আয়াশ যতটা ভয়ানক মানুষ ঠিক তেমনটাই ভয়ানক ছিল উনার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ!

ফ্ল্যাশব্যাক…..
জায়গাটা ব্যাংকক। একটা সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ শহর। সকলের মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো জায়গা। এই শহরের এক নামি-দামি রিসোর্টের সুইমিংপুলে নাচগান করছে অর্ধনগ্ন বিদেশি মেয়েরা। মিউজিকটাও বাজছে বেশ জোরে জোরে। হাতে রেড ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে অর্ধেক পানিতে ডুবে তাদের সঙ্গে তালে তাল মেলাচ্ছে এক সুদর্শন পুরুষ। হালকা পানির ছিটা পড়ে কপালের সঙ্গে লেগে নেতিয়ে গেছে পুরুষটির চুল। মাঝে মাঝে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিচ্ছে গ্লাসে। এক অদ্ভুত হাসি মুখে লেগেই থাকে সবসময়। যখনই তার দিকে কেউ তাকাবে তখনই তাকে হাসতেই দেখবে। তার চেহারাটাই এমনটাই যে মনে হয় সবসময় হাসির রেশ লেগে থাকে। ফর্সা ধবধবে গায়ের চামড়া বিদেশীদের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। খাঁড়া নাক এবং তার ডগায় একটা ছোট্ট কালো তিল। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘন চোখের পাপড়ির মাঝে তীক্ষ্ণ চোখজোড়া। সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব! প্রশস্ত দেহ বেশ ধৈর্য নিয়ে এক্সারসাইজের ফল। লম্বায় প্রায় পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি। তার বেশিও হতে পারে। সব মিলিয়ে নজরকাঁড়া এক পুরুষ!

মুখে হাসির রেখা টেনে সকলে মেয়ের দিকে নিজের প্রখর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আবার চোখ সরিয়ে নিল আয়াশ। একজনকেও তার মস্তিষ্ক টানল না। এরা শুধু মনোরঞ্জনের জন্যই ঠিক এর বেশি কিছুই না।

–“স্যার, আপনার কল এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে নাকি আপনার সাথে।”

ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনে তাকায় আয়াশ। তার এসিস্ট্যান্ট লইয়ার জুহায়ের ফোন এগিয়ে দেয় তার দিকে। ছেলেটার বয়স অনেকটা কম আয়াশের থেকে। আয়াশ তার সিনিয়র। বর্তমানে তার সঙ্গে থেকে যুক্তিতর্ক শিখে চলেছে জুহায়ের। তার সঙ্গেই বেশিভাগ সময় থাকে।

–“বাড়ি থেকে কল এসেছে? তাহলে কল কেটে ফোন ফেলে দাও।”
আয়াশের বিরক্তি মাখা কথায় জুহায়ের দ্রুত মাথা নাড়িয়ে ভীতি সুরে বলে…..
–“আরে না না স্যার। আমি তো জানি আপনি ফ্যামিলির কারো কল ধরেন না বা পছন্দ করেন না। এটা বাইরে থেকে কল। মনে হয় কোনো কেসের জন্য আপনাকে হায়ার করতে চায়।”

–“জুহায়ের? আমরা ব্যাংককে আছি। ইনজয় করছি। কেস-হিস্ট্রির ব্যাপারে আমাকে ঘাঁটাতে মানা করো।”

–“ওরা নাকি যা যত এমাউন্ট চাইবেন তাই দিতে রাজি আছে।”
বলেই আয়াশের দৃষ্টি দেখে চুপ হয়ে গেল জুহায়ের। আয়াশ গ্লাস রেখে সুইমিংপুল থেকে উঠে আসে। এক কর্মচারি ওর গায়ে সাদা বাথরোব জড়িয়ে দেয়। সেটা পরে আয়াশ জুহায়ের এর থেকে ফোনটা নিয়ে কানে ধরে। গম্ভীর গলায় বলে…..

–“হ্যালো! আয়াশ রায়হান ইজ হেয়ার।”

–“হ্যালো, মি. রায়হান। আমি রক্তিম বাহাদুর।আপনার অনেক নামডাক শুনেছি। তাই ভাবলাম একবার তো আপনার সঙ্গে কথা বলা যেতেই পারে।”

আয়াশ বাঁকা হাঁসে। তোয়ালে নিয়ে নিজের চুল মুছতে মুছতে বলে….
–“কাম টু দ্যা মেইন পয়েন্ট মি. বাহাদুর।”

ওপরপাশে মি. বাহাদুর থতমত খেয়ে জবাব দেয়….
–“ওহ ইয়েস। আসলে আমি আপনাকে একটা কেসের জন্য হায়ার করতে চাই। বিষয়টা খুব জটিল। ভাবলাম আপনি হলে কেসটা আমাদের পক্ষে আসা কঠিন না।”

–“হুমম বুঝলাম। কিন্তু এতে আমার লাভ? আমি বর্তমানে দেশে নেই। এখন কেস হাতে নিলে আমায় দেশে ফিরতে হবে। আপ্লিকেশন করতে হবে কোর্টে, কেস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে মহা ঝামেলা! এতো কিছুতে আমার লাভ কোথায়?”

মি. বাহাদুর উদ্বিগ্ন হয়ে বলে….
–“আপনি যা যাইবেন তাই দেব।”

আয়াশ ভ্রু কুঁচকায়। তারপর হঠাৎ হাসে। হাসিতে দুইগালে টোল পড়ে তার। তবে চুপ থাকে। ওপাশ থেকে মি. বাহাদুর চিন্তিত হয়ে বলেই ফেলেন…..
–“২৫ থেকে ৫০ লাখ! এর মাঝে চা চাইবেন তাই দেব মি. রায়হান।”

–“ওকে দেন। আমি দেশে ফিরে বাকি কথা শুনছি। বাই।”
বলেই কল কেটে দেয় আয়াশ। ফোনটা জুহায়ের এর হাতে ধরিয়ে দিয়ে আয়েশ করে মাথা মুছতে মুছতে রিসোর্টের দিকে পা বাড়ায়। জুহায়ের এর উদ্দেশ্যে জোরে বলে ওঠে….

–“টিকিট বুক করে নাও এজ সুন এজ পসিবল! দেশে ফিরছি।”
জুহায়ের শুধু মাথা নাড়ায়।

৩ দিনের মাথায় দেশে পা রাখে আয়াশ। কেস সম্মন্ধে খোঁজখবর নেয় ভালো ভাবে। রক্তিম বাহাদুরের সঙ্গে দেখাও হয় তার। আয়াশ জানতে পারে রক্তিম একটা মেয়ে পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে কেস করেছে। যেটা একশত ভাগ সত্যি। আর এটাও জানতে পারে কক্সবাজারে সেই মেয়ে পাচারকারী চক্রের পরের টার্গেট। যদি সেখানে যাওয়া যায় হাতেনাতে প্রমাণ পাওয়া যাবে। এই প্রমাণ কেস জিতিয়ে দিতে সক্ষম! আয়াশ সুযোগটা হাতছাড়া করে না। চলে যায় সকলের সঙ্গে কক্সবাজার।

কক্সবাজার! পৃথিবীর সবথেকে বড় সমুদ্রের অবস্থান এখানে। সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ জায়গাটির ভাঁজে ভাঁজে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন আদিবাসী সমাজেরও বসবাস সেখানে।

–“মা আমি বাইরে যাচ্ছি। দুপুরে চলে আসব। আজকে তো ছুটি হোটেলে কাজও নেই। ছোটরা আমাকে নিতে এসেছে।”

বলেই ছোটদের হাত ধরে বের হতে নিলাম আমি। মা কিছু না বললেও বাঁধ সাধলো দাদিমা।
–“এই মেয়ে! হোটেলে কাজ নেই বলে বাইরে কই যাইবি এই সময়? সকাল সকাল এমন জোয়ান মেয়েদের বের হতে নেই তাও একা একা। বাড়িতে বসে থেকে মায়ের কাছে রান্নাবান্না শিখে নে যা।”

–“সপ্তাহে একটা দিনই তো পাই দাদিমা। এমন করো কেন সবসময় আমার সাথে বলো তো? তুষারের সাথে তো এমন করো না। তুষার এখনো কত ছোট। তবুও সারাদিন বাইরে থাকলেও ওকে কিছু বলো না। অথচ আমি বাইরে পা বাড়ালেই দোষ!”

দাদিমা জোরে চেঁচিয়ে বলে ওঠে……
–“কারণ তুই মেয়ে মানুষ। মেয়েদের এতো বাইরে গিয়ে ধিঙ্গিপনা দেখাতে নেই। তার ওপর চোখের মাথাও তো খেয়ে বসেছিস। সেটাও আমার কথা না শোনার ফল।”

বিরক্তিতে অতিষ্ঠ হলাম আমি। দাদিমার কাছে সব কথার একটাই উত্তর, ‘কারণ তুই মেয়ে।’
এই একটা বাক্য সবসময় সব মেয়েদের মনোবল ভেঙে দেয়। আমি আর কথা বাড়ালাম না। ছোটদের উদ্দেশ্যে বললাম…..
–“চল নিয়ে চল আমাকে। আজ নাকি তোদের কোনো অনুষ্ঠান আছে? নাচগান নাকি হবে সমুদ্রের ধারে?”

ছোটদের মাঝে একজন মিষ্টি করে উত্তর দিল…..
–“আরে হ্যাঁ তো। আজ অনেক মজা হবে। চল না চল!”

আমিও তাদের জবাবে হাসলাম। দাদিমা বিড়বিড় করতে থাকলেন। আমায় সকলে ধরে বের করিয়ে নিয়ে এলো। আমরা এলাম সমুদ্রের পাড়ে। এই জায়গাটা মেইন পয়েন্টের থেকে বেশ দূরে। মেইন পয়েন্টে অনেক লোকজনের ভীড় থাকে। এদিকে তেমন কেউ আসে না। আমার আন্দাজ ঠিক হলে এখান থেকে একটু দূরে ঝোপঝাড় আছে, ডাবগাছ রয়েছে লাইন করে। বিশাল বড় বড় সমুদ্রের ঢেউ উপচে পড়ার শব্দ কানে আসছে। জোরালো হাওয়া এলোমেলো করে দিচ্ছে সব। এটাই একমাত্র জায়গা যেখানে এসে আমি নিজের নিঃশ্বাস নিশ্চিন্তে ফেলতে পারি। অন্যদিন তো হোটেলে কাজ করেই সময় কাটে। বাবাও আগে হোটেলে কাজ করতেন। উনার অসুখের পর বেড রেস্ট দেওয়া হলে আমায় কাজটা করতে হয়। যদিও কাজটা হোটেলের মালিক আমায় দিতে চাননি। কারণ একটাই আমি অন্ধ। তবুও জোর করে একপ্রকার সেখানে রয়েছি। এরই মাঝে বিভিন্নভাবে অপমানিত হতে হয়েছে। সামনে হাতাতে হাতাতে কারো মুখে, গায়ে হাত পড়েছে। হোটেলের মালিক আমার ওপর সবসময় রেগেই থাকেন।

এসব ভেবে মন খারাপ হয়ে এলো আমার। সকলের নাচগান আমার কানে এসেছে। আমি বসার জায়গায় সকলের সাথে বসে আছি। হঠাৎ করেই নাচগান করার মাঝে বিন্দু নামের এক মেয়ে আমার উদ্দেশ্যে বলল….
–“এই আনিশা? তুমিও তো আমাদের সাথে প্রায় অনেক দিন ধরে আছো। আজ সবাই গাইছে। তুমিও গাও একটা গান।”

হকচকিয়ে গেলাম আমি। মাথা আর হাত দুটোই নাড়িয়ে বললাম….
–“কি বলছো? আমি তোমাদের মতো এতো সুন্দর করে গাইতে পারি নাকি?”

আমি বারণ করা সত্ত্বেও কারো কানে গেল না। সকলের জোড়াজুড়িতে ‘পাগলা হাওয়া বাদল দিনে’ গানটা ধরলাম। মনটাও হালকা হলে হতে পারে। সকলে ধরে আমায় দাঁড় করালো। তাদের কাঁধে আমার হাত রেখে তালে তালে নাচতে লাগল। আমার বেশ লাগল। ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটল।

সেখান থেকে কিছুটা দূরের ডাবগাছের ভীড়ে এক ডাব গাছে ঠেস লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে আয়াশ। পরনে কালো লং কোট আর কোটের ভেতরে গেঞ্জির কলারের সাথে ঝুলানো আছে সানগ্লাস। তার হালকা বড় বড় চুলগুলো বাতাসে মৃদু উড়ছে। গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে সূর্যের আলো মুখে পড়ছে। বেশ ক্লান্ত সে। চোখেমুখে রাজ্যের বিরক্তি। এভিডেন্স জোগাড় করতে কি না কি করতে হয়। পাশে জুহায়ের কথা বলতে ব্যস্ত তার প্রেমিকার সাথে। হঠাৎ গানের আওয়াজে চোখ খোলে আয়াশ। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এগিয়ে আসে। জুহায়ের ফোন রেখে এগিয়ে আসে।

–“জুহায়ের? সারাদিন গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে এতো প্যাঁচপ্যাঁচ করে কি কথা বলো? এতো কথা কি করে পাও?”

আয়াশের অদ্ভুত প্রশ্নে ভীরু চোখে তাকায় জুহায়ের। অতঃপর মুচকি হেসে বলে….
–“স্যার? আসলে হয়েছে কি! শর্মিলা রাগ করেছে। দেশে ফিরেছি কিন্তু দেখা করিনি। রেগে একেবারে বম হয়ে গেছে। খুব ঝাড়ছে আমায়।”

–“তাহলে প্রেম করো কেন? ঝাড় খেতে হলে মায়ের হাতে খাবে। গার্লফ্রেন্ড রোমান্স করার জন্য থাকে। এমন হলে প্রেমিকা রাখার প্রয়োজন কি?”

–“স্যার এটা মনের ব্যাপার। মন না মানলে কি করবেন বলুন?”

আয়াশ উচ্চস্বরে হেসে দেয়। যেন জুহায়ের কোনো মজার কথা বলে ফেলেছে। জুহায়ের ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকাতেই ওর হাতে থাকা দূরবীন নিজের কাছে নিয়ে চোখের সামনে ধরে মেয়েরা যেদিকে নাচগান করছে সেদিকে তাক করে। তারপর ব্যস্ত কন্ঠে বলে…..

–“আচ্ছা জুহায়ের? সকলে কি বলে? মনের অবস্থা ঠিক বুকের বাম দিকে? ঠিক কি না?”

–“ঠিক স্যার।”

–“কিন্তু বুকের বাম পাশে হার্ট বলে একটা জিনিস আছে। যাকে বাংলায় বলে হৃৎপিণ্ড। যেটা সবসময় বিট করতে থাকে। প্রসারণ আর সংকোচন হয়। তাহলে এর মাঝে মনের অবস্থান কোথায়? হৃদপিণ্ডকে মন বলা বোকামি। এটা অবাস্তবিক। ছেলেরা মেয়েদের খুশি করতে বলে, ‘আমি তোমায় মন থেকে ভালোবাসি।’ আদোও মন বলে কিছু হয়ই না। সবই চোখের আর্কষণ। চোখ আমাদের গোলকধাঁধায় ফেলে। সেটা কাটাতে পারলে আর্কষণ কেটে যায়। মেইন পয়েন্ট হচ্ছে, ভালোবাসা বলতেও কিছু হয় না।”

জুহায়ের আয়াশের এতো যুক্তি শুনে কনফিউজড হয়ে পড়ে। এতো যুক্তি মিলাতে মিলাতে ওর মাথাটা ভনভন করে ওঠে। কিভাবে পেলো এতো যুক্তি? এজন্যই হয়ত সবাই আয়াশের কোথায় ঘোল খায়। এই ভেবে শ্বাস ছাড়ল জুহায়ের।

আয়াশ জুহায়ের এর কথা ভেবে বাঁকা হাসল। মনোযোগ দিল মেয়েগুলোর দিকে। একমাত্র এদের ওপরে হামলা চলতে বেশি সময় লাগবে না। গানের আওয়াজ জোরে জোরেই হচ্ছে। বাদ্যযন্ত্র বাজছে। তার দূরবীন আঁটকে গেল একটা মেয়ের ওপর। মেয়েটা সকলের সঙ্গে কাঁধে হাত দিয়ে পা মেলাচ্ছে। হলুদ রঙের একটা লং জামা পরনে। বয়সটা বেশ কম। ১৫-১৭ এর মধ্যে হবে। পায়ের ছন্দে দুলছে তার কানে থাকা রিং আর চুল। দূরবীনটা ঘুরিয়ে আরেকটু বড় করে মেয়েটার দিকে মনোযোগ দিল সে। খুব ফর্সা গায়ের রঙ নয়। আবার শ্যামলাও বলা চলে না। এইধরনের গায়ের রঙ কে হলুদ ফর্সা বলে বোধহয়। নাকটা একটু বোঁচা, ছোট দুটো চোখ, গোলগাল গালদুটো আর সব থেকে সেই ঠোঁটজোড়া। যেখানে অদ্ভুত হাসি মাতিয়ে রাখা। হাসিটা যেন আয়াশকে আহত করছে। মাঝে মাঝে সুন্দর করে ঠোঁট নাড়াচ্ছে মেয়েটা। ঠোঁট নাড়ানোর ধরনটাও চমৎকার লাগলো আয়াশের কাছে।

–“স্যার? আপনি কি তাই দেখছেন যা আমি দেখছি?”

আয়াশ উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। সে তো মেয়েটাতে মগ্ন! জুহায়ের আবার বলে…..
–“স্যার, কিছু লোক মেয়েদের দিকে যাচ্ছে। দেখে সুবিধার মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে ওই মেয়ে পাচারকারীদের দল।”

আয়াশের ধ্যান এবার ভাঙ্গে। হকচকিয়ে তাকায় জুহায়ের এর দিকে। দূরবীন দিয়ে দলবলকে দেখে নেয়। চেহারায় গুন্ডা গুন্ডা ভাব।

–“স্যার প্রুফ নেওয়ার সময় এসেছে। এতে ভালো এভিডেন্স পাওয়া যাবে।”

আয়াশের কানে কথাগুলো যায় না। ওর মনটা অস্থির হয়ে পড়ে এই ভেবে যে এখন যদি ওই মেয়েটার কোনো ক্ষতি হয়ে যায় তাহলে কি হবে? ওকে যদি ওরা তুলে নিয়ে যায়? আয়াশের বুক ধক করে ওঠে। মস্তিষ্ক একটাই কথা বলে, এটা হতে দেওয়া যাবে না। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে ওর। ও ছুট লাগায় সেদিকে। পেছনের সকলে বিস্ময়ের মাঝে রেখে না জানি কি করতে চলেছে সে!

বর্তমান……
সেদিন প্রানের বাজি রেখে আমাকে বাঁচালেন সকলকে। উনার কাঁধে ছুড়ি মারা হয়েছিল। সেখান থেকেই আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ। আমি সেদিন ভয়ে কুঁকড়ে গেছিলাম। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল সাবু।

–“আপা, ওইতো নীলাদ্র ভাই দাঁড়িয়ে আছে।”

চলবে……

[বি.দ্র. অন্ধ মেয়ে কি করে এতোকিছু করতে পারে? কি করে ফোন করতে পারে? বাটন ফোনে চোখ বন্ধ করেও কল করা যায় নম্বর ডায়াল করে এটা কঠিন ব্যাপার না। আর বাকি রইল চিঠি লিখার কথা? আনিশা পড়ালেখা শিখেছে। কোন অক্ষর কি করে লিখতে হয় সে জানে। আর অন্ধদের চোখ বাদে সকল ইন্দ্রিয় বেশি সচল থাকে। এটা নিশ্চয় জানেন! ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here