ভ্রমর (পর্ব – ৫)
সুমাইয়া আক্তার
__________________
রোদ পশ্চিমে ঢলে পড়েছে। মাঠে তখন পশু পাখির আওয়াজ। সেই আওয়াজকে তুচ্ছ করে মিন্টুর বাঁশি নিজের সুরের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। সেই সুরে বরাবরের মতো ছুটে এসেছে স্নিগ্ধা। পাশে বসেছে মিন্টুর। মিন্টু ওঠেনি। এর মধ্যেই তিন দিন পেরিয়ে গেছে। এই তিন দিনে মিন্টুর অনেক নিয়ম’ই পাল্টে গেছে। এই যেমন, স্নিগ্ধা পাশে বসলে উঠে দাঁড়ানো, স্নিগ্ধা আশেপাশে থাকলে বাঁশি না বাজানো, স্নিগ্ধাকে ‘আপনি’ সম্বোধন। মিন্টু যে এ ক’দিনে স্নিগ্ধাকে ভালোবেসে ফেলেছে তা খুব ভালোভাবে জানতে পেরেছে সে। শুধু স্নিগ্ধাকে কখনো জানানো হয়নি, মিন্টু জানতে দেয়নি।
মিন্টু বাঁশি বাজানো শেষ করে স্নিগ্ধার দিকে তাকাল। স্নিগ্ধা মুচকি হাসল। হাসির প্রত্যুত্তরে মিন্টুও হাসল। ভাজ পড়ল তার দু’গালে, প্রসারিত হলো ঠোঁট। মিন্টু যখন মাথা নিচু করে হাসে, তখন তার চোখ দু’টো ছোট হয়ে আসে। হালকা কোঁকড়া চুলগুলো দুলে পড়ে কপালে। আজও পড়ল। কপাল তার ঘামে ভেজা। স্নিগ্ধার ইচ্ছে করল মিন্টুর মুখে ফুঁ দিতে। গরমের তাণ্ডব তার মুখ থেকে কয়েক সেকেণ্ডের জন্য সরিয়ে ফেলতে। করলও তা’ই—ফুঁ দিল মিন্টুর কপাল বরাবর। কপালে থাকা চুলগুলো দুলে উঠল। চট করে তাকাল মিন্টু, কিন্তু স্নিগ্ধার চোখে নয়। মিন্টু স্নিগ্ধার চোখ বরাবর তাকায় না বললেই চলে। কোন ভয়ে কে জানে!
আজ মিন্টুর মাথায় গামছা বাঁধা নেই। সেজন্য মিন্টুর কপালের পোড়া দাগটা বেশ ভালোভাবেই চোখে পড়ছে।
স্নিগ্ধার জানতে ইচ্ছে করল, কপাল কীভাবে পুড়েছিল। উত্তরের আশা না রেখেই সে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমার কপাল পুড়েছিল কীভাবে?’
অদূরে রয়ে শয়ে থাকা বড় পুকুরটার দিকে দৃষ্টি ফেলল মিন্টু। নরম কণ্ঠে বলল, ‘এটা ছোটবেলার দাগ। আমার আট বছর বয়সে বাবা মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার পর আমাদের পরিবার নিঃশেষ হয়ে যায়। আমি তখন ছোট বলে ভয়ে মা কোনো কাজে পাঠাতো না। মায়ের শরীরটা আগে থেকেই খারাপ। কিছু না কিছু লেগেই থাকে। তাই মায়েরও হাড়ভাঙা কাজ করা সম্ভব ছিল না। কোনো উপায় না পেয়ে আমরা নানাবাড়ির দ্বারস্থ হই। কিন্তু আমার দুই মামা মিলে আমাদের বের করে দেয়। বাড়ির পাশেই এক কামার কাজ করছিল। আমার মা যখন ঘুরে-ফিরে বড় মামার পা ধরছিল, তখন ছোট মামা কামারের ওখানে থেকে একটা জ্বলন্ত শিক এনে আমার মায়ের পিঠে দিতে যায়—সামনে পড়ি আমি।’ কপালের পোড়া দাগে হাত দিয়ে মুচকি হাসল মিন্টু, ‘তারপর থেকে এই দাগ সঙ্গী হয়ে গেল। সেই সময় যদি আল্লাহ্ সহায় না হতেন আর দাদামশাই আমাদের খাওয়ানো-পরানোর দায়িত্ব না নিতেন; তাহলে হয়তো আমরা বেঁচেই থাকতাম না।’
দীর্ঘশ্বাস ফেলল স্নিগ্ধা। বাস্তবতা কত ভয়ঙ্কর! বড় বড় বাড়ির সাজানো-গোছানো কক্ষে থেকে, মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত পরিবারের হাল জানা গেলেও অনুভব করা যায় না। তার জন্য সেই মানুষদের সাথে মিশতে হয়। সিকিন্দারের দ্বিতীয় স্ত্রী স্নিগ্ধাকে কথার আঘাত দিলেও সে যথেষ্ট বিলাসী জীবনযাপন করেছে। তখনো এমন সব নিম্নবর্গের মানুষের কথা পড়েছে স্নিগ্ধা, কিন্তু কখনও এভাবে অনুভব করতে পারেনি—আজ যেভাবে অনুভব করছে। এই অনুভূতি কষ্টদায়ক। খেজুর-কাঁটার মতো পীড়াদায়ক।
বটের শিকড় থেকে উঠল স্নিগ্ধা। মিন্টুর সামনে দাঁড়িয়ে পোড়া দাগটার দিকে তাকিয়ে থাকল। কত ছোটবেলার দাগ! অথচ তাজা মনে হচ্ছে। মানুষের হৃদয়টাও এমন। হৃদয়ে আঁচড় কাটা ক্ষত অনেক আগের হলেও তা সর্বদা তাজা।
‘আমি কি তোমার দাগটাকে একবার ছুঁয়ে দিতে পারি?’ স্নিগ্ধা সরল মনে মিন্টুর অনুমতি চাইল।
স্নিগ্ধার সারল্যে মিন্টুর উত্তরের ঘর শূণ্য হয়ে গেল। সে উত্তর ‘না’ দিয়ে শেষ করবে বলে প্রস্তুতি নিতে লাগল। কিন্তু অবশেষে ‘না’ বাক্যটা বলবে ভেবেও বলতে পারল না।
স্নিগ্ধা আবারও বলে উঠল, ‘শুধু একবার ছুঁয়ে দেবো।’
এবার আর স্নিগ্ধা উত্তরের অপেক্ষা করল না। হাত বাড়িয়ে দিল মিন্টুর দিকে। মিন্টু প্রথমে মাথাটা একটু পিছিয়ে নিল। কিন্তু স্নিগ্ধার হাত থামল না; সোজা মিন্টুর কপালের পোড়া দাগে গিয়ে ক্ষান্ত হলো। স্নিগ্ধার ছোঁয়ায় আপনা-আপনি চোখ বন্ধ হয়ে এলো মিন্টুর। তোলপাড় শুরু হলো অন্তরের গভীরে কোথাও। স্নিগ্ধার অনামিকা আঙুল পোড়া দাগের শেষপ্রান্তে গিয়ে থামতেই বাকি চারটি আঙুলও কপালের পার্শ্বে বেশ আলতো করে নিজেদের স্থান দখল করে ফেলল। বাম হাতটিও স্নিগ্ধা বাড়িয়ে দিল। দুই হাতের মাঝে মিন্টুর রোদে পোড়া শ্যামলা মুখটাকে আগলে নিল। এই ছেলের শ্যামলা মুখটাতে এত কীসের না জানা মায়া লুকিয়ে আছে কে জানে! একমাত্র স্নিগ্ধার চোখেই সেই মায়া ধরা পড়ে। এই মায়া বোধহয় শুধু আপনজনের জন্য।
__________
তাওহিদা রান্নায় ব্যস্ত। উনুনের তাপে, রোদের তেজে ঘেমে একাকার। বারবার শাড়ির আঁচল দিয়ে ঘাম মুছছেন তিনি। প্রতিদিন এত গরমে তিনবেলা রান্না করার সময় বেহাল দশা হয়। কিছুই করার নেই। খেতে গেলে তো রান্না করতে হবে। এই বাড়িতে কাজের মেয়ে থাকলেও তার রান্নার হাত ভালো না বলে খাবার কেউ মুখে তোলে না। রান্নাও এক শিল্প, সবার দ্বারা কি হবে? চেষ্টা থাকতে হবে; সেই চেষ্টা কাজের মেয়েটির নেই।
তাওহিদা আরেকবার কপালের ঘাম মুছে উনুন থেকে তরকারির ডেকচি নামালেন। এমন সময় শফিকের আগমনে আরও লম্বা ঘোমটা টানতে হলো এই গরমে। শফিক সচরাচর রান্নাঘরে আসেন না। আজ যখন এসেছেন, নিশ্চয় কোনো ব্যাপার আছে।
‘বাবা আপনি এখানে?’ টুল এগিয়ে দিলেন তাওহিদা, ‘কিছু প্রয়োজন হলে বলে পাঠাতেন।’
তৎক্ষণাৎ কোনো উত্তর দিলেন না শফিক। টুল টেনে বসলেন, ‘তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল মা।’
‘বলুন বাবা।’
শফিক খুব ধীরে ধীরে বলতে লাগলেন, ‘সিকিন্দার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়া তো অনেক কয় বছর হলো। তুমি তখন থেকেই একা। এখন যখন স্নিগ্ধা এসে তোমার একাকীত্ব একটু ঘুচিয়েছে, তখন আমি আবার তোমাকে একা করে দিচ্ছি।’
কিছু বুঝতে পারলেন না তাওহিদা। আবার তাকে একা করে দেওয়ার কথাটা একদম ঘোলা।
‘আমাদের শাওনকে তো তুমি চেন।’ বলে তাওহিদার মাথা নাড়িয়ে ইতিবাচক উত্তর দেখে নিলেন শফিক, ‘ওর সাথে আমাদের স্নিগ্ধার বিয়ের কথা ভাবছি। ক’দিন আগে আতিক এসে প্রস্তাব দিয়েছিল। আমি অনেক ভেবে দেখেছি। শাওন ছেলেটি খুব ভালো। বাড়ির সবাই শাওনকে পছন্দ করেছে। এখন তোমার মতামত চাইছি।’
তাওহিদা ঘোমটা আরেকটু টেনে বললেন, ‘আমি কিছু বলব না বাবা। আপনার আর স্নিগ্ধার মতামত’ই আমার মতামত।’ শফিক রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই তাওহিদা আবারও বললেন, ‘ওর বাবাকে কি জানানো হয়েছে?’
দাঁড়ালেন শফিক। তাকালেন তার মেয়ের মতো তাওহিদার দিকে।
এই কয়েক বছরে তাওহিদার মুখে হাসি খুব কম’ই দেখা গেছে। কিন্তু সে যে প্রচণ্ড ধৈর্যশীল এক সংগ্রামী নারী, তা তার চোখের দুই মনির দিকে তাকালেই বুঝা যায়। স্বামীর প্রতি তার অভিযোগ নেই বলে কী অভিমানও নেই? এত বছর তাওহিদাকে ছেড়ে অন্যত্র ঘর বাঁধার জন্য কি সিকিন্দারের উপর তার এতটুকু রাগ জমা হয়নি? নিশ্চয় হয়েছে। কিন্তু ‘স্বামী’ সম্বোধনটি সবকিছু ভুলিয়ে দেয়। একজন বিবাহিতা নারীর কাছে তার স্বামী অপেক্ষা দামী অলংকার আর কী হতে পারে? সে অলংকারে অসময়ে মরচে পড়লে হৃদয় তো দগ্ধ হবেই!
শফিক লাঠিতে ভালোভাবে ভর দিলেন। তাওহিদার অবস্থা তিনি অল্প হলেও বোঝেন। একটা মেয়ে স্বামী, সন্তানকে ছেড়ে এতদিন নীরবে থেকেছে। অন্তর খুব জ্বললেও গন্ধটা বাইরে বেরোতে দেয়নি। একাই গুমরে গুমরে শেষ হয়েছে। এখন সন্তানকে পেয়ে নিশ্চয় স্বামীকেও ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন তাওহিদার মনে এসেছে। এতদিন তো একা জীবন চললো তার, কিন্তু আর কত দিন?
শফিক অনেক্ষণ পর মুখ খুললেন, ‘আমি খেয়াল করেছি সিকিন্দার প্রতিদিন সন্ধ্যায় একবার স্নিগ্ধাকে ফোন দেয়। আজ ফোনটা তুমি ধরো। নিজের মুখে বলো সব।’
বুক কেঁপে উঠল তাওহিদার। কী করে ওই মানুষটির সাথে কথা বলবেন তিনি? যার সাথে গত ছয়টি বছর কথা হয়নি, তার সাথে কথা বলার ভাঁজ পাওয়া যাবে? এতদিন পর কী’ই-বা বলবেন তিনি? তাছাড়া সিকিন্দার কি তাওহিদার স্বর শুনেও লাইন না কেটে থাকবেন?
__________
গ্রামে শব্দদূষণ খুব কম বলে সন্ধ্যায় পথ চলার আনন্দ অন্যরকম সুখময়। তারউপর যদি প্রিয় মানুষটি পাশে থাকে… লম্বা শ্বাস নিল স্নিগ্ধা। শ্বাস নেওয়ার শব্দে পিছু ফিরল মিন্টু। স্নিগ্ধা মিন্টুর কয়েক কদম পেছনে।
মিন্টু দাঁড়াল। বলল, ‘একটু তাড়াতাড়ি চলবে? সন্ধ্যা পেরিয়ে যাচ্ছে তো।’
‘যাক। যেতে দাও।’ উদাশ কণ্ঠে বলল স্নিগ্ধা, ‘তুমি তো পাশে আছ, কীসের ভয়?’
বেকায়দায় পড়ার ভয়ে আর কিছু বলল না মিন্টু। সেও স্নিগ্ধার মতো ধীরে ধীরে পথ চলতে লাগল। স্নিগ্ধার কাছে বেকায়দায় পড়ার বিষয়টা মিন্টুর কাছে ভয়ঙ্কর—একটা ছুটে আসা গুলির থেকেও হয়তো।
আকাশে আজ চাঁদ নেই। মেঘের আড়ালে অসময়ে ঘুমিয়ে গেছে হয়তো। ফুরফুরে বাতাস, শব্দহীন পথ, প্রিয় মানুষটির সাথে ধীর গতিতে চলা—শুধু অনুপস্থিত রয়ে গেল আকাশ জুড়ে থাকা মিষ্টি চাঁদের ফর্সা আলো। ওটুকু থাকলে সম্পূর্ণতা পেত আজকের সন্ধ্যা।
জমিদার বাড়ির সদর দরজার সামনে এসে দাঁড়াল মিন্টু। স্নিগ্ধাও দাঁড়িয়ে পড়ল। বলল, ‘ভেতরে যাবে না?’
‘না। তুমি যাও।’
‘চলো-না।’
ডানে-বামে মাথা নাড়িয়ে আবারও না বলে দিল মিন্টু। স্নিগ্ধা জোর করল না। সদর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল।
মিন্টু তার কুঁড়েঘরের পথ ধরতেই স্নিগ্ধা ডেকে উঠল, ‘মিন্টু…’ মিন্টু পিছু ফিরল। স্নিগ্ধা মিষ্টি হেসে বলল, ‘কাল বটমূলে আসবে তো?’
মিন্টু একটু সময় নিল। স্নিগ্ধার দিকে তাকাল সে। তার মুখটা দেখা যাচ্ছে না। বাড়ির আলোর ছটা পেছন থেকে এসে মুখটাকে অন্ধকার করে ফেলেছে।
‘কী হলো? আসবে তো?’ ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করল স্নিগ্ধা।
‘আমার তো প্রতিদিন ওখানে কাজ থাকে। যেতে তো হবেই।’
মিন্টুর এমন উত্তরে মুখ মলিন করল স্নিগ্ধা। স্বরে হালকা রাগ মিশিয়ে বলল, ‘অনেক তো গরু, মাছের জন্য গেছ; একবার আমার জন্যেও বটমূলে যেও।’
স্নিগ্ধার মুখনিঃসৃত কথাটি এক মহূর্ত মিন্টুকে অবশ করে ফেলল। মস্তিষ্ক চুপচাপ হয়ে গেল। সবসময় মস্তিষ্কে কিছু না কিছু ভাবনা থাকে, কিন্তু মিন্টুর সব ভাবনা এলোমেলো হয়ে নিশ্চুপ রয়ে গেল। স্নিগ্ধার জন্যে বটমূলে যাওয়া? স্নিগ্ধা আসার পর থেকে রোজ’ই তো তার জন্যে সেখানে মিন্টুর আগমন—কী করে এ কথা বলা যায় স্নিগ্ধাকে?
মুচকি হেসে কুঁড়েঘরের পথ ধরল মিন্টু।
স্নিগ্ধা দরজা লাগিয়ে ভেতরে চলে এলো। মিন্টুর মুখে তৃপ্তির হাসিতে আবদ্ধ হয়ে আছে সে। আচ্ছা, মিন্টুও কী তাকে ভালোবাসে? বাসে হয়তো। নইলে এই তৃপ্তির হাসি কেন?
স্নিগ্ধা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে যাচ্ছে দেখে ডাকলেন তাওহিদা। স্নিগ্ধা শুনল না দেখে আশ্চর্য হলেন তিনি। মনি তখন ওপর থেকে নামছিল। স্নিগ্ধাকে আনমনা দেখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকল।
তাওহিদা মনিকে বললেন, ‘কী হয়েছে স্নিগ্ধার?’
মনি বিড়বিড় করে বলল, ‘প্রেমের রোগ!’
তাওহিদা শুনতে পেলেন না বলে চোখ মিরমির করে তাকালেন। মনি গলা ঝেড়ে স্নিগ্ধাকে ডাকল। স্নিগ্ধা অল্প চমকে উঠে মনির দিকে তাকিয়ে থাকল। ঘুম থেকে ওঠার পর যেমন কয়েক মহূর্ত কী হচ্ছে বুঝা যায় না—তেমনি স্নিগ্ধার অবস্থা হলো।
মনি মুখ চেপে হেসে বলল, ‘কোন শহরে চলে গেছেন মহারানী?’
স্নিগ্ধা মনির কান চেপে ধরতেই তাওহিদা বলে উঠলেন, ‘ওর কান ছেড়ে এদিকে আয়। তোর সাথে কিছু কথা আছে।’
তরতরিয়ে নিচে নামল স্নিগ্ধা। মা’কে জড়িয়ে ধরল। দিনশেষে একবার মা’কে জড়িয়ে ধরলে সব বিষণ্নতা কেমন করে যেন তৃপ্তিতে পরিণত হয়। মায়ের কী অসীম শক্তি! তাওহিদাও মেয়েকে আঁকড়ে ধরলেন। এই একমাত্র নাড়ি ছেঁড়া ধন তার। এই তো ক’দিন হলো কাছে এলো। এরমধ্যেই আবার দূরে চলে যাবে ভাবতেই বুক ফেটে যাচ্ছে তাওহিদার। কতদিন একজন মা, একজন স্ত্রী রয়ে শয়ে থাকতে পারে? সেও তো মানুষ।
স্নিগ্ধা আদুরে কণ্ঠে বলল, ‘কী কথা বলবে মা?’
গলা ঠিক করলেন তাওহিদা, ‘তোর বিয়ের।’
চমকে তাকাল স্নিগ্ধা। ছেড়ে দিল তাওহিদাকে। বিস্ময়ে কয়েক মহূর্ত চুপ করে থাকল সে। কী বলবে, সেই ভাবনা দুষ্কর হয়ে ভয়ঙ্কর দৈত্যর মতো দাঁড়াল।
(চলবে)