#ভ্রমণ
#পর্বঃ৬
লিখাঃসামিয়া খান
সাইরাহ্ এর কাছে ইয়াদকে এখন অদ্ভুত পাগল লাগছে।মাত্র দুই তিনদের পরিচয়ে কেউ এতো পাগলামি করতে পারে তা তার জানা ছিলনা।তার ভাই তারেক ও তার মা রুম থেকে চলে গিয়েছেন তাকে আর ইয়াদকে একা রেখে।ইয়াদই মূলত তাদের চলে যেতে বলেছেন সাইরাহ্ এর সাথে কিছু কথা বলার জন্য।সাইরাহ্ এর মা প্রথমে রাজী হয়নি তারেকও দ্বিধায় ভুগছিলেন পরে ইয়াদের জোড়াজুড়িতে চলে গেলেন।ইয়াদ রুমের দরজা কিছুটা চাপিয়ে বিছানায় এসে বসলেন।সাইরাহ্ ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে তার থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসলেন।ইয়াদ পিছনে দুহাতে হেলান দিয়ে দিলেন।
“আমার মা নেই সাইরাহ্।সে মৃত।আমি যখন দশ বছরের তখন আত্নহত্যা করেন।আমার বাবা খুব সহজ সরল মানুষ।যদিও ব্যবসায়ী তবুও মানুষের পেটের ম্যারপ্যাচ খুব একটা বুঝে উঠতে পারেন না।আমি আমার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।যা চেয়েছি তাই পেয়েছি।বাসায় বাবা,আমি ও দাদু ছাড়া আর কেউ নেই।তিনি আমার আপন দাদু নয় আমার বাবার ফুফু লাগেন।আমাকে আদর করার লোকের অভাব নেই।এজন্য কিছুটা পজেসিভ আর এগ্রেসিভ আমি।ছেলেটা তোমাকে টাচ করেছিল কালকে।যা মটেও সহজ নয় আমার জন্য।”
সাইরাহ্ মনোযোগ দিয়ে ইয়াদের কথা শুনছিলেন।
“আপনি মাত্র তিনদিনের পরিচয়ে এমন করলেন কেন?”
“স্বাভাবিক।তুমি মানুষ চিনো?ছেলেটা যে গাঞ্জাখোর তা কি বুঝেছো?”
“মানে সে গাঞ্জাখোর কেন হবে?”
“বোকা চাঁদ আমার।ছেলেটা নেশাখোর আমি এক দেখায় বুঝেছি।এমনকি বখাটে ।খবর নিয়ে দেখো নষ্ট পল্লীতেও এই ছেলের আনোগোনা রয়েছে।”
“আমি কেন খবর নিতে যাবো?”
“পাগল মেয়ে আপনি।এটা কথার কথা ছিল।”
শেষের কথা বলার সময় ইয়াদ একটু হেসে দিলেন। তার রাগ কিছুটা হলেও কমেছে।
“আপনার রাগ উঠলে আপনি তুমি আর তুই করে বলেন ইয়াদ।”
“হয়তো আমার চাঁদ।”
আমার চাঁদ কথাটা শুনে সাইরাহ্ এর মস্তিস্কে প্রজাপতি উড়া শুরু করলো।বুকে আলাদা ধুকপুকানি।জীবনে কখনো ছেলের সাথে তেমন করে কথা বলেনি সে তার ভাই ছাড়া।ইয়াদই প্রথম।কে জানে হয়তো।ইয়াদই শেষ।
,
,
“তুমি আমার মেয়েকে তিনদিনের পরিচয়ে মারার হুমকি দাও।কেমন ছেলে তুমি?”
সাইরাহ্ এর মায়ের সামনে মাথা নিচু করে বসে রয়েছেন ইয়াদ।কিছু বলছেন না।আর বলবেন বা কি?পাশে তারেক মুখ কালো করে বসে রয়েছেন।
“আন্টি আমি ছেলে হিসেবে বড্ড খারাপ।কিন্তু মানুষকে চিনতে পারি।ও ছেলেটা সাইরাহ্ কে কোন ইনটেনশনে টাচ্ করছিলো তা আমি দূর থেকেই বুঝতে পেরেছি।”
“কথাটা সত্য বলেছে কিন্তু স্যার।”
“তা আমি জানি ইয়াদ।কিন্তু তোমার এটা করা ঠিক হয়নি।”
“আমি মারাত্বক ভাবে দুঃখিত।আমি তার জন্য মাফও চাচ্ছি।প্লিজ আমাকে মাফ করুন।”
“ঠিক আছে একটা শর্তে।তোমার পরিবারকে আসতে বলো।”
“অবশ্যই আজকে বিকেলেই আসবে বাবা আর দাদু।আর যদি সব ভালো থাকে আমি আজকে রাতেই সাইরাহ্ কে বিয়ে করবো।”
“সেটা সময় বলবে ইয়াদ।”
,
,.
“বাবা আসবো?”
ইয়াদের সুমিষ্ট কণ্ঠে বাবা ডাক শুনে সবসময় এক আলাদা আত্নতৃপ্তি লাভ করেন আতাফ ইউসুফ।একমাত্র ছেলে যেন তার যক্ষের ধন।
“বাহ আমার সূর্য আজকে বাসায় এসেছে।এর থেকে খুশির কি হতে পারে?”
“বাবা!আপনি কেমন আছেন?”
বাবার দিকে এগিয়ে একবার তাকে আলিঙ্গন করলেন ইয়াদ।আতাফের যেন কলিজা জুড়িয়ে যায় ইয়াদকে কাছে পেয়ে।
“তা ইয়াং ম্যান কি খবর?”
“বাবা আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করেছি।চাঁদের মতো কন্যাটা।”
“বাহ!দারুণ খবর।আমি কি পরিচয় জানতে পারি?”
“হোয়াই নট।তারেক কে চিনো?”
“অফিসের তারেক ছেলেটা?”
“জ্বী।তার বোন।”
“ছেলেটা ভালো রয়েছে।চলো বসে কথা বলি।কি নিবে বলো রাম অর হুইস্কি?”
“ওভিয়াসলি রেড ওয়াইন।”
সামনাসামনি দুটো চেয়ারে ইউসুফ আর তার বাবা বসলেন।
“বিস্তারিত শুনি।”
“তিনদিন আগে পরিচয় আমাদের।মেয়েটা সহজ সরল চাঁদের মতো সুমিষ্ট।”
“তোমার মায়ের মতো?”
“কখনো না।চাঁদ এরকম নয়।সে কতো উৎকৃষ্ট ওই মহিলার থেকে।”
“ছেলে, সে মৃত।”
“হোক কিন্তু তার কৃতকর্ম মৃত নয়।”
“তুমি তোমার মা কে অনেক ঘৃণা করো তাই নাহ?”
“জানিনা বাবা।আজকে বিকেলে দাদু সহ রেডি থেকো।কোন প্ল্যান থাকলে তা ক্যানসেল করে দাও।”
“কেন?”
“সাইরাহ্ এর মা যেতে বলেছেন।”
“একদম ঠিক সময়ে চলে রেডি হয়ে যাবো।তুমি তো সঠিক জবাব দিলে না?”
“কীসের? ”
“তোমার মা কে ঘৃণা করো নাকী?”
“তুমি ঘৃণা করো?”
“কখনোই না।সে তোমার মাতা।ঘৃণা করার প্রশ্নই উঠেনা।”
“তাহলে আমিও করিনা।আমি এখন আসছি বাবা।”
,
,.
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে ইয়াদ দেখলেন মারুফ তার দাদুর সাথে খোশগল্পে মেতে রয়েছেন।ইয়াদ কিছু না বলে নিচে বসে তার মাথাটা তার দাদুর কোলে দিয়ে দিলেন।
“কি হইছে বাপজান?”
“ভালো লাগেনা দাদু।”
“কেন? বউ আসলেই ভালো লাগবো।”
“সে আসলে তো লাগবেই।তাও ভালো লাগেনা।”
“ক্যান সূর্য?”
“আমিই কেন ক্ষেত্রজ হতে গেলাম দাদু?”
ইয়াদের দাদু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
“তা কি বলা যায় বাপজান?এটা নিয়তি ছিল।”
“আমার ক্ষেত্রেই নিয়তি এতো খারাপ?”
“তা কি বলা যাবো বাপ?”
“দাদু এখন আমি আসছি।মারুফ চল।রুমে যাই।”
মারুফ ও ইয়াদ রুমে এসে পড়লেন।মারুফ বিছানায় দরাম করে শুয়ে পড়লেন তার পাশে ইয়াদ।
“ইয়াদ তোর অনেক মন খারাপ হয় তাই না এই ক্ষেত্রজ সন্তান হওয়ায়?”
“মটেও না।কখনো না।”
“তাহলে বাহিরে ওগুলো কি ছিল?”
“আমার বাবা এমনিতে এটা নিয়ে সারাজীবন ধরে কষ্ট পেয়ে যাচ্ছে।আমি যখন কষ্ট দেখাই তখন সে খুশি হয়।আর তার খুশির জন্য আমি সব করতে পারি।”
“ওহ আচ্ছা।”
“হুম।”
“তোর মায়ের জন্য কষ্ট হয়না?”
“নাহ।মায়ের কাজে কোন খারাপ ছিলনা।বাবা শারীরিক চাহিদা মিটাতে অক্ষম।এজন্য মা আর বাবা দুজনের ইচ্ছায় তারা আমাকে ক্ষেত্রজ করেন।এতে দোষ মায়ের নেই।”
“পরে যে ওই লোকের সাথে দশবছর পরকীয়া?”
“ওটা ব্যাপার না।”
ইয়াদের কথা শুনে মারুফের শরীরে ঘাম ছুঁটে গেলো।
চলবে,,,
বিঃদ্রঃগল্পের স্বার্থের জন্য কিছু অপ্রীতিকর কথা উল্লেখ করতে হয়েছে।এতে আমাকে ক্ষমা করবেন।