ভ্রমণ পর্বঃ১৪

0
437

#ভ্রমণ
#পর্বঃ১৪
লিখাঃসামিয়া খান

ইয়াদের পিতা আতাফ খান নিজ স্টাডি রুমে বসে রয়েছেন।ব্যবসার কাজ যদিও এখন সব ইয়াদই দেখেন তবুও এখন তো সে বাড়ীতে নেই সেজন্য তাকেই কিছুটা দেখতে হচ্ছে।হাতে তার আর্টুরো ফুয়েন্টে ব্রান্ডের সিগার।তার বহু পুরনো অভ্যেসের মধ্যে অন্যতম অভ্যেস হচ্ছে সিগার খাওয়া।সেক্ষেত্রে আর্টুরো ফুয়েন্টে ব্রান্ড তার কাছে বেশী গ্রহণযোগ্য।দরজায় হালকা করাঘাত হলেন।সেদিকে তাঁকিয়ে আতাফ দেখলেন ইয়াদের দাদু দাঁড়িয়ে রয়েছেন।হাতে তার এক থালা ছানার সন্দেশ।

“কিছু বলবে ফুফুজান?”

“তোর জন্য সন্দেশ নিয়ে আসলাম।এটা তো খুব পছন্দ করিস তুই।”

“নিয়ে যাও ওটা।আর হ্যাঁ ভেতরে আসতে হবেনা।”

ইয়াদের দাদুর মুখ থেকে নিমিষেই হাসিটা উবে গেলো।এতে যদিও নতুন কিছু নেই।তার আদরের ভাতিজা খুব বেশী তার সাথে কথা বলেন না।এবং যতোটুকু না বললেই নয় ঠিক ততোটুকু বলেন।দাদু আর কথা না বাড়িয়ে প্লেট নিয়ে ফেরত চলে গেলেন।এক সময় তার হাতের সন্দেশ না হলে চলতো না আতাফের।কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ এই মিষ্টি তার নিকট তেতো।
,
,
ইয়াদ আর সাইরাহ্ বেশ কয়েকদিন গ্রীসে থেকে দিন তিনেক আগে বাংলাদেশে এসেছেন।সে সুবাদে তারেক তার বোনের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন।সে তার ইয়াদের সাথে একটু নয় বেশীই স্বাভাবিক।তার ব্যাপারে যতোটুকু জানতেন তারেক পুরোটাই সে ধামাচাপা দিয়েছে সাইরাহ্ এর জন্য।আর যাই হোক ইয়াদ তার বোনের কোন ক্ষতি করছেনা উল্টো রাণী বানিয়ে রেখেছে।চুপ থাকলে যদি তার বোনের জীবনটা সুন্দর থাকে তবে সে নিরবব্রতে নিয়োজিত রাখবেন নিজেকে।

সাইরাহ্ এর সাথে দেখা করে সে ইয়াদের দাদুর সাথে দেখা করতে আসলেন।বয়স্কা মহিলাটা বেশ মিশুক।তারেককে দেখেই সে একটা পান বানিয়ে দিলেন।সুপারি, মিষ্টি জর্দা,খর,লং,সজ দিয়ে একটা খিলিপান।খেতে বেশ সুস্বাদু হয়।

“তো মামা হতে মন চায়না তারেক?”

পান এগিয়ে দিতে দিতে তার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন ইয়াদের দাদু।

“হতে তো মন চায়।সময় হলে হবেনি।”

“আমার তো মনে হয় খুব শীঘ্রই খবর পাবে।”

“কীরকম?”

“আমার হলো জহুরীর চোখ বুঝলা।”

অদূর ভবিষ্যত ভেবে চোখ দুটো মনে হয় চকচক করে উঠলো ভদ্রমহিলার।এদিকে তারেকের মনটা খারা হয়ে উঠলো।সে চুপ থেকে ভালো কাজ করছে কিনা কে জানে।

সাইরাহ্ এর বাড়ী থেকে এসে তারেক সিএনজিতে উঠে মাইমুনাকে কল দিলেন।

“কি করছো মুনা?”

“কিছুনা বসে ছিলাম।”

“ওহ।”

“আপনার কিছু হয়েছে?আপনি এতো মনমরা কেন থাকেন?”

“এমনি।”

“সেদিন ওমন করলেন কেন জেরিন আপুর স্বামীর নাম ইউসুফ শুনে।”

“আমি কি করলাম আবার?”।

“জানেন আমি এটা বুঝতে পারছিনা সকলে কেন বলছে যে আপুর হাজবেন্ডের নাম মারুফ।সেটা তো ইউসুফ।”

“তুমি কাউকে বলোনি তো একথা আবার?”

“আপনি না করার পর এটা কাউকে বলিনি আর।”।

“গুড।বলবেও না।”

“সাইরাহ্ আপুর হাজবেন্ডের নাম ও তো ইউসুফ তাই না আপু?”

“তুমি কি বলতে চাচ্ছো মুনা?”

“না মানে..।”

আর কিছু বলতে দিলেন না মাইমুনাকে তারেক।তার আগেই কল কেঁটে দিলো।

,
,
“আপনাকে অনেক মনে হচ্ছিলো প্রজাপতি।”

ইনায়ার হাত ধরে মিষ্টি করে কথাটা বলল ইয়াদ।

“এজন্যই বোধহয় এতোদিন গিয়ে গ্রীসে ছিলেন।”

“কি করবো বলেন?আপনি ছিলেন না ঢাকায়।একা একা ভালো লাগছিলো না তাই ভাবলাম ট্যুর করে আসি।”

“ইশ!তাই নাকী।”

“জ্বী রমণী।”

“আমার জন্য কি নিয়ে এসেছেন আপনি?”

“সেটা তো সময় হলেই পাবেন।আচ্ছা এখন আপনার খালা সুস্থ আছে?”

“হুম।হুট করে অসুস্থ হয়ে গেলো মা বলল দেখা করে যা।অনেকবার বলার পর আর না করতে পারিনি। তাই চলে গেলাম।কফি খাবেন?”

ইয়াদ হ্যা বোধক মাথা নাড়ালেন।

“এটা ঠিক করেছেন।অসুস্থ মানুষ দেখে আসলে তো আর ক্ষতি নেই।”

“হুম।বসুন আপনি।”

ইনায়া চলে গেলে ইয়াদ ফোন বের করে সাইরাহ্ এর খোঁজ নিলেন।সাইরাহ্ কে ইদানীং বেশ সুন্দর দেখা যায়।ইয়াদ বার বার প্রেমে পড়ে তার।বসে বসে ইয়াদ তাদের গ্রীসে কাঁটানো একান্ত মুহুর্তের ছবিগুলো দেখছিলেন।এই মুখ দেখে তো সে সহস্র রজনী পার করতে পারবেন।

“আপনার কফি।”

“জ্বী দেন।”

কফিতে একটা চুমুক বসালেন ইয়াদ।

“ইয়াদ আপনাকে একটা কথা বলি?”

“জ্বী বলুন।”

ইনায়া বেশ গম্ভীর হয়ে কথাটা বললেন।

“আমাকে বিয়ে করবেন কবে?”

“এখন নয় সময় আছে।”

ইয়াদের এরকম সোজাসাপ্টা কথায় আর কিছু বলার প্রয়োজন মনে করেন না ইনায়া।এজন্য কথাটা ওখানেই শেষ করেন।

কিছুসময় পর ইয়াদ চলে গেলে ইনায়া নিজের লাইব্রেরিতে এসে বসলেন।তার বইয়ের জন্য আলাদা একটা রুম রয়েছেন।হঠাৎ কিছু একটা দেখে জোরে জোরে কাজের মেয়েকে ডাকতে শুরু করলেন।

“কিছু বলবেন ম্যাডাম।”

“এ রুমে কেন এসেছিলে?”

“কই ম্যাডাম আমি তো আসিনি।”

“তাহলে বইগুলো এমন করে কেন রাখা?”

কাজের মেয়ে খেয়াল করলেন বইগুলো একটু অগোছালো।

“জানিনা তো ম্যাডাম।”

“আমি যাওয়ার পর কেউ এসেছিল বাসায়?”

“হুম একটা মেয়ে এসেছিল।”

“মানে কে এসেছিল?আর তাকে এখানে কেন আসতে দিলে।”

“জেরিন নাম বলেছিল।”

ইনায়া ভ্রু কুঁচকে ফেললেন।জেরিন হঠাৎ কেন এ বাসায় আসলো।

“ঠিক আছে যাও।”

এতো কাজের প্রেশারে ইনায়া জেরিন এর কথা দিব্যি ভুলে ছিলেন।ফোন হাতে নিয়ে জেরিন ফেসবুক একাউন্ট, হোয়াটসঅ্যাপ একাউন্ট কিছুই পেলো না ইনায়া।বাধ্য হয়ে কল করতে গিয়ে দেখে ব্লক করা।মনমরা হয়ে সে একটা বই নিয়ে পড়া শুরু করলো।প্রায় দেড় ঘন্টায় বইটা পড়ে শেষ করে ফেললেন।আগেই অনেকটা পড়া ছিল।সমরেশ মজুমদারের লেখা “হিরে বসানো সোনার ফুল।”

ইনায়ার একটা অভ্যেস আছে যখন যে বইটা শেষ হবে তখন তার নাম ডায়েরিতে লিখে রাখা।এবারও সে বইটার নাম লেখার জন্য ডায়েরি হাতে নিলো।ডায়েরি খুলেই ইনায়া বেশ কিছু জিনিস দেখতে পেলেন।শুরুতেই চোখ আঁটকে গেলো”ইনায়া আমি জেরিন” একথায়। তারপরের শব্দগুলো ইনায়া কীভাবে পড়লো নিজেও জানেনা।তার দমবন্ধ লাগছে।মনে হচ্ছে পৃথিবীর বায়ু কমে গিয়েছে।সে ঠিকমতো নিশ্বাস নিতে পারছেন না।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here