#ভেতরে_বাহিরে
পর্ব:২৯
লেখিকা: #রুবাইদা_হৃদি
মাধুর্যের হৃৎপিন্ডের গতি অত্যাশ্চর্য ভেবে বেড়ে চলেছে। কন্ঠের খাদ নামিয়ে বলল,
‘ নামিয়ে দিন।’
‘ হুশ…।’ আবেশ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল। তার চোখেমুখে রহস্যময় হাসি লুকায়িত।মাধুর্য তার শার্টের কলার মুচড়ে ধরে পিটপিট চোখে চারদিকে চোখ বুলিয়ে বলল,
‘ সবাই দেখে ফেলবে।’
‘ সবাই সবাইকে নিয়ে ব্যস্ত।আর তোমার এতো না ভাবলেও চলবে।’
‘ আরে,আমাকে নিয়ে ব্যাপার। আমি না ভাবলে কে ভাববে!’ মাধুর্য রুক্ষভাষী হয়ে বলল। আবেশ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে রুমের দিকে এগিয়ে চলেছে।
তবে তাদের রুমের দিকে না গিয়ে ডান পাশের বড় বড় রুম গুলোর দিকে এগিয়ে গেলো। মাধুর্য আবারো অবাক হয়ে ফিসফিস করে বলল,
‘ কোথায় যাচ্ছেন! রুমে যাবো আমি।নামিয়ে দিন।’
‘ তোমাকে ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলতে নিয়ে যাচ্ছি।’
আবেশের কথায় মাধুর্যের মাঝে পরিবর্তন হলো না। আবেশকে প্রশ্ন করে লাভ হবে না ভেবে চুপ করেই রইলো। আবেশ ডানপাশের কাচ ঘেরা রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে মাধুর্যকে নামিয়ে দিয়ে বলল,
‘ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো।’
‘ কোথায় যাচ্ছেন,আপনি !’
‘ অপেক্ষা করো।’ মাধুর্যের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে জবাব দিয়ে আবেশ তালা খুলে ভেতরে চলে গেলো। সাথে সাথে হালকা ভেজিয়ে রাখলো দরজা। মাধুর্য বেশ অবাক হয়ে আছে। এই বাড়িতে আসার পর থেকে এই রুম নিয়ে মাথা না ঘামালেও মাঝেমধ্যে রুমের ভেতর যাওয়ার ছোট একটা ইচ্ছা জাগ্রত হতোই। তবে সে ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়ার মতো কাজটা করার সময় হয়ে ওঠে নি তার। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে তবুও আবেশের বের হওয়ার নাম নেই দেখে কিছুটা ভয় আর অস্বস্তি লাগছে তার।
দরজায় হাত দিয়েও বারেবারে ফিরে যাচ্ছে। ভেতর থেকে সাড়াশব্দ ও পাওয়া যাচ্ছে না। মাধুর্য কাঁপা গলায় ডাক দিলো,
‘ আ..বে..শ। কোথায় আপনি !’
প্রত্যুত্তর এলো না। বাতাসের সাঁই সাঁই শব্দ ভেসে আসছে খোলা জানালা দিয়ে। রাতের গভীরতা বেড়েছে। মাধুর্য ভাবছে সে দরজা খুলবে কি’না !
সবকিছু ভেবেই ভয় নিয়ে দরজার হাতলে হাত রাখতেই দরজা খোলার শব্দ হয়। মাধুর্য ভয় পেয়ে দু’পা পিছিয়ে যেতেই আবেশ মৃদু হাসি মুখে টেনে বলল,
‘ অপেক্ষা করানোর জন্য,দুঃখিত।’
‘ এই রুমের ভেতরে কী আছে ?’ মাধুর্য বিলম্ব না করে প্রশ্ন করতেই আবেশ হেসে বলল,
‘ রুমের ভেতরে আরেকটা রুম আছে।’
‘ হেয়ালি করবেন না। আমি দেখেছি কাচ ঘেরা একটা রুম আছে ভেতরে। এমন কেন ?’
মাধুর্যের প্রশ্নে অপ্রস্তুত হলো না আবেশ। সে ওইভাবেই ঠাই দাঁড়িয়ে আছে । কিছুক্ষণ বাদে মাধুর্যের হাত টেনে ধরে বলল,
‘ আমার সাম্রাজ্য চলো,আমার রাণী।’
মাধুর্য কিছু বলার পূর্বেই কাচ ঘেরা রুমের দরজা খুলে গেলো একাই।
রুমের দরজা খুলতেই মাধুর্য অবাক হয়ে গেলো। সম্পূর্ন কাচ ঘেরা ছোট একটা রুম। যার মাঝ বরাবর ছোট একটা বেড রাখা। তার পাশেই,বড় বড় দুটো বুক শেলফ। যাতে রাখা অজস্র ফাইল আর বই। পাশেই সাজানো গোছানো,টেবিল।
ঘরের মাঝে আর কিছু নেই। শুধু দুটো বড় বুক শেলফ ছাড়া। মাধুর্যের হাত ধরে আবেশ বলল,
‘ এটা হচ্ছে প্রশান্তি।যা তোমার আর আমার।’
‘ কিন্তু আপনার ওই রুম বেশি সাজানো গোছানো।’ মাধুর্য চারদিকে চোখ বুলিয়ে বলল। আবেশ হেসে বলল,
‘ এখন থেকে এই রুম তুমি সাজিয়ে রাখবে।’
মাধুর্য চারদিকে চোখ বুলাচ্ছে। আবেশ নির্বিঘ্নে মাধুর্যকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
___________
আকাশে তুলোরাশি গুচ্ছ ভাবে উড়ে বেড়াচ্ছে। নীল জুড়ে সাদার মেলা। তিরতির করে বাতাস বইছে। রোদের সূক্ষ্ম একফালি রশ্মি কুয়াশা ভেদ করে দোল খেলছে বারান্দায়।কেটে গেছে তিনমাস। মাধুর্য টেবিলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে আছে। ফজরের পরে নামাজ পড়ে পড়তে বসেছিলো সে। এর মাঝে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছে টের পায় নি।
আবেশ প্রতিদিন নিয়ম করে হাটতে বের হয়। আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি। মাধুর্যের ঘুম ভাঙ্গলো খানিক বাদেই। ঘড়িতে সময় দেখে দ্রুত উঠে দাঁড়ালো সে।
বেশ সময় পর ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে বাসায় ঢুকতেই বিরিয়ানির ঘ্রাণ নাকে এসে লাগলো। সিড়ি দিয়ে উঠেও দু পা পিছিয়ে গিয়ে রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে মুখে চওড়া হাসি ফুঁটে উঠলো তার।
আস্তেধীরে রান্নাঘরের দরজার সামনে হাতে হাত গুজে দাঁড়ালো সে ।মাধুর্য তখন ব্যস্ত চুলোর পাশে। দ্রুত কাজ করছে সে। কোমড়ে আঁচল গুজে রেখেছে নিবিড় ভাবে। আবেশ দরজায় টোকা দিতেই মাধুর্য থমকে দাঁড়ালো।
তার হাত-পা বরফের মতো ঠান্ডা শীতল হয়ে উঠলো। সবাই বারবার বারণ করা সত্বেও সে রান্নাঘরে এসেছে। আর মাস দুয়েক পরেই এডমিশন। এই জন্যই কড়া ভাবে পড়াশোনার জন্য জোর করা হচ্ছে তাকে। নাজিফা থেকে লতা বেগম সবাই।
লতা বেগম বেশ স্বাভাবিক হয়েছেন। রাব্বীর ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয়েছে মার্চে। এখন চলছে,ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ। ২০১৩ সালের আর দুটো সপ্তাহ বাকি।
আবেশ মাধুর্যের কম্পন দেখে আবারো মুচকি হাসলো। তবে গলায় গাম্ভীর্যপূর্ণ রেশ টেনে বলল,
‘ রান্নাঘরে কী দরকার তোমার !’
‘ দ..দেখুন,সারাদিন পড়তে কার ভালো লাগে? রোবট ও এতো পড়াশোনা করে না যতোটা আপনি আমাকে দিয়ে করান।’ মাধুর্য শুকনো ঢোক গিলে বলল। আবেশ ঠাই দাঁড়িয়ে বলল,
‘ রোবটের সব টেকনোলজি আগে থেকেই সেট করা থাকে,তোমার ও কি তাই ? একটু আগের পড়াই তো মনে রাখতে পারো না।’
‘ অবশ্যই পারি।আপনার জন্য ভয়ে সব ভুলে যাই।’ মাধুর্য কাল বিলম্ব না করে জবাব দিলো। আবেশের কপালে সূক্ষ্ম ভাজ পড়লো। তবে মুখে এক চিলতে হাসি।
সে সটান দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেলো মাধুর্যের কাছে। শার্টের উপরের দুটো বোতাম খুলে দিয়ে বলল,
‘ তোমার সব সময় আছে,ঘরের মানুষের জন্য সময় বের করার সময় হয় না,তাই না ?’
‘ ঘরের সবার জন্য তো আমি সময় বের করি’ই। নাজিফার সাথে সকালে কোচিং এ যাই। দুপুরে আম্মু’মায়ের সাথে টুকটাক কাজ করি। বিকেলে সবাই মিলে আড্ডা দেই। ইরা ভাবীর কাছে পড়ার জন্য ও যাই। আন্টির সাথেও রাতে ঘুমানোর আগে কিছুক্ষণ সময় পার করি।’ মাধুর্য বিরিয়ানি দমে ফেলে একনাগাড়ে বলল ।
আবেশ তার পাশে দাঁড়িয়ে কিছুটা ঝুঁকে মাধুর্যের কানের কাছে গিয়ে বলল,
‘ আর কেউ নেই তোমার ঘরে?’
‘ আর কে থাকবে !’ মাধুর্য নিজের কাজে মনোযোগ দিয়ে বলল। আবেশ মাধুর্যের কোমড়ে থাকা প্যাচ খুলে দিলো টান দিয়ে। সাথে সাথেই মাধুর্য কেঁপে উঠলো।
লাফিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো আবেশের দিকে। অবাক হয়ে বলল,’এমন করছেন কেন।’
‘ ঘরের মানুষ চোখে পড়েছে?’
মাধুর্য বুঝে চোখ দ্রুত নীচে নামিয়ে মুচকি হাসলো। আবেশ তাকে টেনে নিয়ে বলল,
‘ সব সময় ঘরের মানুষের কথা আগে ভাববে,বুঝলে? যদি না ভাবো তোমাকে খেয়ে ফেলবো।’
‘ দূ…রে যান তো। রান্না করতে দিন।’
‘ আগে দেখি আমার বউকে।’
আবেশের কথায় লজ্জায় বিমূর্ত ধারণ করলো মাধুর্য। আবেশ লজ্জারাঙা মাধুর্যকে দেখে আবেশে অধর ছুঁয়ালো তার কপালে।
মাধুর্য লজ্জায় চোখ বোজে ফেলতেই আবেশ আবারো ঠোঁট ছুঁয়াতেই দোতলা সিড়ির ঘর থেকে কেউ তীব্র চিৎকার করে উঠলো। মাধুর্য চমকে উঠলো। আবেশ সাথে সাথেই অনুসন্ধানী চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ কে চিৎকার করছে!’
‘ জা..জা জানি না।’ মাধুর্য উপরের দিকে তাকিয়ে বলল। বাড়ির সবাই ইতিমধ্যে উঠে গেছে। হই হট্টোগোল লেগে যেতেই,নাজিফা ছুটে আসে উপর থেকে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
‘ লতা আন্টি কোথায় ! সিড়ি ঘর থেকে উনার চিৎকার ভেসে এলো।’
সবাই ছুটে গেলো সেদিকে।গোঙ্গানোর আওয়াজ ভেসে আসছে সে দিক থেকে।
চলবে…
[আমি নানু বাসায় এসেছি। ব্যস্ত সময় পার করছি অসুস্থতা নিয়েই।আজকে বড় পর্ব দেওয়া সম্ভব হয় নি।লেখার সময় পেয়েছি,হাত কেটে শেষ।অজুহাত আমি দেই না,?]