ভেতরে বাহিরে পর্ব-২২

0
1221

#ভেতরে_বাহিরে
পর্বঃ২২
লেখিকাঃ #রুবাইদা_হৃদি
আবেশের চোখমুখ লাল হয়ে আছে ৷জানালার একটুকরো ফাঁক গলে রৌদ্দুর ছুটে উষ্ণ পরশে ভরিয়ে দিলো মাধুর্যের মুখ৷ সেইদিকে তাকিয়ে নিজের চুলে আঙুল চালিয়ে দিয়ে বলল,

‘ ঘুমকন্যা এতো ঘুম কোথাথেকে আসে তোমার৷’

মাধুর্যের সাড়াশব্দ আজও নেই ৷ শীতল বাতাসে কেঁপে উঠছে সে৷ ভোরের হিমশীতল হাওয়া বড্ড লাগামছাড়া৷ মাধুর্য ঘুমের মাঝেই কিছু একটা খুজছে৷ আবেশ সেইদিকে লক্ষ্য করে উঠে কাঁথা টেনে দিলো মাধুর্যের উপর ৷ টেনে দেওয়ার আগে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করলো মাধুর্যের ক্ষতস্থান গুলো ৷ কাল রাতে ফিরে মাধুর্য ঘুমিয়ে গেলেও ঘুমায় নি আবেশ৷ নজরুল সাহেব কাজের সূত্রে তাদের ফেরার আগে অফিসে গিয়েছেন৷ তাই আর দেখা হয় নি।
আবেশ ছুঁয়ে দিলো মাধুর্যের কালো হয়ে যাওয়া বিভিন্ন জায়গা গুলো ৷ রাগে তার কপালের রগ ফুলে উঠেছে৷ কাল সারারাত ধরে সে অফিসের জমে থাকা কাজ গুলো করেছে ৷
তবে ভোর হতেই কাজ ফেলে মাধুর্যের ঘুমিয়ে থাকা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ ফর্সা গালে একটা লম্বা দাগ পড়েছে মাধুর্যের ৷ হয়তো রাব্বী বা শাহেদের আঘাতে ৷ আবেশ খানিকটা ঝুঁকে ছুয়ে দিলো মাধুর্যের গাল ৷ সাথে সাথেই মাধুর্য কেঁপে উঠলো ৷ সেই সাথে কেঁপে উঠলো তার বোজে থাকা চোখের পাতা ৷
আবেশের ঘোর লেগে যাচ্ছে ৷ সুপ্ত এক ইচ্ছা জাগ্রত হতেই এগিয়ে যায় মাধুর্যের চুলে ছেয়ে থাকা কপালের দিকে ৷ কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে ঠোঁট বসালো মাধুর্যের কপালে৷ সেই উষ্ণ পরশ অতি পবিত্র,অতি নিষ্ঠুর৷ যা সুন্দরতম উষ্ণতার জাগরণে কাঁপিয়ে দিলো আবেশের ভেতর৷ সে কতোক্ষণ তার ঠোঁটজোড়া ছুঁইয়ে রেখেছিলো মাধুর্যের কপালে সে জানে না ৷ সূর্যের অমোঘ চক্রের আয়োজনে ভালোবাসায় মন্ডিত করলো আবেশের হৃদয়৷ মাধুর্য ঘুমের মাঝেই নড়ে উঠতে চোরের মতো দ্রুত সরে যায় আবেশ৷
বিরবির করে বলল,

‘ প্রথম পরশের অনুভূতি আমি একা গ্রহণ করতে চাই নি মাধবীলতা তবে,নিজেকে সংযত করতেও পারি নি৷ কথা দিলাম,তোমার ওই অধরযুগল যেদিন আমার নামে লিখিত হবে সেদিন সব শোধ করে দিবো৷’

‘ আপনি উঠে গেছেন৷’ মাধুর্য শুয়ে থাকা অবস্থায় প্রাশ্ন করলো৷ আবেশ উত্তর না দিয়ে মাথার পেছনে হাত দিয়ে চুলে হাত বোলাচ্ছে৷ চোখেমুখে উঁপচে পড়ছে ধরা পড়ে যাবার রেশ৷ মাধুর্য আবার বলল,

‘ আবেশ..’

‘ ব..বলো৷ কী বলবে?’আবেশ খানিক মিইয়ে যাওয়া স্বরে বলল ৷ মাধুর্য কী তার পরশ বুঝতে পেরেছে! তার অনুমতি ব্যতীত কাজটা করা একদম ঠিক হয় নি৷ আবেশকে অগোছালো দেখে ভড়কে গেলো মাধুর্য ৷ ভ্রু কুঁচকে চিন্তিত স্বরে বলল,

‘ আপনার কি পেটে ব্যথা করছে!’

‘ হোয়াট.. পেটে ব্যথা করবে কেন৷’ আবেশ খানিক চেঁচিয়ে বলল৷ মাধুর্য জ্ঞানী অভিব্যক্তি দেখিয়ে বলল,

‘ আপনার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে,দুই বছরের বাচ্চার পেটে ব্যথা করছে আর তার মা না বুঝে খাওয়াচ্ছে৷’

মাধুর্যের কথা শোনে নির্বাক চিত্তে দাঁড়িয়ে রইলো আবেশ ৷ সে ভয় পাচ্ছিলো চুমুটা নিয়ে আর এই মেয়ে তার পেট ব্যথা নিয়ে পড়ে আছে ৷ আবেশ মজা করে,

‘ তোমার যুক্তি গুলো দিয়ে বই পাবলিশড করলে হাজার কপি বিক্রি হবে,রিডিকুলাউস৷’

আবেশের বলা কথার মানে বুঝতে না পেরে বিছানায় হেলায় দিয়ে চুপ করে বসে রইলো মাধুর্য। থুতনিতে হাত দিয়ে বলল,

‘ আপনি কিছু করছেনে তাই না? যার জন্য পালাই পালাই করছেন।’

‘ মা..মানে ক..কী করবো।’ আবেশ না চাইতেও তোতলামি করছে।তার কেমন অদ্ভুত লাগছে। সে চায় না মাধুর্য তাকে ভুল বুঝক তাই হয়তো!

‘ কিছুতে ফেল টেইল করেছেন ক্লাস গণিতে সেভেনের মতো? সেবার সব বিষয়ে হায়েস্ট পেয়ে গণিতে দশ পেয়েছিলেন। তারপর এইভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন আম্মুমার সামনে৷’ বলেই মাধুর্য খিলখিল করে হেসে উঠলো৷ সদ্য আসা ভোরের নম্র আলো চিকচিক করে উঠলো মাধুর্যের হাসির সাথে ৷ এলোমেলো আধখোলা চুল গুলো হাওয়ায় দুলছে হাসির তালে৷ আবেশ তাকিয়ে আছে৷ যার দৃষ্টির অর্থ,একরাশ মুগ্ধতা৷ আবেশ পা বাড়িয়ে মাধুর্যের সামনে এসে দাঁড়ালো৷ মাধুর্য তখনো হাসিতে মত্ত৷ তার হাসির সাথে চোখ হাসছে ৷ আবেশ মাধুর্যের দুইপাশে হাত দিয়ে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে বলল,

‘ গণিতে ফেল করেছিলাম বলে খুব হাসা হচ্ছে তাই,না?’

‘ আপনি যে গণিতে ভয় পেতেন সেটা আমার থেকে আর কে ভালো জানে?’ মাধুর্য পেটে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে বলল ৷ আবেশ বিনম্র কন্ঠে বলল,

‘ তুমি আমার ভেতরে বাহিরে সবটাই পরখ করে রেখেছো,তাই না!’

‘ অবশ্যই৷ আমি আপনাকে খুব করে জানি৷’

‘ তাহলে কেন আমার মনের কথা বুঝতে পারছো না,মাধবীলতা! কেন,তোমার অনুভূতিতে কেন ভাটা পড়ে আছে৷’

আবেশের কন্ঠে ব্যাকুলতা৷ মাধুর্য মুহূর্তেই হাসি থামিয়ে দিয়ে প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে বলল,

‘ মানে!’

‘ সময় হোক মানে বুঝাবো৷’ আবেশ ওইভাবে ঝুঁকে থেকেই জবাব দিলো৷ আবেশকে এতো কাছাকাছি দেখে দ্রিম করে উঠলো মাধুর্যের হৃৎপিন্ড৷ আজও পেছানোর জায়গা না পেয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলল,

‘ আমার খিদে পেয়েছে আমি নীচে যাবো৷’

আবেশ কিছু না বলে আজ সহজ ভাবেই উঠে দাঁড়ালো ৷ বিরবির করে বলল,

‘ সব সহ্য করতে পারবে তবে আমি কাছে গেলেই তার খিদে পায়,কান্না আসে৷ কী কপাল তোর আবেশ৷’

______________
মাধুর্য ধীরপায়ে এগিয়ে গেলো নাবিহার রুমের দিকে ৷ বাইরে তখন দুপুরের কড়া রোদ খাঁখাঁ করছে ৷ তপ্ত গরমে ঝিমিয়ে আছে পরিবেশ৷ বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে শরীরে৷ কাক টা তারস্বরে ডেকে ডেকে ক্লান্ত হয়ে কারেন্টের তারের উপর নিরলস ভাবে বসে আছে৷ মাধুর্য বা হাত দিয়ে কঁপালে জমে থাকা ঘাম মুছে দাঁড়ালো নাবিহার রুমের সামনে৷
ভেতরে উঁকি দিতেই পেছন থেকে ভেসে এলো,

‘ কাকে খুজছিস বুড়ি!’

‘ কাওকে না ফাজ ভাইয়া৷’ মাধুর্য নিজেকে সামলে পেছনে ফিরে বলল৷ ফয়েজ হাটতে বের হয়েছে রুম থেকে৷ হাতে দুটো ভর দেওয়ার লাঠি৷ মাধুর্য ফয়েজের পায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ তোমার কষ্ট হচ্ছে তাই না!’

‘ না সয়ে গেছে৷ এইগুলা মাঝেমধ্যেই ফেস করতে হয়৷’

মাধুর্য কিছুক্ষণ ভেবে হুট করে প্রশ্ন করলো,

‘ নাবিহা আপু কোথায়!’

‘ বাসায় চলে গেছে কাল৷ বাদ দে! আগে বল,কোচিং এ ভর্তি হয়েছিস?’

‘ হ্যাঁ ভাইয়া৷’ মাধুর্য নম্র ভাবে উত্তর দিলো৷ ফয়েজ আর কিছু বলার আগেই পেছনের কাচ ঘেরা রুমে আওয়াজ হতেই চমকে তাকায় তারা ৷
মধ্যবয়স সাদা পাঞ্জাবি পরা শ্যাম বর্ণের একটা লোক বের হতেই ফয়েজ বলল,

‘ বাসায় এসেও কাজ ৷ এতো শক্তি পাচ্ছো কোথায়,বাবা৷’

ভদ্রলোক পান চিবুচ্ছেন৷ মুখে তার লম্বা গোঁফ৷ গোঁফ দেখেই মাধুর্যের বুঝতে ভুল হলো না উনি নজরুল সাহেব৷ মাধুর্য ওড়না টেনে দিলো মাথায়৷ ফয়েজের আবডালে দাঁড়িয়ে রইলো চুপটি করে৷ নজরুল সাহেব রুমে তালা দিয়ে বললেন,

‘ আবেশ একা সব সামলায়৷ তুমি আর্মিতে জয়েন দিয়ে আমাদের দুই বাপ ব্যাটাকে ঝামেলায় ফেলে দিয়েছো৷’

ফয়েজ মাথা চুলকিয়ে বলল,

‘ ওইসব ব্যবসা আমার দ্বারা হবে না৷’

নজরুল সাহেব হাসলেন ৷ মাধুর্য কীভাবে কথা বলবে খুজে পেলো না৷ নজরুল সাহেব তার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এলেন৷ ফয়েজ সরে দাঁড়াতেই মাধুর্যের হাত ধরে কেঁদে উঠলেন ভদ্রলোক৷ কন্ঠে কাতরতা এনে বললেন,

‘ মাধুর্য মা আমার! আমার মা৷’

নজরুল সাহেবের এমন ডাক শুনে মাধুর্যের ভেতরে শীতলতা বয়ে গেলো ৷ না চাইতেও চোখ পানিতে ভরে উঠলো৷ নজরুল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ আসসালামু আলাইকুম,ভালো আছেন৷’

‘ তোমাকে কতো খুজেছি জানো! অবশেষে যখন পেলাম তখন তুমি নরকে বন্ধ৷ মা আমায় ক্ষমা করো৷ আমি বাবা হিসেবে ব্যর্থ৷ তোমার জীবনের অনেক গুলা বছর আমার ব্যর্থতার জন্য ওই জালেমদের কাছে কেটেছে৷ শাহেদ এতো নিম্ন আমি ভাবি নি৷’

মাধুর্য নজরুলের স্নেহ মাখা কন্ঠে ডুকরে কেঁদে উঠলো আরো৷ ভেজা গলায় বলল,

‘ আপনার দোষ নেই৷’

‘ সব দোষ আমার৷ তোমার আমানত আমার কাছে৷ সেই আমানত আমি তোমায় দিয়ে দায় মুক্ত হতে চাই৷’

‘ আমানত!’ ফয়েজ পাশে থেকে অবাক সুরে বলল৷ নজরুল হাত দিয়ে চোখ মুছে বলল,

‘ হ্যাঁ আমানত৷ আবেশ অফিস থেকে আসলেই আমি আমার দায় থেকে মুক্ত হবো৷’

___________
এহসান মঞ্জিল আজ স্তব্ধ৷ সন্ধ্যায় রাঙা হয়েছে বাইরের প্রকৃতি৷ বড় ড্রয়িংরুমে আজ সব সদস্য উপস্থিত৷ কেন্দ্রবিন্দু নজরুল সাহেব৷
মাধুর্য গুটিয়ে আছে মাহফুজার সাথে৷ মাহফুজা ভয়ে সিটিয়ে আছেন ছেলে মেয়ের মুখপানে চেয়ে৷ নজরুলের কথা শোনে তারা কী ভাবে নিবে সবটা তা ভয়ে কাঁপিয়ে দিচ্ছে মাহফুজার মন৷ আবেশ সবেমাত্র অফিস থেকে ফিরেই বিরক্ত হয়ে বসে আছে ৷ বারবার শার্টের কলার ধরে ফুঁ দিচ্ছে৷ এখন কীসের সমাবেশ বসালো তার বাবা? বিরক্তিকর!
ইরা,ফয়েজ,আর নাজিফা বসে আছে ডাবল সোফায়৷ তাদের চোখেমুখে উচ্ছ্বাস৷
নজরুল সাহবের চোখে পানিতে পরিপূর্ণ। ইরা প্রশ্ন করতেই তিনি থামিয়ে দেন তাকে। এতো বছরে কেউ কখনো নজরুল সাহেবকে কাঁদতে দেখেন নি। আজ হ্ঠাৎ তার চোখে পানি দেখে সবাই বেশ অবাক হয়েছে। অবাক হয়েছে মাধুর্য!নজরুল সাহেব চোখে পানি নিয়ে বললেন,

‘ আমি আর তোদের মা অন্যায় করেছি,মাধুর্যের সাথে।’

তার এই কথা যেন বিস্ময়ে ঠেলে দিলো সবাইকে। মাধুর্য বাদে সবার চোখেমুখে এখন বিস্ময়।আবেশ খানিক উচ্চগলায় বলল,

‘ মানে! আপনি আর আম্মা কেন অন্যায় করবেন? অন্যায় করে থাকলে শাহেদ আঙ্কেল আর রাব্বী নামক হারামি করেছে।’

‘ তাদের অন্যায় পুলিশের কারাগারে শুধরে যাবে তবে আমি আর তোর মা মাধুর্যের জীবনের কারাগারের আসামি।’

‘ বাবা কী বলছো তুমি! আমরা কেউ কিছু বুঝতে পারছি না।’

নজরুল সাহেব ফয়েজের প্রশ্নে বিরক্ত বোধ করলেন। তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

‘ এইযে সব প্রাচুর্য দেখছো এইসব মাধুর্যের।তার মা মেহরুন আমার হাতে তুলে দিয়েছিলো সব ।হারিয়ে যাবার আগে।তবে বলে গিয়েছিলেন,মাধুর্যকে আমাদের কাছে নিয়ে আসতে। তবে আমি আর তোমাদের আম্মা চেয়েও পারি নি মাধুর্যকে আমাদের কাছে নিয়ে আসতে।আমরা যদি তাকে নিয়ে আসতাম তবে শাহেদ তার জীবন নরক বানাতে পারতো না।’

সবাই অবাক হয়ে আছে। বিমূর্ত হয়ে বসে আছে। মাহফুজা ছেলেদের মুখের দিলে তাকিয়ে আছেন। সে যা ভয় পাচ্ছে তা হলে তার ছেলেমেয়ে তাদের ছেড়ে চলে যেতে এক মিনিট ও ভাববে না। কারণ তাদের ব্যক্তিত্ব প্রচুর। ভয়ে তার বুক দুরুদুরু করছে। অসহায় চোখে তাকালেন নজরুলের দিকে। নজরুল আশ্বাস দিলেন ইশারায় ‘কিছু হবে না’।
তিনি থেমে আবার বললেন,

‘ আমি চাই তোমাদের সামনে মাধুর্যের সম্পদ তাকে ফিরিয়ে দায়মুক্ত হতে।’

‘ কিন্তু বাবা..’ আবেশ উঠে দাঁড়িয়ে বলল। নজরুল এই ছেলেকে বড্ড মানেন।আবেশের চোখেমুখে আজ রাগ দেখতে পেয়ে খানিক ভয় পেলেন। আবেশ আবার বলল,

‘ সব কিছু মেহরুন আন্টি তোমাদের কাছে দিয়ে গেলে আন্টি কোথায়? যেদিন সব দিয়ে গিয়েছিলো সেদিন কেন মাধুর্যকে সাথে আনে নি! আর কোথায় উনি। তোমরা কী দেখো নি কোথায় গিয়েছিলেন উনি।’

‘ মাধুর্যকে সাথে আনে নি কারণ মেহরুনকে শাহেদ আটকিয়ে রেখেছিলো। মেহরুন সেখানে থেকে পালিয়ে এসেছিলো আমাদের কাছে। মেহরুন আমার কাছে কাগজ তুলে দিয়ে কোর্টে যাচ্ছিলো সাইন করার জন্য আমি আর তোর আম্মা তার সাথে যেতে চাইলে নেয় নি আমাদের। তবে এরপরে মেহরুনকে আমরা কেউ আর দেখি নি। তবে…..’

‘ তবে কী বাবা! উনি হ্ঠাৎ হাওয়া হয়ে গেলেন তাই তো! এইটা অসম্ভব। মেহরুন আন্টি বিচক্ষণ মানুষ ছিলেন।’ ফয়েজ বলল। নজরুল বললেন,

‘ রাব্বী তাকে মেরে ফেলেছে। তার মায়ের সংসারে ভাগ বসানোর জন্য মেরে দিয়েছিলো মেহরুন কে।সেইদিন মেরে দিয়েছিলো যেদিন আমাদের এখানে এসেছিলো।আজ রিমান্ডে রাব্বী এই স্টেটমেন্ট দিয়েছে। তাকে পুলিশ আজ ধরেছে।’

নজরুল থামলেন বলে। মাধুর্য এতোক্ষণ নির্বাক ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো। মেহরুনের মৃত্যুর কথাটা শুনে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। সে এটা কখনো চায় নি তার মায়ের মৃত্যু হোক। মনের মাঝে একটা আশা নিয়ে ছিলো হয়তো মেহরুন আসবে সে তাকে প্রশ্ন করবে,কেন রেখে হারিয়ে গিয়েছিলো সে! তবে আজ….তার মা নেই শুনে দুমড়ে মুচড়ে গেলো তার ভেতর। ধপ করে বসে পড়লো মেঝেতে।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here