ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু শেষ_পর্ব প্রথম অংশ

0
1460

ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু
শেষ_পর্ব প্রথম অংশ
#সুলতানা_সিমা

রাগে ইশির মাথা ফেটে যাচ্ছে। মাথার উপর ফুল স্পিডে ফ্যান চলছে তবুও সে অস্বাভাবিক ভাবে ঘামছে। অতিরিক্ত রাগলে সে এভাবেই ঘামে। দিশা একটু পর পর টিস্যু দিচ্ছে। ইশি কপালে একটা মুছা দিয়েই ফ্লোরে ছুঁড়ে মারছে। টিস্যু না ভিজলেও সেটা ফেলে দিচ্ছে। ফেলতে ফেলতে পুরো ফ্লোর অপরিষ্কার হয়ে আছে। দিশা একসময় রেগে বলল,

_ওই শুন। এতো ঘামলে গিয়ে গোসল কর। আমি আর টিস্যু দিতে পারবো না। এতই যখন ফিল্মের ন্যাকা নাইকা হওয়ার শখ তাহলে নিজের ওড়না কেটে টিস্যু বানা।

_ও হ্যালো তোর জামাইয়ের উপর রেগে ঘামছি। আর তুই আমাকে ন্যাকা নাইকা বলছিস?

_একদম ওই বদমাশ লোকটাকে আমার জামাই বলবি না। অসভ্য লোক একটা।

_শুধু অসভ্য না। এই ব্যাটা একটা খাটাস৷ শুধু খাটাসও না একটা ইতর বান্দর কুকুর। কি ভাবেটা কি নিজেকে? বিয়ের আর মাত্র সাতদিন বাকি,এখন ফোন দিয়ে বলছে বিয়ে করবে না? তোকে রিজেক্ট করেছে? তোকে? আমার না ইচ্ছে করছে ওই ব্যাটার মাথাটা কেটে হাতে ধরিয়ে দিয়ে আসি। দাঁড়া ফোন দিয়ে আচ্ছামত না বকলে না আমার মাথা ঠান্ডা হবে না।

বলেই ইশি ফোন হাতে নিয়ে ফারাজকে কল দিলো। দুতিন বার রিং বাজার পরে ফারাজ কল রিসিভ করলো। ইশি লাউডে দিলো৷ দিশা ইশি খাটের উপর পা তুলে পা ভাঁজ করে বসলো। ফারাজ ঘুম ঘুম গলায় বলল, ”

_হ্যালো কে?

ইশি চেঁচিয়ে বলল,
_ওই মিয়া। আমাদের ঘরে আগুন লাগাইয়া শান্তি মতো ঘুম দিচ্ছেন?

ইশির কর্কশ গলা শুনে লাফ দিয়ে উঠে বসলো ফারাজ। মাত্র ঘুম ভাঙায় আগুন শুনে কলিজা লাফ দিয়ে উঠছিলো। কথার মানে বুঝতে পেরে ফারাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ”

_কণ্ঠে কি রস কস নাই? মানুষ যে ঘুমের মধ্যে এরকম ষাঁড়ের মতো গলা শুনে হার্ট অ্যাটাক করবে। সেটার ধারণা আছে আপনার?

_কিইইইহ? আপনি আমায় ষাঁড় বলেছেন? আপনি ষাঁড়, আপনার চৌদ্দ গুষ্টি ষাঁড়।

_হ্যাঁ। আমার চৌদ্দগুষ্টি ষাঁড়। তো ভালো মানুষ, আপনি কেন আমায় ফোন দিয়েছেন? খারাপ লোকদের যেচে যেচে ফোন দিতে লজ্জা করেনা? নাকি ধরে নিবো আপনিও ওই দলের?

ইশি চুপসে গেলোম এখন কি বলবে সে? দিশা ইশারায় ফোন কেটে দিতে বলল। ইশি নক কামড়ে কিছু একটা ভেবে বলল,

_দাওয়াত দিতে। আমার বোনের বিয়ের দাওয়াত দিতে ফোন দিয়েছি। কি মনে করেন, আপনি বিয়ে ভেঙে দিছেন বলে আমার বোনকে আর কেউ বিয়ে করবে না? তিনদিনের ভিতর ওর বিয়ে হবে। আসবেন। আমরা ফকির মিসকিনকে ফ্রিতে খাইয়ে দেই। কিছু আনতে হবে না।

_ওই মুখে লাগাম দিয়ে কথা বলুন। কাকে ফকির মিসকিন বলছেন?

_আপনাকে বলছি। কি করবেন?

দিশা ইশিকে চাপা গলায় বলল,”ওই কি বলছিস এসব? দেখ ঘরে ফোন দিয়ে বিচার দিবে। তখন দেখিস সবাই বেঁধে পিটাবে। এমনিতেই সবাই রেগে আছে।
_থাম কথা বলবি না। এই ব্যাটাকে আচ্ছা মতো না ঝাড়লে আমার শান্তি লাগবে না।

_ আচ্ছা শুনেন।” ইশি আর কিছু বলার আগেই ফারাজ কল কেটে দিলো৷ ইশি সাথে সাথে আবার কল দেয় কিন্তু ফারাজের ফোন সুইচ অফ। রাগে ইশি ফোন খাটের উপর ছুঁড়ে ফেলে। দিশা বালিশে কনুইয়ের ভর রেখে দু’হাতে মাথা চেপে ধরলো। কে এমনটা করছে বুঝে উঠতে পারছে না সে। সকালে ফারাজের বাবা তাঁর বাবাকে ফোন দিয়ে বললেন বিয়ে হবেনা। কেন হবে না কারণ জানতে চাইলে উনি বলেন,

_ আপনি শিক্ষিত মানুষ + শিক্ষিত ফ্যামিলির একজন সদস্য। আপনি এবং আপনারা কি করে মেয়েকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছেন? জোর করে মেয়েকে বিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু সংসারে সুখ আনা যায়না। জোরাজোরির সংসারে কখনো মন বসানো যায়না। যে সংসারে নারীর মন বসেনা সে সংসারে সুখ আসেনা। এতে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। যা একদিন সংসার ভেঙেও যায়। তাই আমি চাইনা আমার ঘরে এমন কোনো মেয়ে আসুক যার বিয়েতে মত নেই।

তারপর অনেক কথাবার্তা বলাবলি করে দু পরিবার থেকে বিয়ে ভেঙে যায়। দিশা উঠে শাওনের রুমে গেলো। সেদিন ইশি শাওনকে ওই কথাগুলা বলার পরে শাওন আর দিশার সামনে আসেনা। কখনো সামনে পরে গেলে দিশার দিকে তাকায়-ই না। তাঁর বিয়ের কারণেই শাওনদের থাকতে হচ্ছে। নয়তো চলেই যেতো। তাঁর মা আর জহুরা বেগম চলে গেছেন দুদিম হলো। দিশা শাওনের রুমে এসে দেখলো শাওন সোফায় বসে ল্যাপটপে কি জানি করছে। দিশা টান মেরে ল্যাপটপ এনে খাটে ছুঁড়ে মারলো। শাওন দিশাকে দেখে কিছু না বলে ল্যাপটপ আনতে গেলে দিশা শাওনের বুকে ধাক্কা দিয়ে তাকে পিছিয়ে দেয়। শাওন হতভম্ব হয়ে তাকালো। দিশা চেঁচিয়ে বলল,

_ওটা তুই না যে ফারাজের পরিবারে প্রতিদিন ফোন দিয়ে বলে আমাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমি তোকে বিয়ে করতে চাই?

_হোয়াট?

_একদম ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করবি না। তুই-ই তো ইশিকে বলেছিলি ফারাজকে তোর অসয্য লাগে। তুই বিয়ে ভেঙেছিস তাইনা?

_কি বলছিস মাথা ঠিক আছে তোর? আমি তোর বিয়ে ভাঙবো কেন?

_কারণ আমার ভালো থাকা তোর সয্য হয়না তাই। কি চাস তুই আমায় বলবি? কোনো ক্ষতি করেছি কি তোর যে বার বার আমার ভালো থাকায় বিষ ঢালছিস?

_দেখ আন্দাজের উপর অপবাদ দিবিনা। তোর বিয়ে আমি ভাঙিনি। তোর বিয়ে আমি কেন ভাঙবো?

_বললাম তো আমাকে তোর সয্য হয়না তাই।

শাওন বিরক্তি কণ্ঠে বলল,”
_খোদার কসম এখন তোকে আমার একটুও সয্য হচ্ছে না। যা বের হ রুম থেকে।” বলেই ল্যাপটপ নিয়ে আবার নিজের জায়গায় বসে পড়লো শাওন। চেহারায় স্পষ্ট বিরক্তির চাপ ফুটে উঠছে। এভাবে মিথ্যে অপবাদ দিলে কে না বিরক্ত হয়? শাওনের বিরক্ত ফুটা মুখটা দেখে দিশার চোখের বাদ ভেঙে জল বেরিয়ে এলো৷ কান্না আটকাতে না পেরে কিঞ্চিৎ শব্দ করে কেঁদে উঠলো সে। দিশার কান্না শুনে হাত থেমে গেলো শাওনের। দিশা চলে যেতে লাগলে শাওন উঠে গিয়ে দিশার হাত ধরে ফেলে। দিশা হাত ছাড়াতে হাত মুচড়ায়। শাওন শক্ত করে হাত ধরে রেখে দিশার চোখ মুছে দিয়ে বলে,”

_তোকে বলেছি না। আমার সামনে কান্না করবি না। আমার খারাপ লাগে।” দিশা শাওনের হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে চেঁচিয়ে বলল,”

_যখন ভালোবাসতে পারবি না। তাহলে ভালোবাসা বাড়াতে আসিস কেন?”

বলেই দিশা চোখ মুছতে মুছতে চলে আসে। দরজার কাছে এসে সম্মুখীন হয় দিহানের। দিহান দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। দিশা দিহানের পাশ কেটে চলে গেলো। দিহান ঘাড় ঘুরিয়ে দিশার যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে রাগান্বিত চোখে শাওনের দিকে তাকালো। শাওন কিছুটা অস্বস্তিবোধ করে৷ দিহান কিছু একটা ভেবে চলে যায়। শাওন সোফায় বসে মাথা চেপে ধরে। দিশার কান্না দেখলে কি হয়ে যায় তাঁর নিজেই বুঝে উঠতে পারেনা। কেন সে না চাইতেই দিশাকে নিয়ে ভেবে ফেলে কেন দিশার কান্না সয্য হয়না জানা নেই তাঁর। মন এখনো অরিনের কাছেই আটকে আছে। তবুও কেন দিশার জন্য এমন লাগে তাঁর? এক মন কি দুজনকে ভালোবাসতে পারে? শাওনের ভেতর থেকে জবাব আসে, হ্যাঁ পারে। এক মন দুজনকে ভালোবাসতে পারে। যখন প্রথম ভালোবাসা এক তরফা হয়ে যায় তখন দ্বিতীয়বার মন দুতরফা ভালোবাসার স্বাদ খোঁজে। হয়তো শাওনের মনও সেই স্বাদ খুঁজে বেড়াচ্ছে যা শাওন বুঝতে পারছে না।
_________________________

শাওয়ার সেড়ে মাত্র বের হয়েছে শামু। আজ তাঁর স্বামীর জন্য খাবার নিয়ে যেতে হবে। স্বামী নামক মানুষটার সাথে তাঁর সম্পর্ক স্বাভাবিক না হলেও দুজনই খুব ভালো বন্ধু। এই চারমাসে তাঁর স্বামী তাকে একবারও কোনো কিছুতে জোর করেনি। সে শামুকে সময় দিয়েছে। নিজেকে ঠিক করার,নিজেকে প্রস্তুত করার। সে জানে বিয়েটা শামুকে জোর করে দেওয়া হয়েছে। তাই সে চায় শামু নিজেকে মানিয়ে নিক এই সম্পর্কের সাথে। শামুও দিন দিন তাঁর স্বামীর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছে৷ স্বামী শব্দ নারী এমনিতেই দূর্বল হয়। স্বামীটা যদি কেয়ারিং হয় তাহলে তো দূর্বলতা দৌড়ে আসবে৷ শামু প্রতিদিন প্রতিটিক্ষণ নতুন করে মুগ্ধ হয় স্বামী নামক মানুষটার উপর। ফোন বাজতেই চিরনি রেখে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো তাঁর স্বামী ফোন দিয়েছে। শামু ফোন রেখে টিফিনে খাবার নিয়ে বেরিয়ে গেলো হস্পিটালের উদ্দেশ্যে। তাঁর ডাক্তার সাহেব মানে তাঁর স্বামী একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু সে ফোন তুলছে না। গিয়ে একেবারে সারপ্রাইজ দিবে। হসপিটাল পৌছে তাঁর স্বামীর কেবিনে গেলো। কেবিনে কেউ নেই কেবিন খালি। শামু টিফিন টেবিলের উপর রেখে কেবিনের বাইরে বের হলো। একজন নার্সকে জিজ্ঞেস করলো,

_আপনার স্যার কই?

_দেখিনি ম্যাম।” নার্স চলে যায়। শামুর ফোনে কল এলো। শামু ফোন রিসিভ করে বলল,

_কই তুমি? কেবিনে আসো।

_তুমি ১৪ নং কেবিনে আসো।”

বলেই ফোন রেখে দেয়। শামু ১৪ নং কেবিনে যাও। কেবিনে ঢুকেই তাঁর পা থেমে গেলো। নীল বেডে বসে আছে মাথায় ব্যান্ডেজ। পায়ে ব্যান্ডেজ। তাঁর পাশে বসে আছে তাঁর স্বামী। শামুকে দেখে নীল মুখ ফিরিয়ে নেয়। শামু এগিয়ে এসে বলে,
_কি হয়েছে শ্রাবণ?

_তেমন কিছু না বাইক এক্সিডেন্ট।” শামু নীলের দিকে তাকায়। নীল আগের থেকে অনেকটা শুকিয়ে গেছে। চেহারাটাও মলিন। শ্রাবণ শামুকে বলল,

_তুমি বসো আমি আসছি।” বলেই কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। শামু নীলের পাশে বসে। নীল একবারও তাকাচ্ছে না। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে শামু বলে,

_কেমন আছো?

নীল ছোট করে জবাব দেয়,
_ভালো। তুমি?
_আমিও।

তারপর অনেক্ষণ চলে যায় দুজনের মাঝে কোনো কথা হয়না। বেশক্ষণ পরে নিরবতা ভেঙে শামু বলে,

_যে মেয়েটার কথা তুমি আমাকে বলতে সেটা কি লুপা ছিলো?

নীল অবাক হয়ে তাকায়। সে শামুকে বলতো শামুর সাথে রিলেশনে যাওয়ার আগে অন্য একজনের সাথে তাঁর রিলেশন ছিলো। কিন্তু কখনো নাম বলেনি। শামু নীলের অবাক হয়ে তাকানো দেখে বলল,

_শ্রাবণ আমাকে সব বলেছে। এটাও বলেছে তুমি লুপার সাথেই রাগ করে আমার সাথে রিলেশনে ছিলে।” নীল কিছুই বলল না। শামু বলল,”

_আমি কাল তোমাদের বাসায় যাবো। আংকেলের সাথে কথা বলবো। আমার বিশ্বাস উনি মেনে নিবেন।

নীল মাথা নিচু করে ফেলে৷ শামু নীলের হাতের উপর একটা হাত রাখে৷ নীল শামুর দিকে তাকায়। নীলের চোখে স্পষ্ট অনুতাপ। শামু মৃদু হেসে বলে,

_সরি নীল। তোমার নামে আমার পরিবার এতো এতো মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমার কিছুই করার ছিলো না। আমি চেষ্টা করেছি সবাইকে বুঝাতে যে ওরা তোমায় ভুল বুঝছে, কিন্তু সবাই আমার কথা শুনতেই চায়নি। আমাকে ক্ষমা করে দিও নীল।

_ইটস ওকে শামু৷ এবিষয়ে কখনো তোমার উপর রাগ হয়নি। আমিই সরি কারণ তোমার সাথে আমি যা করেছি অন্যায় করেছি।

_তুমি কোনো অন্যায় করনি নীল। তোমার সাথে অন্যায় হয়েছে। তুমি তো আমায় বিয়ে করতে যাচ্ছিলে৷ আমায় ভালোবাসতে পারো আর না পারো আমার ভালোবাসার যথেষ্ট সম্মান দিয়েছো তুমি। কিন্তু আমার পরিবার,,,

_বাদ দাও শামু প্লিজ। যা হয় ভালোর জন্যই হয়। হয়তো আমি কখনো তোমাকে সম্পূর্ণ রূপে সুখী করতে পারতাম না। আমার বিশ্বাস শ্রাবণ তোমায় ভালো রাখবে।

_হুম। ও আমাকে সত্যি অনেক সুখে রাখছে নীল৷ শ্রাবণকে পেয়ে আমি ধন্য। সত্যি ওর মতো মানুষ হয়না। ও কতো কেয়ারিং। কত সুন্দর করে কথা বলে কত কিউট। জানো নীল ওর এতো গুন এতো গুন যে আমি বলে শেষ করতে পারবো না।

নীল হেসে উঠে। তারপর বলে,

_গুনবান ছেলেটাকে ভালোবেসে ফেলেছো রাইট?” শামু লজ্জায় লাল হয়ে যায়। মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে হাসে। তারপর বলে,

_এটা কপাল।
_তোমার পরিবার মনে হয় জানেনা শ্রাবণ আমার কাজিন হয়?

_না এখনো জানেনা। জানো আমি কল্পনাই করিনি। যে ছেলেটা একদিন তোমার সাথে আমার প্রেম করিয়ে দিয়েছিলো সে ছেলেটা কিনা আমার বর হয়ে যাবে?

নীল শামুকে ভ্যাঙ্গ করে বলল,
_এটাও কপাল।” নীলের কথায় শামু সজোরে হেসে উঠলো। সাথে নীলও হাসছে। তারা দুজন টেরই পায়নি যে কেউ একজন কেবিনে ঢুকতে গিয়ে তাঁদের এই হাসির দৃশ্যটা দেখে চলে গেছে।

____________________________

ক্লান্ত শরীর নিয়ে মাত্র বাসায় এসেছে মিহান৷ তাঁর চোখ দুটো লুপাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না। লুপাকে খুঁজতে উপরের দিকে যাবে
কয়েক সিঁড়ি উঠে দিহানের সম্মুখীন হয়ে যায়। মিহানকে দেখেই দিহানের চেহারার রং পাল্টে গেলো। মিহান লক্ষ্য করছে আজ চার,পাঁচদিন থেকে দিহান এমন। মিহানকে দেখলেই চেহারার রং পাল্টে যায়। দৃষ্টি ভঙ্গি বদলে যায়। এমন ভাবে তাকায় যেন চোখ দিয়ে খুন করে ফেলবে। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে কিছুই বলে না। আজকাল অরিনকেও দেখা যায়না৷ দিহান ওকে রুম থেকে বের হতেই দেয়না। দিশার বিয়ের পরেই চলে যাওয়ার কথা ছিলো। এখন তো দিশার বিয়ে ভেঙে গেছে নিশ্চয়ই অরিনকে নিয়ে দিহান চলে যাবে কানাডা। দিহান মিহানের পাশ কেটে চলে গেলো। মিহান লুপাকে খুঁজতে লাগলো। আপাতত দিহানের কানাডা যাওয়ার বিষয়টা নিয়ে ভাবছে না সে। ছাদে গিয়ে দেখলো লুপা নেই৷ মিহান খুঁজে বাগানে গেলো। বাগানের দোলনায় পা তুলে বসে হাঁটুর উপর মুখ গুঁজে বসে আছে লুপা। মিহান লুপার পাশে গিয়ে বসলো। লুপা মুখ তুললো না। মিহান বলল,”

_আমাদের শান্তি বুড়ি এখানে বসে বসে কি করছে।” লুপা মাথা তুললো না। মিহান বলল,

_এই পেত্নি উঠ।” এবারও লুপা নড়লো না।” মিহান জোরে বলল,

_আমি কয়েকটা চকলেট এনেছিলাম। কেউ কি খাবে না?

লুপা এবারও নড়লোই না। মিহান আবার বলল,

_শুধু চকলেট নয় সাথে আইসক্রিম আছে। ” লুপা আগের মতোই রইলো৷ মিহান চকলেট মুখে ঢুকিয়ে সিগারেটের মতো টান দিয়ে বলল,

_আমি স্মোক করছি। কে কাকে বলার বলে দিক গিয়ে আমি এসব তেলাপোকা মার্কা মানুষকে ভয় পাইনা।” এবারও লুপা নড়লো না। মিহানের হাস্যজ্বল মুখটা অন্ধকার হয়ে এলো। লুপার মাথা তুলতে চাইলো লুপা তুললো না৷ মিহান জোর করে তুললো। লুপার চোখে পানি। মিহান অস্থির হয়ে বলল,

_এই বোনটা কি হয়েছে তোর? কাঁদছিস কেন? নীলকে দেখতে হস্পিটাল গেছিলি বলে আম্মু বকেছে? রোহান তোর সাথে ঝগড়া করেছে? কি হইছে রে তোর? বল।

_কিছু না ভাইয়া। প্লিজ আমায় একা থাকতে দাও।

_কি হইছে বল। কাঁদছিস কেন? না বলা পর্যন্ত আমি যাবো না। নীলের সাথে ঝগড়া হয়েছে?

_না।
_তাহলে?
_আমি নীল ভাইয়াকে অন্য কারো সাথে সয্য করতে পারি না ভাইয়া৷ আমার দম বন্ধ হয়ে আসে ওকে অন্যকারো সাথে দেখলে। ও কেন ওর পাক্তনের হাসাহাসি করবে?” বলেই দুহাতে মুখ চেপে কেঁদে উঠে লুপা। মিহান হাত সরিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলে,

_ওই মেয়ের না বিয়ে হয়ে গেছে?
_জানিনা আমি যাও এখান থেকে।

_দেখি কান্না থামা। একদম কাঁদবি না। তোর কান্না দেখলে আমার কষ্ট হয় জানিস না। পরে দেখবি রাগের মাথায় নীলকে মেরে দিছি।

_তুমি ওকে মারবা না নয়তো দেখবা আমি নিজের ক্ষতি করবো।”

মিহান মৃদু হেসে লুপাকে বুকে জড়িয়ে বলে,
_আমার আমার বোনের খুশির জন্য সব করতে পারি। এরকম হাজারটা নীলকেও জ্যান্ত কবর দিতে পারি। নীলের ভাগ্য যে সে তোর ভালোবাসা নয়তো ও তোর চোখে যতটুকু জল জড়িয়েছে ততটুকু রক্ত জড়াতাম ওর। আমার কাছে তোর খুশির চেয়ে কিছুই আগে নয় রে। এখন আমার সাথে চল।

_আমি কোথাও যাবো না ভাইয়া।
_তোকে আসতে বলছি। আয়।
_আমি যাবো না। যাও এখান থেকে। বিরক্ত করবা না।

_ওকে ফাইন।” বলেই মিহান লুপাকে কোলে তুলে নেয়। লুপা হাত পা ছুড়াছুঁড়ি করে চিল্লিয়ে বলে,” ভাইয়া ছাড়ো। ভালো লাগছে না আমার।

_তুই দিন দিন ভারি হয়ে যাচ্ছিস। এটা কিসের লক্ষন বলতো,বিয়ে টিয়ের লক্ষন নাতো।

_ভাইয়া ছাড়ো আমি কিন্তু আম্মুকে ডাক দিবো। বলে দিবো তুমি স্মোক করো।

_দে দে ডাক দে। আমিও বলে দিব তুই বিয়ের জন্য এখানে বসে বসে কান্না করছিস।

মিহান লুপাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দৃশ্যটা দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে অরিন। মিহান যতই খারাপ হোক নিঃসন্দেহে বলা যায় মিহান পৃথিবীর সব থেকে ভালো একটা ভাই।

লুপা মিহানকে বলে,

_ভাইয়া আমাকে নামিয়ে দাও বলছি। মিহান লুপা চোখের পানি মুছে দিয়ে এক হাতে টেনে এনে বুকে জড়িয়ে ধরে। এক হাতে ড্রাইভ করে এক হাতে লুপার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,

_কাঁদিস না পাগলী। তোর কান্না দেখলে আমার কান্না পায়। জানিস আমার একটা রাজ্য আছে। সেই রাজ্যের একটাই মাত্র রাজকন্যা। আর সেটা হলি তুই। ওই রাজ্যের আকাশে কোনো চাঁদ নেই সূর্য নেই। রাজ্যটা তোর আলোয় আলোকিত হয়। ওই রাজ্যের প্রতিটি জিনিস তোর ছোঁয়ায় প্রাণ ফিরে পায়। তুই যখন আলতা রাঙানো পায়ে শিশির ভেজা ঘাসের উপর দিয়ে হেঁটে যাস। তখন তোর আলতা লেগে ভেজা সবুজ ঘাসগুলো লাল হয়ে যায়। যেন তোর প্রতিটি কদম পারায় তাদের বুকের রক্তক্ষরণ হয়। তোর যখন মন খারাপ থাকে তোর নুপুরের ছন্দে আকাশ থেকে এক ঝাক পরী নেমে আসে। তারপর সবার সাথে বসে তুই গল্প করিস। যখন ওরা আসেনা তখন পরীদের মতো তোরও দুটো ডানা গজায়, তারপর তুইও চলে যাস পরিদের রাজ্যে। সেখানের প্রতিটি ঝরে যাওয়া ফুল তোর আগমনে নতুন করে ফুটে ওঠে। তোর সুভাস পেয়ে সব পরীরা দলে দলে তোর দিকে ছুটে আসে তোকে দেখতে। তুই যখন পরীদের সাথে নাচিস তখন সব মেঘেরা দলে দলে এসে তোকে ছুঁয়ে যায়।

লুপা মিহানের বুক থেকে মাথা তুলে বলল,

_তোমার ওই রাজ্যে আমি এতো সুখী কেন ভাইয়া?
মিহান হেসে বলল,
_তোর ভাই যদি বেঁচে থাকে তাহলে এর এক চিমটি সুখ হলেও তোকে এনে দিবে।

লুপা দুহাতে তাঁর ভাইকে জড়িয়ে ধরে। নিঃসন্দেহে সে পৃথিবীর সব থেকে সুখী বোন। হস্পিটাল এসে গাড়ি থামায় মিহান। লুপা জিজ্ঞেস করে এখানে কেন মিহান কিছু বলেনা। নীলকে ফোন দিয়ে নিচে আসতে বলে। কিছুক্ষণ পরে নীল এক পা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে নিচে নেমে আসে। একটা পায়ে আর মাথায় ইনজুরি আর কিছু হয়নি। মিহান গাড়িতে উঠতে বললে নীল বাধ্য ছেলের মতো গাড়িতে উঠে। পিছনে সিটে নীল আগে তাঁরা ভাই বোন। নীল লুপার দিকে তাকায় অথচ লুপা একবারও নীলের দিকে তাকালো না৷ মিহান তার উদ্দেশ্য স্থানে এসে গাড়ি থামায়। গাড়ি থেকে নেমে লুপাকে দরজা খুলে দিলো লুপা নীল এক সাথেই নামে৷ মিহান বলে,

_ চলো আমার সাথে।

মিহানের কথায় পা বাড়িয়ে লুপা আর নীল সামনে থাকিয়ে থেমে যায়। এতোক্ষণে এইবার দুজন দুজনের দিকে তাকালো। তাও বিস্ময়কর চাহনি। তারপর আবার সামনে তাকিয়ে দুজনই এক সাথে বলে উঠলো,

_কাজী অফিস?

চলবে,,,,,।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here