ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু পর্ব_৩৫

0
1056

ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু
পর্ব_৩৫
#সুলতানা_সিমা

আজ দিশাকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে। যদি দিশাকে ছেলেপক্ষের পছন্দ হয় তো আজই বিয়ের দিন ঠিকঠাক হয়ে যাবে। ছেলেকে সবাই দেখেছে। এখন শুধু ছেলে পক্ষের দিশাকে দেখা বাকি। দিশার রূপ হলো চোখ ধাধানো রূপ। দিশাকে দেখার পর অপছন্দ হয়েছে এটা বলার মতো দুঃসাহস হয়তো কোনো পুরুষের নেই। তাই এক কথায় বলা যায় আজই দিশার বিয়ের ডেট ফিক্সড হবে।

ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে শাওন। তাঁর খুব খারাপ লাগছে। কেন লাগছে সেটা তাঁর জানা নেই। আজকাল দিশা তাঁর সামনে আসেনা। তাঁর সাথে ঝগড়া করেনা। তাঁকে খোঁচা মেরেও কিছু বলেনা। একদক গাম্ভীর্য প্রকৃতির মেয়ে হয়ে গেছে। শাওন পুরনো সেই দিশাকে খুব মিস করে। বার বার মন চায় দিশাকে গিয়ে বলুক,”ওই তোকে নিষেধ করছি বলে তুই সত্যি সত্যি আমার সাথে ঝগড়া করবি না? তুই জানিস না তোর সাথে ঝগড়া না করলে আমার ভালো লাগে না?” কিন্তু বলতে পারেনা শাওন। আর বলতে না পারাটাই তাকে সব থেকে বেশি কষ্ট দেয়। হঠাৎ শাওনের কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছন ঘুরে তাকালো। দিহান দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর চোখে মুখে প্রশ্নের ছড়াছড়ি। শাওন জানে এই প্রশ্নগুলা কী। কিন্তু উত্তর গুলো তাঁর কাছে গুছানো নেই। দিহান শাওনকে বলল,”গত সপ্তাহে দিশা বাবাকে বলল সে তোকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না। শুনে খুশি হলাম। ভাবলাম আমাকে আর তোদের হেল্প করতে হবেনা। আজ বাবা বলছে দিশা নাকি এর পরের দিনই বাবাকে বলেছে সে তোকে বিয়ে করবে না। বাবা দিশার জন্য অন্যকোথাও ছেলে দেখেছে। আমি বাবাকে তোর কথা বলায় বাবা আমাকে বলল দিশা নাকি না বলে দিছে বিয়েতে। এসব কি শাওন? মেবি তোদের মধ্যে ছোটখাটো ঝগড়া হয়েছে তাই বলে তোরা বিয়ে করবি না? সম্পর্ক ভেঙে দিবি?” শাওন মুখে ফিরিয়ে নিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে আকাশে তাকিয়ে থাকলো। দিহান বলল,”এভাবে চুপ থাকলে কিছুই হবে না শাওন। আমার কথায় কেউ তোদের বিয়ে দিয়ে দিবে না। যতক্ষণ না তোরা মুখে বলবি। আমি জানিনা তোদের মধ্যে কি হইছে। যেটাই হয়ে থাকুক মিটমাট করে নে। প্লিজ শাওন। পরে সারাজীবন পস্তাতে হবে।

_আমাকে ক্ষমা করে দে দিহান।” আকাশের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল শাওন। দিহান অবাক হয়ে তাকালো। অবাক হয়ে বলল,”
_মানে?
_দিশা আমার সাথে ভালো থাকবে না রে।
_এটা দিশা তোকে বলেছে।
_দিশার কোনো দোষ নেই। আমিই ওকে বিয়ে করবো না। আমরা দুজন দুজনকেই বিয়ে করবো না।
_মানে কি শাওন। এসব কি হচ্ছে?” শাওন কিছু বলল না।
_দেখ শাওন। এখন কিছু না করলে আর করার সময় পাবিনা।” এবারও শাওন চুপ। দিহান রাগ করে ছাদ থেকে নেমে আসে। দিশা শাওন এই দুজনের উপরেই তাঁর খুব রাগ হচ্ছে। নিচে এসে দেখলো তাঁর দুই ফুপি ড্রয়িংরুমে বসে কি নিয়ে যেন কথা বলছেন। দুজনের মুখই চিন্তিত। কাল রাতে নীল আর নীলের মা এসেছেন। সবাই ভেবেছে দিশার পাত্রপক্ষ আসছে বলে এসেছেন। কিন্তু দিহানের কাছে ব্যাপারটা ঘাপলা লাগছে। কাল থেকে নীল রুম থেকেই বের হচ্ছে না। যখন এসেছে দিহানের পাশ কেটে উপরে যায় দিহানের সাথে কথাই বলেনি। একদিকে শাওন অন্যদিকে নীলের এই এড়িয়ে চলা। তারপর তাঁর ফুপিদের কানাকানি। ইচ্ছে করছে সবাইকে আচ্ছামত ঝাড়ি দিতে। শায়লা চৌধুরী এখানে আছেন। সেই সাথে জহুরা বেগমেরও এখানে থাকা হচ্ছে। দিহান চায়না তাঁর শাশুড়ী তাকা কালীন কোনো ঝামেলা হোক বাড়িতে৷ তাই চুপচাপ সব হজম করে নিচ্ছে।

দুপুর দুইটা। পাত্রপক্ষ এসেছে কিছুক্ষণ হলো। সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে। ছেলেটা অনেক হ্যান্ডসাম। সবার মুখে মুখে মাশাআল্লাহ। শাওন বার বার ছেলের দিকে তাকাচ্ছে৷ কেন জানি ইচ্ছে করছে ছেলেটাকে বলতে এই মিয়া বের হন বাসা থেকে। এখানে কোনো মেয়ে দেখানো হবে না। শাওনের এমন তাকানো দেখে দিহান কপাল কুঁচকে তাকাল। দিশাকে বিয়ে করবে না আবার দিশার বরকে জেলাস করবে এটা কেমন কথা? শাওন বা দিশা যে কিছু একটা লুকাচ্ছে তা ঠিকই আন্দাজ করা যাচ্ছে।

ছেলের মা সুমনা চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বললেন,”তা আপা। মেয়েকে আনুন। আমরা একটু দেখি।” শান্তি চৌধুরী লারাকে বললেন,”লারা যাও দিশাকে নিয়ে আসো।” তারপর অরিনকে বললেন,”আর অরিন। তুমি গিয়ে খাবারদাবারের ব্যবস্থা করো।” লারা উপরে গেলো দিশাকে আনতে। অরিন কিচেনের দিকে পা বাড়ায়। দিহান তার বাবার পাশে বসে ছিলো। অরিন কিচেনে যেতে পা বাড়াতেই বসা থেকে উঠে সেও কিচেনের দিকে পা বাড়ালো।

অরিন কিচেনে এসে দেখলো বুয়া গুলো রান্নার ব্যবস্থা করছে। অরিন সবজি কাটতে ছুরিতে হাত দেওয়ার আগে দিহান অরিনের হাত ধরে ফেলে। অরিন অবাক হয়ে তাকালো। দিহান বলল,”আমার বোনকে দেখতে এসেছে বলে যদি আমার বউকে খাটনি কাটতে হয়। তাহলে আমার বউ বিয়ের সব আলাপ আলোচনায়ও উপস্থিত থাকবে।
_এসব কি বলছেন। হাত ছাড়ুন। মেহমানদের খাওয়াতে হবেনা? রান্না করবে কে?
_হোম মেডগুলা কি আলমারিতে সাজয়ে রাখার জন্য আনা হইছে? আসো আমার সাথে।
_স স সবার সামনে থাকতে আমার লজ্জা করে।
দিহান অরিনের দিকে দুপা এগিয়ে দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বলল,”
_লজ্জা এখনো ভাঙেনি না? আসো আমি লজ্জা ভেঙে দিবো।” বলতে বলতে দিহান অরিনের গায়ের সাথে একেবারে ঘেঁষে যায়। অরিন বলল,”
_দে দে দেখুন। স স সবাই এখানে আছে।
_কোথায়? মেড গুলা? ওরা কিছু দেখবে না। এই তোমরা চোখ বন্ধ করো তো।” অরিন চোখ বড় বড় করে তাকায়। দিহান বলে,”তুমি বড় বড় করে তাকাও সমস্যা নাই। ওদের বন্ধ করতে বলছি।
_চ চ চ্চ চ্চ চলুন আমি যাচ্ছি।
_তার আগে তুমিও একবার চোখ বন্ধ করো।
_কেন?
_তোমার সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে না আমার লজ্জা করছে।” অরিন ভেংচি কেটে চোখ বন্ধ করে। দিহান বুয়াদের দিকে তাকায়। একজন তাকিয়ে ছিলো। দিহান চোখে ধমক দিয়ে বুঝালো না তাকাতে বুয়া চোখ সরিয়ে নেয়। দিহান অরিনের কপালে লম্বা একটা চুমু এঁকে চলে গেলো। অরিন চট করে চোখ খুলে বুয়াদের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে সেও চলে যায়।

লারা দিশাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসে। সোনালী পাড়ের কালো একটা শাড়ী পরেছে দিশা। হাতে কালো চুড়ি। ঠোঁটের ডার্ক রেড লিপস্টিক। চোখে কাজল পরেছে। শাওনের পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকালো। এটা তো সাক্ষাত পরী। শাড়ীতে দিশাকে এতো সুন্দর লাগছে যে শাওনের কল্পনায়ও এতো সুন্দর করে আঁকা সম্ভব নয়। দিশা চোখ তুলে শাওনের দিকে তাকালো। দিশার ছলছল চোখ দেখে শাওনের বুকটা ধুক করে উঠলো। দিশা চোখে চোখ রাখার সাহস নেই তার। চট করে চোখ নামিয়ে নিলো। আড়চোখে একবার ছেলের দিকে তাকালো ছেলেটা হা করে তাকিয়ে আছে। শাওনের ইচ্ছে করছে ছেলের চোখ দুটো তুলে ফেলতে৷

দিশাকে সোফায় বসানো হলো। ছেলের মা সুমনা চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বললেন,”আপা কিছু মনে না করলে ফারাজের পাশে কি মেয়েটাকে বসাতে পারি?”
_জ্বি আপা বসান।” লারা দিশাকে ছেলের পাশে বসালো। দিশা আর ছেলের মাঝে একহাত দূরত্ব। দিশা মাথা নিচু করে বসে থাকে। তার ভালোবাসার মানুষটি এখানে বসে আছে দেখে তাঁর কলিজাটা পুড়ে যাচ্ছে। সবার দিশাকে খুব পছন্দ হলো। ছেলের বাবা বললেন,”আমরা যখন এখন কিছু জরুরি বিষয়ে কথাবার্তা বলবো তো ওরা একটু অন্যদিকে গিয়ে বসুক।”শান্তি চৌধুরী লারা আর অরিনকে বললেন, “অরিন লারা তোমরা ওদের নিয়ে ছাদে যাও। ওরা কথাবার্তা বলুক তোমরাও বলো।” দিহান অরিনের হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকল। অরিন চাপা স্বরে বলল,”হাত ছাড়ুন না।
_এখন বিয়ের ডেট পরবে তুমি এখানে থাক।” লারা দিশাকে আর ফারাজকে নিয়ে উপরে যায়।


লারা দিশা আর ফারাজকে ছাদে এন বলল,”তোমরা কথা বলো আমি যাচ্ছি।” লারা চলে যায়। দিশা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। ফারাজ গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, ”
_ভালো আছেন?”দিশা কোনো জবাব দেয়না। এমনকি মাথাটা তুলেও উপরে থাকায় না। ফারাজ চারদিকে তাকিয়ে বলে,”আপনাদের ছাদটা অনেক সুন্দর। আপনার মতোই।”দিশা একনো মাথা নিচু করে আছে। ফারাজ বলল,”আচ্ছা আপনি তো আমায় দেখলেন না। দেখবেন না?” দিশা তবুও উপরে থাকালো না। কিছু বলল ও না। অনেক্ষণ চলে যায় তবুও দিশা তার মতোই দাঁড়িয়ে থাকে। ফারাজ একা একাই বকবক করে। এক সময় ফারাজ বলল,”আচ্ছা নিচে চলুন।” দিশা তড়িঘড়ি করে নিচের দিকে পা বাড়ায়। ফারাজ অবাক হয়ে তাকায়। এতো অদ্ভুত মেয়ে? একবার কিনা তাকালো ও না। কথাও বলল না? নিচে এসে কিছুক্ষণ বসে চলে গেলো ফারাজরা। বিয়ের ডেট ঠিক হলো মার্চের ২৫ তারিখ।

উনারা চলে যাওয়ার পরে সবাই উপরে যাবে তখনই নীল বলল,”নানুমনি তোমাকে আর মামা মামীদের আমি একটা কথা বলতে চাই।” নীলের কথায় সবাই দাঁড়িয়ে যায়। শান্তি চৌধুরী বললেন,”কি কথা রে?” নীল তার মায়ের দিকে তাকালো। উনি চোখ নামিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে তাকলেন। নীল লুপার দিকে তাকালো। লুপা চট করে চোখ ফিরিয়ে নেয়। জিহান বলে,”কি বলবি বলছিস না কেন?”
_আব,,,,আসলে,,,না ন নানুমনি আমি,,,,আমি লুলু লুপাকে বিয়ে করতে চাই।” বলেই চোখ খিঁচে দাঁড়িয়ে থাকে। নীলের কথায় সবাই চোখ কপালে তুলে তাকালো। মিহান চোখের চশমা ঠিক করে তাঁর গজ দাঁতের সুইট হাসিটা দিয়ে টিটকারি মেরে বলল,”লুলু লুপাটা কে রে? আমাদের বাসায় তো শুধু লুপা আছে। কোনো লুলু লুপা নেই।” সিরিয়াস একটা মোমেন্টে মিহানের এমন টিটকারি সবাই অবাকের ধাপে আরো দু সিঁড়ি এগিয়ে যায়। লুপার বাবা হাসান চৌধুরী বললেন,”এসব কি বলছিস তুই?” শান্তি চৌধুরী হাত বাড়িয়ে উনার ছেলেকে থামিয়ে বললেন,”লুপা তুই নীলকে বিয়ে করবি?” লুপা নীলের দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। কিছুই বলল না। মিহান বলল,”আসলে দাদুমনি ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। শুধু ভালোবাসে না। অনেক ভালোবাসে।” দিহান আর শাওন মিহানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,”আর আমরা কিছুই জানিনা?” হাসান চৌধুরীর কপাল কুঁচকে মেয়ের দিকে তাকান। অনেকে অনেক কিছু বলতে চাইছে কিন্তু শান্তি চৌধুরী আছেন বলে সবাই চুপ। শান্তি চৌধুরী নীলকে বললেন,”ঠিক আছে তোর দাদী ফুপি বাবাকে কাল আসতে বলবি।” নীল আবার তাঁর মায়ের দিকে তাকালো। উনি এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে আছেন। নীল বলল,”উনারা কেউ আসবেন না। আমি একাই ওকে বিয়ে করতে এসেছি। আমার পক্ষে শুধু আম্মু থাকবে।” হাসান চৌধুরী কিঞ্চিৎ চেঁচিয়ে বললেন,”ফাজলামি করছিস তুই? আমার একমাত্র মেয়েকে আমি এভাবে বিয়ে দিবো?” শান্তি চৌধুরী রাগান্বিত স্বরে উচ্চারণ করলেন,”হাসান।” হাসান সাহেব চুপ হয়ে যান। শান্তি চৌধুরী বলেন,”তোর বাবা দাদীকে নিয়ে আয়। পরিবার ছাড়া আমরা আমাদের বাড়ির মেয়ে বিয়ে দিবো না। সেটা নিজের কারো সাথে হোক বা পরের সাথে হোক।
_নানুমনি,আম্মুই আমার পরিবার। আর আম্মু আমার পক্ষে।
_শিলা এই শান্তি নীড়ের মেয়ে। আমি তোর বাড়ির মানুষ চাইছি। যদি না পারিস তাহলে ভুলে যা। ” মিহান শান্তি চৌধুরীর সামনে দাঁড়িয়ে বলল,”দাদুমনি এটা কি বলছো? বিয়েটা ও করবে। এখানে ওর পরিবারের কি দরকার?
_এসব তুই বুঝবি না মিহান। তাই এসবে তুই কথা বলবি না।
_আমি অনেক বুঝি দাদুমনি। এটাও বুঝি আমার বোন কিসে সুখী থাকবে। তোমাদের জেদকে প্রাধান্য দিয়ে আমি আমার বোনকে অসুখী দেখতে পারবো না। তোমরা না থাকলে আমি ওকে একাই বিয়ে দিয়ে দিবো।” কথাগুলা বলেই মিহান উপরে চলে যায়। শান্তি চৌধুরী নীলকে বললেন,”ও যাই বলুক। আমি এসব কোনোদিন মেনে নিবো না। আমি আমার নাতনিকে ঢাকঢোল বাজিয়ে বিয়ে দিবো চোরের মতো বিয়ে দিবো না। ও শান্তি নীড়ের সন্তান।” নীল ঠোঁট কামড়ে ধরে। শান্তি কের কথা শুনে খুব কান্না পাচ্ছে তাঁর। ধরা গলায় বলল,”ও তোমার নাতনি। আমি তোমার কে নানুমনি?
_তুইও আমার নাতি। তাই দ্বিতীয় কোনো প্রশ্ন না করে আমি মেনে নিয়েছি। কিন্তু পরিবার ছাড়া বিয়ে আমি কিভাবে মেনে নিবো বল? সমাজ কি বলবে ওকে? ” নীল আর কিছু বলল না। দিহান নীলকে টেনে নিয়ে বাইরে চলে গেলো। পিছু পিছু শাওনও বেরিয়ে যায়।

_____________________

জহুরা বেগমের খুব রাগ হচ্ছে অরিনের উপর। এতোকিছু হয়ে গেছে অথচ অরিন দিহানকে এখনো কিছুই জানায় নি? দিহান যখন সব জানতে পারবে তখন তো শুধু রাগ করবে না কষ্টও পাবে। তার থেকে কি ভালো নয় অরিন নিজের মুখে সব বলে দিক। স্বামী হিসাবে দিহানের অধিকার আছে এসব শুনার। জহুরা বেগম বসা থেকে দাঁড়িয়ে বললেন,”তুই থাক আমি আজকেই যামু গা। ভাবি যাইলে যাক নাইলে না। আমি একলা যাইতে পারুম।” অরিন খপ করে তার মায়ের হাত ধরে বলল,” মা তুমি যাবা না প্লিজ৷
_এহানে রাইকা তর এই কান্ডগুলান দেখাইবার চাস?

_আমার খুব ভয় করছে মা৷ আমি করবো বলো? উনাকে এসব বলতে আমার ভয় লাগে। উনি যদি রেগে যান? যদি আমায় ভুল বুঝেন? উনি যদি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেন। যদি কষ্ট পান? ঠিক এই ভয়গুলা উনাকে কিছু বলতে দেয়না মা। আমি অনেকবার বলতে গেছি কিন্তু বলতে পারিনি।
_তোরে কইতে অইবো অরিন। জামাইরে সব জানাইতে অইব। সত্য কহনো চাপা থাহেনা রে। একদিন না একদিন জামাই সব জাইন্না যাইব। হেইদিন কি করবি ক? হেইদিন কি জামাই রাগ করব না? কষ্ট পাইব না?
_কিন্তু মা। আমার ভয় করে৷ উনি আমাকে ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দিলে আমি মরে যাবো মা। সত্যি মরে যাব?” অরিন তাঁর মাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে। জহুরা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বুঝাতে লাগেন। দিহানের অধিকার আছে সব শুনার। করুক দিহান রাগ। তবুও বলতে হবে। বুঝুক ভুল তবুও বলতে হবে। না বললে যে দিহানকে ঠকানো হবে। অরিন মনে মনে ঠিক করে আজকেই দিহানকে সব বলে দিবে। চোখ মুছে নিজের রুমে চলে আসে অরিন। মায়ের কাছে শেয়ার করে নিজেকে হালকা লাগছে তাঁর। রুমে এসে দেখলো দিহান ঘুমাচ্ছে। কাল সারারাত ঘুমায়নি। নীল উল্টা পাল্টা কান্ড করছিলো। সুইসাইড করতে যাচ্ছিলো। তাই ফিহান আর শাওন নীলের সাথে ছিলো। অরিন দিহানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কতো নিস্পাপ তাঁর স্বামীর চেহারাটা। আর ছেলেটাকে কিনা সে ঠকাচ্ছে এতো বড় ঘটনাটা না জানিয়ে? আজই সব বলে দিলো। দিহান যদি রাগ করে করুক তবুও বলতে হবে তাকে।

দুপুরের দিকে শান্তি চৌধুরী অরিনকে জানিয়ে গেলেন ইশির সাথে শপিংয়ে যেতে। লারাও যাবে। দিহান ওয়াসরুম থেকে বের হতেই অরিন দিহানকে বলল,”দাদুমনি বলছে ইশি আপুর সাথে শপিংয়ে যেতে। আমার যেতে ইচ্ছে করছে না। আপনি উনাকে গিয়ে বলুন না আমি যাবো না।” দিহান চুল মুছতে মুছতে বলল,”
_চলে যাও। আজ তোমার জন্য একটা বিগ সারপ্রাইজ আছে।
_আজ? কি সারপ্রাইজ?
_সেটা বলা যাবেনা। তুমি ইশির সাথে যাও আমারও বাইরে যেতে হবে।
_আপনি কই যাবেন?” দিহান কিছু বলল না। অরিন রেডি হয়ে বেরিয়ে যায়। ইশি লারা আগে থেকেই রেডি ছিলো। অরিন লারাকে বলল,”আজ হঠাৎ কি উদ্দেশ্যে শপিং আপু?” লারা বলল,”সেটা তোমার বর জানে আমরা কি জানি?
_কেন?
_কারণ তোমায় নিয়ে শপিংয়ে যেতে তো তোমার বর-ই বলেছে।” অরিন অবাক হয়। তবে কিছু বলল না। শপিংমলে এসে ইশি কয়েকটা শাড়ি কিনলো। লারা কিছুই কিনলো না। অরিন একটা শার্টের দিকে তাকালো। নীল রঙের একটা শার্ট। দিহানকে যে কতটা সুন্দর লাগবে সেটা অরিন কল্পনা করেই পাগল হয়ে যাচ্ছে। অরিন শার্ট দেখতে বাম দিকে যায়। হঠাৎ অরিনের হাতে হেঁচকা টান পড়ে। কিছু বুঝে উঠার আগেই তাঁর নাকে রুমাল চেপে ধরে। অরিনের চারদিকটা অন্ধকার হয়ে আসে।

পিটপিট করে চোখ খুললো অরিন। ঘুটঘুটে অন্ধকার একটা ঘরের কোণে পড়ে আছে সে। তড়িঘড়ি করে উঠে বসে চারদিকে তাকালো। জ্ঞান হারানোর আগ মূহুর্তের কথা মনে পড়তেই চিৎকার করে বলল,”কেউ আছেন? প্লিজ হেল্প করেন। ইশি আপুউউউউউ। লারা আপুউউউ।” কারো কোনো সাড়াশব্দ নেই। ভয়ে অরিনের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। দিহানের কথা খুব মনে পড়ছে। অরিন কেঁদে উঠলো। এই কোথায় আসলো সে? হঠাৎ দরজা খুলে যায়। দরজার বাইরের আলো ভিতরে এসে অরিনের মুখের উপর পড়ে। অরিন দু’হাতে মুখ ঢাকে। আস্তে আস্তে করে হাত সরায়। কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। আলো বিপরীত দিকে হওয়ায় মুখ দেখা যাচ্ছে না। অরিন ভয়ে জিভে ঠোঁট ভেজালো। খুব জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে সে। মানুষটি এক পা এক পা করে অরিনের সামনে এসে দাঁড়ালো। অরিন শুকনো এক ঢোক গিলে। পিছনে পিছাতে চায়। কিন্তু দেয়ালের জন্য বার বার জায়গাতেই থেমে যাচ্ছে। লোকটি অদ্ভুত ভাবে বলল,”কেমন লাগছে এখন মিসেস খুনি?” অরিন চোখ বড় বড় করে তাকায়। এইটা কার গলা? না না ভুল শুনছে সে। অরিন কাঁপা গলায় বলল,”ক্ক ক্ক কে?” অরিনের সামনে লোকটি বসে দিয়াশলাই জ্বালিয়ে বলল,”আমি।” অরিন অস্পষ্ট ঠোঁটে বলল,”আ আ আ আপনি?”

চলবে,,,,,,,।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here