ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু পর্ব_২৬

0
1219

ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু
পর্ব_২৬
#সুলতানা_সিমা

একমাস পর

ঘড়ির কাঁটায় রাত আটটা। শান্তি নীড়ে এখনো রাতের রান্না শুরু হয়নি। চারদিকে চোখ বুলাতে বুলাতে কিচেনে গেলো অরিন। দিহানের সাথে কথা বলতে বলতে ভুলেই গেছিলো রাত আটটা হয়ে গেছে। ভাগ্যিস কেউ দেখেনি নয়তো তাকে অনেক কথা শুনাতো। আজকাল দিহানের পাগলামো বেড়ে চলছে। যখনি সে সময় পাবে ফোন দিবে। অরিন যদি কথা বলেনা রাগ করে বসে থাকবে নয়তো বলবে সে দেশে চলে আসবে। এমনি কথা হোক বা না হোক সারারাত তাঁর সাথে কথা বলতে হবে নয়তো দেখা যায় মেয়েদের মতো কেঁদে কেটে বন্যা বানিয়ে দিচ্ছে।দিহান অবশ্য জানেনা অরিন সারাদিন কষ্ট করে রাতে একটু অবসর পায়। যদি জানতো এমন পাগলামো করতো না। সে জানে অরিন দিনে অনেক লম্বা একটা ঘুম দেয়। সারাদিন ঘুমায় আর রাতে কথা বলে। সুমনা চৌধুরী অনেকবার দিহানকে বলতে চেয়েছেন অরিন সারাদিন কাজ করে কিন্তু অরিন বলতে দেয়না। সে দিহানকে খুব ভালো করে চিনে। দিহান এটা জানলে যে আর এক মূহুর্ত কানাডা থাকবেনা এটা জানা আছে তাঁর। নিজের ভালো থাকার জন্য স্বামীর স্বপ্ন কিভাবে ভেঙে দিবে সে। তাছাড়া ভালো তো সে আছেই। শান্তি চৌধুরী তাকে খুব ভালোবাসেন। সব সময় তাঁকে বুঝান কিভাবে চললে সবাই অরিনকে ভালোবাসবে। মাঝে মাঝে দিহানের বড়মা কোনো কাজে ভুল হলে রাগারাগি করেন। তবে সেটা সুমনা চৌধুরীর ভালোবাসা তাকে সব ভুলিয়ে দেয়। উনি তাকে ঠিক ততটাই ভালোবাসেন যতটা জহুরা বাসতেন। কিন্তু হানিফ চৌধুরী একটু অন্যরকম। কেমন যেন গাম্ভীর্য প্রকৃতির লোক। চেহারায় সময় সময় বিরক্তি ফুটে থাকে। অরিনকে তো তিনি দেখতেই পারেন না৷ আজ পর্যন্ত একবারও তিনি অরিনের সাথে কথা বলেন নি৷ অরিনের দিকে তাকানও নি। একদিন নিচে নামার সময় উনার সম্মুখীন হয়েছিল অরিন। উনার চেহারায় এক রাশ বিরক্ত নিয়ে পাশ কেটে চলে যান। এমন অনেক দিন আছে অরিন বসে থাকলে উনি অরিনকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলেছেন,বাসায় কি কোনো কাজকর্ম নাই নাকি সবাই বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। অরিন ঠিকই আন্দাজ করতে পারে কথাগুলা তাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়। শান্তি চৌধুরীর কথা মতো অরিন সব করে তবুও শ্বশুরের মন জয় করতে পারেনা। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কিচেনে ঢুকে। শ্বশুর শাশুড়ী সবার কাপড় চোপড় ধুয়ে দেয় তবুও সেই আগের মতোই সবকিছু। কয়েকদিন ধরে শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছে। একটু কাজ করলেই শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। কিছু খেতে পারেনা। হঠাৎ মাথা ঘুরে উঠে। খাবারেও বেশ অনিহা জন্ম নিয়েছে। কাজ করতে গেলে অশান্তি লাগে। মাঝে মাঝে মন চায় বলুক আজ আমি রান্না করবো না বুয়া করুক আজ আমি এটা করবো না বুয়া করুক। কিন্তু শান্তি চৌধুরী অরিনের হাতের রান্না ছাড়া খানই না। আর এই বাসায় কেউ বুয়ার হাতের রান্না খায়না। অন্য কাজগুলা বুয়া করতে পারবে কিন্তু অরিন যে কাজ করবে না সেটা উনার পছন্দই হয়না। এইতো দুদিন আগে বুয়া উনার কাপড় ধুয়ে দিছিলো। শান্তি চৌধুরী বললেন “এটা কোনো ধুয়া হলো? এখনো কাপড়ে ময়লা দেখা যাচ্ছে। অরিনকে দিয়ে ধুয়ায় ওর মতো কাজ তোমরা কেউ করতেই পারো না।” তারপর আবার অরিনকে ধুয়ে দিতে হলো। মিহান এ নিয়ে তাঁর দাদীর সাথে একটু রেগে কথা বলেছে। অরিন মিহানকে বলেছে এসব নিয়ে কথা না বলতে। এই বাড়িতে যদি কেউ অরিনকে বুঝে তাহলে সেটা মিহান ও সুমনা চৌধুরী। পনেরো দিন আগে মিহানের যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু মিহান যায়নি। কেন যায়নি জানা নেই কারো। এই এক মাসে শাওন একবারও শান্তি নীড় আসেনি। নীল তো আসেই না। শুনেছে জিহানের বিয়েতে আসবে দুজন। এক সপ্তাহ পরে জিহানের বিয়ে। আর সে বিয়ে নিয়ে এখন থেকেই বাসায় কতো আয়োজন। যখন বিয়ে শুরু হবে তখন কতো আয়োজন হবে? আচ্ছা সব কাজ কি অরিনকে করতে হবে? ভাবতেই বুকটা ভারি হয়ে গেলো অরিনের।

দিশা আর ইশি অরিনকে খুঁজতে এসে দেখলো অরিন ধ্যানমগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ অরিনকে দু এক ডাক দেয় তাঁরা অরিনের ভাবান্তর ঘটেনি। ইশি অরিনের বাহু ঝাঁকিয়ে ডাক দেয়, “এই ভাবি?” অরিন চমকে উঠে। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,”কিছু দিবো?” দিশা আর ইশি কিছু বলল না শুধু মিটিমিটি হাসছে। একজন আরেকজনকে কনুই মেরে কিছু একটা ইঙ্গিত দিচ্ছে। অরিন বলল,”তোমরা কিছু বলবে আপু?” ইশি ও দিশা ঠোঁট কামড়ে হাসলো। দিশা কি ইশারা দিলো। ইশি তাঁর ওড়নার আড়ালে লুকানো খুব ছোট একটা প্যাকেট বের করে দিলো। অরিন হাতে নিতে নিতে জিজ্ঞেস করলো,”কি এটা?” দিশা কোনো রকম হাসি থামিয়ে বলল,”কিট।
_কি কিট?
_প্রেগন্যান্সি কিট।
_এটা দিয়ে আমি কি করবো?”
ইশি বলল,”কি করবে কিভাবে করবে সব লেখা আছে তুমি শুধু আমাদের রেজাল্ট জানাও।” বলেই দুজন হাসতে হাসতে চলে গেলো। অরিন অবাক হয়ে ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো। আপাতত এসব মাথা থেকে ঝেড়ে রান্না শেষ করলো সে। রান্না শেষে উপরে গিয়ে দেখলো দিহান হোয়াটসঅ্যাপে ২৯টা কল দিয়েছে। অরিন হেসে উঠলো। এই মানুষটার কি কোনো কাজ নেই? লেখাপড়া নেই? অরিন কল দিতেই দিহান রিসিভ করে। অরিন বলল,”আপনাকে বলছিলাম না আমি পড়তে বসছি তবুও এতো ফোন দিলেন কেন?
_তুমি পড়তে বসেছিলে নাকি অন্যকিছু? আমি মিহানকে ফোন দিয়ে বললাম তোমাকে পড়াতে সে বলল তুমি কিচেনে আছো পড়তে বসলে পড়াবে। তুমি কিচেনে কি করছো? আর আমাকে মিথ্যে বললা কেন?” দিহানের কণ্ঠে স্পষ্ট রাগ। অরিন চুপসে গেলো। দিহানও কিছুক্ষণ কিছু বলল না। অরিনের খুব খারাপ লাগছে রোজ রোজ দিহানকে মিথ্যে বলতে। কিন্তু কি করবে সে? দিহানকেই বা কি করে এসব বলবে। বললে তো বাসায় ঝগড়া হবে। দিহানকে খুব ভালো করে চিনে সে। এসব তো দিহানকে শুনানোই যাবেনা। দিহান গম্ভীর গলায় বলল,”কিচেনে কেন গেছিলে? দাদুমনি না বলল তোমাকে দিয়ে সে কিচ্ছু করতে দেয় না তাহলে তুমি কিচেনে কেন গেলে?” অরিন অবাক হলো। উনি নিজেই সব কাজ করান আবার উনি দিহানকে বলেন অরিন কিছুই করেনা। অরিনের রাগ হলো। আবার পরক্ষণে ভাবলো হয়তো দিহান রাগ করবে বলে বলেন না। অরিন ক্ষীণ গলায় বলল,”সরি।
_আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি তুমি কিচেনে ছিলে কেন? তোমাকে নিষেধ করেছি না কিছু করবে না। কথা শুনো না কেন তুমি? তাও আজ মিথ্যে বললে।
_সরি। চা খেতে ইচ্ছে করছিলো তাই একটু কিচেনে গেছিলাম।
দিহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,”
ঠিক আছে যাও খেয়ে আসো পরে ফোন দিচ্ছি।
_ওমা এখন দশটা বাজে। কেউ খায়ও নি।
_খায়নি তো কি হয়েছে। তুমি খেয়ে আসো। কেউ তোমাকে কিছু বলবে নাকি?
_উঁহু। সবাই আমাকে অনেক আদর করে।
_জানি তো। আমার বউপাখিটাই যে এমন যাকে ভালো না বেসে থাকাই যায়না।” অরিন মৃদু হাসে। দিহান বলে,”এই বউপাখি।
_হুম?
_তোমাকে খুব মনে পড়ছে গো৷ ইচ্ছে করছে দেশে চলে আসি। আমার না সত্যি আর ভালো লাগছে না এখানে। কবে দেখবা সব ছেড়ে ছুঁড়ে তোমার কাছে চলে গেছি।
_এই শুনেন না। দিশা আর ইশি আপু আমায় একটা প্রেগন্যান্সি কিট দিয়ে গেছে।
_কেন?
_বলেছে টেস্ট করতে।
_কি ব্যাপার বলোতো বাচ্চা বাচ্চা গন্ধ পাচ্ছি।
_কিইইই?
_না না বাপ বাপ গন্ধ পাচ্ছি।
_রাখেন তো ফোন।” অরিন হেসে উঠে ফোন কেটে দিলো। দিহান মেসেজ দিলো সবার আগে আমাকে জানাইও। মেসেজটা পড়ে অরিন লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

রাত ১১টা ছুঁই ছুঁই শান্তি নীড় হইচই নীড় হয়ে গেছে। লুপা ইশি দিশা দিয়া পুরো বাসাটা মাথায় তুলে নিছে। তাঁরা ফুপি হবে এটা যেন তাদের বিশ্বাসই হচ্ছেনা। এতো খুশি এতো খুশি এতো খুশি কই রাখবে তাঁরা। খবরটা শুনে মিহান সাথে সাথেই বাজারে গিয়ে মিষ্টি এনেছে। সবাই আনন্দে আত্মহারা,শুধু দিলারা আর শান্তি চৌধুরীর মাঝে কোনো আনন্দ নেই। উনাদের মুখে হাসি আছে কিন্তু আনন্দ উনাদের ধারে কাছেও নেই। আনন্দ আর হাসির মাঝে যে অনেক তফাৎ তা অরিন উনাদের দেখে বুঝতে পারছে। তবে এতে অরিনের মনটা একটু খারাপ হয়নি। আজ তাঁর স্বামীর খুশি দেখেছে সে। বাবা হওয়ার খবর শুনে এতো বেশি খুশি হয়েছে যে খুশিতে কেঁদেই দিয়েছে সে। আচ্ছা পৃথিবীর সব পুরুষ কি এভাবে খুশি হয় বাবা হবে শুনে? ভেবেই অরিন ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠে। খবরটা পেয়েই দিহান খুশিতে কেঁদে দিয়েছে। খুশির কান্নাজড়িত গলায় বলেছে,”বউপাখি আ আমি বা বাবা হবো? আ আ আমার বা বাচ্চা হবে? আ আমাদের ভা ভালোবাসার ফুল ফুটবে?” দিহান এতো খুশি হয়েছে যে খুশিতে তাঁর গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না। খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলছে সে দেশে চলে আসবে। অরিন দিহানের কান্ডে হাসে। হানিফ চৌধুরীরা তিন ভাই যখন বাসায় আসেন তখন ১১:৪৫! উনারা ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই দিশা মিষ্টি নিয়ে দৌড়ে এসে বলে,”দাঁড়াও দাঁড়াও দাঁড়াও।” দিশার কথায় তিন ভাই দাঁড়িয়ে যান। দিশা একটা মিষ্টির বক্স নিয়ে এসে তাঁর বাবা মুখে তুলে বলে,”হা করো।” হানিফ চৌধুরী বলেন,”কিসের মিষ্টি?
_তুমি দাদু হতে চলছো চাচ্চু।” ইশির কথায় তিন ভাই হা হয়ে তাকিয়ে থাকেন। অরিন উপর থেকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে হানিফ চৌধুরীর দিকে। দিশা বলল,”বাবা মিষ্টি খাবে না?” হানিফ চৌধুরী অনেক্ষণ গম্ভীরমুখে দাঁড়িয়ে থাকলেন। সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ হা করে মিষ্টি খেয়ে নিলেন। সুমনা চৌধুরী আর অরিনের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে অরিন কিচেনে গেলো। সময় এখন এমন যে কখনো হীম হীমে শীত কখনো গা ছমছমে গরম। তবে সকালটা শীতের লেপে মোড়ানোই থাকে। ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৫:৫০ বাজে। অরিন ফজরের নামাজটা পড়েই কিচেনে চলে এসেছে। এখন যদি শুয়ে পড়ে তাহলে তাঁর চোখ লেগে যাবে। তখন হয়তো ১০-১১ টার আগে ঘুম ভাঙ্গবে না। তাঁর শ্বশুররা ৮টা বাজলেই চলে যান। নাস্তার কিছু বানানো না হলে তখন তো শান্তি চৌধুরী তাঁর উপর অসন্তুষ্ট হবেন,যা অরিন চায়না। সারারাত দিহানের সাথে কথা বলেছে। দিহান কড়া ভাবে বলে দিয়েছি নামাজ পড়েই যেন লম্বা একটা ঘুম দেয়। লম্বা ঘুম দিবে কি ছোট ঘুম অতো দিতে পারছে না। ঘুম এসে বার বার চোখের দরজায় কড়া নাড়ছে। ঘুমের ডাকে সাড়া দিতে চাওয়া নিবু নিবু চোখ নিয়ে বার বার হাই তুলছে। ঘুমের ধাক্কা চোখে লাগতেই হাতে নেওয়া বাটিটা পড়ে গেলো। অরিন কেঁপে উঠে। সাথে সাথে ঘুম পালিয়ে যায়।

হানিফ চৌধুরী জগিংয়ে যাওয়ার জন্য বের হতে যাচ্ছিলেন। কিচেনে কিছু পরার শব্দ শুনে সেদিকে গেলেন। গিয়ে দেখেন অরিন দাঁড়িয়ে আছে একটা বাটি পড়ে আছে তাঁর পায়ের সামনে। হানিফ চৌধুরী কপাল কুঁচকে তাকালেন। উনার এমন চাহনি দেখে অরিন শুকনো একটা ঢোক গিলে। হাত দুটো কাচুমাচু করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকল। আল্লাহই জানেন এখন কি বলবেন তিনি। হানিফ চৌধুরী চলে যেতে লাগলেন। সদর দরজার কাছে গিয়ে আবার ফিরে আসলেন। অরিন উঁকি দিয়ে দেখতে যাচ্ছিলো উনি গেছেন কিনা তখনই উনি আবার এসে হাজির। অরিন কেঁপে উঠে। ভীতু চোখে তাকাতে তাকাতে বাটিটা তুলল। হানিফ চৌধুরী এখনো কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছেন। কি ভয়ানক চাহনি উনার। অরিন আবারও শুকনো ঢোক গিলে। নিজেকে কিছুটা শক্ত করে ময়দার প্যাকেট হাতে নিলো। বার বার আঁড়চোখে হানিফ চৌধুরীর দিকে তাকাচ্ছে। উনি আগের ন্যায় তাকিয়ে আছেন। অরিন বাটিতে ময়দা ঢালতে লাগলো। সে থরথর করে কাঁপছে। তাঁর এই অস্বাভাবিক কাঁপা-কাঁপির কারণে ময়দা ঠিকঠাক মতো বাটিতে পড়ছে না। যতটা বাটিতে পড়ছে ততটা বাইরে পড়ছে। অরিন চোখ খিঁচে নিজেকে শক্ত মনে মনে ভাবলো আর তাকাবে না উনার দিকে, কিন্তু পারলো না। তাঁর চোখ আবার বাঁকা হয়ে উনার দিকে চলে যায়৷ উনি নাই চলে গেছেন। অরিন ফোঁস করে একটা দম ছাড়লো। এতক্ষণে ওর দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। উঁকি দিয়ে একবার দেখলো উনাকে দেখা যাচ্ছে কিনা। নাই কোথাও দেখা যাচ্ছে না। স্বস্থির নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজের কাজে মন দিলো সে। মনে মনে ভাবলো এতো রোমান্টিক একটা ছেলের বাপ এতো খাটাস হয় কেমনে?

সুমনা চৌধুরী নামাজ পড়ে শুয়েছিলেন। এতোক্ষণে মাত্র উনার চোখ দুটো লাগলো আর এখনই এসে উনার স্বামী উনাকে ডাকলেন। বিরক্ত নিয়ে উঠে বসে বললেন,”কি হয়েছে?” হানিফ চৌধুরী বললেন,”ওই মেয়েটাকে বলো এতো সকাল সকাল কাজে হাত না দিতে। সকাল বিকাল কেন কখনোই কাজ না করতে।
_কোন মেয়েটাকে? কার কথা বলছো?
_ওই মেয়েটা আরকি। যা যা যাকে তোমরা বউমা ডাকো।” হানিফ চৌধুরীর কথা শুনে সুমনা চৌধুরী পেট ফেটে হাসি আসলো। কিন্তু সেটা ঠোঁটের কোণ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখলেন প্রকাশ করলেন না। কাল রাত থেকে দেখছেন উনি হানিফ চৌধুরী কিভাবে মিটিমিটি হাসছেন। দাদা হওয়ার খুশিতে যেন আকাশে উড়ছেন শুধু প্রকাশ করছেন না। সুমনা চৌধুরী বললেন,”সকাল সকাল না উঠলে নাস্তা বানাবে কে?
_আরো মানুষ আছে তাঁরা বানাবে। তুমি বানাও গিয়ে যাও। দরকারে ধরলে আমরা বাইরে খেয়ে নিবে।” সুমনা চৌধুরী হা করে তাকালেন। হানিফ চৌধুরী বললেন, “হা করে তাকাচ্ছো কেন? মুখ বন্ধ করো।
_তুমি না সেদিন বললে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খাওয়ার জন্য কি স্বামীর বাড়ি এসেছে। তাহলে আজ এটা বলছো কেন? আর হঠাৎ এই মেয়েকে নিয়ে এতো ভাবছো যে?” হানিফ চৌধুরী ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন। আমতা আমতা করে বললেন,”আব,,হয়েছে। তার প্রতি আমার দরদ হয়েছে। তাই বলেছি।” সুমনা চৌধুরী ভেংচি কাটলেন। হানিফ চৌধুরী বললেন, “তুমি নিষেধ করে দিও আর কিছু না করতে।” সুমনা চৌধুরীর ইচ্ছে হলো বলতে,”আমি নিষেধ করে কি হবে সব তো আপনার মা করাচ্ছেন।” কিন্তু বললেন না। সন্তানের চোখে মায়ের দোষ দেখানো ব্যাপারটা কেমন যেন। হানিফ চৌধুরী হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে আরো কিছু বলবেন। সুমনা চৌধুরী বললেন,”আর কিছু বলবে?” হানিফ চৌধুরী চমকে উঠে বললেন,”হ্যাঁ।” পরক্ষণে আবার বললেন,”না না না কিছু বলবো না। তুমি গিয়ে এই মেয়েকে ঘুমাতে বলো যাও। আর যা করতে হয় তুমি করো।” সুমনা চৌধুরী মিটিমিটি হেসে খাট থেকে নামতে লাগলেন। দরজা খুলতে যাবেন তখন হানিফ চৌধুরী বললেন, “শুনো আজ এই মেয়েকে নিয়ে শপিংয়ে যেও যা কিনতে চায় কিনে দিও।”
_বার বার এই মেয়ে এই মেয়ে বলছো কেন? তাঁর নাম আছে নাম ধরে বলো। আর শপিংয়ে কেন যাবো পরশু তো দিহান কত কি পাঠিয়ে দিলো। জিহানের সাথে তো আরো দিবে।
_দিলে দিবে যাও তো।
_আরো কত ঢং দেখা লাগবে।” কথাটা বলেই সুমনা চৌধুরী চলে গেলেন রুম থেকে। হানিফ চৌধুরী মিটিমিটি হাসতে লাগলেন। উনার খেলার সাথী আসবে। আধো আধো গলায় অস্পষ্ট ভাষা তাকে কেউ দাদদাদ বলে ডাকবে এগুলা ভাবতেই কেন জানি খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে উনার।

______________________________________

একটা রেস্টুরেন্টে বসে লুপা আর তন্ময়। দুজন কফি খাচ্ছে আর গল্প করছে। আজ দুসপ্তাহ পরে তন্ময়ের সাথে দেখা হলো লুপার। নীলের কাছে নিজেকে খারাপ করে তুলার জন্য তন্ময়ের মতো প্লে বয়ের সাথে সে বন্ধুত্ব করেছিলো। যেটা নীল জানতো তন্ময় ও লুপা প্রেম করে। তন্ময় লুপাকে অনেক সম্মান করতো কারণ লুপা তাকে বন্ধু বানালেও ভাইয়া বলে ডাকতো যেটা তন্ময়কে দূর্বল করে দিতো। লুপাকে কখনো বোন ছাড়া অন্যকিছু ভাবেনি সে। কফিতে চুমুক দিতে দিতে তন্ময় বলল,”তা এখন কি খবর তোমার? বিয়ে টিয়ে করছো না যে?” লুপা ম্লান হেসে বলল, “করবো ভাইয়া। সময় আসুক।
_এখনো নীলকে ভালোবাসো?” তন্ময়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি লুপা। তাঁর গলা ধরে আসছে। যেন কথা বললে কান্না চলে আসবে। তন্ময় বলল,”নীল বিয়ে করেছে নাকি এখনো করেনি?” লুপা হাতের উল্টো পিঠে আঙুল দিয়ে চোখটা মুছে বলল,”ওর বিয়ে ভেঙে গেছে। এক মাস আগে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।
_কেন? বিয়ে ভাঙলো কেন?
_একদিন একটা ফ্রেন্ডের বাসা থেকে আসার পথে ওদের বাসায় উঠেছিলাম। ও আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছিলো। সেটা নাকি ওই মেয়ের ভাই দেখেছিলো। নীলদের বাসায় কেউ ছিলোনা সেদিন। ফুপিও ছিলোনা রাতে এসেছিলো। ফুপি আসার আগে ওই মেয়ের ভাই এসেছিলো তাদের বাসায়। শুধু নীলকে একা বাসায় দেখে গেছে। তাই সেদিন আমাকে বাসা থেকে নিয়ে যেতে দেখে ভেবেছে খালি বাসায় কোনো মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করেছে । সেটা নিয়ে ওই মেয়ের ভাই নীলকে অনেক কথা শুনায় রাতের বেলা মেয়ে নিয়ে বাসায় আসে এটা ওটা অনেক কিছু। আর এই নিয়েই ঝগড়ায় দুই পরিবারে অনেক ঝামেলা হয়। সেই ঝামেলায় ওরা মেয়েকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেয়।” এইটুকু বলে থামলো লুপা। দু-চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে তাঁর। কাঁদতে কাঁদতে বলল,”জানো ভাইয়া। নীল ভাই আমাকে দোষারুপ করে। আমি নাকি চাইনা সে ভালো থাকুক। আমি নাকি ইচ্ছে করে সেদিন এটা করেছিলাম। জানো ভাইয়া ও আমাকে যা মুখে আসে তাই বলে। কতো খারাপ খারাপ উপাধি দেয় আমায়। আমি কি এতোই খারাপ? ও তো আমাকে ভালোবাসতো তাহলে ও আমার চোখের ভাষা বুঝেনা কেন ভাইয়া? কেন বুঝেনা আমার চোখ ওকে দেখার জন্য তৃষ্ণার্ত থাকে। কেন বুঝেনা ওকে দেখলে আমি এলোমেলো হয়ে যাই৷ আমি তাকে চাই,ভালোবাসি। কেন বুঝেনা ভাইয়া বলো?” এইটুকু বলে আর কিছু বলতে পারলো না লুপা। তাঁর গলা দিয়ে আর কথাই বের হচ্ছে-না। তন্ময়ও করুণ চোখে তাকিয়ে থাকলো লুপার দিকে। ইশ! যদি লুপা একটা বার অনুমতি দিতো নীলকে সব বলে দেওয়ার তাহলে সব বলে দিতো সে। লুপা তাঁর নিজের বোনের মতো। আর একটা বোনের কান্না কোনো ভাইও সয্য করতে পারেনা।

নীল ফোনে কথা বলতে বলতে রেস্টুরেন্টে এসে ঢুকলো। একটা টেবিলে বসে ফোন রেখে ওয়েটারকে ডাকার জন্য বামে তাকিয়ে দেখলো তন্ময় লুপার চোখ মুছে দিচ্ছে। দৃশ্যটা চোখে পড়তেই নীলের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়। সাথে সাথেই চোখের রং পাল্টে গেলো। লুপাকে এখন আগের থেকেও বেশি ঘৃণা করে সে। মোটেও সয্য হয়না তাঁর। টেবিল থেকে উঠে গিয়ে লুপার হাত ধরে টান দিয়ে লুপাকে দাঁড় করালো। আকস্মিক ঘটনায় লুপা ভয় পেয়ে যায়। নীলের অগ্নি চোখে লুপার কলিজায় ছুরি চালিয়ে লুপাকে খুন করে দেয়। লুপা হাত ছাড়াতে চাইলে নীল আরো জোরে চেপে ধরে। লুপা আর্তনাদে আহহহ বলে কুঁকড়ে উঠলো। নীল দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”কি রে কিছুদিন আগে না আরেকটা ছিলো? ওটা কই? ওটার মজা নেওয়া শেষ?” তন্ময় কিছু বলতে গেলে নীল হাত বারিয়ে থামিয়ে বলে,”তুই কিছু বলবি না।” তন্ময় থেমে যায়। নীল আবার লুপাকে বলল,”এভাবে ফ্রি-তে দেওয়ার থেকে তুই টাকা দিয়ে কাজ শুরু কর। দেখবি কোটিপতি হতে বেশিদিন লাগবে না তোর। বললাম না তোকে brothel এ চলে যাবি। তোর মতো “”শ্যা “”গি””দের এর থেকে ভালো আর কোথায় মানায় বল?” তন্ময় এতোক্ষণ চুপ থাকলেও এখন থাকতে পারলো না। নীলের কলার টেনে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,”ওই কাকে কি বলছিস তুই? ও বোন হয় আমার।” তন্ময়ের চেঁচানোতে পুরো রেস্টুরেন্টে স্তব্ধ হয়ে যায়। সব মানুষ দাঁড়িয়ে যায়। সবার চোখ এই টেবিলের দিকে। নীল চারিদিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,”কলার ছাড়।
_তুই ওর হাত।
_কেন রে? তোর brothel Queen এর হাত ধরায় তোর খুব লাগছে বুঝি?” নীলের কথা শেষ হতে না হতেই তন্ময় নীলের নাক বরাবর গুষি মারলো। নীল ছিটকে মেঝেতে পড়ে। রেস্টুরেন্টের সবাই চিৎকার দিয়ে উঠে কিন্তু কেউ কিছু বলেনা কারণ নীল আর লুপা দুজনই শান্তি চৌধুরীর নাতি নাতনি যিনি এই রেস্টুরেন্টের মালিক।

নীল নাকে হাত দিয়ে চেপে ধরে আহহহ বলে উঠে উঠে। নাক থেকে হাত সরিয়ে দেখে হাত লাল হয়ে আছে। নীলের নাকে রক্ত দেখে লুপা আঁতকে উঠল। সে এগুতে চাইলে তন্ময় হাত ধরে ফেলে। নীল উঠে তন্ময়কে মারতে আসলে তন্ময় আবার নীলকে মারলো। আবারও নাকে মারায় নীলের মাথা ঘুরে উঠে। লুপা তন্ময়ের হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে নীলকে ধরে। নীল লুপাকে “নষ্টা মেয়ে ছাড় আমায়” বলেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে দেয়। ধাক্কা খেয়ে লুপা নিচে পড়ে যায়। আর্তনাদে একটু জোরেই কুঁকিয়ে উঠে। কনুইয়ে ধরে ছলছল চোখে নীলের দিকে তাকায়। নীল রক্তিম চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। নীলের চোখ দুটো হিংস্র রূপ ধারণ করেছে। লুপার চোখের পানিটা স্পর্শ করেনি তাঁর হৃদয়। নীল উঠে দাঁড়িয়ে হাতের উল্টো পিঠে ঠোঁটের রক্ত মুছলো। তাঁর অগ্নি চোখ দুটো লুপাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে। নীল তাচ্ছিল্য হেসে বলল,”তোকে যে ছেলেরা বেড পর্যন্ত নিতে পারে তাঁরা তোর কাছে খাটি প্রেমিক। তাইতো তোর লাইফে তন্ময় ব্যাক করতে পেরেছে আমি পারিনি। হিসাব রাখিস তো কয়টার সাথে রাত কাটাস? জানিস? তোর এই নষ্টামির কারণে না আমার বিয়েটাও ভেঙেছিলো।” নীলের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে লুপার কানে অস্পষ্ট কিছু চাপা স্বর আসলো। লুপার মনে হলো কেউ যেন ছিঃ ছিঃ বলল। সে উঠে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকায়। এতো এতো মানুষ সবার চোখ লুপার দিকে। সব মানুষের চেহারা বলে দিচ্ছে তাঁরা লুপাকে ধিক্কার জানাচ্ছে শুধু রেস্টুরেন্টের মালিকের নাতনি বলে ভেতরের হাসিটা বাইরে প্রকাশ করছে না। লজ্জা অপমানে মাথা নিচু হয়ে গেলো লুপার। চোখের পানিটা মুছে টেবিলের উপর থেকে ব্যাগ নিয়ে চলে গেলো লুপা। আজ থেকে আর কখনোই নীলের দিকে ফিরে তাকাবে না সে। আজ থেকে সত্যি সত্যি ভুলেই যাবে নীলকে। কী হবে শুধু শুধু তাকে ভালোবেসে যে তাঁর চোখের ভাষা বুঝেনা?

লুপা চলে গেলে নীল তেড়ে এসে তন্ময়ের গলা টিপে ধরে। লুপার চোখ মুছে দেওয়ার দৃশ্যটা বার বার চোখে ভেসে উঠছে। ইচ্ছে করছে তন্ময়কে মেরে দিতে। তন্ময়ের চোখ উল্টে যাচ্ছে কেউ এসে নীলকে আটকানোর সাহস পাচ্ছে না। হঠাৎ একটা লোক এসে নীলকে তন্ময়ের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। ছাড়া পেয়ে তন্ময় কাশতে লাগে। নীল রেগে তাকায় পিছন ঘুরে তাকায়। তাকিয়ে দেখে তাঁর বাবার ড্রাইভার। নীল তাঁকে ছাড়িয়ে আবার এসে তন্ময়কে ধরে কিন্তু এবার তন্ময় নীলের মুখের উপর ঘুষি মারে। নীল গলা ছেড়ে দূরে সরে গিয়ে একটা টেবিলের সাথে ধাক্কা খায়। তন্ময় নীলের কলার টেনে নীলকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বলল,”মাঝে মাঝে আমি এটা ভাবি তুই আসলেই লুপাকে ভালোবাসতি কিনা।” কথাটা বলেই নীলকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চলে যায় তন্ময়। নীল তেড়ে যায় তন্ময়ের দিকে কিন্তু ড্রাইভার তাঁর কোমর জড়িয়ে ধরে। নীল নিজেকে ছাড়াতে চেয়েও ছাড়াতে পারেনি। রাগে চেঁচিয়ে বলে,”ছাড়েন আমাকে। ওই কুকুরের বাচ্চাকে আমি মেরেই দিবো।
_মাথা ঠান্ডা করো বাবা। আসো গাড়িতে আসো।” নীল ঝাড়া দিয়ে উনার হাত ছাড়িয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠলো। ড্রাইভার দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠলেন। নীল উনাকে বাসায় চলেন বলে দুহাতে মাথা চেপে ধরে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে। তাঁর কপালের পাশে একটা রগ বার বার ফুলে উঠছে। ড্রাইভারের সাহস হলো না নীলকে সিট বেল্ট বাঁধার কথা বলতে। তিনি জানেন নীল কতটা রাগী। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাসার দিকে না গিয়ে অন্য দিকে যেতে লাগলেন। নীল সেটা খেয়াল করেনি। গাড়ি থামলে গাড়ি থেকে নেমে সে চারদিকে তাকিয়ে অবাক হয়। রাগান্বিত স্বরে চেঁচিয়ে বলে,”এটা কোন ধরনের ফাজলামি? এটা কোথায় এসেছেন?” ড্রাইভার নীলের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,”জানো বাবা চোখের সব দেখা সঠিক হয়না। মাঝে মাঝে সত্যির আড়ালে মিথ্যে আর মিথ্যের আড়ালে সত্যি থাকে।” নীল দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে কন্ট্রোল করে। তারপর বলে,”এটা বলার জন্য আপনি এখানে নিয়ে এসেছেন আমাকে?” ড্রাইভার না সম্মতি মাথা নেড়ে বললেন,”তোমাকে কিছু বলতে চাই বাবা। অনেক আগেই বলতে চাইছিলাম। কিন্তু যার পাতে নুন খাই তাঁর পাতে ছিদ্র দিতাম কেমনে বাবা বলো? তাই বলা হয়নি। তবে এখন আর না বলে পারছি না।
_দেখেন আপনার আজাইরা কথাবার্তা যা বলতে হয় বাসায় গিয়ে বলবেন চলেন।” রাগান্বিত স্বরে কথাটা বলেই নীল গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে তখনই উনি বলে উঠেন,”আমি লুপা মা রে নিয়ে বলতে চাই বাবা।” নীল গাড়ির ভেতর ঢুকতে গিয়ে থেমে গেলো। জিজ্ঞাসুক চোখে ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে পা এগিয়ে উনার সামনে গেলো। ড্রাইভার কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন তারপর বলতে লাগলেন সেই কালো রাতের কথা। কি কি হয়েছিলো লুপার সাথে। কতটা নিষ্ঠুরভাবে লুপাকে বের করে দিয়েছিলো বাসা থেকে। একে একে সব বলে দিলেন তিনি। নীল উনার দিকে বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে। যেন এই কথাগুলো তাঁর বিশ্বাসই হচ্ছে না। ড্রাইভার চোখ মুছে বললেন,”জানো বাবা। মেয়েটাকে তোমার মা খুব মারছিলো চুলে ধরে টেনে বাসা থেকে বের করে দিছিলো। মেয়েটা বার বার পায়ে ধরে বলছিলো আমি সবাইকে রাজি করিয়ে দিবো ফুপি। আমি দাদুমনিকে পাঠিয়ে দিবো। বার বার বলছিলো নীল ভাইকে ছাড়া আমি মরে যাবো আমায় তাঁর থেকে আলাদা করো না। তোমার দাদী তোমার ফুপি কত কথা বলেছে তবুও তাদের পায়ে পড়ে তোমায় ভিক্ষা চেয়েছে। রাতে বাসা থেকে বের করে দেওয়ার পরে সারারাত মশার কামড় খেয়ে বাইরে বসে থেকেছে। চিৎকার করে বলেছে নীল ভাই আসলে সব বলে দিবো। কিন্তু তোমার আম্মু ওগুলা বলার পরে মেয়েটা কেমন যেন শীতল হয়ে গেলো। আমি দেখেছি বাবা আমি নিজের চোখে দেখেছি। নিজের চুল নিজে টেনে হাতে কামড় কেটে কিভাবে পাগলের মতো কেঁদেছে। কিভাবে চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বলেছে নীল ভাই কই তুমি। নীল ভাই চলে আসো। তোমার মা যখন বলল আমার সংসারটা ভেঙে দিবিনা লুপা তখন কত বুঝদারের মতো বলল”মা কি সন্তানের সংসার ভেঙে দিতে পারে?”বিশ্বাস করো বাবা ওই মেয়ে ওই মেয়ে একটুও খারাপ না। সে যা করে তোমার মায়ের সংসার বাঁচাতে করে তোমার থেকে দূরে যেতে করে। আমি আগেই এগুলা তোমারে বলতে চাইছিলাম বাবা কিন্তু বলতে পারিনাই। আমরা গরিব মানুষ আমরা চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছু করতে পারিনা।” ড্রাইভার কথাগুলা বলে চোখটা মুছে তাকিয়ে দেখলেন নীল হাঁটু গেড়ে বসে আছে তাঁর চোখ দিয়ে অঝোর ধারা বৃষ্টি ঝরে পড়ছে। শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। ড্রাইভার নীলকে ডাক দিলেন নীল শুনলো না। শুনবে কি করে তাঁর পৃথিবীর থমকে গেছে। বুকের ভিতর দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। পাজর গুলা ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে। এসব কি শুনলো সে? লুপা যা করছে সব তাঁর মায়ের সংসার বাঁচাতে? এতো এতো অত্যাচার লুপা সয্য করেছে? আর সে কিনা লুপাকে যা নয় তা বলতো। নীলের মনে পরলো একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা। তন্ময় যখন তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছিলো লুপা দৌড়ে এসে তাকে ধরেছিলো আর সে কিনা তাকে নষ্টা মেয়ে বলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিছিলো? লুপার কান্নামাখা মুখটা চোখে ভেসে উঠছে। লুপাকে খারাপ খারাপ উপাধি দেওয়ার কথা গুলা চোখে ভেসে উঠছে। চোখে ভেসে উঠছে লুপার অসহায় চোখ। ড্রাইভার নীলের বাহু ঝাঁকি দিতেই নীল চমকে উঠে। ড্রাইভারকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলে,”এ আমি কি করেছি চাচা? আমি তো ওকে জ্যান্ত মেরে দিয়েছি। এতো খারাপ ওকে কি করে ভাবতে পারলাম? কি করে ওর চোখের ভাষাটা বুঝলাম না আমি?

চলবে…..?

আপনারা জানেন দাদুমনি ব্রেইন স্ট্রোক করেছেন। এখন কিছুটা ভালো আছেন। তবে হাত পা অবস। মন ভালো নেই তবুও লিখলাম জানিনা কি লিখেছি। ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here