ভালোবাসি_প্রিয় সিজন টু ❤
পর্ব_২
#সুলতানা_সিমা
বৃদ্ধা মহিলার কথায় অরিনের মাথায় বাজ পরলো। এই পতিতালয়ে তাঁকে এরা রেখে দিতে চাইছে। দিহান ছাড়া আর ভরষার হাত খুঁজে পাচ্ছে না সে। মনের অজান্তেই দিহানের হাত আঁকড়ে ধরলো। দিহান ছলছল চোখে তাকালো অরিনের দিকে। হোক মেয়েটা অপরিচিত কেউ, কিন্তু সেও তো কারো না কারো ঘরের আদরের মেয়ে হবে। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে গেছে দিহানের। এই পরিস্থিতিতে তাঁর কী করা উচিত ভেবে পাচ্ছেনা সে। তাঁর মা বলেছিলেন, বিপদ আসলে ভয় পেলে নাকি বিপদ শক্তিশালী হয়ে উঠে। তাই সে নিজেকে শক্ত করলো। কঠিন গলায় বলল,”কেউ উনাকে ছুঁবেন না।নয়তো খুব খারাপ হবে।” দুজন মহিলা এগুতে চায়। বৃদ্ধা মহিলাটি হাতের ইশারায় উনাদের থামতে বলেন। তাঁরা থেমে যায়। দিহান নিজের চেহারায় যতই রাগ ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করুক, তাঁর চোখে মুখে স্পষ্ট ভয় দেখা যাচ্ছে। এই ভয় হলো অরিনকে নিয়ে।
বৃদ্ধা মহিলাকে একজন বলল,” এই ছেলেটা আমাদের ভয় দেখাতে চাচ্ছে। আমরা ভয় পাবোনা। এই মেয়েকে রাখো। নয়তো আমাদের সাথে বেয়াদবি করার জন্য। নিয়ম অনুযায়ী এর সাজা ওকে দাও।” উনার কথা শেষ হতেই দিহান ততক্ষণাৎ বলে উঠে, “আপনারা যে শাস্তি দিবেন আমি মাথা পেতে নিতে রাজি। আপনারা আমায় সাজা দিন, তবুও উনাকে ছেড়ে দিন। প্লিজ।”
বৃদ্ধা মহিলা কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলেন। তারপর বললেন,”আমাদের এখানের সাজা বিষয়ে তোমার ধারণা আছে?
_সাজা যেমন হোক আমি মাথা পেতে নিতে রাজি।
_সাজা হলো তুমি পতিতাকে বিয়ে করবে। কিন্তু তাঁকে কখনোই ডির্ভোস দিতে পারবে না।
_কিইইইইইইই?” দিহানের কান ঝা ঝা হয়ে গেলো। একজন পতিতাকে সে কীভাবে বিয়ে করবে? এ কেমন সাজা? দিহান শুকনো একটা ঢোক গিলে নিজেকে সামলাতে চাইলো। এই সাজা তো সব থেকে বড় সাজা। পতিতা নারী শব্দটা একটা পুরুষকে যতই আনন্দ দেয়না কেন। পতিতা বউ শব্দটা তাঁর থেকে দ্বিগুণ বিষাক্ত। বৃদ্ধা মহিলা একটা মেয়েকে ডেকে আনলেন। তারপর বললেন,
“চিত্রা যাও বউ সেজে আসো। আজ তোমার বিয়ে।” দিহান তাকিয়ে দেখলো খুব ছোট ছোট জামা পরা একটা মেয়ে। দিহান তাকাতেই মেয়েটা মিটিমিটি হাসতে লাগলো। দিহানের ইচ্ছে করছে নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়ে দিতে। এতো বাজে পরিস্থিতিতে পড়বে জীবনেও কল্পনাই করেনি সে। চিত্রা নামে মেয়েটা ঘরে চলে গেলো। দিহান একবার অরিনের দিকে তাকালো। অরিন কেঁদেই যাচ্ছে।
দিহান অরিনের হাত ধরে। অরিন কেঁদে কেঁদে তাকায় দিহানের দিকে। তাঁর চোখ দুটো দিহানকে বলে যাচ্ছে,প্লিজ রক্ষা করুন আমায়। এখান থেকে নিয়ে যান আমায়।” দিহান পর পর কয়েক ঢোক গিলে মহিলাকে বলে,”আপনাদের সাজার নিয়ম হচ্ছে একজন পতিতাকে বিয়ে করা। তাহলে ঠিক আছে। আমি মুসলিম ঘরের ছেলে। কাজি ডাকুন আমি উনাকে বিয়ে করবো।” দিহানের কথায় অরিন একটা ধাক্কা খায়। জল ভরা চোখ নিয়ে জিজ্ঞাসুক চোখে দিহানের দিকে তাকায়। মহিলা দিহানকে বলেন,”তুমি একজন পতিতাকে বিয়ে করবে এটাই শাস্তি। এই মেয়েকে কেন বিয়ে করবে?
_কারণ উনিও পতিতা।
“পতিতা শব্দটা শুনে অরিনের গা রি রি করে উঠে। হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নেয় দিহানের থেকে। দিহান অরিনের হাত শক্ত করে ধরে মহিলাকে বলে। “আপনারা কাজি ডাকুন।” মহিলা সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছেন। কপাল কুঁচকে দিহানকে বললেন,”
_এই মেয়ের ছটফট দেখেতো মনে হচ্ছেনা তুমি সত্যি বলছো।
_সারারাত মেয়েটা আমার সাথে ছিলো তাও এমন একটা জায়গায়। এর থেকে আর কী প্রমাণ দিতে হবে, যে আমি সত্যি বলছি।
অরিন এবার যেন পাথর হয়ে গেছে। মনের অজানা ভয়টা এতো ভয়ানক ছিলো তা হয়তো এখানে না আসলে জানাই হতো না। বিশ্বাস করে যে মানুষটার হাত ধরলো, সে মানুষটা কিনা তাঁকে পতিতার উপাধি দিলো? কষ্ট আর ঘৃণায় বুক ফেটে যাচ্ছে অরিনের। অজানা একটা মানুষকে এতো বিশ্বাস কেন করলো সে।
মহিলা ফোন দিয়ে একজন কাজি ডেকে আনলেন। কাজি আসার আগ পর্যন্ত তাদের ধরে রাখলো সবাই। বিয়ে পড়ানো শেষে তাদের ছেড়ে দিলো সবাই। দিহান অরিনের হাত ধরে টেনে নিয়ে বেরিয়ে আসলো এই জঘন্য জায়গা থেকে। রাতে অন্ধকারের জন্য দেখেনি এখানে গেট আছে। সামনে বড় করে সাইনবোর্ডে লেখা ফুর্তিনগর। দিহান অরিনকে নিয়ে ফুর্তি নগরের অনেক দূরে চলে আসে। অরিন শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে অঝোর ধারা বৃষ্টি ঝরছে। শুধু সে অনুভূতি হীন মানুষের মতো মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। দিহানের খারাপ লাগলো অরিনের দিকে তাকিয়ে। বুকে একটা দীর্ঘশ্বাস চাপা রেখে বলল,”
_আব,,,আমি জানি আপনি আমাকে খারাপ ভাবছেন। কিন্তু ওখান থেকে বাঁচার একটাই উপায় ছিলো। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ।” দিহানের কথায় অরিন কোনো জবাব দিলোনা। দিহান আবার বলল,”দেখুন মিস ইরিন,, না কি যেন নাম বলছিলেন, যেটাই হোক। আমি আপনার কাছে এসব স্বামী টামীর অধিকার ফলাবো না। এখানে আমরা দুজনই বিপদে ছিলাম। একটু আগে যা হয়েছে তা ভুলে গিয়ে আপনি নিজেকে স্বাভাবিক করুন।” অরিন গম্ভীর গলায় বলল, ”
_আপনি এখান থেকে চলে যান।
_আপনি মনে হয় আমাকে ভুল বুঝছেন।
_আপনি প্লিজ চলে যান।
_আপনাকে এখানে রেখে যাওয়াটা ঠিক বলে মনে করছি না। যেকোনো বিপদ হতে পারে। তাই কোনো জেদ করবেন না প্লিজ।” অরিন এবার চেঁচিয়ে উঠল,”
_যেতে বলছি না? যান এখান থেকে। সিম্প্যাথি দেখাতে হবেনা।
_আমি কোনো সিম্প্যাথি দেখাচ্ছিনা। এখানে আপনাকে রেখে যাওয়া রিক্স।
“অরিন তার ব্যাগ নিয়ে উল্টা পথে হাঁটা ধরলো৷ দিহান দৌঁড়ে গিয়ে অরিনকে আটকায়। অরিন ডুকরে কেঁদে উঠে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,”দয়া করে আপনি যাবেন প্লিজ। নয়তো আমাকে যেতে দিন। আটকাবেন না আমায়। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। আপনি জানেন আপনি কী ভুল করেছেন? আরে আমি একটা বিবাহিতা মেয়ে।” কথাটা বলেই কাঁদতে কাঁদতে অরিন মাটিতে বসে পড়লো। দিহানের নিজের প্রতি খুব ঘৃণা হচ্ছে। এভাবে একটা মেয়েকে হুট করে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি। নিজে একটা পতিতা থেকে বাঁচতে অন্যকে পতিতার উপাধি দিয়ে বিয়ে করা কী কোনো ভালো ঘরের সন্তানের কাজ? প্রশ্নটা মগজে নাড়া দিতেই, নিজের প্রতি ঘৃণাটা দ্বিগুণ বেড়ে গেলো দিহানের। অরিন কাঁদতে কাঁদতে আবার বল,”প্লিজ চলে যান। প্লিজ। দোহাই লাগে আল্লাহর।”
চলে আসলো দিহান। একটা বিবাহিতা মেয়ের জীবনে সে এ কোন ঝড় তুলে দিলো? নিজেকে মানুষ বলে মনে হচ্ছেনা দিহানের। মেয়েটার নাম ভুলে গেছে। বাড়ি কই, থাকে কই কিছুই জানা নেই দিহানের। রাতে শুধু নাম আর লেখাপড়া বিষয়ে জেনেছিলো। বিয়ে পড়ানোর সময় কাজি কী কী বলছিলো কিছুই মনে নেই তাঁর। কীভাবে মনে থাকবে? সে-তো ভিতরে ভিতরে পোড়ে যাচ্ছিলো। পিছন ফিরে একবার তাকালো দিহান। মেয়েটা এখনো কান্না করে যাচ্ছে। হয়তো তাঁর স্বামীকে সে খুব বেশি ভালোবাসে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাঁটতে লাগলো দিহান। হয়তো এই মেয়েটার সাথে কখনো দেখা হবেনা আর। সারাজীবন হয়তো এই একটা পাপ মনে নিয়ে পোড়তে হবে তাঁকে। কিন্তু মেয়েটা যখন বিবাহিত তাহলে সাদা রংয়ের জামা কেন? প্রশ্নটা মাথায় আসতে নিজেকে নিজে বকে উঠে দিহান। সাদা রংয়ের জামা পড়ার মানে এতো উল্টাপাল্টা ভাবে কেমনে সে।
__________________________________
ইজিচেয়ারে বসে আছেন শান্তি বেগম। দুদিন আগে হঠাৎ করে উনার প্রেশার বেড়ে গেছিলো। নাতি নাতনিদের দেখে এবার উনার সব অসুখ যেন জানালা দিয়ে পালিয়েছে। উনার দুই মেয়ে, তিন ছেলে। তিন ছেলেই বিজনেস করেন। হারুন,হানিফ,হাসান। বড় ছেলে হারুন চৌধুরীর একটা ছেলে একটা মেয়ে ইশি-জিহান। মেজো ছেলে হানিফ চৌধুরীর দুটো মেয়ে ও একটা ছেলে। দিশা-দিয়া-দিহান। ছোট ছেলে হাসান চৌধুরীর এক মেয়ে ও দুই ছেলে মিহান-রুহান-লুপা। শান্তি চৌধুরীর মনে হয় এই পৃথীবির সব থেকে সুখী মানুষ হচ্ছেন তিনি। উনার এতো বড় পরিবারে যেন স্বর্গের সুখ খুঁজে পান তিনি। যতই ঝগড়াঝাটি হোক না কেন,দিন শেষে আবার সবাই একসাথে থাকে। উনার ছেলেরা এখনো বাসায় এসে আগে তাঁরা মাকে খুঁজবে। যতক্ষণ মাকে না দেখবে তারা শান্তি পাবেনা। যেন সেই ছোট খোকাই রয়ে গেছে তাঁরা। বাড়ির নামটাও মায়ের নামে দিয়েছে, “শান্তি নীড়।” তাঁরা তাঁদের মাকে অনেক ভালোবাসেন। তাঁদের তিন ভাইয়ের দূর্বলতা হলেন শান্তি চৌধুরী।
কিন্তু শান্তি চৌধুরীর দূর্বলতা হলো উনার নাতি নাতনি। উনি অসুস্থ হলে উনার নাতি নাতনিকে না দেখলে উনি সুস্থ হন না। নাহলে ভিডিও কলে উনার সাথে কথা বলতে হবে। জিহান মিহান দিহান দেশের বাইরে থাকে বেশিরভাগ সময়। অবশ্য লেখাপড়ার জন্য তাঁদের থাকতে হচ্ছে। দুদিন আগে যখন অসুস্থ হলেন। মিহান আর জিহান আসতে পারলো না। তাই ভিডিও কলে কথা বলে নিলো। ইশি আর দিশা তাঁদের মামাদের বাড়তে ঘুরতে গেছিলো। দাদী অসুস্থ শুনে সাথে সাথেই চলে আসে। দিহান দেশে আছে কিছুদিন হলো। ইন্ডিয়াতে ঘুরতে গেছিলো। আজ সন্ধ্যায় দিহান বাসায় আসলো। দিহানকে দেখে এখন উনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছেন। শরীরে অসুস্থতা থাকলেও মন সুস্থ থাকলে শরীরও সুস্থ থাকে। আর উনার মন সুস্থ থাকতে উনার নাতি নাতনির চেহারা যথেষ্ট। এখন উনি ফুরফুরে হয়ে গেছেন। এতোক্ষণ দিহান উনার কাছেই ছিলো। একটু আগে মাথা ব্যথা করছে বলে রুমে চলে গেলো। শান্তি চৌধুরীর কাছে মনে হলো দিহান কিছু লুকাচ্ছে। তবে আপাতত বিষয়টি দমিয়ে নিচ্ছেন তিনি। পরে সময় করে জেনে নিবেন।
_আম্মা আপনি জিহানের জন্য যে মেয়েটা দেখেছিলেন। ওটা আমার পছন্দ হয়নি।” হঠাৎ দিলারা চৌধুরীর কথা শুনে চোখ খুলে তাকালেন শান্তি চৌধুরী। তারপর বললেন,”বউমা বিয়ে তো তোমার পছন্দে হবেনা। বিয়ে হবে আমার নাতির পছন্দে। সে যাকে পছন্দ করবে তাকেই তাঁর বউ বানিয়ে আনবো।
_আমাদের ওতো একটা পছন্দ আছে আম্মা।
_তোমাদের পছন্দ দিয়ে কী হবে বউমা। সংসার তো জিহান করবে। আচ্ছা বাদ দাও। ছোট বউমা বলে গেলো তুমি নাকি কী নিয়ে তাঁর সাথে ঝগড়া করছো?
_সুমনা তো ওখানে ছিলো আম্মা,আপনি তাকে জিজ্ঞেস করে দেইখেন,আমি তাকে খারাপ কিছু বলছিলাম কিনা। আমি শুধু বলছি প্রতিদিন ভাত এতো নরম হয় কেন। এই কথাটা নিয়ে ও আমাকে বলে, আমি যখন রাঁধতে পারিনা নিজে রান্না করে খাও।” ছেলের বউয়ের কথায় শান্তি চৌধুরী বুক ছিঁড়ে আসা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,”
_দিন শেষে তো ঘুরেফিরে একি সাথে থাকতে হয় বউমা। তাহলে এসব খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে তর্ক করে কী লাভ? তুমি ঘরের বড় বউ। তুমি না বুঝলে কে বুঝবে? আমি যদি তোমাদের ঝগড়ার মাঝখানে কথা বলি। তোমার মনে হবে আমি ছোট বউয়ের পক্ষ দিচ্ছি,ছোট বউয়ের মনে হবে আমি তোমার পক্ষ দিচ্ছি। তাই তোমাদের বুঝতে হবে বউমা। দুদিন পরে ঘরে বউ আসবে, এসব ঝগড়া দেখলে তো ঝগড়াই শিখবে। নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখো।” দিলারা চৌধুরী ক্ষীণ স্বরে বললেন,
_জ্বি আম্মা।
_এবার যাও। দিশা আর ইশিকে আসতে বইলো।
_জ্বি আচ্ছা।
__________________________________
প্রায় তিন ঘন্টা ধরে একটা রেস্টুরেন্টে বসে নীলের জন্য অপেক্ষা করছে শামু। আজ তাঁর বার্থডে। অথচ তাঁর সো কল্ড বিএফ তাকে wish করা তো দূর,একটা ফোন দিয়েও কেমন আছো টাও জিজ্ঞেস করেনি। এখন আবার হঠাৎ করে তাকে ফোন দিয়ে বলছে, তার সাথে জরুরি কথা আছে সেজন্য দেখা করবে। সেই কখন থেকে সে অপেক্ষা করে যাচ্ছে কিন্যু নীলের কোনো পাত্তাই নেই। রেস্টুরেন্টও আজ কেমন জনমানবশূন্য। দেয়ালের চারদিক কতো সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো। শামুর মনে পড়ে গেলো, কিছুদিন আগে এইখানে একটা মেয়ের বার্থডে সেলিব্রেশন করেছিলো মেয়েটার বিএফ। তখন শামু নীলকে বলেছিলো আমার কিন্তু বার্থডে আসছে। শামুর এখন কান্না পাচ্ছে। নীল এরকম কিছু করেনা, মেসেজ দিয়ে তো wish করতে পারতো। বসতে বসতে বিরক্ত হয়ে উঠে হাঁটা ধরছিলো শামু। এরই মাঝে গিটারের শব্দে থেমে যায় সে। এই সুর তার অচেনা নয়। খুব চেনা সুর এটা। সুর অনুসরণ করে করে পা আগায় শামু। যেতে যেতে উপরের দিকে গেলো সে।
ছাদে এসে থম মেরে গেলো শামু। চারদিকে কতশত রংয়ের ফুলে সাজানো। ডানের কর্ণারে একটা ছোট খাটো স্টেজ সাজানো হয়েছে। খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে লিখা হ্যাপি বার্থডে শামু। খুশিতে শামু কেঁদে দিলো। দুহাতে মুখ ঢেকে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সে। টেবিলের উপর একটা কেক। সেটাতে সুন্দর করে লেখা,”হ্যাপি বার্থডে গুন্ডি।” গুন্ডি লেখা দেখে শামু রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে যেতে লাগলো। নীল দৌঁড়ে গিয়ে আটকায়। শামু বলে,”আমি তো গুন্ডি আমার সাথে সম্পর্ক রেখে লাভ কী। ব্রেকআপ।
_জানু মনু সোনা টুনা। রাগ করো কেন? রাগ করোনা। এটা তো আমি লেখিনি এটা শ্রাবণ লিখছে।
_শ্রাবণকে তুমি পেলা কই? মিথ্যে বলতে হবেনা। আমি বুঝে গেছি। পথ ছাড়ো।
_দেখো আমি কত কষ্ট করে এগুলা করছি সোনা। আর তুমি জানো? আজ গুনে গুনে আমার পাঁচ হাজার টাকা খরচ হইছে।
_তুমি আমাকে টাকার হিসাব দিচ্ছো।
_আরে না না ছিঃ ছিঃ। বুঝই তো আমি বেকার ছেলে। টাকা পাবো কই বলো? তাও এটা দিহানদের রেস্টুরেন্ট হওয়ায় টাকা লাগেনি। নয়তো কত টাকা যে লাগতো।
_ঘুরে ফিরে সেই টাকার হিসাব।
_সরি সরি সরি আর করবো না।” কথা বলতে বলতে নীল শামুর হাত ধরে ফেলে। শামু রেগে তাকালো। নীল চট করে হাত সরিয়ে নেয়। তাঁদের সম্পর্ক হচ্ছে অন্যসব সম্পর্ক থেকে আলাদা। এসব ছুঁয়া ধরা শামু পছন্দ করেনা। নীলও একই ধাঁচের।
নীল হাত ছাড়লে শামু এসে কেক কাঁটে। কেকের প্রথম বাইট নীলকে দেয়। নীল খেয়ে শামুকে খাওয়াতে যাবে তখন দৌঁড়ে ছাদে আসে শ্রাবণ। শ্রাবন হচ্ছে নীলের ফুফুতো ভাই। এখানের এতোকিছুতে নীলকে শ্রাবণ সাহায্য করেছে। হাঁপাতে হাঁপাতে শ্রাবণ বলল,”আমাকে ফেলেই কেক কেটে দিলা?” নীল জিভে কামড় কাটে। শামু অবশিষ্ট কেক শ্রাবণের মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে বলে, “নাও এবার দোয়া করো আল্লাহ যেন আমায় আরো সুন্দরী বানিয়ে দেয়।” শামুর কথায় নীল আর শ্রাবণ ছাদ কাঁপিয়ে হেসে উঠে।
চলবে,,,,,।
গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি।
সবার আগে গল্প পেতে পেজে লাইক দিয়ে সাথে থাকুক❤