ভালোবাসি_প্রিয় সিজন টু❤ পর্ব_১

0
3250

ভালোবাসি_প্রিয় সিজন টু❤
পর্ব_১
#সুলতানা_সিমা

প্রথম সিজন যারা পড়েননি দ্বিতীয় সিজন পড়তে পারেন। আগের সিজনের সাথে এ সিজনের কোনো মিল নেই।

বাসে বসে চোখ বন্ধ করে কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনছিলো দিহান। ঠিক তখনই তার উপর গলগল করে বমি করে দিলো একটা মেয়ে। দিহান লাফ দিয়ে উঠে চেঁচিয়ে বলে উঠল,”what the hell damnit” দিহানের চেঁচানোতে মেয়েটা মাথা নিচু করে বসে থাকলো।
বাসের সবার চোখ এখন দিহানের সিটের দিকে। দিহানের অবস্থা খুব খারাপ। রেগে আবারও বলে উঠল,

“বাস চড়তে পারেন না তো বাসে উঠেন কেন?” অপমানে মেয়েটার চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এলো। সবাই দিহানের দিকে তাকিয়ে নাক ছিটকাচ্ছে। গাড়িতে হইচই শুরু হচ্ছে গেছে। গাড়ি থেমে গেলো। ড্রাইভার দিহানকে নামিয়ে দিতে বলল। কন্টাকদার এসে দিহানকে বলল,”নামেন” দিহান বলল,”আরে নামতে বলছেন কেন? এখন আমি কোথায় নামবো?
_সেটা তো আমরা জানিনা। আপনাদের জন্য বাকিদের অসুবিধা হচ্ছে, আপনারা নামুন।
_দেখেন কেউ বমি করলে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ার কিন্তু কোনো নিয়ম নেই।
_হ্যাঁ আমাদের বাসে অন্য বাসদের মতো নিয়ম নেই। নামেন।
_আশ্চর্য এতো রাতে নামিয়ে দিচ্ছেন। এটা কোন ধরনের বেয়াদবি? আর আমি তো ফ্রি-তে যাচ্ছিটা টাকা দিয়ে টিকেট কেটেছি।

ওই মিয়া ওই,কথা বাড়ান কেন। তারাতাড়ি নামেন। কী বিশ্রী অবস্থা।” পাশের সিট থেকে একটা লোক কথাটা বলেই নাক মুখ ছিটকাতে লাগলো। দিহান বুঝে গেলো এখানে কথা বাড়াতে গেলেই ঝামেলা সৃষ্টি হবে, যা মোটেও তাঁর পছন্দ নয়। দিহান নিজের ব্যাগ নিয়ে নেমে গেলো বাস থেকে। কন্টাকদার মেয়েটাকে ধমক দিয়ে বলল,”আরে আপনি নামেন না কেন?” মেয়েটাও নিজের ব্যাগ নিয়ে চুপচাপ নেমে গেলো।

চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। জায়গাটা কই সেটা আন্দাজ করতে পারছেনা দিহান। ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে চারদিকটা দেখছিলো। হঠাৎ তার হাত থেমে যায়, তার পাশের সিটে থাকা মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে দেখে। সাদা রংয়ের একটা ড্রেস পরা, গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা হবে বলে আন্দাজ করলো দিহান। আপাতত ফোনের আলোতে এইটুকুই আন্দাজ করছে দিহান।

_সরি আমার জন্য আপনাকে এতোগুলা লোকের কথা শুনতে হলো। গাড়ি থেকে নামতে হলো।
_এখন সরি বললে কী গাড়ি পেয়ে যাবো? নাকি আমার জামা চেঞ্জ হয়ে যাবে?” কর্কশ গলায় কথাটা বলে দিহান তার ব্যাগ নিয়ে একটু সাইটে গেলো। মেয়েটাও তার পিছু পিছু গেলো। দিহানের এমনিতেই মেজাজ খারাপ হয়ে আছে এভাবে তার পিছু আসায় আরো রাগ হলো। তবুও রাগ দমিয়ে সে অন্য সাইটে গেলো। মেয়েটাও তার পিছু পিছু গেলো। আসলে সে এই অন্ধকারে ভয় পাচ্ছে যার কারণে দিহানের পিছু পিছু যাচ্ছে। দিহান ব্যাগ নিয়ে আরেক দিকে আসলো। এবারও মেয়েটা তার পিছু পিছু এলো। দিহান রেগে গিয়ে ঝাঁজালো গলায় বলল,”

এখন কী আমাকে জামাটাও চেঞ্জ করতে দিবেন না? পিছু পিছু আসছেন কেন? আমার জামা চেঞ্জ করা দেখবেন?

দিহানের ধমকে মেয়েটা কিছুই বলেনা। মাথা নিচু করে ঘুরে দাঁড়ায়। দিহান জামা চেঞ্জ করতে লাগলো। আজ সকাল থেকে দিনটা খারাপ যাচ্ছে তাঁর। মেজাজ এমনিতে সপ্তম আকাশে চড়ে আছে, তার উপর আবার এই কান্ড। কিছুদিনের জন্য কলকাতা বেড়াতে এসেছিলো সে। দুপুরে কল এলো তার দাদী খুব অসুস্থ। এভাবে হুট করে দাদীর খবর আসায় দিহান ভয় পেয়ে যায় কী হয়েছে না হয়েছে। ব্যাগপত্র গুছিয়ে সাথে সাথেই বেরিয়ে যায় দিহান। বিমানে করে যেতে মাত্র এক ঘন্টা লাগবে। কিন্তু তার পকেটে মাত্র দুহাজার টাকা [রুপি] ছিলো। বিমানের ভাড়া ৭০০০-৮০০০। ট্রেনের টিকিট কাটতে কলকাতার চিতপুর স্টেশনে গেলো। কোনো রকম টেনে টুনে ২০০০ দিয়ে আসতে পারতো সে। কিন্তু আজ দিনটা বুধবার হওয়ায় ট্রেনের টিকিট পেলোনা। সপ্তাহে চারদিন কলকাতা থেকে ঢাকা ট্রেন আসে। সোমবার মঙ্গলবার শক্রুবার ও শনিবার। উপায় না পেয়ে বাসে উঠতে হলো। ১৯০০ টাকা দিয়ে একটা টিকিট কাটে। বিকেল ৪টায় বাসে উঠলে সকাল ৭টায় পৌঁছাতে পারবে। বাসে উঠে তার পাশের সিটে তাকিয়ে দেখেছিলো সাদা ড্রেস পরিহিতা মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে। এখন এই মেয়েটার জন্যই তাঁর এই দশা।

জামা চেঞ্জ করে অরিনের সামনে এসে দাঁড়ালো দিহান। মেয়েটার কান্নার চাপা শব্দ শুনা গেলো। দিহানের খারাপ লাগলো নিজের করা ব্যবহারের জন্য। গলাটা ঝেড়ে বলল,”

_আপনার সাথে এমন ব্যবহারের জন্য সরি। আসলে আমার দাদী খুব অসুস্থ। আমাকে তারাতাড়ি যেতে হবে। হঠাৎ এভাবে নামিয়ে দেওয়ায় মেজাজ খারাপ হয়ে গেছিলো।” দিহানের কথায় মেয়েটা কিছু বলল না। দিহান বলল “আচ্ছা আমরা হেঁটে হেঁটে কথা বলি। আমার তো মনে হয়না আমাদের এখানে দাঁড়িয়ে থাকা উচিত।” আপাতত মেয়েটারও তাই মনে হচ্ছে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকা সত্যিই উচিত নয়। সে বলল,
_জ্বি চলুন।

দুই ধারে সারি সারি গাছ মাঝখানের ফাঁকা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে দিহান আর মেয়েটা। চারদিকে পিনপতন নীরবতা। ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে পথ দেখে যাচ্ছে দুজন। তার পাশে হেঁটে চলা মেয়েটার মনে চলছে ভয়ের তুফান। এই তুফানের তুমুল বেগের বাতার তার কানে কানে বার বার বলে যাচ্ছে এই ছেলেটা তোর ক্ষতি করবে অরিন। এই মেয়েটার নাম অরিন। বাবা মা হারা মেয়ে সে। মাঝে মাঝে মামাদের এখানে আসে। এবারও তার মামা অসুস্থ শুনে এসেছিলো। তার সৎ মায়ের ফোন পেয়ে তাকে যেতে হচ্ছে। ইচ্ছে ছিলো আরো কিছুদিন থাকার। কিন্তু সব ইচ্ছে যে পূরণ হয়না। তআই অরিনেরও ইচ্ছে গুলো অপূর্ণ থাকে।

অরিনের মনে কিছুটা ভয় কাজ করছে। আসার আগে তাঁর মামা বার বার বলেছেন একা যেতে পারবি না কোনো বিপদ হবে কাল যা আমি নিয়ে যাবো। কিন্তু অরিন শুনেনি। বাড়িতে তাঁর সৎ মা আছে। তাঁর মামাদের তেমন কদর হয়না। ইন্ডিয়া থেকে বাংলাদেশ যাওয়া আসা মুখের কথা নয়। গিয়ে শুধু শুধু কষ্ট পেয়ে আসা, এগুলা খুব খারাপ লাগে অরিনের। তাই মামার অবাধ্য হয়ে চলে আসে সে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছে।

_নাম কী আপনার?” হঠাৎ দিহানের গলায় কেঁপে ওঠে অরিন। দিহান তা ঠিকই বুঝতে পারলো। কিঞ্চিৎ হেসে উঠল সে। অরিনকে আবার জিজ্ঞেস করলো”
_বললেন না যে নাম কী?
_অরিন।
_বাংলাদেশে থাকেন নাকি ঘুরতে যাচ্ছেন?
_বাংলাদেশে থাকি।
_ইন্ডিয়া কী আপনার?
_মামার বাড়ি।
_এতোদূর?
_জ্বি।
_তা লেখাপড়া কতদূর?
_ইন্টার প্রথম বর্ষ।
_আপনি তো দেখি অনেক ছোট। কিন্তু দেখে মনে হয়না। তাহলে তো আমি তুমি করে বলতে পারি।”

অরিন কিছু বলল না। মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়ছে। না জানি কবে কোন অঘটন ঘটায় এই লোকটা। দিহানের মনে হলো মেয়েটা বিরক্ত হচ্ছে, আর সে অযথাই বকবক করছে। তাই চুপ হয়ে গেলো।

হাঁটতে হাঁটতে কই যাচ্ছে হয়তো তারাও জানেনা। পথও যেন ফুরাচ্ছেনা। একটুদূর গিয়ে একটা জায়গায় থেমে গেলো দিহান। সাথে অরিনও থেমে গেলো। কয়েকটা মহিলা আগুন জ্বালিয়ে গুল হয়ে বসে গান গাচ্ছে। চারদিকে সুন্দরী মেয়েরা বসে আছে। কেউ দল বেঁধে গল্প করছে কেউ বা একা একা গান গাচ্ছে। কয়েকটা যুবক ছেলে এদিক ওদিক হাটাহাটি করছে। যেন কোনোকিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে তাঁরা। পোশাকআশাক দেখে মনে হচ্ছে ওরা সবাই বৌদ্ধ। দিহান অরিনকে বলল,

“চলুন আমরা ওনাদের থেকে সাহায্য চাই।” দিহান হাঁটা ধরলো। অরিনের কেন জানি খুব ভয় লাগছে। এই ভয়টা অন্য রকম। অরিন আন্দাজ করতে পারলো না এ কেমন ভয়। দিহান আর অরিনকে দেখে এক সাথে অনেকগুলা মহিলা বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। দিহান তাদের গিয়ে বলল,”আসলে আমরা আমরা দুজন খুব বিপদে পড়েছি। আপনারা যদি আমাদের একটু সাহায্য করতেন। মানে একটা রাত যদি থাকতে দিতেন আমরা কৃতজ্ঞ হতাম। আমরা কাল সকালে চলে যাবো চিন্তা করবেন না।”

দিহানের কথা শুনে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে কিসব যেন ইশারা করলো। একটা লোক তাদের ঘরের ভেতর গেলো। বেরিয়ে আসলো একজন বয়স্ক বৃদ্ধা মহিলা নিয়ে। উনি এসে দিহানকে বললেন,”কী বলছো?”
_আমরা আমাদের দেশে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে একটা সমস্যার জন্য আমাদের বাস থেকে নামিয়ে দিয়েছে। আমরা জানিনা এই জায়গাটা কোন জায়গা। সকাল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের একটু সাহায্য করবেন? আমাদের খেতে দিতে হবেনা। শুধু থাকতে দিলেই হবে।” দিহানের কথায় ওই মুরুব্বি মহিলা একটা মহিলাকে বললেন,”ওই ওদের একটা ঘর দেখিয়ে দে।” দিহান আর অরিনকে একটা ঘরে নিয়ে গেলো ওই লোক। দিহান খেয়াল করলো এখানে একই ডিজাইনের অনেকগুলা ঘর আছে। প্রতিটি ঘরের এখনো মানুষ হয়তো জেগে আছে। ঘরের ভেতর থেকে আলো জ্বলছে। রুমের ভিতর ঢুকে দেখলো ঘরের এক কোণে পাঁচ ছয়টা মোমবাতি জ্বলছে। দিহান লাইট জ্বালালো।

বেশ গুছানো একটা রুম, একটাই খাট। আর কোনো আসবাবপত্র নেই। বিছানার উপর কয়েকটা তাজা ফুল। পুরো বিছানা জুড়ে ছড়িয়ে আছে গোলাপ ফুলের পাপড়ি। ফুলের সুভাসে চারদিকটা মুখরিত। অরিন রুমের এক কোণে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। দিহান বলল,”

আপনি ভয় পাচ্ছেন মনে হয়। ভয় পাবেন না। আপনি রুমে ঘুমান আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।” অরিন কিছু বলল না। দিহান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। ভেবেছিলো মেয়েটা তাকে সিনেমার নাইকাদের মতো বলবে “না যাবেন না প্লিজ। আপনি নিচে ঘুমান, আমি খাটে ঘুমাবো।” কিন্তু দিহানের ভাবনায় পানি ঢেলে মেয়েটা চুপ থেকে সম্মতি প্রকাশ করলো। এখন বাইরে থাকবে কেমনে সে। বাইরে এসে দেখলো কয়েকটা ছেলে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। দিহান ওই লোকগুলোর কাছে যেতে পা বাড়ালো। কিন্তু তার মনে হলো যদি কোনো ছেলে এসে এই মেয়েটার ক্ষতি করে, তখন কী হবে? এই অচেনা জায়গায় কাউকে বিশ্বাস করার দরকার নাই। দিহান দরজার সামনে বসে পড়লো।

এদিকে ঘরের ভেতর অরিনের চোখেও ঘুম নাই। এই অজানা অচেনা জায়গায় পরপুরুষের সাথে আছে। কখন জানি কী ভুল হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে সকাল হয়ে গেলো দিহান ঘুমিয়ে গেছিলো। বাজনার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তার। বিরক্তি চোখে তাকিয়ে দেখে উঠুনে দুজন পুরুষ ঢোল বাজাচ্ছে। এতো সকাল এসব ঢোল ঢোলকের বাজনার মানে কী বুঝলো না দিহান। বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই দেখলো। প্রতিটি ঘরের দরজা খুলা হচ্ছে। দিহান আন্দাজ করে নিলো, এই ঢোল বাজানোর মানে কী। ঢোল বাজিয়েই হয়তো এরা মানুষদের জাগিয়ে তুলে।

দিহান লক্ষ্য করলো প্রতিটি ঘর থেকে একটা ছেলে একটা মেয়ে বের হচ্ছে। ওই মুরুব্বি মহিলাটা একটা টেবিল নিয়ে উঠানে বসে আছেন। ছেলেরা সবাই উনার টেবিল ঘিরে দাঁড়ালো এসে। এসবের মানে কী বুঝে আসলো না দিহানের। হাই তুলতে তুলতে রুম ঢুকলো। রুমে এসে দেখলো অরিন ব্যাগ কোলের উপর নিয়ে বসে আছে। মনে হয় দিহান ঘরে আসার অপেক্ষা করছিলো। দিহান আসতেই সে বলল,”সকাল হয়ে গেছে চলুন এবার চলে যাই। এখানে আমার ভয় লাগছে।” দিহান নিজের ব্যাগটা কাঁধে নিলো। অরিনকে এসেন বলে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।

উঠুনে এসে মুরুব্বি মহিলাটাকে বলল,”ধন্যবাদ। আপনাদের এ ঋণ আমরা কোনো দিনই শোধ করতে পারবো না।” মুরুব্বি মহিলাটি মৃদু হেসে বলল,”তা রাত কেমন কাটলো?
_জ্বি অনেক ভালো কেটেছে।
_আচ্ছা এবার টাকাটা দিয়ে দাও। যেহেতু তুমি প্রথম আর মেয়েটাও আমাদের নয়, তাই তোমার কাছ থেকে কম নিবো। তুমি ১০০০ দাও।
_ঠিক বুঝলাম না।” দিহানের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠে সবাই। দিহান বোকার মতো তাকিয়ে আছে। অরিনের মনটা কেন জানি বার বার বলছে এটা কোনো পতিতালয়ের মতোই কোনো জায়গা হবে। মুরুব্বি মহিলাটা দিহানকে বলল,

_দেখো। তুমি যখন এখানে এসেছো, জেনেই এসেছো এটা কোন জায়গা। তাই কথা না বারিয়ে টাকাটা দিয়ে দাও।
_আপনারা কী বলতে চাচ্ছেন, কী বলছেন,আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। প্লিজ একটু বুঝিয়ে বলবেন? মানে আপনাদের এখানে থাকতে হলে টাকা দিতে হয়?” বৃদ্ধ মহিলাটি একগালে হেসে হেসে মাথা দুলালেন।

দিহান ওয়ালেট বের করলো। টিকিট কেটে ১০০টাকা রয়েছিলো। ৫০টাকার পানি কিনছে এখন রয়েছে মাত্র ৫০। দিহান অসহায় চোখে বৃদ্ধ মহিলাটার দিকে তাকালো। অরিন নিজের ব্যাগ খুঁজে দেখতে লাগলো, কিছু টাকা পায় কিনা। আসার সময় তার মামার হাতে টাকা ছিলোনা বলে তাকে কোনো টাকা দিতে পারেন নি। শুধু টিকিট কেটে দিয়েছে। অরিন ব্যাগ খুঁজে পেলো মাত্র একশো টাকা। দিহানের দিকে টাকাটা বাড়িয়ে দিলো। দিহানের দ্বিধা হচ্ছে টাকাটা নিতে। কিন্তু আপাতত এখান থেকে বের হওয়া জরুরি। টাকাটা নিয়ে একশো টাকার উপর তার পঞ্চাশ টাকা রেখে মহিলার দিকে বাড়িয়ে দিলো। উনি টাকা হাতে নিয়ে রেগে গেলেন। রাগে বসা থেকে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বললেন”

_ফাজলামো করো? গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছো ফুর্তি করতে আর এখন দিচ্ছো মাত্র দেড়শো টাকা? জানো আমাদের রুমের ভাড়া কতো?
_আরে এসব আপনি কী বলছেন? উনি আমার গার্লফ্রেন্ড নয়। আমি তো আগেও বলেছি আমরা বিপদে পরে এখানে এসেছি।
_বোকা বানাও? বিপদে পরে পতিতালয়ে আসো?

পতিতালয় শব্দটা শুনে দিহান ৪৪০ ভোল্টের শকড খেল। স্পষ্ট ঠোঁটে বলে উঠল,”পতিতালয়?”
_হ্যাঁ পতিতালয়।

অরিন মুখ চেপে কেঁদে উঠে। সে আগেই আন্দাজ করেছে এটা এরকম কিছুই হবে। ছোট বেলায় সিনেমায় পতিতালয়ের এমন দৃশ্যই সে দেখতো। যা এসে দেখেছিলো। শরীর কাঁপছে তাঁর। এ কোথায় আসলো তাঁরা?

দিহান এখনো শকডের উপর আছে। সে আন্দাজও করতে পারেনি এমন কোনো জায়গায় সে চলে এসেছে। ভেবেছিলো এই জায়গার মানুষগুলো এমনই। দিহানকে চুপ থাকতে দেখে ওই মহিলা আবার রাগান্বিত স্বরে বলে উঠল,”

_তুমি কী ভেবেছো আমরা কিছুই বুঝিনা? আরে কিছুদিন আগেই এভাবে বিপদের কথা বলে এসে থেকে গেলো দুজন। তোমাদের একটা ঘর দিতে গিয়ে আমাদের একজন ভালো কাস্টমারকে বিদায় দিতে হয়েছে। আর তুমি এখন বলছো বিপদে পড়ে রাত কাটাতে এসেছো? আরে রাত তো রাস্তায় ও কাটানো যায়।

দিহান শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে সামলালো। অরিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো অরিন কাঁদছে। এভাবে একটা মেয়েকে নিয়ে এমন বাজে একটা অবস্থার সম্মুখীন হবে ভাবতেই পারেনি দিহান। নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বলল,”
_দেখুন আমরা সত্যি না জেনে এসেছি। একটা মেয়ে মানুষ নিয়ে রাস্তায় কীভাবে থাকতাম বলুন? তাই ভেবেছিলাম আপনাদের এখানে থাকলে মেয়েটা নিরাপদ থাকবে। আমি একা হলে তো রাস্তায়ও রাত কাটাতে পারতাম।
_অতশত বুঝিনা টাকা দাও।
_এই টাকাগুলো ছাড়া আমাদের কাছে কোনো টাকা নেই। প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন।
_ বুঝিয়ে লাভ নেই। টাকা দিবে এখান থেকে যাবে, নয়তো যেতে পারবেনা।
_বিশ্বাস করুন আমার কাছে এই পঞ্চাশ টাকা ছাড়া একটা টাকাও নেই। আপনারা চাইলে আমার ফোন বা ওয়াচ নিতে পারেন এগুলা অনেক দামী। লাখের উপরে টাকা পাবেন।
_লোভ দেখাচ্ছো? এরকম ফোন ওয়াচ নিয়ে ঘুরার সময় নেই আমাদের। টাকা চাইছি টাকা দাও।
_টাকা তো নেই তো কীভবে দিবো?
_টাকা দিতে না পারলে সাথের মেয়েটাকে দিয়ে যাও। ওই তোরা মেয়েটা নিয়ে ঘরে যা।

চলবে,,,,,।

গল্পটা একটু ভিন্নধর্মী হবে। আশা করি সিজন ওয়ান থেকে এটা ভালো লাগবে। ইনশাআল্লাহ। তবে গল্পটা বড় হবে। আপনাদের সাথে চাই। আপনাদের রেন্সপন্স আমার লেখার আগ্রহ বাড়াবে।❤
গঠন মূলক মন্তব্য করে জানাবেন কেমন হয়েছে।

সবার আগে গল্প পেতে পেজে লাইক দিয়ে সাথে থাকবেন৷,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here