ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_১৪
#সুলতানা_সিমা
আজকাল দিনে একবার অরিনকে না দেখলে দিহানের সব কিছু বিষাক্ত লাগে। প্রতিদিন একবার অরিনের সাথে দেখা করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। নীল শাওন জোর গলায় বলছে দিহান অরিনকে ভালোবাসে। আজকাল দিহানেরও তাই মনে হয় কিন্তু সে অরিনকে বলতে পারেনা। আর কিভাবেই বা বলবে? তন্দ্রাকে ঠকাবে কি করে? কিন্তু কেন জানি তন্দ্রাকে এখন আর আগের মতো ভালো লাগেনা। তন্দ্রার সব দোষ গুলা এখন চোখে পরে।
হয়তো আগে সে তন্দ্রার প্রতি অন্ধ ছিলো তাই সব দোষ তার চোখ এড়িয়ে যেত। এখন তার মনে হয় তন্দ্রা তাকে টাকার জন্য বিয়ে করতে চায়। আগে দিহান ভাবতো সে বেকার সে তো টাকা ইনকাম করেনা যে তন্দ্রা টাকার জন্য তাকে চায়। এখন মনে হয় তার টাকা নেই তো কি হইছে তার বাবার তো টাকা আছে। সে তো ধনী পরিবারের সন্তান।
শুধু তাই নয় এখন দিহানের মনে হয় তন্দ্রা বেশি ন্যাকামি করে,তন্দ্রা অল্পতেই ঝগড়া করে, তন্দ্রা মানুষকে ছোট করে কথা বলে। আগে সে এই বিষয় গুলা স্বাভাবিক ভাবেই নিত। কিন্তু কতো নিবে? সব কিছুর ওতো একটা লিমিট থাকে। সেটা অতিক্রম হলে আমাদের মনে তীক্ষ্ণতা জন্ম নেয়। দিহানেরও তাই হচ্ছে। তন্দ্রাকে অনেকবার দিহান বলেছে এসব স্বভাব ছেড়ে দিতে। কিন্তু তন্দ্রা বলেছে দিহান নাকি তার সবকিছুতে নাক গলাচ্ছে। অথচ অরিন? তাকে কিছু একটা বললে সে কখনো সেটা অমান্য করেনা। তন্দ্রা আর অরিনের মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য।
বসে বসে তন্দ্রা আর অরিনের কথা ভাবছিল দিহান। তখনই শাওন আর নীল এসে রুমে ঢুকলো। দুজন এসে দিহানের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে রাগি লুকে দিহানের দিকে থাকাল। দিহান দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল”
_হোয়াট? এমন রাক্ষসের মতো তাকিয়ে আছিস কেন? আমায় খেয়ে ফেলবি নাকি?””” দুজন কোনো জবাব দিলনা চুপচাপ দিহানের দুপাশে বসল। দিহান দু’হাতে দুজনের গলা জড়িয়ে ধরে বলল”
_তোদের রাগলে কিন্তু একদম কুত্তার মতো লাগে।” দিহানের কথাটা শুনে নীল আর শাওন দাঁতে দাঁত কিড়মিড় করে তাকাল। দিহান তার দুহাত এনে গুটিয়ে বসে রইল। কিছুক্ষণ পরে নীল বলল”
_ওই তুই সত্যি করে বলতো আমরা কি তোর বন্ধু?
_এটা আবার কেমন প্রশ্ন?
_গত একমাস ধরে তোরা বস আমি আসছি বলে যে উধাও হয়ে যাস কখনো কি আর খবর নিস আমরা রয়েছি নাকি চলে এসেছি? কখনো কল দিয়ে জানতে চাস বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি?[শাওন]
_ও তাহলে রাগটা তোদের এখানে? সরি আর হবেনা এখন থেকে একটা ফোন দিয়ে জেনে নিব তোরা আছিস নাকি মরে গেছিস।
_না না না আমাদের ফোন দিবি কেন তোর অরিন আছে না অরিনকেই ফোন দে। অরিন তোর বন্ধু,অরিনের সাথে তোর ভালো লাগে, আমরা তো তোর শত্রু তাইনা?শালা আমার তো মনে হয় তলে তলে তুই অরিনের সাথে প্রেম করিস[নীল]
_শুধু শুধু সন্দেহ কেন করিস আমায় সত্যি বলছি আমরা শুধুই বন্ধু।
_তুই এক কাজ কর ভাই। হয় তন্দ্রা নয় অরিন দুটো থেকে যেকোনো একটা বাচাই কর।[শাওন]
_বাচাই করব মানে আমি কি দুটোর সাথে প্রেম করি নাকি? আর তাছাড়া তোরা তো সব কিছু জানিস তাইনা?”” কথাটা বলা মাত্রই দিহানের ফোনে অরিনের কল এল। ফোনের স্কিনে অরিন নামটা স্পষ্ট ভেসে ওঠছে। নীল বলল”
_হ্যাঁ হ্যাঁ আমরা সব জানি আমাদের থেকে লুকাতে হবেনা যা যা কথা বল।
দিহান ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। শাওন আর নীল বেরিয়ে গেলো রুম থেকে ড্রয়িং রুমে ইশি আর দিশা বসে টিভি দেখছে। তারা দুজন এসে সোফায় বসল। দিশা নীলকে দেখে মনে মনে অনেক খুশি হলো। ইশি বলল”
_আমাদের কথাও মনে পড়ে বুঝি?” শাওন কিঞ্চিৎ হেসে বলল”
_সব সময় মনে পড়ে। [দিশার দিকে তাকিয়ে] একবারও ভুলতে পারিনা।
_আচ্ছা তাই? কেমন আছ দুজন।
_হুম ভালো। তোমরা?
_আমরাও ভালো।
কিছুক্ষণ সবাই চুপ থাকল। শাওন একটু পর পর আঁড়চোখে দিশার দিকে তাকাচ্ছে। সে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করল দিশা বার বার নীলের দিকে তাকাচ্ছে। তাহলে কি দিশা নীলকে ভালোবাসে? ভাবতেই বুক ছিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো। নীল সবাইকে বলল”
_তোমরা বসো আমি আসছি।
নীল উপরে আসলো। লুপাকে দেখতে তার মন ছটফট করছে। দুদিন আগে লুপার পরিক্ষা শেষ হলো।লুপার শেষ পরিক্ষার দিন নীল ঘুমেরঘোরে লুপাকে মেসেজ দিয়ে ফেলছিল। i love you lupa! লুপা মেসেজ সিন করেছে কিন্তু কিছুই বলেনি। লুপাকে সে ভালোবাসলেও লুপা তার বন্ধুর বোন। দিহান তাকে কত বিশ্বাস করে এভাবে লুপার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে দিহানের বিশ্বাস ভেঙে দিতে সে পারবে না। তাই লুপাকে সরি বলতেই হবে। লুপার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখল লুপা বসে বসে ফোন টিপছে। নীল অনুমতি না নিয়েই রুমে ঢুকে গেল। হঠাৎ রুমে কারও উপস্থিতিতে কিঞ্চিৎ কেঁপে ওঠে লুপা। নীলকে দেখে রেগে আগুন হয়ে যায়। তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে”
_এটা কোন ধরনের বেয়াদবি? একটা মেয়ের বেডরুমে ঢুকতে যে তার অনুমতি লাগে সেটা জানা নাই?
_ওমা এইটা একটা মেয়ের রুম বুঝি? আমার না তাকে মেয়ে বলে মনে হয়না।” লুপা দাঁতে দাঁত চেপে বলল”
_বের হোন। এক্ষুনি বেরিয়ে যান।” নীল কিঞ্চিৎ হেসে গিয়ে জানালার পর্দা সরাল তারপর বলল”
_কি সুন্দর প্রকৃতি আর তুমি কিনা তা পর্দা দিয়ে আড়াল করে রাখছ?
_কি বলছি কানে যাচ্ছে না? বেরিয়ে যান।[চেঁচিয়ে]
_আমার না যেতে ইচ্ছে করছে না।
_দেখুন লাস্ট বলছি বেরিয়ে যান নয়তো আমি চিল্লাচিল্লি করতে বাধ্য হব।
_যাব তার আগে এটা বল তোমাদের বড় ভাইয়া বউ নিয়ে বাসায় আসেনা কেন? কাল আসব কাল আসব বলে বলে তো একমাস পার করে দিল কিন্তু আসলো না। আবার তাঁর বউয়ের একটা ছবিও কাউকে দিলনা তাঁর বউ কেমন সেটাও কেউই দেখল না। আজব তোমার সব ভাই গুলা।
লুপা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে জোরে জোরে সবাইকে ডাকতে লাগলো।
_আম্মুওওওওওওও,ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া,বড় মায়ায়ায়ায়ায়ায়া।” নীল বোকা হয়ে গেল। লুপা সত্যি সত্যি চিল্লাবে সে ভাবতেই পারেনি। লুপা সবাইকে ডেকেই যাচ্ছে নীল এসে লুপার মুখ চেপে ধরলো। লুপা নিজেকে ছাড়াতে ছটফট করছে। ধস্তাধস্তি করতে করতে একসময় দুজন খাটে পরে গেলো নীল একেবারে লুপার উপরে গিয়ে পড়ল। আর তখনই রুমে বাড়ির সব মানুষ জড়ো হয়ে গেলো।
চলবে…..।
কাল গল্প দেওয়ার অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু দিতে পারিনি। প্রথমে মন খারাপ তারপর ব্যস্ততা।তাই সরি।❤