ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_১২
#সুলতানা_সিমা
নীল শাওন দিহানের সামনে বসল। শাওন দিহানের বাহুতে হাত দিয়ে কিঞ্চিত স্বরে বলল”
_দিহান তুই কারও জন্য কাঁদছিস? “দিহান মাথা তুলে তাকাল। এই অল্প সময় কান্না করেও দিহানের চোখ লাল হয়ে গেছে। চোখের পানিটা মুছে কান্নাজড়িত গলায় বলল”
_আমার এত কষ্ট হচ্ছে কেন দোস্ত তোরা বলবি? কেন আমার মনে হচ্ছে ও আমার খুব আপন? [শাওনের দুহাত নিজের দুহাতের মুঠোয় নিয়ে] দোস্ত আমি ওর সব কষ্ট মুছে দিতে চাই। আমি ওর পাশে থাকতে চাই। ওর ছোট ছোট ইচ্ছে পূরণ করতে চাই।”
_কিন্তু কিভাবে এসব করবি? বিয়ের পেছনের কারণ না জেনে ওকে বাসায় তুলবি?
_বিয়ের পেছনে কি কারণ আমি আপাতত জানতে চাইনা। আচ্ছা তোরাই বল তদের কি মনে হচ্ছে অরিন কারও ক্ষতি করতে পারে?
_অরিনের বিষয়ে এতকিছু শুনার পর আমার আর মনে হচ্ছে না যে অরিন কারও ক্ষতি করতে পারে। আমার মনে হয় ওকে কেউ জোর করে এটা করিয়েছে। ওকে এটা করতে বাধ্য করেছে কেউ। আর এই কেউ টা কে, সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।[নীল]
_সেটা পরে দেখা যাবে আপাতত আমি এগুলা খুঁজতে চাইনা। আমার খুব খারাপ লাগছে রে। মুখে যা এসেছে ওকে তাই বলেছি আঘাত দিয়ে কথা বলেছি অপমান করেছি। কিন্তু বিশ্বাস কর তোরা আমি একটা কথাও ওকে ছোট করতে বলিনি, সব বলেছি রাগের মাথায়।
_ এখন কি করতে চাস তুই? [শাওন]
_ওর একজন ভালো বন্ধু হতে চাই। ওর কষ্টগুলা মুছে দিয়ে ওকে নতুন জিবন দিতে চাই। আমি চাই ও ভাবুক ওর কেউ আছে।
_ওকে তাহলে দেরী কেন আজ থেকে শুরু কর।[নীল]
_হুম চল রুমে চল।
তিনজন মিলে রুমে গেল। দিহান রুমে ঢুকেই ওয়াসরুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখল তন্দ্রা চারটা কল দিছিল। নীল শাওন সোফায় বসে ফোন টিপছে। দিহান বারান্দায় চলে গেল। তন্দ্রাকে ডায়াল করবে তার আগে আবারও তন্দ্রার কল এল। দিহান কল ধরতেই তন্দ্রার ঝাঁজালো গলা”
_ওই কই ছিলা এতক্ষণ তুমি? কতটা কল দিছি।
_সরি ওয়াসরুমে ছিলাম।
_রাতে কল ধরনি কেন?
_একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত ছিলাম তাই কল ধরতে ইচ্ছে হয়নি।
_ওওওওও আচ্ছা এখন আমি ইচ্ছের উপর দাঁড়িয়ে আছি? যখন ইচ্ছে হবে আমার সাথে কথা বলবা যখন ইচ্ছে হবেনা বলবা না। তাইতো?
_তন্দ্রা সব বিষয় নিয়ে ঝগড়া করবে না। তোমাকে বুঝতে হবে মানুষ সব সময় একই মুডে থাকেনা।
_তুমি আমাকে ঝাড়ি দিয়ে কথা বলছ?
_আমি ঝাড়ি দেইনি তোমার এটা মনে হচ্ছে। কেমন আছো?
_দুপুর দুইটায় দেখা করতে পারবে?
_না।
_কেন?
_একজনের সাথে দেখা করতে যাব।
_ওকে। আসতে পারবা না যখন আমাকে কিছু টাকা দাও।
_টাকা মানে? আমার হাতে এখন টাকা নাই।
_তোমার আব্বু আম্মুকে দিতে বল।
_প্রতিদিন হাত পাততে ভাল লাগেনা তন্দ্রা। আর প্রতি সপ্তাহে কেন তোমার টাকা লাগবে। তোমার আম্মুর কাছে চাও।
_তুমি আমায় খোঁটা দিচ্ছ? ওকে ঠিক আছে আমি ভাবছিলাম তোমার সব কিছুর উপরে আমার অধিকার আছে। কিন্তু না আমার কোনো অধিকার নেই। [ন্যাকামি করে কেঁদে কেঁদে]
_তন্দ্রা প্লিজ don’t cry! দেখ আমার হাতে দুহাজার টাকা আছে তাও এটা আমার না এটা অন্য জনের আজ তাকে সে ফেরত দিতে যাব। সে খুব অসহায় এই টাকাটা তার প্রয়োজন।
_অহ। তোমার হাতে টাকা রেখেও তুমি না বললা? ওকে জান ভালো থেকো বাই।
তন্দ্রা ফোন কেটে দিল। দিহানের খুব রাগ হচ্ছে তন্দ্রার উপর। কিছুতেই কেন বুঝতে চায়না এই মেয়েটা সে একটা বেকার ছেলে তার হাতে টাকা আসবে কই থেকে। বুক ছিড়ে আসা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুমে যেতে পিছন ঘোরে দেখল নীল আর শাওন দাঁড়িয়ে আছে। দিহান বারান্দার রেলিংয়ে পিঠ ঠেকে এক হাত পেটের উপর বাঁজ করে এক হাত কপালে দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকল। নীল আর শাওন একটু এগিয়ে আসল। নীল দিহানের কাধে হাত রেখে বলল”
_দোস্ত তর কি মনে হয় তন্দ্রাকে বিয়ে করলে তুই সুখি হতে পারবি? পারবি না রে। এই মেয়েটার সাথে তর পরিবারের যায়না। তর পরিবারের সবাই মিলেমিশে থাকে কখনো ঝগড়া হয়না। তন্দ্রা হল ছোট খাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া করার মেয়ে। ও তর পরিবার টিকিয়ে রাখতে পারবে না। কিন্তু তুই বুঝতে চাসনা। সে তোকে বলল সে সুইসাইড করবে আর তুইও সেটা বিশ্বাস করে পরিবারে যোদ্ধ শুরু করে দিলি ওকে ছাড়া তুই কাউকেই বিয়ে করবি না। আমার কি মনে হয় জানিস ও তোকে ভালোবাসে না ও তোর টাকাকে ভালোবাসে।
দিহান চোখ তুলে তাকাল নীলের দিকে। আসলেই কি তাই? তন্দ্রা কি সত্যি তাকে নয় তার টাকাকে ভালোবাসে? কিন্তু সে তো টাকা পয়সা কামাই করেনা। দিহানের মাথা ভনভন করছে। সে নীল আর শাওনকে বলল”
_আচ্ছা বাদ দে এগুলা। আয় নিচে আয়।
_হুম।
তিনজন এক সাথে নিচে নামল। দিশা ইশি লুপা দিয়া রুহান বসে নাস্তা করছিল। আর তিনটা চেয়াল ই বাকি ছিল শাওন এসে দিশার সোজা চেয়ারটায় বসল নীল লুপার সোজাটায় দিহান দিয়ার সোজাটায়। দিহান টেবিলে বসে তার মাকে ডাক দিল। শাওন দিশাকে বলল”
_কেমন আছো দিশা?
_জি ভাইয়া ভালো আপনি কেমন আছেন?
_হুম অনেক ভালো।
_নীল ভাইয়া কেমন আছেন?
_যাক কেউ তো আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি কেমন আছি। হুম বইন ভালাই আছি।” নীলের কথায় ইশি দিশা জোরে হেসে উঠে। নীল একবার লুপার দিকে তাকায় লুপা বিরক্তি মুখে বসে আছে। নীল একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস নিল। ততক্ষণে দিহানের আম্মু চলে আসলেন উনার পেছনে ইশির মা ও লুপার মা আসলেন। আজও লুপার মায়ের হাতে ডিম ভাজার প্লেট নীল শুকনো একটা ঢোক গিলে বলল ”
_দিহান আমি তাহলে আজ উঠি। “ইশির মা বললেন
_এই ছেলে চুপচাপ বসত। একদম উঠি উঠি করবে না।
_না আন্টি বাসায় বলে আসিনি আমার মনে হয় এখন যাওয়া উচিত।
_যাবে বাবা আগে নাস্তাটা করে নাও।[দিহানের আম্মু]
_আজ কিন্তু আমি ডিম ভাজি নি আজ বড় ভাবি ভাজছে।[লুপার আম্মু]
নীল যেন প্রান ফিরে পেল। দিহানের আম্মু সবাইকে নাস্তা তুলে দিচ্ছেন নীল মাঝে মাঝে আঁড়চোখে লুপার দিকে তাকাচ্ছে। লুপার চোখে একবার চোখ পড়ে গেল লুপা কিঞ্চিত স্বরে যত্তসব ফাউল বলে উঠল। কথাটা সবার কানে যায় সবাই তার দিকে জিজ্ঞাসুক চোখে তাকায়। লুপা উঠে চলে যায়। তার মা পিছন থেকে ডেকে বলেন পুরোটা শেষ করে যা সে কলেজ যাবে বলে চলে যায়। দিহানরা তিনজন মিলে নাস্তা শেষে তারাও বেরিয়ে পড়ে। আজ তারা ভার্সিতে যায়নি। অরিনের কলেজের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। সবাই মিলে অনেকক্ষণ কলেজের গেটের সামনে দাঁড়ায় অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দুপুর দুইটার দিকে লুপা আর অরিন বেরিয়ে আসে কলেজ থেকে। লুপা বেরিয়ে আসতেই দেখে তাদের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ড্রাইভার বলছে সে বাসায় যাবে তাই লুপাও যেন চলে আসে। লুপা অরিনকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। দিহান আগে থেকেই এ ব্যবস্থা করে রাখছে। ড্রাইভারকে সে নিজেই ফোন করিয়ে আনছিল। লুপা যাওয়ার পরে তারা অরিনের পিছু নেয়। একটু জায়গায় গিয়ে অরিন একটা গাছের নিচে বসে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে একটু পানি খেল। দিহানকে নীল ও শাওন বলল যাওয়ার জন্য দিহান গেল দু’কদম গিয়ে ফিরে আসল এসে বলল”
_দোস্ত তোরাও আয় আমার একা ভয় করছে।
_শালা আমরা কেন যাব তুই যা আমরা আছি তো।[শাওন]
দিহান বিরবির করে আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে এগুল। একটু যেতেই মনে পড়ে গেল অরিন যে হাতে থু থু নিয়ে তাকে থাপ্পড় দিছিল সেটা। দিহান আবার পিছন ঘোরে গেল নীল ধমকের স্বরে বলল”
_ওই দেখ আবার ফিরে আসবি তো তকে ফেলে আমরা চলে যাব। ব্লুটুথ তো আছে তাইনা। আমরা বলে বলে দিব তুই শুধু বলবি।
_ওকে আমি যখন গলা ঝাড়ব তোরা বুঝে যাবি আমি তোদের হেল্প চাইছি।” দিহান শুকনো একটা ঢোক গিলে অরিনের সামনে গেল। অরিন চলে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিল মাত্র। দিহান অরিনকে বলল”
_হা হা হাই। কিকি কি করেন?” অরিন পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে দিহান দাঁড়িয়ে আছে। দিহানের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। অরিন একবার আকাশের দিকে তাকাল তারপর দিহানকে বলল”
_আজ তো সূর্য মেঘে ঢেকে আছে। গরমটাও তেমন নেই আপনি এতো ঘামছেন যে?
_ক ক কই নাতো। [ঘাম মুছতে মুছতে]
_কিছু করছিনা পিপাসা লাগছিল দাঁড়িয়ে পানি খাওয়া ঠিক না তাই এখানে বসে পানি খেলাম। আপনি এখানে কেন?
_হ্যা আমি এখানে কেন?” অরিন কপাল কুঁচকে তাকাল। বিস্মিত হয়ে দিহানকে বলল”
_আপনি এখানে কেন নিজেই জানেন না?
দিহান আঁড়চোখে একবার বাম পাশে তাকাল নীল আর শাওন ইশারা দিচ্ছে বার বার আসল কথা বলার জন্য। দিহান কানে হাত দিয়ে দেখল তার ব্লুটুথ পরে গেছে। দিহান চোখ খিঁচে একটু সাহস জুগিয়ে বলল”
_আমি কিছু বলতে চাই আপনাকে।
_জি বলুন।
_আপনি আমার বন্ধু হবেন?” দিহানের কথায় অরিন অবাক হয়ে তাকায়। দিহানকে জিজ্ঞেস করে”
_বন্ধুত্ব কেন করতে চান? একটা বস্তির মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করতে আপনার সম্মানে বাঁধছেনা?
_সরি অরিন আসলে আমার মাথা ঠিক ছিলনা। আমার সাথে যা হয়েছিল সেটা আমি মেনে নিতে পারিনি। আমার খুব রাগ জমেছিল আপনার প্রতি। আই এম সরি।
_ইটস ওকে। বাট আমি আপনার বন্ধু হতে পারব না।
_কেন?
_আমি একটা ফকিন্নি টাইপ মেয়ে সমাজে কিভাবে চলতে হয় তা আমার জানা নে……..অরিন আর কিছু বলতে পারল না দিহান অরিনের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে অরিনকে চুপ করিয়ে দিল। অরিন দিহানের চোখের দিকে তাকাল। আজ দিহানের চোখে তার অন্য রকম কিছু দেখা যাচ্ছে। দিহানের নাক তার মতই সরু,ঠোঁট দুটো অনেক সুন্দর হালকা গুলাপি খুব আকর্ষনীয়,চোখের পাপড়ি গুলা লম্বা,ফর্সা গালে কোঁচা কোঁচা দাড়ি,চুল গুলা চিল্কি খুব ঘন বাতাসের ছোঁয়ায় প্রজাতির ডানার মতো নাচানাচি করছে। এই চুলে হাত ডুবালে যেন শুধু তুলতুলে নরম তুলো খুজে পাবে। দেখেই মনে হচ্ছে অনেক নরম হবে এই চুল গুলা।
অরিন এই প্রথম দিহানকে এতটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছে। কেন জানি তার মনে খুব ভালো লাগা কাজ করছে। তার স্বামী দেখতে এত সুন্দর? হোক সেটা ক্ষনিকের জন্য কিন্তু স্বামীই তো। দিহান আর অরিন একজন আরেকজনের চোখে হারিয়ে গেছে। এদিকে শাওন আর নীল বার বার কুকিলের মত কু কু করে যাচ্ছে। একসময় নীল ছোট একটা পাথর নিয়ে ডিল দেয়। সেটা এসে দিহানের কপালের পাশে পড়ে। দু’জনের হুস আসে তৎক্ষনাৎ দুজন দুদিকে ছিটকে যায়। দিহান কপালে পাশটায় হাত বুলায়। অরিন চারিদিকে তাকিয়ে বলে”
_মনে তো হচ্ছে কেউ ডিল মারছে। কিন্তু কে মারল? আসে পাশে তো কাউকে দেখছি না।
_বাদ দেন চলেন বসি একটু।
_হুম। এখানে গাছ তলায় বসতে আপনার কোনো সমস্যা নেই তো?
দিহান কোনো জবাব না দিয়ে বসে পড়ল। অরিনও গিয়ে বসল। একটুসময় দু’জন চুপচাপ বসে রইল। সুনশান পরিবেশ শুধু মাঝে মাঝে দু’একটা পাখির কিচিরমিচির শব্দ ভেসে আসছে। গলাটা একটু ঝেড়ে দিহান বলল”
_আমি জানতে চাইব না কেন আমাকে বিয়ে করছেন কি তার কারণ। কারণ টা যেটাই হোক সেটা যে কারও ক্ষতি করার মতো হবে না এটা আমার বিশ্বাস।
_এমন ওতো হতে পারে আপনি ভুল বিশ্বাস করছেন।
_এমন না ও তো হতে পারে?
অরিন কিছু বলল না সামনে থাকিয়ে গাছ থেকে ঝড়ে পরা পাতা গুলার দিকে তাকিয়ে রইল। দিহান বলল”
_হবেন আমার বন্ধু?
_হুম হব তবে একটা শর্তে।
_আমি রাজি বলুন কি শর্ত।
_আমাকে আবার তুমি করে বলতে হবে।
_ওকে ওটা এমনিতেই বলতাম।
_আপনার জি জি জিএফ কেমন আছে?
_সেদিন ভয়ে তোতলাচ্ছিলাম বলে আজ ব্যঙ্গ করছ?
_হা হা হা হা আপনি যেটা মনে করেন। এবার বলেন আপনার জিএফ ভালো তো?
_আছে ভালো কিন্তু সব সময় শুধু ঝগড়া করে। ভালো লাগেনা।
_যে ভালোবাসায় ঝগড়া বেশি হয় সে ভালোবাসার গভিরতাও বেশি হয়।
দিহান জোরপূর্বক হাসির রেখা টেনে হুম বলল। তারপর পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে দুহাজার টাকা বের করে অরিনকে দিয়ে বলল”
_অরিন কাল পরশু তুমি আমার পর ছিলে আজ তুমি আমার বন্ধু তাই সাহস করে কিছু বলতে পারি। প্লিজ টাকা টা নিয়ে নাও অরিন।
_এটা আপনি পেতেন তাই এটা আপনাকে দিছি। আপনি আমাকে দিচ্ছেন কেন? কোনো সম্পর্কের মাঝে টাকার সম্পর্কটা আমার পছন্দ নয়।
_অরিন আমি সেটা বলছিনা। আসলে আমি বুঝিয়ে বলতে পারছিনা। তোমার এখন টাকার খুব প্রয়োজন আমি জানি তোমার কাছে টাকা নেই প্লিজ নাও।
_উহু আমার কাছে টাকা আছে। আর হ্যা লুপার থেকে আমি শুনেছি আপনি কিছু করেন না তাহলে এত টাকা কই পান? এত বড় হওয়ার পরেও বাবা মায়ের থেকে হাত পেতে টাকা নেন লজ্জা করেনা? লেখাপড়ার পাশাপাশি মানুষ অনেক কিছু করে এতে সম্মান নষ্ট হয়না। সম্মান নষ্ট হয় অন্যের থেকে হাত পেতে টাকা চাইলে। এটা আপনার টাকা এটা রাখুন।
দিহান বিস্মিত হয়ে অরিনের দিকে তাকিয়ে তাকল তন্দ্রা আর অরিনের মাঝে কত তফাত সেটা মাপতে লাগল। অরিন দিহানকে বলল”
_তাহলে আজ আমি উঠি কাল দেখা হবে।
_আরেকটু বস না প্লিজ।
_বসে কি করব তাছাড়া আমার কাজ আছে আমি যাই।
_একদিন টিউশনিতে না গেলে হয়না? “অরিন অবাক হয়ে তাকাল দিহান বলল”
_লুপা বলেছে তুমি টিউশনি কর।
_অহ।
_আজ না হয় না গেলে। প্লিজ।
_ওকে বসেন।
অরিন আবার বসল। দিহানের চোখ বার আর অরিনকে দেখতে চাচ্ছে। আজ হঠাৎ করে অরিনকে তার কাছে এতো সুন্দর কেন লাগছে সে নিজেই জানেনা। অরিনের চোখের দিকে তাকালে নেশা ধরে যায়। কি আছে এমন এই চোখে? দিহান অরিনের দিকে তাকিয়ে ছিল অরিন তাকাতেই দিহান চোখ সরিয়ে নিল। অরিন বলল”
_চলেন একটু ওই পুকুরটায় গিয়ে বসি।
_হুম চল।
” দিহান অরিন উঠে এক সাথে পুকুরের দিকে গেল। একটা গাছের আড়াল থেকে শাওন আর নীল একজনের দিকে তাকিয়ে আবার দিহানদের দিকে তাকাল। ওরা কই যাচ্ছে তাদের মাথায় আসছে না। তারাও পিছু নিল। দিহান অরিন পুকুর পারে এসে দেখল পুকুরের ঘাটের সিঁড়ি পিছলে হয়ে আছে। দিহান বলল”
_দেখে মনে হচ্ছে এখানে পা রাখলেই পিছলে যাবে। চল অন্য কোথায় বসি।
_না না আমি সিঁড়িতেই বসবো। একেবারে নিচের সিঁড়িটায়।” দিহান কেন জানি না বলতে পারল না। সে আস্তে আস্তে দু’সিঁড়ি নামলো। নেমে অরিনের দিকে হাত বারিয়ে দিয়ে বলল”
_আমার হাত ধরে ধরে আসো।” অরিন হাত বারিয়ে দিল। অরিন দিহানের হাতে তার হাতটা রাখতেই দু’জনই হালকা কেঁপে ওঠল। অরিনের নরম হাতের ছোঁয়া দিহানের মনে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে। আর দিহানের ছোঁয়া লেগে অরিনের হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে। দিহানের দিকে একবার চোখ তুলে তাকাল। দিহান অরিনের চোখের দিকে তাকিয়ে অরিনের হাতটা শক্ত করে তার মুঠো ধরল। তারপর দিহানের হাতে ভর দিয়ে দিয়ে সে এক সিঁড়ি এক সিঁড়ি করে নিচে নামল। একেবারে নিচের সিঁড়িতে এসে দিহান অরিনের হাত ছেড়ে দিল। অরিনের ছোঁয়ায় তার মস্তিষ্ক অনেক কিছু করতে চাচ্ছে। আরেকটু ছোঁয়ে থাকলে যেন সে মাতাল হয়ে যাবে।
পায়ের স্যান্ডেল খুলে পাশে রেখে দু পা পানিতে ভিজিয়ে সিঁড়িতে বসল অরিন। দিহানও তার পাশে বসল এতটা পাশে যে একটু নড়লেই একজনের গা আরেকজনের গায়ে ঘঁষা লাগবে। দিহানের এভাবেই বসতে ভাল লাগছে। অরিন দিহানকে বলল
_পা ভিজান দেখবেন অনেক ভালো লাগছে।
_ওয়েট। জুতো খুলতে হবে।” দিহান তার জুতার ফিতা খুলতে লাগল একটার খুলে ফেলল আরেকটার খুলতে গিয়ে ফিতায় গিট লেগে গেল। ফিতা খুলতে না পেরে জুতা এমনি টেনে পা থেকে বের করার চেষ্টা করলো কিন্তু পারল না। শেষে ব্যর্থ হয়ে দিহান বলল”
_এক পা ভিজালে চলবে?
_আপনি কিছু মনে না করলে আমি ফিতাটা খুলে দিতে পারি।
_আরে না না না লাগবে না। “অরিন দিহানের কথা শুনল না। কোলের উপর থেকে ব্যাগটা নামিয়ে পাশে রাখল। তারপর দিহানের পায়ের সামনে বসে ফিতা খুলতে লাগল। অরিন মাথা নিচু করে ফিতা খুলছে এতে করে তার দুপাশের থুতনি সমান ছোট চুলগুলা সব মুখের দুপাশ ছড়িয়ে পড়েছে। যতবার ফিতায় টান দিচ্ছে ততবার চুলগুলা হেলেদুলে নেচে উঠছে। এই দৃশ্য টা দিহানের কাছে অনেক ভালো লাগছে। তার ইচ্ছে করছে অরিনের চুল গুলা কানে গুজে দিতে।
অনেক চেষ্টা করার পড়ে অরিন ফিতাটা খুলল। ফিতা খুলে সে জুতা খুলতে লাগল। জুতা পা থেকে একটু বের করে দিহানের উম্মুক্ত পায়ের অংশে হাত দিয়ে ধরল। দিহান কিঞ্চিত কেঁপে ওঠল। অরিন দিহানের পা ধরে বাকিটাও খুলল। দিহানের শ্বাস ভারি হয়ে আসছে। হার্ট খুব দ্রুত চলছে। বুকের ভিতর যেন কেউ হাতুড়ি পিটাচ্ছে। কই তন্দ্রার ছোঁয়া পেলে তো এমন হয়না? দিহানের মনে বার বার অরিনকে ছোঁয়ে দেওয়ার ইচ্ছে জাগছে। শুকনো একটা ঢোক গিলে তারাতাড়ি পা পানিতে ভিজাল। তার শরিরে গরম বাতাস বইছে মনে হচ্ছে। অরিন দিহানের দিকে তাকিয়ে বলল”
_আপনার পা অনেক সুন্দর। বিশেষ করে আপনার পায়ের নক গুলা।” দিহান লজ্জা পেল। কথা ঘোরাতে বলল”
_এখন তো আমরা বন্ধু হয়ে গেছি তুমি করে বল।”
অরিন কিঞ্চিত হাসল কিছুই বলল না। এদিকে আড়াল থেকে ক্যামেরায় তাদের সুন্দর মূহুর্তগুলো বন্দি হচ্ছে।
চলবে….।