ভালোবাসি বলে দাও পর্ব ৭

0
472

#ভালোবাসি_বলে_দাও
#আরিশ❤আরু
#Suraiya_Aayat

7.

ওনার এক ডাকেই আমি খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে এলাম নিরবে। ওখানে আর কিছুখন থাকলে নিজেকে জেলের আসামী মনে মতো নিজেকে। ওনার পিছন পিছন দৌড়াচ্ছি আমি, উনি হাটছেন আর আমি দৌড়াচ্ছি, তবুও ওনার সাথে পেরে উঠছি না। উনি আমাকে এলিয়েন বলেন কিন্তু এখন যে উনি এতো বড়ো বড়ো পা ফেলে হাটছেন তার বেলা! আসল এলিয়েন টা কে শুনি?

দৌড়া দৌড়ির একটা পর্যায়ে গিয়ে আমি ওনাকে ধরেই ফেললাম প্রায়। ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওনাকে গতিরোধ করলাম। উনি আমার এমন কাজকর্মে অবাক হলেন আর ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই আমি বলে উঠলাম,
‘আমি কিন্তু এখনো আপনার ওপর রেগে আছি। ‘

উনি আমাকে তোয়াক্কা না করে হাটতে গেলেই আমি বেশ চিৎকার দিয়ে বললাম,
‘মি অভদ্র! ‘

আমার এই ডাকটার জন্য উনি বোধহয় মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। উনার পায়ের গতি রোধ করতে সক্ষম হলাম, না জানি রাগের মাথায় ওনাকে কি একটা বলে ফেললাম তাতে ওনার মুখের হাবভাব দেখার মতো। ওনার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছি আমি। উনি ধমক দেবেন কি হয়তো ভাবছেন কিন্তু ভাবাভাবির একটা পর্যায়ে গিয়ে উনি আর কিছু বললেন না, ভ্রু সংকুচিত করে বললেন,
‘এটা কি ল্যাঙ্গুয়েজ! ‘

আমি তীব্র জেদ এটে পুনরায় বললাম,
‘মি অভদ্র! ‘

উনি বুঝলেন যে আমি নিজেও এ শব্দের অর্থ উৎঘাটনে অক্ষম তাই তিনি আর বেশি কথা বাড়ালেন না, আমার হাতটা শক্ত করে ধরে স্টুপিড বলে হাটতে শুরু করলেন। আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
‘আপনি আমাকে যতোটাও স্টুপিড ভাবেন আমি ততোটাও না হাহ! ‘

উনি গাড়ির দরজা খুলে আমাকে বসার নির্দেশ দিয়ে বললেন,
‘ তাহলে কি তার থেকেও বেশি স্টুপিড তুমি? ‘

আমি রাগ দেখিয়েও ব্যার্থ হলাম উনি নিজেও গাড়িতে উঠলেন। গাড়ি স্টার্ট দিলেন আমি চুপ করে বসে রইলাম, কোন অজানা গন্তব্যের জন্য রওনা হচ্ছি তা আমার ধারনার বাইরে। গাড়ির তালের সাথে তাল মিলিয়ে উনি গান চালালেন, কিছু গান আমার কানে ঢুকছে আবার কিছু গান আমার কানের বাইরে দিয়ে যাচ্ছে, তবে ‘ভালোবাসি বলে দাও আমায়’ গানটা কানে বাজতেই শরীরের মধ্যে শিহরন বয়ে গেল। রাগী কন্ঠে বলে উঠলাম,
‘গান বন্ধ করেন। ‘

আমার কথা উনি তোয়াক্কা করলেন না বরং এই গানটাই প্রথম থেকে আবার দিলেন। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে একটা প্রশ্ন করলাম,
‘ আপনার আর ফারিন আপুর বিয়ের পর ও কি আপনি আমার ওপর এই টিচারগিরি চালিয়ে যাবেন? ‘

আসলে কথাটা আমি অনেক জটিল ভাবে ওনার সামনে উপস্থাপন করলাম এটা জানার জন্য যে উনি কি সত্যিই ফারিন আপুকে পছন্দ করেন?
উত্তর এর অপেক্ষায় ওনার দিকে অধীর আগ্ৰহ নিয়ে চেয়ে রইলাম। উনি শান্ত আর নির্বিকার। একটা পর্যায়ে অপেক্ষা করার ফলাফল হিসাবে নিরবতা ছাড়া কিছুই পেলাম না, উনি আমার দিকে তাকালেন না বিন্দুমাত্র। আমি দৃষ্টি ফেরালাম। উনিও নিস্তব্ধ।

কয়েক মিনিটের মধ্যেই উনি বসুন্ধরার একটা মোবাইল শপের সামনে এনে গাড়িটা দাঁড় করালেন। আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম,
‘কতোবার মোবাইল চেন্জ করা লাগে ওনার? ভড়োলোক্স!

উনি আমাকে গাড়ি থেকে নামার ইশারা করতেই আমি নেমে গেলাম। উনি সন্তর্পণে আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন, আমি ওনার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিতেই উনি বলে উঠলেন,
‘ আমি তোমার জন্মগত টিচার! চাইলেও অন্য টিচারের এক্সিট এন্ট্রি নেই। জীবনের শেষ সময় অবধি আমিই তোমার টিচার এটা যতো তাড়াতাড়ি বুঝবে ততোই তোমার লাভ। ‘

ওনার কথাটা শুনে আমার শরীরের মধ্যে তিড়িক করে উঠলো, অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে গেল। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে অজানা উত্তর এর আশায় বললাম,
‘ আমার বিয়ে হয়ে গেলেও আপনি আমার টিচার থাকবেন? ‘

উনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেন,
‘বাচ্চা মানুষ বিয়ে করার এতো শখ কেন? চলো চুপচাপ। ‘

ওনার ধমকে দমে গেলাম, বুঝলাম না যে কি বলবো, উনি সত্যিই অভদ্র! আমার ভাষায় মি অভদ্র!

/

ওনার সামনে মুখ গোমরা করে বসে আছি আমি, উনি আমার নতুন ফোনটা নিয়ে আবার কি সব কি করছেন আমি দেখতে পাচ্ছি না। আমি ওনার দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে বললাম,
‘আরিশ ভাইয়া ফোনটা দেন না। আপনি তো আমার জন্যই ফোনটা কিনেছেন তাহলে এখন আমাকে না দেওয়ার মানে কি! ‘

উনি ভীষন মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন তা ওনার কথাতেই বুঝলাম।
‘আরু পাখি ওয়েট একটা কাজ করছি তো আমি! ‘

আমি ওনার পাশ থেকে উঠে গিয়ে পার্কের দোলনাটায় গিয়ে বসলাম, যদিও জানি উনি কিছুখন পর আমাকে ডাকাডাকি করবেন আর আমি দোলনা থেকে নামবো না। হলোও তাই উনি ডাক দিলেন,
‘এই মেয়ে চলে এসো। বাসায় যাবো। ‘

আমি দোলনা থেকে নামলাম না বরং সেখানেই দোলনায় বসে রইলাম। উনি আমআর কাছে এগিয়ে এসে বললেন,
‘এই নাও তোমার ফোন! ‘

আমি নামলাম না, তবে উনি কেমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, আমিও ভ্রু কুঁচকে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘ বসবেন আপনি? ‘

আমি হাওয়াতে তির ছোড়ার মতো কথাটা ওনার দিকে ছুঁড়ে দিলাম কিন্তু আমি কখনো ভাবতেও পারিনই যে তির গিয়ে নিশানায় লাগবে। উনি আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন,
‘ হমম! ”

আমি ওনার হমম শুনে তৎক্ষণাৎ সরে এলাম, সরে এসে আমার পাশে ওনাকে বসার জায়গা করে দিতেই উনি বসলেন আমার পাশে। আমার কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে, অজানা কারনেই আমার হৃদস্পন্দন বাড়ছে। দোলনা বেশ মৃদুমন্দ ভাবেই দুলছে, আমরা দুজনেই নিরব। আমি এর আগে এতো সহজ ভাবে ওনাকে আমার সাথে মিশতে দেখিনি। আমি ওনার দিকে তাকাতেই উনিও আমার দিকে তাকালেন, ওনার আর আমার শরীরের মাঝে বিন্দুমাত্র ফারাক নেই। আমি লজ্জা পেয়ে খানিকটা সরে যাওয়ার পরিকল্পনা নিতে গেলেও দেখলাম সরার মতো বিন্দুমাত্র জায়গা নেই। উনি এখনো আমার দিকে চেয়ে আছেন। আমি দৃষ্টি নামিয়ে বললাম,
‘আপনার কি আজ শরীর টরীর খারাপ আরিশ ভাইয়া? না মানে আজকে এমন ভালো মানুষ হয়ে গেছেন যে! ‘

আমার কথার উত্তর হিসাবে উনি বললেন,
‘জলদি বিয়ে করবো তাই ভালো হওয়ার চেষ্টা করছি, নাহলে যদি বউ পালায়! তুমি তো আমার স্টুডেন্ট তাই তোমার ওপর দিয়েই এপ্লাই করছি।’

ওনার এমন মশকরা করা কথা শুনে আমি অবাক হলাম,
‘মানে টা কি! আপনি এখন বিয়ে করার জন্য রেডি? আর ফারিন আপু? তার তো এখনো দুইবছর বাকি! ‘

আমার কথাটা শুনে উনি আমার ফোনটা আমার হাতে দিয়ে বললেন,
‘ নাও একটা ছবি তোল আমাদের! ‘

আমি অবাক এর ওপর অবাক হলাম। উনি আজকে এমন ভালো ব্যাবহার করছেন কোন ধমক ঝমক ছাড়া। আমি না পেরে ফোনটা ধরলাম ছবি তোলার জন্য। আরও অবাক হলাম যখন দেখলাম উনি কিউট স্মাইল দিয়ে ছবি তোলার পরিকল্পনা করছেন, নিজেকে যেন এবার অকওয়ার্ড ফিল হচ্ছে ওনাকে দেখে। আমি হাসতে গিয়েও হাসতে পারলাম না, একটা ছবি তুললাম তাতে উনি হাসছেন আর আমি গোমরামুখো হয়ে আছি। ছবি তোলা হলেই উনি আমার হাত ধরে উঠে গেলেন। আমি এখনো ওনার উত্তর পেলাম না।

#চলবে,,

সত্যি বলছি পরের দিন বড়ো করে লিখবো?। আর রেসপন্স এতো কমে গেল কেন? প্লিজ সবাই রেসপন্স করবেন ??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here