ভালোবাসি বলে দাও পর্ব ২৩

0
430

#ভালোবাসি_বলে_দাও
#টিট_ফর_ট্যাট
#Suraiya_Aayat

23.

কোচিং থেকে ফেরার পথে ওনার একরাশ প্রশ্ন শুরু হলো আর তার সাথে আমাদের জবাবদিহিতাও।

‘পড়া কিছু বুঝতে প্রবলেম হয়েছে? না বুঝলে টিচারের থেকে ঠিক করে বুঝে নেবে, আর প্রবলেম হলে আমাকে বলবে। সানা তোকেও বলছি। ‘

ওনার কথা শুনে আমি আর সানা একে অপরের দিকে তাকালাম নির্বিকারে। সানা নির্বিকারে বলল,
‘খারাপ লাগছে না। ভালোই বাট টাফ আছে। ‘

উনি আমার দিকে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,
‘আর আপনার? ‘

আমি ওনার কথাতে উত্তর দিলাম না, মুখ কাচুমাচু করে রইলাম। আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি আরও কিছুখন আমার দিকে পরখ করে রইলেন। তারপর উনিও কিছু বললেন না।

সারাটা রাস্তা চুপ করে রইলাম। বাসায় ঢুকেই আমি কাধ থেকে কোনরকম ব্যাগটা নামিয়ে বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়তেই আরিশ ভাইয়া দরজা বন্ধ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন অপলক। আমি পিটপিট করে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকাচ্ছি ওনার দিকে তা ওনার চোখকে ফাঁকি দিলো না। আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। কিছুখন পর অনুভব করলাম যে উনি আমার খুব কাছেই রয়েছেন। চোখটা খুলে ওনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি আমার দিকে ড্যাপড্যাপ করে চেয়ে আছেন। উনি যদি ধমক দেন সেই ভয়ে আমি পুনরায় চোখ বন্ধ করে নিলাম। অনেকখন ধরে নিস্তব্ধতার এক দীর্ঘ প্রহর চলতে লাগতেই আমি এবার এক চোখ খুলে তাকিয়ে দেখতেই দেখলাম উনিও এখনো আগের ন্যায় আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি এবার ধড়ফড় করে উঠে পড়লাম, বিছানা থেকে নামতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেই উনি হাত ধরে আবার বিছানায় টেনে আনলেন।

আমি ওনার পাশে শুয়ে রইলাম। উনি আমার হাতটা ধরে ওনার কাছে খানিকটা টেনে এনে প্রশ্ন করলেন,
‘ কি হয়েছে? মন খারাপ? ‘

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্মতি জানাতেই উনি আমার নাকটা ধরে টেনে বললেন,
‘ তা মন খারাপ কেন শুনি? আজকে সারাদিন এ একবার ও ঝগড়া করতে পারেনি সেই কারনে কি? ‘

আমি পুনরায় মাথা নাড়িয়ে না জানালাম।

‘ তাহলে কি কারনে? ‘

আমি চুপ করে রইলাম, কোন জবাব দিলাম না। তা দেখে উনি বললেন,
‘পড়া বুঝতে প্রবলেম হচ্ছে? ‘

আমি পুনরায় মাথা নাড়িয়ে না জানালাম। এবার উনি আর কোন প্রশ্ন করলেন না, উনিও চুপ করে রইলেন। কিছুখন পর আমি নিজেই সহজ স্বিকারউক্তি করলাম,
‘কোচিং এর সবাই আপনাকে চেনে, আপনার সূত্রে আমাকেও চেনে। সবাই বলে যে মিডিকেল এ চান্স পেতে গেলে দিনরাত এক করে পড়াশোনা করতে হয়। আপনি তো দিনরাত পড়তেন তাই আপনি ঢাকা মেডিকেল এ পেয়েছেন কিন্তু আমি তো আপনার মতো অতো পড়াশোনা করিও না আর করতে ভালোও লাগে না। আর যদি চান্স না পাই তাহলে কি হবে! ‘

আমার কথা শুনে উনি হো হো করে হেসে উঠলেন। আমার কান্না চলে এলো ওনার হাসি দেখে। আমি ওআর দিকে ছলছল চোখে তাকাতেই উনি আমাকে ওনার বুকের মাঝে টেনে নিয়ে বললেন,
‘ তুমি যতটুকু পড়ো ততোটুকু এনাফ। আর কিছু বুঝতে প্রবলেম হলে আমি বাসায় ফিরলে আমাকে বলবে কেমন? ‘

আমি মাথা নাড়ালাম। আসলে উনি ছাড়া কোন কারোর কাছে পড়তে যে আমার ভালো লাগে না সেটা ওনাকে কি করে বোঝাই।

/

রাত সাড়ে এগারোটা বাজে উনি এখনো বাসায় ফেরেননি, সাথে ফুপাও। ফুপা বললেন যে ফেরার পথে আরিশ ভাইয়াকে নিয়ে ফিরবেন। ফুপি কাচ্চি বানিয়েছে আর সেই কাচ্চির গন্ধে সারা ঘর বাড়ি মো মো করছে। আমি ডাইনিং টেবিলে হাতে হাত গুটিয়ে বসে আছি। ফুপি সালাদের শশা কাটছে আর সানা পেঁয়াজ। মাঝে মাঝে আমার নিজেকে দেখে নিজেরই প্রশ্ন জাগে যে আমি কি আসলেই এ বাড়ির বউ? আমার জানামতে বিয়ে করলেই মানুষ বউ হয়ে যায় তারপর সংসারের সব কাজ করা লাগে যেমনটা আমার ফুপি আর আম্মু আর আম্মুকে দেখে আসছি। কিন্তু আমি তো কিছুই করি না। তাহলে আমি কি?

আমি ফুপির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম,
‘ফুপি আমি কিছু হেল্প করি? রায়তাটা আমি বানিয়ে দেই। ‘

ফুপি ধমক দিয়ে বলল,
‘ নাহ আপনার কিছু করা লাগতো না। আপনি শান্ত হয়ে বসেন তারপর হাত পা কাটলে আপনার জামাই আর আমাকে কথা শোনাতে ছাড়তো না আম্মা। ‘

ফুপির কথা শুনে মুখ কাচুমাচু হয়ে গেল আমার। সানা ঠোঁট চেপে হাসছে। আমার গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছা করছে,
‘তোমরা কেও ভালা না।’

কথাটা নিজের মাঝেই দমিয়ে নিয়ে চুপ করে রইলাম।

এভাবে আরও কিছুখন অপেক্ষা করার পর কলিংবেল বেজে উঠতেই আমি ফুপির দিক তাকিয়ে বললাম,
‘এবার যাই? ‘

ফুপি হেসে ফেললেন আমার কথা শুনে। আর হেসে বললেন,
‘যা। ‘

আমি দৌড়ে দরজার দিকে ছুটে গেলাম। এক নিমেষে দরজা খুলতেই দেখলাম ফুপা একা দাঁড়িয়ে আছেন, ওনাকে আশেপাশে না দেখে আমার মুখটা চুন হয়ে গেল এক নিমেষেই। আমি ফুপার আশেপাশে খানিকটা উঁকি দিতেই দেখলাম যে উনি আছেন কি না। আমার এমন উঁকিঝুঁকি দেখে ফুপা বলে উঠলেন,
‘আরিশ আসেনি আরু মা। ওর কলেজে কি একটু কাজ আছে তাই আসেনি। চলে আসবে কিছুখনের মধ্যেই। ‘

আমি ফুপার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললাম,
‘এতো রাতে ওনার আবার কি কাজ। ‘

ফুপা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘ তা তো আমি বলতে পারবো না। তবে আমাকে ফোন করে বললো যে তার নাকি ফিরতে লেট হবে। ‘

আমি আর কথা বাড়ালাম না। ওনার প্রতি একরাশ রাগ আর অভিমান দুই ই জমা হয়ে এলো। কই ওনাকে যখন ফোন করে জিজ্ঞাসা করলাম তখন তো উনি কিছু বলেননি।
আমি আর কথা বাড়ালাম না, আরিশ ভাইয়ার এমন কাজে বোধহয় ফুপিও রেগে গেছেন বেশ তা ফুপির কথাতেই বোঝা যাচ্ছে। ফুপি ওনাকে বেশ ঝাড়ি দিচ্ছেন। আমি চুপচাপ গিয়ে টেবিলে বসলাম। সানা সম্ভবত আরিশ ভাইয়াকে কল করার চেষ্টা করছে কিন্তু উনি ধরছেন না।
আমাকে উদ্দেশ্যে করে ফুপি বললেন,
‘ছেলেটা যে কবে এমন বেপরোয়া হলো কে জানে। আসতে যখন দেরি হবে তখন সেটা জানালেই হতো। আরু মা তুই খেয়ে নে। ওর খাবারটা আমি প্লেটে বেড়ে দেবো সেটা ঘরে নিয়ে যাস। ‘

আমি ভাবলাম ওনার জন্য যদি আর একটু অপেক্ষা করা যায় আর তারমধ্যে যদি উনি চলে আসেন, সেই কথা ভেবে আমি বললাম,
‘ফুপা ফ্রেশ হয়ে আসুক না হয় তারপর খাবো সবাই একসাথে। ‘

ফুপি আমার কথা শুনে ফুপাকে হুমকি দিয়ে বলল,
‘জলদি ফ্রেশ হয়ে এসো, তোমাদের জন্য কিন্তু আমার দুই মেয়ে না খেয়ে আছে এখনো। ‘

‘ যাচ্ছি যাচ্ছি। হুমকি দাও কেন? ‘

কথাটা বলে ফুপা চলে গেলেন। আমি আর সানা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দেওয়ার উপক্রম।
ফুপা আর ফুপি চিরকাল এমনই, হাওয়াইমিঠাইয়ের মতো, সহজেই গলে যান আর তার জন্য তাদের প্রতি আমাদের এক আকাশ ভালোবাসা।

/

আমার সেট আপ সম্পূর্ণ রেডি, এসির পয়েন্ট বাড়িয়ে গায়ে মোটা একটা ব্ল্যাঙ্কেট ফেলে শুয়ে আছি বলা যাই না উনি এসে কখন মিসাইল বর্ষন শুরু করেন ওনার কল না তোলার জন্য।
ডিনার করে রুমে ফেরার পর যখন ফোনটা হাতে নিলাম তখন দেখি ৪০+ মিসডকল। আমি ফোনটা ওপরে সাইলেন্ট করে রেখে নীচে মজায় মজায় কাচ্চি খাওয়ার জন্য ছুটেছিলাম, উল্টে উনি দেরি করে বাসায় ফিরছেন দেখে ফুপি বিনা কারনে কয়েকটা ঝাড়িও দিলেন। কয়েকটা এসএম এস করেছেন তা না বললেই নয়,

‘আরু পাখি ফোনটা পিক করো। ‘

‘হারি আপ, আই এম বিজি। ‘

‘বাসায় আসতে লেট হবে। কিছু কাজে আটকে গেছি। ‘

‘ এই মেয়ে। কি হলো? ‘

‘ কথা কানে যায় না তোমার? ‘

‘কতোবার কল করেছি ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া? ‘

‘বাসায় গেলে তোমার খবর আছে। ‘

‘ওয়েট এন্ড সি। ‘

এস এম এস গুলো দেখে আমার গলা শুকিয়ে এলো। তাই তার অগ্ৰিম প্রস্তুতি নিয়ে রাখলাম। অনেক ঘুমানোর চেষ্টা করলাম তবুও ঘুম আসতে চাইলো না। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ শুনতেই আমি চুপসে গেলাম।
উনি রাগী কন্ঠে ডেকে উঠলেন,
‘ এই মেয়ে ওঠো। ‘

আমি বিন্দুমাত্র নড়াচড়া করলাম না আর উত্তরও দিলাম না যেন উনি মনে করেন আমি কুম্ভকর্নের নাতনি। আমার জবাব না দেওয়াই উনি এবার একটানে গা থেকে কম্বল পা ফেলে দিয়ে আমার হাত ধরে টেনে তুললেন। আমি এখনো চোখ খুলে ওনার দিকে তাকাইনি, এমন একটা ভাব নিলাম যে উনি হাত ছাড়লে আবার বিছানায় পড়ে যাবো এতোটাই ঘুমের ঘোরে কাতর।
আমি তাকানোর কোন নাম নেই দেখে উনি এবার আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,
‘ জলদি ওঠো নাহলে এক্ষুনি ঠান্ডা জলের শাওয়ারে পাঠাবো বলে রাখলাম। ‘

কথাটা শুনতেই আমি চোখ খুলে ওনার দিকে তাকালাম। আমি চোখ খুলতেই উনি উনি ধমক দিয়ে বললেন,
‘ ডাকলে কথা কানে যায় না? ফোন করলে ফোনটা ধরা যায় না? ম্যাসেজ দিলে সেটা দেখা যায় না? ‘

আমি ওনার দিকে কাচুমাচু করে তাকিয়ে বললাম
‘সরি আমি তখন রুমে ছিলাম না। ‘

‘ তা রুমে আসার পর কল ব্যাক করা যায় না? ‘

আমি কিছু বললাম না, চুপ করে রইলাম। উনি আমার হাতটা ছেড়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলেন। আমি ওনার যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলাম। উনি এতো সহজে ছেড়ে দিলেন? উইথ আউট বকা ঝকা! বিষয়টা আমার হজম না হলেও বিষয়টা ভালোই। কথাটা ভেবে মনে মনে খুলি হলাম বেশ।

কিছুখন পর উনি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই আমি খাবার নিয়ে ওনার সামনে গিয়ে বললাম,
‘কাচ্চি। খেয়ে নেন। ‘

উনি চোখ বাকা করে প্রশ্ন করলেন,
‘ আপনার খাওয়া হয়েছে? ‘

‘হমম। আপনার আর ফুপার জন্য আমরা পৌনে বারোটা অবধি বসে ছিলাম। আপনি আসেননি দেখে ফুপি খেয়ে নিতে জোর করলো। ‘

‘এভাবে আমার জন্য অপেক্ষা করে না খেতে থাকবে না, যদি শুনেছি যে না খেয়ে আছো তো খবর আছে। খাইয়ে দাও আমাকে, আই এম টায়ার্ড এনাফ। ‘

আমি অবাক হয়ে বললাম,
‘ আমি কেন! আপনার হাত আছে তো। ‘

উনি ধমকে বললেন,
‘ আমার হাত আছে আমিও জানি স্টুপিড। বেশি কথা না্ বলে খাইয়ে দাও। ‘

আমি চুপচাপ বসে গেলাম, ওনার ধমক শোনার থেকে ওনাকে খাইয়ে দেওয়া ভালো।

কিছুখন পর হাতের দিকে তকিয়ে দেখলাম হাতটা লাল হয়ে গেছে, আমি হাতটা ওনার সামলে মেলিয়ে ধরে বললাম
‘ কতগুলো কামড় দিসেন হিসাব আছে? ‘

উনি ফোনের দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘ কতগুলো কল দিয়েছিলাম হিসাব আছে? ‘

‘ তাই বলে আপনি এভাবে হাতে কামড় দিবেন? ‘

উনিও আমার কপি করে বললেন,
‘ তাই বলে আপনিও আমার কল রিসিভ করবেন না? ‘

আমার রাগ উঠলো ওনার কথাতে,
‘অভদ্র! ‘

উনিও বললেন,
‘ আরু পাখি। ‘

#চলবে,,,

জ্বর ছিলো বলে লিখতে পারি নাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here