#ভালোবাসি_প্রেয়সী [০৭]
#জান্নাতুল_বিথী
গভীর রাত, চারপাশ নিস্তব্ধতায় ঘিরে আছে! থেকে থেকে দু একটা যানবাহনের ডাক শোনা যায়। এই নিশুতি রাতকেই নিজের একাকিত্বের সঙ্গী হিসেবে বেঁচে নিয়েছে ইমাদ, গভীর রাতের মতোই গভীর ভাবনায় মগ্ন সে! কিছুতেই নিজের হিসেব মিলাতে পারছে না। তার মম কি কারনে উপমার বিষয়ে এতো ইন্টারেস্টেড ফিল করছে? হঠাৎ করে উপমার সাথেই বা তার বিয়ের কথা বলেছিলো কেনো আজ? উনি বলেছিলো উপমা কে সে আগে থেকেই ছিনে। যদি সত্যিই ছিনে থাকে তাহলে সেটা কিভাবে? আর উপমার বাবা মা কি সত্যিই খু”ন হয়েছে? যদি খু”ন হয়ে থাকে তাহলে সেটা কিভাবে? সব গুলো প্রশ্ন তার মাথায় কিলবিল করছে। উপমা কে সে একজন সহজ সরল মেয়ে হিসেবে ভেবেছিলো। কিন্তু তার এখন মনে হচ্ছে উপমা আস্ত একটা রহস্যকন্যা!
রহস্যকন্যা, প্রশ্নকুমারী নাম গুলো বার কয়েক বিরবির করে বলে অধর প্রসারিত করে হাসে ইমাদ। আসলেই মেয়েটার নামের সাথে এই নাম গুলো খাপে খাপে মিলে যায়। তার একবার মন বলে এই রহস্যকন্যার রহস্য গুলো উম্লেষন করতে। আবার মনে হয় এই মেয়েটাকে নিয়ে তার না ভাবলেই হয়তো ভালো হয়। দীর্ঘক্ষণ চিন্তা করে সে ভাবলো,
‘এই মেয়েটার রহস্য উদঘাটন্ করতে হলে তাকে অনেক ভাবতে হবে, সেই ভাবনার মাঝেই যদি পিচ্চু নামের পিচ্চি মেয়েটার দ’হ’ন থেকে বাঁচা যায় তাহলে ম’ন্দ কিসের?’
পরক্ষনেই আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে বিরবির করে বললো,
‘আমি তোমাকে ভুলতে পারছি না কেনো পিচ্চু? আচ্ছা পিচ্চু তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো? এই পৃথীবিতে যে তুমি নামক পিচ্চি টার জন্য প্রতি সেকেন্ডে কেউ একজন দ’হ’নে পুড়ে ম”রে তুমি কি জানো?
বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইমাদ আবারো আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘হয়তো জানো না, যদি জানতে তাহলে কি ছুটে আসতে আমার কাছে? আচ্ছা পিচ্চু আমি যদি কখনো তোমাকে খুজে পাই আমার এই হৃদয়ের দ”হনে কথা শুনলে বিশ্বাস করবে তুমি? নাকি প্রতি বারের মতো হেসে উড়িয়ে দিবে? আচ্ছা আমার এই প্রেম কাহিনী তোমার কাছে হাস্যকর মনে হবে না পিচ্চু? তুমি জানো যদি কখনো তোমার সাথে দেখা হয়, আর আমি তোমাকে এসব কথা বলি তখন তুমি উপেক্ষার হাসি হাসলে আমি সব চাইতে বেশি কষ্ট পাবো? তুমি আমার নাহলেও আমি হয়তো এতোটা কষ্ট পাবো না। আমার কষ্টের পাল্লা আর ভারী করিয়ো না পিচ্চু! ভালোবাসি তোমায়!’
বলতে বলতে তার চোখের কোণ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। ইমাদ নিজের জলের কণাটুকু আঙ্গুরের ডগায় নিয়ে ফের আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘হে আকাশ তুমি সাক্ষী আছো আমি তাকে কতো টুকু ভালোবেসেছি, আমার কতো রাত জাগা তাকে নিয়ে সবটারই প্রত্যক্ষ সাক্ষী তুমি। আমার এতো অভিযোগ তোমার দিকে তাকিয়ে কেনো বলি জানো? কারন আমার পিচ্চু ও দিনে একবার হলেও এই আকাশের দিকে তাকায়। তুমি তার নিকট আমার ভালোবাসা পৌছে দিলেও পারতে। তুমিও স্বার্থ”পর!’
.
পরপর তিনটা ক্লাস করে ক্লাসরুম থেকে বের হই আমি। ক্লান্ত লাগায় হেলতে দুলতে ক্যান্টিনে গিয়ে বসে পড়ি। চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই পাশে কারো দপ করে বসার শব্দে মাথা ঘুরিয়ে মানুষটার দিকে তাকালে দেখি আমার তথা কথিত বয়ফ্রেন্ড বসেছে। আমি তাকে দেখে মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আশায় তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম,
‘হ্যালো হবু বর মশাই কেমন আছেন?’
আমার কথায় ভ্রু কুচকে আমার দিকে সেকেন্ড কয়েক তাকিয়ে থেকে বললো,
‘মাথায় ভূত চাপলো নাকি? কোন ভূত? অদ্ভুত কথা বলছো কেনো?’
তার কথা টান টান উত্তেজনা নিয়ে বললাম,
‘লুল্লু ভূত! জানেন আমার অনেক প্রিয় একটা ভূত!
কথাটা শুনে ইমাদ ভাইয়া আহাম্মকের মতো আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করে ফিক করে হেসে দেয়। তাকে এভাবে হাসতে দেখে আমি বোকা বনে গেছি। ফিটফিট করে তার দিকে তাকিয়ে আ”হত স্বরে বললাম,
‘হাসার মতো কি এমন বলছি আমি আজব?’
উনি হাসতে হাসতে বললো,
‘ভূত আবার কারো প্রিয় হয় নাকি,
একটু মনে করার চেষ্টা করে আবারো বললো,
‘ওহহোও ভূত তো পেত্নীদের প্রিয় হয়। তুমি কি তাদের কাতারে পড়ো?’
কথাটা শুনে ফুসে উঠে আমি তাকে আঙ্গুল দিয়ে শাসিয়ে বললাম,
‘শুনুন, সবাই কে নিজের মতো ভাববেন না, দেখতে তো দেখা যায় একদম ভূতেদের রাজার মতো!
‘বুঝতে পারছি তোমাকে ভূতে ধরছে, নাহলে তুমি হঠাৎ ভূত নিয়ে পড়লে কেনো? যাই হোক সেসব বাদ, এখন আমার সময় লাগবে!’
‘মানে?’
‘মানে তুমি এখন তোমার বয়ফ্রেন্ডকে সময় দিবা! যাকে বাংলা ভাষায় প্রেম বলে!’
‘আজব লোক তো আপনি, যাকে বিয়ে করতে না’রা’জ তার সাথে প্রেম করতে আসেন কেনো?’
‘বেশি কথা বললে এই ভরা ক্যান্টিন থেকে তোমাকে কোলে করে নিয়ে যেতে সময় লাগবে না আমার। দিন দিন তোমার সাহস বেড়ে যাচ্ছে। একদম হাতের পাঁচটা আঙ্গুলই ভেঙ্গে দিবো। তোমার সাহস দেখে জাস্ট অবাক হয়ে যাচ্ছি আমি, তুমি এই আবরার ইমাদকে শাসিয়ে কথা বলছো? কিছু বলি না কারনে মাথায় চড়ে বসবে নাকি?’
বেশ ধমকের স্বরে কথা গুলো বললো ইমাদ ভাইয়া! তার হুটহাট রং বদলে আমি ভড়কে যাই, কথা বলার সময় মাথাতেই থাকে না কার সাথে কথা বলছি আসলে। চারপাশে একবার তাকিয়ে দেখি অনেকেই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে! এতো জনের ন’জ’রে আবদ্ধ হয়ে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি আমি। ইমাদ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি সে চোখ মুখ লাল করে তখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে! তাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমি চোখ মুখ কুচকে বললাম,
‘যা করছি বেশ করছি, আপনি আমাকে উল্টা পাল্টা কথা শোনাবেন কেনো? এখন তো শামিয়ে কথা বলছি দরকার পড়লে দু চারটা থা’প্পড় ও মারবো আমি! কোনো সমস্যা আছে আপনার?’
কথাটা শেষ করতে না করতেই আমার গালে ঠাসস করে একটা বসিয়ে দেন উনি, তার আকস্মিক কাজে হতভম্ব হয়ে যাই আমি। পরিস্থিতি বুঝে উঠতেই চোখে জমা হতে থাকে বিন্দু বিন্দু জলের কণা! উনি সেই প্রথম থেকেই আমার গাল কে সরকারী গাল পেয়ে ট্রিটমেন্ট করে যাচ্ছেন, একের পর এক অপমান করে যাচ্ছে। এই সব কিছু আমি গায়ে মাখছি না কেনো ভেবে অবাক হলাম! তার যা খুশি সে তো তা করতে পারে না আমার সাথে তাই না। এসব ভাবতে ভাবতেই ইমাদ ভাইয়ের কর্কশ কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
‘যে কথা গুলো একটু আগে বলছো না সেগুলো যেনো তোমার মুখ থেকে দ্বিতীয় বার আমি না শুনি! সত্যিই তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি, ভুলে গেছো তুমি কার সাথে কথা বলছো?’
আমি চোখের পানি মুছে কোনো মতে আওড়ালাম,
‘আপনি তো অনেক দামী মানুষ, তাহলে আমার মতো একটা মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ের সাথে কথা বলছেন কেনো?’
আমার কথা শুনে উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘বড়দের মুখে মুখে তর্ক করছো লজ্জা করছে না তোমার? সেই প্রথম দিন থেকে তোমার ব্যবহার দেখছি, সত্যি বলতে বাধ্য হচ্ছি তোমার ফ্যামিলি তোমাকে আসলেই শিক্ষা দিতে পারেনি। নাহলে অন্তত এতোটুকু জানতে বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়? শুধু মাত্র তুমি আয়েশার বোন কারনেই না চাওয়া স্বত্বেও তোমার সাথে কথা বলেছিলাম, এখন থেকে সেই ইচ্ছে টাকেও দামাচাপা দিলাম! স্টুপিড!’
‘আপনার কি মনে হয় আপনার সাথে কথা বলতে আমি বসে বসে কান্না করি?’
উনি চোখ গরম করে আমার দিকে একবার তাকিয়ে উঠে চলে যায়। আমি চারদিকে একবার অপ্রস্তুত দৃষ্টি ফেলে উঠে দাড়াই। সবাই কেমন করে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ইমাদ ভাইয়ের আজকের ব্যবহারে মনটায় বিষন্নতায় বিষিয়ে যায়!
চলবে,,,,,,,,,
[এখন থেকে রেগুলার গল্প দিবো প্রমিস! সুন্দর মন্তব্য করবেন সবাই!]