ভালোবাসি প্রেয়সী পর্ব ১৪

0
927

#ভালোবাসি_প্রেয়সী [১৪]
#জান্নাতুল_বিথী

মামার প্রশ্ন শুনে মাথা তুলে ইমাদ ভাইয়ের দিকে তাকাই। সে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মামা বললো,

‘ওর দিকে তাকাচ্ছো কেনো তুমি? আমার দিকে তাকিয়ে উত্তর দাও!’

আমি তার দিক থেকে চোখ সরিয়ে মামার দিকে তাকাই, উপস্থিত সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে নিচের দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত স্বরে বললাম,

‘আমি রাজি, এবং সম্পুর্ন সজ্ঞানে আমি তাকে বিয়ে করতে চাই!’

কথাটা বলে নিজেই লজ্জা পেয়ে যাই। নিজেকে কেমন জানি বেহায়া মনে হচ্ছে। আড় চোখে তার দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে! তাকে হাসতে দেখে অস্বস্তি তে মুড়িয়ে যাই আরো। ইমাদ ভাইয়ের বাবা বললো,

‘দেখলেন বেয়াই, আমি বলেছিলাম না আমার ছেলেকে বিয়ে করতে উপমার কোনো আপত্তিই থাকবে না। থাকার কথাও না!’

বলে হাসলেন তিনি, তাকে হাসতে দেখে পর পর সবাই মুচকি হাসলেন। মামা বললো,

‘উপু বিয়ে করতে চায় জেনে খুশি হলাম। কিন্তু বিয়েটা এখন হচ্ছে না। আপনাদের ছেলে পড়া লেখা শেষ করার পরই আমরা মেয়ে বিয়ে দিবো। আর উঠিয়ে দিবো, তবে আপনারা চাইলে এখন এঙ্গেইজমেন্ট হলে ভালো হয়!’

মামার কথা শুনে সম্মতি জানায় ইমাদ ভাইয়ের পিতা শিপন সাহেব। একে একে সবাই সম্মতি জানাতেই বেঁকে বসে ইমাদ ভাই নিজে। চোখ মুখ কুচকে উনি বললো,

‘মামা বাড়ি আবদার নাকি? আমার আজকেই বউ চাই! আর বিয়ে হলে এখনি হবে। অপেক্ষা করতে পারবো না!’

তার বলা “অপেক্ষা করতে পারবো না” কথাটা শুনে লজ্জায় কান গরম হয়ে ওঠে আমার। নিচের দিকে তাকিয়ে পায়ের নখ দিয়ে মেঝেতে আঁকি বুকি করতে থাকি। অন্যদিকে তার কথা শুনে তার বাবা তেঁতে উঠে বললো,

‘এমন নির্লজ্জের মতো কথা বলছো কেনো? উনি উপমার অভিবাবক, তাই সে যা বলবে তাই হবে!’

‘কেনো বারো বছর তো তার কাছেই ছিলো। তখন কি আর আমি চাইতে গেছি? এখন আমার লাগবে তাই চাইছি!’

ইমাদ ভাইয়ের কথা শুনে চোখ খিচে বন্ধ করে নেই। এতো ল*জ্জা এই জীবনে কোনো দিন মনে হয় পাইনি। লোকটা এমন নি*র্লজ্জের মতো কথা বলছে কেনো? দেখে মনে হচ্ছে কোনো বাচ্চা তার প্রিয় খেলনা কিনে দেওয়ার জন্য বায়না ধরছে। শিপন সাহেব ছেলের কথা শুনে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার ছেলে যে এমন কথা বলতে পারে তা কখনো ভাবেনি তিনি। বারো বছরের দূরত্বে নিজের র*ক্তের ছেলেকে এখন অচেনা মনে হচ্ছে তার নিকট।

ইমাদ সবার মুখের দিকে তাকিয়ে একবার সবাইকে পর্যবেক্ষণ করে নেয়। সবাই চমকে আছে, মনে হচ্ছে এখানে কোনো সার্কাস হচ্ছে। সে কিছুটা নড়ে চড়ে বসে বিরক্তির শ্বাস ফেলে বললো,

‘ড্যাড আমি তোমাদের হবু বউমা কে এখনি বিয়ে করতে চাই। অনেক ছেলে খেলা হয়েছে, একবার যখন সে আমার কাছে ধরা দিয়েছে তাহলে আমি কেনো অপেক্ষা করবো?’

ইমরোজ সাহেব ফোস করে একটা নিশ্বাস ফেলে। ছেলেটা এমন ভাবে কথা বলছে যে তিনি নিজেই কথা বলার খেই হারিয়ে ফেলছেন। তিনি আবারো ইমাদের দিকে তাকায়, দেখে মনে হচ্ছে সে সত্যিই বিয়েটা নিয়ে অনেক সিরিয়াস। তাই তিনি মতামত পরিবর্তন করে বললো,

‘ঠিক আছে, তোমার ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দিলাম। আজকেই বিয়ে হবে, কিন্তু উপমা বিয়ের পরে আমাদের বাড়িতেই থাকবে। ওর অনার্স শেষ হলে তারপর অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে দিবো!’

ইমরোজ সাহেবের কথা শুনে আৎকে উঠে ইমাদ। তার কাছে জিনিসটা এমন মনে হচ্ছে যে বিড়ালের সামনে মাছ রেখে বিড়ালকে পাহারা দিতে বসিয়ে রাখছে। আর বিড়ালটাও নিরুপায় হয়ে পাহারা দিচ্ছে মাছ। সে চোখ মুখ কুচকে বললো,

‘বিয়ের পরে তো বউ আমার স্থায়ী সম্পদ হয়ে যাবে। কেউ নিজের সম্পত্তি অন্যের বাড়িতে ফেলে রাখে নাকি?’

‘ইমাদ, উল্টা পাল্টা কথা বলছো কিন্তু তুমি। কি বলতে চাও পরিষ্কার ভাবে বলো!’

ধ*মকে উঠে শিপন সাহেব, ছেলের উপর বেজায় বিরক্ত তিনি। ছেলের এসব কথা বার্তাও তার কাছে বি*রক্ত লাগছে।

‘সহজ ভাবেই তো বলছি, যদি তোমরা না বুঝো তাহলে আমি কি করবো? পিচ্চু কে আমি আজ বিয়ে করবো এবং সে আমাদের বাড়িতেই থাকবে বিয়ের পরে। পরে অনুষ্ঠান হবে বললেও মেনে নিবো। তবে বউ আমার কাছেই থাকতে হবে!’

ইমরোজ সাহেব বুদ্ধিমান মানুষ। ইমাদের কথায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সে উপমাকে আজকেই বিয়ে করবে। কেউ বাঁধা দিতে গেলেও শুনবে না। কিন্তু তিনি এখন মেয়ে উঠিয়ে দিতে ইচ্ছুক না। মেয়েটা মাত্র আজ জানলো যে তিনি তার মামা। এখন সে মামা মামা করে পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখবে, ভাগ্নীর সাথে তিনিও একটু মন খুলে কথা বলতে পারবে। কিন্তু ইমাদ যদি এভাবে জেদ ধরে বসে থাকে তাহলে সেটা কখনোই সম্ভব না। একমাত্র উপমাই যদি বলে সে এখন বিয়ে করতে ইচ্ছুক নয় তাহলেই ইমাদ কার কিছু বলবে না। তাই তিনি উপমার দিকে তাকিয়ে বললো,

উপু মা, তুমি কি চাও? তুমি যা চাইবে তাই কিন্তু হবে!’

মামার প্রশ্ন শুনে আমি মাথা তুলে তার দিকে তাকাই। সবাই আমার দিকে প্রশ্ন বোধক চাহনীতে তাকিয়ে আছে। ইমাদ আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেনো আজকে বিয়ে না করলে সে মরে যাবে। আমি কি বলবো বলবো করে মিনমিন স্বরে বললাম,

‘তোমরা যা চাও তাই হবে। আমার পার্সোনালি কোনো মতামত নাই!’

বিরক্ত হয় ইমরোজ সাহেব, তিনি অবশ্যই মনে মনেই ভাবছেন তার উত্তর এমন হতে পারে। তারপরো মনের শান্তির জন্যে আবারো প্রশ্ন করছে। উপমার উত্তরে ইমাদ প্রশান্তির হাসি হেসে বললো,

‘তাহলে আর কি লাগে, কাজী ডাকো ড্যাড!’

‘আমার একমাত্র ভাগ্নী সে, তার বিয়ে কি করে এতো সাদা মাটা ভাবে হবে? এক সপ্তাহ পর বিয়ের ডেট দাও তাহলেই হবে!’

‘বিয়ে আজকেই হবে, আমার পড়ালেখা শেষ হলে তখন না হয় অনুষ্ঠান হবে!’

‘ততদিন উপমা কোথায় থাকবে?’

‘আমাদের এ বাড়িতেই থাকবে!’

অবশেষে ইমাদের জেদের কাছে হার মেনে আজকেই বিয়ে হয় আমাদের। এতক্ষন কোনো ভয় না হলেও এখন ভয় হচ্ছে। নতুন জীবন, অপছন্দের মানুষ। সবটা মিলিয়ে আমার মেনে নেওয়া যে সহজ হবে না সেটা ভালোই বুঝতে পারছি। তাছাড়া আজকে ইমাদ ভাইয়ের যে রুপ দেখেছি তাতে মনে আরো বেশি ভয় হচ্ছে! তার কথাতেই বোঝা যাচ্ছে সে আমাকে চায়। খুব করে কাছে চায়, হয়তো ভালোও বাসে!
আয়েশার সাথে এক রুমে বসে আছি, মামা মামী অনেক আগেই চলে গেছে। আয়েশাকে আমি রেখে দিয়েছি। সে আমাকে একটা সুন্দর মেজেন্টা কালারের শাড়ি পরিয়ে হালকা সাজিয়ে দেয়। মন খারাপের কারনে সে আমার সাথে তেমন কোনো কথাই বলছে না। যার সাথে এতোগুলো বছর ছিলাম, এক সাথে খেয়েছি, ঘুমিয়েছি, কতো দুষ্টু মিষ্টির সম্পর্ক ছিলো আমাদের। আজ হঠাৎ করেই বিয়েটা হয়ে যাওয়ায় তার মন খারাপ। অবশ্যই আমার মনটাও যে খুব ভালো তা নয়, নিজের কাছেও প্রচুর খারাপ লাগছে। বুঝতে পারছি না কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক!

‘দেখেছিস উপু,আমি দোয়া করছি কারনেই ইমাদ ভাইয়া তোকে ভালোবেসেছে, তোদের বিয়েও হইছে!’

তার কথা শুনে হাসি পায় আমার, ঠোঁট চেপে হাসি আটকে বললাম,

‘হ্যা হ্যা, তুই চাইছিস কারনেই সবটা হইছে!’

কথা শেষ হতে না হতেই ইমন ভাইয়া হাজির হয়। আয়েশা তার দিকে এগিয়ে যেতেই উনি বললো,

‘উপমা কে ইমাদের রুমে দিয়ে আসো, অনেক রাত হইছে!’

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here