#ভালোবাসি_প্রেয়সী [১২]
#জান্নাতুল_বিথী
ইমরোজ আঙ্কেলের কাছ থেকে সব কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে বসে আছি। উনি আমার মামা হয় কথাটা যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না আমার। ভার্সিটি থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ার সাথে সাথেই তার ডাক পড়ে। আমি আঙ্কেলের কাছে গেলে উনি কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে মম সম্পর্কে সবটা জানায় আমাকে। সেদিন মম মামার কাছে আমাকে দিয়ে চলে গেছিলো, আর ফিরে আসেনি কেনো প্রশ্নটা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। আমি চোখ বন্ধ করে জোরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
‘তুমি আর তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করোনি মামা?’
‘করেছি, কিন্তু খুজে পাইনি! তার বেশ কয়েকদিন পরে শুনেছি তোর বাবা রাদিফ চৌধুরি নাকি তার স্ত্রী কে নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে!’
মামার শেষ কথাটা শুনে আমি বিস্ময়ে হতভাগ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি। বাবা আমাকে ছেড়ে বিদেশে যাবে একথাটা আমি কখনোই বিশ্বাস করবো না। চোখের জল মুচে বললাম,
‘তোমাকে কে বলছে একথা?’
‘আমাকে কেউ বলেনি, তবে আমি শুনেছি!’
‘তুমি আসলে কি বলছো মামা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, একটু খুলে বলো না প্লিজ!’
আমার চোখে জল দেখে মামা একটু নড়েচড়ে বসে বললো,
‘পূর্না যখন তোকে আমার কাছে দিয়েছিলো তখন তোর মাথায় মোটা ব্যান্ডেজ করা ছিলো! আমি পূর্নাকে সেটা নিয়ে প্রশ্ন করলে সে বললো তার স্বামীর অনেক শ”ত্রু আর সেই শ”ত্রু পক্ষের কেউই নাকি তোকে আ”ঘা”ত করছে! এখন তাদের থেকে বাচাতেই তোকে আমার কাছে নিরাপদে রেখে যেতে চায়! আমি পূর্নাকে আমার সাথে আসতে বললে সে বলে সবার আগে তার মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তার দায়িত্ব তাই সে সেটাই করছে। আর এখন দ্বিতীয় দায়িত্ব হচ্ছে তার স্বামীর বি”পদে তার পাশে থাকা! আমি তাকে আটকাতে চাইলে সে না শুনে চলে যায়! তোর বাবা রাদিফ চৌধুরি ছিলো একজন বিজ্ঞানী। কোনো একটা আবিষ্কারের লক্ষেই নাকি সে পূর্নাকে নিয়ে বিদেশে চলে যায়! এমনটাই জানায় সাংবাদিক রা!’
‘তারপর তারা আর দেশে আসেনি?’
‘জানিনা, এরপর না তো তোর বাবা মা আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে আর না তো সাংবাদিক রা অন্যকিছু বলেছে!’
দু’হাতে মুখ ঢেকে বসে আছি আমি। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। কিছুতেই মানতে পারছি না বাবা আর মম বেচে থাকা সত্তেও আমার সাথে একটা বার দেখা করেনি! মামা কিছুক্ষণ নিরবে আমার কান্না দেখে, তারপর আমার পাশে এসে বসে মাথায় হাত রেখে বললো,
‘আয়েশার চাচাতো দেবর মনে হয় তোর সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে। সে জানতে পারে তোর মম আর বাবা কোথায় আছে এখন?’
মামার এরুপ কথায় হঠাৎ করে আমি চমকে উঠি, মনে পড়ে ইমাদ ভাইয়ের কথা। উনি আমাকে পিচ্চু বলে ডাকে। যে নামটা মম আর বাবা ছাড়া কেউই জানতো না। তাহলে সেটা সে জানলো কি করে? সে হঠাৎ আমার পরিবার আর বাবা সম্পর্কে জানতে এতো উতলা হয়ে উঠেছিলো কেনো? সব গুলো প্রশ্ন এক সাথে মাথায় ঝট পাকাতেই আমি চট করে মামার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম,
‘তোমার কেনো মনে হইছে ইমাদ ভাই এসব সম্পর্কে জানে?’
‘ছেলেটা সেদিন আমার অফিসে এসে তোর সম্পর্কে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করে। আমি তাকে কেনো জিজ্ঞেস করছে সে কারন জানতে চাইলে ছেলেটা বলে সে তার হবু বউ সম্পর্কে সব কিছু জানতেই পারে এটাই স্বাভাবিক! তাছাড়া ছেলেটা তোর পিচ্চু নামটাও জানে। যেটা বাহিরের কেউই জানেনা!’
“হবু বউ” শব্দ দুইটা বারবার কানে বাজতে থাকে আমার, আমি তার হবু বউ? কিভাবে? আমার সাথে প্রথম থেকে এতো খারাপ ব্যবহার করে এখন আবার হবু বউ বলে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে কেনো মামার কাছে? আমি মামার দিকে এক পলক তাকিয়ে বললাম,
‘আচ্ছা আমি তার সাথে দেখা করে আসছি!’
‘এসময় দেখা করতে যাওয়ার দরকার নেই উপু! পরে কথা বলে নিস মা!’
‘না মামা, আমি এ সম্পর্কে সবটা না শোনা অব্দি আমার শান্তি হবে না! আমি একটু আসছি!’
‘এখুনি যাওয়ার দরকার নেই মা, মাত্র বাসায় এসেছিস তুই।’
‘কিছু হবে না!’
আমি রুমে ঢুকে ফোনটা হাতে নিয়ে বাসার ড্রেস পরেই বাসা থেকে বের হই! ইমাদ ভাইকে কল করলে দেখা যায় রিং হতে হতে কেটে যায়। কিন্তু তার ফোন ধরার কোনো নাম গন্ধই নাই। এক বার দু’বার তিন বার তাকে ফোন ধরতে না দেখে আমি থমকে দাড়াই। তার সাথে যোগাযোগ না করে কিভাবে তার সাথে দেখা করবো? অতঃপর আয়েশাকে ফোন করে জেনে নেই ইমন ভাইয়া কোথায় আছে? আমার মন বলছিলো ইমন ভাইয়ার সাথেই সে থাকতে পারে।
.
‘স্বপ্ননিবাস বাড়িতে আগে রায়ান চৌধুরির ভাই রাদিফ চৌধুরি থাকতো। বাড়িটা রাদিফ চৌধুরিরই। লোক মুখে শোনা যায় রাদিফ চৌধুরি নাকি তার বউকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে রায়ান চৌধুরি সে বাড়িতে উঠে। এমনিতে নাকি দুই ভাইয়ের সাপে নেউলে সম্পর্ক!’
কথা গুলো শেষ করে ফোস করে একটা নিশ্বাস ফেলে ইমন। তার কথা শুনে ইমাদ ভ্রু কুচকে বললো,
‘বাড়ি ছেড়ে সে কোথায় যায়? তাকে নাকি খু”ন করা হইছে? তাহলে সে বাড়ি ছেড়ে কোথায় যাবে? তাকে তো উপরেই পাঠিয়ে দেওয়া হইছে!’
‘আমার বাবা সম্পর্কে কতোটুকু জানেন আপনি?’
হঠাৎ এমন কথায় ইমন ইমাদ দুজনেই চমকে উঠে! তার চাইতেও বেশি অবাক হয় পেছনে উপমাকে দেখে। ইমাদ চোখ কচলে আবারো তার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘তুমি এখানে কি করছো?’
‘প্রশ্নটা আগে আমি করছি!’
ইমাদ এক পলক ইমনের দিকে তাকাতেই সে সেখান থেকে প্রস্থান করতে নিলে আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘কোথাও যেতে পারবেন না আপনারা কেউ। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দেন তারপর যেদিকে ইচ্ছে সেদিকে যাবেন!’
উপমার রাগী স্বর শুনে ভড়কে যায় ইমাদ, মেয়ে অনেক বেশিই রেগে আছে বুঝতে পেরে মেকী হেসে বললো,
‘ইমনকে এসবের মাঝে টানছো কেনো? সে এসব ব্যাপারে কিছুই জানেনা!’
‘কতোটুকু জানে সেটা আমার বুঝা হয়ে গেছে। বলুন আপনি বাবাকে কিভাবে ছেনেন?’
ইমন ভাইয়া আত্ম সমপর্নের মতো দুই হাত উপরে উঠিয়ে বললো,
‘আমি এসবের কিছু জানিনা, আমি বরং যাই কেমন সিস্টার?’
আমি তার দিকে না তাকিয়ে তখনো এক দৃষ্টিতে ইমাদ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি! পেছন থেকে ইমন ভাইয়া চলে যেতেই উনি গলা পরিষ্কার করে বললো,
‘তোমার বাবা সম্পর্কে তোমার চাইতেও বেশি কিছু জানিনা আমি। শুধু এইটুকু জানার ছিলো তিনি কি কাজ করতেন?’
‘বিজ্ঞানী ছিলেন উনি! এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দেন! আপনি আমাকে ছিনেন কি করে?’
‘সেটা জানিনা পিচ্চু, থ্যাংকইউ অনেক বড় একটা তথ্য দিলে তুমি আমাকে!’
‘কিসের তথ্য কিসের কি হু? আপনি কেনো বলছেন আমার বাবা খু”ন হইছে? সে খু”ন হয়নি, এখন সে এবরোড আছে!’
চেঁচিয়ে কথাটা বললাম তাকে, বাবা বেঁচে নেই বা তাকে খু”ন করা হইছে কথাটা শুনলেও বুক কাপে আমার। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ে! ইমাদ ভাই হয়তো হঠাৎ এমন কথা শুনে কিছুটা হকচকিয়ে যায়। আমাকে কাঁদতে দেখে সে এক পা এগিয়ে এসে বললো,
‘দেখো পিচ্চু, আমি এখনো শিওর জানিনা তোমার বাবা খু”ন হইছে নাকি এবরোড আছে। সব কিছুই এখনো অনেকটা ধোঁয়াশার মাঝে আছে। তুমি কিছু মনে করো না জান!’
‘কিসের জান হ্যা? আমি আপনার কোন জনমের জান হই? আর আমাদের বিয়ে কোনদিন ঠিক হইছে? আমাকে নিজের হবু বউ বলছেন কেনো মামার কাছে?’
‘হবু বউকে হবু বউ বলবো না তো কি বলবো? তুমি বলে দাও কি বলবো!’
চলবে,,,,,,,,,