ভালোবাসা এমনও হয় পর্ব-৪

0
1093

#ভালোবাসা_এমনও_হয়
#Writer_Nusrat_Jahan[লেখিকার আসল নাম]
#Part_04

আয়ানঃ কি বলছিস এসব।?কে খুনি।।নেশা কাকে খুন করেছে।

ইশানঃ আমার বাবাকে খুন করেছে নেশা বুঝেছিস।।আমার বাবাকে।।

আয়ানঃ কিন্তু আঙ্কেল তো কার এক্সিডেন্টে মারা গেছিলো তাই নাহ?

ইশানঃ হ্যা।।নেশাকে বাঁচাতে গিয়ে আমার বাবা নিজে গাড়ির নিচে পড়ে.য।।তো তুই বল দোষ টা কার।।অব্যশই নেশার।।যদি ও রাস্তার মাঝখানে গিয়ে না দাড়িয়ে থাকতো তাহলে এই এক্সিডেন্ট টা হতো নাহ।।

আয়ানঃ কিন্তু ইশান এতে নেশার তো কোন দোষ নেই।।ও তো ইচ্ছে করে এইসব করেনি।

ইশানঃ ইচ্ছে করেই করেছে।।ও সব ইচ্ছে করে করেছে।।ওর কারনে আমার বাবা-মার থেকে দুরে থেকেছি আমি ছোটবেলায়।। আর যখন বড় হলাম তখন ওর কারনেই আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি।।এতে আমার কি দোষ ছিল আয়ান তুই বল।ওর কারনে আমি আমার বাবাকে হারালাম।।আমার শৈশব একা কাটালাম।

আয়ানঃ দেখ যা হয়েছে তাতে নেশার কোন দোষ ছিলো নাহ।।তুই ছোট থেকেই নেশাকে সহ্য করতে পারতি নাহ তাই তোর বাবা-মা তোকে বিদেশ পাঠিয়েছিলো পড়ালেখার জন্য।।আর আঙ্কেলের এক্সিডেন্ট টাও যাস্ট একটা দুর্ঘটনা।। নেশাকে বাঁচাতে গিয়ে আঙ্কেল মারা গেছে।।নেশার জায়গায় যদি তুই থাকতি বা অন্যকোনো বাচ্চা থাকতো তাহলেও আঙ্কেল তাকে বাচাতে যেত।।আর তাছাড়াও হয়তো আল্লাহ আঙ্কেল এর এইভাবেই মৃত্যু লিখে রেখেছিলো।।তাই বলে তুই কি নেশাকে দোষ দিবি।

ইশানঃ কিন্তু এতে আমার কি দোষ ছিলো আয়ান।।আমি কেন সব হারালাম।।

আয়ানঃ হয়তো এইটা তোর ভাগ্যে ছিলো।।আর দেখ ইশান নেশা ছোট থেকেই এতিম।তোর পরিবারে আসার পর ও আপন কিছু লোক পেয়েছে।।যদি তুই ওর আপন হয়ে এমন করিস তাহলে ওর তো খারাপ লাগবে তাই নাহ।আর ওর সাথে তোর নিজের পরিবারের মানুষরাও যুক্ত আছে।তুই যদি নেশার সাথে খারাপ বিহেভ করিস তাহলে তোর মা, খালামনি ও কষ্ট পাবে।।আর তুই তো জানিস নেশা বরাবরই চুপচাপ। তোর অপমানে ও যে কতোটা কষ্ট পায় তা তো তুই জানিস।। তবুও ও কখনো মুখ খুলে কিছু বলে নাহ।।সব চুপচাপ সহ্য করে।।কিন্তু পার্টির দিন তুই একটু বেশিই……

ইশানঃ আমি ওই ব্যাপারে কথা বলতে চাই নাহ।।তুই এখন যা।

আয়ানঃওকে তোর যা ইচ্ছা।।আমার কথা গুলো একটু ভেবে দেখিস।।।

আয়ান বেরিয়ে গেল রুম থেকে।।








দুপুরে

আয়ান ইশানকে খাওয়ার জন্য ডাকতে গেল।গিয়ে দেখলো ইশান রেডি হচ্ছে।

আয়ানঃ কিরে কোথাও যাবি।

ইশানঃ হ্যা

আয়ানঃ এখন কোথায় যাবি।। আগে খেয়ে নে।

ইশানঃ আই এম গুয়িং টু হোম?

আয়ানঃ ?????।তুই বাড়ি যাচ্ছিস!!!

ইশানঃ হুম।।আসলে তোর কথাগুলো ভেবে দেখলাম।সত্যিই নেশার কোন দোষ নেই যা হয়েছে সব হয়তো আমাদের কপালে লেখা ছিলো তাই হয়েছে।।আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি।।

আয়ানঃ তাহলে তো ভালোই। কিন্তু এখনই চলে যাবি।।দুপুরে খেয়ে যা

ইশানঃ নাহ এখন খাবো নাহ।।একদম বাড়িতে গিয়ে খাবো।।কবে থেকে বাড়ি যাই নাহ।।আমি যাই। টাটা।।কাল কলেজে দেখা হবে

আয়ানঃ আচ্ছা ঠিকাছে।।

ইশান বেরিয়ে গেল।।

আয়ানঃ এই ছেলেকে সত্যি বুঝার উপায় নেই।।হঠাৎ করে সব পাল্টে গেল।।থাক যাই হোক নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে এটাই অনেক।









বাড়িতে

কলিং বেলের আওয়াজ শুনে নেশা এসে দরজা খুলে দিলো।।আর দরজা খুলেই অবাক।।হা করে তাকিয়ে আছে।

ইশানঃ কি হলো তাকিয়ে আছিস কেন।।এই কয়দিনে কি আমার চেহারা ভুলে গেছিস, নাকি বাড়িতে ঢুকতে দিবি নাহ কোনটা?,?

নেশাঃ এমা ঢুকতে কেন দেব নাহ।।আসো আসো।।(দরজা থেকে সরে দাড়িয়ে)

মিনাঃ কে এসেছে রে নেশা।

নেশাঃ ভাইয়া এসেছে?

মিনাঃ সেকিরে তাই নাকি।।তা কোথায় এখন?

নেশাঃ রুমে গেল দেখলাম।।

মিনাঃ আচ্ছা আমি দেখছি।

মিনা রুমে যেতে নিলো ইশান এসে হাজির হলো।।জামা পাল্টে থ্রি কোয়ার্টার একটা পেন্ট আর সাথে একটা গেঞ্জি পড়েছে।চুল গুলো ভিজা।। হয়তো মাত্র ফ্রেশ হয়ে আসলো।।নেশা একবার তাকিয়ে নিচের দিকে তাকালো।।

নেশাঃ নেশা কন্ট্রোল।। ও তোর ভাই।।এইভাবে তাকাতে নেই।।(মনে মনে)

মিনাঃ তা এতোদিনে বাড়ির কথা মনে পড়লো নবাবের

ইশানঃ সরি মামনি।।আর এমন হবে নাহ।।আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি?

মিনাঃ সরি আমাকে বলে কি হবে।।সরি তো নেশাকে বলবি।কতো অন্যায় করেছিস তার সাথে তুই।

নেশাঃ হায় হায় খালামনি এগুলা কি বলছে।।যে কিনা আমাকে সহ্যই করতে পারে নাহ সে কিনা আবার সরি বলবে।।(বিরবির করে)

মিনাঃ তুই কি কিছু বললি নেশা?

নেশাঃ হ্যাঁ না মানে নাহ।।মানে হ্যাঁ নাহ মানে নাহ?

মিনাঃ কিসব বলছিস তুই হ্যাঁ না হ্যাঁ না?

নেশাঃ নাহ কিছু নাহ?

মিনাঃ আচ্ছা তো ইশান চুপ করে আছিস কেন।বল সরি

নেশাঃ এই রে নেশা বকা খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে যা??

ইশানঃ আই এম সর নেশা।।আমি সত্যি অনেক ভুল করেছি আমায় মাফ করে দিস।।

নেশাঃ ????

ইশানঃ কি হলো এই ভাবে তাকিয়ে আছিস কেন।।আচ্ছা এই যে কান ধরলাম।।সরি।।আর ভুল হবে নাহ(কান ধরে)

নেশা তো যাস্ট শক।।ইশান কিনা তাকে কান ধরে সরি বলছে।।।।নেশার একটা স্বভাব আছে।।বেশি শকে থাকলে অজ্ঞান হয়ে যায়।।এখনো তার ব্যতিক্রম হলো নাহ।

অজ্ঞান হয়ে গেল।

ইশান ধরে ফেললো।

মিনাঃ আরে মেয়েটার আবার কি হলো

ইশানঃ বুঝতে পারছো নাহ অবাকের ঠেলায় অজ্ঞান হয়ে গেছে?

মিনাঃ এই মেয়েটা আসলেই????।।এখনো শক পেলে জ্ঞান হারায়।

ইশান নেশাকে কোলে তুলে নিয়ে খাটে শুইয়ে দিলো।।তারপর পানির ছিটা দিয়ে নেশার জ্ঞান ফিরালো।

নেশাঃ ইশান ভাইয়া তুমি এখানে?

ইশানঃ তুই যেখানে আমি সেখানে?

নেশাঃ ???

মিনাঃ উফফ ইশান কেন মেয়েটাকে জ্বালাচ্ছিস
মেয়েটা যে তোর এই রকম বিহেবে অবাক হচ্ছে তা বুঝছিস নাহ

ইশানঃ কিরে তাই নাকি??

নেশাঃ না মানে আমি আসলে

ইশানঃ থাক তোর আর পটরপটর করা লাগবে নাহ।।মামনি আমায় খেতে দাও। খুদা লেগেছে।

মিনাঃ ওহহ আয় তাহলে আমি খাবার বেরে দিচ্ছি।।
মিনা উঠে চলে গেল।

ইশান হুট করে নেশার কপালে একটা ডিপলি কিস করে দিলো

নেশাঃ আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া?????

ইশান মুখ চেপে ধরলো।।

ইশানঃ এই মেয়ে চুপ,?।।এতো চিৎকারের কি আছে।।ইচ্ছে হয়েছে দিয়েছি।।চুপচাপ থাক।ওকে।আর কি ভেবেছিস আমি বুঝি কিছু বুঝি নাহ।ওই সময় এমন ঢেপঢেপ করে তাকিয়ে ছিলিস কেন হুম ??

নেশাঃ নাহ মানে আমি তো……

ইশানঃ থাক আর কিছু বলতে হবে নাহ।।চুপচাপ শুয়ে থাক।

ইশান উঠে চলে গেল।।
নেশা থ মেরে শুয়ে আছে।।একটু আগে কি হয়ে গেল ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করছে সে।।ইশান ভাইয়া এতো তাড়াতাড়ি চ্যাঞ্জ হয়ে গেল এইটা ভাবতেই পারছে না।।






খাওয়ার টেবিলে

ইশান চুপচাপ খাচ্ছে আর মিনা খাবার এগিয়ে দিচ্ছে।।

নেশা সেখানে আসলো।

মিনাঃ ওহহ তুই এসেছিস।।তুই ও বসে পর

নেশাঃ আমি পরে খাবো খালামনি

মিনাঃ সবার তো খাওয়া শেষ। এখনই বসে পর

নেশাঃ নাহ আরেকটু পর

ইশানঃ চুপচাপ বস খেতে।।কয়টা বাজে খেয়াল আছে এখনো খায়নি।।এই জন্যই তো এমন শুকনা লাঠি হয়ে আছে

নেশাঃ আমি শুকনা লাঠি?

ইশানঃ তা নয়তো কি।।দুর থেকে দেখলে বুঝাই যায় নাহ তুই মানুষ নাকি কেউ একটা বাঁশ মাটিতে পুতে খাড়া করে রেখেছে?

নেশাঃ একটু বেশি হয়ে গেল নাহ?

ইশানঃ হুহ চুপচাপ খেতে বস।না হলে মাইর একটাও মাটিতে পরবে নাহ।

নেশা ইশানের ঝাড়ি খেয়ে খেতে বসে পড়লো।

একটুপর-

ইশানঃ তা নেশা তোর রেসাল্ট তো বেরিয়ে গেছে।।তা কোন কলেজে পড়বি ঠিক করেছিস?

নেশাঃ আসলে ভাইয়া…

ইশানঃ একটা কাজ কর আমাদের কলেজেই ভর্তি হয়ে যা।।একসাথে যাওয়া আসা করা যাবে।।আমার চিনাজানাও অনেকে।।তোর ও সুবিধা হবে।কি মামনি ঠিক বলছি নাহ?

মিনাঃ হ্যাঁ ঠিকই তো বলছে ইশান।।নেশা তোর কি অন্য কোথাও পড়ার ইচ্ছা আছে?

নেশাঃ নাহ খালামনি তোমরা যেখানে বলো সেখানেই পড়বো।

মিনাঃ তাহলে তুই বরং ইশানের কলেজেই ভর্তি হোস।

নেশাঃ হুম??

 

 

রাতে নেশা শুয়ে শুয়ে ভাবছে

নেশাঃ আচ্ছা ইশান ভাইয়া কি সত্যি ভালো হয়ে গেল।।আর কি আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করবে নাহ।।আমি তো ভেবেছিলাম স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশ চলে যাবো তাহলে ভাইয়া আমায় দেখতে পারবে নাহ। আর ভাইয়া আমার উপর রাগও করবে নাহ।।কিন্তু এখন কি করবো
ওর কলেজেই ভর্তি হবো?
ভাইয়া তো মনে হয় ভালো হয়ে গেছে।।তাহলে কি ??





সকালে

আয়ান দৌড়ে ইশানদের বাড়ি আসলো।

মিনাঃ আরে আয়ান তুমি এখানে

আয়ানঃ আন্টি ইশান কোথায়(হাপাতে হাপাতে)

মিনাঃ ও তো ঘরে।। কিন্তু কি হয়েছে।।তুমি এমন অস্থির হয়ে আছো কেন?

আয়ানঃ কিছু নাহ আন্টি।।আমি ইশানের কাছে যাচ্ছি।

আয়ান তাড়াহুড়ো করে ইশানের রুমে গেল।।গিয়ে দেখলো ইশান রেডি হচ্ছে।।আয়ানকে দেখে

ইশানঃ কিরে তুই এখানে?আমি তো কলেজে যাচ্ছিলামই

আয়ানঃ পার্টির পর রাতে তুই কোথায় ছিলি

ইশানঃ কেন?

আয়ানঃ তুই বল।।রাফি আর তাদের দলের সবাইকে তুই মেরেছিস কেন।।।পার্টির দিন রাতেই নাকি তুই ওদের মেরে আবার হসপিটালে ভর্তি করে এসেছিস

ইশানঃ হ্যা তো???

আয়ানঃ তো মানে তুই ওদের কেন মেরেছিস?

ইশান মুচকি হেসে আবার রেডি হতে লাগলো

আয়ানঃ কি হলো বল।।চুপ করে আছিস কেন?

ইশানঃ শুনতে চাস?

আয়ানঃ হ্যাঁ

ইশান আয়ানের দুই কাধে নিজের দুইহাত রাখলো

আয়ানঃ ??

ইশানঃ নেশাকে অপমানও আমি করবো ভালোও আমি বাসবো।।অন্যকেউ তাকে অপমান কেন ওর দিকে খারাপ চোখে তাকালেও তার চোখ তুলে ফেলবো।। বুঝলি মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড?

আয়ানঃ মানে???

ইশান বিনিময়ে শুধু একটা বাঁকা হাসি দিলো

এইদিকে কথাগুলো শুনে নেশার মাথা ভনভন করে ঘুরছে।।
আয়ানকে সরবত দিতে এসেছিলো।দরজার কাছে আসতেই কথা গুলো শুনতে পায় সে।ইশানে কেন এমন করলো তাই নেশার মাথায় ঢুকছে নাহ।।নিজে তাদের সাথে মিলে অপমান করলো এখন আবার নিজেই তাদের মেরেছে।।তা হলে কি ইশান ভাইয়া আমাকে ???

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here