#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৪১
দুপুর দুটা বাজে। সুরভী বেগম আর রুদ্রর দাদি ছাড়া বাড়িতে কেউ নেই ৷ ভার্সিটি থেকে প্রায়ই হৈমী এ বাড়ি এসে ঘুরে যায়৷ তাঁর খুব ইচ্ছে হয় এক সঙ্গে সবাই মিলে থাকতে। কিন্তু কিছু সময়ের জন্য এসেই দাদির নানারকম খারাপ ব্যবহারের সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে। বৃদ্ধ মানুষ তাছাড়া তাঁর শশুড় মশাই মাকে খুব মানে। তাঁর মা হাজারটা অন্যায় করলেও তিনি হাসি মুখে মেনে নেন সবটা। তাই দাদির এমন আচরনের জন্য কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনা বরং মুখ বুজে সহ্য করে নেয় সবাই সবটা। হৈমী খুব ভালো বুঝতে পারে এখন কেনো রুদ্র পরিবার থেকে আলাদা থাকতেই বেশী পছন্দ করে।
হৈমী গিয়ে সুরভী বেগমের কাছে যখন শুনলো নয়না নেই মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো তাঁর। আজ নয়নও ভার্সিটিতে যায়নি এখন বুঝলো নয়ন কেনো যায়নি ভার্সিটিতে। মনে মনে কয়টা বকা দিলো নয়নকে সে৷
ক্লান্ত লাগছে ভীষণ তাই সোফায় বসে কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে ওঠতে যাবে তখনি সুরভী বেগম এক গ্লাস লেবুর সরবত বানিয়ে হৈমীকে দিলো আর বললো,
—- নাও মা এটা খেয়ে নাও৷ ভালো লাগবে। ওদিকের কি খবর কাজ ঠিক ভাবে হচ্ছে তো?
—- আহা থ্যাংকিউ থ্যাংকিউ গলাটা ভেজানো খুব জরুরি ছিলো এখন। বলেই এক নিঃশ্বাসে খেয়ে নিলো। গ্লাসটা ট্রি টেবিলে রেখে সুরভী বেগমের দিকে চেয়ে বললো,
—- হ্যাঁ সব ঠিক আছে। আমাকে তো তোমার ছেলে ভার্সিটি ছাড়া বের হতেই দেয় না। তাই আমি অতো খোঁজ নিতে পারিনা। কিন্তু আমি ছাদ থেকে সবটা দেখি। তুমি চলো না যাই তুমি নিজে গিয়ে দেখে এসো সবটা। জানো আমার আমগাছগুলো কেটে ফেলেছে তোমার ছেলে আর আমার স্বাদের বেল গাছ সেটাও কেটে ফেলেছে। তুমি ভাবো লোকটা কেমন ধরিবাজ বেলের সরবত পছন্দ করেনা বলে গাছটাই কেটে ফেললো। কেনো রে আমি না হয় ভালোবেসে একটু বেলের সরবতই খাওয়াতাম এতে ওনার কি এমন ক্ষতি হতো? উপকারই তো হতো বলো? এমন ভাব করে যেনো ওনাকে আমি করলার সাথে নিমপাতার বাটা মিক্সড করে সরবত খাওয়াছি।
সুরভী বেগম হৈমীর মুখোমুখি সোফায় বসে হৈমীর কথা শুনছিলেন৷ হৈমীর কথা শেষ হতেই ঘর কাঁপিয়ে হেসে ওঠলেন তিনি।
—- আহারে কতো পীরিতের আলাপ করতাছে। বেশরমের মতো আবার হেহে করে হাসতেছে। বলি বুদ্ধিশুদ্ধি কবে হবে শুনি। পেটের ছেলেটারে যে বিয়ে করতে না করতেই পর করে দিলো৷ কেড়ে নিলো সেই জ্ঞান কি আছে?
হৈমী তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো দাদির দিকে তারপর আবার সুরভী বেগমের দিকে চেয়ে বললো,
—- আমি আজই মা কে আমার সঙ্গে নিয়ে যাবো। ওনার ছেলের বাড়ি ওনার ছেলের ঘরে ওনি থাকবেন। কেউ ওনার ছেলেকে কেড়ে নেয়নি। আপনি শুধু শুধু কুটনামি করতে আসবেন না। বাড়িটা কমপ্লিট হওয়ার পর ওনিই বলতেন কথাটা কিন্তু আমি আজি নিয়ে যাবো মা কে।
—- আহ হৈমী ওনার কথা ধরোনা তো। ওনার যা মন চায় বলুক।
দাদি বড় বড় করে চেয়ে এসে সোফায় বসলো। হৈমীর দিকে বাঁকা চোখে চেয়ে বললো,
—- ভালোই হইছে জামাই নিয়া একা একা থাকো আর সব একাই খাও। খাটা মেয়াগো মোটা হইলে এমন গোলই দেখা যায়৷
দাদির কথা শুনে হৈমী বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। ঠোঁট ফুলিয়ে সুরভী বেগমের দিকে চেয়ে বললো,
—- মা আমি কি খুব মোটা হয়ে গেছি? আমাকে কি খুব বাজে দেখা যায় এখন।
সুরভী বেগম মুচকি হেসে বললেন,
—- না মা এখনই তোমাকে বউ বউ লাগে। বিয়ের পর এইটুকু মোটা হওয়া স্বাভাবিক ওনার কথা ধরে মন খারাপ করোনা তো।
হৈমী চালতার আচার বের করে সুরভী বেগম কে দিয়ে বললেন,
—- তুমি আমি আর দাদি মিলে এটা শেষ করি আসো।
সুরভী বেগম হেসে একটু নিয়ে বললেন,
—- আচ্ছা তুমি তাহলে বসো আমি খাবার বাড়ি দুপুরে খেয়ে যাবে।
হৈমী দাদিকে চালতা দিলে সে নিলো না। হৈমীও আর সাদাসাদি করলো না নিজের মতো বসে চালতা খেতে লাগলো। দাদি তখন তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললেন,
—- ঘটনা কি বলতো? বউ মা সরবত দিলো আবার আচার গিলতাছো? কিছু হইছে নাকি?
—- কি হবে? কিছুই তো হয়নাই নয়না আপুর জন্য নিয়ে এসেছিলাম আপু নাই তাই আমিই খাচ্ছি। আপনি শুধু শুধু নজর দেবেন না৷ আমার পেট খারাপ হলে আমার জামাই আপনার চোখ গেলে দেবে।
—- কিহ! এই মেয়ে লজ্জা করে না এভাবে কথা বলতে? একেতো জামাই নিয়ে ভাগ হয়ে গেছো তারওপর মুখের ওপর কথা বলো। সভ্যতা ভদ্রতা সব গিলে খাইছো নাকি?
—- আধা ঘন্টাও হয়নি আমি আসছি এখানে। তাই যে হারে কথা শোনাচ্ছেন সারাজীবন থাকলে তো আমার জীবন ত্যাজপাতা করে দিতেন। আমার জামাই আবার অতি বুদ্ধিমান কিনা তাই তাঁর আদরের মিষ্টি বউ যাতে আপনার মতো মহিলার এতো তিতা তিতা কথা শুনে তিতা হয়ে না যায় তাই আগেই সচেতন হয়ে ভাগ হয়ে গেছে। হাজার হোক প্রতিটি পুরুষই আশা করে যাতে তাঁর বউ অত্যাধিক পরিমাণে মিষ্টি হয়।
—- পড়াশোনা করে এসব শিখতাছো? বাড়ির মুরুব্বিদের এইভাবে অসম্মান করার জন্য লেখা-পড়া শিখছো? মুখে একেবারে খই ফুটে৷ কই আমার রাদিফের বউ তো প্রয়োজন ছাড়া একটা বার্তি কথাও কোনদিন বলেনা।
—- আহারে দাদি আমিতো আপনার রাদিফের বউ না। আমি হলাম আপনার ছোট নাতি নিম গাছের বউ নিমপাতা। বলেই খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
—- এমন ঠোঁট কাটা মেয়ে জীবনে দেখিনাই। এই মেয়ে নাকি আবার সংসার করবো। সংসার লাটে ওঠাবো এই মেয়ে৷ ঢ্যাং ঢ্যাং করে প্রতিদিন কলেজ যায়। কলেজ থিকা আবার দুহাত ভর্তি যতোসব আবর্জনা কিনা নিয়া আসে। মাংনা টাকা পাইলে যা হয়৷ রেদুর ছোট পোলা একেবারে ধ্বংস হইয়া গেলো। কোথায় বিয়ে করছে বউ দিয়া সংসার করাবো বাচ্চা গাচ্চা জন্ম দেওয়াবো তা না৷ বাড়ি থিকা আলাদা হয়ে বড় বড় বিল্ডিং ওঠাইতাছে। খ্যাক খ্যাক করতে করতে চলে গেলো দাদি।
—- হৈমী মুখ ভেঙচি দিয়ে আচার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। দাদির কথা সে গায়ে মাখায় না৷ এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আরেককান দিয়ে বের করে দেয়৷ এই মহিলাকে বিন্দু পরিমাণ দামও সে দেয়না।
এতোদিনের রুদ্রর প্রফেশন বিষয়ে সকলেই অবগত হয়েছে। তাঁর স্বামীর মাংনা টাকা না কিসের টাকা তা সবাই ভালো করেই জানে ভেবেই আরো দুবার ভেঙচি কাটলো সে।
.
সকাল থেকে দুপুর অবদি চারবার বমি হয়েছে হৈমীর। দুদিন আগেই মাহের আর সূচনার বিয়ে হয়ে গেছে। মাহেরদের বাড়িতে বউ ভাতের অনুষ্ঠান ছিলো আজ শরীর খারাপ লাগা নিয়েও গিয়েছিলো। এতো মানুষের ভীড়ে প্রচন্ড মাথা ঘুরছিলো বলে রুদ্র কে বলে রুদ্র আর দেরী করেনা। তখনি নিয়ে চলে আসে বাড়ি৷ রুদ্র খেয়াল করছে হৈমীর চঞ্চলতা কমে গেছে। অন্য কোন সময় হলে বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে তাঁর উৎসাহের শেষ থাকতো না। অথচ এ কদিন তাঁকে তেমন উৎসাহিত দেখা যায়নি। লাফালাফিও বেশ কমে গেছে। শরীর স্বাস্থ্য আগের থেকে ভালো হলেও একদিন ধরে লক্ষ করছে চোখের নীচে কালি পড়ে গেছে। খাওয়া-দাওয়াও কমিয়ে দিয়েছে কেমন, কথাবার্তাও কম বলে। রাতে ঠিকভাবে ঘুমাতেও পারেনা৷ যেনো চরম অস্বস্তি তে ভুগছে সে। বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো রুদ্র। ড.সুবর্নাকে সব জানাতেই সে বললো তাঁর বাড়ি চলে যেতে। সন্ধ্যার পরই হৈমীকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো সুবর্নার বাসার উদ্দেশ্যে।
.
ড্রাইভ করছে রুদ্র। হৈমী তাঁর কাঁধে মাথা রেখে চোখ বুজে শুয়ে আছে। রুদ্র বললো,
—- যা যা সমস্যা হয় সবটা বলবে কোন কিছু বাদ রাখবেনা৷
—- আবার ইনজেকশন দেবেনা তো?
—- সমস্যা না থাকলে দেবেনা।
—- যদি সমস্যা থাকে? চোখ খুলে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো হৈমী।
রুদ্র চিন্তিত মুখে হৈমীর দিকে চেয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—- ইনশাআল্লাহ কোন সমস্যা হবেনা। আর হলেও তোমার কোন ক্ষতি হবে না আমি আছিতো।
হৈমী ওভাবেই জরিয়ে ধরলো রুদ্র কে। বললো,
—- আমার খুব ভয় করছে।
—- ভয় নেই। নিশ্চিন্তে থাকো তুমি।
.
হৈমীর থেকে সব সমস্যা শুনে সুবর্ণা একটি প্র্যাগ্নেন্সি কীট হাতে ধরিয়ে দিলো। সুবর্ণার কথা অনুযায়ী পরীক্ষা করলে ফলাফল পজেটিভ আসে। সুবর্ণা রুদ্রর দিকে চেয়ে বলে,
—- এতো তারাতাড়ি বাচ্চা নিচ্ছিস? নাকি এক্সিডেন্ট?
—- না এক্সিডেন্ট নয় আমাদের ইচ্ছেতেই। চিন্তিত মুখে বললো রুদ্র।
—- তাহলে চোখে, মুখে ভয়ের ছাপ কেনো? এসব বাদ দিয়ে যে কয়টা টেস্ট দিলাম কাল ক্লিনিকে গিয়ে করিয়ে নিবি।
—- আসলে হৈমী খুব ভয় পাচ্ছে ওর জন্যই চিন্তা হচ্ছে সবটা সামলাতে পারবেতো? দোটনায় ভুগছি খুব। আমি কি খুব তারাতাড়ি করে ফেললাম?
—- এখন এসব দোটনা দিয়ে কি হবে যা হওয়ার হয়ে গেছে। এসব চিন্তা বাদ দিয়ে আমি যেভাবে যা বলবো মেনে চলবি আই মিন ওকে মেনে চলতে বলবি। এইজ তো আঠারো হয়েছে যদিও এ বয়স বাচ্চার জন্য পারফেক্ট না তবুও কোন সমস্যা হবে না আশা করছি। যেকোন প্রবলেম হলেই জানাবি আমাকে।
হৈমী ভয়ে মুখটা কাচুমাচু করে বসে আছে। তাঁর অবস্থা দেখে সুবর্ণা মুচকি হেসে বললো,
—- এই যে, মানুষ আপনি ছোট কিন্তু দায়িত্ব আপনার অনেক বড় বড়৷ এভাবে ভয় পেলে চলবেনা ভয়কে জয় করতে হবে। আর খাওয়া-দাওয়ায় যেনো কোমতি না থাকে। ঠিক সময় খাওয়া, ঘুম আর গোসল। কখনো যেন গোসলে অনিয়ম না হয়। ঠান্ডা যাতে না লাগে এদিকে সবচেয়ে বেশী সচেতন থাকবে৷ বর্তমানে প্রায় প্রতিটি ডেলিভারির পরই শিশুদের নিউমোনিয়া ধরা পড়ে এর কারন হলো বাচ্চার মায়ের অসচেতনতা।
ড.সুবর্ণার কথা হৈমী মনোযোগ দিয়ে না শুনলেও রুদ্রর মাথায় একদম সবটা গেঁথে গেলো।
(®জান্নাতুল নাঈমা)
.
সুবর্ণার বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়ি করে বাড়ি চলে যায় রুদ্র আর হৈমী। পুরো রাস্তাই দুজন বেশ চুপচাপ ছিলো। হৈমী মাঝে মাঝে আড়চোখে রুদ্রর দিকে চেয়েছে কিন্তু রুদ্রর মুখের গম্ভীর্যতা দেখে বারবারই চুপসে গেছে সে। কান্না পাচ্ছে তাঁর বুকের ভিতর কেমন যেনো শূন্য শূন্য লাগছে। তাঁর পেটে বাবু আছে ভাবতেই পুরো শরীর কেমন শিউরে ওঠছে। খুশিতে কি করবে বুঝে ওঠতে পারছেনা। খুশি,ভয়,লজ্জা যেনো আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে রেখেছে তাঁকে। রুদ্রর ওপর রাগও হচ্ছে খুব। বাচ্চা নেওয়ার জন্য রুদ্ররই আগ্রহ ছিলো বেশী অথচ এমন খুশির খবর শুনে একটাবারও তাঁর সাথে ভালো করে কথা বলেনি। তাঁর চোখে, মুখে কোন খুশি দেখেনি আনন্দ দেখেনি। তাঁর বাচ্চা পেটে আসতে না আসতেই বাবার থেকে এমন অবহেলা পাচ্ছে ভাবতেও বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে তাঁর।
.
বাড়িতে দুজন ঢুকলো খুব নীরব হয়ে। রুদ্র সোজা উপরে চলে গেলো। সুরভী বেগম ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলেন,
—- ডাক্তার কি বললো?
হৈমী চুপচাপ গিয়ে সোফায় বসলো। সুরভী বেগম একটু দমে গেলেন হৈমীর নীরবতা দেখে। শান্ত গলায় বললেন,
—- রাত অনেক হলো গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। যদি মন ভালো হয় তখন বলো সবটা। আবার কাল তো চলেও যাবে তোমরা। যাও গিয়ে ঘুমাও।
সুরভী বেগমের কথা শেষ হতে না হতেই হৈমী হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলো। সুরভী বেগম হতভম্ব হয়ে হৈমীর পাশে বসে তাঁকে জরিয়ে ধরলো। হৈমীও সুরভী বেগমের বুকে মুখ গুঁজে হাউমাউ করে কেঁদে যাচ্ছে। উপর থেকে দাদি এসব দেখে নিচে নেমে এসে কপালে তিনভাজ ফেলে বললো,
—- এতো কান্নাকাটি কিসের? বাপ, মা কেউ তো নাই যে তাঁদের মরার খবর পেয়ে এমন মরা কান্না জুরবে। বাড়ির পরিবেশ টা নষ্ট করে ফেললো এই মেয়ে। স্বামীর সাথে মনোমালিন্য হলেই এইভাবে কাঁদতে হবো? আমরা কি স্বামীর ঘর করিনাই?
দাদির কথায় কেউ পাত্তা দিলোনা। দাদি কিছুক্ষণ খ্যাক খ্যাক করে পাত্তা না পেয়ে নিজেই চুপ হয়ে গেলো৷ হৈমী কাঁদতে কাঁদতে অস্থির প্রায়। দাদির গলা শুনেই রুদ্র নিচে নেমে আসে। হৈমীকে ওভাবে কাঁদতে দেখে বুকটা ধক করে ওঠে তাঁর।
রুদ্রকে দেখে সুরভী বেগম লক্ষ করলো তাঁর চোখ,মুখ অস্বাভাবিক পরিমাণে লাল। ছেলে হঠাৎ এতো রেগে গেলো কেনো? তাহলে সত্যি কি পথে দুজনের মধ্যে ঝগরা হয়েছে? কিন্তু কেমন ঝগরা হলো যে তাঁর ছেলের চোখ, মুখ এমন হয়ে গেলো৷ সচরাচর তো এমন ঝগরা দুজনের হয়না। হলেও রুদ্র চড় থাপ্পড় দিয়ে বউকে মানিয়ে নেয়। তাহলে এবার কি খুব সিরিয়াস কিছু?
সুরভী বেগম যখন গভীর ভাবনায় মগ্ন রুদ্র তখন হৈমীর ডানপাশে গিয়ে বসে পড়লো। সুরভী বেগম ছিলেন হৈমীর বামপাশে৷ রুদ্র হাত বাড়িয়ে দিতেই সুরভী বেগম হৈমীকে ছাড়িয়ে ওঠে দাঁড়ালেন। রুদ্র হৈমীর কাঁধ নিজের বুকের দিকে চেপে নিতেই হৈমী খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলো রুদ্র কে৷ কান্নার বেগ দ্বিগুণ বেড়ে গেলো তাঁর। রুদ্রও খুব শক্ত করে বুকে জরিয়ে নিলো হৈমীকে। কেঁদে ফেললো সেও। তাঁর এই কান্নায় ছিলো অনেক বড় একটা প্রাপ্তি।
সুরভী বেগমও দুজনের অমন অবস্থা দেখে কেঁদে ফেললেন। তাঁর পাথরের ন্যায় শক্ত ছেলেটা এতো দূর্বল কেনো হয়ে পড়েছে জানার তীব্র ইচ্ছে জাগলো তাঁর। ছেলে ছেলের বউয়ের অমন মূহুর্তে চলে যাওয়ার কথা থাকলেও সে গেলেন না। বরং তাঁদের কাছে গিয়ে দুহাতে দুজনকে বুকে চেপে ধরলেন। এর থেকে সুখময় দৃশ্য বোধহয় আর দুটি হতে পারেনা।
চলবে।