ভালোবাসায় বন্দিনী পর্ব ২২

0
1802

#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_২২

রুদ্রর কথা শুনে ভিষণ লজ্জা পেলেও অবাক হয়নি মিতু। রুদ্রর স্বভাব তাঁর থেকে ভালো কেউ জানেনা৷
ছেলেটা তাঁর আদর্শে সর্বদা চলে। তাঁর আদর্শে ভুল ওয়ার্ড টা খুব কম পাওয়া যায়। যা সে প্রথম দিনই বুঝেছিলো নিরবের সাথে প্রথম দেখা করে। প্রেম শুরু করার আগেই ধরে বেঁধে বিয়ের মতো কঠিন দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছিলো তাঁর আর নিরবের ঘারে।
সে সবসময় সোজাসাপটা কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। যেসব বিষয়ে সাধারণত অন্যরা ভিষণ লজ্জা পাবে, ইতস্তত বোধ করবে রুদ্র সেসব বিষয় কে ডোন্ট কেয়ার ভাবে দেখবে। এই যে সোজা বলে দিলো সে তাঁর বউয়ের সাথে একাকী সময় কাটাতে চায়। এভাবে কজন স্বামী,কজন ছেলে তাঁদের বন্ধুর বউকে মুখের উপর বলতে পারে?কিন্তু রুদ্র বলেছে কারন সে এমনটাই তাঁর লিষ্টে ভয়,লজ্জা বলে কিছু আছে কিনা সন্দেহ আছে সকলের।

মিতু কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ কেটে পড়লো। হৈমী স্থির হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলো। রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে হৈমী যখন পুরো ঘটনা টা বুঝলো এক ঢোক গিললো। কাঁপা হাত, পায়ে ওঠে দাঁড়ালো, ঠোঁট জোরাও কাঁপছে তাঁর শাড়ি পড়া না থাকলে এক দৌড়ে ছুটে পালাতো। মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করে দুহাতের মুঠোয় শাড়ি চেপে উঁচিয়ে পিছন ঘুরে দৌড় লাগাবে এমন মূহুর্তে শাড়ির আঁচলে টান পড়লো।

— প্লিজ আমাকে যেতে দিন। অন্ধকারে একা ভয় করছে মিতু আপু এভাবে আমাকে ফেলে চলে গেলো?যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর। যার জন্য এখানে থেকে গেলাম সেই আমায় ফেলে চলে গেলো? মিনমিনিয়ে ভয়ে ভয়ে এক দমে বললো হৈমী।

রুদ্র শাড়ির আঁচল হাতে পেঁচিয়ে কয়েক কদম এগিয়ে এলো।হৈমীর মাথা ঠেকে গেলো তাঁর বুকে।
শাসরুদ্ধকর অবস্থায় খুব কষ্টে এক ঢোক গিলে গলাটা ভিজিয়ে নিলো হৈমী, কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই কানের কাছে গরম শ্বাস অনুভব হলো। মৃদু স্বরে বললো রুদ্র,

— যার জন্য চুরি করেছো সে চোর তো বলবেই না। চুন্নি বলার প্রশ্নও আসবে না। আর তুমি একা নেই যার জন্য থেকে গেছো সেই আছে। বলেই আরেকটু নিচু হয়ে হৈমীর কাঁধে থুতনি ঠেকালো।

হৈমী খানিকটা কেঁপে ওঠলো। এদিক সেদিক আঁকাবাকা হতে হতে বললো,

— উহ খচখচ দাঁড়িতে আমার সুড়সুড়ি লাগছে সড়ুন বলছি।

রুদ্র আরেকটু চেপে রাখলো থুতনি মৃদু স্বরে বললো,

— সড়বো বাট তোমায় প্রমিস করতে হবে আমি যা বলবো সব শুনবে। একটুও অবাধ্য হবে না।

— আহারে কতো আশা আমি প্রমিস করি আর আপনি আমার লজ্জা হরন করে নিন।

রুদ্র কাঁধ থেকে ঘাড়ে ঠোঁট ছোয়ালো। কেঁপে ওঠে নিজের শাড়ি দুহাতে খামচে ধরলো হৈমী। কাঁপা গলায় বললো,

— কি করছেন আমার শখড লাগে। সড়ে যান আপনি ছাড়ুন এতো শক্ত করে ধরেছেন কেনো ব্যথা লাগে।

ঘাড়ে ঠোঁট ছুয়িয়েই চোখ বুজে ঘোর লাগা কন্ঠে বললো,

— শখড লাগানো তো শুরুই হয়নি কথা না শুনলে এর থেকে সাংঘাতিক কিছু ঘটে যাবে। যদি নিজের সাথে সাংঘাতিক কিছু ঘটাতে না চাও তাহলে প্রমিস করো যা বলবো তাই শুনবে।

— কি বলবেন আপনি? কি প্রমিস করবো? (কাঁপা গলায়)

— আগে প্রমিস করতে হবে। মৃদু স্বরে বললো রুদ্র।

— যদি প্রমিস করি তাহলে আবার ওসব করবেন না তো?

থুতনি ওঠিয়ে হৈমীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো — কি সব?

— গাড়িতে যেটা করলেন।

হকচকিয়ে গেলো রুদ্র। গাড়িতে ঘোরে ভিতর থেকে কি করে ফেলেছে নিজেরই অজানা। চোখ বন্ধ করে লম্বা এক শ্বাস ছেড়ে বললো,

— না সেসব কিছু করবো না। বলেই হৈমীর হাতটা নিজের হাতে বন্দি করে নিলো। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো দোলনার দিকে। হৈমীকে দোলনায় বসতে ইশারা করতেই হৈমী কিছু একটা ভেবে বসে পড়লো।

রুদ্র হাঁটু গেড়ে নিচে বসে হৈমীর দুহাত নিজের দুহাতের মুঠোয় নিয়ে দুহাতের পিঠে দুটো কিস করলো। হৈমী হাত সরিয়ে নিতে চেয়েও পারলো না। রুদ্র বাঁধা দিলো, কোলের দিকে চোখ ইশারা করে আবেদনের স্বরে বললো,

— এখানটায় মাথা রাখতে চাই। তোমার ছোট্ট কোলে ছোটো জায়গা জুরে আমার এই ভারী মাথার ঠাই হবে তো? কথা দিচ্ছি আমার বুকের ভিতর সবটা জুরে শুধু তুমি থাকবে আমার ভালোবাসায় বন্দিনী করে সারাজীবন আগলে রাখবো তোমায়।

হৈমীর চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট সে রুদ্র কে দেখতে পাচ্ছে। এতো বড় ধামড়া মানুষ টাকে এ মূহুর্তে ঠিক পাঁচ বছরের বাচ্চা মনে হচ্ছে। কি বাচ্চামি আবেদন ভাবা যায়। আবার কি সুন্দর করে মিলিয়ে লাভ ইউ বিহীন প্রপোজ ও করে বসলো। রাগি, গম্ভীর রুদ্র শেখের আজ কি হলো? শাড়িতে আমাকে দেখে কি বড়মাপের ক্রাশ খেলো নাকি? ভাবামাএই প্রশ্ন করে বসলো,

— আপনি কি আমায় শাড়ি পড়া দেখে বড়সড় ক্রাশ খেয়েছেন? আপনিও হিরোদের মতো প্রপোজ করতে পারেন বলেই ভ্রু নাচালো।

রুদ্র তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে ওঠে দোলনায় বসলো হৈমীর পাশে। গম্ভীর গলায় বললো,

— রুদ্র শেখ কারো মতো নয় আর হতেও চায় না রুদ্র নিজের মতো থাকতে,চলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে মাইন্ড ইট।

হৈমী চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো চট করে ওঠে দাঁড়িয়ে চেচিয়ে বললো,

— এইজন্যই আপনাকে আমার সহ্য হয় না। মুখে মধু মাখিয়ে কথা বলছিলেন তাই বলেন নিমপাতার রস মেশাতে কে বললো হ্যা!

রুদ্র কথার পৃষ্ঠে কথা না বাড়িয়ে হাত টেনে দোলনায় বসিয়ে দিলো। হৈমী বড় করে হা করে কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই রুদ্র দাঁত চেপে বললো,

— সেদিনের কথা ভুলে গেছো? এখন রাত নিরিবিলি জায়গা ছাদ থেকে এক ঢিলে নিচে ফালাবো। চুপচাপ বসে থাকলে থাকো নয়তো আমার হাতে নিজের প্রাণ দাও।

— কককি আপনি আমাকে মেরে ফেলবেন?

ভয়ে মুখটা কাচুমাচু করে ফেললো হৈমী আশে পাশে চেয়ে সমানে ঢোক গিলতে লাগলো। রুদ্র বললো,

— কথা শুনলে কিচ্ছু করবো না।

— আচ্ছা বলুন আমি শুনছি।

— গুড গার্ল এবার আমার প্রশ্নের উত্তর টা দাও৷ জায়গা হবে কি হবে না।

রুদ্র যা ডেঞ্জারাস না করলে নির্ঘাত এখুনি ফেলে দিবে তাই ছোট করে হুম বললো। রুদ্র অপেক্ষা না করে তৎক্ষনাৎ ওঠে একটা চেয়ার দোলনার পাশে রাখলো। তারপর দোলনায় বসে পা দুটো দোলনার বাইরে চেয়ারের উপর রেখে হৈমীর কোলে মাথা রেখে দোলনায় শুয়ে পড়লো। তৃপ্তির এক শ্বাস ছেড়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো। হৈমী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রুদ্রর মুখের দিকে। তাঁর এক হাত আপনাআপনিই চলে গেলো রুদ্রর চুলে। আলতো করে হাত রেখে আবার সরিয়ে নিলো। কেমন এক অনুভূতি হচ্ছে তাঁর। রুদ্র কে এ মূহুর্তে খুব আপনজন মনে হচ্ছে। কেনো মনে হচ্ছে কোলে মাথা রাখার সাথে আপন হওয়ার কি কোন সম্পর্ক রয়েছে?

— হাত সরালে কেনো? হাত রাখো স্বামী হই তোমার, বউ তুমি আমার,এতো জড়োতা কিসের? মাথায় হাত বুলিয়ে দাও। নয়তো হাত কেটে ঝুলিয়ে রাখবো। যে হাত স্বামীর সেবা করতে ইতস্তত বোধ করে সেই হাত অক্ষত রাখা মানে নিজের সর্বনাশ করে ফেলা। গম্ভীর গলায় বললো রুদ্র।

হৈমীর অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে হলো।ঝগরা করতে ইচ্ছে হলো খুব তাঁর পিচ্চি পিচ্চি সুন্দর হাতগুলো খুন করতে চাওয়াতে। কিন্তু মুখ ফুটিয়ে একটা ওয়ার্ডও উচ্চারণ করতে পারলো না। ধুরুধুরু বুকে কাঁপা কাঁপা হাতে চুলগুলো আলতো করে বুলিয়ে দিতে শুরু করলো।

মৃদু হাসলো রুদ্র যা চোখে পড়েনি হৈমীর। চারদিকে শুনশান নীরবতা। ঝিঁঝি পোকার ডাক কানে ভেসে আসছে। আকাশে হাজার তাঁরার ভীড়ে একটি চাঁদ জ্বলজ্বল করছে। ছাদের কিনারে দু’টো নরনারী জোৎস্নার স্নিগ্ধ রাতে নির্মল প্রকৃতি অনুভব করছে।
একজনের বুকে বইছে অস্থিরতার তীব্র ঝড় আরেকজনের বুকে বইছে প্রশান্তির নির্মল হাওয়া।

বেশকিছু সময় পর রুদ্র ডেকে ওঠলো,

— হৈমী,,,

— হুমহ। চমকে গিয়ে সাড়া দিলো।

— বয়স তখন আমার চারবছর। বলতে পারো তখন থেকেই বুঝতে শিখেছি। তখন থেকেই স্মৃতি ধরে রাখার ক্ষমতা জন্ম নিয়েছে আমার। এর আগের দিনগুলোর কিছুই মনে নেই তেমন। আবছা ভাবে অল্পস্বল্প। ঐ দিনটি ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় একটা দিন। কারন ঐ দিনই প্রথম আমি পারিবারিক জটিলতার সম্মুখীন হই। একটি শিশুর চার,পাঁচ বছর বয়স মানে জীবনের সর্বপ্রথম ধাপের অংশ। যে ধাপে সে বুঝতে শুরু করবে পরিবার কে বুঝতে শুরু করবে মা, বাবা,ভাইবোন পরিবারের সকল সদস্যের আদর, ভালোবাসা কে। যেমন আদর ভালোবাসা পাবে তেমন আদর, ভালোবাসা তাঁর ভিতর জন্মও নিবে। একজন মানুষের সর্বপ্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয় তাঁর নিজের বাড়ি। প্রথম শিক্ষক হয় মা, দ্বিতীয় হয় বাবা,তারপর আসে ভাইবোন দাদা,দাদি,চাচা ইত্যাদি। পরিবার পরিজন থেকেই প্রথম শিক্ষা লাভ করে। পুঁথিগত শিক্ষা কিন্তু অনেক পরেই আসে। শিশুদের চার পাঁচ বছর বয়সে ব্রেইন টা খুব স্ট্রং থাকে এ বয়সে তাঁরা যা দেখে যা শিখে সবই নতুন। এ বয়সে মনের ভিতর কৌতূহল জাগে খুব বেশী।

চোখ তুলে তাকালো রুদ্র। হৈমী অবুঝ চোখে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে। তা দেখে মৃদু হাসলো। বুঝলো এতো কঠিন কথা মেয়েটা বুঝতে পারেনি। তাই চোখটা বুজে আবারো বলতে শুরু করলো,

— আমার জন্মদিন ছিলো সেদিন। সকাল থেকে মা ব্যাস্ত ছিলো রান্নাবান্নায়। পোলাও,মাংস,পায়েস আরো অনেক কিছুই একা হাতে রেঁধেছিলো। ছেলের জন্মদিন কিনা। রাদিফ ভাইয়ার বয়স তখন ছয় বছর। ক্লাস ওয়ানের ফাইনাল পরীক্ষা ছিলো ভাইয়ার। বাবা বিজনেসের জন্য খুবই ব্যস্ত ছিলেন। বাড়ি ছিলো মা, দাদি,আমি, ভাইয়া আর এক ফুপু। আমার দুজন ফুপু দুজনই বর্তমান লন্ডন আছে। তখন আমার বড় ফুপু লন্ডন ছিলো ছোট ফুপু ছিলো এখানে অনার্সে পড়তো ওনি। আমার জন্মদিন থাকায় মা ছোট ফুপুকে বলে দিয়েছিলেন, রাদিফ ভাইয়াকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যেতে। আমার জন্মদিনের দিনটা মা আমাকে দিতে চায়। কারন রাদিফ ভাইয়ার মতো ঘটা করে আমার জন্মদিন পালন করা হতো না ছোট বেলায়। কিন্তু ফুপু বিষয় টা পছন্দ করেনি৷ ওনি রাদিফ ভাইয়াকে এক্সাম দিতে নিয়ে যায়।

দুপুরের দিকে মা আমাকে গোসল করিয়ে খেতে বসিয়েছে। তখনি রাদিফ ভাইয়া আর ছোট ফুপু বাড়ি আসে রাদিফ ভাইয়া এসে দেখে মা আমাকে খাওয়িয়ে দিচ্ছে। সেটা দেখে কাছে এসে মা কে বলে,
‘মা আমাকে খাওয়িয়ে দাও’ মা তখন ভাইয়াকে বলে ‘বাবা গোসল করে আসো খাওয়িয়ে দিচ্ছি’ রাদিফ ভাইয়া মায়ের আঁচল টেনে ধরে বলে ‘তুমি গোসল করিয়ে দাও’ মা তখন ছোট ফুপুর কাছে গোসল করতে বলে আর রাদিফ ভাইয়া হুহু করে কাঁদতে কাঁদতে উপরে চলে যায়।

মা আমাকে খাওয়ানো বাদ রেখেই পিছন পিছন উপরে যায়। আমিও ভাইয়া ভাইয়া ডাকতে ডাকতে উপরে যাই। দাদির রুমে গিয়ে দাদিকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছিলো রাদিফ ভাইয়া। আমি আর মা তখন দরজার বাইরে শুনে ফেলি কিছু গোপন সত্যি কথা।
‘ছোট ফুপু বললো আমার মা আমার মা না। আমার মা নাকি আকাশের তাঁরা হয়ে গেছে। এই মা রুদ্রর মা তাই তো আমাকে স্কুল নিয়ে যায় নি আজকে। রুদ্র কে আদর করছে। আমাকে এই মা ভালোবাসে না’ ডুকরে কেঁদে ওঠে রাদিফ ভাইয়া। আমি মায়ের আঁচল টেনে ধরে মুখ লুকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি পেছনে।

দাদি ভাইয়া কে বোঝাতে থাকে ‘এমন কিছুনা দাদু ভাই এই মা তোমারই মা রুদ্রর মা না তাই তো আমরা সবাই তোমাকে বেশী আদর করি,তোমার মা,বাবা ও তোমাকে বেশী আদর করে’

আমি তখন টলমল চোখে মায়ের আঁচল টেনে জিগ্যেস করি ‘মা ও মা দাদি কি বলে তুমি আমার মা না তুমি ভাইয়ার মা’?

মা আমার মুখ চেপে ধরে চোখের জল ফেলে আমার কপালে চুমু খেয়ে বলে ‘ আমি তোমাদের দুজনেরই মা ‘আমি প্রশ্ন করি দাদি তাহলে ওটা বললো কেনো,মা বলে,’তোমার ভাইয়া কাঁদছে তাই বলেছে বাবা তুমি নিচে যাও আমি আসছি’ বলেই মা ভিতরে যায়। আমিও দরজার বাইরে চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকি। একটু ওকি দিয়ে দেখি ভিতরে কি হয়।

মা ভিতরে যেতেই দাদি রাগে গর্জন তুলে। ‘বউ মা কোন সাহসে তুমি আজ বড় দাদু ভাইকে স্কুলে নিয়ে যাও নি’?

মা বলে,’ আজ রুদ্রর জন্মদিন মা তাই আমি রোজা কে বলেছিলাম যাতে ও নিয়ে যায় কিন্তু রোজা আমার ছেলেটার মাথায় এসব ঢোকাবে বুঝতে পারিনি। রাদিফ বাবা এদিকে এসো’ মা হাত বাড়িয়ে দেয় কিন্তু রাদিফ ভাইয়া আসে না কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘তুমি আমার মা না তুমি রুদ্রর মা তাই তো ওকে খাওয়াচ্ছিলে আমাকে না। আমাকে ফুপুর কাছে পাঠিয়ে তুমি ওকে বেশী বেশী আদর করেছো’

মা রাদিফ কে জোর করেই কোলে তুলে নেয়। আদর করে বলে ‘এমন কিছুনা বাবা আমি তো তোমারও মা। আমি সব থেকে তোমাকে বেশী ভালোবাসি বাবা।রুদ্র তো তোমার ছোট ভাই আজকে ভাইয়ের জন্মদিন ছিলো তাই ভাইয়ের জন্য রান্না করছিলাম। আমি যে তোমার ভাইকে প্রমিস করেছি আজ নিজ হাতে খাওয়িয়ে দিব তাকে। তুমি তোমার ছোট ভাইকে ভালোবাসো না বলো’?

দাদি তখন খেঁকিয়ে ওঠে আর বলে, ‘রাদিফ দাদু ভাই তুমি তোমার ব্যাগ টা তোমার রুমে রেখে আসো তোমার মা গিয়ে তোমাকে গোসল করাবে, খাওয়িয়েও দেবে। আমি তোমার মায়ের সাথে একটু জরুরি কথা বলবো’

মা রাদিফ ভাইয়াকে নামিয়ে দেয়। আমি সরে যাই দরজার সামনে থেকে রাদিফ ভাইয়া বেরিয়ে যেতেই আবারো গুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে মা দাদির দিকে তাকিয়ে থাকি। আর শুনতে পাই দাদি মায়ের কথোপকথন।

— ‘ বউ মা তুমি ভুলে যেওনা এ বাড়িতে কি কি শর্ত দিয়ে তোমাকে বউ করে আনা হয়েছে। প্রথম শর্ত ভঙ্গ করেছো বার বার নিষেধ করেছিলাম আমরা যেনো বাচ্চা না নেও তবুও রুদ্র কে পেটে এনেছো। কিন্তু তাঁর পরিবর্তে কি শর্ত দেওয়া হয়েছে তা কি তুমি ভুলে গেছো ‘?

— ‘ভুলিনি মা। কি করে ভুলবো বলুন তো? আমিই সেই মেয়ে যাকে বিয়ের সময় প্রথম শর্ত দেওয়া হয়েছে সে কোনদিন নিজ গর্ভে নিজ সন্তান ধারন করতে পারবে না। বাসর ঘরে স্বামী কে পাঠানো হয়নি পাঠানো হয়েছে দুবছরের দুধের শিশুকে। বউ হয়ে আসিনি এ ঘরে এসেছি মা হয়ে। বুকে তুলে নিয়েছি আমার প্রথম সন্তান রাদিফকে৷ জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না। এটা সেদিনই বুঝেছি। আমি মা হয়েছি রুদ্র আসার আগেই প্রথম সন্তান হিসেবে গ্রহন করেছি রাদিফকেই। আমার প্রথম সন্তান রাদিফ দ্বিতীয় রুদ্র। আমার কাছে দুজনেই সমান’

— ‘বড় বড় কথা বলো না রাদিফ কে সন্তান ভাবলে রুদ্র কে কেনো প্রয়োজন পড়লো? সব চালাকি বোঝা আছে। কিন্তু ভুলে যেওনা রাদিফের দাদি এখনো বেঁচে আছে। তুমি যদি চলো ডালে ডালে তাহলে আমি চলি পাতায় পাতায়’।

— ‘রুদ্রকে কেনো প্রয়োজন সে তো উপরওয়ালাই ভালো বলতে পারবেন৷ আপনি এক মা কে প্রশ্ন করছেন তাঁর নিজের সন্তান কে কেনো প্রয়োজন পড়লো?মাতৃত্বের স্বাদ কোন নারী গ্রহন করতে চায় না? আমার জায়গায় আপনি থাকলে কি করতেন? আর কেনো আমার গর্ভে উপরওয়ালা সন্তান দিলেন এই প্রশ্ন আমায় না করে পরকালে গিয়ে উপরওয়ালা কে করবেন।কারন নিজের গর্ভে যেনো সন্তান না আসে তাঁর জন্য যা যা করনীয় সব করেছি। আমিই বোধ হয় প্রথম মেয়ে যে কিনা নিজের গর্ভে বৈধ সন্তান ধারন করতে ভয় পেতাম৷ আপনার ছেলেকে কাছে ঘেষতেও দিতাম না৷ কিন্তু আপনি সব শর্ত আমাকেই দিয়েছিলেন গরীব ঘরের মেয়ে তো সুযোগে সৎ ব্যবহার ঠিক করেছিলেন। বড়োলোকরা যে সুবিধাবাদী হয় তার প্রমান আপনারা খুব ভালো করেই দিয়েছেন। কিন্তু নিজের ছেলেকে কেনো শর্ত দেন নি?আপনার ছেলেকেই বোধ হয় শর্ত দেওয়া উচিত ছিলো সে যেনো তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে শারিরীক মিলন না ঘটায়৷ কারন মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে কোন শর্ত চলে না কোন যুক্তি চলে না। উপরওয়ালার ইচ্ছে ছিলো তিনি আমার কোল আলো করে রুদ্র কে পাঠাবেন তাই সমস্ত শর্ত উপেক্ষা করে তিনি রুদ্র কে পাঠিয়েছেন।

আমি সেই মা যার গর্ভে সন্তান আসার পর তাঁর শশুড় ঘরের সকলের মুখে ছায়া নেমে আসে। যার কোলে সন্তান আসার পর সকলে মিলে হাজারটা শর্ত ছুঁড়ে দেয়। আমি সেই মা যে নিজের সন্তান কে ভালোবাসতে গেলেও একশতবার চিন্তা করে ভালোবাসে। আর চিন্তা বিহীন ভালোবাসলেই আজকের মতো ঘটনা ঘটতে থাকে। ঘরের লোক আঙুল ওঠিয়ে বলে আমি রাদিফের সৎ মা বাইরের লোক আঙুল ওঠিয়ে বলে আমি রাদিফের সৎ মা। একবারো কেউ ভাবেনা বাচ্চা ছেলেগুলোর ওপর কি প্রভাব পড়তে পারে এসবের জন্য’

— ‘অতো কথা বুঝিনা। রুদ্রর জন্য রাদিফ দাদু ভাইয়ের চোখে এক ফোঁটা পানিও যেনো না গড়ায়। সৎ মায়ের মতো ব্যবহার যেনো না দেখি’

মা চোখের পানি মুছে বললেন,

— ‘আপনার মেয়েও যেনো আমার কোন ছেলের কানে আর বিষ না ঢালে। আর যদি ঢালে তাহলে ফল খুব খারাপ হবে। আমি এখন বউ নই আমি এখন দুজন সন্তানের মা আপনি এবং আপনার মেয়ে সেটা মাথায় রাখবেন’

দাদির সাথে কথা বলা শেষে মা নিজের ঘরে গিয়ে রাদিফ ভাইয়াকে গোসল করিয়ে নিচ থেকে খাবার নিয়ে উপরে গিয়ে রাদিফ ভাইকা খাওয়িয়ে দেয়। আমি তখন নিচে ডায়নিং টেবিলে বসে আছি কারন আমার অর্ধেক খাওয়া প্লেটে ভাত রয়েছে। মা আমাকে পুরোটা খাওয়ায়নি। আমারো খিদে মেটেনি। আমি নিজ হাতে ভাত খেতে শিখেছি তখন কারন মা রাদিফ ভাইয়াকে খাওয়িয়ে দিতো আর আমাকে নিজ হাতে ভাত খাওয়ানো শেখাতো। কিন্তু সেদিন মা কথা দিয়েছিলো জন্মদিনের দিন আমাকে মা খাওয়িয়ে দেবে যত্ম করে। তাই অপেক্ষায় ছিলাম মায়ের। অনেকটা সময় যাওয়ার পরও মা এলো না।
আমি চেয়ার থেকে নেমে গুটিগুটি পায়ে উপরে ওঠে যাই। মায়ের রুমে ওকি দিয়ে দেখি মা রাদিফ ভাইয়া বুকে জরিয়ে ঘুম পারাচ্ছে। যা সব দেখেছিলাম বুঝেছিলাম আমি মা কে ডাকলে ভাইয়ার ডিস্টার্ব হবে।দাদি জানলে মা কে বকা দিবে তাই চুপ করে মাথা নিচু করে নিচে নেমে আসি। কি জানি কি বোঝ মনে, মাথায় উপরওয়ালা দিয়ে দিলেন সেদিন থেকেই। বাচ্চা দের মতো বায়না করাও ভুলে গেলাম। যে বয়সে হেসে খেলে বেড়ানো উচিত সে বয়সে আমি হয়ে গেলাম গম্ভীর।

সেদিন আর মা আমাকে খাওয়িয়ে দেয়নি। রাতে সবার সাথে বসে নিজের হাতে খেয়েছি। আর মা রাদিফ ভাইয়াকে খাওয়িয়ে দিয়েছে। রাতে বাবা চকলেট নিয়ে এলে রাদিফ ভাইয়া দৌড়ে নিচে যেতো বাবা রাদিফ ভাইয়াকে কোলে নিয়ে হাজারটা চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে চকলেট দিতো। আমি মায়ের পিছনে চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকতাম। ভাইয়াকে আদর শেষে বাবা মা কে জিগ্যেস করতেন ছোট রাজকুমার কোথায়? তখন আমি মায়ের পিছন থেকে ওকি দিতাম বাবা তখন আমায় কোলে নিতেন রাদিফ ভাইয়াকে নামিয়ে দিয়ে নয়৷ দুজনকে এক সঙ্গে নিতেন।

রাতে যখন ঘুমাতাম রাদিফ ভাইয়া মাঝখানে থাকতো দুপাশে বাবা,মা আর আমি? আমি মায়ের পিছনে গুটিশুটি হয়ে শুতাম মায়ের আঁচল বুকে জরিয়ে ঘুমাতাম। মা রাদিফ ভাইয়ার দিকে ঘুরে ভাইয়াকে বুকে মিতো আর তাঁর বাম হাতটা আমার শরীরের ওপর রাখতো।যাতে ভয় না পাই আমিও। মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস শুনতাম মায়ের। নিজেও চাপা এক শ্বাস ছাড়তাম। কাউকে কিছু বলতাম না। এসব ঘটনার সম্মুখীন হতে হতেই ধীরে ধীরে আমি বড় হতে থাকি বলতে গেলে তারাতাড়িই বড় হয়ে গেলাম। একা গোসল করতে শিখে গেলাম। একা খেতে তো শিখেই গেছিলাম।

দাদি,ফুপুর অবহেলা বুঝে তাঁদের থেকে দূরে সরে যেতে শিখে গেলাম। মায়ের আঁচল ছাড়তে শিখে গেলাম। পরিবারের ভয়ে যে মা আমাকে বুকে জরিয়ে নিতে পারেনি তাঁর আঁচল ধরে থেকে কদিন থাকবো আমি। দেখা যাবে এটা নিয়েও মা কে জবাবদিহি করতে হবে কোন একদিন কোন এক সময়। মা,বাবা,ভাইয়ের প্রতি আমার কোন রাগ বা ঘৃনা নেই যা আছে শুধুই অভিমান। কিন্তু বাকি সবার প্রতি আমার সাংঘাতিক রকম ঘৃনা রয়েছে। রাদিফ ভাইয়ার ব্রেন ওয়াশ কে করেছিলো ওটুকু বয়সে ? রাদিফ ভাইয়ার মা যখন মারা যায় তখন রাদিফ ভাইয়া দুধের শিশু যে বয়সে আমার মায়ের সাথে বিয়ে হয়েছে বাবার, যে বয়স থেকে রাদিফ ভাইয়াকে মা আগলে রাখছে রাদিফ ভাইয়ার তো জানার কথা না যে সুরভী তাঁর আসল মা না। রুদ্র তাঁর মায়ের পেটের ভাই না। তাহলে এসব কে জানালো রাদিফ ভাইয়াকে? নিজের ছেলেকে আদর করতে গেলে কেনো মা কে দুবার ভাবতে হয়? বাবা কেনো অফিস থেকে এসে আগে রাদিফ ভাইয়াকেই কোলে নেবে? আমি সামনে থাকলেও রাদিফ ভাইয়াকে খুঁজে বের করে আগে কোলে নেবে তারপর আমাকে নেবে। কেনো?

— কারন যাতে সবাই বুঝতে পারে সুরভী আন্টি সৎ মায়ের আচরন করছে না। রুদ্র আসার পর রাদিফের আদর ভাগ হয়নি। মা মরে গেলেই বাবারা পর হয়ে যায় না। রাদিফ ভাইয়া মাহারা বলে সে অবহেলিত সন্তান নয়৷ কান্নামিশ্রিত গলায় বললো হৈমী।

রুদ্রর চোখও ঝাপসা হয়ে এসেছে। ভাঙা আওয়াজে সে বললো,

— কেনো সবাই আমাদের দুজনকে সমান চোখে দেখলো না? সবাই কেনো আদর ভালোবাসা কে ভাগাভাগি করে নিলো? মায়ের ভালোবাসা কে কেনো সবাই ভাগ করলো?একজন মায়ের কি একটার বেশী সন্তান থাকে না? একজন মা কি সাতজন সন্তান জন্ম দিয়ে সাতজন কে ভালোবাসে না? আমার মা কেনো দুজনকে সমান ভাবে ভালোবাসতে পারলো না? এক সন্তান কে অবহেলিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে গিয়ে আরেকজনকে কেনো সবাই অবহেলা করলো? কেনো আরেকজনের হৃদয় তৈরী হওয়ার আগেই ভেঙে চুরমার করে দিলো? রুদ্র শেখ রাগি,গম্ভীর, বদমেজাজি, একরোখা তাঁকে এমন কারা তৈরী করলো? কেনো রুদ্র হাসি,খুশি জীবন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলো? পরিবারের লোকেরা, সমাজের লোকেরা একদিকে কেনো বিচার করলো?সবাই কেনো একদিকেই ভাবে? রাদিফ ভাইয়াকে নিয়ে সবাই ভেবেছে সে যেনো অল্প পরিমান কষ্টও না পায় কারন তাঁর মা দুনিয়ায় বেঁচে নেই। তাই তাঁর ভালোবাসা, আদর, যত্নের দিকে সবাই নজর রেখেছে। অথচ রুদ্রর নিজের মা থাকা সত্বেও দিনের পর দিন অবহেলিত হয়েছে। সেদিকে কারো নজর কেনো পড়েনি? তাঁর মা পৃথিবীতে বেঁচে আছে একসঙ্গে আছে এটুকুর জন্য সবাই তাঁর থেকে ছেলেবেলা কেনো কেড়ে নিলো? এই উত্তর গুলো কেউ দিতে পারবেনা৷ আর না কাউকে এসব প্রশ্ন করবো।
কষ্ট পেতে পেতে শক্ত পাথর বানিয়ে নিয়েছি নিজেকে।

কিছু মানুষ সবচেয়ে বেশী অবহেলার স্বিকার হয় পরিবার থেকে,সমাজ থেকে । কিছু মানুষ সবচেয়ে বড় আঘাতটা পায় পরিবার আর সমাজ থেকে।

সবাই জানে বৃদ্ধ পিতামাতার অবহেলার গল্প, সবাই জানে মা হারা সন্তানদের অবহেলার গল্প৷ সবাই জানে সৎ মায়ের কঠিন অত্যাচারের গল্প৷ কিন্তু এই রুদ্রর গল্প কজন জানে? যে কিনা সব থাকতেও অবহেলিত।

কেউ জানে না আর কেউ জানবেও না। কারন কিছু অবহেলার নাম হয়না৷

আজ রাদিফ ভাইয়া বুঝে, সবটা বুঝে সে ছোট বেলার মতো মানসিকতা তাঁর আজ নেই। সে আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসে আমিও তাঁকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি। নিজেদের ভুলগুলো বাবা,মা বুঝতে পারে। কিন্তু আমার মন তো সেই কোন ছোটবেলায়ই ভেঙে গেছে। আহত হয়েছি হাজার বার। মন ওঠে গেছে পরিবার থেকে, আত্মীয় স্বজনদের থেকে।

থামলো রুদ্র এক ঢোক গিলে আরো নরম গলায় বললো,

— হৈমী জীবন একটাই প্রথম ধাপ শেষ দ্বিতীয় ধাপে পা দিয়েছি আমি। তৃতীয় ধাপে পা দেওয়ার আগ পর্যন্ত তোমার সাথে, তোমার পাশে তোমার ভালোবাসায় নিজের সমস্ত ব্যাথা নিঃশ্বেস করে বাঁচতে চাই। তোমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নিজেকে মিশিয়ে দিতে চাই। আর কাউকে চাই না, আর করো ভালোবাসা পেতে চাইনা। শুধু তোমাকে চাই,তোমার ভালোবাসা কে চাই। ভালোবাসতে চাই, ভালো রাখতে চাই। হয়ে যাও না আমার বন্দিনী।

অজস্র জলকোনা গাল বেয়ে টপটপ করে রুদ্রর মুখের ওপর পড়তে লাগলো। চঞ্চল প্রকৃতির এই মেয়েটার মন যে তুলোর থেকেও নরম। এমন নরম মনের মেয়ের কাছে এতো কঠিন,শক্ত,যন্ত্রণাময় গল্প বললে মেয়েটা কি করে সহ্য করবে?

মুখের ওপর শীতলতা স্পর্শ হতেই চোখ খুললো রুদ্র। মেয়েটা কাঁদছে হ্যাঁ তাঁর ব্যাথায় বাচ্চা মেয়েটার হৃদয় ব্যাথিত হয়েছে।

শোয়া থেকে চট করে ওঠলো রুদ্র। হৈমীর পাশে বসে এক হাতে হৈমীকে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফেললো। হৈমীও আর নিজেকে আঁটকে রাখতে পারলো না৷ রুদ্র কে দুহাতে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ডুঁকরে কেঁদে ওঠলো। রুদ্রও শক্ত করে জরিয়ে ধরে দুচোখের পাতা বুজে ফেললো। তাঁর চোখের দুফোঁটা পানি বেয়ে পড়লো হৈমীর মাথায়।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here