ভালোবাসার সন্ধিক্ষণ পর্ব ১০

0
279

#ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ
#গল্পছোঁয়া Jannatul Ferdous Mahi
#পর্ব_১০

–মানে কি বলতে চাচ্ছো তুমি?

–বাচ্চা দিতে পারবেন ইয়ামিনকে?

–হোয়াট?

–আপু,আমি চাই ইয়ামিন সুখে থাকুক।
আমার মতো মেয়েকে নিয়ে ও কখনো সুখি হবে না।

–কে বলেছে তোমাকে,ইয়ামিন সুখি নয়,আমার মতে তোমাকে পেয়ে ইয়ামিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখি ব্যক্তি।ও তোমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে সেটা তোমার ধারণারও বাইরে প্রতিভা।

–আমাদের #ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ ক্ষনস্থায়ী ছিল আপু,আর কতদিনই বা বাঁচবো বলুন।আমার আমাকে নিয়ে কোনে আফসোস নেই বিশ্বাস করুন,আমি জানি ইয়ামিন আমাকে অনেক ভালোবাসে,আমি সত্যিই লাকি ওনার মতো একজন মানুষকে স্বামীরূপে পেয়ে,ওনাকে পেয়ে আমার জীবন সুন্দর হলেও ওনার জীবন যে থমকে গেছে আপু।উনি কতটা বাচ্চা প্রেমি দেখেছেন,আর আমি তো ওনাকে বাবা হওয়া থেকে বঞ্চিত করেছি।

–কি যা-তা বলছো প্রতিভা,ইয়ামিনের বাচ্চাকাচ্চার কোনো প্রয়োজন নেই,সে তোমাকে নিয়েই সুখি।

–এ পৃথিবীতে আমি ছাড়া ওনার আপন বলতে কেউ নেই,আমিও আর কয়বছর পর মারা যাব,তারপর ওনার কি হবে ভেবল দেখেছেন।
আমি হীনা কাকে আঁকড়ে থাকবেন তিনি,একটা বাচ্চা হলে তাকে আঁকড়ে অন্তত বাচতো।আমি ইয়ামিনকে খুব ভালোবাসি আপু,ওনার মতো মানুষ আজকালকার যুগে সহজে পাওয়া যায়না,আমি ওনাকে সুখি দেখতে চাই।
উনি সুখী আছে বললেও আমি জানি,ভেতরে ভেতরে বাচ্চার জন্য ঠিকই হাহাকার করেন উনি,যেমনটা আমিও করি কিন্তু আমি যে নিরুপায়।
তাই নিজের বুকে পাথর রেখে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ইয়ামিনকে আমি ২য় বিয়ে দেব,ইসলামে তো ২য় বিয়ের বিধান আছে বলুন,১ম স্ত্রী অনুমতি দিলে সেই বিয়ে ন্যায্য।সেখানে আমি ওনার স্ত্রী হয়ে নিজেই ওনার ২য় বিয়ে দিতে চাচ্ছি,

–প্রতিভা কি আজেবাজে কথা বলছো,এসব কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো,ইয়ামিন এসব শুনলে কতটা কষ্ট পাবে জানো তুমি

–আপনিওতো কষ্ট পান,ওনাকে না পেয়ে।আপনিকি ওনাকে ভালোবাসেননা বলুন

–ভালোবাসি,কিন্তু…

প্রতিভা লামিয়া নামের মেয়েটির হাত ধরে অনুনয় করে বললো…

–আমি আপনার কাছে অনুরোধ করছি আপু,প্লিজ আমাকে ফেরাবেননা।আপনি ইয়ামিনকে বিয়ে করুন,আমি জানি আপনি ওনাকে সর্বত্তম সুখি রাখবেন,আপু আমার অনুরোধ টা রাখুন,আপনার কাছে ভিক্ষা চাইছি আমি।

লামিয়া প্রতিভাকে জড়িয়ে ধরলো,,

–কাদেনা পাগলি,অনেক সহজসরল তুমি প্রতিভা,এভাবে কেউ নিজের স্বামীর ২য় বিয়ে দিতে চায়,পাগলি মেয়ে

–আপু প্লিজ

–আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে,পরে দেখা যাবে এসব।


কেটে গেলো ৩মাস
এই কয়মাসে লামিয়াকে নিয়ে প্রতিভা যে ইয়ামিনের কাছে কতকত কথা যে বলেছে হিসেব ছাড়া।প্রতিভার উদ্দেশ্য লামিয়ার নানান সুখ্যাতি করে দেয় ইয়ামিনের মনে লামিয়ার জন্য জায়গা তৈরি করা,হলোও তাই,ইয়ামিন এখন লামিয়াকে নিয়ে অনেক সিরিয়াস।মাঝেমধ্যেই লামিয়া প্রতিভাদের বাড়িতে আসে,নিজে হাতে রান্না করে ইয়ামিনকে খাওয়ায়,লামিয়ার রান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ইয়ামিন।ঘুরতে গেলে,প্রতিটি অনুষ্ঠানে,বাড়ির ছোটছোট আয়োজনে লামিয়া সমানতালে পাশে থাকে।ইয়ামিন এখন যেটাই করুকনা কেন লামিয়ার সঙ্গে সবটা ডিসকাস করে তবেই সেটা করে।
প্রতিভা ভেতরে ভেতরে কষ্ট আর সুখ দুটোই পাচ্ছে,যাক অবশেষে ইয়ামিনের মনে লামিয়ার জন্য জায়গা তৈরি হয়েছে।
এদিকে লামিয়া আর ইয়ামিনের এতো ঘনিষ্ঠতা দেখে বেশ চিন্তিত প্রতিভার মা মিসেসঃ ফাতেমা বেগম।এমন নয় যে ইয়ামিন প্রতিভার প্রতি কেয়ারলেস ল,ইয়ামিন আগের মতোই প্রতিভাকে কেয়ার করে,যত্নআত্তির কোনো ত্রুটি রাখেনি সে।
কিন্তু লামিয়ার সঙ্গে এতো ঘেঁষাঘেঁষি ওনার পছন্দ না,মায়ের মন,কিছুতে আঁচ করতে পারছেনই,মেয়ের সংসার নিয়ে উনি চিন্তিত,কারন সংসারের ছোটখাটো সব বিষয়ই লামিয়ার কথামতে,ওর ইচ্ছেমতো চলে।না জেনে যেকেউ বলবে সংসারটা প্রতিভার নয়,লামিয়ার।মিসেসঃফাতেমা বেগম এই বিষয়ে বহুবার প্রতিভার সাথে কথা বলেছে,কিন্তু প্রতিভা বারবার এড়িয়ে গেছে,কারণ প্রতিভা নিজেইতো এসব করাচ্ছে।

*আজ ইয়ামিনের জন্মদিন
মুক্তা মঞ্চের পাশের বিজেপি ক্যাম্পের সামনে যে সুন্দর মাঠ রয়েছে,সেখানে বসার জন্য সিঁড়ি বানানো রয়েছে ৩-৪টা।সেগুলোর মধ্যেই একটিতে চোখে কালো কাপড় বেধে বসে আছে ইয়ামিন,মূলত প্রতিভাই একাজ করেছে।

–প্রতিভা,তুমি কি করছো বলোতো,সারপ্রাইজ দিতে এতো সময় লাগে,আর কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবো,চোখ জ্বালা করছেতো।

–১মিনিট প্লিজ
আজকে আপনার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ ওয়েট করছে,আজ আমি আপনাকে এমন কিছু দিতে চলেছি আপনি ভাবতেও পারবেননা

–আমার জীবনকে সবটাই পেয়ে গেছি আমি,আর কি পাওয়া বাকি আছে বলো,কি এমন সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছো তুমি।

–এখনই দেব সারপ্রাইজ,আমি চোখের বাধন খুলে দিচ্ছি ওয়েট,আমি না বলা অবধি কিন্তু চোখ খুলবেননা,প্রমিস করুন

–ঠিক আছে,তাড়াতাড়ি করো

–উফফ,তর সইছেনা তাইনা,সবুরে মেওয়া ফলে মশাই

–এটা ঠিক বলেছো,যেমন আমি তোমাকে পেয়েছি (মুচকি হেসে)

প্রতিভা ইয়ামিনের চোখের কালোকাপড় টা খুলে দিলো,প্রতিভার কথামতো ইয়ামিন চোখ বুজেই আছে,হঠাৎ নিজের হাতের ওপর কারো হাতের ছোঁয়া পেলো ইয়ামিন।

–এবার চোখ খুলুন

ইয়ামিন চোখ খুলে দেখে প্রতিভা লামিয়ার হাত ওর হাতের উপর রেখে দাঁড়িয়ে আছে,প্রতিভার মুখে আনন্দের প্রতিচ্ছবি কিন্তু চোখে কেমন হারানোর ব্যথা।
লামিয়ার পড়নে লাল শাড়ি,হাত ভর্তি লাল চুড়ি,হালকা মেকআপ,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক,চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া,অসম্ভব সুন্দর লাগছে লামিয়াকে।

–আমি নিজে লামিয়া আপুকে আপনার হাতে তুলে দিলাম ইয়ামিন,আপনি খুশিতো?

–এসবের মানে কি প্রতিভা(নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে)

–আপনিতো লামিয়া আপুকে ভালেবাসেন তাইনা,নিশ্চয়ই তাকে জীবনসঙ্গী রূপে কামনা করেন,তাই আজ আপনার জন্মদিনে আমি আপনাকে উপহার স্বরূপ লামিয়া আপুকে আপনার হাতে তুলে দিলাম।
আমি রেজিস্ট্রার পেপারও নিয়েসেছি,সিগনেচার করে আজকেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাবেন আপনারা।
আমি আজ অনেক খুশি আপনাকে সুখি করতে পারব বলে,আমার মৃত্যুর পর লামিয়া আপু ও আপনাদের অনাগত সন্তানদের নিয়ে সুখি থাকবেন,আমিতো আর আপনাকে সন্তানসুখ দিতে পারিনি,তবে লামিয়া আপুতো দিতে পারবে।আমি জানি লামিয়া আপু আর আপনি একে-অপরকে ভালোবাসেন,আপনার সংসড় করবেন আমাকে বাড়িতে থাকতে দিলেই হবে,যদি না চান তাহলে আপনাদের মাঝে কখনো থার্ড পারসন হবোনা,এমনিতেও খুব বেশিদিন বাচবনা আমি,মৃত্যুর আগে আপনাকে সুখি দেখতে চেয়েছিলাম,আশা করি দেখে যেতে পারবো।
আমি জানি ভেতরে ভেতরে একটা বাচ্চার জন্য আপনিও হাহাকার করতেন,এখন আর কোনো বাঁধা নেই,আপনি এখন অবশ্যই বাবা হতে পারবেন,আমি নিজেই আপনাদের বিয়ের পুরোপুরি ব্যবস্থা করেছি।

প্রতিভার চোখ থেকে অঝোরে পানি ঝরছে,সে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে রেজিস্ট্রার পেপার আর কলম ব্যাগ থেকে বের করলো

–এই দেখুন চোখ থেকে কেমন পানি পরছে,এটা কিন্তু মোটেও কষ্টের কান্না নয়,সুখের কান্না,আজ আমি অনেক খুশি
এই নিন,সিগনেচার করুন রেজিস্ট্রার পেপারে

ইয়ামিন এতক্ষণ নিজেকে সংযত রাখলেও আর পারলোনা,সে প্রতিভার হাত থেকে রেজিস্ট্রার পেপার নিয়ে একটানে ছিড়ে ৪টুকরো করে ছুড়ে ফেলে দিলো,তারপর ঠাস করে থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো প্রতিভার গালে।

–আমি তোমার থেকে এসব আশা করিনি প্রতিভা,তোমাকে আমি একজন স্ট্রং পারসোনালিটির মেয়ে ভেবেছিলাম আর তুমি এসব কি করছো,ছিছিছি।
আমি কি কখনও বলেছি আমি বাচ্চা চাই,আমি তোমাকে নিয়ে খুশি নই,সুখি নই?আমি কি বলেছি আমি লামিয়াকে ভালোবাসি,ওকে জীবনসঙ্গী করতে চাই??

–ইয়ামিন,আ…

–ব্যাস প্রতিভা,এনাফ ইজ এনাফ
এখন আমি বলবো তুমি শুনবে।হ্যাঁ আমি লামিয়া কে ভালোবাসি,ওর কেয়ার করি,কিন্তু অন্য মাইন্ডে নয়,আমি ওকে নিজের ছোট বোন ও বেস্ট ফ্রেন্ড মনে করি,এর বেশি কিছু না।ও আমার কলিগ,বেস্টফ্রেন্ড তাই অফিসের যেকোনো কাজ নিয়ে ওর সাথে ডিসকাস করি।তুমিওতো লামিয়ার সাথে অনেক ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছো,লামিয়া আমার বোনের মতো তাই কোথাও গেলে,কোনো প্রয়োজনে ওকে সঙ্গে করে নিয়ে যাই।
আর আমাদের এই সম্পর্ক টাকে কোথায় এনে নামিয়েছো তুমি প্রতিভা,ছিহ্,আমি ভাবতেও পারছিনা আমার অগচরে এতকিছু হয়ে যাচ্ছে।
আর লামিয়া তুমি,তোমার থেকে আমি এমনটা এক্সপেক্ট করিনি,শেষে তুমিও ছিহ্

–ইয়ামিন বিশ্বাস করো,আমি প্রতিভাকে অনেকবার বুঝিয়েছিলাম,কিন্তু ও বারবার আমার কাছে অনুরোধ করে কান্নাকাটি করেছে,শেষঅবধি আমি আর না..

–শেষ অবধি ওকে আর না করতে পারোনি তাইতো,আমাকে জানাতে পারতে এসব কথা।কিন্তু নাহ্,সেসব না করে তুমিও ওর সাথে যোগ দিলে,ওয়াও গ্রেট।
আমাকে কি দুজন খেলার পুতুল পেয়েছো তোমরা,নিজেদের যা মন চাইবে সেটাই করবে।
তোমাকে আমি ভালোবাসি প্রতিভা,এই প্রতিদান দিলে তুমি????

To be continue….

(আর খুব বেশি পর্ব হবেনা,কেমন হচ্ছে জানাবেন,গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here