ভালোবাসার রোজ,পর্ব:৫

0
5508

#ভালোবাসার_রোজ[পর্ব -০৫]
#আফরোজা_আনজুম

ভার্সিটিতে নবীন বরণ অনুষ্ঠান আজ। আগে থেকেই পিউ আর আমি প্ল্যান করেছিলাম এই দিনে শাড়ি পরবো। তাই সকাল সকাল চলে এলাম রেবা আন্টিদের বাসায়। ভার্সিটি থেকে বেশি দূরে নয় বাসা। রিনি আপুর সাহায্যে দুজন শাড়ি পরে তৈরি হয়ে নিলাম। রুম থেকে বেরিয়ে নিঠুল ভাইয়ের সামনে পড়লাম। যখন এসেছিলাম তখন ঘুমে ছিল। এখন দেখছি ভার্সিটিতে যাওয়ার কথা তৈরি হয়ে নাস্তা করছে। পাশে আন্টিও আছে। আমাকে দেখে মুখের সামনে থেকে রুটির টুকরোটা সরিয়ে অবাক হওয়ার মতো করে বললো,” তুই শাড়ি পরেছিস! ও মাই গড। সামলাতে পারবি তো? নাকি মাঝপথে খুলেটুলে নাজেহাল অবস্থা হবে!”

ভীষণ মন খারাপ হলো আমার। এতো সুন্দর করে শাড়ি পরেছি, চোখে কাজল দিয়েছি, ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছি তা কী চোখে পড়ছে না! রিনি আপু আর পিউ তো খুব বলছিল আমাকে দেখে নাকি ছেলেরা পাগল হবে, মুগ্ধ হবে। মুগ্ধ না হোক অন্তত সুন্দর লাগছে সেটা বললেই তো খুশি হতাম আমি।

আন্টি বললো,” পারবে না কেন?ও ছোট নাকি?”

” আম্মা, ছোট চাচার গায়ে হলুদের রাতে কী হয়েছে ভুলে গেছো? চাচুর শ্বশুরবাড়িতে ওর শাড়ি খুলে সেটা পায়ের তলায় লেগে পড়ে গিয়েছিল ও মাটিতে। কী কান্না ওর! কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরেছে। ওকে দেখে তখন মনে হয়েছিল যেন ওর জামাই মারা গেছে আর ও সেই শোকে মাটিতে আঁচল গড়াগড়ি দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। ওই যে সিনেমায় দেখা যায় না জামাই মারা গেলে বউরা শাড়ির আঁচল মাটিতে চেঁচিয়ে বনে জঙ্গলে কেঁদে কেঁদে হেঁটে বেড়ায় ঠিক তাদের মতো। ভিডিওটা আমার ল্যাপটপে আছে। দেখবে? ” হাসতে হাসতে বললো নিঠুল ভাই।

আন্টি চড় মারার ভঙ্গিমা করে বকা দিলো নিঠুল ভাইকে। আর আমি হারিয়ে গেলাম অতীতে। ছোট চাচুর বিয়েতে শাড়ি খুলে কী অবস্থাটাই না হলো! আবার পড়ে গিয়ে কেঁদেছিলামও। তখন আমার অবস্থা ঠিক তেমনই যেমনটা নিঠুল ভাই একটু আগে বলেছে। এ নিয়ে সবাই কম মজা নেয় নি। আমার নিজেরও লজ্জা লাগে। আন্টি বললো,” তখন তো ও ছোট ছিলো। সেটা নিয়ে আজও লজ্জা দিতে হবে না কি! ”

” হুহ! ছোট ছিল! ক্লাস এইটে পড়তো তখন। ঐ বয়সী মেয়েরা তো শাড়ির সাথে সাথে বর-বাচ্চাও সামলায়। ”

আমি বললাম, ” ক্লাস এইটের মেয়েরা কী করে তার খবর তুমি কীভাবে জানো? আন্টি, জিজ্ঞেস করো তোমার ছেলেকে।”

আন্টি আমাকে ইশারায় ডাকলো আমায়।আমি গিয়ে পাশে বসলাম। আন্টি বললো, ” ওর কথায় কান দিস না। বাহ্! সুন্দর লাগছে তোকে।”

আমি নিঠুল ভাইয়ের দিকে একনজর তাকালাম। আন্টি আমার হিজাবটা টেনে ঠিক করে দিয়ে বললো, “মেয়েটা বড় হয়ে গেছে দেখছি।”

” শুধু হাতে পায়েই বড় হয়েছে। ” নিঠুল ভাই চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বললো।

তখনই পিউ আর রিনি আপু আসলো। নীল শাড়িতে পিউকে বেশ লাগছে। সেজেছেও অনেক। এতক্ষণ ধরে রিনি আপুকে পাগল বানিয়েছে। নিঠুল ভাই পিউকে দেখে বললো, ” বাহ্! তিন ঘন্টার ফল এ-ই। পিউ তোকে কেমন লাগছে বলবো?”

পিউ লজ্জিত মুখে পাল্টা প্রশ্ন করলো, “কেমন লাগছে?”

” হারপিকের বোতলের মতো লাগছে। নীল শাড়ি, লাল হিজাব। ”
কথাটা বলে নিঠুল ভাই হাসতে হাসতে চলে গেলো। নিঠুল ভাইয়ের এমন কমপ্লিমেন্টের সাথে আমাদের অট্টহাসিতে পিউ রাগে জ্বলে উঠলো।

নিঠুল ভাইয়ের সবচেয়ে ভালো বন্ধু রুপম ভাই। রুপম ভাইয়াকে প্রথম দিন দেখেই নাকি মনে ধরেছে পিউর৷ রুপম ভাই আবার ভদ্র পোলা। আমাদের নিজের বোনের মতো স্নেহ করে। সামনে রুপম ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। পিউ তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। আর ফিসফিস করে বারবার জিজ্ঞেস করছে, ” এই আমাকে সত্যিই হারপিকের বোতলের মতো লাগছে? বল না বোন!”

ভীষণ বিরক্ত বোধ করলাম। তাই রেগে জোরে বললাম, ” হ্যা হারপিকের বোতলের মতোই লাগছে তোকে। হয়েছে? ”

জোরে বলায় রুপম ভাইয়াও শুনতে পেয়ে মোবাইলের দিক থেকে নজর সরিয়ে পিউর দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো ফিক করে। সেটা দেখে পিউ আমার দিকে আগুন চোখে তাকালো। ইশ! ক্রাশের সামনে এভাবে লজ্জা না দিলেও পারতাম। পিউ থমথম মুখ করে অন্যদিকে হাঁটা ধরলো। আমিও তার পিছু নিলাম। আমার সাথে কথাই বলছে না সে। হাঁটতে হাঁটতে সে ভবনের একটা রুমে ঢুকে গেল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে। আমি হেসে দিলাম তার কাণ্ডে। তখনই দুজন ছেলে ঢুকলো রুমটাতে। এদেরকে বাইরে দেখেছিলাম আসার সময়। দুজনেই বিশ্রী নজরে দেখছে আমাদের। ভয় লাগতে শুরু করলো। এদিকটায় কেউ নেই। পিউ এসে আমার হাত ধরে বললো, ” চল।”

তাদের মধ্যে একজন বললো, ” আরে দাঁড়াও সুন্দরী। কোথায় যাচ্ছো? তোমাদের দেখেই তো আমরা এলাম। ”

আমরা চলে আসতে চাইলে একজন এসে পথ আগলে দাঁড়ায়। আমি পিউর হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম, ” কী সমস্যা? পথ আগলে রেখেছেন কেন অসভ্যের মতো? সরুন আমরা যাবো।”

” সিনিয়রদের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় জানো না?”

” সিনিয়ররা যদি ছোট বোনদের সাথে অসভ্যতামি করে তাহলে এভাবেই কথা বলতে হয়। ”

” অসভ্যতামির কী দেখলে? কিছু করিই নি আর বলছো অসভ্যতামি করছি! বলেছো যখন তাহলে অসভ্যতামি করতেই হয়,” কথাটা বলে ছেলেটা কাছে চলে আসলো আমার। ভয়ে পিছিয়ে গেলাম। ছেলেটা হেসে ডান হাতটা ধরবে এমন সময় পাশ থেকে পিউ হাত ছাড়িয়ে নিয়ে একটা চড় মেরে দিলো ছেলেটাকে। ছেলেটা প্রস্তত ছিল না এমন কিছুর জন্য। রেগে তেড়ে এলো পিউর দিকে। দেখতেই গাঁজাখোরের মতো চেহারা। এই মুহূর্তে আরও ভয়ঙ্কর লাগছে। চড় মেরে বিরাট ভুল করেছে পিউ। এখন যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে! ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো। পিউও কাঁপছে ভয়ে। এ সময় বাইরে থেকে আওয়াজ আসলো। রুপম ভাই কাউকে বলছে, ” এদিকেই এসেছিলো। বের হতে দেখি নি। ”

দুজন ছেলেকে সহ এক রুমে দেখে নিঠুল ভাই, রুপম ভাই দুজনেই চমকে উঠলো। তাদের দেখে স্বস্তি পেলাম। নিঠুল ভাই এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,” কী করছিস এখানে?”

” ওয়াশরুমে এসেছিলাম আমরা। এই অসভ্য দুটো পিছু নিয়েছে আমাদের। খারাপ কথা বলেছে, গায়েও হাত দিতে চেয়েছে।” ভয়ে কেঁদে উঠে বললাম।

প্রচন্ড রেগে গেলো নিঠুল ভাই। তাদের দিকে তেড়ে গিয়ে মারতে শুরু করলো। এর মাঝে একজন পালাতে চায়লে রুপম ভাই ধরে ফেলে।

” আমি ভেবেছিলাম আমার হিরোর হিরোগিরি দেখবো আজ। কিন্তু দেখ, কেমন হাঁদার মতো অসভ্যটাকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে,” ফিসফিস করে বললো পিউ।

ভয়ের মাঝেও হাসি পেল। পিউ গিয়ে বললো,” মারতে পারেন না আপনি? না মেরে বন্ধুর মতো আগলে রেখেছেন কেন বেয়াদব টাকে? ”

রুপম ভাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। কিছু বলার আগেই নিঠুল ভাই এসে ছেলেটাকে মারতে শুরু করে। অন্যজন মার খেয়ে নাজেহাল অবস্থা।

” ভার্সিটিতে এসে এগুলো করিস কুত্তার বাচ্চা? কাদের গায়ে হাত দিতে চেয়েছিস, কাদের খারাপ কথা বলেছিস জানিস! আর কোনোদিন যদি এই দুজনের দিকে চোখ তুলে তাকাস তো দেখিস কী করি। জানোয়ার। “রাগে গজগজ করে বললো নিঠুল ভাই। তার অ্যাকশান দেখে আমিও ভয় পেয়ে গেলাম। রুপম ভাই ছাড়িয়ে নিলো নিঠুল ভাইকে।

” এখানে এসেছিস কেন তোরা? কিছু হয়ে গেলেও তো কেউ দেখতো না।”

” আমরা জানতাম নাকি আমাদের পিছু নিবে? আমাদেরকেই চোখে পড়লো!” ভয়ে ভয়ে বললাম আমি।

“এত সেজেগুজে আসার দরকার কী ছিল! চোখে তো পড়বেই।”

আমি মিনমিন করে বললাম, ” আসল মানুষটার চোখেই তো পড়লাম না। ”

নিঠুল ভাই শুনে নি। চলে গেলো। পিউ আমার দিকে সন্দেহের নজরে তাকিয়ে বললো, ” তোর আসল মানুষটা কে বলতো! একটু আগে বলেছিস আমি স্পষ্ট শুনেছি। তোর আসল মানুষ আছে তা আমি জানিই না। কী রকম তুই! আমি একটা অক্ষরও আমার পেটে রাখি না। সব তোকে বলে দিই। আর তুই এতবড় কথাটা আমার কাছ থেকে লুকালি! রুপম ভাইকে যে আমি প্রথম দেখায় মন দিয়ে বসেছি সেটা সর্বপ্রথম তোর সাথে শেয়ার করেছি। আর তুই কি-না…। ”

” তোর বদহজম হয় তাই পেটে কথা রাখতে পারিস না।সব আমার কাছে এসে উগলিয়ে দিস। আর বুঝিসও বেশি। তুই না গান গাইবি! একটু প্রিপারেশন নে নয়তো দেখবি রুপম ভাই ইম্প্রেস হওয়ার বদলে তোর কা কা শুনেই ফুরুৎ।” কথাটা রেগেই বললাম। যাতে সে এ বিষয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে। পিউ এমন মেয়ে যে কোনোকিছু একবার সন্দেহ হলে সেটার আসল রহস্য বের না করা পর্যন্ত শান্তি পায় না। যদি আমার মনের কথা একটু টের পায় তাহলে সেটা রটাতে বিন্দুমাত্র সময় নিবে না।
.
.
” পিউ একটু পর তোমার নাম এনাউন্স করবে। রেডি তো?”

মিষ্টি আপুর কথায় পিউ পেছনে মাথা ঘুরিয়ে হেসে উত্তর দিলো, ” হ্যা, আপু। একদম রেডি।”

মিষ্টি আপু বেস্ট অফ লাক বলে চলে গেলো। পিউ আমাকে ফিসফিস করে বললো, ” মিষ্টি আপু অনেক ভালো তাই না! এতো বড় লোকের সুন্দরী মেয়ে হয়েও কোনো অহংকার নেই। নিঠুল ভাই আর মিষ্টি আপু দুজন দুজনকে পছন্দ করে বুঝেছিস! এখনো কেউ কাউকে বলে নি। আমি সব খবর নিয়েছি। নিঠুল ভাইয়ের সাথে খুব মানায় আপুকে। মিষ্টি আপু… ”

” সারাদিন মিষ্টি আপু, মিষ্টি আপু করিস কেন হ্যা? এমনভাবে আপু ডাকিস যেন সে তোর মায়ের পেটের বোন। অসহ্য। ”

” এমন রেগে যাচ্ছিস কেন তুই?! ”

পিউর কাঁদো মুখ দেখে কিছু বললাম না। অন্য সারিতে আমাদের সোজাসুজি সিটে বসেছে নিঠুল ভাই সহ তার বন্ধুরা। মিষ্টি আপুর সাথে নিঠুল ভাইয়ের আচার ব্যবহার খুব চোখে পড়ছে আমার। তাদের একসাথে দেখলেই কেমন যেন লাগে। মিষ্টি আপু সত্যিই অনেক ভালো আর মিশুক। প্রথম দিন একটু অহংকারি মনে হলেও এরপর বুঝলাম ভীষণ ভালো মেয়ে সে। পিউ আর আমার সাথে খুব ভালো আচরণ করে, খোঁজ-খবর নেয়। তাও আমার অসহ্য লাগে তাকে।
.
.
.

পা টিপে টিপে হেঁটে ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ালাম। ছাদের ফ্লোরটা ভিজে শ্যাতশ্যাতে হয়ে গেছে। বৃষ্টির পর চারপাশটা কেমন থমকে আছে। আকাশটা একদম পরিষ্কার। অনুষ্ঠানের শেষের দিকে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল যা থেমেছে একটু আগে। বৃষ্টি হওয়ায় নিঠুল ভাই পিউ আমার আমাকে তাদের বাসায় নিয়ে এসেছে জোর করে।
এসেই পিউ ঘুমিয়ে পড়েছে। বৃষ্টির সময় কাঁথা মুড়িয়ে ঘুমানো খুবই আরামের। অবশ্য আমার সবসময়ের ঘুম আরামের হয়। সুযোগ পেলেই যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে যাওয়ার অভ্যাস। এর জন্য আম্মু সবসময় বলে শুধুমাত্র ঘুমের জন্যই জীবনে উন্নতি করতে পারবো না। সেই আমি অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও ঘুমিয়ে পারলাম না। ইচ্ছে করছে সবকিছু ছেড়ে ছুঁড়ে চলে যায়। যে মানুষটাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি তার মনের কোণের কোথাও আমি নেই। থাকবোই বা কেন? সে নিশ্চয়ই তার লেভেলের কাউকে বাদ দিয়ে আমাকে তার মনের আসনে বসাবে না! এসব ভাবতে ভাবতে অনুভব করলাম আমার পেছনে কেউ দাঁড়িয়েছে। তাও পেছনে ফিরে দেখার ইচ্ছে জাগলো না। মাঝে মাঝে এমন হয় যে কৌতুহলী মানুষটাও কোথায় কী হচ্ছে, কে এসেছে তা দেখার, জানার আগ্রহ পায় না, মন সায় দেয় না। ঐ সময় তার মনটা ঠিক কোথায় আছে সে নিজেও জানে না। পরে স্মরণ করলেও বুঝে আসে না এতক্ষণ সে ঠিক কী ভাবছিল। ঘাড়ে উষ্ণ নিঃশ্বাস অনুভব হতেই চমকে উঠলাম। পিছনে ফিরতেই নিঠুল ভাই সরে দাঁড়ালো। ঠাট্টার সুরে বললো, “এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নয়নকে দেখা হচ্ছে! নয়নে নয়নে বেশ কথা হচ্ছে দেখলাম নয়নের সাথে। ”

চট করে নিচে তাকিয়ে দেখি নয়ন নামের পাগল লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে হা করে। রেবা আন্টির কাছ থেকে শুনেছি মা মারা যাওয়ার পর থেকেই নাকি পাগল হয়ে গেছে লোকটা। এই এলাকারই ছেলে সে। আমার দৃষ্টি এতক্ষণ এর দিকে ছিল!
নিঠুল ভাইয়ের দিকে তাকালাম। সে মোবাইলে গান প্লে করেছে একটার পর একটা। মোবাইলে বেজে উঠলো,

তুমি যাকে ভালোবাসো
স্নানের ঘরে বাস্পে ভাসো
তার জীবনে ঝড়
তোমার কথার শব্দ দূষণ
তোমার গলার স্বর
আমার দর্জায় খিল দিয়েছি
আমার দারুন জ্বর
তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর
তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর….

হঠাৎ আমি বলে উঠলাম, ” মিষ্টি আপু অনেক সুন্দর। তাই না! ”

কথাটা বলেই চুপ থাকলাম শোনার আশায়। তৎক্ষণাৎ কিছু বললো না নিঠুল ভাই তবে হাসছে সে। হুট করে আমার কাছাকাছি চলে আসে। চমকে তার দিকে তাকালে দেখি তার দৃষ্টি আমার চোখজোড়ার উপর নিবদ্ধ। খুব কাছ থেকে দেখছি তাকে। তার চোখজোড়ায় চোখ স্থির রাখা সম্ভব নয় আমার পক্ষে। সে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে সে বলে, ” হ্যা। অনেক সুন্দর। ”

” ক..কে?” কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলাম।

” আমার ভালোবাসার মানুষ।”

” তোমার দেখা সেরা সুন্দরী সে?”

” উহুম। আমার দেখা সেরা সুন্দরী আমার আম্মা। তারপর সে।”

” অনেক ভালোবাসো তাকে?”

” হ্যা। নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসি। ”

ঢোক গিলে কান্না আটকালাম আমি। তাকে কান্না দেখাবো না। আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালে আমার চোখের পানি উপচে পড়বে তার সামনে যা আমি একদমই চাইছি না। দৌঁড়ে চলে আসতেই সে পেছন থেকে হাত ধরে ফেলে। কাছে টেনে নেয় আমাকে। আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, ” চলে যাচ্ছিস কেন এভাবে? আমার ভালোবাসার মানুষটার সম্পর্কে আর কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞেস কর।”

এবার চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে। তার কাছ থেকে ছুটার চেষ্টা করলে সে আরো শক্ত করে চেপে ধরে। চেষ্টা করেও না পেরে স্থির হয়ে গেলাম। সে আমার হাতদুটোর উপর তার হাতদুটো রেখে আমার কাঁধে তার থুতনি চেপে রেখেছে। ঝাপসা চোখে দেখলাম পিউ আসছে। সে দেখে ফেলেছে এভাবে। নিঠুল ভাইয়ের হাতও আলগা হয়ে গেছে। হাত সরিয়ে দৌঁড়ে যেতেই স্যাঁতসেঁতে ফ্লোরে পিছলে পড়ে গেলাম। নিঠুল ভাই আর পিউ দৌঁড়ে আসে। পিউ হাত ধরে উঠতে বললো। ব্যাথায় কেঁদে উঠলাম। নিঠুল ভাই চিল্লিয়ে ধমক দিয়ে উঠলো। তারপর নিজেই কোলে তুলে নিলো।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here