ভালোবাসারা ভালো নেই পর্ব ৬+৭

0
1443

#ভালোবাসারা_ভালো_নেই
#অজান্তা_অহি
#পর্ব – ০৬+৭

মেঝে মোছার দায়িত্ব দিয়ে সালেহা খালা চলে গেল। আমি এক বুক কষ্ট নিয়ে পানির বালতি হাতে নিলাম। ঘুরে ঘুরে কাজ করছিলাম। টাইলস করা মেঝে কখনো পরিষ্কার করা হয়নি। সারাজীবন মাটির ঘরে কাটিয়েছি। ইদে ইদে ঘর লেপা হতো। পানি দিয়ে মাটি গুলিয়ে! আজ প্রথম মেঝে মোছার কাজ। দীর্ঘ সময় লেগে গেলো ড্রয়িং রুম সহ আশপাশ পরিষ্কার করতে। ক্লান্ত হয়ে সোফার পাশের প্লাস্টিকের চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। হঠাৎ চোখ গেলো চেয়ারের নিচে।

ঝলমলে সোনালি রঙের একটা আংটি পড়ে আছে। দেখে স্বর্ণের মনে হচ্ছে। কিয়ৎক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইলাম আমি। বসার ঘরে কেউ নেই এখন। রান্নাঘরে সালেহা খালার কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে। আংটি টা তুলবো নাকি তুলবো না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পরে গেলাম। হুট করে অন্য এক প্রশ্ন মস্তিষ্কে উঁকি দিলো। আমাকে পরীক্ষা করার জন্য তারা আংটি ফেলে রাখেনি তো? এতবড় বাড়িতে থাকতে দিয়েছে। দামী জিনিসপত্র চারিদিকে ছড়ানো ছিটানো। যে কেউ লুকিয়ে ফেলতে পারে। হয়তো পরীক্ষা করার জন্য আংটি টা স্বেচ্ছায় ফেলে রেখেছে। তা না হলে কারো আঙ্গুল থেকে আংটি খসে পড়েছে। অথচ সে বিন্দুমাত্র টের পায়নি!

আংটি টা হাতে তুলে নিলাম আমি। পরীক্ষা হোক আর না হোক! এই আংটি কখনো চুরি করতাম না। মা শেখায়নি। ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি। চরম দারিদ্র্যের মুহূর্তেও মা আমার অসৎ পথে চলা শেখায়নি। উঠে রান্নাঘরের দিকে গেলাম। সালেহা খালাকে ডেকে বললাম,

‘খালা, এই আংটিটা বসার ঘরের মেঝেতে পড়ে ছিল।’

সালেহা খালা এগিয়ে এলো। তার পেছন পেছন এলো বাড়ির বড়ো কর্তা গিন্নি। কাছে এসে আংটি টা নিয়ে ভীষণ খুশি হলেন তিনি। স্মিত হেসে বললেন,

‘এটা তো আমার। কখন আঙ্গুল থেকে পড়ে গেছে খেয়াল করিনি।’

আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। উনি নিজে থেকে আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

‘তোমার নাম কি যেনো মা?’

‘জুঁই।’

‘ওহ্। তুমি আমাকে বড় মা বলে ডেকো। সামান্তা, জাবির, জাকারিয়া সবাই আমাকে বড় মা বলেই ডাকে। তুমিও ডেকো।’

কৃতজ্ঞতায় মাথা নত হয়ে এলো আমার। চোখের কোণ ভিজে উঠলো। কিছু বলতে পারলাম না। শুধু মাথা নাড়লাম। সালেহা খালা গলা উচিয়ে ড্রয়িং রুম, ডাইনিং রুম দেখলো। বললো,

‘মোছা শ্যাষ?’

আমি মাথা নেড়ে বললাম,

‘হুঁ। শেষ!’

সদ্য বড় মা বলে ডাকার অধিকার দেওয়া মানুষটা খালাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

‘সালেহা তুমি বরং জুঁইকে জাকারিয়ার ঘরটা দেখিয়ে দাও। গুছিয়ে রাখুক! ওদের নানুবাড়ি থেকে ফেরার সময় হয়ে গেছে। আর ফাইজানের ঘরটাও দেখিয়ে দিয়ো। পরিষ্কার করে রাখবে।’

‘আচ্ছা বু।’

সালেহা খালার পিছু পিছু রওনা হলাম। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে খালা বললো,

‘বড় বুয়ের দেবর বাড়ির ছোট কর্তা। তার এক মাইয়া আর দুইডা পোলা। মাইয়াডা বড়ো। কলেজে পড়ে। পোলা দুইডা স্কুলে। আর বড়ো বুয়ের দুইডা পোলা শুধু। মাইয়া নাই। বড় পোলা বিদেশে পড়াশুনা করতে গেছে। আর ছোটো পোলা খুলনায় ইঞ্জিন নিয়া পড়ে। কিছুদিন হইলো ছুটিতে আইছে।’

খুলনায় ইঞ্জিন নিয়ে পড়াশুনা করার বিষয়টা ছাড়া বাকি সব বোধগম্য হলো। জিজ্ঞেস করলাম,

‘আপনি কতদিন হলো এ বাড়িতে আছেন খালা?’

‘বহুত দিন। আট-দশ বছর। বাপজান ছোট্ট বেলা বিয়া দিছিলো। জামাই বতরের সময় ধান কাটতে গিয়া মইরা গেলো। ঝড়ের দিনে বাজ পইড়া! তারপর আর বিয়া-সাদী করলাম না। বাপজান অনেক বুঝাইলো। কিন্তু মানুষটারে ভুলতে পারতাম না কিচ্ছুতেই। বড় ভালা মানুষ আছিলো তো! তাই আর বিয়া করা হয় নাই। আব্বা-মা যতদিন বাঁইচা ছিল গেরামে ছিলাম। একসময় তারা পরপারে চইলা গেলো। ভাইরা তখন আর ভাত দিলো না। বাধ্য হইয়া ঢাকাতে আইলাম। কাজ নিলাম। তারপর থিকা এইখানেই আছি।’

খালা থামলো। খালার কথা শুনে মন খারাপের তীব্রতা বেড়ে গেলো। কিন্তু কিছু বলতে পারলাম না। যার নিজেরই এক সমুদ্র দুঃখ সে অন্যকে কি সান্ত্বনা দিবে!

‘এইডা জাকারিয়া বাবাজীর রুম। আর দক্ষিণের রুমডা ফাইজান বাবাজীর। গোছগাছ কইরা নিচে আসো। কিছু খাইয়া ঘুমায় যাও। আইজ আর কাজ নাই। আমাগো রান্নাবাটা শ্যাষ।’

খালা চলে গেলো। আমি ছবির মত সুন্দর এক রুমে ঢুকলাম। জাকারিয়া নাকি বাচ্চা মানুষ। ক্লাস থ্রিতে পড়ে। অথচ তার জন্য আলাদা ঘর। কি সুন্দর!

জাকারিয়ার রুম নানা রকমের খেলনা দিয়ে ভর্তি। বেশ খানিকটা সময় লাগলো গুছাতে। সব মোটামুটি গুছিয়ে বের হয়ে এলাম। গেলাম দক্ষিণ দিকে। কিনারের রুমটার সামনে দাঁড়ালাম। বাহির থেকে দরজা বন্ধ ছিল। ভয়ে ভয়ে খুললাম। বর্তমানে এ বাড়ির বড় ছেলের ঘর এটা। দুরুদুরু বুকে ভেতরে পা রাখলাম। ভেতরে ঢুকতে ভয়ার্ত দু চোখে মুগ্ধতা এসে ভর করলো। রুমে কি ছিল বুঝতে পারলাম না। শুধু মনে হলো কোনো শীতল সমুদ্রে পা রেখেছি। দেয়ালের পেইন্টিং গুলো হৃদয় ছুঁয়ে গেলো। ছোট বেলায় টেলিভিশনে এগুলো দেখতাম। বাড়িতে টেলিভিশন ছিল না। দূরের এক চাচীর বাড়ি টেলিভিশন দেখতাম। কত বকাঝকা করতো তারা। মুখ কালো করে রাখতো। তবুও টিভি দেখার লোভ সামলাতে পারতাম না। মাটিতে বসেই দেখতাম। আজ যেনো সব চাক্ষুষ দেখছি।

এতো বড় রুম! চোখ ঝলসানো ডেকোরেশন। চারপাশ স্বপ্নের মতো সুন্দর। হঠাৎ চোখ গেলো বিছানার পাশের টেবিলটার উপর। বাঁধাই করা এক ছবি। ছবিতে একজন সুদর্শন যুবককে দেখা যাচ্ছে। আনমনে কাছে এগিয়ে গেলাম আমি। তার উজ্জ্বল চোখ দুটো আমার পানে। ছবির স্থির চিত্রটি কেমন জানি জীবন্ত মনে হচ্ছে। ভারী লজ্জাবোধ হলো আমার। মনে হলো কারও অগোচরে তার ব্যক্তিগত জায়গায় এসে পড়েছি। দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলাম।

বিছানা গুছানো ছিল। রুম পরিপাটি! আমি শুধু বালতিতে করে পানি নিয়ে মেঝে পরিষ্কার করলাম। রুমের সাথে লাগোয়া বড়ো বারান্দা। বারান্দায় অসংখ্য চারাগাছ আর ফুল লাগানো। এর বেশিরভাগ আমি চিনি না। শুধু গোল গোল পাতার গাছটা পরিচিত মনে হলো। গ্রামের পুকুর পাড়ের জঙ্গলে একদিন দেখেছিলাম। আর দাঁড়ালাম না। বারান্দা পরিষ্কার করে সরে এলাম।

_________

এর মধ্যে কয়েকদিন কেটে গেছে। সম্পূর্ণ অপরিচিত কিছু মানুষদের পাশে নিয়ে আমার দিন কাটছে। এ কয়েক দিন অনেকটা ঘর বন্দি জীবন পার করেছি। শুধু ভোরে ঘুম থেকে উঠে খালার সাথে কাজ করি। একটু বেলা বাড়তে এ বাড়ির লোকজন সব নাস্তা খাওয়ার জন্য নিচে নামে। আমি তখন আড়ালে থাকি। খেয়ে দেয়ে তারা যখন সবাই কাজে চলে যায় তখন আবার কাজ করি। সবাই স্কুল, কলেজ, আর অফিস নিয়ে ব্যস্ত। এতো বড়ো বাড়িতে সারাদিন শুধু আমি, সালেহা খালা আর বড় মা থাকি। আরো একজন থাকেন। বড় মায়ের শাশুড়ি। তাকে অবশ্য আমি এখনো দেখিনি। তিনি কিছুদিন হলো মেয়ের বাড়ি ঘুরতে গেছেন। মোহাম্মদপুর! সেটা কতদূর আমি জানি না। তবে ঢাকার মধ্যে নাকি!

বড় মায়ের একমাত্র ছোট জা মাস্টারি করে। কলেজের মাস্টার। এতো সুন্দর তিনি! একদিন রাতের বেলা তারা সবাই খাচ্ছিল। আমি লুকিয়ে দরজার আড়াল থেকে দেখলাম। মানুষটাকে দেখে মনে হয় না তিন-তিনটা সন্তান! তার বড়ো মেয়ে সামান্তা। পরীর মত সুন্দর। যে একবার চোখ রাখবে তার চোখ ফেরানো মুশকিল। সারাক্ষণ ফিটফাট পোশাক পরে থাকে। মনে হয় বাইরে বের হওয়ার জন্য রেডি হয়ে বসে আছে। কিন্তু না! তার বাড়িতে পরার জামা কাপড় দারুণ সুন্দর। আর আমার পরণে সর্বদা সুতি কাপড়ের জামা পায়জামা। সেটাও রংচটা!

জাবির আর জাকারিয়াকে চিনে ফেলেছি। সবাইকে দেখা শেষ। জাকারিয়া ফুটফুটে এক বাচ্চা। আর জাবির? জাবির বড়সড়। বয়সে আমার সমান বা একটু বড় হবে। দশম শ্রেণীতে পড়ে। ঢাকার নামকরা স্কুলে নাকি। প্রতিদিন গাড়ি করে যায় তারা। কি রাজকীয় ব্যাপার স্যাপার! হুট কর মন খারাপ হয়ে গেল। আমার কি আর স্কুল যাওয়া হবে না? কোনোদিন আর পড়াশুনা করা হবে না? তাপস সার সামনের মাসে নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র পড়াতে চেয়েছিল। তা আর শেখা হবে না বুঝি!

ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস পড়লো। ভেড়ানো দরজার আড়াল থেকে বাহিরে উঁকি দিলাম। ডাইনিং রুম মোটামুটি ফাঁকা। শুধু একজন বসে আছে। ফাইজান নামের এ বাড়ির বড় ছেলেটা। ছেলেটা একেবারে সুঠাম দেহের। কি সুন্দর করে ভাত খাচ্ছে। সরু সরু আঙ্গুল দিয়ে ভাত নেড়েচেড়ে খাচ্ছে। বড়লোক দের ভাত খাওয়ার দৃশ্যও কেমন চমকপ্রদ মনে হলো।

রুমের ভেতর চলে এলাম। বিছানায় গা মেলে দিলাম। আড়াল থেকে এ বাড়ির সবাইকে দেখা শেষ। শুধু দেখিনি ফাইজান ভাইয়ের বাবাকে। সালেহা খালা বলেছে তিনি বড়ো রাজনীতিবিদ। কি একটা কাজে বিদেশে গিয়েছেন। বিদেশ যাওয়া নাকি এদের কাছে দুধ ভাতের মতো সহজলভ্য।

মাটিতে বিছানো বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করলাম কিছুক্ষণ। আমার মনে একটা খটকা লেগে আছে। এ বাড়িতে যে নতুন একজন কাজের লোক এসেছে সেটা অনেকে জানে না। জানলে কৌতূহল হবে! দু চারটে কথা বলবে! কিন্তু কই? কেউ তো খোঁজ নেয় না! নাকি বড়লোকদের হিসাব আলাদা? তারা কাজের লোকদের মতো এমন নগণ্য বিষয়ে জানার আগ্রহ রাখে না?

________

মাঝরাতে ভয়ংকর এক দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙে গেলো আমার। লাফিয়ে উঠে পরলাম। ক্ষনিকের জন্য ঘর দুয়ার অপরিচিত মনে হলো। কয়েক মিনিট সময় লাগলো সব স্মরণ হতে। আস্তে আস্তে বুকের কাছে তীব্র জ্বলুনি অনুভূত হলো। মনে পড়লো এই বিশালাকার দুনিয়ায় আমার আপন কেউ নেই। বর্তমানে কোনো এক বাড়ির আশ্রিতা আমি।

চোখের জলে দুই গাল ভেজা। ওড়নার এক অংশ দিয়ে মুছে ফেললাম। ঘুমের মধ্যে কান্না করা অভ্যাস হয়ে গেছে। সেদিন রাতে সালেহা খালা দেখি ধাক্কাচ্ছে। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি চোখের জলে বালিশ ভিজে গেছে।

চোখ মুছে শুকনো ঢোক গিললাম। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। পানির জন্য ভেতরে ছটফটানি শুরু হলো। বাথরুমের কিঞ্চিৎ আলো রুমে প্রবেশ করেছে। সেই আলোতে পাশে তাকিয়ে দেখলাম খালা বেহুঁশ হয়ে ঘুমাচ্ছে। তাকে আর ডাকলাম না। সারাদিন ভীষণ পরিশ্রম করে মানুষটা।

নিজেই উঠে পড়লাম। শিথানের কাছের জগ উচুঁ করে দেখি পানি নেই। ফের দীর্ঘশ্বাস বের হলো। জীবন এতো কঠিন কেন? আবছা অন্ধকারে দরজার ছিটকিনি খুলে বের হলাম।

রান্নাঘরের দরজা ভেড়ানো। চারপাশে নজর বুলালাম। রাতের বেলা নিচ তলায় আমি আর সালেহা খালা থাকি। এতো রাতে এই দুজন ছাড়া দ্বিতীয় কেউ নেই। আমি বসার ঘরে দুটো চক্কর দিলাম। হাত পা বসে এসেছে একদম। এ বাড়িতে কেমন দম বন্ধ হয়ে আসে। এখন চাইলেই প্রিয় পুকুর পাড়ে বসতে পারি না, ছুটোছুটি করতে পারি না। কি যে কষ্ট লাগে। মন খারাপ করে ডাইনিং এ চেয়ার টেনে বসে পরলাম। কিছুক্ষণ পর গ্লাসে পানি ঢাললাম। উচুঁ করে চুমুক দিতে আচমকা পেছন থেকে পুরুষ কণ্ঠ ভেসে এলো।

‘কে তুমি?’

আমাকে সম্পূর্ণ পেছন ঘুরতে হলো না। কিঞ্চিৎ ঘাড় বাঁকাতে পুরুষ অবয়ব দৃশ্যমান হলো। যার হাতে মগ ধরে রাখা। মগের ভেতর থেকে ক্রমাগত ধোঁয়া উড়ছে। পুরুষ অবয়ব আর কেউ নয়। এ বাড়ির দুই নাম্বার বড় ছেলে। ফাইজান! সে ভ্রু যুগল কুঁচকে দ্বিতীয় বার প্রশ্ন করলো,

‘কে তুমি? এতো রাতে এখানে কি করছো?’

(চলবে)
#ভালোবাসারা_ভালো_নেই
#অজান্তা_অহি
#পর্ব – ০৭

পুরুষ অবয়ব আর কারো নয়। এ বাড়ির দুই নাম্বার বড় ছেলে। ফাইজান! সে ভ্রু যুগল কুঁচকে দ্বিতীয় বার প্রশ্ন করলো,

‘কে তুমি? এতো রাতে এখানে কি করছো?’

শরীর জমে স্থির হয়ে এলো আমার। হাতের গ্লাস ঢিলে হয়ে যেতে ধপাস করে টেবিলে নামিয়ে রাখলাম। মাঝরাতের অনাকাংখিত এই সাক্ষাৎ আমার ছোট্ট মস্তিষ্ক নিতে পারলো না। ভয়ে, আতঙ্কে জমানো জল চোখের কিনার বেয়ে নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়লো। তার কণ্ঠ নরম হয়ে এলো। ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘কান্না করছো কেন? কি হয়েছে? দেখি কথা বলো তো। বাড়ির লোকজনকে ডাক দিবো? কে তুমি?’

‘আমি জুঁই।’

‘হুঁ? কি বললে? জু?’

ভেজা গাল দ্রুত মুছে ফেললাম। এখান থেকে সরে যেতে হবে। পালিয়ে যেতে হবে। তড়িঘড়ি করে বললাম,

‘জুঁই। আমি এ বাড়ির নতুন কাজের মেয়ে। কিছুদিন হলো এসেছি।’

‘হ্যাঁ?’

ফাইজান নামক ছেলেটার কুঁচকানো কপালের খাদ আরো গভীর হলো। বিস্ময় নিয়ে চেয়ে রইলো! যেন বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে।

‘এতো পিচ্চি মানুষ? এতো বাচ্চা বয়সে কেউ কারো বাড়িতে কাজ করে? পাগল নাকি তুমি?’

‘করে তো! এই যে আমি করছি।

‘বাড়িতে কে কে আছে তোমার?’

এই প্রশ্নের উত্তর দিলাম না। এড়িয়ে গেলাম। আমাকে চুপ থাকতে দেখে সে আর প্রশ্ন করলো না। অস্পষ্ট সুরে কিছু একটা বলে চলে গেল। আমি ধপ করে বসে পড়লাম। এতক্ষণ নিঃশ্বাস আটকে ছিলাম যেনো! বুক ভরে শ্বাস নিলাম। পানির তৃষ্ণা মরে গেছে। রুমে যাওয়ার জন্য উঠতে গিয়ে দেখি টেবিলের উপর মগ রাখা। ফাইজান ভাই রেখে গেছে? কখন নামিয়ে রাখলো? কাছে গিয়ে উবু হয়ে দেখলাম। ভেতরে ঘন তরল পদার্থ। এখনো ধোঁয়া উড়ছে। এটা চা নাকি কফি? বুঝতে পারলাম না। কফি খাইনি কখনো। কিন্তু চা খাওয়া হয়েছে দু’বার। যদিও স্বাদ ভুলে গেছি।

ফাইজান ভাই কি মগটা ভুলে রেখে গেছে? হয়তো! এতো রাতে তো সে এসব বানানোর জন্যে নিচে নেমেছিল। চিন্তিত মুখে সিঁড়ির উপরে চোখ রাখলাম। হয়তো নিচে নামবে আবার। মগের জন্য। আমি দ্রুত রুমে ঢুকে গেলাম।

_______

ভোরবেলা মৃদু চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গলো। বসার ঘরে বড়ো মায়ের গলা শোনা যাচ্ছে। কাকে যেন ধমকাচ্ছে। আমি উঠে পড়লাম। বাথরুম থেকে চোখ-মুখ ধুয়ে বের হলাম। সালেহা খালা ঘরে নেই। কাজ শুরু করে দিয়েছে হয়তো। খালাকে কতবার বলেছি, সে যখন বিছানা ছাড়ে আমাকেও ডেকে দেয় যেন। কিন্তু কখনো ডাকে না। খালা ভীষণ স্নেহ করে আমায়।

রুম থেকে বের হতে গিয়ে বিপত্তি বাঁধলো। ফাইজান ভাই বসার ঘরে। সাথে বড়ো মা, খালা। এক কর্ণারে জাবিরকেও দেখা যাচ্ছে। আমি রান্নাঘরের পাশে দাঁড়িয়ে গেলাম। বড়ো মার হাতে রাতের মগ। তিনি চেঁচিয়ে বললেন,

‘রাতে কফি খেয়েছিস কে? বল!’

জাবির মাথা নাড়ল। বললো,

‘আমি তো না।’

‘ফাইজান তোর কাজ, না?’

‘আহা! একটু তো কফি বানিয়েছি। এমন করছো কেন মা?’

বড়ো মা রেগে গেলেন। বললেন,

‘তোকে কতবার বলেছি না যে রাত জাগবি না? রাত জেগে জেগে একবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলি মনে নাই? আবার রাত যাগা শুরু করেছিস?’

‘আচ্ছা যাও। আর কফি খাবো না। রাতও জাগবো না। এবার কি জন্যে ডাকছিলে বলো।’

বড়ো মায়ের হঠাৎ মনে পড়লো যেন! ব্যস্ত হয়ে গেলেন তিনি। মগটা নামিয়ে রেখে বললেন,

‘তোর দাদীকে আনতে যেতে হবে। মোহাম্মদপুর গিয়ে নিয়ে আয়। একা আসবে না।’

ফাইজান ভাই লম্বা করে হাই তুলল।

‘এইটা বলার জন্য এত ভোরে ঘুম থেকে ডেকে তুলেছ? আশ্চর্য! আমার সময় হবে না। যেতে পারবো না!’

ফাইজান ভাই এক মুহূর্ত দেরি করলো না। সিঁড়ি দিয়ে উঠে চলে গেল। তার পেছন পেছন জাবিরও চলে গেল। বড় মা নিজের মতো বকতে থাকলেন। আমি রান্নাঘরে ঢুকলাম। এঁটো থালাবাসন ধুতে হবে।

_________

শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। আজ এ বাড়িতে হরেক রকমের রান্না হয়েছে। সেই সকাল দশটা থেকে শুরু হয়েছিল। শেষ করতে করতে বেলা দুটো বেজে গেলো। রান্নার যাবতীয় কাজ সালেহা খালা আর বড়ো মা করলো। আমি কুটা বাছা করেছি। আনা নেওয়া করেছি সব। এ বাড়ির কেউ এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। দু একজন উঠে হালকা নাস্তা করে আবার ঘুম!

সবাই উঠলো দুপুর বেলা। পরিষ্কার হয়ে হয়ে নিচে নেমে খাবার খেলো। সবার খাওয়া শেষ হতে সালেহা খালা বের হলো। একদিনের ছুটি নিয়েছে সে। কাছে কোথায় যেন তার বোন থাকে। পাতানো বোন। কিন্তু অনেক ভালো সম্পর্ক। খালা ব্যাগে কাপড়-চোপড় নিয়ে চলে গেলো। আমি খালাকে ধরে বার বার করে বলে দিলাম। একদিনের বেশি যেন না থাকে। এই মানুষটাকে কেমন আপন আপন লাগে। প্রায়ই ঘুম ভাঙতে দেখি তার বুকের মাঝে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছি। খালা মাঝে মাঝে চুল টেনে টেনে তেল দিয়ে দেয়। অগোছালো চুল বিনুনী করে দেয়। মমতা মিশ্রিত চোখে তাকায়। একটা মানুষকে আপন ভাবতে আর কি লাগে?

নিজের যত্ন নিতে ভুলে গেছি সেই কবে! আমার সাজানো গোছানো পৃথিবীটা উলোট-পালোট হওয়ার পর পর। আগে মাথার চুল পরিপাটি করে রাখতাম। প্রতিবার বাড়ির ভাইরে পা রাখার সময় আয়নায় একবার নিজেকে দেখতাম। ঠিকঠাক লাগছে কিনা! যদি রাস্তায় রাফি ভাইয়ের সাথে দেখা হয়? বেশিরভাগ সময় আমায় আশাহত হয়ে হতো। তার সাথে দেখা হতো না। মাঝে মাঝে আমি দেখলেও তার নজরে আমি পড়তাম না। তার নজরে পড়তাম কাঠফাটা রোদের দিনে। দুপুরবেলা স্কুল থেকে ফেরার পথে।
যখন আমাকে পুরোদস্তুর বিধ্বস্ত লাগতো। অথবা দেখা হতো আমার চরম দুঃখের সময়ে। আব্বা মারধোর করেছে। সাথে গালিগালাজ করছে। আমি রাগে, দুঃখে বাড়ির বাইরে পা রাখতে তার সাথে দেখা হতো। সে তখন স্নো মেখে, ঝলমলে চুল উড়াতে উড়াতে পাশ দিয়ে যেত। কদাচিৎ জিজ্ঞেস করতো,

‘জুঁই নাকি?’

আমি উত্তর দিতে পারতাম না। অপমানে মুখ কালো হয়ে যেত। সমস্ত রাগ গিয়ে পড়তো আব্বার উপর।

পুরোনো কথা স্মরণ হতে মন খারাপ ভাব বেড়ে গেলো। আগের আমি আর এখনের আমি’র মধ্যে কত তফাৎ। আগে সারাক্ষণ ছুটোছুটি করতাম। ছটফট করতাম। প্রচন্ড দুঃখের দিন গুলোতেও হাসি থামতো না। স্কুলে বেশ কয়েকজন বান্ধবী ছিল। তাদের সাথে কত গল্প গুজব হতো। ওরা এখন কেমন আছে? আমার পৃথিবী এক রাতের মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেলো। তবুও ওরা খোঁজ নিল না। ওদের আমার কথা মনে পড়ে না? মিলি? অন্তত মিলির তো মনে পড়ার কথা। মিলি কেমন আছে এখন? হয়তো আগের মতো আছে। ভালো আছে।

মা, বোনেরা নেই মাস তিনেক হতে চলেছে। বুকের মাঝের ক্ষত টা পুরোনো হয়ে যাচ্ছে। অথচ কি যে যন্ত্রণা সে ক্ষতে! যদি কাউকে একটু বুঝানো যেত! যদি কাউকে একটু বলতে পারতাম। আমি এই বয়সে এতকিছু সহ্য করতে পারছি না। আমার অবসর প্রয়োজন। আচ্ছা, আমার দুঃখ গুলো কি কখনো অবসর নিবে না? নাকি এভাবেই চলতে থাকবে!

বিকেল বেলা একটু বিছানায় গড়াগড়ি করছিলাম। হঠাৎ দরজার বাইরে বড় মায়ের গলা শোনা গেলো। বড় মা তুই করে ডাকে আমায়। কি যে আপন আপন লাগে!

‘জুঁই ঘুমিয়ে গেছিস?’

আমি গায়ে ওড়না জড়াতে জড়াতে বললাম,

‘না বড় মা! ঘুমাই নাই।’

ভেড়ানো দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো বড় মা। চেহারায় প্রফুল্লতা ছাপ।

‘চা বানাতে পারিস না?’

‘হ্যাঁ পারি। খালার কাছে শিখেছি।’

‘খুবই ভালো। বেশি করে চা বানা তো। লোকজন সবাই বসে আছে।’

বড় মা চলে গেল। আমি উঠে রান্নাঘরে গেলাম। রান্নাঘরের এখান থেকে বসার ঘরের অল্প একটুখানি দেখা যায়। এক পলক দেখে বুঝতে পারলাম বসার ঘর আজ লোক সমাগম। সমস্বরে চেঁচামেচি করছে। গল্পগুজব করছে। তার আওয়াজ রান্নাঘর অবধি আসছে।

বড়সড় পাতিলে পানি গরম দিলাম। চুলার আঁচ বাড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। গত কয়েকদিনে খালার থেকে অনেক কিছু শিখে নিয়েছি। কল্পনাও করিনি এই বয়সে এতকিছু করতে হবে। এতকিছু শিখে নিতে হবে!

দুধ, চিনি মিশিয়ে অনেকগুলো কাপে চা ঢাললাম। আমার শেষ না হতে বড় মা এলো। হাতে চৌকোণাকার প্লেট। যাকে ট্রে বলে ডাকে। একটা ট্রে তে চায়ের কাপ রাখলাম। আরেকটাতে বড় মা ফলমূল, মিষ্টি আর বিস্কুট দিয়ে ভরলো। ফলমূলের ট্রে টা হাতে নিয়ে তিনি বললেন,

‘আয় আমার সাথে। চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে আয়।’

হুঁ?’

বুকের ভেতর আঁতকে উঠল। সবার সামনে যাবো আমি? এই ভয়টা পাচ্ছিলাম। সালেহা খালা থাকতে এসব কাজ সে করতো। আমি আড়ালে লুকিয়ে থাকতাম। এখন উপায়? ভয়ের সাথে সাথে লজ্জাও পাচ্ছি। আমার চেয়ে ছোট, বড়, সমবয়সী সবার সামনে নিজেকে কাজের লোক বলে পরিচয় দিতে হবে। তারাও মানুষ, আমিও মানুষ। অথচ তাদের আর আমার মাঝে বিস্তর ফারাক।

‘কি হলো? আয় তাড়াতাড়ি।’

রান্নাঘরের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে বড় মা তাড়া দিলো। আর চিন্তা ভাবনার সুযোগ পেলাম না। গায়ের উড়নাটা দিয়ে লম্বা করে ঘোমটা দিলাম। অতঃপর পাহাড়সম ভয় আর লজ্জা নিয়ে সবার সামনে উপস্থিত হলাম।

‘সবাইকে চা দিয়ে দে জুঁই।’

সবাই গল্পে মশগুল। শুরুতে কেউ ঠাওর করেনি আমাকে। বড় মার জুঁই ডাকে সবার সংবিৎ ফিরলো। কৌতূহল নিয়ে তাকালো আমার পানে। আমি তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি নত করলাম।

‘এই মাইয়া কে রে ফাতেমা?’

প্রশ্ন করলেন এই বাড়ির সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি। বড় মায়ের শাশুড়ী মা। আমার কিছু বলতে হলো না। বড় মা নিজে থেকে বললেন,

‘ও জুঁই। নতুন কাজ শুরু করেছে এখানে। আপনি তখন ছিলেন না মা। দারুণ মেয়ে। কয়েকদিনে আমার মন জয় করে ফেলেছে।’

‘ও। তাই তো বলি। এরে তো চিনি না!’

কয়েক মিনিট নিরব রইলো চারপাশ। পরক্ষণে আবার যার যার মতো গল্পে মেতে উঠলো। আমি বিস্ময়ের চরম শিখরে পৌঁছে গেলাম। কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। কোনো কিছু জানতে চাইলো না। বুঝতে পারলাম কাজের লোক নিয়োগ দেওয়া এদের কাছে খুবই সাধারণ ব্যাপার! নির্ধারিত কাজের লোক গুলো খুবই অসহায় আর নগণ্য।

মুখ ভার করে সবার হাতে চায়ের কাপ তুলে দিলাম। দাদীর পাশের জনের হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিতে হাতে অন্য রকমের স্পর্শ পেলাম। বাজে স্পর্শ! চমকে তাকাতে মধ্যবয়স্ক এক লোক দেখতে পেলাম। বয়স পঁয়ত্রিশ-চল্লিশের ঘরে। কি বাজে চাহনি! ঠোঁটে শয়তানি হাসি। কে এই লোক? এভাবে তাকাচ্ছে কেন?

ঘৃণায় গা গুলিয়ে এলো। দ্রুত তার সামনে থেকে সরে এলাম। সর্বশেষ কাপ দিলাম ফাইজান ভাইয়ের হাতে। তার দৃষ্টি ভীষণ শীতল। উত্তপ্ত দাবদাহে কাঁপুনি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ঠ। চা পরিবেশন শেষ হতে আমি চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলাম। হঠাৎ জাবির বললো,

‘চা টা চমৎকার হয়েছে জুঁই।’

‘হ্যা ঠিক বলেছিস জাবির।’

জাবিরের সাথে সুর মেলালো সামান্তা আপু। আমি পূর্ণ দৃষ্টিতে দুইজনের দিকে তাকালাম। তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি। সেই তৃপ্তি থেকে এক বিন্দু ভালো লাগা ছড়িয়ে পড়লো আমার মাঝে।

____________

আজও মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলো। বরাবরের মতো দুঃস্বপ্ন দেখে। স্বপ্নে দেখলাম মা গলায় দড়ি দিয়েছে। তার পা জড়িয়ে আমি চিৎকার করে কাঁদছি। সাহায্য চাইছি সবার কাছে। কিন্তু কেউ নেই। আমার চিৎকার শুনার মতো কেউ নেই। কাঁদতে কাঁদতে ঘুম ভেঙে গেলো হঠাৎ।

কিছুক্ষণ হাসফাঁস করলাম। ঘরের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। বাইরে বের হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে পড়লাম। দরজা খুলে এক পা বাইরে রাখতে মেঝেতে চোখ গেল। ভাঁজ করা মোটা কাগজের টুকরো। পাত্তা দিলাম না। বের হয়ে বসার ঘরে হাঁটাহাঁটি করলাম। আচমকা গেস্ট রুমের দিকে নজর গেল। গেস্ট রুমে ফাইজান ভাইয়ের মামাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। মামা! তখনকার বাজে চাহনি নিক্ষেপ করা লোকটা ফাইজান ভাইয়ের ছোটো মামা। বড় মায়ের সৎ ভাই। বড় মা আর তার বাবা এক, কিন্তু মা ভিন্ন।

লোকটার চাহনি একদম ভালো না। বিকেলবেলার স্পর্শের কথা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। দৌঁড়ে রুমের কাছে এলাম। দরজা বন্ধ করার আগে বাহিরে পরে থাকা মোড়ানো কাগজটা হাতে নিলাম।

ছিটকিনি আটকালাম শক্তপোক্ত ভাবে। তবুও বুকে ভয়। কেন জানি এখন পৃথিবীর সব পুরুষকে ভয় করে। তীব্র ভয়! রুমের বাল্ব জ্বালালাম না। বাথরুমের স্বল্প আলোয় মোড়ানো কাগজ খোলার চেষ্টা করলাম। একটুখানি খুলতে বেরিয়ে এলো একটা মলম। কিসের মলম জানা নেই। কপাল কুঁচকে গেল আমার। দরজার সামনে মলম এলো কোথা থেকে? হঠাৎ চোখ গেলো কাগজের লেখার উপর। বড় বড় করে লেখা,

‘বাংলা পড়তে পারো নিশ্চয়ই। বিকেলবেলা দেখলাম হাতে ফোস্কা পড়েছে। চা বানাতে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছ তাই না? একটু সাবধানে কাজ করলে কি হয়? হুঁ? এখন থেকে কোনো কাজে তারাহুড়ো করবে না। অত্যধিক সাবধানে করবে। আর মলমটা ক্ষতে লাগিয়ে নিয়ো।’

আর কিছু লেখা নেই। আমি উল্টে পাল্টে দেখলাম। কিন্তু আর কিছুই খুঁজে পেল না। কে এই লোক? আমার হাত পুড়েছে সেটাও টের পেয়েছে? বাম হাতের দিকে তাকালাম আমি। বিকেলে গরম চা ঢালতে গিয়ে হাতে পড়েছে একটু। কয়েক মিনিট পরেই ফোস্কা পরে গেছে। কিন্তু আমি তো ক্ষত লুকিয়ে রেখেছিলাম। মানুষটা টের পেল কি করে?

আমার ভাবনার মাঝে রুমের দরজায় টোকা পড়লো। মৃদু টোকা। ওপাশের লোকটা সাবধানতা অবলম্বন করছে। কেউ যেন টের না পায়। কে টোকা দেয়? বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো। এতো রাতে কে নক করে? হুট করে ফাইজান ভাইয়ের মামার মুখটা ভেসে উঠলো।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here