ভালবাসা মানে নীল প্রজাপতি পর্ব ৪

0
249

ভালবাসা মানে নীল প্রজাপতি
Part : 4
Write : Sabbir Ahmed
______________________________
-ওরা জানলে কি হবে??(আদনান)
-আমার মান সম্মান যাবে(রাত্রি)
-তাই? আমি কালো তাই মান সম্মান যাবে?
-হুমমম
-আচ্ছা আমি দূরে দাড়িয়ে আছি
-তবুও আপনি যাবেন না?
-না
,,
রাত্রি তার বন্ধুদের কাছে চলে গেলো, আর আদনান একটু আড়ালে গিয়ে দাড়ালো।
রাত্রির আড্ডা শেষে আদনান এর সাথে দেখা..
-আপনি এখনো যান নি কেনো?(রাত্রি)
-আপনার সাথে যাবো তাই (আদনান)
,,
দুজন হাঁটছে আর কথা বলছে.
-আপনি কি এভাবে আমাকে চোখে চোখে রাখবেন?
-না তা রাখবো না
-তাহলে আমার পিছু ছাড়ছেন না কেনো?
-একটা জিনিস আপনাকে বুঝিয়ে দিয়ে আপনার জীবন থেকে চলে যাবো
-ওকে এই যে আমি দাঁড়ালাম এখন আমাকে বুঝান আমি বোঝার পরে আপনি আমার জীবন থেকে চলে যান
-না এটা বুঝতে আপনার সময় লাগবে
,,
রাত্রি আবার হাঁটা শুরু করলো।
-এফ বি তে আমার ব্লক টা খুলবেন?(আদনান)
-কখনো না (রাত্রি)
-এমনিতে শুধু কথা বলবো আর কিছু না
-আরে কাইল্লার বাচ্চা তোরে আমার পছন্দ না
-আপনি আমাকে অপমান করতেছেন এর জন্য আমি আপনাকে কিচ্ছু বলব না
-তো কি তোর ঘ্যান ঘ্যান থামা আর এখান থেকে কেটে পর
,,
আদনান রাত্রির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসে। এমন ভাবে হাসে মনে হয় আদনান এর কিছুই হয় নি রাত্রির কথায় সে অপমানিত হয় নি।
,,
আবারও এক সপ্তাহ পর ছুটির দিনে সেই ছাদে দেখা….
-গুড মর্নিং (আদনান)
-হুমমম (রাত্রি)
-কি করছেন?
-দাড়িয়ে সকালের হাওয়া খাচ্ছি
-আপনি তো মুখ বন্ধ করে আছেন হাওয়া তো পেটে ঢুকছে না
-বকা খাওয়ার শখ হইছে?
-না তা হয় নি
-তো ছাদে কি? এখানে আসছেন কেনো আপনাকে না বলেছি আমি ছাদে থাকা থাকলে আপনি আসবেন
-আমিও তো আপনাকে বলেছি ছুটির দিন গুলোতে আপনাকে আমি চোখে চোখে রাখবো
-এই ছুটি যে কেনো আসে এটা আসলেই আমার কপালে দুঃখ আসে
-আর দুঃখ আছে এই জন্য একটা দুঃসংবাদ দেই
-কি সেটা?
-বাসায় বলেছি আপনার জন্য চাকরি টা ছেড়ে দিবো, মানে আপনাকে যাতে চোখে চোখে রাখি সেটা বাসায় আমি ভেঙে বলেছি। বাসার সবাই রাজি হয়েছে তাই আমি চাকরি টা ছেড়ে দিয়েছি এখন থেকে আমি সবসময় আপনার পেছনে
-ওইইই এমন করলে আমি বাবা কে বলে দিবো
-আমিও সত্যি কথা বলে দিবো
-সে তো আর তোর কথা বিশ্বাস করবে না
-করবে করবে অবশ্যই বিশ্বাস করবে আমাদের কথোপকথন দেখালে অবশ্যই বিশ্বাস করবে
-না আপনি এমনটা করবেন না
-বাহহ কথা চেঞ্জ
-…(রাত্রি চলে গেলো)
,,
সেইদিন থেকে আদনান রাত্রির পেছনে আঠার মতো লেগে থাকে। রাত্রি বাইরে বের হলেই আদনান কে দেখতে পায়। আদনান রাত্রির সাথে কথা বলে না কিন্তু রাত্রি যে জায়গা গুলোতে যায় সেখানে গিয়ে আদনান হাজির।
,,
হঠাৎ করে একদিন আদননা উধাও..
রাত্রি সকাল বেলা ভার্সিটিতে যাচ্ছিলো তখন সে আদনান কে দেখছিলো না। আদনান প্রতিদিন রাত্রির আগে এসে গেটের বাইরে দাড়িয়ে থাকে কিন্তু আজ নেই। রাত্রির খুব ভালো লাগছে আজ ঝামেলাটা তার পেছনে নেই।
,,
পরপর আরও কয়েকদিন সে আদনান কে দেখতে পেলো না। তো একদিন দারোয়ান কে জিজ্ঞাস করলো..
-ভাই ঐ কালো লোকটাকে দেখা যাচ্ছে না কেনো? সে কোথায় গেছে (রাত্রি)
-আপা কার কথা বলতেছেন?(দারোয়ান)
-ঐ যে আমি যাকে ভাড়া দিয়েছিলাম (রাত্রি)
-ওহহ উনার তো মা মারা গেছে
-কি বলেন!
-হ্যা আমি দেখলাম একদিন বিকেল বেলা কান্না করতে করতে বাসা থেকে বের হচ্ছে আমি জিজ্ঞাস করলাম কি হইছে?? সে বলল তার মা মারা গেছে এটুকু বলেই চলে গেলে…
-ওহহ ঠিক আছে
-কেনো কিছু হইছে? ভাড়া বাকি আছে কি?
-না সেরকম কিছু না দেখছিলাম না তাই জিজ্ঞাস করলাম
,,
,,
আরও কিছুদিন যাওয়ার পর আদনান ফিরে আসলো।
-ভাই কেমন আছেন? (আদনান দারোয়ান করে জিজ্ঞাস করলো)
-হ্যা ভাই ভালো, তুমি আসছো (দারোয়ান)
-হ্যা আসলাম
-তুমি কেমন আছো?
-হ্যা ভালো, আমি ভেতরে যাচ্ছি পরে কথা হবে
,,
বাসার ভেতর ঢুকতে যাবে তখনই রাত্রির সাথে দেখা। আদনান এক পলক দেখেই চোখ সড়িয়ে নিলো। রাত্রি এগিয়ে এসে বলল…
-কেমন আছেন??(রাত্রি)
-হ্যা ভালো.. (আদনান বলেই ভেতরে চলে গেলো)
,,
আদনান রাত্রির কথা তার মাকে বলত। রাত্রি কি করছে কেমন দেখতে সব বলতো। কিন্তু এখন এসব বলার মানুষ টাই আদনান হারিয়ে ফেলেছে কেন যানি তার খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে।
,,
একদিন পর…
আদনান রুমে আনমনে বসেছিলো হঠাৎ কলিং বেল এর আওয়াজ। আদনান উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে রাত্রি দাড়িয়ে…
-বাবা আপনাকে দেখা করতে বলেছে (রাত্রি)
-ওহহ হ্যা এই মাসের ভাড়া টা দেওয়া হয় নি। আপনি আপনার বাবা কে বলবেন আমি কাল বিকেলে আপনাদের বাসায় গিয়ে দিয়ে আসবো (আদনান)
-আচ্ছা ঠিক আছে
,,
আদনান দরজা লাগিয়ে দিতেই আবার কলিং বেল এর আওয়াজ। আদনান দরজা খুলতেই রাত্রি বলল
-কখন আসবেন বললেন??(রাত্রি)
-কাল বিকেলে (আদনান)
-ওহহ ঠিক আছে
,,
আদনান দরজা লাগিয়ে দিবে আর তখনই আবার রাত্রি বলে উঠলো..
-আ আন্টির কি হয়েছিলো? (রাত্রি)
-স্ট্রোক হয়েছিলো (আদনান)
-ওহহ আংকেল কেমন আছেন?
-হুমম ভালই আছেন, আপনার বাসার সবাই ভালো আছে?
-হ্যা সবাই ভালো আছে
-আর কিছু বলবেন?
-না
-হুমম..(আদনান দরজা লাগিয়ে দিলো)
,,
সেদিন রাতে..
আদনান এর ভালো লাগছিলো না, ছাদে দাড়িয়ে সে তার মায়ের কথা মনে করে চোখের পানি ফেলছিলো সেই সময় রাত্রি ছাদে আসলো। রাত্রিকে দেখে আদনান চোখের পানি মুছে ঝটপট সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
-আরে চলে যাচ্ছেন কেনো??(রাত্রি)
-আপনি তো বলেছিলেন আপনি যখন থাকবেন আমি যেন তখন না থাকি (আদনান)
-…(রাত্রি চুপ)
-আপনি থাকেন আমি যাই
-…(রাত্রি আর কিছু বলতে পারলো না)
,,
আদনান আবার অফিসে যাওয়া শুরু করেছে। কাজের মধ্যে সে নিজেকে বেশি ব্যস্ত রাখছে। এক মাস চলে যাওয়ার পর আদনান বাসা ভাড়ার টাকা নিয়ে রাত্রিদের ফ্লাটে যায়। গত মাসের টাকাও সে দেয় নি। রাত্রিকে বলেছিলো পরদিন বিকেল বেলা দিয়ে আসবে কিন্তু আদনান টাকা দিতে যায় নি রাত্রির বাবা আর রাত্রিও তাকে এজন্য কিছু বলে নি।
,,
রুমের সামনে গিয়ে নক করতেই রাত্রির মা দরজা খুলল।
-আন্টি কেমন আছেন?(আদনান)
-ভালো, তুমি কেমন আছো?(রাত্রির মা)
-জ্বি ভালো। আন্টি বাসা ভাড়ার টাকাটা নিন
-তুমি ভেতরে এসে বসো
-না আন্টি এখন হাতে সময় নেই
-কেনো?
-রান্না করতে হবে
-আচ্ছা আজ রান্না করতে হবে না, তুমি ভেতরে আসো তো খেয়ে যাও
,,
আদনান এর কণ্ঠ শুনে রাত্রি তার রুম থেকে দৌড়ে চলে আসে। এসে দেখে তার মা আদনান কে ভেতরে আসার জন্য বলছে কিন্তু আদনান কিছুতেই আসছে না। রাত্রি এগিয়ে এসে বলল
-মা ছাড়ো তো উনি কি তোমার মেয়ের জামাই যে এত আদর করতে হবে? আর এই যে আপনাকে বলছি মুরুব্বীদের কিভাবে সম্মান করতে হয় সেটা শেখেন নি? কখন থেকে বলছে ভেতরে আসতে এত ত্যাড়া কেনো আপনি??(রাত্রি)
-আহহ হুহহ আচ্ছা আমি এখানেই খাবো (আদনান)
-হ্যা এইতো, আচ্ছা ভেতরে আসো (রাত্রির মা)
,,
আদনান খাবার টেবিলে বসলো। রাত্রি তার মাকে বলল
-মা আমাকে খেতে দিবে না? আমিও খাবো (রাত্রি)
-আচ্ছা টেবিলে বসে গল্প কর আমি খাবার টা গরম করছি (রাত্রির মা)
,,
রাত্রি আদনান এর সামনা সামনি একটা চেয়ারে বসলো। আদনান টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছে কিছুতেই মুখ উপরে তুলছে না। আর রাত্রি আদনান এর হাভভাব ভালো ভাবে লক্ষ্য করছে।
,,
রাত্রির মা খাবার নিয়ে এসে দুজনের প্লেটে দিলো..
-আন্টি আপনিও বসেন (আদনান)
-না আমি একটু আগে খেয়েছি (রাত্রির)
-মা তুমি আমার রুম টা একটু গুছিয়ে দাও অগোছালো হয়ে আছে
-তুই ঠিক করতে পারিস না??
-আমি এসব কবে ঠিক করেছি বলো তো। আর উনার যা লাগে আমি উনাকে দিবো তুমি যাও..(রাত্রির মা রাত্রির রুম গোছাতে চলে গেলো)
,,
তারপর রাত্রি তার পা দিয়ে আদনান এর পায়ে খোঁচা মারলো। আদনান রাত্রির দিকে আড় চোখে তাকালো..রাত্রি সেটা টের পেয়ে বলল
-এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই..(রাত্রি)
-…(আদনান খাচ্ছে)
-ঐ খাওয়া বন্ধ করেন
-কেনো?
-পা পেছন দিকে নিয়েছেন কেনো?
-আপনি খোচা মারছেন কেনো?
-আপনি পা সামনে আনেন
-না
-আপনি আনবেন নাকি আমি চিল্লাবো
-না না পা সামনে আনছি
,,
রাত্রি আবার আদনান এর পায়ের উপর পা রাখলো..আর বলল..
-কালো হওয়ার জন্য কোনো ক্রিম আছে?(রাত্রি)
-কেনো?(আদনান)
-কালো হবো
-আমাকে আর অপমান করতে হবে না আমি তো আপনাকে আর জ্বালাবো না
-আমি যেটা বলছি সেটার উত্তর দে
-না কালো হওয়ার কোনো ক্রিম নেই
-হুমমম
-আপনি এভাবে আমার পায়ের উপর পা দিয়ে রাখছেন কেনো?
-আমার ইচ্ছা হইছে তাই রাখছি
-আপনার ইচ্ছা দিয়ে আমি কি করব?
-কি করবি মানে? আমার যদি ইচ্ছা হয় তোর উপর শুয়ে থাকবো কিচ্ছু বলতে পারবি না…
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
চলবে
#SSSS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here