#বৌপ্রিয়া
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – ২৩
শাড়ি পড়ানোর এক ফাঁকে উচ্ছ্বাস বড্ড আচমকা কুসুমকে জিজ্ঞেস করে বসল,
‘ ইয়াহিয়া ভাই কি ঊষাকে পছন্দ করেন? দেখে মনে হল আমার। তুমি কি এই ব্যাপারে কিছু জানো? ‘
কুসুম এই কথা শুনে প্রচন্ড অবাক হয়েছে। চোখ কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম। উত্তেজনা সহ্য করতে না পেরে মৃদু চিৎকার দিয়ে বলল,
‘ ভাইয়া আর ঊষা আপা? ‘
কুসুমের চিৎকারে উচ্ছ্বাস কানে চেপে ধরে চোখ খিচে বলল,
‘ আস্তে কথা বলো। আমি এখানেই, শুনতে পাচ্ছি। আর শেষ উত্তর হ্যাঁ। আমার কাছে মনে হয়েছে। মিথ্যাও হতে পারে এটা। আমি শিউর নই। ‘
কুসুম এখনো হতভম্বের ন্যায় চেয়ে আছে উচ্ছ্বাসের দিকে। উচ্ছ্বাস মনোযোগ দিয়ে কুসুমকে শাড়ি পরিয়ে দিয়ে শাড়ির আঁচল পিন দিয়ে আটকে দিল। মাথার চুল খুলে বেনি করে দিতে লাগল। কুসুম অন্যমনস্ক হয়ে বলল,
‘ আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। এমন কিছু যদি হয়েও থাকে, আমার চোখে কেন পরল না। শুধু আপনার চোখেই পরল? ‘
উচ্ছ্বাস উত্তর দিল, ‘ আমার মনে হচ্ছে, ওরা ঘরের মধ্যে সন্দেহজকভাবে কিছু করে নি। বাইরে ডেইট আউট, এসব হয়ত করেছে। তাছাড়া সেদিন আমি রেস্টুরেন্টে দুজনকে দেখেছি। বেশ ক্লোজলি বসে গল্প করছিল তারা। ঊষাকে দেখে যা হয়, সে এমনি এমনি একটা ছেলের এতটা কাছে ঘেঁষবে না। নিশ্চয়ই এটার মধ্যে লাভ এফেক্ট জড়িত। ‘
কুসুম দাঁত দিয়ে ঠোঁটের একপাশ কামড়ে ধরে রেখে ভাবতে বসে। উচ্ছ্বাস আয়নায় কুসুমের দিকে চেয়ে দেখে। কুসুমকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। উচ্ছ্বাস বেনি করা শেষ হলে কুসুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। চিন্তিত কুসুমকে দেখে নিয়ে বলে,
‘ চিন্তা করছ? ‘
‘ হু। ঊষা আপা আর ভাইয়া। আমার এসব আজব লাগছে। কখনও সেভাবে এদের দুজনকে ভেবে দেখিনি। ‘
উচ্ছ্বাস নিজের দুহাত কুসুমের কাধ ছাপিয়ে গলায় আলগা করে পেঁচিয়ে ধরল। তারপর বলল,
‘ একটু চোখ রাখো ওদের উপর। আমার কাছে মনে হচ্ছে, ঊষা যদি তোমাদের বাড়ির বৌ হবে, ব্যাপারটা খুব দারুন হবে। খালামনি দেখলাম ঊষাকে প্রচন্ড পছন্দ করে। তুমিও ঊষা বলতে পাগল। আর ইয়াহিয়া ভাই তো ভালোবাসেন। জমে ক্ষীর হয়ে যাবে সবকিছু।’
কুসুমকে এখনো চিন্তিত দেখাচ্ছে। সে মাথা নাড়ালো শুধু। উচ্ছ্বাস এটা দেখে বিভ্রান্ত হল। ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,
‘ তুমি কি চাইছ না, ঊষা এই বাড়িতে পার্মানেন্ট হোক? কিসের চিন্তা করছ? ‘
কুসুম সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল, ‘ এটা হলে আমার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবে না। আমি ঊষা আপাকে ছোট থেকেই মান্য করে এসেছি। আপু আমাকে যেভাবে কেয়ার করেন, এই বাড়ির প্রতিটা মানুষকে সেভাবে আপন করে রাখেন, এটা অন্য কেউই পারবে না, আমি জানি সেটা। কিন্তু আমি চিন্তা করছি অন্য…’
‘ কি অন্য চিন্তা? ‘
‘ আসলে আম্মা এটা কিভাবে দেখবেন? তাছাড়া দাদাবাড়ির মানুষজন কি ভাববে! মেয়েকে এখানে পড়তে দিয়েছেন। পড়তে এসে এখানে আমাদের বাড়িতেই প্রেমে জড়িয়ে গেছেন। ফুপু প্রেম ভালোবাসা ততটা পছন্দ করেন না। তাছাড়া ঊষা আপা এসএসসি পড়াকালীন আমেরিকায় ফুপার বন্ধুর ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিক। দুজনের পড়াশোনা শেষ হলে বিয়ে হবে শুনেছি। আর এখন..আমাদের বাড়িতে এসে এসব। আমার মন মানছে না। মনে হচ্ছে এটা নিয়ে বড় এক ঝামেলা হবে। অশান্তি সৃষ্টি হবে। ‘
দেখা গেল উচ্ছ্বাসও চিন্তিত। সে কপাল কুচকে কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
‘ এটা আসলেই চিন্তার বিষয়। আচ্ছা সময় আসুক। দেখা যাবে সবকিছু। এখন আপাতত প্রেম করতে দাও তাদের। সময় আসলে আমরা সবাই তোমার ফুপুকে রিকোয়েস্ট করব। আর এত ভালো ফ্যামিলি তোমার ফুপু কেন হাতছাড়া করবেন? ওয়েট করো। এভরিথিং উইল বি ফাইন। ‘
কুসুম এখনো ভেবেই যাচ্ছে। উচ্ছ্বাস কুসুমকে ধাক্কা দিয়ে বলল, ‘অনেক ভেবেছ। চলো ঘুমাবে। রাত অনেক হয়েছে। ‘
_______________________________
সকালে ঘুম ভাঙতেই কুসুম দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ঊষার ঘরের দিকে চলল। ঊষা আপা অনেক আগেই ঘুম থেকে উঠেছে। পড়ছে টেবিলে বসে। কুসুমকে দেখে ঊষা বই বন্ধ করে কুসুমের দিকে হাসিমুখে তাকালো। কুসুম মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় চেয়ে আছে ঊষার দিকে। ঊষাকে এভাবে দেখতে কুসুমের বড্ড ভালো লাগছে। মনের মধ্যে কেমন আনন্দের ফোয়ারা বইছে। ঊষা জিজ্ঞেস করল,
‘ এত সকালে উঠেছিস? উচ্ছ্বাসও উঠেছে? চা খাবি? বানাব? ‘
কুসুম এবার ঊষার সামনে এসে দাঁড়ালো। আরেকটু কাছে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ঊষাকে। ঊষা চমকে উঠল। কুসুম ঊষার কাঁধে মুখ গুঁজে মৃদু স্বরে বলল, ‘ আমি খুব খুশি ঊষা আপা। খুব খুব বেশি খুশি আজকে। ‘
ঊষা বুঝতে পারে না কুসুমের খুশির কারণ। তবুও কিছু বলে না। হাত উঠিয়ে কুসুমের পিঠে হাত রাখে। মুচকি হেসে বলে,
‘ উচ্ছ্বাসের জন্যেই নাকি এই খুশি? ‘
কুসুম জড়িয়ে ধরা অবস্থায় উত্তর দিল, ‘ না, এই খুশি শুধুমাত্র তোমার জন্যে। তুমি খুব ভালো আপা। আমরা সবাই তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি। ‘
ঊষা একের পর এক অবাক হচ্ছে। ঊষাকে এই বাড়ির সবাই খুব ভালোবাসে, এটা ঊষা জানে। তবে কেউই সেটা মুখ ফুটে না বললে, আচরণে সেটা বোঝায়। আজ এই পাগল মেয়ের কি হল কে জানে? ঊষা মৃদু হেসে বলল,
‘ আমি জানি সেটা। আমিও তোদের খুব ভালোবাসি। ‘
কুসুম সরে এলো। আঙ্গুলের ডগা দিয়ে চোখের পানি মুছে বলল,
‘ চা খাবে? আমি বানাই আজকে? ‘
ঊষা বই বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালো। শরীরে ওড়না জড়িয়ে বলল,
‘ আমি বানাব। তুই পাশে দাঁড়িয়ে আমার সঙ্গে গল্প করবি, এতেই হবে। চল। ‘
চা বানানোর এক ফাঁকে কুসুম জিজ্ঞেস করল,
‘ আপা, কাউকে ভালোবেসেছ কখনও? ‘
ঊষার হাত থেমে গেল। কুসুমের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ হঠাৎ এই প্রশ্ন করলি যে? ‘
কুসুম হাসলো। হাতে থাকা আপেলে কামড় বসিয়ে হাসিখুশি বলল,
‘ না এমনি মনে হল। বলো না! ভালোবেসেছ কখনো? ‘
ঊষা মৃদু হাসলো। বলল, ‘ ভালোবাসি একজনকে। সময় হলে এমনি জানবি। ‘
কুসুম হাসলো লুকিয়ে। টিপ্পনী কেটে জিজ্ঞেস করল,
‘ আমি কি চিনি তাকে? সে কি আমার খুব আপন কেউ? বলো না আপা। ‘
ঊষা কিছুটা চিন্তিত হল। অন্যমনস্ক হয়ে বলল, ‘ খুব আপন কেউ তোর। ‘
কুসুমের বুঝতে বাকি নেই, ঊষা কার কথা বলছে। কুসুমের মন আনন্দে ভরে গেল। ইয়াহিয়া উঠেছে সবে। নিজের রুম ঠেকে চেঁচিয়ে চা দেবার কথা বলছে। ইয়াহিয়া আওয়াজ পেতেই ঊষার মুখ কেমন ঝলমল করে উঠে সেটা কুসুম এই প্রথম লক্ষ্য করল। কুসুম বলল,
‘ আরো এক কাপ লাগবে। ভাইয়া উঠে গেছে ঘুম থেকে। অফিসে যাবে। ‘
ঊষা মুখ লুকানোর চেষ্টা করে বলল, ‘ আমি বানিয়ে দিচ্ছি। তুই দিয়ে আয় গিয়ে। ‘
কুসুম নিজের ভাগের চা হাতে নিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
‘ আমি কেন নিয়ে যাব? আমার কাজ আছে। আমি চা নিয়ে নিজের ঘরে যাচ্ছি। তুমি বানাবে, তুমি নিয়ে যাবে। বাই। ‘
দেখা গেল, কুসুম হেলেদুলে গান গাইতে গাইতে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে। ঊষা কুসুমের আজকে সকালের ব্যবহার থেকে যারপরনাই অবাক। ঊষা মনে মনে ভাবছে, কুসুম কি কিছু জেনেছে? এমন অদ্ভুদ আচরণ করছে কেন?
ঊষা কি করবে? চা বানিয়ে ইয়াহিয়ার ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। ইয়াহিয়া তখন রেডি হয়ে টাই বাঁধছে। ঊষাকে দেখে সে মুচকি হাসলো। ঊষা টেবিলে চায়ের কাপ রাখার ফাঁকে ফিসফিস করে বলল,
‘ আমার মনে হচ্ছে, কুসুম আমাদের ব্যাপারে কিছু জেনেছে। ‘
ইয়াহিয়াও চায়ের কাপ নেবার ফাঁকে খুব সন্তর্পনে উত্তর দিল,
‘ কেন মনে হল এটা? ‘
ঊষা উত্তর দিল,
‘ ও আজ সকাল থেকে খুব খুশি। আমি প্রেম করি কি না জানতে চাইছে। আমার মনে হচ্ছে ও জেনে গেছে। ‘.
ইয়াহিয়া উত্তর দিল,
‘ জানবে না, ডোন্ট ওরি। জানলেও আমি সামলে নেব। কখন ঘুম থেকে উঠেছ? ‘
‘ সাতটায়। ‘
‘ পড়বে এখন? ‘
‘ হু। এক্সাম কদিনের মধ্যে। ‘
‘ ওকে। আম্মা উঠেছে? ‘
‘ না,ঘুমে সবাই।’
‘ আচ্ছা, আমি যাচ্ছি আজকে। মিটিং আছে। তোমার কিছু বলা লাগবে না। আমি আম্মাকে ফোন করে জানিয়ে দেব। গুড বাই। ‘
‘ হুঁ, সাবধানে যেও। ‘
ইয়াহিয়া সুন্দর একটা হাসি দিয়ে অফিস ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেল। কেউ দেখার আগে ঊষা দ্রুত ইয়াহিয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে এল। তবে কেউ না দেখলেও, কুসুমের নজরে ঠিক সবকিছু স্পষ্ট দেখা দিল।
#চলবে
#বৌপ্রিয়া
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব-২৪
কেটে গেছে কটাদিন। কুসুম এবং উচ্ছ্বাস কদিনের মধ্যে হানিমুনে কক্সবাজার যাবে। তবে তার আগে উচ্ছ্বাসের ফুপুর মেয়ে মানহার জম্মদিন পালন করা হবে। মানহা এবার বায়না ধরেছে ধুমধাম করে জম্মদিন করার। তাই উচ্ছ্বাসের ফুপা মেয়ের বায়না রেখেছেন। বাড়িতে ধুমধাম করে জম্মদিন করার পাশাপাশি মাদ্রাসা এবং এতিমখানায় খাওয়ানো হবে। তাই উচ্ছ্বাস হানিমুনের তারিখ আরো দুইদিন পেছালো।
কুসুম সবে গোছল করে বেরিয়েছে। ভেজা চুল হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নিল ঝটপট। বাথরুব গায়ে দিয়ে আলমারির সামনে এসে দাঁড়ালো। আজ সে সাদা রঙের জর্জেটের শাড়ি পরবে। আজকের জন্মদিনের পার্টির থিম সাদা। সেই উপলক্ষে শিউলি কদিন আগে কুসুমের জন্যে একটা সাদা শাড়ি কিনে এনেছে। কুসুম সেটাই এখন পরবে। তবে আলমারি তন্নতন্ন করে খুঁজেও সাদা শাড়ি পাওয়া গেল না।
আধা ঘন্টা ধরে সম্পূর্ণ আলমারি ঘেঁটে সিল্কের সেই শাড়ি খুঁজে পাওয়া গেল না। কুসুম অস্থির বোধ করল। আলমারির আনাচে কানাচে খোঁজ চালালো। পেল না কোথাও!
কুসুম যখন শাড়ির খুঁজে কাবার্ড এলোমেলো করতে ব্যস্ত, ঠিক তখন উচ্ছ্বাস ব্যস্ত পায়ে ফোনে কথা বলতে বলতে রুমে ঢুকছে। কুসুমকে অস্থির দেখে সে ফোন কেটে এগিয়ে আসে।
‘ কি খুজছ? ‘
‘ আমার সিল্কের শাড়ি! শিউলি আজকে পরার জন্যে দিয়েছিল। সেটা এখন কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। ‘
কুসুমের অসহায় গলা শুনে উচ্ছ্বাস মোটেও চিন্তিত হল না। বরং তাকে নিশ্চিন্ত দেখা গেল। সেদিন শাড়ির পাতলা আঁচল দেখেই উচ্ছ্বাসের মেজাজ পুরোপুরি বিগড়ে গিয়েছিল। কৌশনে কুসুমকে বোঝাতে চেয়েছিল শাড়িটা উচ্ছ্বাসে ভালো লাগে নি। কিন্তু অবুঝ কুসুম সেটা বুঝে নি। তাই উচ্ছ্বাস রাতের দিকে কুসুম ঘুমে থাকাকালীন শাড়ি নিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। কুসুম সেটাই এখন খুজছে?
উচ্ছ্বাস এতকিছু বললো না কুসুমকে। সে ধীর পায়ে বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
‘ আমি ফেলে দিয়েছি ওটা। ‘
কুসুম তাজ্জব বনে গেল। এগিয়ে এসে বলল, ‘ কেন? কেন ফেললেন? শাড়িটা কি সুন্দর ছিল। আমাকে ভালো লেগেছিল শাড়িতে। আপনার সামনেই না সেদিন ট্রায়াল দিলাম। তখন কেন বললেন না কিছু। এখন আমি আজকে পরব। আজকেই ফেলে দিলেন। কেন? ‘
উচ্ছাস পায়ের থেকে স্যান্ডেল খুলল। চশমা খুলে টেবিলে রেখে সাদা শার্ট আর প্যান্ট দিয়ে বাথরুমে গোসল করতে চলে গেল। যাবার আগে বলে গেল, ‘ এখন থেকে শরীর বোঝা যায়, এমন শাড়ি পরার দরকার নেই। লাইট অফ করে দাও। আমি ঘুমাব। ‘
কুসুম হতভম্ব হয়ে গেল উচ্ছাসের কথা শুনে। শাড়িতে শরীর একটু হলেও সেদিন বোঝা যাচ্ছিল। তাই কুসুম বারবার উচ্ছ্বাসকে বলেছে শাড়িতে তাকে ভালো লাগছে কি না। উচ্ছ্বাস তখন কিছুই বলে নি। এই মানুষটা এমন অন্যরকম কেন?
কুসুমও আর ঘাটাল না নিজেকে। যে শাড়ি, যে পোশাক উচ্ছ্বাসের পছন্দ নয়, সেই পোশাক কুসুম আজ থেকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিবে। উচ্ছ্বাসের সকল অপছন্দ আজ থেকে কুসুমের নিজেরও অপছন্দ। কুসুম খুঁজে খুঁজে পুরোনো এক সাদা রঙের শাড়ি বের করে পরে নিল। আজকে কুসুম নিজে নিজে বেশ সুন্দর করে শাড়ি পরল। সেদিন ঊষা আপার শাড়ি পরানো খুব সূক্ষ চোখে কুসুম লক্ষ্য করেছে।
কুসুম রেডি হয়ে নিচে নেমেছে। জন্মদিনের আয়োজনে সবাইকে সাহায্য করে উচ্ছ্বাসকে ডাকতে উপরে এল। উচ্ছ্বাস তখন তৈরি হয়ে হাতে হাতঘড়ি পরছে। সাদা ব্লেজারে বেশ ভালো লাগছে উচ্ছ্বাসকে। কুসুম শুধু চেয়েই থাকলো উচ্ছ্বাসের দিকে। চোখে যে। ধাঁধা লেগেছে তার। কুসুমকে দেখে উচ্ছ্বাস চুলে জেল লাগাতে লাগাতে বলল,
‘ শাড়ি ফেলে দিয়েছি বলে কি রাগ করেছ? শাড়ি আমার ভালো লাগেনি আসলে। তোমাকে আমি দেখে দেখে আরো সুন্দর শাড়ি কিনে দেব। তবে আজ থেকে ওসব শাড়ি পরে আমার অন্তর পুড়িও না, হুঁ? ‘
কুসুম হেসে ফেললো উচ্ছ্বাসের কথা শুনে। এগিয়ে এসে উচ্ছ্বাসের ব্লেজারের কলার ঠিক করে বলল,
‘ মোটেও রাগ করিনি আমি। আর না আপাতত আমার কোনো শাড়ি লাগবে না। শাড়ি আছে আলমারিতে। বিয়েতেও অনেক শাড়ি পেয়েছি। সেগুলো শেষ করি আগে। ‘
উচ্ছ্বাস মৃদু হাসলো। একটু সূক্ষভাবে কুসুমকে দেখে নিয়ে মোহগ্রস্ত গলায় বলল,
‘ শাড়িতে মোটেও তোমাকে ছোট লাগে না। সমবয়সী মনে হচ্ছে এখন।’
কুসুম মুচকি হাসলো। উচ্ছ্বাসকে দ্রুত তৈরি হতে বলে চলে যেতে নিলে উচ্ছ্বাস পেছন থেকে কুসুমের হাত আটকে নেয়। হাতে ধরে হেচকা টান দিতেই কুসুম ছিটকে এসে উচ্ছ্বাসের বুকে এসে পরে। কুসুমের নাক এসে লাগে ম্যানলি পারফিউমের গন্ধ। কুসুম মোহিত হয়ে যায়। উচ্ছ্বাস নিজের বুক থেকে কুসুমের মুখ দুহাতের আজলায় পুড়ে নিয়ে উচু করে তুলে। কুসুম চোখ বন্ধ করে। তারপর ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকায়। দুজনের চোখে চোখ পরে। চোখে চোখে কথা হয়। পবিত্র কিছু অনুভূতি দোলা দিয়ে যায় দুজনের মনে। উচ্ছ্বাস মৃদু স্বরে বলে,
‘ আজকে তোমায় অন্যরকম লাগছে। একদম ডিফরেন্ট।”
কুসুম প্রশ্ন করল, ‘ অন্যরকম কেমন? ‘
উচ্ছ্বাস মৃদু স্বরে বলল, ‘ জানিনা। বাট তোমাকে দেখে কেমন অস্থির লাগছে আমার। ‘
কুসুম মাথা নত করে হালকা হাসে। কুসুম কি করে বলবে, উচ্ছ্বাসকে দেখেও আজ কুসুমের অস্থির অস্থির লাগছে। বুকের ভেতরে ঝড় বইছে। দাউদাউ করে জ্বলছে সবকিছু। এই সুদর্শন স্বামী স্বয়ং তার, ভাবতেই শরীরের রক্ত ছলকে উঠছে।
উচ্ছ্বাস খানিক পর ঢোক গিলে ফিসফিস করে কুসুমের কানের কাছে মুখ এনে বলে,
‘ কুসুম, ক্যান আই কিস ইউ নাও? আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ টুডে ইন দ্যাট ক্রিটিক্যাল মোমেন্ট।’
কুসুমের বুক ধড়ফড় করে উঠে। বুকের উঠানামার গতি বেড়ে যায়। অস্বাভাবিক হয়ে যায় শরীরের রক্তপ্রবাহের সঞ্চালন। কুসুম মাথা নত করে। পরপর আবার মাথা তুলে তাকায়। ঢোক গিলে মাথা নেড়ে সায় দেয়। উচ্ছ্বাস হাসে। ঝলমল করে উঠে উচ্ছ্বাসের চেহারা। মুখ নামিয়ে আনে কুসুমের পাতলা ঠোঁটে। কুসুম ভেসে যায় আনন্দে। প্রথমবারের মত দুজনের মধ্যে হওয়া গভীরতম স্পর্শ। পাঁচ সেকেন্ডের মাথায় উচ্ছ্বাস সরে আসে। কুসুম লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখ নত করে রাখে। থুতনি যেন মিশে যায় বুকের সঙ্গে। উচ্ছ্বাস আলতো কণ্ঠে বললো,
‘ ট্রাস্ট মি কুসুম, দিস ইজ দ্য বেস্ট ফিলিং এবার। এমন অনুভূতি আমি আমার সাতাশ বছরের জীবনে পাইনি। তুমি সত্যি আমার জন্যে বিশেষ কেউ। ‘
কুসুম কথা বলে না। লজ্জায় আপাতত সে জমে। উচ্ছ্বাস কুসুমের কপালে চুমু দেয়। কুসুম এবার সত্যি সত্যি বরফ হয়ে যায়। ছিটকে সরে আসে উচ্ছ্বাসের থেকে। একপল উচ্ছ্বাসের দিকে চেয়ে দৌঁড়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। উচ্ছ্বাস মাথা চুলকে হেসে উঠে শব্দ করে। আজ প্রথমবার কেমন অদ্ভুদ অনুভব হচ্ছে উচ্ছ্বাসের। একটু অন্যরকম, একটুখানি আলাদা, একটুখানি মিষ্টি অনুভূতি। উচ্ছ্বাস শান্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। বুদ্ধিমান উচ্ছ্বাস বুঝতে পারে, ধীরে ধীরে তার কাছে ভালো লাগতে শুরু করেছে এই কুসুমকে। ধীরে ধীরে খুব করে জড়িয়ে যাচ্ছে কুসুমের সঙ্গে
#চলবে