বৌপ্রিয়া পর্ব ১৩ + ১৪

0
774

#বৌপ্রিয়া
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |১৩|

কুসুমের চোখ ছানাবড়া। উচ্ছ্বাসের কুচকানো ভ্রু আপাতত সোজা হয়ে আছে। কুসুমের মুখের অভিব্যক্তি আপাতত তার বড্ড মজা লাগছে। উচ্ছ্বাস নড়েচড়ে বসে। বিস্মিত কুসুমের বাকি আচরণটুকু দেখার জন্যে সে বেশ আরাম করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে। পা দুটো মেঝেতে ছড়িয়ে রেখে মৃদু হেসে কুসুমের দিকে চেয়ে রয়। কুসুম এখনো মুখে হাত চেপে বসে আছে। একবার এগিয়ে এসে উচ্ছ্বাসের গায়ের সঙ্গে লেগে বসে। উচ্ছ্বাসের পেশীবহুল বাহুতে আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে। মৃদু স্বরে বলে, ‘ এটা সত্যি আপনি? ‘

কুসুমের আচরণে হাসি পাচ্ছে উচ্ছ্বাসের। উচ্ছ্বাস টিপ্পনী কেটে বলে,

‘ না তো। আমার ভূত। ভয় দেখাতে এসেছে তোমায়। ভয় দেখাই? ‘

কুসুম এবার বুঝতে পারে, তার আকাঙ্ক্ষিত উচ্ছ্বাস ভাই সত্যি সত্যি এসেছেন। কুসুম সোজা হয়ে বসে। খুশিতে সে উন্মাদ! থরথর করে কেঁপে উঠে কুসুম প্রশ্ন করে,

‘ আপনি কখন এসেছেন? কিভাবে এলেন? কালকে কথা হয়েছে। কিছু বললেন না। বাড়ির সবাই বলল আপনি আসবেন না এখন। আজকে কোথা থেকে এলেন? কিভা… ‘

উচ্ছ্বাস হাত বাড়িয়ে কুসুমের গাল ছুঁয়ে দেয়। চোখ পিটপিট করে কুসুম। উচ্ছ্বাস শান্ত স্বরে বুঝায়,

‘ ওয়েট, ওয়েট, ওয়েট! কুসুম, রিলাক্স। শান্ত হও। আমি উত্তর দিচ্ছি তোমার সব কথার। রিলাক্স। ‘

কুসুম জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়। তারপর নিজেকে শান্ত করে বলে,

‘ সব খুলে বলুন আমায়। আমি জানার জন্যে খুব এক্সাইটেড। ‘

উচ্ছ্বাস হাসে। বলে,

‘ আমার ফ্লাইট পরশু ছিল। তোমার সঙ্গে যখন কথা বলেছি তখন আমি গাড়ি করে এয়ারপোর্ট যাচ্ছিলাম। সবাই বলল তোমাকে সারপ্রাইজ দেবার কথা। তাই কিছু জানাই নি তোমাকে। আজকে ঢাকায় নেমে সোজা মা’কে নিয়ে এখানে চলে এসেছি। সারপ্রাইজ হলে? ‘

কুসুমের চোখে নিছক জল জমে। কুসুম হেসে বলে,

‘ খুব। কিন্তু বাড়ির সবাই যে বলল আপনি ডিসেম্বরে আসবেন? ‘

উচ্ছ্বাস ভ্রু কুচকে বলে, ‘ বলেছে নাকি? আমি জানিনা সেটা। ওরা তো জানে আমি আজকে আসব। ‘

কুসুমের রাগ হয় বাড়ির লোকদের উপর। ওর সঙ্গে সবাই কি জঘন্য মজাটাই না করল। সবাইকে একটু পর গিয়ে ধরবে কুসুম। সবার আগে গলা চেপে ধরবে উষা আপার। সেই তো কুসুমকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়েছে। রাগে কুসুম উচ্ছ্বাসের মোবাইলে রাগান্বিত মেসেজ পাঠিয়েছিল। মেসেজ কি দেখেছিল উচ্ছ্বাস? কুসুম প্রশ্ন করে,

‘ আপনি গতকাল মেসেজ পাঠিয়েছিলাম। দেখেছেন? ‘

উচ্ছ্বাস এবার উচ্চস্বরে হেসে উঠে। কুসুম বোকা বনে যায় সেই হাসি দেখে। উচ্ছ্বাস এগিয়ে এসে কুসুমের গাল টেনে বলে,

‘ বোকা মেয়ে। বড় হয়ে রাগ বেড়ে গেছে। ছোট থাকতেই তো ভালো ছিলে। যা বুঝাতাম তাই বুঝতে। এখন আর এরকম করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। ‘

কুসুম গালে হাত দিয়ে থম হয়ে চেয়ে থাকে তার দুষ্টু উচ্ছ্বাস ভাইয়ের দিকে। তারপর দুঃখ পেয়ে বলে,

‘ আপনি রেগে গিয়েছিলাম বাড়ির সবার কথায়। তাই এমন মেসেজ পাঠিয়েছি। সরি। ‘

উচ্ছ্বাস প্রশ্ন করে, ‘ এখন রাগ কমেছে? ‘

কুসুম মৃদু স্বরে মাথা নামিয়ে বলে, ‘ হু। ‘

উচ্ছ্বাস আবারও গাল টেনে ধরে কুসুমের। হেসে বলে, ‘ দ্যাটস লাইক অ্যা গুড গার্ল। ‘

কুসুম গাল ঘষে বলে, ‘ বারবার গাল টানছেন কেন? আমি এখনো বাচ্চা নই। ‘

উচ্ছ্বাস মৃদু স্বরে বলে,

‘ সেটা ঠিক। অনেক বড় হয়ে গেছ তুমি। কিন্তু আগের চেয়ে কিছুটা মোটা হওয়ায় তোমার গাল দুটো ফুলে বড্ড কিউট লাগছে। বারবার টানতে মন চাচ্ছে। আ’ম হেল্পল্যাস। ‘

কুসুম হেসে উঠে উচ্ছ্বাসের কথা শুনে। কুসুমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উচ্ছ্বাসও হাসে। কুসুম তার উচ্ছ্বাস ভাইয়ের সুন্দর হাসির দিকে অপলক চেয়ে থাকে। আচ্ছা, উচ্ছ্বাস ভাইকে কি এখনো ভাই বলবে কুসুম। স্বামীকে কেউ বুঝি ভাই ডাকে? কিন্তু ভাই না বললে কি বলে ডাকবে কুসুম তাকে। নাম ধরে? ছিঃ, ছিঃ! কেমন শোনাবে। তাহলে কি বলে ডাকবে তাকে? কুসুম আজকে রাতে বসে উচ্ছ্বাস ভাইয়ের নতুন নাম তৈরি করবে। সুন্দর এবং তার সুদর্শন উচ্ছ্বাস ভাইয়ের সঙ্গে মানানসই নাম।

দুজন বহুদিন পর এক হয়েছে। কুসুমের কথার ফুলঝুরি ছুটেছে উচ্ছ্বাসের সামনে। উচ্ছ্বাসও বেশ ধৈর্য্য সহকারে কুসুমের সব কথা শুনছে এবং উত্তর দিচ্ছে। দরজায় টোকার শব্দে দুজনের ধ্যান ভেঙে যায়। কুসুম সোজা হয়ে বসে। উচ্ছ্বাস বসে থাকা অবস্থায় বলে,

‘ টোকা দিতে হবে না। দরজা খোলা আছে। ভেতরে আসো। ”

দেখা গেল শিউলি ঘরে ঢুকছে। মুখে চোখে দুষ্টুমি নিয়ে একবার কুসুমের দিকে চাইছে তো আরেকবার উচ্ছ্বাসের দিকে চাইছে। কুসুম শিউলির এমন দুষ্টু চাহনি দেখে লজ্জায় ঝিমিয়ে গেল। উচ্ছ্বাস অবশ্য নিরুত্তর। সে সূক্ষ চোখে বাম হাতের নখ দেখতে দেখতে প্রশ্ন করল, ‘ কি রে! আম্মা ডেকেছে? ‘

শিউলি এসে কুসুমের পাশে বসল। উচ্ছ্বাসের গম্ভীর মুখের দিকে চেয়ে তীক্ষ্ম কণ্ঠে বলল, ‘ হ্যাঁ ডেকেছে। প্রথমদিনেই যেভাবে চিপকে আছো। ডাকবে না? আম্মার তো লজ্জা আছে। ‘

উচ্ছ্বাস ভ্রু কুচকে চায় শিউলির দিকে। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। গায়ের ফকফকা সফেদ রঙের টিশার্ট টেনে ঠিক করে। এগিয়ে এসে শিউলির মাথায় চপাট করে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলে,

‘ বেয়াদব মেয়ে। তোর বড় ভাই না আমি? বড় ভাইয়ের সঙ্গে কেউ এমন মজা করে? আরেকবার দেখলে ধরে ঠাটিয়ে চড় বসাব। ‘

শিউলি মুখ ফুলে তাকায়। উচ্ছ্বাসের দিকে অভিমান নিয়ে চেয়ে দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। উচ্ছ্বাস কুসুমের দিকে একপল চেয়েই বেরিয়ে যায় কুসুমের ঘর থেকে।

কুসুম শিউলির গালে হাত রাখল। শিউলির টলমলে চোখে চোখ রেখে মিষ্টি করে বলল, ‘ থাক। দুঃখ পেও না। জন্মের সময় মধু খাওয়ানো হয়নি তাই সবসময় এমন তেতো কথা বলে। এসব ছোটখাটো কথায় রাগ করতে নেই। ‘

শিউলি উত্তর দেয়, ‘ এত বছর পর এসে প্রথমদিনেই থাপ্পড় দিল। বাসায় গিয়ে ওকে আমি দেখো কি করি। আমাকে চেনে না! ‘

কুসুম দীর্ঘশ্বাস চোখে শিউলির দিকে তাকায়। ভাই-বোন কেউ কারোর চেয়ে কম না।
______________________________
রাতে খাবার টেবিলে বসে বড়দের মধ্যে কুসুম-উচ্ছ্বাস এর বিয়ের কথা উঠল। সাহেদার ভাষ্যমতে, এখনি মেয়ে তুলে দেবে না। কুসুমের ভার্সিটি শেষ হলে তবেই উচ্ছ্বাসদের ঘরে তুলে দেওয়া হবে তাকে। কিন্তু পারুল এই বিষয়টা মানতে নারাজ। তার মতে, উচ্ছ্বাসের বয়সের হয়ে যাচ্ছে। এখনি সংসার করবে না তো কখন করবে? সাহেদা এই কথা শুনে কাচুমাচু করছেন। বিয়ে করে উঠিয়ে দেওয়া মানে, বছর ঘুরতেই কুসুমের গর্ভধারণ। আর সাহেদা এই বিষয়েই ভয় পাচ্ছেন। কুসুম এখনি ফিজিক্যালি অনেক দূর্বল। এই বয়সে বিয়ে করে বাচ্চা নেওয়া ঝুঁকির ব্যাপার তার জন্য। মা হয়ে মেয়ের জীবনে ঝুঁকি তো আর সাহেদা নিতে পারেন না। কিন্তু লজ্জার কারণে সবার সম্মুখে এই কথা তুলতে পারছেন না সাহেদা। এদিকে পারুল এবং তার স্বামী দুজনেই কুসুমকে এই মাসের মধ্যে ঘরে তোলার জন্যে উদগ্রীব হয়ে আছেন। কি করবেন সাহেদা। বুঝতে পারছেন না কিছুই। খাবার টেবিলে দুই বোনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা দেখে উচ্ছ্বাস বিরক্ত হয়ে বলে,

‘ আম্মা, খালামনির সঙ্গে আলাদা করে তুমি কথা বলো। দুজনের মধ্যে সমস্যা মিটমাট হয়ে গেলে তবেই আমি কুসুমকে ঘরে তুলব। একজনের অসন্তুষ্টি নিয়ে আমার বউ আমি ঘরে তুলব না। এবার শান্তিতে সবাইকে খেতে দাও। ‘

উচ্ছ্বাসের কথা শুনে বড়রা চুপ হয়ে গেলেন। সাহেদার মনের মধ্যে তবুও খচখচানি থেকেই গেল। পারুল যেভাবে চেপে ধরে আছে সাহেদাকে। সেভাবে মনে হচ্ছে কুসুমকে ঘরে তুলে তবেই সে নিস্তার দেবে। এদিকে মেয়েকে স্বামীর ঘরে তুলে দেবেন না সাহেদা। হয়ত এই বিষয় নিয়ে দুই বোনের মধ্যে ছোটখাটো মনোমালিন্যও হয়ে যেতে পারে। সাহেদা এই বিষয় নিয়ে ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু যাই হয়ে যাক না কেন! মেয়ের জীবনের উপর তিনি কোনরূপ ঝুঁকি নেবেন না মানে নেবেন না।

#চলবে

#বৌপ্রিয়া
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |১৪|

‘ আপা আমার ভয় হচ্ছে কুসুমকে নিয়ে। এত ছোট বয়সে কুসুমকে স্বামীর ঘরে তুলে দেব? মেয়ে আমার সংসার সম্পর্কে বুঝেটাই বা কি? ‘

সাহেদার কথা শুনে পারুল বুঝতে পারেন অনেককিছু। তিনি বোনকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে বলেন,

‘ বুঝে না, আর বোঝার দরকারও নেই। আমি আছি না। আস্তে আস্তে সব বুঝিয়ে দেব। কুসুম আমার নিজের মেয়ের মতোই রে। আমার বাড়ি আমার মেয়েকে দিতে তোর এত কিসের ভয়? ‘

সাহেদা তবুও চিন্তিত। মেয়েকে নিয়ে চিন্তার পাহাড় জমেছে তার মনে। পারুল যে কুসুমকে নিজের মেয়ের মতোই গড়ে তুলবে, সেটা তিনি মনেপ্রাণে মানেন এবং বিশ্বাস করেন। কিন্তু তার চিন্তা সম্পূর্ন অন্য জায়গায়। কিন্তু সংকোচ হবার ফলে তিনি সেটা প্রকাশ করছেন না। যদি পারুল কিছু মনে করে বসেন। সাহেদাকে এখনও চিন্তিত চেহারায় বসে থাকতে দেখে পারুল এগিয়ে আসেন। বসেন বোনের পাশে। বোনের কাঁধে হাত রেখে বলেন,

‘ তোর আসলে কি নিয়ে চিন্তা হচ্ছে? এতদিন কিছু বলিস নি। আচমকা আজ এত চিন্তা কোথা থেকে এলো তোর? ‘

সাহেদা অসহায় চোখে বোনের দিকে তাকান। ভ্রু জোড়া বাঁকালে, পারুল আবার বলেন, ‘ আমাকে সব খুলে বল। এভাবে ভেতরে ভেতরে গুমড়ে মরলে চলবে? ‘

সাহেদা কিছুটা আশ্বস্থ হোন। তিনি সকল সংকোচ একপাশে রেখে কথা তুলেন,

‘ আপা, কুসুম এখনো অনেক ছোট। শারীরিক ভাবে এখনো ও অনেক দূর্বল। দেখই তো। খাওয়া দাওয়া করে না ঠিকমত। শুকিয়ে যাচ্ছে দিনদিন। এখন বিয়ে দিয়ে তুলে দেওয়া মানে বছর ঘুরতেই…’

সাহেদা থেমে যান। পারুল ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছেন সাহেদার দিকে। বাকি কথা শোনার জন্যে তিনি উদগ্রীব হয়ে আছেন। সাহেদাকে থামতে দেখে তিনি বিরক্ত হোন। বললেন, ‘ থামলি কেন? বল। বছর ঘুরতেই কি? ‘

সাহেদা অপ্রস্তুত হয়ে বলেন, ‘ যদি এই বয়সে কুসুম বাচ্চা নেয়, তবে এটা কুসুমের জন্যে মোটেও ভালো হবে না। ওর শরীর ভালো নেই। তাই বলছিলাম আরেকটু বড় হোক। বয়স হলে এমনিতেই শরীরে পরিপক্কতা আসবে। তখন নাহয়….’

পারুল হতভম্ব হয়ে যান। সাহেদার দিকে চেয়ে বিষ্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে,

‘ তোর কি মনে হয়, আমাদের উচ্ছ্বাস এই বয়সে আদৌ কুসুমকে বাচ্চা নিতে দিবে? ও একজন ডাক্তার। ও জানে কোন বয়সটা বাচ্চা নেবার জন্যে সঠিক। তুই এমন অহেতুক চিন্তা কেন করছিস? ‘

সাহেদার মন মানে না। তিনি অধৈর্য্য হয়ে বলেন,

‘ আল্লাহ যদি বাচ্চা দিতে চান, তবে আল্লাহর হুকুম আটকানো যায় না আপা। যদি ভুলবশত…’

‘ কিছু হবে না ভুলবশত। আমি উচ্ছ্বাসের ভাবিকে দিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলাব এই নিয়ে। তুই নিজেও কুসুমকে বুঝাস উষাকে দিয়ে। আর এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝাড়। প্রেশার বাড়বে কিন্তু চিন্তা যাবে না। কুসুমের বয়স, কুসুমের স্বাস্থ্য, কুসুমের মানসিকতা সবদিক আমরা খেয়াল রাখব। ভরসা রাখ আমার উপর। আমি সব সামলে নেব। ‘

সাহেদা কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। পারুল একপ্রকার চেপে ধরে রেখেছে তাকে। তাই না চাইতেও বোনের কথাতেই সায় দিতে হল তাকে।
__________________________
কুসুম-উচ্ছ্বাসের বিয়ে ঠিক হয় আগামী শুক্রবার। মঙ্গলবার গায়ে হলুদ এবং বৃহস্পতিবার মেহেদী অনুষ্ঠান হবে। দুই পক্ষ মিলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যখন থেকে কুসুম বিয়ের কথা শুনেছে, কুসুমের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এতদিন বিয়ে হওয়া স্বত্বেও নিজেকে বিবাহিত মনে হয় নি কুসুমের।নিজের বাড়িতেই খেয়েছে, ঘুমিয়েছে, ফুর্তি করেছে। কিন্তু এখন বিয়ে হওয়া মানে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে সংসার করা, তাদের বাড়িতে থাকা, রান্নাবান্না করা। এতকিছু কি করে সামলাবে কুসুম? কুসুম আপাতত সেই চিন্তাই করছে।

আজকে হয়ত কুসুমদের বাড়িতে মেহমান আসছে। তাই সকাল থেকে বাড়িঘর সাজানো হচ্ছে। কুসুমের কাজিরা সব সকাল থেকে তাদের বাড়িতে এসে বসে আছে। সবার সঙ্গে গল্প করে কুসুম মাত্রই ছাড়া পেল। উষা দুপুরের দিকে কুসুমের ঘরে এলো। কুসুম তখন সবে গোসল করে বেরিয়েছে। চুলের পানি ঘরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরছে। সেদিকে লক্ষ্য নেই কুসুমের। কুসুম আপাতত ব্যস্ত ড্রয়ার থেকে কাপড় বের করতে। গোসলে যাবার সময় ভুলবশত কাপড় নেয়নি। তাই এখন বাথরুব গায়ে দিয়ে কাপড় নিতে এসেছে। উষা ঘরে ঢুকে ঘরের মেঝে পানিতে ভেজা পেল। উষা বিরক্ত হয়ে বলল,

‘ এসব কি কুসুম? তোর চুলের পানিতে ঘর ভিজে যাচ্ছে। কবে চুলের পানি মোছা শিখবি? ‘

বলতে বলতে কুসুমের দিকে এগিয়ে যায় উষা। কুসুম ড্রয়ারে কাপড় খুঁজতে খুঁজতে বলে, ‘ শেখা লাগবে না। কারণ আমার আলসেমি লাগে। ‘

উষা ভ্রু কুঁচকে চায়। পরপরই টিপ্পনী কেটে বলে, ‘ হ্যাঁ, তাও ঠিক। কদিন পর উচ্ছ্বাসের হাতে চুলের পানি মোছার পাঁয়তারা করছিস তুই। তাহলে শিখবি কেন? ‘

কুসুমের বুক কেঁপে উঠে। মিছে বিরক্ত হবার ভান করে বলে, ‘ উফ! মজা করো না তো আপা। আমি আমার লাল স্কার্ট ওইটা পাচ্ছি না। ধুয়ে দেওয়া হয়েছে নাকি? ‘

উষা আরাম করে বিছানায় বসে। হাতে থাকা হালকা গোলাপী রঙের শাড়ি বিছানায় রেখে দুহাত ঠেসে রাখে বিছানায়। তারপর বলে,

‘ আজকে কিছু পড়ার দরকার নেই তোর। ‘

কুসুম এই কথা শুনে চমকে উঠে। দ্রুত উষার দিকে চেয়ে চেঁচায়,

‘ পাগল হয়েছ? আমি বাথরুব পরে বসে থাকব সারাদিন? উফ, আপা! খালি মজা করো না তো। আমি এমনি ডিস্টার্ব আছি কদিন ধরে। ‘

‘ কেন? বিয়ে হচ্ছে বলে? ‘

ড্রয়ারে কাপড় খুঁজতে থাকা কুসুমের হাত থেমে যায়। কুসুম মাথা তুলে অসহায় চোখে উষার দিকে চেয়ে নিষ্পাপ কণ্ঠে বলে, ‘ হু। যখন থেকে বিয়ের কথা শুনেছি, আসলেই খুব ভয় লাগছে।’

উষা হাসে। তারপর বলে,

‘ ভয়ের রাণী, ভয় সব পাশে রেখে জলদি জলদি এই শাড়ি পরে নে। গেস্ট আসছে। ‘

কুসুম প্রশ্ন করে, ‘ কে আসছে? ‘

উষা চোখ টিপে বলে, ‘ সে তো বলা যাবে না। তবে কেউ একজন আসছে। স্পেশাল কেউ। এখন যা। দ্রুত দুই কাপড় পরে আয়। শাড়ি তো পরতে পারিস না। আমাকেই পরিয়ে দিতে হবে। গো ফাস্ট।’

কুসুমের কেন যেন মনে হচ্ছে, উচ্ছ্বাস আসবে। কারণ যতবার উচ্ছ্বাস ভাইয়ের ব্যাপারে কিছু কাহিনী ঘটে, উষা আপা এভাবেই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে উত্তর দেন। তবে আজকে কেন আসছে সে? সে ব্যপারে কিছুই জানে না কুসুম। উষা আবার তাড়া দিলে কুসুম দুই কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে যায়। বাথরুম থেকে বের হলে উষা খুব সুন্দর করে কুসুমকে শাড়ি পরিয়ে দেয়। কুসুমকে আয়নার সামনে দাঁড় করায়। কুসুম ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখে। এই শাড়িতে কুসুমকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। কুসুম আবার প্রশ্ন করে,

‘ বললে না আপা, কিসের জন্যে আমার এই সাজগোজ? সত্যি করে বলবে, উচ্ছ্বাস ভাই আসছে? ‘

উষা কুসুমের মাথায় থাপ্পড় বসায়। শাসানোর স্বরে বলে, ‘ ভাই কি, হ্যাঁ? জামাইকে কেউ ভাই বলে? ‘

কুসুম বোকা বোকা কণ্ঠে বলে, ‘ কি বলে ডাকব তাহলে? ‘

উষা শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিতে দিতে বলে,

‘ আপাতত কিছু বলের ডাকার দরকার নাই। উনি করে বলতে পারিস। তুই উনি বললেই সবাই বুঝে যাবে কার কথা বলছিস। কিন্তু ভাই না। এটা খারাপ শোনায়। ‘

কুসুম মাথা দুলায়। আসলে ভাই বলা নিয়ে কুসুম নিজেই দ্বিধায় জড়িয়েছিল। উচ্ছ্বাসকে ভাই বলতে তার নিজেরও ভীষন অস্বস্থি হত। উষা আপা বুদ্ধি দিয়েছে। তাহলে আজ থেকেই সেটাই করবে কুসুম।
উষা শাড়ি পরিয়ে দিয়ে কুসুমকে বিছানায় বসিয়ে রেখে যায়। যাবার আগে সফসাফ বলে যায়, উষা না বলা অব্দি কুসুম যেন এই ঘর থেকে না বের হয়। কুসুম বাধ্য মেয়ের মত মেনে নিয়েছে উষার কথা। কিন্তু মনেমনে ভীষন কৌতূহল জেগেছে কুসুমের। কে আসছে আজ? কার জন্যে কুসুমের এত সাজগোজ? উচ্ছ্বাসের জন্যে?

কুসুমের ভাবনার মধ্যেই শোনা গেল বসার ঘর থেকে পরপর কয়েকটা বেলুন ফাটানোর শব্দ। সবাই মিলে হুই-হল্লোর করছে। সবার এত খুশির আয়োজন দেখে কুসুম বোকা বনে যায়। বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে আরো তিনদিন পর। তাহলে আজকে এত কিসের খুশির আয়োজন হচ্ছে তাদের ঘরে?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here