বোনু
Part_09
#Writer_NOVA
মির্জা কুঠির………
নুহা ও রুস্তম আলী মির্জা কুঠির এসে চারপাশে অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।বাড়িটাকে বিশাল বড় সাদা প্রাসাদ বললেও ভূল হবে না।বাগানে নানারকম বাহারি ফুলের বাহার।একপাশে একটা বড় দোলনা।
রুস্তমঃ পার্টনার, এইডা কি বাড়ি নাকি প্রাসাদ?
নুহাঃ আমিও তো তা দেখছি।বস আমাদের এখানে ডাকলো কেন?
রুস্তমঃ ভেতরে না গেলে কমু কেমনে?
নুহাঃ চল,ভেতরে যাই।খবরদার কোন জিনিস চুরি তো দূরে থাক হাতও লাগাবি না।
রুস্তমঃ আইচ্ছা।
নুহা ও রুস্তম সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। সোফায় চার ভাই বোনকে খাবার খাওয়ানোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত।ইশাত কোলে করে বোনুকে নিয়ে এসে সোফায় বসিয়ে দিলো। উষার সামনে এখন পুরো ডাইনিং টেবিলের খাবার হাজির।অরূপ একপাশে দাঁড়িয়ে ভাইদের কান্ড দেখছে।আর মুচকি হাসছে।
আদিলঃ বোনু স্যুপটুকু খেয়ে নে তো।
ঈশানঃ তোকে কিন্তু এক গ্লাস দুধ খেতে হবে।এমনি তেই শরীরে কোন শক্তি নেই।
অর্ণবঃ বোনু এই ফলের পিসটা খেয়ে নে প্লিজ।
ইশাতঃ লক্ষ্মী বোনু আমার কিছু একটা মুখে তো দে।
উষাঃ আমার কিছু খেতে ভালো লাগে না।
ঈশানঃ এটা কেমন কথা। কিছু একটাতো মুখে দিয়ে ঔষধ খেতে হবে তো।
অর্ণবঃ আজকে আবার ডক্টরের কাছে যেতে হবে।মাথার পরীক্ষা করবে।এখন যদি না খাও তবে ঔষধ কিভাবে খাবে? জাদু বোনু আমার।
ইশাতঃ একটু খানি খাও বোনু।
উষাঃ আমার গা গুলিয়ে আসে।কেমন বিচ্ছিরি খেতে? আমায় খাবার নিয়ে জোর করো কেন?
আদিলঃ আমি বুঝি না বোনুর খাবার খেতে এতো কষ্ট লাগে কেন? অন্য কিছু নিয়ে এতো চেঁচামেচি করতে হয় না।যতটা না খাবার নিয়ে আমাদের হয়রান হতে হয়।
ঈশানঃ বোনু সব ভুলে গেলোও আমাদেরকে খাবার নিয়ে অবস্থা নাজেহাল করতে ভুলেনি।
অনেক কষ্ট করে উষাকে কিছুটা খাবার খাইয়ে দিয়ে চার ভাই বোনকে তৈরি করতে লেগে গেল।
অর্ণবঃ আদি চিরুনিটা নিয়ে আয় তো।আমি বোনুর মাথা আঁচড়ে দিয়ে বেনুণী করে দেই।
ইশাতঃ আমি বোনুর জুতা নিয়ে আসছি।
আদিলঃ আমি যাচ্ছি ভাইয়া।
ঈশানঃ বোনু কোন ড্রেস পরবি? আমায় বল আমি নিয়ে আসছি।
উষাঃ ড্রেস কোন ড্রেস?ড্রেস কাকে বলে?আমি ড্রেস দিয়ে কি করবো?
ঈশানঃ বোনু আমার তুই চুপ কর।তোকে কিছু করতে হবে না।তোর ড্রেস মেয়ে সার্ভেন্টরা পাল্টে দিবে।আর আমরা তোকে রেডি করে দিবো।
অর্ণবঃ বোনু এতো নড়াচড়া করিস না।
মেয়ে সার্ভেন্টঃ স্যার আপনাদের হয়েছে। আমরা ম্যামের ড্রেসটা চেঞ্জ করে দিবো।
আদিলঃ এই যে বোনুর জুতা।
অর্ণবঃ তোমরা নিয়ে যাও।তবে সাবধানে। আমার বোনু যেনো একটা ফুলের টোকা পরিমাণেও ব্যাথা না পাই।যদি বাই চান্স আমার বোনু সামান্য ব্যাথা পায়।তাহলে–
আদিলঃ তোমাদের চাকরী এখানেই শেষ।
মেয়ে সার্ভেন্টঃওকে স্যার(ভয়ে ভয়ে)
মেয়ে সার্ভন্টরা উষাকে নিয়ে গেলো।এতক্ষণ চার ভাইয়ের বোনের প্রতি ভালবাসা দেখছিলো নুহা।নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরে গেল।ভাইয়ের ভালবাসা কি সেটা ওর কপালে জুটেনি।
ভাইয়ের ভালবাসা কি সেটাও বলতে পারবে না।
নুহাঃ আজ যদি আমার ভাই থাকতো।তবে সেও বোধহয় আমার পাশে এভাবে থাকতো।তাহলে হয়তো আমার জীবনটাও অন্যরকম হতো।আমাকে চুরি ও ছিনতাই করতে হতো না।ঐ মেয়েটার ভাগ্য কত ভালো।সাত কপালের ভাগ্য নিয়ে মেয়েটা পৃথিবীতে এসেছে।আল্লাহ হয়তো সবার কপালে এমন ভাই লিখে নি।তাই তো আজ আমি গৃহহীন, ছন্নছারা জীবন যাপন করছি।(মনে মনে)
অরূপঃ এই তোমরা কারা? এখানে কি করছো? ভেতরে কিভাবে ঢুকলে?
নুহা ও রুস্তমকে দরজার সামনে দেখে অরূপ অনেকটা চেঁচিয়ে উঠলো।চার ভাই মাত্র টেবিলে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে।অরূপের কথায় দরজার দিকে তাকালো।
অরূপঃ তোমদের এখানে কে আসতে বলেছে?
রুস্তমঃ আমগো ঐ সাহেব আইতে কইছে? হেই নাকি আমগো দুই জনরে কাম দিবো।
নুহাঃ রুস্তম সত্যি বলছে।
অরূপঃ দেখে তো বেশি একটা ভদ্র মনে হচ্ছে না।চুরি করার ধান্দায় আসো নি তো।কে আসতে বলেছে তোমাদের? সত্যি কেউ আসতে বলেছে নাকি মিথ্যা।
ঈশানঃ আমি আসতে বলেছি।
অরূপঃ কিন্তু কেন ছোট ভাই?
ঈশানঃ আমাদের কিছু সার্ভেন্ট লাগবে তাই।
আদিলঃ কিন্তু আমাদের তো কোন সার্ভেন্ট লাগবে না।
ইশাতঃ সত্যি কি সার্ভেন্ট নাকি অন্য কিছু?।
(ভ্রু নাচিয়ে)
ঈশানঃ তুই চুপ কর তো।নুহা ও রুস্তম এদিকে এসো।তোমাদের কে আমার ভাইদের সাথে পরিচয় করে দেই।
???
ঈশান ওদের দুজনকে ডাইনিং টেবিলের সামনে নিয়ে গেলো।নুহার পরনে আজ হালকা আকাশি কালার সেলোয়ার-কামিজ। মাথায় ওরনা দিয়ে ঘোমটা দেয়া।অনেকটা নতুন বউ বউ লাগছে।ঈশান আড়চোখে না চাইতেও বার বার তাকাচ্ছে। মেয়েটার জীবন কাহিনী শোনার পর আরো বেশি ভালো লেগে গেছে।
ঈশানঃ বড় ভাইয়া,ওর নাম নুহা। আর ও রুস্তম আলী। এখন থেকে বাড়ির অনেক কাজ আছে সেগুলো করবে।
ইশাতঃ কি কাজ আছে?আমার জানামতে বাসার আলাদা কাজের জন্য আলাদা সার্ভেন্ট আছে।নতুন করে কোন লোকের প্রয়োজন নেই।
ঈশানঃ তুই চুপ করবি।একদম নাক গোলাতে আসবি না এসব ব্যাপারে।তুই বাসার খবর কি রাখিস? সারাক্ষণ তো পরে থাকিস বাস্কেটবল নিয়ে। সেটা নিয়েই থাক।
ইশাতঃ ??
ঈশানঃ নুহা ও আমাদের মতো এতিম।ওর বাবা-মা মারা গেছে অনেক আগে।ছোট থেকে বড় হয়েছে এতিমখানায়।সেখান থেকে বড় হওয়ার পর কাজের জন্য ঢাকায় এসেছিলো।কিন্তু মেয়ে মানুষ দেখলেই তো আমদের ছেলেদের মাঝে পশুত্ব জেগে উঠে।তাই নিজেকে অন্য পুরুষের কাছে সোঁপে না দিয়ে চুরি ও ছিনতাই বেছে নিয়েছে। আমার সাথে সেদিন দেখা হয়েছে। ওর সবকিছু জেনে আমি ওকে কাজ দেওয়ার চিন্তা করেছি।বল ভাইয়ারা আমি কি ভুল কিছু করেছি।
ইশাতঃ তুই এতো ফাদার ঈশান হলি কবের থেকে?তুই যে এতো দয়ার সাগর তাতো জানতাম না।
ঈশানঃ তোর কপালে মার আছে। তুই রেডি থাকিস।
দাঁত কটমট করে তাকিয়ে বিরবির করে কথাটা বলে
ইশাতের দিকে খাইয়া ফালামু লুক দিলো।
ইশাতঃ যা সত্যি তাই বলছি।অমন করে তাকিয়ে লাভ নেই। আমি আবার ভুল বলি না।
ইশাত ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে জুসের গ্লাসে শব্দ করে চুমুক দিলো।
আদিলঃ ইশাত তুই কি চুপ করবি?
অর্ণবঃ মেয়েটার পরিচয় তো দিলি।চিকনা চাকনা ঐ ছোকরাটা কে?
ঈশানঃ ও রুস্তমের কথা বলছো? ওর নাম রুস্তম আলী।ছোটবেলায় রাস্তা থেকে এক চোর নিয়ে ওকে বড় করেছে।পড়াশোনা করার সুযোগ তো পায়নি।বরং ছোট থেকে চুরি করেছে।তারপর ছিনতাইকারীতে ঢুকেছে। ভাইয়া ওরা দুজন খারাপ কাজে ছিলো।আমরা যদি ওদের ভালো কাজের সুযোগ করে দেই তাহলে ওরা আর খারাপ কাজ করবে না।
রুস্তমঃ হো বস।আমগো যদি একটা কাম দিতেন।তইলে আর চুরি বা ছিনতাই করতাম না।
নুহাঃ হ্যাঁ,স্যার।আমাদের একটা সুযোগ দিয়ে দেখতে পারেন।আমরা ভালো হতে চাই।
অরূপঃ তোমরা যে এই বাড়ি থেকে চুরি করে পালাবে না তার কি গ্যারান্টি আছে।
নুহাঃ তোওবা তোওবা।কি বলেন এসব? আমরা যে প্লেটে খাই সে প্লেট কখনো ছিদ্র করি না।
আদিলঃ বড় ভাইয়া কি বলো তুমি?
অর্ণবঃ আমার মনে হয় ওদের ভালো হওয়ার একটা সুযোগ দেওয়া উচিত। তোমাদের যা লাগবে আমাদের কে বলবে।আমরা সবকিছু দিবো। তবে এই বাড়ির কোন কিছু যদি চুরি হয় তাহলে ব্যাপারটা খারাপ হয়ে যাবে।
ঈশানঃ ওরা কি কাজ করবো?
অর্ণবঃ নুহা তুমি আমাদের জন্য রান্নার কাজে সহযোগিতা করবে।রুস্তম আলী তুমি বাজারের কাজে সাহায্য করবে।অরূপ, ওদের কাজটা বুঝিয়ে দে।
অরূপঃ আপনি চিন্তা করেন না বড় ভাই।আমি থাকতে আপনাদের কোন চিন্তা নেই। আমি সব বুঝিয়ে দিবো।এই চলো আমার সাথে।
ঈশানঃ নুহা ওর সাথে যাও।ও তোমাদের কাজ বুঝিয়ে দিবে।
নুহাঃ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ঈশানঃ এটা আমার দায়িত্ব।
নুহাঃ আসছি।
ঈশানঃতুমি কি বুঝবে? তোমাকে আমার চোখের সামনে নিয়ে এলাম কেন?যাতে কোথাও হারিয়ে যেতে না পারো।আমার জিনিস আবার অন্য কারো নজরে রাখতে পছন্দ করি না। (মনে মনে)
অরূপ ওদের দুজনকে নিয়ে গেল।ইশাত টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ঈশানের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো।
ইশাতঃ কেসটা কি রে শান? লাভ মেটার কেস মনে হচ্ছে? কবের থেকে শুরু করলি?
ঈশানঃ তুই ভাগলি এখান থেকে? তারিনের কথাটা বড় ভাইয়াকে বলবো না কি রে??(ভ্রু নাচিয়ে)
ইশাতঃ চুপ কর। তোকেও আমি কিছু বলবো না।লক্ষ্মী ভাই আমার তুই কিছু বলিস না।আমিও চুপ তুইও চুপ।
ঈশানঃ কাউকে ব্লাকমেল কি করে করতে হয় সেটা আমি জানি ভাই।তাই আমার সাথে পাঙ্গা নিতে আসিস না।ভাগ এখান থেকে।
???
নিউ ইয়ার্ক……..
বিশাল বড় রুমে মিটিংয়ে ব্যাস্ত অচেনা ছেলেটি।মনটা অনেক খুশি খুশি।তার বোনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পারবে।যে কষ্ট তাকে ৩ বছর যাবত তিল তিল করে শেষ করে দিচ্ছে সেই কষ্ট থেকে অবসান নিবে।মির্জারাও বুঝবে বোনকে হারানোর ব্যাথা কাকে বলে?
হঠাৎ করে মোবাইল বেজে উঠলো অচেনা ছেলেটির।মিটিংয়ের মধ্যে ফোনে কল করাও যায় না আবার ধরাও যায় না।তাই বার বার কেটে দিচ্ছে। তারপরও ফোনের অপর পাশে থাকা ব্যাক্তিটা ফোন দিয়েই যাচ্ছে।
মিটিং শেষ করে কল ব্যাক করলো সে।এতক্ষণ তার ভাই কল করছিলো।ভাই কল ধরার সাথে সাথে এক প্রস্থ বকে দিলো।
—-কি ব্যাপার তোর কি কোন কমন সেন্স নেই? আমি বারবার কল কেটে দেওয়ার পরও কল দিয়ে যাচ্ছিস।আমি মিটিংয়ে থাকলে যে ফোন ধরি না সেটা কি জানিস না।তোকে সামনে পেলে কি যে করতাম নিজেও জানি না।
—ভাইয়া,তুমি আমার ওপর শুধুই রাগ করছো।তোমাকে খুব মিস করছিলাম।তাই কল করেছি।
—তোর সামান্য মিসের জন্য আমার কোটি কোটি টাকার টেন্ডারটা মিস হয়ে যেত।তোকে কতবার বলেছি আমি মিটিংয়ে থাকলে ফোন করবি না।
—সরি ভাইয়া।আমি বুঝতে পারি নি।তুমি কেমন আছো? ব্যাবসা-বাণিজ্য কেমন চলছে তোমার?
—ভনিতা না করে কেন কল করেছিস সেটা বল?
—এই তো আমার সুইট ভাইয়া।আমার কথা বলার ধরণ দেখে বুঝে যাও কেন কল করেছি? আমার লাখ খানিক টাকা লাগবে।পাঠিয়ে দিও তো।
—কত লাগবে?
—৪/৫ লক্ষ হলেই চলবে।
—ওকে পাঠিয়ে দিবো।তোর ব্যাংক একাউন্টে পেয়ে যাবি।তবে এর আগে আমার উষার খবর দে।
—আজ চার ভাই তাদের বোনকে নিয়ে হসপিটালে গিয়েছে। তোমার কথা মতো আমি আমাদের অনেক লোককে ওদের বডিগার্ডের মাঝে ঢুকিয়ে দিয়েছি।এছারা ২৪ ঘন্টা তদারকির জন্য আরো লোকতো আছেই।সি সি টিভি ফুটেজও আজ লাগিয়ে ফেলবো।ওদেরকে ফাঁকি দেওয়া এতো সহজ নয়।অনেক টার্ফ হয়ে যায়।জীবনটাকে হাতে নিয়ে কাজ করতে হয়।যদি কিছু একটা টের পেয়ে যায় তাহলে আমাদের লোক তো মির্জাদের হাতে মরবেই সাথে আমিও আছি।
—বি কেয়ারফুল।সাবধানে কাজ করিস।যাতে কোন কাক পক্ষীও টের না পাই।
—-মির্জাদের কথাতো বাদ দিলাম।ঐ যে ওদের ২৪ ঘন্টার চামচা অরূপের হাত থেকে লুকিয়ে কাজ করা আরো কঠিন ভাইয়া।একদম মির্জাদের পোষা কুকুর। উষাকে চার ভাইয়ের মতো অরূপও অনেক ভালবাসে।তাছারা উষার আশিক জিবরান খান তো আছেই। এতোগুলো মানুষকে বোকা বানানো তো সহজ নয়।আমার বেশি ভয় করে অরূপকে।আজকাল ওর মতো ভালো ছেলে কখনও পাওয়া যায় না।ওর বোধশক্তি অনেক ভালো। কোনটা তে মির্জাদের ভালো হবে কোনটাতে খারাপ সেটা আগে অরূপ নিজের জীবন বাজি রেখে পরখ করে দেখে।
—-অরূপকে টাকা দিয়ে কিনে নে।তাহলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
—কি যে বলো তুমি ভাইয়া? মির্জাদের জন্য নিজের জীবন বাজি রাখতে দ্বিধা করে না যে ছেলে।সে কি টাকা দেখে তাদের বিরুদ্ধে যাবে।বলতে পারো মির্জাদের আরেক ভাই অরূপ।নামের সাথেও তো টাইটেল মির্জা লাগিয়েছে। মোহাম্মদ অরূপ মির্জা।
—তোকে এতো কথা তো বলতে বলি নি।আমাদের ব্যাস অরূপকে টাকা দিয়ে কিনে নিতে হবে।ওদের বিশ্বাসী মানুষ দিয়েই ওদের শেষ করবো।
—তুমি কি ভাবছো? আমি কি চেষ্টা করি নি।কিছু দিন আগে অরূপকে টাকা দিয়ে কিনতে পাঠায়েছিলাম।কিন্তু একটাও জিন্দা ফিরে নি।এমন কি একটার লাশও খুঁজে পাই নি।৪-৫ জনকে অরূপ একা মেরেই লাশ গুম করে দিয়েছে।ভাগ্যিশ আমি সেদিন যাইনি।নইলে আমিও এখন কবরেও নই, কোন ড্রেনে পরে থাকতাম।
—তোর ভাষণ দেওয়া শেষ হয়েছে। এবার চুপ কর।আজকে রাতের প্ল্যান যদি কোনরকম ব্যাঘাত ঘটে তাহলে তুই নিজেকে কবরে খুঁজে পাবি।
—-তুমি কোন চিন্তা করো না।আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি।এখন শুধু রাতটা আসতে বাকি।ভাইয়া আমার টাকাটা কিন্তু পাঠিয়ে দিও।
—ওকে তুই আমাকে মির্জা কুঠিরের সকল আপডেট দিবি।ওদের ভাই-বোনের সকল তথ্য আমার চাই।
কলটা কেটে দিলো অচেনা ছেলেটি। মুখে তার শয়তানি হাসি।মির্জাদের সর্বনাশ করতে পারবে।ওদের বোন কে মেরে ওদের জিন্দা লাশ বানিয়ে দিবে।যেমনটা ও এখন রয়েছে। নিজের প্রাণের বোনটাকে হারিয়ে। যাকে সেও পাগলের মতো ভালবাসতো।হঠাৎ করে অচেনা ছেলেটি হাঁটু মুড়ে বসে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরলো।
—–আমি কাউকে ছারবো না বোনু।আমি কাউকে ছারবো না।যাদের কারণে তুই পৃথিবী ছেরে,আমাকে ছেরে গিয়েছিস। তাদের সবাইকে আমি এক এক করে শাস্তি দিবো।তাদের বোনকেও আমি তোর কাছে পাঠিয়ে দিবো।তখন ওরাও বুঝবে বোনকে হারানোর ব্যাথা কাকে বলে? অনেক মিস করি তোকে বোনু।অনেক মিস করি তোকে।
???
সারাটা দিন বোনুর খেয়াল রাখতে রাখতেই কেটেছে।চার ভাইয়ের চোখের মণি বোনুকে আজকে হসপিটালে গিয়েও এক সেকেন্ডের জন্য চোখে আড়াল করেনি।রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছে।বোনুকে খাইয়ে,ঘুম পারিয়ে দিয়ে এখন নিজেরাও খেতে বসেছে।হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে গেলো।সবাই অবাক।লোডশেডিং হওয়ার তো কখনি কথা না।
অর্ণবঃ কি হলো? লোডশেডিং কী করে হলো?
আদিলঃ আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
ঈশানঃ হঠাৎ লোডশেডিং। ব্যাপারটা আমার ভালো মনে হচ্ছে না।
ইশাতঃ আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না।
অর্ণবঃ অরূপ, দেখ তো কি হয়েছে? আমার তো সন্দেহজনক ঠেকছে?
অরূপঃ ভাইয়া আমি দেখছি।
অন্য দিকে………
উষার রুমের সামনের বডিগার্ডরাও লোডশেডিং দেখে এদিক সেদিক চলে গেল। ওরাও বুঝতে পারছে না লোডশেডিং কি করে হলো? অন্ধকারে কিছু দেখাও যাচ্ছে না। ঠিক তখনি বডিগার্ডদের আড়াল করে একটা ছেলে ভেতরে ঢুকে পরলো। আরেকজন ছেলে পিছনের থেকে বডিগার্ড ৪ জনকে নাকে রুমাল চেপে অজ্ঞান করে ফেললো।দুজন উষার রুমে ঢুকে দেখলো উষা ঘুমিয়ে আছে। একজনের নাম রোহান, আরেকজনের নাম নিলয়।দুজনি প্রোফেশনাল খুনী।টাকার বিনিময়ে মানুষ খুন করে।
রোহানঃঘুমিয়ে আছে। এখন কি করবো?
নিলয়ঃ যা করার তারাতাড়ি করতে হবে।ওর ভাইরা চলে এলে জ্যান্ত কবর দিবে।
রোহানঃতুলে নিয়ে যাওয়া কখনো সম্ভব হবে না।এতো বড় আটার বস্তা নিয়ে আমি হাঁটতে পারবো না।তোর মন চাইলে তুই তুলে নিয়ে আয় মেয়েটাকে।
নিলয়ঃ আমাদের তুলে নিতে বলে নি।এখানেই শেষ করে দিতে বলেছে।
রোহানঃ গলাটা কেটে দিবো।
নিলয়ঃ এটা করা রিস্ক হয়ে যাবে।তার চেয়ে বরং বালিশ চাপা দিয়ে দেই।খুব সহজে কাজটা আসান হয়ে যাবে।আমাদেরও বেশি কষ্ট করতে হবে না।মেয়েটাও বেশি একটা কষ্ট পাবে না।
রোহানঃ জলদি কর।কেউ দেখে ফেললে বিপদ হয়ে যাবে।
নিলয়ঃ আমি বালিশটা হাতে নিচ্ছি। তুই পা চেপে ধর।তারাতাড়ি করিস।
রোহানঃ তুই ঐদিক যা।আমি এদিকটা দেখছি।
ড্রয়িং রুমে চার ভাই ছোটাছুটি শুরু করছে।অরূপ লোডশেডিং কেন হলো তা দেখার জন্য জেনারেটরের রুমে যেতেই পেছন থেকে কেউ ভারী কিছু একটা দিয়ে মাথায় বারি দিলো।অরূপ মাথা ধরে অজ্ঞান হয়ে নিচে পড়ে গেলো।
অর্ণবঃ অরূপ এখনো আসছে না কেন?
আদিলঃ ভাইয়া, আমাদের বোনু রুমে একা আছে।
ঈশানঃ কেউ নিশ্চয়ই আমাদের বোনুর ক্ষতি করতে এসেছে। আল্লাহ আমাদের বোনুর না কোন ক্ষতি করে ফেলে।
ইশাতঃ জলদী করে বোনুর রুমে চলো।
অর্ণবঃ দাঁড়িয়ে আছিস কেন?তারাতাড়ি চল।
ঈশানঃ চলো ভাইয়া।
চার ভাই সিড়ি দিয়ে উপরে বোনের রুমে ছুটলো।চার ভাই কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে।আজ নিশ্চয়ই তাদের বোনের কেউ ক্ষতি করতে এসেছে।
অন্য দিকে উষার রুমে ছেলে দুটো ঘুমন্ত উষার দিকে এগিয়ে গেল।একজন হাতে বালিশ নিলো আরেকজন উষার পা ধরলো।বালিশ হাতে থাকা ছেলেটি উষার মুখে বালিশ চেপে ধরলো।ঘুমের মধ্যে উষা ছটফট করতে লাগলো।
#চলবে
#Part_08
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2944182585810474/