বোনু
Part_05
#Writer_NOVA
রাতের আঁধারটা আমাদের সবার কাছে অপরিচিত। কখনও ভালো তো কখনও মন্দ। কিন্তু অন্ধকার ছেয়ে যাওয়ার সাথে সাথে পৃথিবীতে মন্দটার পদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। অনেক ভালো মানুষের মুখোশ পরা ব্যাক্তিদের চেনা যায় এই রাতের অন্ধকারে। বিকৃতী মশতিষ্কের মানুষগুলো রাতের বেলায় তাদের বিকৃত হয়ে যাওয়া রূপটা দেখায়।
আজ একটু বেশিই দেরি হয়ে গেছে অথৈর।টিউশনি করে ফিরতে যে এতো দেরি হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি। ও যেই পথ দিয়ে বাড়ি ফিরে সেটা অনেক নির্জন।ঢাকার এই চিপাচাপা, অলিগলি গুলো মেয়েদের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়।চারিদিকে শুনশান।হাতে মায়ের ঔষুধ। বাবা রিটায়ের্ড করেছে কয়েক বছর যাবত।মায়ের অসুস্থতা,বোনের পড়াশুনা,নিজের লেখাপড়া সব মিলে একটা মানসিক চাপে ছিলো।যার কারণে শেষ পর্যন্ত টিউশনি করে সংসারের হাল ধরতে হলো।পাশাপাশি চলছে ওর অনার্সের থার্ড ইয়ারের পড়ালেখা।কয়েকটা টিউশনি করে অথৈ।যার কারণে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়।কিন্তু আজ রাত হয়ে গেছে। দুই দিনের টিউশনি একসাথে করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল। ভয়ে ভয়ে হাঁটছে। হঠাৎ সামনে কিছু ছেলে দেখতে পেল।কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়।এত রাতে একটা সুন্দরী মেয়ে দেখলে বখাটে ছেলেদের আর খুশি দেখে কে।অথৈয়ের পিছু নিলো ৭-৮ টা ছেলে।পাশাপাশি বাজে কমেন্টতো আছেই।
–আরে রুপকামরী যাও কোথায়? আমাদের ও নিয়ে যাও।একা একা সুন্দরী মেয়ে এতো রাতে গেলে তো কেউ নজর দিবে।
—রেট কত ম্যাডাম?
–আমাদের সাথে ও একটু সময় দিয়ে যাও।
–আমরাও তোমাকে একটু ভালবাসতে চাই।কি বলো সুন্দরী?
অথৈই ওদের বাজে কথা শুনে চোখ পাকিয়ে তাকালো।কিন্তু মনে মনে ভীষণ ভয় পাচ্ছে। তবে সেটা ছেলেগুলোকে বুঝতে দিলে চলবে না।যদি কোনভাবে আজ ওদের পাল্লায় পরে যায় তাহলে নিশ্চই নিজের মান-সম্মান হারিয়ে ফিরতে হবে।তাই মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে।ওর চোখ পাকিয়ে তাকানো দেখে একটা ছেলে ভয় পাওয়ার অভিনয় করে বললো–
–ওরে বাবা কি রকম করে তাকাচ্ছে? অমন করে তাকিয়ো না সোনা।হার্ট এট্যাক করে বসবোতো।
–ফুলঝুরি এতো রাগো কেন? প্রতিদিন অন্য কোথাও সময় দেও আজ আমাদেরকে না হয় দিলে।
কথাগুলো বলে বিদঘুটেভাবে হাসতে লাগলো ছেলেগুলো।অথৈ আরো জোরে হাঁটতে লাগলো। কিন্তু ছেলেগুলো পেছন ছারেনি।আজ যেনো পথও শেষ হচ্ছে না।ভয়ে হাত-পা কাঁপা-কাঁপি করছে।পেছন দিকে তাকিয়ে দেখলো ছেলেগুলো অনেকটা সামনে এসে পরেছে। দুই হাত এগুলে ওকে ধরে ফেলবে।তখনি সামনে শক্ত কিছুর সাথে বারি খেলো।
অথৈঃ এই মাঝ রাস্তায় পিলার এলো কোথা থেকে?(মনে মনে)
সামান্য মাথা উঠিয়ে দেখলো কোন পিলার নয়।একটা ছেলের বুকের সাথে মাথা ঠেকেছে।ছেলেটা আদিল।আদিলকে দেখে পেছনের ছেলেগুলো থেমে গেল।
বখাটে ছেলেগুলোকে শুনিয়ে শুনিয়ে আদিল বললো।
আদিলঃ নিলাসা কোথায় ছিলে তুমি? আমি কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। আর এই তোমার আসার সময় হলো।স্বামীর ওপর রাগ করেছে ঠিক আছে। তাই বলে রাত করে তোমাকে ঔষুধ আনতে হবে।এতো ভালবাসো আমায়।আমি যেই বললাম আমার সামান্য মাথা ব্যাথা করছে সেই তুমি রাত করে বের হয়ে গেলে।আমার ওপর রাগ করলেও আমার খেয়াল রাখতে ভুল করো না।আমার মাথা ব্যাথা করছে তো কি হয়েছে? আমায় বললে আমি নিয়ে আসতাম।একটা কথা যদি তুমি শুনতে।সবসময় বেশি বুঝো।দেও ঔষুধের প্যাকেট টা আমার হাতে দেও।
আদিল অথৈর হাত থেকে ছো মেরে ঔষুধের প্যাকেটটা নিয়ে গেল।অথৈ হা করে আদিলের দিকে তাকিয়ে আছে। বলে কি ছেলেটা? জীবনে দেখিনি ওকে।আর বলছে কি না ওর স্বামী। চোখ পিটপিট করে আদির দিকে তাকালো অথৈ।
আদিলঃ ছেলেগুলো চলে গেছে। আপনি এখন যেতে পারেন।
আদিলের কথা শুনে অথৈ পিছনে তাকালো।সবাই উল্টো দিকে পালিয়েছে।
অথৈঃ ধন্যবাদ। আপনি যদি সময় মতো না আসতেন তাহলে আজ হয়তো আমার সব শেষ হয়ে যেত।
আদিলঃ বাসা কোথায় আপনার?
অথৈঃ এই তো দুই গলি পরে।
আদিলঃ চলুন আমি পোঁছে দিয়ে আসছি।ভয় পাবেন না।আমি আপনার কোন ক্ষতি করবো না।
আদিল অথৈকে পৌঁছে দিয়ে চলে গেল। অথৈ এখনও ঘোরের মাঝে আছে। সত্যি আজকাল যুগে এমন ছেলেও আছে।আদিল আজ এই রাস্তা দিয়ে শর্টকার্টে ফিরছিলো।তখনি দেখলো ছেলেগুলো মেয়েটাকে ফলো করছে। তাই বুদ্ধি করে এমন অভিনয় করলো।
???
এর মধ্যে বেশ কিছু দিন কেটে গেছে।হাসপাতাল থেকে উষাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে।৭২ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরেছে।তবে উষার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে গেছে। তাতে কি? ওর চার ভাইয়ের দোয়া যে আল্লাহ কবুল করে ওদের বোনকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছে তাও কম কিসের? এক মুহূর্তের জন্য বোনের আড়াল কেউ হচ্ছে না।কখন কি লাগবে? সবাই খুশি হলেও জিবরান খুব ভেঙ্গে পরেছে।উষা ওকে চিনতে পারছে না যেটা ওকে সবচেয়ে বেশি আহত করছে।২৪ ঘন্টা বোনকে দেখে রাখার জন্য নার্স, ডক্টর তো আছেই।
উষা কাউকে চিনতে পারছে না। সবাইকে ভয় পাচ্ছে। ডক্টর বলেছে পেসেন্টকে কোন রকম মানসিক চাপ দিয়ে আগের সবকিছু মনে করাতে না।তাতে তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।তাই কেউ পুরনো কোন স্মৃতি মনে করাতে চায় না।১ম দুই দিন তো উষা কোন কথাই বলেনি।এখন বলে তবে শুধু প্রশ্ন করে।এটা কি? ওটা এখানে কেন? আমার নাম কি? তোমরা কারা? ভাই কাদের বলে? তোমরা আমার খেয়াল কেন রাখো? আমি তো অনেক ছোট বাচ্চা তাই না।আমার আম্মু, আব্বু কোথায়? তারা আমার সাথে দেখা করতে আসে না কেন? ইত্যাদি ইত্যাদি। ওর প্রশ্ন শুনলে যে কেউ পাগল হয়ে যাবে।কিন্তু চার ভাই ধৈর্য্য সহকারে সব কথার উত্তর দেয়।
কলেজের উল্টো দিকে কফি হাউসে উষা কারো সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলো।একা একা ড্রাইভ করছে আর গুনগুন করে গান গাচ্ছে।ঠিক পেছন থেকে একটা বড় ট্রাক এসে ধাক্কা দিয়ে সেখানকার একটা খাদে ফেলে দেয়।তারপরের ঘটনাতো সবার জানা।এখন চার ভাইয়ের প্রশ্ন হলো তাদের বোনু কার সাথে দেখা করতে যেতে চেয়েছিলো।সেই মানুষটাকে পেতে হন্যি হয়ে খোঁজ লাগিয়েছে চার ভাই।
???
২ দিন পর……
অনেকদিন পর একটা কাজে ঈশান বের হয়েছে। আজকাল বোনের কারণে কোথাও বের হওয়া হয় না।অনেক জরুরি ছিলো তাই না এসে পারলো না।বাইক নিয়ে বের হয়েছিল। কিন্তু এক বন্ধুর আর্জেন্টলি বাসায় যেতে হবে বলে তাকে বাইক দিয়ে দিয়েছে। এখন বৃষ্টির মধ্যে সে পরেছে বিপদে।ভেবেছিলো টেক্সি করে ফিরে যাবে।কিন্তু এই ভর দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় মানুষই নেই আবার টেক্সি।এতো রাতের বেলা সূর্য দেখতে পাওয়ার মতো ব্যাপার।কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে ওর সামনে একটা হলুদ চকচকে টেক্সি এসে দাঁড়ালো। জানলা দিয়ে চিকনা -চাকনা দেখতে একটা ছোকরা আমের আঁটির মতো মুখটি বের করে জিজ্ঞেস করলো–
–কোনহানে যাইবেন বস্?
ঈশানঃ হাইওয়ের রোডের দিকে যাবেন?
—হো বস।তবে আপনারে পিছনের আফার থেকে অনুমতি নিতে হবে।হেই যদি পারমিশন দেয় তবেই আমি আপনেরে নিতে পারমু।
ঈশানের রাগ উঠে গেল। এমনিতেই বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে আছে।তার মধ্যে নাকি কোন মহারাণীর পারমিশন নিতে হবে। চার ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাগি ও জিদ্দি হলো ঈশান।সে কারো থেকে পারমিশন নেয় না সবাইকে পারমিশন দেয়।সেই ঈশান এখন একটা মেয়ের থেকে পারমিশন নিবে।ভাবতেই মেজাজ গরম হয়ে গেল।কিন্তু এখন এছারা কোন উপায় নেই। তাই ঈশান পেছনের জানালা দিয়ে উঁকি দিতেই হা করে তাকিয়ে রইলো। অপূর্ব সুন্দরী একটা মেয়ে বসে আছে। পরনে জিন্স,শার্ট।শার্টের ওপর কটিটা হালকা উঠিয়ে গিট দেয়া।মাথায় ঝুটি, গলায় রুমাল প্যাচানো,চোখের সানগ্লাস মাথায় উঠানো।জীবনের প্রথম কোন মেয়েকে এসব ড্রেসে ভালো লাগলো।
নুহা অনেকখন ধরে খেয়াল করলো একটা ছেলে দিকে বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
নুহাঃ এক্সকিউজ মি মিস্টার? মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে কি রকম অসভ্যতামি হচ্ছে। ও হ্যালো।যাক বাবা কাকে কি বলছি? সে তো হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ও হ্যালো।(তুরি বাজিয়ে)
ঈশানঃ হে হে আমাকে ডেকেছেন।(কিছুটা বিব্রত হয়ে)
নুহাঃ আশ্চর্য, এই বৃষ্টির মধ্যে তো আপনাকে ছারা আর কাউকে দেখতে পারছি না।
ঈশানঃ আমাকে কি একটু আপনার সাথে নিতে পারবেন।আসলে বৃষ্টিতে আটকে গেছি।কোন গাড়িও পাচ্ছিলাম না।
নুহাঃ না বাবা, আমি আপনাকে নিতে পারবো না।ছেলে মানুষ আমি একটুও বিশ্বাস করিনা।মিষ্টি মধুর কথা বলে শেষে সর্বনাশ করে পালাবে।
ঈশান কি কাঁদবে না হাসবে তা বুঝতে পারছে না।তবে মেজাজ এখন সাত আসমানের চূড়ায় আছে। যে কোন সময় দু-একটা চড় মেরে দিতে পারে।
#চলবে
#Part_04
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2939663939595672/